Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ঘরের বাইরে শেষ তিন টেস্টে কেন হেরেছে ভারত?

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল হারার আগে আইসিসির টেস্টের গদাটা ভারত বহুবার তুলেছে। সাদা পোশাকে নিজেদের সামর্থ্যের কথাও জানান দিয়েছে বহুবার। তবুও ঘুরেফিরে একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই হচ্ছে তাদের – দেশের বাইরে পারফরম্যান্সটা ঠিকঠাক আছে তো?

বেশিদিন আগের কথা নয়। ইনিংসে ৩৬ রানে অলআউট হবার পরেই যখন গ্যাবার মাঠে শেষদিনে ৩২৭ রানের বিশাল টার্গেট টপকে ফেলল ভারত, সবাই ভাবল, দেশের বাইরে সাদা পোশাকের পাজলের যে টুকরোগুলো ভারতের মিলছিল না, সেগুলো বুঝি এবার তারা মিলিয়েই ফেলেছে। এমনকি কোভিড বাগড়া দেওয়ার আগে ইংল্যান্ডেও ২-১ এ সিরিজ জিতে ঘরে ফিরেছিল ভারত। এরপর কে আর তাদের ঘরের বাইরের টেস্ট সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলবে?

পড়তে পারেন: ক্রিকেটাধিপত্যের ‘ভারত মডেল’

গ্যাবাতে ইতিহাস গড়ে টেস্ট জিতেছিল ভারত; Photo Credit: ABC News

 

কেউ হয়তো তোলেওনি। এমনকি অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডে সাদা পোশাকের এমন পারফরম্যান্সের পর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সময় ভারতের কাছে আশাও ছিল আকাশচুম্বী। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকাই ছিল ভারতের জন্যে একমাত্র জায়গা, যেখানে এখন অব্দি ভারত কোনো টেস্ট সিরিজ জেতেনি। আর এছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকারও যে ফর্ম ছিল, তাতে মনেই হচ্ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের গেরোটা এবার বুঝি খুলেই ফেলবে ভারত। তা সেই ‘মনে হওয়া’র ভিতও কিন্তু বেশ শক্তপোক্ত হয়েছিল, যখন সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১১৩ রানে হারিয়ে দিল ভারত। অবশ্য প্রথম সেশনেই ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল আর কেএল রাহুলের ২৮ ওভারে ৮৩ রানের পার্টনারশিপে ভারত শুরু থেকেই ম্যাচে বেশ শক্ত অবস্থানে ছিল।

তবে ঐ-ই শেষ! সেই ম্যাচের পর ভারত আর যে তিনটি অ্যাওয়ে-টেস্ট খেলেছে, তিনটিতেই হারতে হয়েছে সাত উইকেটের ব্যবধানে। দু’টি দক্ষিণ আফ্রিকাতে আর একটি তো সেদিনই, ইংল্যান্ডের মাটিতে। এখানে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটা আমাদের সামনে দেখা দেয়, যে তিনটি টেস্ট ভারত হেরেছে, তার সবগুলিতেই বেশ কয়েক সেশন ধরেই ভারত বেশ ভাল অবস্থানে ছিল। এমনকি এই তিনটি টেস্টের আগেও ভারত বেশ ভাল অবস্থানে ছিল।

তাহলে, হঠাৎ করে কী হলো?

প্যাটার্নটা ধরতে গেলে আমাদের শুরু করতে হবে পরিসংখ্যান দিয়ে, সেটাও কি না গত ১৫ বছরের পরিসংখ্যান। গত ১৫ বছরের মধ্যে ভারতের বিপক্ষে কোনো দল চতুর্থ ইনিংসে ২০০ রানের বেশি তাড়া করে জিততে পারেনি, শুধু তিনটি ম্যাচে ছাড়া। কোন তিনটি ম্যাচ, সেটি অবশ্য বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়। তার মানে, গত ১৫ বছর ধরে যেটি হয়নি, ভারত সেটি হতে দেখেছে টানা তিনবার!

প্রথমে তারা ওয়ান্ডারার্সে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৪০ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দিল। এর আগে ঐ মাঠে ২৫০ রানের বেশি তাড়া করে জেতার রেকর্ডই আছে মাত্র দুইবার, সে দু’টি ম্যাচও আবার অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল দুই উইকেটের ব্যাবধানে। আবার, এই সফরের আগে ভারত যেবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আসে, সেবারও এই ওয়ান্ডারার্সেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে তারা টার্গেট দিয়েছিল ২৪১; আর ম্যাচটা তারা জিতেছিল ৬৩ রানের ব্যাবধানে!

