Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নাঈমের ব্যর্থতাটা প্রশ্ন তুলে দিল নির্বাচকদের নিয়েও

দল নির্বাচনের কাজটা খুব সহজ নয়।

দর্শক হয়ে খেলা দেখলে তো খেলোয়াড় কী করছেন দেখলেই চলে, কিন্তু যেই মাত্র আপনার ভূমিকাটা বদলে গেল নির্বাচক বা বিশ্লেষকে, তখন ‘কী হচ্ছে’ প্রশ্নের চাইতে “কীভাবে, কখন, কেন” প্রশ্নগুলোই নিয়েই ভাবতে হয় বেশি।

বোঝা গেল না পরিষ্কার? একটা উদাহরণ দিচ্ছি।

এই যে ভারতের ডমেস্টিক ক্রিকেটে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ছেন সরফরাজ খান, তবুও জাতীয় দলের দরজা খুলছে না তার জন্য, এর ব্যাখ্যা নানাজন নানাভাবেই করছেন। বঞ্চনা, আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গগুলোও টেনে আনছেন কেউ কেউ। আর নিখাঁদ ক্রিকেটীয় কারণ খুঁজতে গেলে মিলছে, তার বড় বড় স্কোরগুলোর বেশিরভাগই মিডল বা লোয়ার-অর্ডারে। এখন পর্যন্ত তাঁর ৩৫০৫ ফার্স্ট ক্লাস রানের ৩৩৪৮-ই এসেছে পাঁচ নম্বর বা এর নিচে ব্যাট করে। বলটা তখন পুরনো হয়ে যায়, পিচ সহজ হয়ে আসে, বোলাররা টায়ার্ড হয়ে যায় – মুম্বাইয়ের হয়ে সরফরাজের পাঁচ নম্বরে ব্যাট করার অর্থ ভারতীয় নির্বাচকেরা করছেন এমন: তোমার ডমেস্টিক টিমই ভাবতে পারছে না, তুমি নতুন বলের চ্যালেঞ্জগুলোর মুখে দাঁড়ানোর মতো সামর্থ্যবান। সেক্ষেত্রে জাতীয় দল কিভাবে আরও শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের সামনে তোমাকে দাঁড় করানোর সাহস করবে?

Image credit: PTI

এমন না যে, সরফরাজের জন্যই এই নিয়মের সৃষ্টি। ২০০৬ সাল থেকে ভারত যে ৫৪ জন ক্রিকেটারের অভিষেক করিয়েছে, এর মধ্যে একমাত্র করুণ নায়ারকেই স্পেশালিস্ট ব্যাটার বলা যায়, যিনি পাঁচ বা এর পরে ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। এমনকি, করুণ নায়ারও তার অভিষেকের আগের মৌসুমে ওপরে উঠে এসেছিলেন। সরফরাজকে ন্যাশনাল টিমে ঢোকার আগে এই ব্যাটিং-অর্ডারের বাধাটা টপকাতে হবে, এমনই বলছেন বিশ্লেষকেরা।

বাংলাদেশের দল নির্বাচনের সময়ও কি নির্বাচকেরা এমন মানদণ্ডে ফেলে ক্রিকেটারদের পরখ করেন? প্রশ্নটা উঠছে বিশ্বকাপের তিন মাস আগে নাঈম শেখকে আচমকাই জাতীয় দলে ডেকেছে ফেলা হলো বলে।

গেল মৌসুমের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে টুর্নামেন্ট-সর্বোচ্চ ৯৩৪ রান করেছেন তিনি। নাঈম শেখ কী করেছেন, কেবল এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে তাকে দলে ডাকাই যায়। কিন্তু, প্রথমেই যে ভারতীয় দল নির্বাচনের প্রক্রিয়াটা জানিয়ে বোঝানো হলো, কখন করেছেন, কীভাবে করেছেন প্রশ্নের উত্তরগুলোও খোঁজা জরুরি। 

Image Credit: Getty Images

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর ঘরোয়া ক্রিকেটের মান একই হলে উত্তরগুলো খোঁজার দরকার পড়ত না। কিন্তু দুইয়ের মাঝে তফাৎটা আসমান আর পাতাল, সে কারণেই এই প্রশ্নের উত্তরগুলো খোঁজা জরুরি। নির্বাচকদের কাজও শুরু আসলে এখান থেকেই। বেশ কিছু মানদণ্ড তৈরি করে তারা যাচাই-বাছাই করবেন, ঘরোয়াতে করা রানগুলোর কতটা অনূদিত করা যাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও।

