Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সাকিব, মুশি ও মুস্তাফিজ: আইসিসি ওয়ানডে একাদশে বাংলার সেরা তিন

প্রতি বছরের মতোই বিশ্ব ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) প্রকাশ করেছে গত হওয়া বছরের ফরম্যাটভেদে সেরা একাদশ। আর সেই প্রক্রিয়াতেই ওয়ানডে ফরম্যাটে ঠাঁই মিলেছে বাংলাদেশের তিন-তিনজন ক্রিকেটারের। অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিমের সাথে এই তালিকায় আছেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। এই যে, তিনজন ক্রিকেটার একইসাথে ঠাঁই পেয়ে গেলেন আইসিসির গোটা একটা বছরের ওয়ানডে ফরম্যাটের বিশ্ব একাদশে, এই তিন ক্রিকেটারের পুরো বছরের পারফরম্যান্স কেমন ছিল? কেনই বা তারা ঠাঁই পেলেন এমন আভিজাত্যের এক একাদশে? 

Image Credit: ICC

সাকিব আল হাসান

টি-টোয়েন্টিতে ভরপুর এক বছরে সাকিব আল হাসান ওয়ানডে খেলেছেন মাত্র ৯টি। এই ৯ ওয়ানডের ৫ টি হয়েছে মিরপুরে, একটি সাগরিকার পাড় চট্টগ্রামে আর বাকি তিনটি ওয়ানডে তিনি খেলেছেন হারারে স্পোর্টস গ্রাউন্ড, জিম্বাবুয়েতে। একদম সাদামাটাভাবে যদি বলতে হয়, তাহলে এই ৯ ওয়ানডেতে তিনি রান করেছেন ২৭৭, যার ব্যাটিং গড় ছিল বেশ উচ্চ – ৩৯.৫৭! তবে জেতা ম্যাচগুলিতে সাকিবের গড় অবশ্য আরো বেশি, ৪৫.৫০! ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি সাকিব আল হাসানের মুন্সিয়ানা বজায় ছিল বোলিংয়েও। বল হাতে ১৭.৫২ গড়ে উইকেট নিয়েছেন মোট ১৭টি, এই সময়ে সাকিব আল হাসানের পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তিও আছে একটি।  

ব্যাট হাতে ২০২১-এ সবচেয়ে সেরা ম্যাচটা সাকিব আল হাসান খেলেছেন হারারে স্পোর্টস গ্রাউন্ডে। ১৮ জুলাই, ২০২১ এর সেই ম্যাচটাতে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমেছিল জিম্বাবুয়ে। তবে সাকিব আর শরিফুলের বোলিং তোপে ২৪০-এর বেশি করতে পারেনি স্বাগতিকেরা। ২৪১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে অবশ্য বাংলাদেশও খুব একটা যুতসই শুরু করতে পারেনি। অধিনায়ক তামিম ইকবাল আর লিটন দাস উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ৩৯ রান যোগ করার পর যখন তামিম ইকবাল ড্রেসিংরুমে ফিরে যান, ঠিক তখনই ক্রিজে আসেন সাকিব আল হাসান। তবে লিটন, মিথুন, বা মোসাদ্দেক কেউই সাকিব আল হাসানকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেনি। কিন্তু ওপ্রান্ত থেকে একের পর এক উইকেট পড়ে গেলে কী হবে, ঠিকই ক্রিজে তাঁবু গেঁড়ে রান নিতে পারেন সাকিব। শেষ অব্দি অবশ্য মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর সাইফুদ্দিন ছাড়া আর কারো সাথে বড়সড় পার্টনারশিপ তিনি করতে পারেননি; তবে তাতেই বা কী যায় আসে! স্কোরকার্ডে তো ঠিকই লেখা আছে, ১০৯ বলে ৯৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়ছেন তিনি – তাও কি না ৫ বল হাতে রেখে।

