টানা ১৩ ঘন্টার যাত্রা করে এসে ন্যূনতম বিশ্রাম না নিয়ে ঘোরাঘুরির ক্লান্তি, না ঘুমানো এবং ব্যাকপ্যাকের ভারে শরীরের ব্যথা এবং পঞ্চগড়ে ঠিকভাবে ঘুরে দেখতে না পারার অভিমানগুলো এক নিমিষে মিলিয়ে গেলে ঠাকুরগাঁও আরডিআরএস গেস্ট হাউজের বাইরের এবং ভেতরের পরিবেশ দেখে। যদিও হোটেলের মতোই দুটো চারতলা বিল্ডিং, তবে আশেপাশের গাছগাছালির পূর্ণতা অন্তত ব্যবসায়িক হোটেল থেকে একে ভিন্ন করেছে।
আরডিআরএস হচ্ছে রংপুর এবং দিনাজপুর কেন্দ্রিক বেসরকারী দেশীয় এনজিও সংস্থা। এই গেস্ট হাউজটি শুধুমাত্র অফিশিয়াল কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, ব্যবসায়িক অভিপ্রায়ে নয়। তাই চাইলেই এখানে থাকা যাবে না। এখানে থাকার জন্যে এনজিও’র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার খুব জোরালো রেফারেন্স থাকতে হবে এবং যদি গেস্ট হাউজের রুম খালি থাকে সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে নিজেদের পরিচয় জানালে পরে ওখান থেকে যাচাই করে মেইল করে হ্যাঁ বা না জানানো হয়। আমাদের সাথে সাজিদা ফাউন্ডেশনের এডমিন পর্যায়ের একজন ছিলেন, যার মাধ্যমে এখানে থাকা হয়েছে।
বিশ্রাম নিয়ে রাত ৮টার দিকে বের হয়ে একটা অটো নিয়ে বললাম শহরের আশেপাশে এক ঘন্টা ঘুরিয়ে নামকরা এক হোটেলে নামিয়ে দিতে। অটো চালক ভাই খুব খুশি মনেই আমাদের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখাতে লাগলো। রাত বলে সাথে করে ক্যামেরা আনা হয়নি। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই মোবাইল চার্জ না থাকায় এবং চলতি গাড়িতে থাকায় ঠাকুরগাঁওয়ের কোনো ছবি তোলা হয়নি। অবশ্য দর্শনীয় তেমন কোনো স্থানও দেখতে পারিনি। জেলা শহরের প্রশাসনিক নান্দনিক ভবন এবং কিছু ভাষ্কর্য আর কয়েকটা নামিদামি জায়গা এসবই দেখা হয়েছে অটোতে করে। চালক ভাই ঠাকুরগাঁও এর নামকরা মনতাজ হোটেলের সামনে নামিয়ে দিলেন। খাবারের স্বাদ ভালোই।
ঠাকুরগাঁও জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য
আয়তন আর পরিসরের দিক থেকে ছোট জেলা হলেও প্রাচীন ঐতিহ্যসমৃদ্ধ জনপদের একটি হচ্ছে ঠাকুরগাঁও। এই জেলার আদি নাম ছিল নিশ্চিন্তপুর। নিজেদের ঐতিহ্য বাদেও এই জনপদ এর আশেপাশের অঞ্চলের সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে টিকে আছে। হাজার বছর ধরে নিজেদের ভাষা আর সংস্কৃতিকে আগলে ধরে রাখলেও বর্তমানে নতুন জোয়ারের পালাবদলের দিনে তারা বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
ব্রিটিশ শাসনামলে কুলিক, পাথরাজ, শুক, টাঙ্গন এবং ঢেপা বিধৌত এই জনপদগুলো নিয়ে তৎকালীন এক ঠাকুর পরিবারের উদ্যোগে একটা থানা স্থাপিত হয়। সনাতন ধর্মের ব্রাহ্মণ গোত্রের সংখ্যাধিক্য এবং ঠাকুর পরিবারের অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ঐ জায়গাকে তখন থেকেই ঠাকুরগাঁ থানা নামে অভিহিত করা হয়। তবে স্থানীয়দের মধ্যে জনশ্রুতি আছে, সতীশ চক্রবর্তী এবং নারায়ন চক্রবর্তী নামে দুই ভাই বাস করতেন এ এলাকায়। প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং সম্পদের প্রাচুর্যতার কারণে এলাকায় তাদের বেশ নাম-ধাম ছিল এবং লোকজন তাদেরকে সম্মানার্থে ঠাকুর সম্ভোধন করতেন। তাদের বাড়িকে ঠাকুরবাড়ি। এভাবেই ঠাকুরবাড়ি থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে পরিণত হয়েছে।