তৃতীয় টেস্টেও সেই একই ঘটনা। নিউল্যান্ডে দক্ষিণ আফ্রিকাকে তারা টার্গেট দিয়েছিল ২১২। টার্গেটটা আপনার কাছে অবশ্য খুব একটা বড় নাও লাগতে পারে। কেপটাউনের এই মাঠেই যে অস্ট্রেলিয়ার ৩৩৪ চেজ করে টেস্ট জেতার রেকর্ড আছে। তবে আপনাকে মনে করিয়ে দিই, এই মাঠেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ডটা মাত্র ২৩৬-এর! ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়াকে ৪৭ রানে অলআউট করে দেওয়া সেই ঐতিহাসিক টেস্টে এই কাণ্ড ঘটিয়েছিল প্রোটিয়ারা। আবার, ২০১৮ সালেই ভারত যখন এই ভেন্যুতেই টেস্ট খেলতে এসেছিল, তখন ভারতকে তারা দিয়েছিল ২০৮ রানের টার্গেট, যেটা ভারত চেজ করতে পারেনি। সে ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছিল ৭২ রানে!

তার মানে, তৃতীয় টেস্টে ২১২ রানের টার্গেট দেওয়াটা ভারতের জন্যে খুব একটা অস্বস্তিকর ছিল না।

এবার ফিরে আসা যাক ঘরের বাইরে ভারতের সর্বশেষ টেস্টে। চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ডকে ভারত ছুঁড়ে দিয়েছিল ৩৭৮ রানের পাহাড়সম টার্গেট। এই টার্গেট দেখার পর যেকোনো ক্রিকেটানুরাগীই হয়তো বিশ্বাস করে নিয়েছিলেন, এই রান হেসেখেলেই ডিফেন্ড করে ফেলবে ভারত। কিন্তু সেটা আদতে আর হয়নি, এই পাহাড় ডিঙিয়েই জিতে ফেলেছে ইংল্যান্ড।

পড়তে পারেন: এভাবেও ফিরে আসা যায়…

অথচ এমনটা তো হওয়ার ছিল না। এই টেস্ট যে মাঠে খেলা হয়েছে, সেই এজবাস্টনে এর আগে সবচেয়ে বেশি রান তাড়ার রেকর্ডটা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার দখলে। ২০০৮ সালে এই মাঠে ২৮১ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে নিয়েছিল তারা। তাহলে যেটা আজ অব্দি কোনোদিন হয়নি, সেটা ভারতের সাথে কেন হলো?

এজবাস্টনে হার সহ টানা তৃতীয়বার দেশের বাইরে টেস্ট হারল ভারত; Photo Credit: sports/outlook

 

একটু ভালো করে লক্ষ্য করুন। ভারতের এই সব ক’টি হারের প্যাটার্ন কিন্তু একদম একই। চতুর্থ ইনিংসে প্রতিপক্ষকে তারা এমন এক টার্গেট দিচ্ছে যে টার্গেট ডিঙিয়ে ম্যাচ জিততে হলে প্রতিপক্ষকে এক রকম রেকর্ডই গড়ে ফেলতে হবে। অথচ প্রতি ম্যাচেই শেষ অব্দি ভারতকে মাঠ ছাড়তে হয়েছে সাত উইকেটের পরাজয় মাথায় নিয়ে।

এমন কেন হলো?

দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং

দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের ব্যাটিং; Photo Credit: Samiatul Khan/roar

উপরের এই টেবিলটার দিকে ভাল করে তাকানো যাক। শেষ তিন টেস্টে তারা শুরুতেই এমন করে ইনিংস কল্যাপ্স করেছে, যেখান থেকে খুব ভালোভাবেই তারা শুধুমাত্র ব্যাটিং দিয়ে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিতে পারত। এখন আপনি যদি একটু ভালো করে লক্ষ্য করেন, তাহলে একটা ব্যাপার আপনার চোখ এড়াবে না। দ্বিতীয় ইনিংসের ঠিক কোন সময়ে ভারতের ইনিংস কল্যাপ্স করেছে? ঠিক সেই সময়েই, যখন কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয় নতুন বল দিয়ে খেলা শুরু হবে। তার মানে, এখানে একটা ব্যাপার অনুমান করা যায়; এই দ্বিতীয় নতুন বলে খেলা শুরুর আগেই ভারত চেষ্টা করেছে যত দ্রুত সম্ভব রান তোলার, আর এই রান তোলার তাড়াহুড়োই তাদের বেশিরভাগ ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নে পাঠিয়েছে।

