Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যে কারণে ব্যর্থ হয়েছিল তুরস্কের সামরিক অভ্যুত্থান

১৫ই জুলাই, রাত আনুমানিক ৩টা বাজে তখন। ইস্তানবুলের কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরের উদ্দেশে আকাশে উড়ছে একটি ভিআইপি পরিবহন বিমান। বিমানে রয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, তার পরিবারের সদস্য ও তার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।

পাইলট জানেন, এটি তার জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিপূর্ণ অবতরণ হবে। কারণ, এটি কোনো সাধারণ ফ্লাইট ছিল না। তুরস্কের আকাশ কাঁপিয়ে তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিদ্রোহী সেনাদের ফাইটার জেট। ইস্তানবুল, আঙ্কারাসহ তুরস্কের প্রায় সব শহরই তখন বিদ্রোহীদের দখলে। এমনকি কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরের দখল নিয়েও তখন এরদোয়ানের ডাকে সাড়া দেওয়া জনতা ও বিদ্রোহী সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল।

বিমানবন্দরের ইন্ডিকেটর লাইট অফ ছিল, রানওয়ে ঠিকমতো দেখা যাচ্ছিল না। পাইলটের জন্য এটি ছিল অনেক চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু খোদ প্রেসিডেন্টের নির্দেশ তো তাকে মানতেই হবে।

বিদ্রোহীরা এমন একটি সময় বেছে নিয়েছিল, যখন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তুরস্কের একেবারে দক্ষিণ-পশ্চিমে এজিয়ান সাগর তীরের অবকাশ কেন্দ্র মারমারিসে ছিলেন। প্রথমে মনে হচ্ছিল, তুরস্কের সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহীদের হাতে চলে গেছে। অভ্যুত্থানের শুরুতেই তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলডিরিম প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছিলেন।

আঙ্কারার রাস্তায় সাঁজোয়া যানের টহল
আঙ্কারার রাস্তায় সাঁজোয়া যানের টহল; Image Source: Getty Images

এদিকে ইস্তানবুলের বসবরাস ব্রীজ ও ফাতিহ সুলতান মাহমুদ ব্রীজ (এশিয়া-ইউরোপের সংযোগকারী) বন্ধ করেছে দিয়েছে বিদ্রোহী সেনারা। সামরিক বাহিনীর ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যানগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়কগুলো। রাত ১২টার দিকে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সংবাদ পাঠিকাকে জোরপূর্বক বিদ্রোহের ঘোষণাপত্র পাঠ করতে বলা হয়। সবমিলিয়ে অবস্থা তখন ভয়াবহ।

এরদোয়ানের ডাকে সাড়া দেয় জনগণ; Image Source: Getty Images

এদিকে এরদোয়ান তখন মারমারিসের একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল তখন বিদ্রোহী সেনা কর্তৃক দখল হওয়ায় মিডিয়ায় তার বক্তব্য দিতে পারছিলেন না। অবশেষে মোবাইল ফোনের অ্যাপসের মাধ্যমে রাত ১২টা ২৬ মিনিট থেকে শুরু করে কয়েকটি টেলিভিশনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন, যাতে জনগণকে গণতন্ত্র রক্ষায় রাস্তায় নামতে আহ্বান করেন

ঐতিহাসিক আহ্বান

তার এই ঐতিহাসিক আহ্বানের মূলকথাগুলো এমনই ছিল-

আজকের এই অভ্যুত্থান সামরিক বাহিনীর একটি ছোট দলের বিদ্রোহ। আমি বিশ্বাস করি, জনগণ এই ষড়যন্ত্রের যথোপযুক্ত জবাব দেবে। জনগণের টাকায় কেনা ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার নিয়ে জনগণের পর আক্রমণের খুব বড় ক্ষতিপূরণ তাদেরকে দিতে হবে। আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ও প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রধান হিসেবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। দৃঢ়ভাবেই ময়দানে দাঁড়াব। ময়দান তাদের হাতে ছেড়ে দেব না।

জনগণকে একটি আহ্বান করছি। সবাইকে প্রদেশগুলোর ময়দানে আসতে আহ্বান জানাচ্ছি। বিমানবন্দরে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সংখ্যালঘু বিদ্রোহীরা ট্যাঙ্ক কিংবা অন্য যা কিছু নিয়ে আসুক, জনতা তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। জনতার শক্তির চেয়ে বড় কোনো শক্তি আমি আজ অবধি দেখিনি।

আমি আবারও জনগণকে বলছি, আপনারা ময়দানে আসুন। আমরা ময়দান থেকে তাদেরকে উপযুক্ত জবাব দিব। আমিও ময়দানে আসছি।

এরপর তিনি সেখান থেকে বিমানে করে ইস্তানবুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরের দিকে যাত্রা শুরু করেন।

এরদোয়ানের এই বক্তব্য প্রচারিত হওয়ার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে আপামর জনতা রাস্তায় বের হতে শুরু করে। পাল্টে যেতে থাকে পরিস্থিতি। নিরস্ত্র জনতাকে ট্যাঙ্কের সামনে শুয়ে পড়তে দেখা যায়। একের পর এক বিদ্রোহীদের হঠিয়ে বিভিন্ন জায়গা দখলে নিতে থাকে জনতা।