১৮৬০ সালে সদর, হরিপুর, রাণীশংকৈল, পীরগঞ্জ, বালিয়াডাঙ্গি এবং আটোয়ারি এই ছয়টি থানা নিয়ে একে মহকুমায় উন্নীত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর ভারতের কুচবিহারের ১টি থানা এবং জলপাইগুড়ির ৩টি থানাসহ সর্বমোট ১০টি থানা নিয়ে ঠাকুরগাঁও মহকুমা নতুনরূপে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু ভারত নিজেদের থানাসমূহ নিজেদের দখলে নিয়ে নিলে এবং ১৯৮১ সালে পঞ্চগড় নামে আলাদা একটি মহকুমা আত্মপ্রকাশ করলে ঠাকুরগাঁওয়ের সীমানা কমে ৫টি থানায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৮৪ সালের পহেলা ফ্রেবুয়ারি ঠাকুরগাঁও সদর, হরিপুর, রাণীশংকৈল, পীরগঞ্জ এবং বালিয়াডাঙ্গি এই ৫টি থানা মিলিয়ে ঠাকুরাগাঁও জেলা আত্মপ্রকাশ করে।
ঠাকুরগাঁওয়ের দর্শনীয় স্থানসমূহ
ঠাকুরগাঁওয়ের বেশ কিছু পুরাকীর্তি এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থাকলেও পর্যাপ্ত দেখভালের অভাবে এসব দিনকে দিন বিলুপ্তপ্রায়। তা সত্ত্বেও এখানে প্রচুর দর্শনীয় স্থান আছে। সময় নিয়ে পুরো ঠাকুরগাঁও ঘুরে দেখা যেতে পারে।
০১. ছোট বালিয়া জামে মসজিদ (জ্বিনের মসজিদ খ্যাত- শতবর্ষাধিক পুরনো);
০২. শালবাড়ি মসজিদ ও ইমামবাড়া;
০৩. জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ (প্রায় ১৫১ বছরের পুরানো);
০৪. মহালবাড়ি মসজিদ;
০৫. মেদিনী সাগর জামে মসজিদ;
০৬. ফতেহপুর মসজিদ;
০৭. সনগাঁও শাহী মসজিদ;
০৮. গেদুড়া মসজিদ;
০৯. পীর নাসিরউদ্দিন শাহ বা পীর নেকমরদ শাহের মাজার শরীফ;
১০. ঐতিহ্যবাহী বালিয়াডাঙ্গী সূর্য্যপুরী আমগাছ (প্রায় ১৫০ বছর পুরনো এবং এশিয়ার বৃহত্তম আম গাছ);
১১. রাণীশংকৈল জমিদারবাড়ি বা রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি (প্রায় ১০৩ বছরের পুরনো);
১২. রামরাই দীঘি (প্রায় ৮০০ বছরের পুরনো);
১৩. হরিপুর জমিদারবাড়ী বা হরিপুর রাজবাড়ী (প্রায় ১২৫ বছরের পুরনো);
১৪. প্রাচীন রাজভিটা (এতটাই পুরাতন যে সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায়নি);
১৫. গোরক্ষনাথ মন্দির, কূপ এবং শিলালিপি (বাংলাদেশের আবিষ্কৃত অন্যতম প্রাচীন শিলালিপি);
১৬. হরিণমারী শিব মন্দির (প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো);
১৭. জগদল রাজবাড়ি;
১৮. বলাকা উদ্যান ও ফান সিটি এমিউজমেন্ট পার্ক এবং লোকায়ন জীবন বৈচিত্র্য জাদুঘর;
১৯. প্রাচীন জনপদের রাজধানীর চিহ্ন নেকমরদ;
২০. গোবিন্দনগর মন্দির, ঢোলরহাট মন্দির, ভেমটিয়া শিবমন্দির, রামচন্দ্র মন্দির, নাথ মন্দির ও খোলা হাট মন্দির;
২১. খুনিয়া দীঘি, খুরন্মম খুয়া দীঘি, শাপলা পেয়ালা দীঘি;
২২. কোরমখান গড়, বাংলা গড়, গড় ভবানীপুর, গড়খাড়ি, সাপটি বুরুজ;
২৩. মালদুয়ার দুর্গ বা জমিদারবাড়ি ও গড়্গ্রাম দুর্গ;
২৪. অপরাজেয় ৭১, শহীদ মোহাম্মদ আলী স্টেডিয়াম;
২৫. ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস ও জামালপুর স্টেট;