জোহানেসবার্গের দ্বিতীয় টেস্টে ফিরে যাওয়া যাক। ভারতের রান তখন ৬ উইকেটে ২২৫, দক্ষিণ আফ্রিকার চাইতে তারা ১৯৮ রানে এগিয়ে। ভারতের ক্রিজে তখনও আছেন সেট হওয়া ব্যাটসম্যান হনুমা বিহারী। নিউল্যান্ডের পরিস্থিতিও কিন্তু একই ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে ভারত তখন ১৬৫ রানে এগিয়ে, ক্রিজে আছেন সেট ব্যাটার বিরাট কোহলি এবং সেঞ্চুরিয়ন ঋষভ পন্থ।

পড়তে পারেন: কোহলি ‘মানুষ’ হওয়ার আগে…

নিউল্যান্ড ঘুরে যদি ইংল্যান্ডে যান, ভারতের পরিস্থিতি কিন্তু পাল্টাবে না। প্রথম ইনিংসেই তাদের লিড ছিল ১৩২ রানের, আর দ্বিতীয় ইনিংসে যখন ভারতের রান ৩ উইকেটে ১৫৩- তখনও ক্রিজে আছেন চেতেশ্বর পূজারা আর ঋষভ পন্থ। ইংল্যান্ডকে ৫০০ টার্গেট দেওয়াও তখন খুব সহজই মনে হচ্ছিল। বিশেষ করে জেমস অ্যান্ডারসন আর স্টুয়ার্ট ব্রডের ওপর যে ওয়ার্কলোড ইতোমধ্যেই ছিল, আর স্পিনার জ্যাক লিচকে যেভাবে ভারত আক্রমণ করছিল, তাতে এটা অসম্ভব ছিল না।

অথচ তিন জায়গাতেই পরিণতি একই, পরিস্থিতি একই। ক্রিজে সেট ব্যাটসম্যান, বড় টার্গেট দেওয়ার আশা – অথচ ভারতের ইনিংস শেষ হয়ে গেছিল খানিকক্ষণ পরেই!  

তার মানে একটা ব্যাপার স্পষ্ট, নতুন বল আসার আগেই যত দ্রুত সম্ভব রান তুলে নেওয়া – ভারতের এই পরিকল্পনা কোনোভাবেই কাজে লাগেনি। বরং এই পরিকল্পনাই তাদের জন্যে ব্যাকফায়ার করেছে, বেশিরভাগ ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নে পাঠিয়েছে।

রক্ষণাত্মক মানসিকতা ও ফিল্ডিং

জসপ্রীত বুমরা ও মোহাম্মদ শামির মত বোলার থাকার পরও ভারতের ম্যাচ হারার এটাও একটা কারণ। নিচের টেবিলটার দিকে লক্ষ্য করুন।

ভারতের বিপক্ষে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং ; Photo Credit: Samiatul Khan/roar

 

প্রতিপক্ষ ব্যাটাররা ভারতের দেওয়া টার্গেট উৎরে যেতে একদম ঠিকঠাক অ্যাপ্রোচ নিয়েই ব্যাটে নেমেছে। তারা শুরুতেই ভারতের ওপর চড়াও হয়েছে, প্রথম ২০ ওভারেই রানের জন্যে বাউন্ডারিকেই বেছে নিয়েছে। আর এই জায়গাতেই ভুল করেছে ভারত। ভারতের ফিল্ডিং পরিকল্পনা ছিল এমন যে ব্যাটে বল লাগলে সেখানে সিঙ্গেল নেওয়ারও পর্যাপ্ত সুযোগ ছিল। বাউন্ডারিতে যাওয়ার আগে তাই প্রতিপক্ষ দল ভারতের দেওয়া এই সিঙ্গেল বা ডাবল নেওয়ার ‘সুবিধা’কে অস্বীকার করেনি।

ওয়ান্ডারার্সে দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪০ রান তাড়া করেছিল ৩.৫৯ রান রেটে মাত্র ৬৭.৪ ওভারে । আবার কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকা ২১২ রান তাড়া করেছিল ৩.৩৩ রান রেটে ৬৩.৩ ওভারে। আবার শেষ টেস্টেও ইংল্যান্ড ৩৭৮ রান তাড়া করেছিল ৪.৯৩ রান রেটে মাত্র ৭৬.৪ ওভারে।

