২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, ফ্লোরিডার একটি বাড়িতে বড়সড় এক চুরির ঘটনা ঘটে। চোর বেচারার এতই অভাব ছিলো যে, সে ঘরের প্রায় কোনো কিছুই নিতে বাদ রাখেনি; কম্পিউটার, টেলিভিশন সেট, গিটার, নগদ অর্থ ও কাপড়-চোপড়, এমনকি ঘরটিতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র ও বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পর্যন্ত সে নিজের ঝুলিতে পুরেছিলো। কিন্তু হতভাগা চোরটি তখনও জানতো না, যে বাড়িটি থেকে সে মোট ত্রিশ হাজার ডলার সমমূল্যের জিনিসপত্র চুরি করেছে, সেই বাড়ির মালিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে কর্মরত এক ব্যক্তি।
ফ্লোরিডার পাম বে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ব্যাপারটিকে গুরুত্বের সাথে নিলো এবং ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করলো; যার মধ্যে কিছু ডিএনএ স্যাম্পলও ছিলো। অবশেষে কয়েকমাস পর একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করা হলো। কিন্তু শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে তো কাউকে আটক করে রাখা এবং দোষী সাব্যস্ত করা যায় না; প্রয়োজন সুস্পষ্ট প্রমাণ।
এদিকে পাম বে পুলিশ ডিপার্টমেন্টের হাতে এসেছে নতুন এক যন্ত্র, যার সাহায্যে দ্রুত ডিএনএ পরীক্ষা করে ফেলা সম্ভব। এটা দিয়ে আগে ঘটনাস্থলে পাওয়া ডিএনএ স্যাম্পল এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তির শরীর থেকে নেওয়া নমুনা পরীক্ষা করে মিলিয়ে দেখা হলো। দেখা গেলো, সে ব্যক্তিই অপরাধী! পরীক্ষণটি মাত্র দুই ঘন্টার মধ্যে করা হয়েছিলো, যা করতে এতদিন সপ্তাহখানেকের মতো সময় লাগতো। এটিই ইতিহাসের প্রথম ঘটনা, যেখানে তাৎক্ষণিকভাবে ডিএনএ পরীক্ষা করে কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে অপরাধী হিসবে শনাক্ত করা হলো।
র্যাপিড ডিএনএ প্রযুক্তি কী?
ডিএনএ প্রতিটি মানুষেরই একটা অনন্য বৈশিষ্ট্য। একজন ব্যক্তির ডিএনএর সাথে কখনোই পৃথিবীর অপর কোনো ব্যক্তির ডিএনএ সম্পূর্ণরূপে মিলবে না; সামান্য হলেও পার্থক্য থাকবে। আর এ পার্থক্যই একজন ব্যক্তিকে অন্য সবার থেকে আলাদা করার জন্য যথেষ্ট। র্যাপিড ডিএনএ প্রযুক্তির মূল লক্ষ্য হচ্ছে কোনো ব্যক্তির দেহ থেকে উপযুক্ত নমুনা নিয়ে অত্যন্ত দ্রুত সেটা পরীক্ষা করে তার ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা। তবে শুধুমাত্র এ প্রোফাইল ব্যবহার করে কিছুই জানা যাবে না, এর জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট তথ্যভান্ডার যেখানে পূর্বে থেকেই বহু মানুষের ডিএনএ প্রোফাইল রেকর্ড করা থাকবে, যার সাথে পরীক্ষণীয় ব্যক্তির ডিএনএ প্রোফাইল মিলিয়ে দেখা হবে।
তাই সামগ্রিকভাবে, একটি সমৃদ্ধ ডিএনএ ডেটাবেইজ গড়ে তোলা, বিভিন্ন পর্যায়ের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে সেই ডেটাবেইসের সাথে যুক্ত করা এবং প্রয়োজন অনুসারে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা করে এর সাথে ডেটাবেইসে থাকা ডিএনএ প্রোফাইলসমূহের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে সে ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার প্রক্রিয়াগুলোই র্যাপিড ডিএনএ প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্ত।
Video from: abc4.com
র্যাপিড ডিএনএ’র উদ্ভব