ঠাকুরগাঁওকে বলা হয় বারো মাসে তেরো পার্বণের জেলা, কেননা এখানে সবসময়ই উৎসবমুখর আমেজ বিরাজ করে। দিনশেষে ক্লান্ত কৃষকের ঘরের দাওয়ায় বসে পুঁথি কিংবা পালা গানের আসর। সোনাভানের পুঁথি, দেওয়ান ভাবানার পালাপাঠ, ভাওয়াইয়্যা, ভাটিয়ালি, পলস্নী গান, কোয়ালী গান, বিষহরি গান, সত্যপীরের গান, কবিগান, পালাগান এবং আদিবাসীদের গানসহ বিভিন্ন ধরনের গানের সমারোহ এবং অনুষ্ঠানের দেখা মেলে ঠাকুরগাঁওয়ে। তবে বর্ষাকালে বুড়ির বাঁধের মৎস্য উৎসব ঠাকুরগাঁওয়ের অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব।
আবাসন ব্যবস্থা
যদিও ঠাকুরগাঁওয়ে ঘুরতে আসা পর্যটকদের সংখ্যা সাধারণত কমই হয়, তবুও এখানে আবাসন সংকট নেই।
সরকারি আবাসনসমূহ
০১. ঠাকুরগাঁও সার্কিট হাউজ;
০২. জেলা পরিষদ ডাকবাংলো (নতুন);
০৩. ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস রেস্ট হাউজ;
০৪. পানি উন্নয়ন বোর্ড রেস্ট হাউজ;
০৫. পল্লী বিদ্যুৎ গেস্ট হাউজ;
এছাড়া, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ এবং এলজিইডি সবকটা সরকারি ভবনেরই নিজস্ব ডাকবাংলো কিংবা রেস্ট হাউজ আছে।
বেসরকারি আবাসনসমূহ
০১. হোটেল সালাম ইন্টারন্যাশনাল;
০২. হোটেল প্রাইম ইন্টারন্যাশনাল;
০৩. হোটেল সাদেক;
০৪. হোটেল শাহজালাল;
০৫. আবাসিক হোটেল;
এছাড়া, মানব কল্যাণ পরিষদ, আরডিআরএস গেস্ট হাউজ এবং ইএসডিও এর কটেজে পাবেন থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা।
ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষজনও বেশ মিশুক। খুব সহজেই সখ্যতা গড়তে জানে তারা। অনেক প্রাচীন পুরাকীর্তি থাকা সত্ত্বেও পর্যটকের পরিমাণ খুবই কম, তাই ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষজন পর্যটকদের সমীহ করে সবসময়ই। ঠাকুরগাঁও জেলাও শান্তিপূর্ণ জেলা। হেমন্তকালে মাঝে মাঝে ঠাকুরগাঁওয়ের আকাশ থেকেও কাঞ্চনজংঘা দেখা যায়। ঠাকুরগাঁও অনেক দিক থেকেই পঞ্চগরের চাইতে উন্নত, তাই এই জেলার যাতায়াত ব্যবস্থাও অতি উন্নত। একনজরে ঠাকুরগাঁও দেখার জন্যে এখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
পরিকল্পনার অদল-বদল
গেস্ট হাউজে রাতেই সবাই মিলে পরিকল্পনা করলাম যে, পঞ্চগড় অর্থাৎ পেছন দিকে ফেরত যাওয়ার কোনো দরকার নেই এবং ঠাকুরগাঁও ঘুরতে যাবো না। কেননা, আমরা ছিলাম দিনাজপুর রোডে এবং সেখান থেকে দিনাজপুর অনেক কাছে। অবশ্য, আমি নিজে আট বছর আগে অর্থাৎ ২০১০ সালে দিনাজপুর ঘুরে এসেছি। তবে সেবার পুরো দিনাজপুর ঘোরা হলেও কান্তজিউ মন্দিরটাই দেখা বাকি ছিল। রাতে আবার ফেসবুকে জানতে পারলাম, দুই কাছের বন্ধু বর্তমানে ওদের বাড়িতেই আছে, মানে দিনাজপুরেই আছে এবং যাওয়ার জন্যে জোর করলো। তাই ঠাকুরগাঁওয়ের দর্শনীয় স্থান বাদ দিয়ে বাধ্য হয়েই দিনাজপুরের পরিকল্পনা করলাম।
দিনাজপুর জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য
সাহিত্য এবং সংস্কৃতির ঐতিহ্য নিয়ে হাজার বছরের প্রাচীন ও সমৃদ্ধ ইতিহাস নিয়ে আজও কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে এই দিনাজপুর শহর। বিশেষজ্ঞরা দিনাজপুরের এই মাটিকে ভারতের বিন্ধ্যা, ছোট নাগপুরের সমগোত্রীয় লক্ষ লক্ষ বছরের প্রাচীন মাটির সমতুল্য বলে মনে করেন। প্রাচীনকালে চৈনিক এবং বিভিন্ন সময়ের ইউরোপীয় ভ্রমণকারীদের বিবরণীতে করতোয়া নদীর তীরের এক উন্নতা সভ্যতার কথা শোনা যায়, যাকে ঐ সময় করতোয়া সভ্যতাও বলা হত। ধারণা করা হয়, মধ্যযুগের মহাস্থানগড় এবং মোঘল আমলের দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটই ছিল এই সভ্যতার কেন্দ্র। ইতিহাস বিখ্যাত পঞ্চনগরীও তখন এই দিনাজপুরেই অবস্থিত ছিল।