আর এখানেই যে প্রশ্নটা চলে আসে, ভারতের সিমাররা যখন তৃতীয় কিংবা চতুর্থ স্পেলে ক্লান্ত, ম্যাচের ওভার গড়িয়েছে বিশের বেশি, ভারত তখনও তাদের স্পিনারদের সামনে আনেনি। বরং ভারতের অধিনায়ককে দেখে মনে হয়েছে, চাপের এই পুরো সময়টাতে তিনি সামনে ঢাল হয়ে দাঁড় করিয়ে দিতে চেয়েছেন তার ক্লান্ত-শ্রান্ত পেস আক্রমণকে!

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টটাই দেখুন। অশ্বিন সেখানে বল করেছেন মাত্র ১১.৪ ওভার; এই ১১.৪ ওভারেই ২৬ রানের খরচায় দক্ষিণ আফ্রিকার তিনটি উইকেটের একটি নিয়ে নিয়েছেন তিনি। এমনকি এরপরের টেস্টেও অশ্বিন ভারতের বোলারদের ৬৩.৩ ওভারের মধ্যে মাত্র ১১.৩ ওভার বল করেছেন। সেখানে অবশ্য তিনি ৫১ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি।

আবার এজবাস্টনের দিকেই তাকান, সেখানে রবীন্দ্র জাদেজা বলে যথেষ্ট টার্ন পাচ্ছিলেন। অথচ এই টার্ন সত্ত্বেও তাকে দিয়ে করানো হল মাত্র ১৮.৪ ওভার। এই ১৮.৪ ওভারে কোনো উইকেট অবশ্য তিনি বাগাতে পারেননি, তবে মাত্র ৬২ রান দিয়ে তার ইকোনমি রেট ছিল ৩.৩২ – যেটা কি না বোলারদের মধ্যে ছিল সবচেয়ে কম! এর মধ্যে আরেকটা ব্যাপারও খেয়াল করতে হবে – স্লো ওভাররেটের কারণে ভারত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুটো পয়েন্ট খুইয়ে ফেলেছে, যেটা কি না জাদেজা বল করলে না-ও হতে পারত। এখানেই আবারও প্রশ্নটা ঘুরে ফিরে চলে আসে: ভারত কি বিদেশের মাটিতে স্পিনার খেলানোর মতো সাহস রাখতে পারছে না? কিংবা নিজ দেশের স্পিনারদের ওপরই তাদের যথেষ্ট আস্থা নেই?

হ্যাঁ, মেনে নিতেই হবে যে এ ধরনের কন্ডিশনে স্পিনাররা সচরাচর ঠিক যুৎসই বোলার নন। কিন্তু মাঝের ওভারগুলিতে যখন পরিস্থিতি আপনার বিপক্ষে চলে যাচ্ছে, একটা পার্টনারশিপ আপনার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, আপনার পেসাররাও একের পর এক স্পেল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে, তখন আপনি কী করবেন? যেকোনো অধিনায়কই তখন স্পিনার দিয়েই ব্রেকথ্রু আনার চেষ্টা করবেন। এতে করে শেষের দিকে বল করার জন্যে পেসাররাও প্রাণবন্ত থাকবেন। আর এই ট্যাকটিক্সেই তিন ম্যাচের প্রতিটাতেই ভারত মার খেয়ে গেছে।

তবে এইমাত্র যে ট্যাকটিক্সের কথা বলা হলো, সেটার প্রমাণও দেখা যাক। ২০১৯-২০ সালের দিকে যখন ইংল্যান্ড দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গেছিল, তখন তারা টেস্ট সিরিজে জিতেছিল ৩-১ ব্যবধানে। নিচের এই টেবিলটার দিকে তাকালেই আপনি দেখতে পাবেন, সেই সিরিজে ইংলিশ স্পিনাররা কীভাবে ম্যাচে অবদান রেখেছিল, আর পেসারদের একেবারে নির্দিষ্ট সময়েই প্রাণবন্ত হয়ে স্পেলে আসতে সাহায্য করেছিল।

২০১৯-২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ইংলিশ বোলারদের বোলিং ; Photo Credit: Samiatul Khan/roar

 

