শ্যালন্স
ম্যাকমোহনের হাতে জোড়াতালি দিয়ে ১,২০,০০০ সেনা আর ৫০০ কামান। সৈন্যদের অনেকেই আনকোরা, কাউকে সবেমাত্র নৌবাহিনী থেকে ডেকে আনা হয়েছে। নতুন করে গঠিত ন্যাশনাল গার্ডকে (গার্ডে মোবিল) শ্যালন্সের সেনাদের সাথে একত্রিত করতে চাইলে তারা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। ফলে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়।
১৭ তারিখের এক সভায় নেপোলিয়নের সিদ্ধান্তহীনতা পরিষ্কার হয়ে উঠল। সম্রাট বুঝেছিলেন সেনাবাহিনীর সাথে থেকে তিনি তাদের বোঝা বাড়াচ্ছেন মাত্র। ফলে তিনি প্যারিসে ফিরে আসতে চাইলেন। কিন্তু সম্রাজ্ঞী ইউজিন বাদ সাধেন। উচ্চাকাঙ্ক্ষী ইউজিন আর তার যুদ্ধমন্ত্রি প্যালিকাও সম্রাটকে বললেন এখন সেনাদের ফেলে রেখে চলে আসা হবে কাপুরুষতা। এতে তাদের মনোবল তলানিতে গিয়ে ঠেকবে।
ম্যাকমোহনের জন্য সবথেকে ভাল বিকল্প প্যারিসে প্রত্যাবর্তন। তবে রসদপত্র আর বিশ্রামের জন্য শ্যালন্সে থামতেই হবে। কিন্তু এই অবসরে অগ্রসরমান প্রুশিয়ানরা তাদের ঘিরে ফেললে তাদের অবস্থান বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়বে। প্যারিসের সামরিক গভর্নর ট্রশো জানিয়ে দিলেন এই পরিস্থিতিতে পিছিয়ে প্যারিসে চলে আসা পরাজয় স্বীকারের শামিল। কোনক্রমেই তা করা চলবে না। ম্যাকমোহন তখন বাজাইনের সাথে মেটজে যোগ দেবার কথা চিন্তা করলেন।
অনেক চিন্তা-ভাবনার পর ২১ আগস্ট ম্যাকমোহন প্রুশিয়ানদের এড়াতে সম্রাটকে সাথে নিয়ে উত্তর-পশ্চিমে যাত্রা করলেন। তাদের রাস্তা সোজাসুজি গেছে ভার্দুন আর মেটজ বরাবর। ম্যাকমোহনের যাত্রাপথ তাকে নিয়ে যাবে বেলজিয়ান সীমান্তের খুব কাছে, ফলে প্যারিস অনেকটা অরক্ষিত হয়ে পড়ে।
ম্যাকমোহনের সঙ্গে থাকা রসদপত্র আর যুদ্ধের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি অপ্রতুল। বাজাইন সংবাদ পাঠালেন ম্যাকমোহন কাছাকাছি আসলে তিনি অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করবেন, লক্ষ্য থাকবে বেলজিয়ান সীমান্তের কাছে মন্টমেডি দুর্গে চলে যাওয়া। সেদিকে যেতে পার হতে হবে ময়েজ নদীর সেতু, কাজেই ম্যাকমোহনের গন্তব্য সেদিকেই।
ম্যাকমোহন যখন রাস্তায়, তখন বাজাইন অবরোধ ভাঙার চেষ্টা চালান। ২৭ আগস্টের পরিকল্পিত আক্রমণ বাতিল হয়ে যায় প্রতিকূল আবহাওয়ায়। ৩১ আগস্ট দ্বিতীয় চেষ্টা পার্শ্ববর্তী গ্রামের নামে নয়েজিভিলের লড়াই বলে পরিচিত। দুদিন চলা এই চেষ্টাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। সাড়ে তিন হাজার ফরাসি এ সময় হতাহত হলো।