লোকশ্রুতি অনুযায়ী, দিনাজপুর রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা রাজা দিনাজ অথবা দিনারাজ এর নামানুসারেই রাজবাড়ীর মৌজার নাম ছিল দিনাজপুর। বাংলায় নবাবী শাসন পতনের আট বছর পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মোঘলদের বানানো রাজধানী ঘোড়াঘাট নগর দখল করে এবং প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে নতুন জেলা গঠন করে রাজার সম্মানার্থের এই জেলার নামকরণ করে দিনাজপুর। এরপর থেকেই দিনাজপুর শহর গড়ে উঠতে শুরু করে।
দিনাজপুরের গেজেটিয়ার থেকে জানা যায়, ১৭৮৩ সালে প্রশাসনিক ভাবে জেলা শাসনের জন্যে এই শহরে স্বতন্ত্র স্থায়ী কালেক্টরেট স্থাপন করা হয়। এর আগ অবধি দিনাজপুর এবং রংপুরের যুক্ত কালেক্টরেট ছিল। পরবর্তীতে ১৭৮৬ সালে দিনাজপুরকে নতুন জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ১৭৯৩ সালে জেলা দপ্তর গঠন করা হয়। এরপর ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর এই জেলা দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এক ভাগ ভারতের দখলে চলে যায় এবং অন্য ভাগ এদেশেই রয়ে যায়। পরে দিনাজপুর জেলার দুটি মহকুমা পঞ্চগড় এবং ঠাকুরগাঁও আলাদা জেলা রূপে আত্মপ্রকাশ করে।
দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ
কান্তজিউ মন্দির ও রাস মেলা উপভোগ
ঘুম থেকে উঠেই আগের রাতে এনে রাখা কলা আর পাউরুটি দিয়েই সকালের নাস্তা সেরে অটোতে করে চলে গেলাম ঠাকুরগাঁও পুরাতন বাসস্ট্যান্ড। উদ্দেশ্য দিনাজপুরের বিখ্যাত কান্তজিউ মন্দির এবং এর আশেপাশে ঘুরে দেখে। ঢোকার সাথে সাথেই দিনাজপুরের গেটলক বাস পেয়ে গেলাম এবং দিনাজপুর কাহারোলের বারো মাইলের টিকেট কেটে উঠে পড়লাম বাসে। বাসে থাকা অবস্থাতেই হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বীরগঞ্জ জাতীয় উদ্যানের দেখা মিলল।
বাস থেকে নেমেই রাস্তা পার হতে গিয়ে দেখলাম তেভাগা আন্দোলন স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য। নীচের নামফলকে ইলা মিত্রসহ তেভাগা আন্দোলনের অন্যান্য যোদ্ধাদের বিবরণ দেয়া এবং আন্দোলনের কিছু দৃশ্য টেরাকোটায় করা। পরে শুনলাম, এই জায়গাটাকে তেভাগা চত্বরও বলে স্থানীয়রা। তেভাগা চত্বরের পেছনেই ঢেপা নদীর ব্রিজ। ব্রিজের শেষ মাথা থেকেই কান্তনগরের শুরু।
অটোতে করে চলে গেলাম কান্তজিউ মন্দির। যাবার পথে কান্তজিউ মন্দির পুরাকীর্তি যাদুঘর এবং পর্যটনের মোটেল দেখলাম। অটো থেকে নেমে দেখলাম প্রচুর ভিড়। ঘটনা কী জানার জন্যে চালক ভাইয়ের দিকে তাকানো মাত্রই তিনি জানালেন, শতবর্ষেরও বেশি প্রাচীন রাস মেলা চলছে। একের ভেতর দুই। চারিদিকে উৎসবের আমেজ। মন্দিরে প্রবেশপথকে ঘিরে বিভিন্ন খাবার-দাবার এবং পণ্যের সমাহারে সেজেছে মেলা। একে তো মেলা, তার উপর আবার বিজয় দিবসের ছুটি, তাই অনেক বেশিই মানুষ ছিল সেদিন। মন্দিরের প্রবেশপথ দিয়ে ভেতরে ঢুকেই পোড়ামাটির এই মন্দির দেখে প্রাণ জুড়িয়ে গেল।
