Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফেডেক্স: দেউলিয়াত্বের হাত থেকে ফিরে ইতিহাস রচনা | ১ম পর্ব

ফেডেক্স ও ফিনিক্স; নাম দুটো, কিন্তু উচ্চারণ বেশ কাছাকাছি। রূপকথার ফিনিক্স পাখির কথা আমরা জানি। গ্রিক পুরাণে এই পাখিকে পুনর্জন্মের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। পৌরাণিক তথ্যানুযায়ী, একেকটি ফিনিক্স পাখির আয়ু কমপক্ষে পাঁচশো বছর। যখন একটি ফিনিক্স পাখি বুঝতে পারে তার জীবনাবসান ঘটতে খুব বেশি দেরি নেই, তখন সে একটি ঘর তৈরি করে এবং সেটিতে আগুন জ্বালিয়ে নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। মৃতদেহের ছাই থেকেই জন্ম হয় আরেকটি ফিনিক্স পাখির। এ তো গেল ফিনিক্সের কথা। এবার ফেডেক্সের ব্যাপারে আসা যাক। ‘ফেডারেল এক্সপ্রেস’ (Federal Express) এর সংক্ষিপ্ত রূপ ফেডেক্স (FedEx)। এটি আমেরিকার একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, এবং বৈশ্বিক পণ্য আদান-প্রদানের জন্য সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলোর একটি। শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি একেবারে দেউলিয়া হওয়ার খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল, কিন্তু শেষপর্যন্ত ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেদের শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আর কখনও তাদের পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

Jfkglgllgl
ফিনিক্স পাখি গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী পুনর্জন্মের প্রতীক; image source: procaffenation.com

স্টার্টআপ দুনিয়ায় উদীয়মান কোম্পানিগুলোর অসংখ্য গল্প আপনি শুনতে পারবেন। আজকের যে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সাফল্যের শিখরে অবস্থান করছে, একসময় সেগুলোকেই কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। যেকোনো প্রতিষ্ঠান দাঁড়া করাতে আপনাকে নিঃসন্দেহে সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। গতানুগতিক পদ্ধতির বাইরে গিয়ে নিজের ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে গেলে সবসময়ই ঝুঁকি থেকে যায়। আজকের ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম– এসব জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানের কথা আমরা সবাই জানি। তাদের গল্প হয়তো আমরা একাধিকবার শুনেছি। কিন্তু এরকম অসংখ্য উদীয়মান স্টার্টআপের কাহিনি আমাদের জানা নেই, যারা হয়তো অনেক বেশি সম্ভাবনা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, কিন্তু শেষপর্যন্ত মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। অথচ নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে হয়তো তাদের নামগুলোও আজকের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর নামের পাশে উচ্চারিত হতো। ইতিহাসের সাধারণ সত্যটাই বারবার প্রমাণিত হয়, “যারা বিজয়ী হয়, ইতিহাস তাদের মনে রাখে। হেরে যাওয়া মানুষদের কেউ মনে রাখে না।

ফেডারেল এক্সপ্রেস বা ফেডেক্স কোম্পানি অমিত সম্ভাবনা নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও প্রথম কয়েক বছরের মধ্যেই দেউলিয়াত্বের খুব কাছাকাছি চলে যায়। আজকের দিনে যেখানে ফেডেক্সের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয়ের হিসাব করা হয়, সেখানে তাদের শুরুর দিকের সংগ্রামের গল্প শুনলে হয়তো আপনি অবিশ্বাসও করতে পারেন। যেখানে একটা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হয়, সেখানে একপর্যায়ে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থের পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছিল মাত্র পাঁচ হাজার ডলারে! কিন্তু ফেডেক্স আরও অসংখ্য কোম্পানির মতো হারিয়ে যেতে চায়নি। আরও স্পষ্ট করে বললে, ফ্রেডেরিক স্মিথ হারিয়ে যেতে দেননি। চোখের সামনে নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান, যেটি নিয়ে তার বিশাল পরিকল্পনা ছিল, সেটির পতন তিনি হয়তো সহ্য করতে পারতেন না। এজন্য যা ছিল, তা দিয়েই একেবারে দেউলিয়ার হাত থেকে প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা তো করেছেনই, কয়েক বছরের মধ্যেই নিজের প্রতিষ্ঠানকে লাভের মুখ দেখিয়েছেন। তার অধীনে ফেডেক্সকে আর কখনও পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আমাদের অনেকের কাছে ফেডেক্স বৈশ্বিক ই-কমার্স ও পণ্য আদান-প্রদানের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হলেও এর পেছনের গল্প অজানাই থেকে যায়।

Yfjfkglgvmvm
আজকের অনেক বিখ্যাত কোম্পানি একসময় টিকে থাকতে দারুণ সংগ্রাম করেছিল; image source: reviewsxp.com