ম্যাকমোহনের খবর মল্টকের কানে পৌঁছে ২৪ আগস্ট। ওদিকে প্রুশিয়ান থার্ড আর্মি সেদিনই শ্যালন্সের উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়। আর্মি অফ ময়েজ ছিল তার উত্তরপূর্বে। মল্টকের আদেশে দুই দলই ম্যাকমোহনের দিকে রওয়ানা দেয়। ২৬ তারিখ ম্যাকমোহনের অশ্বারোহীদের একদলের সাথে স্যাক্সোনদের দেখা হয়। ম্যাকমোহন যুদ্ধের আশঙ্কায় দ্রুত অবস্থান নেন। একদিন অপেক্ষা করেও কোনো শত্রুসেনার দেখা না পেয়ে তিনি আবার যাত্রারম্ভ করলেন।
২৮ আগস্ট ম্যাকমোহনের বাহিনী এসে পড়ল পাহাড়-জঙ্গলে ছাওয়া দুর্গম আর্ডেনেস অঞ্চলের দক্ষিণ প্রান্তে। এই অঞ্চল উত্তরে বেলজিয়ামের ভেতর গিয়ে পড়েছে। আর্মি অফ ময়েজ দক্ষিণ থেকে তার দিকে ধেয়ে আসছে। স্যাক্সোন সেনারা ততক্ষণে দখল নিয়েছে ময়েজের সেতুর। ফলে মন্টমেডির রাস্তা বন্ধ। পাগলের মতো ম্যাকমোহন নদী পার হবার অন্য কোনো রাস্তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করলেন। তার সেনারা দিকভ্রষ্টভাবে ঘুরতে লাগল। আড়াল থেকে নজর রাখা প্রুশিয়ান অশ্বারোহীরা মাঝে মাঝেই তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালাতে থাকে। ফলে সেনারা মানসিক এবং শারীরিকভাবে ভেঙে পড়ছিল। এমন অবস্থায় ম্যাকমোহন উপায়ান্তর না দেখে মোজেলের অববাহিকায় সেডান শহরে চলে যাবার ফয়সালা করেন, বেলজিয়ান সীমান্ত থেকে তা মাত্র সাত মাইল দূরে।
ব্যাটল অফ সেডান
পাহাড় জঙ্গলের ভেতর দিয়ে আসতে গিয়ে ম্যাকমোহনের সেনারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ২৯ আগস্ট নুয়ার্ট গ্রামের কাছে স্যাক্সোনির সেনারা একদল ফরাসির নাগাল পেয়ে যায়। ফরাসিরা দ্রুত পালিয়ে চলে যায় বিউমন্ট গ্রামে। কিন্তু সেখানেও স্যাক্সোনি আর বাভারিয়ান রেজিমেন্ট উপস্থিত। ফরাসিরা কিছু হতাহত ফেলে আবার পশ্চাদপসরণ করতে থাকে। মিউজ নদী পার হয়ে ক্ষুৎপিপাসায় ক্লান্ত ম্যাকমোহনের সৈন্যরা ধুঁকতে ধুঁকতে অবশেষে সেডানে এসে হাজির হলো।
সেডানে থেকে যাওয়া ম্যাকমোহনের ইচ্ছা নয়। তিনি আরো পশ্চিমে সরে যেতে চাইছিলেন। কিন্তু সৈনিকদের অবস্থা দেখে বাধ্য হয়ে তাকে একদিনের জন্য যাত্রাবিরতি করতে হলো। তিনি আশা করছিলেন প্রুশিয়ানরাও হয়তো একটু বিরতি দেবে। কীসের কী! ৩১ তারিখ দলে দলে জার্মানরা আসতে শুরু করে। সেডানের পশ্চিমে ডনশেরি গ্রামের নিকটে মিউজের একটি সেতু তারা দখল করে নেয়। বাভারিয়ানরা ঘাঁটি করে বাযেলিস গ্রামের পূর্বদিকের সেতুর কাছে, গ্রামে অবস্থান নেয়া ফরাসিদের বিপরীতে। স্যাক্সোন রেজিমেন্ট নদীর উত্তর ধার ঘেঁষে চলা প্রুশিয়ানদের সাথে যোগ দেয়।