এখানে ডম বেস স্টুয়ার্ড ব্রডের চাইতে দুই ম্যাচ কম খেলেছিলেন, কিন্তু ব্রডের চাইতে কম করেছিলেন মাত্র ৫ ওভার। সব মিলিয়ে ডম বেসকে দিয়ে অধিনায়ক করিয়েছিলেন ১১৩ ওভার। এদিকে ডম বেস যে প্রথম টেস্টটা খেলেননি, সেই টেস্ট আবার ইংল্যন্ড হেরে গেছিল। অন্যদিকে ডম বেসের খেলা টেস্ট ম্যাচগুলিতে তার ইকোনমি রেট ছিল ১.৮২, যেটা প্রোটিয়া ব্যাটারদের চাপে রাখতে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল।

শুধু তা-ই নয়, পার্ট টাইম স্পিনার হিসাবে জো রুট এবং জো ডেনলি অব্দি একসাথে ৮৮ ওভার বল করেছিলেন তখন, যেটা কি না ভারতের হয়ে ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অশ্বিন আর জাদেজার করা মোট ওভারের চাইতে অনেক বেশি।

আবারও, এই ব্যাপারটা কিন্তু কোনোভাবেই দৃষ্টি এড়াচ্ছে না যে সাদা পোশাকে ভারতীয় অধিনায়ক তার স্পিনারদের ঠিকঠাক ব্যবহারই করছেন না।

এবার আসি নিউ জিল্যান্ডের কথায়। ইংল্যান্ডের সাথে কয়েক মাস আগেই তারা ৩-০তে সিরিজ হেরে এসেছে। আর এখানেও তারা ভারতের মতোই ভুল করেছে। সিমারদের দিয়ে তারা অনেক বেশি বল করিয়েছে, এতে করে বোলিং অ্যাটাক হয়ে গেছে ওয়ান-ডাইমেনশনাল। নিচের এই ছকটা দেখলেই সেটা ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।

সদ্য ইংল্যান্ড সফরে সফরে কিউই বোলারদের বোলিং ; Photo Credit: Samiatul Khan/roar

 

আরেকটা ব্যাপারও ভুলে গেলে চলবে না, ট্রেন্ট বোল্ট আর টিম সাউদি তখন সদ্য আইপিএলের মৌসুম শেষ করে ফিরেছেন। আর ফিরেই তিন টেস্ট মিলিয়ে ১২২.৫ আর ১২১.২ ওভার করাটা কোনোভাবেই দলের জন্যে ভালো কিছু বয়ে আনবে না। অথচ ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’ অধিনায়ক কিন্তু চাইলেই স্পিনারদের দিয়ে মাঝের ওভারগুলি করিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। মাইকেল ব্রেসওয়েলকে দিয়ে সব মিলিয়ে তিনি করিয়েছেন মাত্র ৪৭.৪ ওভার আর আজাজ প্যাটেল, যিনি সদ্য ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার এলিট ক্লাবে ঢুকেছেন – তাকে দিয়ে করিয়েছেন মাত্র ২ ওভার!

ভারত আর নিউ জিল্যান্ড একদম একই ধরনের স্ট্রাটেজি নিয়ে ইংল্যান্ডে টেস্ট খেলতে নেমেছিল, আর দুই দলই টেস্ট হেরে সেখান থেকে ফিরে এসেছে। নিউ জিল্যান্ড কিংবা ভারত একইভাবে চতুর্থ ইনিংসে তিনশোর বেশি রানও ডিফেন্ড করতে পারেনি!

আজকের দিনে ক্রিকেট আস্তে আস্তে বদলে যাচ্ছে, ক্রিকেট হয়ে যাচ্ছে আরো বেশি মস্তিষ্কের খেলা। আর এই খেলায় আপনার হাতে থাকা রিসোর্সগুলোকে অবশ্যই আপনাকে যথাযথ ব্যবহার শিখতে হবে। মোটামুটি নিশ্চিত, ভারত এই যে তিন টেস্টে হারল, তার পেছনে তাদের স্কিলের ঘাটতি নেই, পুরো ব্যাপারটাতেই তারা স্ট্র‍্যাটেজিক পরিকল্পনায় ব্যর্থ হয়েছে। ইংরেজিতে বলা ‘সেনা কান্ট্রি’তে শুধুই সিমারে নির্ভর করতে হবে ধরনের মুখস্থ একটা পরিকল্পনা কে যেন তাদের মাথায় বুনে দিয়েছে।

আর তাই এই হার কোনোভাবেই স্কিলের নয়, বরং ট্যাকটিক্সের।

Related Articles