একদমই আনকোরা, উদীয়মান কোনো ক্রিকেটারকে দলে ডাকতে গেলে কাজটা কিছু কঠিনই। কিন্তু, নাঈম শেখের মতো যারা জাতীয় দলে খেলে ফেলেছেন বেশ লম্বা সময়, মাঝে বাদ পড়েছেন দুর্বলতা বেরিয়ে যাওয়াতে, তাদের প্রত্যাবাসন করানোর কাজটা কিন্তু অত কঠিন নয়। যেহেতু, এর আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে ফেলেছেন, খামতিগুলো তো ধরে ফেলাই গেছে। প্রত্যাবর্তন ঘটানোর আগে তাই দেখা হবে, আগেরবারের ভুলগুলো তিনি শোধরাতে পেরেছেন কি না।

নাঈম কি পেরেছিলেন ভুল শোধরাতে?

Image Credit: Alex Davidson/Getty Images

প্রথম দফায় জাতীয় দলের জার্সিতে তাকে নিয়ে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল, তার ইনিংসের সূচনাটা ভীষণ মন্থর। উইকেটে সেট হতে অনেক বেশি সময় নিয়ে নেন।

ডিপিএলের গেল মৌসুমের হিসাবখাতায় চোখ বুলিয়ে দেখা যাচ্ছে, অভিযোগ থেকে তাকে নিষ্কৃতি দেওয়া যাচ্ছে না এবারও। এবারের ডিপিএলে তিনি প্রথম ১০ বলে রান করেছেন মাত্র ৬৪ স্ট্রাইক রেটে। ২০ বল পরে সেটা বেড়ে হয়েছে ৭৭-এর মতো। আর প্রথম পাওয়ারপ্লে শেষ করেছেন ৮৪ স্ট্রাইক রেটে। এর আগের মৌসুমে যেখানে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়লেন এনামুল হক বিজয়, সেখানে তিনি প্রথম ১০ ওভারে ব্যাট করেছেন ১০১.২ স্ট্রাইক রেটে। নাঈমের সংখ্যাটা তাই ডিপিএলের মানদণ্ডে অনেক পিছিয়ে। 

স্ট্রাইক রেট
প্রথম ১০ বলে৬৪.৮১
২০ বল পরে৭৭.৮১
পাওয়ারপ্লেতে৮৪.০৬

নাঈমকে নিয়ে প্রশ্ন ছিল তার শট রেঞ্জের সীমাবদ্ধতার কারণেও। অফ স্টাম্পের বাইরে পঞ্চম বা ষষ্ঠ স্টাম্প লাইনে বল করলে কোনো জবাব থাকে না তার। এমন না যে আক্রমণ করতে চেষ্টা করেন না, কিন্তু খুঁজে খুঁজে যেন ফিল্ডারদেরই বের করেন বেশির ভাগ সময়।

এবারের ডিপিএল কি বুঝিয়েছিল যে তার শট রেঞ্জ বেড়েছে? উত্তর, না। প্রত্যাবর্তন সিরিজে আফগান পেসার ফজলহক ফারুকির করা চ্যানেলের বলগুলো ডট খেললেন তিনি, একই কাজ এর আগে হয়েছে ডিপিএলেও, আর পরে ইমার্জিং এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচেও। 

শেখ জামালের বিপক্ষে মৌসুমে আবাহনীর শেষ ম্যাচে বাঁহাতি পেসার শফিকুল ইসলাম অফ স্টাম্পের বাইরে বল ফেলে গেলেন একের পর এক, আর তিনিও রান নিতে ব্যর্থ হলেন পরের পর।

অফ সাইডের বাইরের বলে একদম আটকে যান নাঈম শেখ। Image credit: Rezwan Rahman Sadid

ইমার্জিং এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিনুরা ফার্নান্দো তো অফ সাইডে কাভার ফাঁকা করে দিয়ে এক প্রকার চ্যালেঞ্জই জানালেন, ‘পারলে খেলে দেখাও ওই গ্যাপে।’ নাঈম শেখ ব্যর্থ হলেন এখানেও। ফিল্ডার খুঁজে নিলেন প্রতিবারই।

