অস্ট্রেলিয়ার গতি তারকা মিচেল স্টার্ক ২০১৬ সালের ১৫ এপ্রিল দীর্ঘদিনের প্রেমিকা অ্যালিসা হিলির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ইয়ান হিলির ভাতিজি অ্যালিসা হিলিও অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দলের নিয়মিত সদস্য। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসাবে অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দলের হয়ে তিনটি টেস্ট, ৫৫টি ওডিআই এবং ৭২টি টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন অ্যালিসা হিলি।
মিচেল স্টার্কের স্ত্রী অ্যালিসা হিলিও সুপরিচিত। এরকম আরও দশজন ক্রিকেটারদের বিখ্যাত পত্নীদের নিয়ে আজকের লেখা।
১. শোয়েব মালিক-সানিয়া মির্জা
শোয়েব মালিক এবং সানিয়া মির্জা ২০১০ সালে বিয়ে করে তোলপাড় সৃষ্টি করেন। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন যুগ যুগ ধরেই চলে আসছিলো। ততদিনে দুই দেশ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলাও বন্ধ করে দিয়েছিলো। নানাবিধ সমস্যার মধ্যে দিয়েও পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিক বিয়ে করেন ভারতীয় টেনিস তারকা সানিয়া মির্জাকে।
তাদের বিয়ের খবর আনুষ্ঠানিকভাবে জানাজানি হওয়ার পর আয়েশা নামের এক মহিলা অভিযোগ আনেন, ২০০২ সালে শোয়েব মালিকের সাথে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়। ফোনালাপ থেকে একসময়ে প্রণয়ে জড়িয়ে যায় তারা এবং টেলিফোনেই তাদের বিয়ে হয়। মালিকের কথামতো এতদিন চুপ ছিলেন তিনি। এই ঘটনা নিয়েও বেশ কিছুদিন আলোচনায় ছিলেন শোয়েব মালিক। এরপর অবশ্য তারা দু’জন ভালোভাবেই নিজেদের সাংসারিক জীবন অতিবাহিত করেন। শোয়েব মালিকের স্ত্রী সানিয়া মির্জা ভারতের নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা। তিনবার মিক্সড ডাবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন সানিয়া মির্জা।
২. নিল ম্যাকেঞ্জি-ক্যারি ম্যাকগ্রেগর
২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে গ্রায়েম স্মিথের সাথে জুটি বেঁধে উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ৪১৫ রান যোগ করে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন নিল ম্যাকেঞ্জি। এর আগের বছর ২০০৭ সালে জীবনসঙ্গী হিসাবে জুটি বাঁধেন ক্যারি ম্যাকগ্রেগরের সাথে।
ক্যারি ম্যাকগ্রেগর দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত মডেল। তিনিই ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মূল ওয়ান্ডারব্রার মডেল। ম্যাকেঞ্জির বোন মেগানও নামকরা মডেল, একসময় মার্ক বাউচারের সাথে তার সম্পর্ক ছিলো।
৩. ইমরান খান-জেমিমা গোল্ডস্মিথ
সেসময় রম্য লেখক এবং পাপারাজ্জিদের আলোচনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো ইমরান খান এবং জেমিমার প্রণয় ও বিয়ের ঘটনাগুলো। পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ইমরান খান ১৯৯৫ সালে বিশিষ্ট ধনকুবের স্যার জেমস গোল্ডস্মিথের রূপবতী কন্যা জেমিমা গোল্ডস্মিথের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
তাদের দু’জনের সম্মতিতে ২০০৪ সালে ডিভোর্সের মধ্য দিয়ে তাদের বৈবাহিক জীবনের ইতি ঘটে। ইমরান খান দুঃখের সাথে জানান, রাজনৈতিক কারণে তার পরিবারকে পর্যাপ্ত সময় দিতে না পারার কারণে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। ইমরান খান এবং জেমিমার দু’টি সন্তান আছে।
৪. কেভিন পিটারসেন-জেসিকা টেইলর
কেভিন পিটারসেনের সহধর্মিণী জেসিকা টেইলর পপ গায়িকা। তিনি নামকরা পপ গ্রুপ ‘লিবার্টি এক্স’ এর সদস্য। এই গ্রুপটি বেশ কিছু জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছে। এর মধ্যে ‘Just a Little’ ২০০২ সালে যুক্তরাজ্যে সেরা গানের তালিকায় নাম্বার ওয়ানে ছিলো। শুধুমাত্র গানেই নয়, নাচ, ফ্যাশন এবং ফিল্মোগ্রাফিতেও পারদর্শিতা আছে জেসিকা টেইলরের।
২০০৭ সালে পপ সুন্দরী জেসিকা টেইলরকে বিয়ে করেন ইংল্যান্ডের স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান কেভিন পিটারসেন। বর্তমানে তাদের একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে আছে।
৫. মার্ক ওয়াহ-কিম মুর
মার্ক ওয়াহ ক্রিকেটের পাশাপাশি ঘোড়দৌড়ও দেখতেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর তিনি আরও বেশি সময় পেয়ে যান ঘোড়দৌড় দেখার। ২০০৫ সালে যখন মার্ক ওয়াহ অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ঘোড়দৌড়ের ঘোড়া প্রশিক্ষক কিম মুরেকে বিয়ে করেন, তখন ঘটনাটা তাই অবাক করার মতো কিছু ছিলো না। মার্ক ওয়াহকে বিয়ে করার পরপরই কিম মুরের ঘোড়া মাহটম র্যান্ডউইকে মর্যাদাপূর্ণ সিডনি কাপ জেতে।
৬. মনসুর আলী খান পতৌদি-শর্মিলা ঠাকুর