এদেশে বিখ্যাত যে কয়েকটি প্রাচীন স্থাপত্য আছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কান্তজিউ মন্দির। দিনাজপুর শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার ভেতরে ঢেপা নদীর তীরে সুন্দরপুর ইউনিয়নে অবস্থান এই মন্দিরের। মন্দির উত্তর দিকে ভিত্তিবেদী থেকে জানা যায়, মহারাজা প্রাণনাথ রায় ১৭০৪ সালে এই মন্দিরের নির্মাণকাজের সূচনা করেন। তবে ১৭২২ সালে মৃত্যুর আগে তিনি এই মন্দিরের কাজ পূর্ণ করার দায়িত্ব দিয়ে যান পোষ্যপুত্র মহারাজ রামনাথ রায়কে। রামনাথ রায় ১৭৫২ সালে এই মন্দিরের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন।
পাথরের উঁচু বেদীর উপর নির্মিত তিনতলা বিশিষ্ট এই বর্গাকার মন্দিরটির উচ্চতা ৫০ ফুট। এই মন্দিরের নয়টি চূড়া রয়েছে, যার জন্য একে নবরত্ন মন্দিরও বলা হয়। তবে শুরুতে এর উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট। ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পের কবলে পড়ে চূড়াগুলো ভেঙে যায় এবং পরে চূড়াগুলো ছাড়াই এই মন্দিরের সংস্কার কাজ করা হয়। মন্দিরের প্রতি তলার চারপাশেই খোলা বারান্দা। আর প্রত্যেক তলাতেই খিলান যুক্ত দরজা দেখা যায়। তবে এই খিলানগুলো এমন ভঙ্গিমায় বানানো হয়েছে, যাতে করে মন্দিরের সব দিক থেকেই ভেতরে রাখা দেবমূর্তি যেন সকল পূজারীই দেখতে পায়।
মন্দিরের ভিত্তির একদম নীচ থেকে শুরু করে একদম চূড়া অবধি পৌরাণিক কাহিনীচিত্র বিশ্লেষণ করে পোড়ামাটির ফলক ব্যবহার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সর্বমোটা পনের হাজারেরও অধিক পোড়ামাটির টেরাকোটা শোভা পাচ্ছে এই মন্দিরের পুরোটা জুড়ে। রাধা-কৃষ্ণ থেকে শুরু করে মোঘল বাদশাহ, জমিদার এবং সাধারণ মানুষজনের জীবনযাপনের দৃশ্যও বর্ণিত হয়েছে এসব টেরাকোটায়। মূল মন্দির প্রাঙ্গনেই একটি শিব মন্দির আছে। সেখানে শিবের পূজা করা হয়।
চোখ ধাধানো এই মন্দিরের সৌন্দর্য অবলোকন করে বের হয়ে রাসমেলায় জমজমাট প্রাঙ্গন পেরিয়ে চলে এলাম মূল সড়কে। সেখান থেকে একটি অটো নিয়ে চলে গেলাম নয়াবাদ জামে মসজিদ দেখতে। কান্তজিউ মন্দির থেকে অটোতে করে ২০ মিনিট সময় লাগে যেতে। আর যদি রাস্তা পার হয়ে ক্ষেতের উপর দিয়ে চলে যেতে পারেন, তাহলেও হেঁটে যেতে ১৫-২০ মিনিট লাগবে। এই বুদ্ধি আমার দিনাজপুরের বন্ধু দিলেও শুনিনি আমি। তাই অটোতে করেই লিচু বাগানের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেলাম নয়াবাদ জামে মসজিদের দিকে।
লিচু বাগান ও নয়াবাদ জামে মসজিদ দর্শন
যাত্রাপথেই লিচু বাগানের ফাঁকা দিয়েই কালের সাক্ষী হয়ে সগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকা নয়াবাদ জামে মসজিদ দেখতে পেলাম। স্থানীয়ভাবে এই মসজিদটি বিচিত্র মসজিদ নামেও পরিচিত। মসজিদের প্রধান দরজার উপর স্থাপিত ফলক থেকে জানা যায়, ১.১৫ বিঘা জায়গার উপর নির্মিত এই মসজিদটি সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের রাজত্বকালে ২রা জৈষ্ঠ্য ১২০০ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ইংরেজী ১৭৯৩ সালে নির্মিত হয়েছে, যা কি না কান্তজিউ মন্দির নির্মাণের ৪১ বছর পর।
লোকমুখে শোনা যায়, এই মন্দিরের এবং মসজিদের নির্মাতা একই। আরো প্রচলিত আছে, এই মন্দিরের নির্মাতাদের অধিকাংশই ছিল পারস্য থেকে আগত মুসলিম। আর বেশ অনেকটা সময় ধরে এই গ্রামে বসবার করার ফলে নিজেদের জন্যে তারা এই মসজিদ নির্মাণ করেন।
