Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

‘নভেম্বর দ্য ফিফথ’ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ঘটনাটি শত শত বছর আগের, ১৬০০ সালের আগে এর পটভূমি রচিত হচ্ছিল। খ্রিস্টানদের মাঝে প্রোটেস্ট্যান্টিজম, ক্যাথলিজম, অর্থোডক্সি প্রভৃতি দলবিভাগ ছিল। ১৫৪০ সালের দিকে চার্চ সংক্রান্ত রাজনৈতিক কারণে ইংল্যান্ড সরকারের বিরাগভাজন হতে থাকে ক্যাথলিক সম্প্রদায়। ব্রিটেনের রাজপরিবারের নিয়ন্ত্রণ মানতে চাইছিল না ক্যাথলিক চার্চগুলো। এই চার্চগুলো আগে ছিল রোমের নিয়ন্ত্রণাধীন। ছোটোখাটো অপরাধে তাদেরকে নানারকম শাস্তি, এমনকি মৃত্যুদণ্ড দিতে থাকে রাজ প্রশাসন। ধীরে ধীরে বিশাল ক্ষোভ জমতে থাকে রাজপরিবারের বিরুদ্ধে। তবে এর মাঝেও তারা আশা দেখতে পান কিং জেমসের মধ্যে। কারণ, তার আচরণ ছিল ক্যাথলিকদের প্রতি বন্ধুসুলভ। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় আসার পর সব ধারণা পাল্টে যায়। তিনিও অন্যদের মতোই আচরণ করতে লাগলেন।

১৬০৫ সালের দিকে ক্যাথলিকদের প্রতি অত্যাচার চরম পর্যায়ে উঠে যায়। এমন সময়ে কয়েকজন বিদ্রোহী মিলে পরিকল্পনা করে, এই অত্যাচারী সরকারের পতন ঘটাবে এবং উপযুক্ত শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। সেখান থেকেই জন্ম নেয় ‘গানপাউডার প্লট’-এর। এই প্লট অনুসারে, পার্লামেন্ট চলাকালীন পুরো পার্লামেন্টকে গানপাউডার দিয়ে ধসিয়ে দেওয়া হবে। গানপাউডার দিয়ে যেদিন বিস্ফোরণ ঘটানো হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়, সে দিনটি ছিল নভেম্বরের ৫ তারিখ। সেখান থেকেই এসেছে সেই বিখ্যাত লাইন “Remember, remember! The fifth of November”

এই প্লটের মূল নায়ক ছিল রবার্ট ক্যাটসবি এবং গাই ফোকস। ক্যাটসবি ছিলেন একজন ক্যাথলিক আর গাই ফোকস ছিলেন একজন সেনা সদস্য। কিন্তু ঘটনাক্রমে তাদের এই পরিকল্পনা সফল হয়নি। কোনো এক ঘটনায় তাদের পরিকল্পনার কথা জেনে যায় রাজ কর্তৃপক্ষ। আটক করা হয় তাদের। গান পাউডার, শুকনো কাঠ ও বারুদ সহ ধরা পড়েন গাই ফোকস। গুলি করে মারা হয় রবার্ট ক্যাটসবিকে। মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় অন্যান্য সহযোগীদেরকে। এর সাথে সাথে শেষ হয়ে যায় ইতিহাসের অন্যতম অসফল কিন্তু প্রভাব বিস্তারকারী একটি বিপ্লবী পরিকল্পনা।

শত শত বছর পরে, ১৯৯০ সালের দিকে DC Comics এর অধীনে এলান মোর লিখেন ‘ভি ফর ভেনডেটা‘ নামে একটি কমিক সিরিজ। এই কমিক বা গ্রাফিক নভেলের আর্টিস্ট ছিলেন ডেভিড লয়েড। এই সিরিজের মূল ভিত্তি ছিল গান পাউডার প্লট। দশ খণ্ডে সমাপ্ত এই গ্রাফিক নভেলটি বেশ জনপ্রিয় হয় এবং মানেও ছিল বেশ ভালো। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে এই দশটি সিরিজকে একত্র করে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। কমিকের নামেই থাকে চলচ্চিত্রের নাম। চলচ্চিত্রটিও খুব ভালো হয় এবং এর ফলে ৫ই নভেম্বর ও গান পাউডার প্লটের কাহিনী জনপ্রিয় হয়ে যায় পুরো পৃথিবী জুড়ে।

গ্রাফিক নভেল ভি ফর ভেন্ডেটার প্রচ্ছদ; Source: DC Comics
গ্রাফিক ছবিতে ভি ফর ভেন্ডেটা; Source: DC Comics
চলচ্চিত্রে ভি ফর ভেন্ডেটা; Source: Masculinity-Movies