পতৌদি বংশের নওয়াব এবং ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মনসুর আলী খান পতৌদি ১৯৬৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর তৎকালীন ভারতীয় সিনেমার নায়িকা শর্মিলা ঠাকুরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মনসুর আলীর মুসলিম এবং শর্মিলা ঠাকুরের সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে অনেকেই ধরে নিয়েছিল তাদের বৈবাহিক জীবন বেশিদিন টিকবে না। সবার কানাঘুষা উপেক্ষা করে আমৃত্যু শর্মিলা ঠাকুরের সাথে সংসার করেন পতৌদি। শর্মিলা ঠাকুর বিয়ের পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নিজের নাম পরিবর্তন করে আয়েশা সুলতানা খান রাখেন। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে দু’জন (সাইফ আলী খান ও সোহা খান) বলিউডের পরিচিত মুখ।
শর্মিলা ঠাকুর বিয়ের দু’বছর আগে ভারতীয় সিনেমার প্রথম নায়িকা হিসাবে বিকিনি পরে পর্দায় আসেন। ১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রয়ের ‘অপুর সংসার’ সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। এরপর ‘আরাধনা’, ‘সফর’, ‘আমার প্রেম’, ‘ছোট বউ’, ‘দাগ’, ‘রাজা-রানী’, ‘আবিষ্কার’ এবং ‘মৌসুম’ সহ পঞ্চাশের অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
৭. মার্টিন ক্রো-লরেন ডাউন্স
নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তী ব্যাটসম্যান মার্টিন ক্রো ২০০৮ সালে বিশ্ব সুন্দরী লরেন ডাউন্সকে বিয়ে করেন। দু’জনেরই এটি দ্বিতীয় বিয়ে ছিলো। লরেন ডাউন্স নিউজিল্যান্ডের নৃত্যশিল্পী। তিনি ১৯৮৩ সালে ‘মিস নিউ জিল্যান্ড’ এবং ‘মিস ইউনিভার্স’ অ্যাওয়ার্ড জেতেন। এখন পর্যন্ত নিউ জিল্যান্ডের আর কোনো নারী এই খেতাব জেতেনি। লরেন ডাউন্সের সাথে ১৯৮৬ সালে রাগবি ইউনিয়ন প্লেয়ার মারে মেক্সটেডের বিয়ে হয়েছিল। এই দম্পতি ২০০১ সালে ডিভোর্সের মধ্য দিয়ে আলাদা হয়ে যান।
এরপর ২০০৮ সালে মার্টিন ক্রো’র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এই রূপসী। ২০১৬ সালের তেসরা মার্চে মার্টিন ক্রো মৃত্যুবরণ করার আগপর্যন্ত তারা দু’জন একইসাথে ছিলেন।
৮. মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন-সঙ্গীতা বিজলানি
ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক এবং বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন ১৯৮৭ সালে নওরিন নামের এক মেয়েকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে দু’টি পুত্রসন্তান জন্ম নেয়। প্রথম স্ত্রী নৌরিন থাকা সত্ত্বেও আজহারউদ্দীন অভিনেত্রী সঙ্গীতা বিজলানির প্রেমে পড়েন। শেষপর্যন্ত ১৯৯৬ সালে প্রথম স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে সঙ্গীতাকে বিয়ে করেন তিনি।
সঙ্গীতা বিজলানি ১৯৮০ সালে ‘মিস ভারত’ খেতাব জেতেন। ১৯৮৮ সালে ‘কাতিল’ সিনেমার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন সঙ্গীতা। তিনি ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বিশের অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সঙ্গীতার সাথেও শেষপর্যন্ত সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারেননি আজহারউদ্দীন। ২০১০ সালে এই দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
৯. গ্রায়েম স্মিথ-মরগান ডিন
দক্ষিণ আফ্রিকার বিশিষ্ট মডেল স্লিঙ্কি মিংকির সাথে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের ইতি ঘটার পর ২০১১ সালের আগস্টে আইরিশ গায়িকা এবং অনিয়মিত মডেল মরগান ডিনকে বিয়ে করেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ।
এই দম্পতির ঘরে ২০১২ সালের ২৫ জুলাই একটি মেয়ে এবং ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই একটি ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তাদের সাংসারিক জীবন খুব বেশিদিন স্থায়ীত্ব লাভ করেনি। ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গ্রায়েম এবং মরগান জনসম্মুখে নিজেদের বিবাহ বিচ্ছেদের কথা জানান।
১০. জন এড্রিচ-প্যাট স্টুয়ার্ট
একসময়কার ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান জন এড্রিচ ১৯৬১ সালে আমেরিকার টেনিস প্লেয়ার প্যাট স্টুয়ার্টের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের বৈবাহিক সম্পর্কের স্থায়িত্ব বেশিদিন ছিলো না। ১৯৬৫ সালের জুলাইয়ে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। প্যাট স্টুয়ার্ট ১৯৬২ সালে যখন উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হন ও ভার্জিনিয়া ওয়েড নিজের প্রথম সিঙ্গেল ম্যাচ খেলেন, তখন তার প্রতিপক্ষ ছিলেন মিসেস জন এড্রিচ। প্যাট স্টুয়ার্ট বিয়ের পর এই নামেই টেনিস খেলেন।