![](https://assets.roar.media/assets/gdHaXc5UZToGWPnq_1.jpg?w=1200)
স্থাপত্যশৈলী হোক নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন, অথবা বাণিজ্যিক চাহিদা মেটানোর স্বার্থেই হোক না কেন, সর্বোপরি তা স্বার্থ হাসিলের পাশাপাশি শিল্পকে ত্বরান্বিত করে থাকে। বিগত বছরের স্থাপত্যশৈলীসমূহ অন্তত আমাদের তা-ই শেখায়। আর স্থাপত্যশৈলী যে ভাবনার খোরাক যোগাতেও দারুণ কার্যকর, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি অতীত আর বর্তমানের স্থাপত্যধারাকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে ভবিষ্যতের স্থাপত্যরীতি আর শৈলী। বছর ঘুরে নতুন বছর এসেছে। বিগত বছরের সবকিছুতে জড়িয়ে আছে একটি নাম- করোনাভাইরাস।
করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী লকডাউন থাকায় থেমে ছিল অসংখ্য প্রকল্পের কাজ। এত বাধা সত্ত্বেও, ২০২০ সালে দারুণ সব স্থাপত্যশৈলীর নির্মাণ হয়েছে, যেগুলো একাধারে দৃষ্টিনন্দন, শৈল্পিক, নান্দনিক, আধুনিক এবং পরিবেশবান্ধব। এসব স্থাপত্যশৈলীর মাঝে আসলে সেরা ১০টি বাছাই করা অত্যন্ত কঠিন এক কাজ। কিন্তু সেই কঠিন কাজটা সহজ করে দিয়েছে স্থাপত্যবিষয়ক বিখ্যাত সব পত্রিকা ও ওয়েব পোর্টালগুলো। সেখান থেকেই বাছাইকৃত সেরা দশ স্থাপত্যশৈলীর বিবরণ নিয়ে আজকের আয়োজন।
আনন্দলয়
রুদ্রাপুর, দিনাজপুর, বাংলাদেশ
আনন্দলয়, অতিশয় আনন্দের স্থান। বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার রুদ্রাপুর গ্রামে অবস্থিত এই আনন্দলয় ভবনটি হচ্ছে মূলত দ্বিতল একটি কমিউনিটি সেন্টার। নিচতলায় প্রতিবন্ধীদের থেরাপি সেন্টার এবং দোতলায় নারী নেতৃত্বাধীন একটি হাতে বোনা টেক্সটাইল কর্মশালা রয়েছে। কমিউনিটি সেন্টারটি জার্মান স্থপতি অ্যানা হেরিঙ্গারের ডিজাইন। যিনি ইতোমধ্যেই এই স্থাপত্যশৈলীর জন্য সম্মানজনক ওবেল অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন। যে অ্যাওয়ার্ডটি দেয়া হয় ‘বিশ্বব্যাপী মানব উন্নয়নে সাম্প্রতিক ও অসামান্য স্থাপত্যিক অবদান’-এর জন্য।
![](https://assets.roar.media/assets/s50eH4XIZKfzJvJk_001_anandaloy_rudrapur-bangladesh-2020_studio-anna-heringer_by_kurt-hoerbst_102024.jpg)
কাঠামোগত উপাদান হিসেবে হেরিঙ্গার স্থানীয় উপকরণই ব্যবহার করেছেন। এর মধ্যে জলাশয় এবং পুকুরের তলার মাটি রয়েছে যেগুলো পিটিয়ে ঢেলার আকৃতি দিয়ে মজবুত করা হয়েছে। ভবনটির নিচতলায় মাটির ঢেলার দেয়ালে ঘেরা রয়েছে একটা অফিস, বাথরুম এবং থেরাপি সেন্টার। আর দেয়ালের অন্য আরেকপাশে রয়েছে আরেকটি থেরাপি রুম এবং প্রধান লিভিং রুম। এসবের মাঝে আরো একটি স্থান নির্মাণ করা হয়েছে। চারটি গুহাকৃতির রুম তৈরি করা হয়াছে ঢেলার দেয়াল খুঁড়ে।
থেরাপি সেন্টারের উপর দ্বিতীয় তলায় একটি অফিস, একটি বিপণি বিতান এবং দ্বিপদী টেক্সটাইলের কর্মশালা রয়েছে – স্থানীয় নারীদের কর্মদক্ষতা ও উন্নয়নের জন্যে স্থপতি হেরিঙ্গার ও ভেরোনিকা ল্যাং যৌথভাবে এবং স্থানীয় এনজিও সংস্থা দীপশিখার সঙ্গে মিলিত হয়ে একটি পোশাক তৈরির প্রকল্প চালু করেছে। ভবনে ব্যবহৃত বাঁশ স্থানীয় বাঁশবাগান থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছে, যা দিয়ে ভবনের চারপাশ জুড়ে থাকা বারান্দা, সিলিং এবং ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে।
![](https://assets.roar.media/assets/4ex2dWegfOPUcFDe_062_anandaloy_rudrapur-bangladesh-2020_studio-anna-heringer_by_kurt-hoerbst_074534-1536x1024.jpg)
আনন্দলয় নির্মাণে স্থানীয় উপকরণ আর উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি স্থানীয় শ্রমশক্তিকেও কাজে লাগানো হয়েছে। প্রাকৃতিক ও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করায় বাজেটের একটা বড় অংশ অ্যানা হেরিঙ্গার এখানকার এনজিওকে দান করেন, মানব সম্পদ উন্নয়নে কাজে লাগানোর জন্য। স্থানীয়দের থেকে কাঁচামাল কিনে এবং তাদের মজুরি দিয়ে কাজে লাগিয়ে এ ভবন নির্মাণের কাজ করা হয়েছে।