তিন গম্বুজ বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের চারকোণে চারটি অষ্টভূজ মিনার আছে। মসজিদটির বাইরের দিক থেকে মাপে দৈর্ঘ্য ১২.৪৫ মিটার এবং প্রস্থ ৫.৫ মিটার। আর এর সাথে দেয়ালের প্রশস্ততা আছে ১.১০ মিটার। মসজিদটি অর্ধ-গোলাকৃতির তিন গম্বুজ বিশিষ্ট। তিনটির গম্বুজের মধ্যে মাঝের গম্বুজটি তুলনামূলক বড় পাশের দুটো গম্বুজের তুলনায়। গম্বুজের বৈচিত্র্যের জন্য পেন্ডেটিভ ব্যবহার করা হয়েছে। প্রাচীর এবং কার্নিশগুলো একদম সমান্তরাল।
পূর্ব দিকের তিনটি খিলান দরজাই মূলত মসজিদে প্রবেশের জন্যে ব্যবহার করা হয়। তিনটি খিলানের মাঝেরটি পাশের দুটি থেকে বড়। মাঝের খিলানটির উচ্চতা ১.৯৫ মিটার এবং প্রস্থ ১.১৫ মিটার। উচ্চতায় পাশের খিলান দুটি সমমাপের হলেও প্রস্থের অনুপাতে খিলান দুটো মাঝের খিলানটি থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট। এই প্রবেশদ্বারগুলো বহু খাঁজ কাঁটা কৌশলে নির্মিত।
মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দিকে খিলান বরাবরই তিনটি মেহরাব আছে। খিলানের মতোই এই মেহরাবগুলোর মধ্যে মাঝের মেহরাবটি পাশের দুটো মেহরাব থেকে অপেক্ষাকৃত বড়। এই মেহরাবটির উচ্চতা ২.৩০ মিটার এবং প্রস্থ ১.০৮ মিটার। পাশের মেহরাব দুটো খিলানের মতোই মাঝের মেহরাব থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট। মসজিদের ভেতরের উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে বহু খাঁজযুক্ত দুটি জানালাও আছে।
মসজিদের চারকোণের অষ্টভূজাকৃতির মিনারগুলোর মধ্যে দুটির উপরে আছে গম্বুজ এবং বাকি দুটির উপর আছে কুপলা বা ছোট্ট গোলাকার গম্বুজই, তবে খানিকটা ভিন্ন। কুপলা দুটো অনেকটাই দেখা গেলেও গম্বুজ দুটো অনেকটাই ধ্বংসপ্রাপ্ত। মিনারগুলো ইট আর পলেস্তারা দিয়েই সরু আকৃতির করে বানানো হয়েছে। উপরের গম্বুজের অংশে বাতিদানের জন্যে ছত্রীর ব্যবহারও লক্ষ্য করা যায়।
মসজিদের দেয়ালজুড়ে অনিন্দ্যসুন্দর টেরাকোটার কাজ মুগ্ধ করে। সংস্কারের অভাবে বেশিরভাগ টেরাকোটাই ধ্বংসপ্রাপ্ত। তবে ইতিমধ্যেই মসজিদের সীমানা দেয়াল দিয়ে মাদ্রাসা বানানো হয়েছে, দর্শনার্থীদের বসার ব্যবস্থা, ওজুখানা এবং টয়লেটও নির্মাণ করা হয়েছে। শীঘ্রই মসজিদের সংস্কারের কাজও করা হবে।
প্রাচীন নিদর্শনের কাছে এসে বর্তমানের সময়জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম আমরা। মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকেই রুবেল ভাইয়ের অটোতে করে তেভাগা চত্বর ফেরত এলাম। সেখান থেকে বাসে উঠে চলে এলাম বটতলী। সেখান থেকে আবার অটোতে করে দিনাজপুর রাজবাড়ি। আমি ২০১০ সালে দিনাজপুর যখন এসেছিলাম, তখনকার রাজবাড়ী আর বর্তমানের রাজবাড়ির মধ্যে অনেক বেশিই তফাত, কেননা তখন অনেক কিছুই ছিল যা এখন পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে শুধুমাত্র সংস্কারের অভাবে। অথচ কান্তজিউ মন্দিরের সমতুল্য এই রাজবাড়িও যথেষ্টে ঐতিহ্য মণ্ডিত।
দিনাজপুর রাজবাড়ি ভ্রমণ