বিসমার্কের চিন্তা ছিল বেলজিয়ান সীমান্ত কাছে হওয়ায় ফরাসি সৈন্যরা সেদিক দিয়ে সরে পড়তে পারে। তিনি বেলজিয়ামের কাছে বার্তা পাঠালেন যাতে সীমান্ত অতিক্রম করা সকল ফরাসি সৈনিককে নিরস্ত্র করা হয়, অন্যথায় প্রুশিয়ান বাহিনী সেই কাজে বেলজিয়ান সীমান্ত অতিক্রমের অধিকার রাখবে। বেলজিয়ামের সহযোগিতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তিনি সেডানের দিকে নজর দিলেন। সেখানে পয়লা সেপ্টেম্বর ২,২৪,০০০ সতেজ প্রুশিয়ান আক্রমণ করল ম্যাকমোহনের ক্লান্ত ফরাসিদের।
ফরাসি সেনারা সেডানের পূর্ব, পশ্চিম আর উত্তর ঘিরে শক্ত অবস্থান নিয়েছিল। সকালের কুয়াশা কেটে যেতে না যেতেই বাযেলিসের দিকে এগিয়ে এল বাভারিয়ানরা। তুমুল সংঘর্ষে বহু মানুষ হতাহত হয়, যাদের অনেকে ছিল গ্রামের সাধারণ কৃষক। এ নিয়ে পরে দুই পক্ষই এক অপরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিল। ফরাসিরা দাবি করেছিল বাভারিয়ানরা সাধারণ মানুষের উপর গণহত্যা চালিয়েছে। অন্যদিকে বাভারিয়ানদের দাবি ফরাসিরা বেসামরিক নাগরিকদের হাতে অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ চালাচ্ছিল, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। যা-ই হোক না কেন, শিগগিরি স্যাক্সোনরা এসে বাভারিয়ানদের সাথে যোগ দিলে ফরাসিরা পালিয়ে গেল সেডানে। এদিকে ম্যাকমোহন বাযেলিস পরিদর্শনে এসে আহত হলে তাকেও বয়ে নিয়ে যাওয়া হলো শহরে। সেনাদলের নেতৃত্ব বর্তাল জেনারেল ডুক্রোর হাতে।
এদিকে ডনশেরি থেকে প্রুশিয়ান কর্পস নদী পার হয়ে অগ্রসর হয়। পূর্ব দিক থেকে আসা আরেকটি প্রুশিয়ান বাহিনী তাদের সাথে একত্রিত হলো। ডুক্রো অবিলম্বে সেনাদের পিছিয়ে আসার নির্দেশ জারি করেন। প্যারিস থেকে প্যালিকাও পাঠিয়েছিলেন জেনারেল এম্যানুয়েল উইম্পফেনকে। তার উপর আদেশ ছিল প্রয়োজনে ম্যাকমোহনকে প্রতিস্থাপন করা। তিনি পাল্টা আদেশ দেন, পিঠ দেখানো চলবে না। দুই জেনারেলের বিবাদ ফরাসিদের বিশৃঙ্খলাই সুস্পষ্ট করে তোলে। প্রুশিয়ানরা ততক্ষণে সেডানের চতুর্দিক ঘিরে পাহাড়ি ঢালে অবস্থান নিয়েছে। ফলে পুরো ফরাসি বাহিনী অবরুদ্ধ। শহর ঘিরে তারা ছোট ছোট গ্রামে নিজেদের ঘাঁটি বানিয়ে প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে থাকে।
প্রুশিয়ানরা ইনফ্যান্ট্রি না নামিয়ে ৫০০ কামান তাক করল শহর আর তাকে ঘিরে ফরাসি অবস্থানের দিকে। মুহুর্মুহু গোলার আওয়াজে কেঁপে উঠল চারদিক। আকাশ আচ্ছন্ন হয়ে গেল কালো ধোঁয়াতে। কাছেই ফ্রেনয়েস গ্রামের নিরাপদ অবস্থান থেকে তখন লড়াই পর্যবেক্ষণ করছিলেন রাজা উইলিয়াম, বিসমার্ক, মল্টকে আর রুনসহ আরো কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
