Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই: আলু দিয়ে তৈরি মোহনীয় স্বাদের খাদ্যের ইতিহাস

আলু দিয়ে তৈরি মোহনীয় স্বাদের ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ফাস্ট ফুডপ্রেমীদের প্রথম পছন্দ। সর্বপ্রথম কে বা কারা এই সোনালি অমৃত আবিস্কার করেছেন তা এখনো আমাদের অজানা। তবে বিভিন্ন জনমত থেকে ধারণা করা হয়, এর উৎপত্তি খুব সম্ভবত বেলজিয়াম বা ফ্রান্সে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এর উৎপত্তিস্থল নিয়ে এত মতামত রয়েছে যে, সঠিক বলা যায় না কোথায় এর আসল জন্মস্থান! নামানুসারে ধারণা করা হয় হয়তো ফ্রান্সে উৎপত্তি বলেই নাম হয়েছে ‘ফ্রেঞ্চ ফ্রাই’। কিন্তু ইতিহাসও কি তাই বলে? চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের ইতিহাস।

লোভনীয় ফ্রেঞ্চ ফ্রাই; source: The Splendid Tables

ইউরোপে প্রথম আলু ভাজার প্রচলন করে স্প্যানিশরা, ফ্রান্স কিংবা বেলজিয়ানরা নয়। ১৫৩৭ সালে জিমেনেজ দে কুয়েসেডা এবং তার স্প্যানিশ দল মিলে কলম্বিয়ায় যান। সেখানে তিনি একটি গ্রামের ভিন্ন ধরনের আলু দেখতে পান যেগুলো আকারে বড় এবং বেশ হৃষ্টপুষ্ট ছিলো। এই আলুগুলোকে স্প্যানিশরা নাম দিলো ‘ট্রাফলস’, যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘ভিন্ন গন্ধের ছত্রাক’।

এর সাথে ছত্রাকের তুলনা! source: I Am a Food Blog

প্রায় ২০ বছর পর স্পেনে এই ধরনের আলুর চাষ শুরু হয় এবং ইতালিতেও পরিচিতি পায়। স্পেনে বা ইতালিতে আলুগুলো আকারে ছোট ছিল এবং স্বাদে বেশ তেঁতো। পরবর্তীতে ইউরোপিয়ানরা ভালোভাবে আলু চাষ করতে শেখে, আলুর তিক্ততা কমিয়ে আনে এবং আলুগুলো আকারেও বড় হতে থাকে। তারপর বেলজিয়ামেও আলুর চাষ শুরু হয়।

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই; Source: TNO

১৭ শতকে বা ১৮ শতকের শেষে বেলজিয়ানরা আলুকে চিকন করে কেটে তেলে ভাজা শুরু করে। এই এলাকায় মানুষ পাতলা করে কাটা মাছ ভেজে খেতে পছন্দ করতো এবং তার সাথে মিল রেখেই আলু চিকন করে কেটে ভেজে খাওয়া শুরু হয়। একটা সময় যখন নদী শুকিয়ে গিয়ে মাছ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়লো তখন তারা মাছের বদলে এভাবে আলু খাওয়া শুরু করে কারণ মাছ ধরার চেয়ে আলু চাষ করা সহজ এবং সস্তা।

বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় ফ্রেঞ্চ ফ্রাই; source: Today’s Show

ফ্রান্সের সেনাবিহিনীর ডাক্তার অ্যান্টনি অগাস্টিন পারমেনতিয়ার ইউরোপে এবং ফ্রান্সে আলুর জনপ্রিয়তা বাড়ান। ৭ বছর ধরে চলা যুদ্ধে তিনিই প্রথম প্রচলন করেন আলু খাওয়ার। এর আগে ফ্রেঞ্চরা কখনই আলু খাবার কথা ভেবে দেখেনি। অবশেষে ১৭৭২ সালে প্যারিসের মেডিকেল বিভাগ জানায়, আলু খেলে মানুষের কোনো সমস্যা হয় না। যদিও তখন পর্যন্ত পারমেনতিয়ারকে, তিনি যে হাসপাতালে কাজ করতেন সেখানকার ফার্মেসির বাগানে আলু চাষ করতে দেওয়া হয়নি।