বহুবছর যাবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা চিন্তা করে আসছে। সেই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো জাতীয়ভাবে একটি ডিএনএ ডেটাবেইজ গড়ে তোলা যাতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের ডিএনএর তথ্য সংরক্ষিত থাকবে, যেন ভবিষ্যতে বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে সহজে শনাক্ত করা যায় এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে বের করা সহজ হয়। এছাড়াও মৃত বা হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের ডিএনএ’র তথ্য সংরক্ষণ করাও এ প্রকল্পের মধ্যে পড়ে। কেননা, অন্যান্য নমুনার তুলনায় ডিএনএ নমুনা ব্যবহার করে একজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করার প্রক্রিয়াটা বেশী নির্ভরযোগ্য।
তবে এখানে দুটো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। প্রথমত, গতানুগতিক পদ্ধতিতে ‘ফরেনসিক ল্যাবে’ একজন ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা করে রিপোর্ট তৈরি করতে সপ্তাহখানেক সময় লেগে যেতে পারে, যা অনেক বেশী। আগে ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলোকে ঠিকমতো সংরক্ষণ করে ক্রাইম ল্যাব বা ফরেনসিক ল্যাব’এ পাঠাতে হয়। এরপর ক্রাইম ল্যাবে দীর্ঘ সময় নিয়ে সেই নমুনা পরীক্ষা করা হয়, অতঃপর রিপোর্ট তৈরি করা, তারপর সেই রিপোর্ট আবার তদন্তকারীদের কাছে ফেরত পাঠানো বেশ সময়সাপেক্ষ একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু এত সময় ধরে একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে আটকে রাখাটা সম্ভবত কোনো দেশের আইনই সমর্থন করে না। তাই প্রয়োজন অত্যন্ত দ্রুত ডিএনএ বিশ্লেষণ করার বিকল্প কোনো পদ্ধতি।
দ্বিতীয়ত, ক্রাইম ল্যাবে ডিএনএ পরীক্ষণের ব্যাপারটা তুলনামূলক ব্যয়বহুল বলে ঠিক কোনো কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধী শনাক্তকরণে ডিএনএ পরীক্ষণের দ্বারস্থ হওয়া যাবে। ছোটখাটো অপরাধের ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে কিনা – এ ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়াটা খুবই অস্বস্তিকর ব্যাপার। কিন্তু কোনোভাবে যদি অল্প খরচে ডিএনএ পরীক্ষা করার উপায় বের করা যায়, তাহলে ছোট বড় যেকোনো অপরাধের ক্ষেত্রেই নির্দ্বিধায় সম্ভাব্য অপরাধীর ডিএনএ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
সর্বপ্রথম ১৯৮৯ সালে এফবিআই রাষ্ট্রীয় ডিএনএ ডেটাবেইজ গড়ে তোলে। এর অনেক বছর পর, ২০১০ সালে এ ব্যবস্থায় গতি আনতে ‘র্যাপিড ডিএনএ‘ নামক প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হয়, যার লক্ষ্য এমন কোনো প্রক্রিয়া বা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা যেটার সাহায্যে স্বল্পমূল্যে ও অত্যন্ত দ্রুত ডিএনএ পরীক্ষা করা যাবে। একইসাথে এফবিআই বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থাকেও এই প্রোগ্রামের সাথে সমন্বিত করে।
এই ধরনের প্রযুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান; তারা তৈরি করে বহনযোগ্য ও ছোট আকৃতির এমনসব ডিভাইস, যা এফবিআই এর চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। শুধুমাত্র ডিএনএ স্যাম্পল হিসেবে ব্যবহারযোগ্য মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন লালা, রক্ত, টিস্যুকোষ, বীর্য ইত্যাদিকে একটি স্লাইডে সঠিকভাবে লাগিয়ে সে স্লাইডটাকে যন্ত্রের মধ্যে ইনপুট হিসেবে দিলেই ঘন্টাখানেকের মধ্যে যন্ত্রটি ডিএনএ রিপোর্ট তৈরি করে দিতে পারে।
ডিভাইসগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রিত। মানুষের কাজ শুধুমাত্র উপযুক্ত নমুনা সংগ্রহ করে সেটিকে যন্ত্রের মধ্যে ইনপুট হিসেবে দেওয়া। এরপর যন্ত্র নিজেই সেই নমুনাকে অত্যন্ত জটিল কিছু ভৌত এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরিচালনা করে ফলাফল বিশ্লেষণের মাধ্যমে অল্প সময়ের মাঝে ডিএনএ রিপোর্ট তৈরি করে দেয়; যা করতে মানুষের অনেক বেশি সময় লেগে যেতে পারে।
বিভিন্ন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘থার্মো ফিশার সায়েন্টিফিক‘ ও ‘এন্ডি‘ কোম্পানীর তৈরি কয়েকটি মডেলের ‘র্যাপিড ডিএনএ মেশিন’ যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারী সংস্থাগুলো বর্তমানে ব্যবহার করছে। এ যন্ত্রগুলো মাত্র দেড় থেকে দুই ঘন্টার মাঝে ডিএনএ বিশ্লেষণ করতে সক্ষম এবং এগুলো আকারে মোটামুটি একটি প্রিন্টারের সমান।
তবে ২০১৭ সালের আগে যুক্তরাষ্ট্রে র্যাপিড ডিএনএ প্রযুক্তিকে তদন্ত পরিচলনা করার উপকরণ ও প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছিলো না।
সম্প্রতি মার্কিন সিনেটে ‘র্যাপিড ডিএনএ এক্ট‘ নামক একটি আইন পাশ হয়েছে, যা র্যাপিড ডিএনএ প্রযুক্তি ব্যবহারের আইন-কানুন নির্ধারিত করে দেয়। এর ফলে তদন্তকারী সংস্থাগুলো এখন থেকে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে আনুষ্ঠানিকভাবেই এই ‘র্যাপিড ডিএনএ প্রযুক্তি’ ব্যবহার করে কোনো তদন্ত পরিচালনা করতে পারবে এবং ‘র্যাপিড ডিএনএ মেশিন’ থেকে প্রাপ্ত রিপোর্টকে আলামত হিসেবে কোর্টে উত্থাপন করতে পারবে।
যে কারণে ডিএনএ পরীক্ষণ নির্ভরযোগ্য
একটি অপরাধ সংঘটিত হলে ঘটনাস্থল থেকে তদন্তকারীরা নানা ধরনের প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেন যা তদন্তে সাহায্য করবে। একজন অপরাধী হয়তো ভাবতেও পারে না, সে কত ধরনের চিহ্ন ঘটনাস্থলে রেখে যাচ্ছে, যার দ্বারা তাকে শনাক্ত করা এবং ধরে ফেলা সম্ভব হবে। তবে এটাও সত্য যে, বর্তমান যুগে গোয়েন্দাদের সাথে পাল্লা দিয়ে অপরাধীরাও স্মার্ট হয়ে উঠছে। অপরাধ সংঘটনের সময় তারা এমনসব ব্যবস্থা নিচ্ছে, যেন ঘটনাস্থলে তাদের কোনো চিহ্নই না থাকে। যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট লুকাতে গ্লাভস ব্যবহার করা, সিসি ক্যামেরা ফাঁকি দিতে মাস্ক ব্যবহার করা, ঘটনাস্থলে যেন চুল পড়ে না থাকে সেজন্য টুপি ব্যবহার করা ইত্যাদিসহ আরও নানান ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। এজন্য সবসময় হয়তো ক্রাইম সিনে উপযুক্ত নমুনা পাওয়া যায় না, কিংবা পাওয়াটা কষ্টকর হয়ে উঠে।
কিন্তু ডিএনএ প্রতিটি মানুষের আঙ্গুলের ছাপের মতোই একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য যা তার প্রতিটি জীবিত কোষেই থাকে। ফলে ঘটনাস্থল থেকে একজন মানুষের শরীরের যেকোনো অংশের জীবিত দেহকোষের নমুনা যেমন লালা, ত্বকের অংশ বা চামড়া, চুলের গোড়া, রক্ত, মাংস, বীর্য, অস্থিমজ্জা ইত্যাদি সংগ্রহ করতে পারলেই যথাযথ ডিএনএ পরীক্ষণের মাধ্যমে তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। আর ঘটনাস্থলে অপরাধী নিজের অজান্তেই সাধারণত কোনো না কোনো নমুনা ফেলে যায়। এজন্য অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় ডিএনএ পরীক্ষণের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করাটা অধিক কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য।
সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ায় সংঘটিত ভয়াবহ দাবানলে পুড়ে মৃত্যুবরণ করা বহুসংখ্যক মানুষের ডিএনএ পরীক্ষণের মাধ্যমে তাদের সঠিক পরিচয় বের করা সম্ভব হয়েছে। এদের মধ্যে কিছুসংখ্যক মৃত ব্যক্তির দেহ আগুনে এতটাই পুড়ে গিয়েছিলো যে, তাদেরকে শনাক্ত করার কোনো উপায়ই অবশিষ্ট ছিলো না। শুধুমাত্র তাদের দেহের কয়েকটি অক্ষত হাড়ের ভেতরের অংশটুকু, যেটাকে অস্থিমজ্জা বলা হয়, সেখান থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ পরীক্ষা করে, সেই ফলাফল তাদের কিছুসংখ্যক আত্মীয়স্বজনদের ডিএনএর সাথে মিলিয়ে তাদেরকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিলো। এ কাজেও র্যাপিড ডিএনএ মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে।
সীমাবদ্ধতা
প্রতিটি নতুন প্রযুক্তিকে ঘিরেই থাকে কিছু বিতর্ক ও সীমাবদ্ধতা। র্যাপিড ডিএনএ প্রযুক্তি এখনো পর্যন্ত সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেনি এর কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে।
যেহেতু এ যন্ত্রটি ব্যবহার করা হবে মূলত পুলিশ স্টেশনে তাই কোনো একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশই এটিকে পরিচালনা করবেন। কিন্তু বছরের পর বছর নির্দিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা করে ডিগ্রি অর্জন করা একজন দক্ষ বিশেষজ্ঞ, আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বা কয়েকদিনের ট্রেইনিং পাওয়া একজন অপারেটরের পরীক্ষণে নিশ্চয়ই অনেক ফলাফলও নিশ্চয়ই ভিন্ন হবে বলে আশঙ্কা করা যায়।
আবার যে নমুনাটির ফরেনসিক ল্যাবের বিভিন্ন পর্যায়ের পরীক্ষণের মধ্য দিয়ে যাওয়ার কথা, সেটিকে একটিমাত্র সরলীকৃত যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করা হলে কতটা নির্ভুল ফলাফল আসবে, তাও একটা প্রশ্ন। এই ফলাফলই হয়তো তদন্তের দিক নির্ধারণ করে দেবে, যার ফলে একজন নির্দোষ ব্যক্তি সন্দেহভাজনের তালিকায় পড়তে পারেন, কিংবা একজন ভয়ানক অপরাধী ছাড় পেয়ে যেতে পারে। তাই এখনই অন্যান্য দেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এটি ব্যবহারে আগ্রহী না; এর আগে আরও অনেক যাচাই-বাছাই দরকার।
র্যাপিড ডিএনএ মেশিন সকল ধরনের নমুনার জন্য সঠিক রিপোর্ট তৈরি করতে পারে না। ডিএনএ পরীক্ষণের জন্য কোনো নমুনা অপর্যাপ্ত মনে হলে গবেষণাগারে বিশেষজ্ঞরা বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু র্যাপিড ডিএনএ মেশিনের কার্যপ্রণালী নির্ধারিত। নমুনার পরিমাণ অপর্যাপ্ত হলে এটি সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারবে না, কিন্তু নমুনাটা পুরোপুরি ব্যবহার করে ফেলবে। অর্থাৎ কোনো ইতিবাচক ফলাফল ছাড়াই নমুনাটুকু নষ্ট হবে, যা তদন্তে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এ ধরনের সমস্যার কারণে সুইডিশ ফরেনসিক সেন্টার প্রাথমিকভাবে র্যাপিড ডিএনএ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করলেও পরবর্তীতে তা বাতিল করে দেয়। এছাড়া অনেক অপরাধবিজ্ঞানী আশঙ্কা করেন, যদি ডিএনএর তথ্যগুলোকে শ্রেণীভুক্ত করে সাজিয়ে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাহলে সামান্য ভুলের কারণে একজন নিরপরাধ ব্যক্তির ডিএনএর তথ্য অপরাধীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতে পারে। আবার উল্টোটা ঘটাও অস্বাভাবিক নয়।
তবে বর্তমানে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও একসময় নিশ্চিতভাবেই প্রযুক্তিটি আরও নিখুঁত ও নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠবে। কেননা, কোনো প্রযুক্তিই রাতারাতি সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে না; গবেষণাগারে বহু কাঠখড় পুড়ানোর পর আমরা কোনো প্রযুক্তির পুরোপুরি সুফল ভোগ করে থাকি। হয়তো কয়েকবছর পর আমরাও আমাদের দেশের গোয়েন্দাদেরকে র্যাপিড ডিএনএ মেশিন ব্যবহার করতে দেখবো।