প্রবল গোলাবর্ষণে টিকতে না পেরে মেটজের আশেপাশের সমস্ত অবস্থানই ফরাসিরা আস্তে আস্তে ছেড়ে দিয়ে সেডানে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছিল। নেপোলিয়ন তখন পেটের ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। পেটে পাথরের জন্য তার এই সমস্যা আগে থেকেই ছিল। এর মাঝেই তিনি ঘোড়া ছুটিয়ে যাচ্ছিলেন এক ফরাসি অবস্থান থেকে আরেক অবস্থানে, মনে মনে কামনা করছিলেন মৃত্যুর।
বিকালের দিকে পশ্চিমে ফ্লয়িং (Floing) গ্রামে শেষ ফরাসী অবস্থানের পতন ঘটে। জেনারেল মার্ঘুইরিটের নেতৃত্বে ফরাসী অশ্বারোহী বাহিনী অনন্যোপায় হয়ে তিন তিনবার এখানে চার্জ করে। উদ্দেশ্য প্রুশিয়ান বেষ্টনী ভেঙে সৈন্যদের পালানোর পথ করে দেয়া। প্রথম চার্জের সময়েই জেনারেল নিজে মারা যান। পরবর্তী চার্জেও বহু ঘোড়া আর অফিসার মারা গেল। বলা হয়, প্রচণ্ড গুলির মুখে ফরাসি অশ্বারোহীদের বীরের মতো ঘোড়া ছুটিয়ে আসতে দেখে উইলিয়াম তাদের সাহসিকতার প্রশংসা করেছিলেন। জনশ্রুতি আছে- শেষবার চার্জ করার মতো অল্প কিছু অশ্বারোহী অবশিষ্ট ছিল। তারা যখন ঘোড়া হাঁকিয়ে আসতে থাকে তখন প্রুশিয়ানরা তাদের স্যালুট করে নিরাপদে বেষ্টনী পার হয়ে চলে যেতে দেয়।
বিকাল গড়িয়ে যাবার সাথে সাথে ফরাসি প্রতিরোধ নেমে যায় শূন্যের কোঠায়। আশেপাশের দালানকোঠা আর বনে তারা আশ্রয় নেয় কামানের হাত থেকে রক্ষা পেতে। অনেকে সেডানের দুর্গে প্রবেশের চেষ্টা করে, যদিও ফটক তখন বন্ধ। শহরের উত্তরদিকে বনের সৈন্যরা প্রথমে সাদা পতাকা উত্তোলন করে, তাদের দেখাদেখি অন্যান্য জায়গাতেও সাদা পতাকা নাড়তে থাকে ফরাসিরা। বিকাল পাঁচটার দিকে নেপোলিয়ন নিজেই অস্ত্র নামিয়ে রাখার আদেশ দেন। এর মধ্যেই ১,০০০ ফরাসি শেষ চেষ্টা হিসেবে নিকটবর্তী বালাইন গ্রামে ঢুকে সাময়িকভাবে সেখানে থাকা বাভারিয়ানদের হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়। তবে এখান থেকে আর অগ্রসর হতে পারল না। ১,০০০ ফরাসির এই চেষ্টা ব্যাটল অফ লাস্ট কারট্রিজ নামে পরিচিত।
সেডানের দুর্গে সাদা পতাকা উত্তোলিত দেখে প্রুশিয়ান প্রতিনিধি দেখতে এলেন কী ব্যাপার। তার মাধ্যমে নেপোলিয়ন আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দিয়ে উইলিয়ামের কাছে চিঠি পাঠান,
“Having been unable to die in the midst of my troops, there remains nothing for me but to deliver my sword into Your Majesty’s hands. I am Your Majesty’s true brother, Napoleon.”