দিনাজপুরে ১২ জন রাজা প্রায় চারশ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজত্ব করেছেন, যাদেরকে মহারাজা বা মহারাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে, কেননা, ধারণা করা হয়, এই রাজারা ছিলেন জমিদার রাজা গণেশের বংশধর। তারা হচ্ছেন রাজা শুকদেব রায়, রাজা রাম দেব রায়, রাজা জয় দেব রায়, রাজা প্রাণ নাথ রায়, মহারাজ রামনাথ রায়, কৃষ্ণ নাথ রায়, বৈধ্য নাথ রায়, মহারাজা রাধানাথ রায়, মহারাজা গোবিন্দ নাথ রায়, তারক নাথ রায়, মহারাজা গিরিজা নাথ রায় বাহাদুর এবং সর্বশেষ মহারাজা জগদীশ নাথ রায়।
দেশ বিভাগের পর জমিদারী প্রথ বিলুপ্ত হলে এই রাজবাড়ি অরক্ষিত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে রাজবাড়ির ব্যবহৃত জিনিসপত্র সরকারি আদেশে নিলামে বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর থেকেই বাড়িটি মূলত সুরক্ষা এবং সংস্কারের অভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে থাকে। বর্তমানে এটি কেবল রাজবাড়ির জমিদারী কৃতির এক ধ্বংসস্তূপ ব্যতীত আর কিছুই না।
এই রাজবাড়ি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজার আমলে নির্মিত হওয়াতে এই প্রাসাদে বিভিন্ন ধরনের, যেমন- হিন্দু, মুসলিম এবং মোঘল স্থাপত্যশৈলী নজরে পড়ে। তবে মূল প্রাসাদের ভবনগুলো তিনটে আলাদা মহলে বিভক্ত ছিল। এগুলো হচ্ছে আয়না মহল, রানী মহল এবং ঠাকুরবাড়ি মহল। এছাড়াও, কুমারমহল, আঁতুড়ঘর, লক্ষ্মীঘর, আটচালা ঘর, কালিয়া জিউ মন্দির, রানী পুকুর, চাঁপা তলার দীঘি এবং ভূতনাথ সহ এই রাজবাড়ির অনেক ঐতিহ্যই হয় হারিয়ে গিয়েছে, নয়তো বর্তমানে হারানোর পথে।
বর্তমানে কালিয়া জিউ মন্দির এবং দুর্গা মন্দির ব্যতীত সম্পূর্ণ রাজবাড়িই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তবে কালিয়া জিউ মন্দিরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। কেননা এই মন্দিরের প্রতিটি ইঞ্চিতে সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ পাওয়া যায়। আয়নামহল দ্বিতল ভবন, যা বর্তমানে একদমই ধ্বংসপ্রাপ্ত। কালিয়া মন্দিরের প্রবেশপথও দেখার মতো।
যেহেতু আমি আগেই ঘুরে দেখেছি, তাই বেশি দেরি না করেই বের হয়ে গেলাম আমরা, কেননা শীতের সময় দিন ছোট। তার উপর পাঁচটার ভেতরে ঠাকুরগাওয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা না করলে আমরা আমাদের বাস মিস করবো। তাই রামসাগর দীঘি দেখাও বাদ দিতে হলো। বের হয়ে গ্রুপের সবাইকে অটোতে করে দিনাজপুর ঈদগাহ মাঠের সামনে পাঠিয়ে দিলাম।
আর আমি আমার বন্ধুর বাইকের পেছনে খানিকটা স্মৃতি রোমন্থন করে নিলাম, কেননা ২০১০ সালে এসে শুধুমাত্র কান্তজিউ মন্দির বাদে পুরো দিনাজপুরই আমার ঘোরা হয়েছিল। সুখসাগরসহ আরো কয়েকটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে অযত্নে অবহেলায় থাকা দর্শনীয় স্থান দেখে এসে ঢুকলাম দিনাজপুরের বিখ্যাত রুস্তমের হোটেলে।
খাওয়া সেরে পুলিশ ক্যাফেতে বসলাম কিছুক্ষণ, তারপর চলে গেলাম প্রমোদতরীতে। প্রমোদতরী হচ্ছে পুনর্ভবা নদীর তীরে গড়ে উঠা ছোট্ট একটা বিনোদন স্পট। নদীর পাড়ের বিশুদ্ধ বাতাস, প্রকৃতির রূপ এবং নাগরিক জঞ্জাল থেকে সাময়িক মুক্তিই মূলত প্রমোদতরীর প্রধান আকর্ষণ।