কাভার ফাঁকা, কিন্তু নাঈম সুযোগ নিতে পারলেন কই! Image credit: Rezwan Rahman Sadid

ইনিংসের সূচনাটা শম্বুকগতির হলেও শেন ওয়াটসন বা মহেন্দ্র সিং ধোনিদের সামর্থ্য ছিল পরে গিয়ে বোলারদের কচুকাটা করার। তাদের স্ট্রাইক রেটটা ভীতিজাগানিয়া এই কারণেই। কিন্তু, নাঈম পারেননি অমন রুদ্রমূর্তি ধরতেও, পারেননি সেট হয়েও ইনিংসের গতি বাড়াতে। না পারার ব্যাখ্যা আছে এখানেও, অফ স্পিন বোলিংটা ঠিক তার পছন্দ নয়।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাঈম জিততে পারেননি অফ স্পিনের চ্যালেঞ্জও। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অফ স্পিনারদের তিনি খেলেছেন মাত্র ৮৮ স্ট্রাইক রেটে। আর জাতীয় দলের বাইরে গিয়েও যে উন্নতি হয়নি, তার প্রমাণ ডিপিএলেই। ৩৮৩ বল খেলে উইকেট দেননি একবারও, কিন্তু রান করেছেন ৭৪ স্ট্রাইক রেটে। আফগানিস্তানের মুজিব-উর-রহমানের বিপক্ষে তার সংগ্রামটা তাই বিস্ময়জাগানিয়া নয় মোটেই।

যখন নাঈম শেখকে আফগানিস্তান সিরিজের দল নির্বাচন করতে বসেছিলেন, তখন কি নাঈম শেখের ডিপিএলের ইনিংসে এই প্রশ্নগুলোর জবাব খুঁজেছিলেন সিলেক্টররা? খুব জোর সম্ভাবনা, খোঁজেননি। কেননা, যদি খুঁজতেন, তাহলে তাকে দলে ডাকার বিপক্ষে অনেক শক্ত বুনিয়াদই ছিল।

মুজিবের বিপক্ষে সংগ্রাম চলছেই। Image credit: Francois Nel/Getty Images

ডিপিএলে বা ছায়া জাতীয় দলের ম্যাচে মাঝেমধ্যে দুয়েকটা বল পাওয়া যায় পায়ের ওপর, যেই বলগুলোতে তিনি বরাবরই ভালো। নাঈম শেখ ওই বলগুলোর সদ্ব্যবহার করেই রান করেছেন ইনিংসের শুরুতে। কিন্তু, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে এই আলগা বলগুলো কি পাওয়া যাবে? সম্ভাবনা একদমই সীমিত। সে কারণেই নিজের মান বাড়িয়ে জিততে হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চ্যালেঞ্জ।

স্কোয়াড নির্বাচনের টেবিলে নির্বাচকদের সামনে সুযোগ ছিল নাঈম শেখের এই ঘাটতির জায়গাগুলোকেই চিহ্নিত করা। বয়সটাও খুব বেশি নয় তার, সুন্দর বাংলাদেশের ভবিষ্যত কল্পনাও করা যায় তাকে কেন্দ্র করে, সেক্ষেত্রেও তাকে বুঝিয়ে দেওয়ার সুযোগ ছিল, ‘তোমার এই ঘাটতিগুলো এখনো রয়ে গেছে। আমরা এই এই কারণে তোমাকে এখন ভাবছি না। তবে, আশাহত হওয়ার কিছু নেই। এগুলো শোধরাতে পারলে অবশ্যই ভাবব। সময় তো পড়েই আছে।’

খুব সহজ সমাধানের এই রাস্তা না বেছে নির্বাচকেরা যে তাকে দলে ডাকলেন, এবং আরও একবার ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে এসে নাঈম শেখ বোঝালেন, তিনি এখনো তৈরি নন, এই দায় নাঈম শেখের যতটা, নির্বাচকদের তার চেয়ে কম নয় কোনো অংশে।

নাঈম শেখের প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি মাঝের সময়ে, কিন্তু নির্বাচকেরাও তাদের কাজটা ঠিকঠাক করলেন কি?

This article is in Bangla language. This article is an analysis on Naim Sheikh's failure against Afghanistan. Necessary images are attached inside.

Featured Image © Getty Images

Related Articles