তরুণ বয়সে অনেকেই বিপ্লবী ধ্যান ধারণার মধ্যে দিয়ে যায়। সেসকল মানুষের কাছে এই প্লটের সিনেমা ভালো না লেগে পারে না। তাই অনেককেই দেখা যায়, প্রতি বছরই ৫ই নভেম্বর আসলেই উদযাপনের মতো করে দেখেন V for Vendetta (2005) মুভিটি। অত্যাচারী, দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার এবং বিপথে চলে যাওয়া, নষ্ট হয়ে যাওয়া সমাজের প্রতি প্রতিবাদ হিসেবে আইকন হয়ে গেছে এই মুভি। মূল ঐতিহাসিক কাহিনী থেকে এই গ্রাফিক নভেল বা মুভির কাহিনীর পার্থক্য আছে। ইতিহাসে গানপাউডার প্লট ভেস্তে গিয়েছিল, কিন্তু মুভিতে গানপাউডার প্লট বেশ বাস্তবসম্মতভাবেই সফল হয়েছিল।

সমাজ পরিবর্তনের চেতনায় টগবগ করা ছেলেমেয়েরা নভেম্বরের ৫ তারিখ এলেই ফেসবুক, ব্লগ সহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে একে নিয়ে লেখালেখি করেন। সেসব লেখালেখিতে দুটি উক্তি প্রায় সময়ই থাকে। একটি হলো-

“Remember, remember!
The fifth of November,
The Gunpowder treason and plot;
I know of no reason
Why the Gunpowder treason
Should ever be forgot!”

আর অন্যটি হলো-

“Beneath this mask there is more than just flesh. Beneath this mask there is an idea… and ideas are bulletproof.”

নভেম্বরের ৫ তারিখে প্রতিবাদের আইকনিক মুখোশের ছবি দিয়ে গানপাউডার প্লটের উদযাপন করছে একজন তরুণ; Source: ফেসবুক থেকে স্ক্রিনশট

তাদেরকে অনেকেই অনুকরণ করেন। কেউ কেউ হয়তো ভাবেন, সিনেমাটি খুব প্রভাবশালী বা ইতিহাসটি খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাই এটি এভাবে উদযাপন করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গান পাউডার প্লট শুধুই একটি ইতিহাস নয়, এই ঘটনা ইতিহাসের চেয়েও বেশি কিছু। ‘আইডিয়ারা বুলেটপ্রুফ’ বলা শুধুই সিনেমার প্রতি ভালোবাসা নয়, এটি সিনেমার চেয়েও বেশি কিছু। এর ব্যাখ্যা ইতিহাসেই লুকিয়ে আছে। রবার্ট ক্যাটসবি এবং গাই ফোকসরা মারা গিয়েছিলেন। তবে তাদের চিন্তা চেতনা এবং বিপ্লবী ভাবনাগুলো ঠিকই বেঁচে আছে আজও। বুলেট দিয়ে কিংবা ছুরি চালিয়ে বুক বিদীর্ণ করে তাদেরকে হয়তো নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে, কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া ভাবনা বা ধ্যান-ধারণাগুলোকে রাজ পরিবার কিছুই করতে পারেনি। সেই ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনাগুলো ইতিহাস ঘুরে ঘুরে শত শত বছর ধরে টিকে রয়েছে মানুষের মননে। এই যেমন পরাজিত গাই ফোকসকে কেন্দ্র করে গ্রাফিক নভেল হয়েছে, চলচ্চিত্র হয়েছে তার বিপ্লবী আইডিয়ার কারণেই।

মানুষকে মেরে ফেলা যায় কিন্তু মানুষের আইডিয়াগুলোকে কিছুই করা যায় না। এক বিপ্লবীকে মেরে ফেললে তার চেতনায় শত বিপ্লবীর জন্ম হয়। এক চে গুয়েভারা গত হলে তার আইডিয়া নিয়ে বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার চে গুয়েভারার জন্ম হয়। এখান থেকেই এসেছে শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী উক্তি “Ideas are bulletproof”। তাই ইতিহাসে নভেম্বর দ্য ফিফথের গুরুত্ব অপরিসীম।

ব্যক্তি গাই ফকস মরে গেলেও বেঁচে আছে তার বিপ্লবী আইডিয়া; Source: English with a Twist

এখানে উল্লেখ করা শেষোক্ত বাক্যটি ‘ভি ফর ভেনডেটা’ সিনেমার অন্যতম চুম্বক অংশ। সিনেমায় অনেকগুলো অত্যাচারিত ব্যক্তির মাঝে একজন বিদ্রোহী হয়ে উঠে এবং বিদ্যমান সরকারকে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। অন্যদিকে সরকারও তাকে দমিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠে। এমন পরিস্থিতিতে সে তার আইডিয়া বাস্তবায়নের জন্য সবকিছু এমনভাবে সাজিয়ে যায়, যেন সে গ্রেপ্তার হলে বা দুর্ঘটনায়  অক্ষম হয়ে পড়লে কিংবা মৃত্যুবরণ করলেও আইডিয়ার বাস্তবায়ন হয়। পুরো দেশে পরিকল্পিতভাবে একটি টালমাটাল অবস্থা তৈরি করে সে, যেন সরকারের সাধ্য না থাকে একে আটকানোর। সেখানে দেখা যায়, শত চেষ্টা করেও আইডিয়াকে কোনোভাবেই দমিয়ে রাখা যায় না। যে আগুন মিটমিট করে জ্বলছিল একজনের মনে, সে আগুন একসময় দপদপিয়ে উঠলো সকলের মাঝে। একবার সকলের মাঝে আগুন জ্বলে উঠলে মূল মিটমিটে আগুন না থাকলেও সমস্যা নেই। সিনেমার নায়ক একজন V চলে গেলেও পেছনে রয়ে গেছে হাজার হাজার দপদপানো আগুন। সেজন্যই বলা যায় “Ideas are bulletproof.” বাক্যটি অত্যন্ত সফল এবং নিঃসন্দেহে অত্যন্ত প্রভাব বিস্তারকারী।