১৮৭০ সালের সেপ্টেম্বরের ২ তারিখ বিসমার্কের সামনে নেপোলিয়ন আত্মসমর্পণের চুক্তি সই করেন সকাল এগারটায়। আর্মি অফ শ্যালন্সের ১,২৪,০০০ সেনার ১৭,০০০ এর মাঝেই হতাহত আর ২১,০০০ বন্দি হয়েছিল। ৩,০০০ পালিয়ে গিয়েছিল বেলজিয়ামে, যেখানে বিসমার্কের দাবি অনুযায়ী তাদের আটক করা হয়। ফলে ৮৩,০০০ ফরাসি শেষ পর্যন্ত অস্ত্র সমর্পণ করে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর নেপোলিয়নের সাথে দেখা করেন উইলিয়াম, ফরাসি সম্রাটকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রুশিয়ায়। যুদ্ধের শেষে তাকে মুক্তি দেয়া হলেও তিনি দেশে ফিরে যাননি। শেষ জীবন তিনি কাটান ইংল্যান্ডে, ইউজিনও তার সাথে ছিলেন। সেখানেই ১৮৭৩ সালে নেপোলিয়নের মৃত্যু হয়।
আত্মসমর্পণের সময় বিসমার্কের মাথায় চিন্তা ছিল প্রয়োজনে নেপোলিয়নকে আবার ফরাসি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করার, তবে তখন তিনি পরিণত হতেন প্রুশিয়ার হাতের পুতুলে। তবে পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ এই পরিকল্পনায় পানি ঢেলে দেয়।
জাতীয় প্রতিরক্ষা সরকার (গভর্নমেন্ট অফ ন্যাশনাল ডিফেন্স)
বাজাইনের বাহিনী মেটজে অবরুদ্ধ, আর নেপোলিয়ন আত্মসমর্পণ করেছেন। ফলে প্যারিস রক্ষার্থে ফরাসি সেনাবাহিনী বলতে এখন কিছুর অস্তিত্ব নেই। সশস্ত্র বাহিনী বলতে কেবল ন্যাশনাল গার্ড, তারা সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখে সংসদ উৎখাত করল। ইউজিন পালিয়ে গেলেন। নতুন সরকারের নাম হল জাতীয় প্রতিরক্ষা সরকার বা গভর্নমেন্ট অফ ন্যাশনাল ডিফেন্স। তারা কায়েম করল থার্ড রিপাবলিক। জেনারেল ট্রশো হলেন প্রেসিডেন্ট, উদারপন্থী রিপাবলিকান রাজনীতিবিদ জুলস ফ্যাভ্রে ভাইস-প্রেসিডেন্ট আর উগ্রপন্থী লিও গ্যাম্বেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভার নেন।
৬ সেপ্টেম্বর নতুন সরকার ঘোষণা দিল অনেক হয়েছে, তারা শান্তি চান। তবে ফ্রান্সের একটুকরো ভূমিও শত্রুদের হাতে তুলে দিতে তারা সম্মত নন। বিসমার্কও লড়াই চালিয়ে যেতে উৎসাহী নন। তার উদ্দেশ্য অর্জিত হয়েছে। দক্ষিণ জার্মানি কার্যত উত্তরের কনফেডারেশনের সাথে এক হয়ে গেছে। তিনি নমনীয় শর্তে শান্তিচুক্তির প্রস্তাব করলেন। তার কথা ছিল ফ্রান্স স্ট্র্যাসবুর্গ, মেটজ আর এর সাথে সংযুক্ত অ্যালসাসে আর লরেইনের কিছু অংশ ছেড়ে দেবে। অ্যালসাসে আর লরেইনের ব্যাপারে দক্ষিণ জার্মান লিবারেল আর জার্মান সংবাদপত্রগুলোর চাপ ছিল, কারণ এসব এলাকায় অনেক জার্মান ভাষাভাষী লোক বাস করত।
ন্যাশনাল গভর্নমেন্ট ফরাসি উপনিবেশগুলো ছেড়ে দিতে রাজি ছিল, ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ কোনো জায়গা নয়। ফলে শান্তির চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। বিসমার্ক অ্যালসাসে নিয়ে শর্ত দেয়ায় ইউরোপেও ফ্রান্সের পক্ষে জনমত সৃষ্টি হয়। বিখ্যাত ইতালিয়ান মুক্তিযোদ্ধা গ্যারিব্যাল্ডি প্যারিসে আসেন ফ্রান্সের পক্ষে লড়াই করতে। যুদ্ধের বাকি সময় তিনি এখানেই ছিলেন।