বর্ণবাদ হলো এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি, যার মাধ্যমে মানবজাতিকে বিভিন্ন উঁচু-নিচু শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। এই বিভাজনে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য বিবেচ্য হয়। কখনো হয়তো গায়ের চামড়ার রং, আবার কখনো পেশা, গোত্র, অঞ্চল ইত্যাদি। মানবজাতির ইতিহাসে বর্ণবাদের নিপীড়ন একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্ণবাদের মতো জঘন্য প্রথার চর্চা করা হতো। দেশ ও অঞ্চল ভেদে বর্ণবাদের ধরনও ছিল ভিন্ন রকম। দক্ষিণ আফ্রিকায় এই বর্ণবাদ প্রথার মূলে ছিল গায়ের রং। সহজ করে বললে, কালো চামড়ার মানুষদের প্রতি সাদা চামড়ার মানুষেদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বৈষম্য।
আফ্রিকায় বর্ণবাদের শুরুটা হয়েছিল প্রায় সাড়ে তিনশ বছর আগে, যখন ইউরোপীয় সাদা চামড়ার বণিক সম্প্রদায় প্রথমবারের মতো কেপটাউন অঞ্চলে আসে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির কথা বলতে গেলে, অর্থাৎ একেবারে আইনের মাধ্যমে বর্ণবাদের বৈধতা শুরু হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, ১৯৪৮ সালে। কারণ ১৯৪৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় সরকার গঠন করে ন্যাশনালিস্ট পার্টি, যাদের নির্বাচনের ইশতেহার ছিল কালো চামড়ার মানুষদের প্রতি বৈষম্যমূলক ‘Apartheid‘ আইন পাশ করা। ১৯৪৩ সালে তখনকার একটি নামী পত্রিকায় ‘Apartheid‘ ধারণাটি প্রথম প্রচার করা হয়। ‘Apartheid‘ এর আক্ষরিক অর্থ পৃথককরণ বা আলাদাকরণ। অর্থাৎ কৃষ্ণাঙ্গদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সব ধরনের অধিকার থেকে আলাদা রাখতে বা পার্থক্য করতে ‘Apartheid‘ শব্দটি ব্যবহৃত হত।
যেভাবে শুরু
১
এই তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের কথা। ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল। ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। নেদারল্যান্ডের ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তৎকালে পুরো ইন্দোনেশিয়াকে তাদের কলোনিতে পরিণত করে। শুধু ইন্দোনেশিয়া নয়, এশিয়ায় অনেক ছোট-বড় উপনিবেশ ছিল ডাচদের। ফলে প্রতিনিয়ত লম্বা সমুদ্রযাত্রায় নেদারল্যান্ড থেকে ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়া হতো ডাচ বণিকদের।
ডাচরা এমন একটি জায়গার সন্ধান করছিলো যেটি নেদারল্যান্ড ও উপনিবেশ কলোনিগুলো থেকে মোটামুটি মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান করবে, যেন লম্বা সমুদ্রযাত্রায় এই মধ্যবর্তী জায়গা থেকে কলোনীগুলোতে তাজা মাংস, সবজি ও খাদ্য সরবারহ করা যায়। জন রাইবিক নামের এক ডাচ নাবিকের উপর এই দায়িত্ব অর্পিত হয়, যেন তিনি এমন একটি জায়গা খুঁজে বের করেন।
রাইবিক ১৬৫২ সালের কোনো একদিন একটি অভিযাত্রী দল নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাপ অঞ্চলে এসে উপস্থিত হন। ধীরে ধীরে সেখানে খামার ও খাদ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তিনি দেখলেন, এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবনমান অত্যন্ত নিম্নমানের। ফলে তিনি সহজেই তার খামারে স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়োগ দিতে শুরু করেন। তিনি এই অঞ্চলে অবস্থান করেন প্রায় ১০ বছর। এই সময়ে তিনি সেখানে তার নিজস্ব উদ্যোগে শ্বেতাঙ্গ জনবসতি গড়ে তোলেন। ১৬৮৫ সালে ক্যাপ এলাকায় ডাচ পরিবারের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২৫টি। এই পরিবারগুলো সেখানে রাইবিকের মতোই পশুপালন ও কৃষিকাজের সাথে জড়িত ছিল।