সাকিব আল হাসানের এই ৯৬ রানের ইনিংসে অবশ্য আরেকটু বিশেষত্ব যোগ করা যায়। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর মতে, এই ইনিংস খেলার সময় সাকিব আল হাসানের ব্যাটিংয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল শতকরা ৭৯ ভাগ। সবচেয়ে প্রোডাক্টিভ শট অফ ড্রাইভে সবচেয়ে বেশি ১৮ রান নিলেও মূলত উইকেটের চারপাশেই সমানে রান করেছেন তিনি। তবে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হওয়ার পরও সতীর্থকে সাফল্যের ভাগ দিতেও কিন্তু ভুল করেননি তিনি,

“আজকে আমাকে খেলতেই হতো। আমি খুবই খুশি, তবে সাইফুদ্দিনকেও ক্রেডিট দিতে হবে। উইকেট তুলনামূলক ধীরগতির ছিল। সোজা বল করলেই খেলাটা জটিল হচ্ছিল, আমরা যেটাতে বেশ কিছু উইকেট হারিয়েছি।”

বছরজুড়েই ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যাটে-বলে সমানে পারফর্ম করেছেন সাকিব; Image Source: Getty Images

 

বল হাতে সাকিব আল হাসান সবচেয়ে সেরা ম্যাচটা কাটিয়েছেন ব্যাটিংয়ে ঔদ্ধত্য দেখানোর আগের ম্যাচেই। জিম্বাবুয়ে সফরের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই বল হাতে তিনি নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। ম্যাচের শুরুতে টসে জিতে জিম্বাবুয়ে যখন ফিল্ডিংকে বেছে নিল, ব্যাট হাতে তখন দুর্বার হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। লিটন দাসের সেঞ্চুরির সুবাদে হারারে মাঠে বাংলাদেশের স্কোরকার্ডে জমা পড়ে ২৭৬ রান। বল হাতে সাফল্য দেখালেও এ ম্যাচে ব্যাট হাতে অবশ্য ১৯ রানের বেশি করতে পারেননি সাকিব, মুজারাবানির বলে রায়ান বার্লের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। তবে ২৭৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমেই সাকিব আল হাসান নামক ত্রাসের স্বীকার হয় জিম্বাবুয়ে। ম্যাচের ১৪.২ ওভারের সময় ব্রেন্ডন টেলরকে টপ এজের ফাঁদে ফেলে শর্ট ফাইন লেগে তাসকিনের ক্যাচ বানান তিনি। সাকিব আল হাসান সম্ভবত এই ক্যাচটিকে দীর্ঘদিন মনে রাখতে চাইবেন। টেলরের এই উইকেটের মধ্য দিয়েই তিনি সেদিন বনে গেছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি উইকেট সংগ্রাহক। এভাবেই একে একে বার্ল, মুজারাবানি, চাকাভার পর ২৯তম ওভারের সময়ে রিচার্ড গ্রাভার উইকেট নিয়ে নিজের পাঁচ উইকেটের মাইলফলক পূরণ করেন তিনি। সাকিব আল হাসান অবশ্য এই পাঁচ উইকেট নেওয়াতে নিজের স্পিনার সত্ত্বার পুরোটাকেই ব্যাবহার করেছিলেন। ইএসপিএন ক্রিকইনফো যেমনটা বলছে, পাঁচ উইকেটের চারটিই তিনি পেয়েছিলেন গুড লেংথে বল করে। 

মুশফিকুর রহিম

ওয়ানডে ক্রিকেটে স্বপ্নের মতোই একটি বছর কাটিয়েছেন মুশফিক; Images Credit: Getty Images