রাত ১:৩০-এ তুরস্কের পার্লামেন্টে এক জরুরি অধিবেশন ডাকা হয়। এরদোয়ানের অনুপস্থিতিতেই অধিবেশন শুরু হয়, যেখানে তুরস্কের সব রাজনৈতিক দলই দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একাত্মতা পোষণ করেন এবং এরদোয়ানকে সমর্থন করেন।

রাত ৩:২০ মিনিটে প্রেসিডেন্ট এরোদায়ান ইস্তানবুলের কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরে নামেন। তখন রানওয়ে ছিল পুরোই অন্ধকার এবং বিমানবন্দরের দখল নিয়ে বিদ্রোহীদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনতার সংঘর্ষ চলছিল। আকাশে উড়ছিল বিদ্রোহীদের যুদ্ধবিমান।

বিমানবন্দরে এরদোয়ান কনফারেন্স করেন; Image Source: Straitstimes

বিমানবন্দরেই প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান একটি সংক্ষিপ্ত প্রেস কনফারেন্স করেন। তিনি বলেন, বিদ্রোহীরা ব্যর্থ হয়েছে। তখনও যারা ব্যারাকের বাইরে ছিল, তাদেরকে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান। প্রথমবারের মতো এরদোয়ান তখন ঘোষণা করেন যে, এই ঘটনা ফেতুল্লাহ গুলেনের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছে।

এরদোয়ান মারমারিসের যে হোটেলে অবস্থান করছিলেন, সেখানে বিদ্রোহীরা রাত ৪ টার দিকে হেলিকপ্টার থেকে ওপেন ফায়ার করতে থাকে এবং সৈন্যরা মুখে মাস্ক পরে নিচে থেকে সরাসরি আক্রমণ করতে থাকে। এই ঘটনার ঠিক ঘণ্টাখানেক আগেই এরদোয়ান হোটেল ত্যাগ করেছিল বলে প্রাণে রক্ষা পান।

তুরস্কের মসজিদগুলো থেকে মাইকে জনগণকে রাস্তায় নামার জন্য বলা হচ্ছিল, আর এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল তুরস্কের ধর্ম মন্ত্রণালয় (দিয়ানাত ফাউন্ডেশন) থেকে।

এদিকে এশিয়া-ইউরোপের সংযোগকারী ব্রিজসহ বিভিন্ন জায়গাতে জনতার সাথে বিদ্রোহীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলছিল। সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে বসবরাস ব্রিজ বন্ধ করে দেওয়া সৈন্যরা জনতার কাছে আত্মসমর্পণ করে।

বিদ্রোহের অবসান

একের পর এক বিদ্রোহী সৈন্য গ্রেফতার হতে থাকে এবং জনতার কাছে বিদ্রোহীদের পরাজয় ঘটতে থাকে। সকাল সাড়ে ৮টার সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে জনদারমার সদর দপ্তর (প্যারামিলিটারি বাহিনী) বিদ্রোহমুক্ত করেন।

বসবরাস ব্রিজে জনতার কাছে সেনাবাহিনীর পরাজয় ঘটে; Image Source: Getty Images

শেষমেশ বিদ্রোহীরা যখন বুঝতে পারে যে, এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হতে চলেছে, তখন তারা বিভিন্ন জায়গায় আত্মমর্পণ করতে থাকে। সকাল ১১:২৭ মিনিটে জেনারেল স্টাফ কোয়ার্টারে অবস্থানরত সেনারা সমঝোতার জন্য আহ্বান জানান এবং বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে।

এই সেনা অভ্যুত্থানে প্রায় ২৬৫ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও ছিলেন। আহত হন প্রায় ২ হাজারের অধিক মানুষ।

https://www.google.com/amp/s/www.vox.com/platform/amp/2016/7/16/12205352/turkey-coup-failed-why
অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর এরদোয়ান সমর্থকদের উল্লাস; Image Source : vox.com

গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে সামরিক অভ্যুত্থান নতুন কিছু নয়। অতীতেও বেশ কিছু দেশে এ ধরনের সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। কিন্তু, তুরস্কের ক্ষেত্রে যা হয়েছে, সেটা হলো সামরিক বাহিনীর মোকাবেলায় সাধারণ জনতার বিজয়। বিশ্ববাসী সম্ভবত রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিহাসে এ ধরনের বিজয় খুব কমই দেখেছে! ২০১৬ সালের ১৫ জুলাইয়ের এই ঐতিহাসিক বিজয় হয়তো হাজার বছরের ইতিহাসে কালজয়ী এক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

This is a Bangla Article. This is about Turkey's military coup. This article explains about why this coup was not successful.

Featured Image: Middle East Eye

Reference Book:

1. এরদোয়ান দ্য চেঞ্জ মেকার; ২২২-২২৯ পৃষ্ঠা; লেখক: হাফিজুর রহমান

Related Articles