কয়েক বছর পরেই এই অঞ্চলে আগমন ঘটে ফরাসি ও জার্মান শ্বেতাঙ্গদের। ১৮২০ সালের পর ইংরেজরাও দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে বসতি গড়ে তোলে। বেশ কয়েক বছর আগেও দক্ষিণ আফ্রিকায় যে কট্টর বর্ণবাদ আমরা দেখেছি, তা মূলত ঐ ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গদেরই তৈরি। শ্বেতাঙ্গরা সেখানে খামার ও কৃষিকাজের পাশাপাশি কালো চামড়ার মানুষদের নিয়ে শুরু করে দাস ব্যবসা। তারা তাদের খামার ও কৃষিকাজের জন্য স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গদের নামমাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করাতো। এমন কোনো বৈষম্য ছিল না যা কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে করা হয়নি। ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গরা এই বৈষম্যের বৈধতাও দিয়েছিল ক্যালভিনবাদ নামের একটি খ্রিস্টান ধর্মীয় মতবাদের মাধ্যমে। এই মতবাদে বিশ্বাস করা হতো, শ্বেতাঙ্গরাই কেবল ঈশ্বরের মনোনীত সৌভাগ্যবান। এবং সাদা চামড়ার মানুষরাই কেবল শাসন করার অধিকার রাখে।
২
দিনে দিনে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের সংখ্যা বাড়ছিল। সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে তারা যেন আরও অত্যাচারী হয়ে ওঠে। ১৬৮৮-১৭০০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলে ২০০ ক্যালভিন মতাদর্শী ফরাসির আগমন ঘটে, যারা প্রত্যেকেই কালো চামড়ার মানুষদের ভীষণ ঘৃণার চোখে দেখতো। ক্যালভিন মতাদর্শীদের আগমনের ফলে আরো প্রকট হয়ে ওঠে বর্ণবৈষম্য, বেড়ে যায় কৃষ্ণাঙ্গদের উপর নিপীড়ন। ইউরোপ থেকে যেসব শ্বেতাঙ্গ জনগণ দক্ষিণ আফ্রিকায় এসেছিল, তাদের বলা হতো ‘Afrikaan‘, আবার অনেকেই ‘Afrikaan‘ শ্বেতাঙ্গদের ‘Boer‘ বলেও ডাকতো তাদের কৃষি পেশার জন্যে।
ইউরোপে ফরাসি বিপ্লবের পর দক্ষিণ আফ্রিকাতেও অনেক পরিবর্তন আসে। প্রথমদিকে ডাচ বণিকরা আফ্রিকায় আসায় এই অঞ্চলে আধিপত্যও ছিল তাদের। কিন্তু ১৮০৫ সালের পর ইংল্যান্ড ক্যাপ এলাকা দখল করে নেয়, এবং পরবর্তী প্রায় ১০০ বছর তারাই পরিচালনা করে। ফরাসি বিপ্লবের পর ইউরোপের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হলেও দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর জীবনমানে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। যদিও ইংল্যান্ড ১৮৩৪ সালে আফ্রিকায় দাসপ্রথা বিলুপ্ত করেছিল। তবে সামাজিক বৈষম্যের অবসান ঘটেনি। শ্বেতাঙ্গদের মানসিকতা এমন হয়ে গিয়েছিল যে, তারা কালো চামড়ার মানুষদের মানুষ নয় বরং ব্যবহারের পণ্য হিসেবেই অধিক বিবেচনা করতো।
১৮৪৬-৬৬ সালে ক্যাপ অঞ্চলে শ্বেতাঙ্গদের জনসংখ্যা অধিক হারে বৃদ্ধি পায়, ফলে কৃষি জমির সংকট দেখা দেয়। ফলে শ্বেতাঙ্গরা ক্যাপ অঞ্চলের পাশাপাশি আরো বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বসতি গড়ে তোলে। ইউরোপীয় সাদা চামড়ার মানুষদের এই স্থানান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘দ্য গ্রেট ট্রেক’।