ব্যক্তির মৃত্যু হলেও আইডিয়ার মৃত্যু হয় না কখনো, সময়ে সময়ে সে আইডিয়া ছড়িয়ে যায় প্রজন্মের পর প্রজন্মে; Source: 9GAG

ইতিহাসে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ মনে করতো, পৃথিবী এই মহাবিশ্বের কেন্দ্রে আছে এবং মহাজাগতিক সকল কিছু পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। এদের বাইরে গিয়ে বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কেউ কেউ বলেছিল, পৃথিবী আসলে মহাবিশ্বের কেন্দ্রে নয়। সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে না, বরঞ্চ পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘোরে। কিন্তু এরকম দৃষ্টিভঙ্গির জন্য অন্ধবিশ্বাসীরা তাদেরকে অনেক শাস্তি দিয়েছিল। জিওর্দানো ব্রুনো নামক এক ব্যক্তিকে জ্যান্ত আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল এই ধারণায় বিশ্বাস করার জন্য। বৃদ্ধ গ্যালিলিও গ্যালিলিকে অত্যাচার করা হয়েছিল এই ধারণা প্রচার করার অপরাধে। তাদেরকে হয়তো চার্চ বা অন্ধরা অত্যাচার করেছে খুন করেছে, কিন্তু তাদের বিপ্লবী ধারণাগুলো ছড়িয়ে গেছে উত্তর প্রজন্মের মাঝে। এখন প্রায় সকলেই জানে, পৃথিবী মহাবিশ্বের মাঝে মহা-অনন্য কোনোকিছু নয়। এটি সবকিছুর কেন্দ্র নয়, এটি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে। তাদেরকে দমিয়ে রেখে তাদের বিপ্লবী আইডিয়াকে দমিয়ে রাখা যায়নি। হয়তো সময় নিয়েছে, কিন্তু বুলেটপ্রুফের মতো থেকে থেকে সেসব চিন্তা একসময় ছড়িয়ে গেছে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে।

পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে এমন ধারণা প্রচার করার অপরাধে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল জিওর্দানো ব্রুনোকে; Source: Hmolpedia

আইডিয়ারা বুলেটপ্রুফ- এই বাক্য নিছকই একটি বাক্য নয়, এটি বিস্ফোরণের বারুদ। চিন্তাশীল মানুষের মনে আগুন ধরিয়ে দেবার জন্য এই একটি বাক্যই যথেষ্ট। শুধুই ইতিহাস নয়, শুধুই সিনেমা নয়, শুধুই ভাব দেখানো ট্রেন্ড নয়। উপরের দুটি বিখ্যাত বাক্য উচ্চারণের পেছনে আছে গভীর দর্শন। আপনি যখন এরকম কোনো বাক্য মানুষের সাথে শেয়ার করছেন, তখন আদতে আপনি খুবই গভীর দার্শনিক কোনোকিছু করছেন। আপনি ভিন্নদের একজন। স্রোতের প্রতিকূলে চলা মানুষদের একজন। স্রোতের অনুকূলে দুর্বল মাছেরা যায়, আর যায় মরা মাছেরা। তারাই স্রোতের প্রতিকূলে যায় যারা সাহসী ও অনন্য। তাই ভুলে যাবেন না, নভেম্বরের ৫ তারিখের মাহাত্ম্য। প্রতি বছর এই সময়টায় সারা পৃথিবীর মানুষের সাথে তাই শামিল হন নিজের প্রতিবাদের আগুনকে উসকে দিতে, ঝেড়ে ফেলুন প্রথাগত ঘুণে ধরা, বখে যাওয়া সমাজ ও সিস্টেমের প্রভাবের বলয়।

ছবি: কোট ফেনসি

Guy Fawkes Night, also known as Guy Fawkes Day, Bonfire Night and Firework Night, is an annual commemoration observed on 5 November, primarily in the United Kingdom. Its history begins with the events of 5 November 1605 O.S., when Guy Fawkes, a member of the Gunpowder Plot, was arrested while guarding explosives the plotters had placed beneath the House of Lords. Celebrating the fact that King James I had survived the attempt on his life, people lit bonfires around London; and months later, the introduction of the Observance of 5th November Act enforced an annual public day of thanksgiving for the plot's failure.

Featured Photo © DC Comics

Related Articles