কীভাবে ফেডেক্সের ধারণার জন্ম হলো, সেই সম্পর্কে কিছু জানা যাক। আমেরিকার বিখ্যাত ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ছিল ফ্রেডেরিক স্মিথ। ১৯৬২ সালে তিনি এক থিসিস পেপারে তিনি এমন এক পণ্য পরিবহনব্যবস্থার কথা বিশ্লেষণ করেন, যেটি বাস্তবায়িত হলে পণ্য পরিবহনের বৈশ্বিক ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হতো। বলার অপেক্ষা রাখে না- তিনি তার থিসিস পেপারে যা লিখেছিলেন, সেটির পেছনে তাকে দীর্ঘ গবেষণা করতে হয়েছিল। তিনি শুধু নতুন এক পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার ধারণা দিয়েই ক্ষান্ত হননি, বরং নতুন এই ধারণা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে তার বিশদ বর্ণনা দিয়েছিলেন। তিনি যখন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন, তখন তার সহপাঠী ছিলেন জর্জ ডব্লিউ বুশ ও জন কেরির মতো ব্যক্তিরা, যারা পরবর্তীতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কিংবা সেক্রেটারি অব দ্য স্টেট-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো অলংকৃত করেছিলেন। তিনি তাদের সামনে নিজের প্রস্তাবিত নতুন পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার কথা ব্যক্ত করেন। তারা স্মিথের পরিকল্পনা শোনার পর নিজেদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ব্যক্ত করেন। স্বাভাবিকভাবে স্মিথের আত্মবিশ্বাস ছিল যে তিনি যা ভাবছেন, তার বাস্তবায়ন সম্ভব।

Hdjfkgkgk
ফ্রেড স্মিথ ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন এবং সেখানে দুই বছর কাজ করার পর ফেডেক্স প্রতিষ্ঠা করেন; image source: commercialappeal.com

সবার কাছ থেকে আশানুরূপ সমর্থন পেলেও মূলত যাকে উদ্দেশ্য করে স্মিথ থিসিস পেপার লিখেছিলেন, সেই অধ্যাপক কিন্তু সন্তুষ্ট হননি। তিনি মূল্যায়নের সময় ‘সি’ (C) গ্রেড দিয়েছিলেন। এক নতুন ধারণাকে ‘সি’ গ্রেড দেয়ার মাধ্যমে সেই অধ্যাপকের মনে হয়েছিল, এই ধারণা আসলে কাগজের পাতায় পড়তেই ভালো শোনায়, কিন্তু বাস্তবে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা কখনও সম্ভব নয়। তার কথায়, “হ্যাঁ, এই ধারণাটা দারুণ এবং চমৎকারভাবে গঠন করা হয়েছে। কিন্তু থিসিসের ক্ষেত্রে সি গ্রেডের চেয়ে বেশি পেতে হলে এমন কিছুর ধারণা নিয়ে আসতে হবে, যেটি সহজে বাস্তবায়ন করা যাবে।” স্মিথ কিন্তু তার অধ্যাপকের এহেন ব্যবহারে মোটেও দমে যাননি। যেহেতু তিনি দীর্ঘ গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে নিজের থিসিস পেপারের বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ করেছিলেন, তাই তার মনে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস ছিল যে তিনি পণ্য পরিবহনব্যবস্থার নবতর সংস্করণ অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে পারবেন।

সেদিন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর তার ছাত্রের যে ধারণাকে ‘সি গ্রেড’ দিয়েছিলেন, সেই ধারণাকে বাস্তবায়নের রূপ দেয়ার পর ফ্রেডেরিক স্মিথের প্রতিষ্ঠান ‘ফেডেক্স’ এখন প্রতিবছর গড়ে ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। পুরো বিশ্বজুড়ে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে ফেডেক্স। শুধু তা-ই নয়, বৈশ্বিক পণ্য পরিবহনের জন্য বর্তমানে বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পার্সেল সার্ভিস বা ইউপিএস-এর সাথে সমানে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি। প্রফেসর বলেছিলেন, স্মিথের ধারণা বাস্তবায়ন করা যাবে না। তাহলে সেদিন প্রফেসরের কথা অনুযায়ী হতাশ হয়ে ফিরে গেলে হয়তো আজকের এই সাফল্যগাঁথা লিখতে পারতেন না স্মিথ। তবে প্রথম কয়েক বছর যদি কেউ ফেডেক্সের অবস্থা স্বচক্ষে দেখতো, তাহলে প্রফেসরের কথা তার কাছে ঠিক বলেই গণ্য হতো।

Jritpyypglg
বর্তমানে ফেডেক্স বৈশ্বিক পণ্যপরিবহনের দিক থেকে আরেক বিখ্যাত কোম্পানি ইউপিএস-এর সাথে সমানে পাল্লা দিচ্ছে;
image source: shippinginnepal.com

যেকোনো উদীয়মান স্টার্টআপের অগ্রসর হওয়ার জন্য বিনিয়োগ দরকার হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে যখন একটি নতুন ধারণা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়, তখন বেশ বড় অংকের অর্থের প্রয়োজন হয়। এজন্য স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করা তরুণরা প্রত্যাশা করেন যেন তাদের কোম্পানিতে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টরা বিনিয়োগ করতে পারে। তবে বিনিয়োগের পূর্বে কোম্পানিটি থেকে ভবিষ্যতে মুনাফা অর্জন করা যাবে কিনা– এই বিষয় তারা ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে নেয়। ধরুন, আপনার হাতে অঢেল অর্থ আছে। আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগে আগ্রহী। একটি প্রতিষ্ঠান পেলেন, যেটি দেখার পর আপনার মনে হলো- এখানে বিনিয়োগ করলে আপনার অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশ বড় অংকের মুনাফা অর্জিত হতে পারে ভবিষ্যতে। আপনি কিছু অর্থ সেখানে বিনিয়োগ করলেন। আবার আপনি যদি দেখেন যে কোম্পানির ব্যবসায়িক মডেল অনুযায়ী ভবিষ্যতে মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা খুবই কম, বরং লোকসানের সম্ভাবনা আছে, তাহলে আপনি সেই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের ভাবনা থেকে সরে আসবেন। ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টরা মূলত এ কাজটিই করে থাকেন।

Related Articles