তখন পারমেনতিয়ার আলু চাষকে অনুমোদিত করার জন্য একটি ভোজসভার আয়োজন করেন যেখানে শুধুমাত্র আলু দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার পরিবেশন করা হয়েছিলো। সেখানে তিনি দাওয়াত করেন বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন, অ্যান্টনি ল্যাভয়সিয়ের, রাজা ষোড়শ লুই এবং রানী মেরি অ্যান্টনেটকে। এরপর তিনি আলুর চাষ শুরু করেন এবং সেখানে পাহারাদার নিযুক্ত করেন। পাহারাদারকে তিনি বলেন, কেউ যদি তাদেরকে ঘুষ দিয়ে আলু চুরি করতে চায় তাহলে যেন তারা ঘুষ নিয়ে তাদেরকে চুরি করার সুযোগ দেয়। এভাবে ফ্রান্সে আলু অতি জনপ্রিয় হয়ে উঠে এবং ১৭৮৫ সালে ফ্রান্সে আলুর দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ১৭৯৫ সালে ফ্রান্স প্রচুর পরিমাণে আলু উৎপাদন শুরু করে। সেই সময় ফ্রেঞ্চরা আলু চিকন করে কেটে ভাজা শেখে। তখন এর নাম ছিলো ‘ফ্রিটস’, যার বাংলা ‘ফরাসি ভাজা’।

এই গেলো দুই রকম ইতিহাস। এমনও হতে পারে যে, বেলজিয়াম এবং ফ্রান্স দুই জায়গাতেই একসাথে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাওয়া শুরু হয়। ১০০ বছর পরে এসে এসব নিয়ে কেউ ভাবে না। ফ্রান্সে আলু খুব জনপ্রিয় হবার আগে ফ্রান্সো-অস্ট্রিয়ান যুদ্ধ চলছিলো। সুতরাং এটাও ধারণা করা হয়, তখন বেলজিয়ামের অধিবাসীদের কাছে ফ্রান্সের সৈন্যরা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই সম্পর্কে জানতে পারে। এমনও হতে পারে, তারা নিজেরাই আলাদাভাবে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের সাথে পরিচিত হয়েছিলো।

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই নামটি তাহলে কিভাবে এলো? এটি এখনও অজানা। চলুন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই সম্পর্কে আরও কিছু মজার তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

  • যখন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে এর প্রসার হলো তখন এটি ফাস্ট ফুডের তালিকায় চলে গেলো।
  • বেলজিয়ামরা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আবিস্কার করুক আর না-ই করুক, বর্তমানে ইউরোপে সবচেয়ে বেশি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাওয়া হয় বেলজিয়ামেই।
  • ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলোতে আলুর কাটার আকারের উপর ভিত্তি করে আলু ভাজাকে দুটি নামে ডাকা হয়। চিকন করে কাটা আলুকে বলা হয় ‘ফ্রাইস’ এবং একটু মোটা করে কাটলে বলা হয় ‘চিপস’। উত্তর আমেরিকায় দুইভাবে ভাজা আলুকেই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বলা হয়। সাথে শুধু জুড়ে দেয়া হয় আকার এবং সাথে কী খাওয়া হচ্ছে সেই অনুযায়ী নাম। যেমন স্টেক ফ্রাইস (মাংস এবং আলু), কার্লি ফ্রাইস (কুঁকড়ে কেটে ভাজা আলু) ইত্যাদি।

কার্লি ফ্রাইস; Source: Foods Now and Then

  • ১৮০১ সালে থমাস জেফারসন ফরাসি বাবুর্চি অনারে জুলিয়েনের সাথে পরিচিত হন যিনি তার বানানো খাবারের নাম বলেন ‘ফ্রান্সের পদ্ধতিতে আলু’ যেখানে রেসিপি ছিলো এরকম– ছোটো করে কাটা আলু লবণে ডুবিয়ে নরম করে ডুবো তেলে ভাজতে হবে। সেই থেকে এর নাম ‘ফ্রেঞ্চ ফ্রাই’ হয়েছে বলেও অনেকে ধারণা করেন।
  • বার্গার কিং এবং ম্যাকডোনাল্ড এর ফ্রেঞ্চ ফ্রাইতে চিনির মিশ্রণ স্প্রে করা হয়। এই মিশ্রণের কারণেই ফ্রেঞ্চ ফ্রাইগুলো সুন্দর সোনালি বর্ণ ধারণ করে এবং মুচমুচে হয়।