আঠারো শতকের মাঝামাঝি দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এই বৃহৎ জনসংখ্যা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে। কৃষিকাজের পাশাপাশি আফ্রিকার বাণিজ্যও বৃদ্ধি পায়। ১৮৪৬ সালে সেখানে ১ লক্ষ পাউন্ড মূল্যের উল রপ্তানি হয়। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গরা তখনও সেই আগের মতোই নিপীড়িতই থেকে যায়। প্রথমে তারা কৃষিকাজ ও খামারে যেভাবে অল্প মূল্যে অবহেলিত হয়ে শ্রম দিত, তখনও এর চিত্র বদলায়নি।
৩
ক্রমবর্ধমান শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী শিল্পোন্নত ইউরোপের মতো দক্ষিণ আফ্রিকাতেও তাদের জীবনে আধুনিকতার স্বাচ্ছন্দ্য পেয়ে যায়। কৃষিনির্ভর আফ্রিকায় অর্থনৈতিক গতিশীলতা তৈরি হয়। এর মূলে ছিল ১৮৮৬ সালের পর স্বর্ণ ও হীরার খনির আবিষ্কার। আকস্মিক এই অঞ্চলে স্বর্ণ-হীরার মতো খনি আবিষ্কারের পর সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে আফ্রিকার অর্থনীতি হঠাৎ করেই ফুলে-ফেঁপে ওঠে। যেহেতু ব্রিটিশরা আফ্রিকা দখল করে নিয়েছিল, তাই স্বাভাবিকভাবেই সিংহভাগ খনির দখল ছিল ইংল্যান্ড থেকে আসা শ্বেতাঙ্গদের দখলে।
খনি আবিষ্কারের ফলে শ্বেতাঙ্গদের জীবনমান বদলালেও বরাবরের মতো কৃষ্ণাঙ্গরা সেই অবহেলিতই থেকে যায়। এবার তারা নিয়োগ পায় খনির শ্রমিক হিসেবে, আগের মতোই নামমাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে। শত বছর ধরে যে শোষণ চলে আসছিল তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। দাসপ্রথা সেই ১৮৩৪ সালে বিলুপ্ত হলেও ১৯০০ সালের পরেও কালো চামড়ার মানুষেদের উপর নির্যাতন কমেনি। পূর্বে তাদের কৃষি খামারে কাজ করানো হত, এরপর বাধ্য করা হয় খনির কাজ করার জন্য।
ঠিক এই সময়টাতে আফ্রিকায় নতুন আরো একটি দ্বন্দ্বের শুরু হয় আফ্রিকান শ্বেতাঙ্গ ও ইংল্যান্ড থেকে আসা শ্বেতাঙ্গদের মাঝে। বলে রাখা ভালো, দক্ষিণ আফ্রিকায় ইংল্যান্ডের শ্বেতাঙ্গরা আসার আগে থেকে যে শেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী ছিল তাদের আফ্রিকান (Afrikaan) বলা হতো। এই দ্বন্দ্বের মূলে ছিল ১৯১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ৪টি প্রদেশ নিয়ে গঠন করা পার্লামেন্ট ‘ইউনিয়ন অফ সাউথ আফ্রিকা’ (Union of South Africa)। দক্ষিণ আফ্রিকায় মোট শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর শতকরা ৬৫ ভাগ ‘Afrikaan‘ হলেও, খনি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের নেতৃত্বে ছিল ৩৫ ভাগ ইংরেজ শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ইউনিয়ন অফ সাউথ আফ্রিকা পার্লামেন্টে কৃষ্ণাঙ্গদের কোনো প্রতিনিধি ছিল না, ছিল না কোনো ভোটাধিকারও। অর্থাৎ শ্বেতাঙ্গরা এই পার্লামেন্ট গঠনের মাধ্যমেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলে।
৪