২০২১ সালে সাকিব আল হাসানের সমান মোট ৯টি ওয়ানডেই খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। এই ৯ ওয়ানডেতে তিনি ৫৮.১৪ গড়ে করেছেন ৪০৭ রান। তবে স্বল্প খেলা এই ৯ ওয়ানডেতেই মুশফিকুর রহিম দেখে ফেলেছেন আরাধ্য সেঞ্চুরির দেখা। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুরের সেই সেঞ্চুরি বাদেও তিনি আরো দুটো পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংসও খেলেছেন এ সময়ে। তবে এত সব কিছুর পরও মুশফিকুর রহিমের এ বছরের বিশেষত্ব অন্য জায়গাতে। এমনিতেই এ বছরের ব্যাটিং গড় তাঁর চোখধাঁধানো, তার ওপর জেতা ম্যাচের ব্যাটিং গড় মুশফিকুর রহিমকে মোটামুটি নির্দিষ্ট একটা উচ্চতাতেই নিয়ে গেছে। কেননা, নিজের দল জিতেছে এমন ম্যাচে মুশফিকুর রহিম ব্যাট করেছেন ১০০.৩৩ গড়ে! তবে ঘরের মাঠে ছড়ি ঘোরালেও ঘরের বাইরে অবশ্য মুশফিক খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। অন্তত ২৬ গড়ে ৭৮ রান তো সেরকম কিছুরই সাক্ষ্য দেয়। 

২০২১-এ নিজের সবচাইতে সেরা ম্যাচটা তিনি খেলেছিলেন ২৫ মে’তে। মিরপুরের সেই ম্যাচে চামিরা, হাসারাঙ্গা, সান্দাকানে সাজানো শ্রীলঙ্কার বৈচিত্র্যময় বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে মুশফিকুর রহিম রীতিমত ছড়ি ঘুরিয়েছিলেন। চামিরার বলে পয়েন্টে বান্দারার ক্যাচ হওয়ার আগে মুশফিকুর রহিম খেলে ফেলেছিলেন ১২৭ বলে ১২৫ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস। তবে ম্যাচের শুরুটা কিন্তু এতটা দুর্দান্ত ছিল না। টসে জিতে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ দল প্রথমেই পড়েছিল ব্যাটিং বিপর্যয়ের সম্মুখে। ব্যাটিংয়ে নেমে সেদিন বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি স্কোরকার্ডে যোগ করতে পেরেছিল মাত্র ১৫ রান। তবে তামিম ইকবাল ফিরে যাওয়ার পর সাকিব আল হাসানের সাথেও লিটন দাসের পার্টনারশিপ খুব একটা আলোর মুখ দেখেনি। ৩ বলে ০ রান করে সাকিব যখন প্যাভিলিয়নে ফিরে যাচ্ছেন, তখনই ক্রিজে আগমন ঘটে মুশফিকুর রহিমের। ২০৫ মিনিট ক্রিজে থেকে ১০ চারের বিনিময়ে তিনি যে ইনিংসটা খেললেন, ইএসপিএন ক্রিকইনফোর বিশ্লেষণ অনুযায়ী সেই ইনিংসে নিজের ব্যাটের ওপর মুশফিকুর রহিমের নিয়ন্ত্রণ ছিল শতকরা ৯০ শতাংশ, সবচেয়ে উদ্ভাবনী শট হিসেবে ফ্লিক শটে তিনি এক চারের বিনিময়ে করেছেন ২৭ রান। 

মুস্তাফিজুর রহমান

টানা বছরভর ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পুরষ্কার পেয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান; Image Credit: Getty Images

সাদা পোশাকের ক্রিকেটে অনিয়মিত হলেও রঙিন পোশাকে মুস্তাফিজুর বরাবরই পরিচিত এক নাম। আর সেজন্যেই হয়তো জ্যেষ্ঠ দুই ক্রিকেটারের চাইতে ২০২১ সালে তিনি ওয়ানডে খেলেছেন একটি বেশিই। ২০২১ সালে নিজের খেলা ১০ ওয়ানডেতে অবশ্য দুর্দান্ত বোলিং প্রতিভারই স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। এ বছর তিনি ১৩.০৯ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ৪৩টি, ওভারপ্রতি খরচ করেছেন মাত্র ৪.৩১ রান। শুধু তা-ই নয়, একেকটা উইকেট পেতে মুস্তাফিজকে বল করতে হয়েছেও মাত্র ১৮টি করে (১৮.২)। আর যদি জেতা ম্যাচের হিসেব করতে হয়, তাহলে মুস্তাফিজের পারফরম্যান্স আরো জ্বলজ্বলে হয়ে থাকবে। ১১.২৫ বোলিং গড়ে ৩.৮৬ ইকোনমিতে ৯ উইকেট নেওয়া অন্তত সেটাই আমাদেরকে বলে।  