চিনির স্প্রে দেয়ায় এত সুন্দর রঙ ধারণ করে; Source: Make ME Foody

  • ম্যাকডোনাল্ডস-এ সাধারণত দুবার করে আলু ভেজে নেওয়া হয়। একবার ভেতরটা ভালমত ভেজে নেয়া হয়, পরেরবার উপরে মুচমুচে করে ভাজা হয়। পুরো প্রক্রিয়ায় ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে।
  • একেক দেশে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের পরিবেশন পদ্ধতি একেক রকম। আমেরিকানরা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের সাথে টমেটো কেচাপ পছন্দ করে, ইউরোপে মেয়োনিজের সাথে খেতে পছন্দ করে, ব্রিটিশরা খায় মল্ট ভিনেগারের সাথে, ফ্রেঞ্চরা সাধারণত কোনোকিছুর সাথে খায় না। অনেক দেশেই ব্লু চিজের সাথে লবণ দিয়ে ভাজা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাওয়া হয়।
  • বেলজিয়ামে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই প্রায় ভাজা হয়ে এলে আলুগুলোকে তেলে জড় করে একটি ডিম উপর থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কুসুমটা একটু সেদ্ধ হয়ে এলেই পোচ করা ডিম সহ ফ্রেঞ্চ ফ্রাই পরিবেশন করেন তারা।
  • ১৯ শতকে আইরিশগণ সম্পূর্ণরূপে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। যেকোনো আমিষের সাথেই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেতেন তারা।
  • ফ্রেঞ্চরা সাধারণত রান্নায় যেকোনো খাবারই চিকন করে কেটে খেতে পছন্দ করে। তখন ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের নাম ছিল ‘ফ্রেঞ্চ স্টাইল পটেটো ফ্রাইস’।
  • ১৯৩০ সাল পর্যন্ত আমেরিকানরা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের নাম দেয়নি। পরবর্তীতে তারা এই খাবারকে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই নাম দেয়।

ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের ইতিহাস শুনে এটি খেতে ইচ্ছা করাটাই স্বাভাবিক। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তৈরির রেসিপি।

উপকরণ

  • ১ কেজি আলু
  • ১ কাপ ময়দা
  • ১ টেবিল চামচ রসুন গুড়ো
  • ১ টেবিল চামচ পেঁয়াজ গুড়ো
  • ১ চা চামচ লবণ
  • ১ চা চামচ মরিচ গুড়ো
  • আধা কাপ পানি
  • ১ কাপ তেল

প্রস্তুত প্রণালী

  • আলু চিকন করে কেটে ঠাণ্ডা পানিতে চুবিয়ে রাখুন।
  • কড়াইতে তেল গরম হতে দিন।
  • বড় একটি পাত্রে ময়দা, পেয়াজ-রসুন-মরিচ গুড়ো, লবণ মিশিয়ে নিন।
  • শুকনো উপকরণের পাত্রে একটু একটু করে পানি মেশান। ঘন পেস্ট হয়ে এলে পানি মেশানো বন্ধ করে দিন।
  • ওই মিশ্রণে আলু ডুবিয়ে তেলে ভাজুন।

বাসায় বানিয়ে ফেলুন মজাদার ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস; Source: TipBuzz

কিছু পরামর্শ

  • আলু ঠাণ্ডা পানিতে চুবিয়ে রাখলে আলুতে দাগ পড়ে না।
  • আলাদা করে লবণ-হলুদে আলু মেখে রাখলে ভাজার সময় সেটা মুচমুচে হয় না।
  • ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তুলে প্লেটে দেবার আগে একটি টিস্যু বিছিয়ে নিন। অতিরিক্ত তেল ঝরে গিয়ে আলু মুচমুচে থাকবে।

ফিচার ইমেজ সোর্স – jennyfer cooks

Related Articles