ইউনিয়ন অফ সাউথ আফ্রিকা গঠনের পর শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছিল ঠিক, তবে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি তাদের মনোভাবও আগের মতোই ছিল, যার প্রমাণ মেলে ১৯৪৮ সালে ‘ন্যাশনালিস্ট পার্টি’র ক্ষমতায় আসার পর আইন পাস করে বর্ণবাদ বৈষম্যের প্রয়োগের মাধ্যমে। ন্যাশনালিস্ট পার্টি ক্ষমতায় এসে কালো চামড়ার মানুষদের জন্য বেশ কিছু বৈষম্যমূলক আইন পাশ করে। যে আইনগুলো দেখলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, আফ্রিকার কালো চামড়ার মানুষগুলো যেন সে দেশের নাগরিকই নয়। অথচ এই কালো চামড়ার মানুষগুলোই দক্ষিণ আফ্রিকার আদি বাসিন্দা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পুরো পৃথিবীতেই পরিবর্তন আসে। সেই পরিবর্তনের ছোঁয়া আফ্রিকাতেও লাগে। ততদিনে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী নিজেদের অধিকার সম্বন্ধে কিছুটা হলেও সচেতন হয়েছে। শিক্ষা, সমাজ, রাষ্ট্র সবক্ষেত্রে তারাও অবদান রাখতে শুরু করে। তবে বর্ণবৈষম্য ছিল প্রতিটি ক্ষেত্রেই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের প্রতিটি জায়গায় বর্ণবাদের মাধ্যমে বৃহৎ কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে আলাদা করে রাখা হয়েছিল। তারা যেন শাসকদের হুমকি হয়ে না ওঠে সেজন্য দেশের নির্দিষ্ট কিছু অনুন্নত অঞ্চলে তাদের বসবাসের স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
শ্বেতাঙ্গরা কালো জনগোষ্ঠীকে বান্টু বলে সম্বোধন করতো। তারা কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য এমন কিছু অঞ্চল নির্ধারণ করলো যেখানে কৃষ্ণাঙ্গ গোষ্ঠীর মানুষজনেরা থাকবে এবং যে জায়গাগুলো থেকে শ্বেতাঙ্গ শোষণের বিরুদ্ধে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। এমন অঞ্চলগুলোর নাম দেওয়া হয় ‘বান্টুস্থান’। যে কালো মানুষগুলোর শ্রমের উপর ভর করে এতদিন তারা খনি ব্যবসা চালিয়েছে, যাদের নামমাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ব্যবহার করেছে, নিজেদের শোষণ টিকিয়ে রাখতে সেই মানুষগুলোকেই তারা উন্নত সভ্যতা থেকে দূরে ঠেলে দেয়, যেখানে সেই মানুষগুলোর ঠিকঠাক মৌলিক অধিকার প্রাপ্তিরও কোনো নিশ্চয়তা ছিল না।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের নিপীড়ন প্রায় সাড়ে তিনশ বছর ধরে টিকে ছিল। এই কালো অধ্যায় মুছে দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক কৃষ্ণাঙ্গ মুক্তিদূতের অবদান রয়েছে সত্য, তবে একজন শ্বেতাঙ্গর কথাও বলতে হয়। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্লার্ক, যিনি প্রথমবারের মতো ১৯৯২ সালে একটি গণভোটের আয়োজন করেন কৃষ্ণাঙ্গ বিরোধী আইনগুলো চলতেই থাকবে কি না সে বিষয়ে। অবশ্য এই গণভোটে অংশ নেয় শুধুমাত্র শ্বেতাঙ্গরাই। ভোট শেষে দেখা গেলো শতকরা ৬৯ ভাগ শ্বেতাঙ্গই বর্ণবাদ আইনের সংস্কার চায়।
এরপরেই কালো মানুষদের মহান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা জেল থেকে মুক্তি পান এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হন। শেষ হয় আফ্রিকার বর্ণবাদের কালো অধ্যায়। ম্যান্ডেলা বিজয়ী হওয়ার পর সাদা চামড়ার মানুষদের উপর কোনো প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ করেননি। বরং তিনি সাদা-কালোর ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে গেছেন আজীবন। তার এই মহানুভবতাই তাকে কালো মানুষদের নেতা থেকে বিশ্ব নেতায় পরিণত করে।