আরো বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব জুটে গেলে সময়জ্ঞান হারিয়ে আমরা আড্ডায় মশগুল হয়ে গেলাম। দিনের আলোর তীব্রতা কমতে দেখে আমরা উঠতে বাধ্য হই। এবং দিনাজপুরের সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে ফিরে আসি। ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে চলে আসি কাউন্টারে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রার জন্যে। আমাদের ট্যুরের এই পর্বের ভিডিওটি পাবেন এখানে।
দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থানসমূহ
দিনাজপুর ছিল রাজাদের আবাসস্থল। তাই এই শহরের যেকোনো জায়গাতেই পাওয়া যায় পুরাকীর্তি এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের দেখা। তবে পর্যাপ্ত দেখভালের অভাবে এসব দিনকে দিন বিলুপ্তপ্রায়। তা সত্ত্বেও এখানে এখনও প্রচুর দর্শনীয় স্থান আছে।
০১. কান্তজিউ মন্দির;
০২. দিনাজপুর রাজবাড়ি;
০৩. রামসাগর দীঘি;
০৪. নয়াবাদ জামে মসজিদ;
০৫. স্বপ্নপুরী; (বিনোদন পার্ক)
০৬. চেহেলগাজীর মাজার ও মসজিদ;
০৭. শুরা মসজিদ;
০৮. সুক সাগর;
০৯. সীতাকোট বিহার;
১০. সিংড়া ফরেস্ট;
১১. প্রাচীন নগরী কুন্দারনপুর; (ধারনামতে, গ্রীক ইতিহাসে বর্ণিত পেন্টাপলিশ বা পঞ্চনগরীর একটি)
১২. ফুলবাড়ি দুর্গ;
১৩. বারো পাইকে গড়;
১৪. প্রাচীন বেলওয়া নগরী;
১৫. হরিনাথপুর দুর্গনগরী;
১৬. ইতিহাস সমৃদ্ধ নির্শ্বা কাজলদীঘি গ্রাম;
১৭. ঘোড়াঘাট দুর্গ;
১৮. সোনাভানের ধাপ;
১৯. গোপালগঞ্জ পঞ্চরত্ন মন্দির;
২০. চাপড়ার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ;
২১. বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি;
২২. প্রমোদতরী বিনোদন স্পট;
২৩. হাজী মোহাম্মদ হানেশ বিশ্ববিদ্যালয়;
২৪. লিচু বাগান;
দিনাজপুর হচ্ছে পর্যটন নগরী এবং অনেকেই এই জেলাকে কালচারাল সিটি নামে অভিহিত করে থাকে। যেহেতু এখানে রাজা এবং জমিদারদের বসবাস ছিল এবং পরবর্তীতে দিনাজপুর মহকুমা ছিল, তাই এই জেলা তুলনামূলকভাবে অনেক উন্নত। এই জেলার আবাসন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে যাতায়াত ব্যবস্থাসহ সবকিছুই সহজলভ্য এবং হাতের নাগালেই।
আবাসন ব্যবস্থা
দিনাজপুরে আবাসন ব্যবস্থার সুবিধা ভালো। সরকারি এবং বেসরকারি দুই পর্যায়েই বেশ ভালো কিছু আবাসন আছে এই জেলাতে।
সরকারি আবাসনসমূহ
০১. দিনাজপুর সার্কিট হাউজ;
০২. পর্যটন মোটেল;
০৩. দিনাজপুর জেলা পরিষদ ডাকবাংলো;
০৪. রামসাগর জাতীয় উদ্যান রেস্ট হাউজ;
০৫. ক্ষণিকা বিশ্রামাগার;
এছাড়াও, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, এলজিইডি, তুলা উন্নয়ন বোর্ড এবং গম গবেষণা কেন্দ্রের গেস্ট হাউজসহ বেশ কিছু সরকারি আবাসন ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য।
বেসরকারি আবাসনসমূহ
০১. কারিতাশ গেস্ট হাউজ;
০২. ব্র্যাক গেস্ট হাউজ;
০৩. পল্লী শ্রী গেস্ট হাউজ;
০৪. এফপিএবি গেস্ট হাউজ;
০৫. পল্লী বিদ্যুৎ রেস্ট হাউজ;
০৬. হোটেল ডায়মন্ড আবাসিক;
০৭. নিউ হোটেল আবাসিক;
০৮. হোটেল সোনার তরী আবাসিক;
০৯. হোটেল আল রশীদ;
১০. হোটেল কণিকা আবাসিক;
দিনাজপুরের লোকজন খুবই মিশুক এবং সমভাবাপন্ন। কোনোভাবেই আপনাকে তারা বুঝতে দেবে না যে, আপনারা বহিরাগত কেউ। আন্তরিক ব্যবহারই তাদের স্বভাবের উপজীব্য বৈশিষ্ট্য। পর্যটন নগরী হওয়াতে এই জেলার মানুষেরা পর্যটকদের যথেষ্ট সম্মান করে। উন্নত জেলা বিধায় যাতায়াত ব্যবস্থাও অতি উন্নত।