২০২১ সালের সেরা ম্যাচটা মুশফিক খেলেছেন ঘরের মাঠ মিরপুরে। ২৫শে মে’র ঐ ম্যাচটাতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি নিয়েছিলেন তিনটে উইকেট। তবে এই ম্যাচের মুস্তাফিজের পারফরম্যান্সকে শুধু উইকেট সংখ্যার হিসেবে আটকে ফেললে অবশ্য ভুল হবে। আধুনিক ক্রিকেটের এই যুগে যেকোনো পিচেই ব্যাটসম্যানেরা থাকেন আক্রমণাত্মক। আর সেখানে এই ম্যাচে মুস্তাফিজের ইকোনমি রেট ছিল ২.৬৬। বৃষ্টি বাধার কারণে অবশ্য ৬ ওভারের বেশি বল করার সুযোগ তিনি পাননি। তবে এর মধ্যেই যা করার, করে ফেলেছেন; বিশেষত শ্রীলঙ্কান ওপেনার দানুশকা গুনাথিলাকাকে অফ স্ট্যাম্পের বাইরের এক বলে বোকা বানিয়ে ডিপ পয়েন্টে থাকা সাকিব আল হাসানের ক্যাচ বানিয়ে শ্রীলঙ্কাকে শুরুতেই ধ্বসিয়ে দেন তিনি। মূলত মুস্তাফিজ জাদুতেই এই ম্যাচে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন মেথডে ১০৩ রানের বিশাল জয় পায় বাংলাদেশ। শুধু অবশ্য এটুকুই নয়, ম্যাচজুড়ে নিজের বোলিংহয়ে বুদ্ধিমত্তা আর ধারাবাহিকতারও স্বাক্ষর রাখেন তিনি। ইএসপিএন যেমনটা বলছে, তিন উইকেটের মধ্যে ডানহাতি দুই ব্যাটসম্যানের উইকেটই তিনি নিয়েছেন ফুল লেংথে বল করে। আবার বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের উইকেট নেওয়ার সময় তিনি পেস বোলারদের ত্রাস তৈরি করা ডেলিভারি শর্ট লেংথের সাহায্য নিয়েছেন। 

Image Credit: Getty Images

বাংলাদেশের তিনজন ক্রিকেটার একইসাথে আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে দলে জায়গা পেয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে আনন্দের সংবাদ। সাকিব আল হাসানের মতে, এটা ওয়ানডেতে ভালো দল হয়ে ওঠার স্বীকৃতি। দেশের মিডিয়াকে তিনি বলেছেন,

“বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য খুবই ভালো লক্ষণ এটা। কয়েক বছর ধরেই আমার কাছে মনে হয়, ওয়ানডেতে আমরা বেশ ভালো দল, দেশে এবং দেশের বাইরেও। এর ফলে বাংলাদেশ যে ওয়ানডেতে ভালো ক্রিকেট খেলছে, এটা তারই একটা স্বীকৃতি।”

বাংলাদেশকে অবশ্য পরিপূর্ণভাবে ভাল ওয়ানডে দল হতে হলে আরো দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পসরা বসাতে হবে। তবে, আপাতত তিনজনের এই স্বীকৃতিও নিশ্চয়ই দেশটির ক্রিকেট অনুরাগীদের জন্যে বিশেষ কিছুই!

This feature is written in Bangla, based on three cricketer's performance who have been nominated in ICC One-day Xi of 2021. Necessery references are attached as hyperlink.

Images Credit: Getty Images

Related Articles