মুজে অ্যাটেইলার অডেমার্স পিগুয়েট
লে চেনিট, সুইজারল্যান্ড
মুজে অ্যাটেইলার অডেমার্স পিগুয়েট হলো প্যাঁচানো একটি ভবন, যা সুইজারল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান ভ্যালি অভ জুক্সে অবস্থিত। এ ভবনের স্থপতি হিসেবে কাজ করেছেন ডেনিশ আর্কিটেকচারাল ফার্ম বিগ-বিজার্ক ইঙ্গেলস গ্রুপ। এটি মূলত ঘড়ি নির্মাতাদের স্মরণে নির্মিত, যেখানে টাইমপিসের বিভিন্ন সংস্করণ সংগ্রহে রাখা আছে। বিগের ডিজাইনকৃত বাঁকানো কাঁচের দেয়ালের প্যাভিলিয়ন এবং সবুজ ছাদের ভবনটি মূল অডেমার্স পিগুয়েটের কর্মশালার পাশেই অবস্থিত; যা মূলত ১৮৭৫ সালে স্থাপিত। এই ঐতিহাসিক ভবনটি সুইস আর্কিটেকচার অফিস সিসিএইচই কর্তৃক পুনর্নির্মিত হয়েছে এবং নতুন জাদুঘরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।
![](https://assets.roar.media/assets/DwqH0I7IbiswrlHk_Musee_Atelier_Le_Brassus_2019_05_Iwan_Baan_JPEG.jpg)
জাদুঘরটির বাঁকানো কাঁচের দেয়াল নির্মিত হয়েছে ভার বহনে সক্ষম প্রাচীর দিয়ে। তাই পুরো ভবন জুড়ে কোনো কলাম, দেয়াল বা থাম দেখা যায় না। বাঁকানো কাঁচের দেয়ালের উপরের দিকে সম্মুখভাগে তামার জালের বুনানি বানানো রয়েছে; যা একইসঙ্গে সূর্যের আলো ছেঁকে অভ্যন্তরে ঢোকাতে এবং জুরা পর্বতের দৃশ্য উপভোগ করতে সাহায্য করে। সর্পিল বাঁকানো ছাদের এ আকৃতি এক ধরনের প্রাকৃতিক জানালা তৈরি করেছে, যা ব্রোঞ্জের ছায়াযুক্ত। ছাদের অংশের পুরোটা জুড়ে ঘাস দেয়া হয়েছে; যা গ্রীষ্মকালে লনের কাজ করলেও শীতকালে তা বরফের এক দারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য ফুটিয়ে তোলে।
মূলত একটি ঘড়ির ভেতরের যেমন কাঁটা ছুটে চলে নির্দিষ্ট গতিতে আর নিয়মে, ঠিক একই চলার পথ তৈরি করা হয়েছে ভবনের ভেতরেও। যেন ভেতরে থাকা কোনো দর্শকের মনে হয়, তিনি একটা আস্ত ঘড়ির ভেতর দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। ভেতরের মেঝেটাও বাহ্যিক আকৃতি অনুসরণ করে বানানো। একদম প্রবেশ থেকে শুরু করে ভবনটির মধ্যভাগ অবধি মেঝে কোথায়ও নেমে গেছে, তো কোথায় উঁচু হয়ে আছে। আর তা প্যাঁচানো সর্পিল আকৃতি মেনেই।
![](https://assets.roar.media/assets/tdlSKJ9yUlFB32Ok_Musee_Atelier_Le_Brassus_2020_27_Iwan_Baan_JPEG.jpg)
ভেতরে প্রদর্শিত প্রতিটি ঘড়িই মাটিতে নোঙ্গর করা পাতলা কলামের উপর জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত যন্ত্রের আদলে গড়া ধাতব ডিসপ্লেতে রাখা আছে। প্রদর্শনীর জন্য আরো আছে ভাস্কর্য এবং চলমান সব মডেল, যা মূলত ঘড়ির অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপ প্রদর্শন করে। আরো মজার বিষয় হচ্ছে, যারা ঘড়ি সংক্রান্ত বিষয়ে দীক্ষা নিতে চান, তাদের উৎসাহিত করার জন্য কাঁচঘেরা অংশে ঘড়ির কাজে নিযুক্ত কর্মরত লোকেদের দেখার সুযোগও রয়েছে।
ওপাস
দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত
বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন বুর্জ খলিফার সংলগ্ন এ এলাকায় অন্য কোনো দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য চোখে না পড়াটা এতদিন স্বাভাবিক ব্যাপারই ছিল। কিন্তু ওপাস সে ধারণাকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিল। প্রয়াত প্রিজকার পুরস্কার জেতা স্থপতি জাহা হাদিদ ওপাস টাওয়ার নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী দিয়ে ফের প্রমাণ করলেন, স্থাপত্যধারায় তিনি এক ও অনন্য এক সম্রাজ্ঞী। মেলিয়া হোটেল ইন্টারন্যাশনালের ব্র্যান্ড চেইন হোটেল মি বাই মেলিয়া হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের প্রকল্প। এ প্রকল্পের হোটেলটিই হচ্ছে ওপাস। মেলিয়া ইন্টারন্যাশনালের প্রায় চার শতাধিক হোটেল রয়েছে, প্রায় ৪০টির মতো দেশে।
![](https://assets.roar.media/assets/sMAlcFkwAAmm8Gcd_Laurian-Ghinitoiu.jpg)
ওপাস হচ্ছে দু’টি আলাদা আর পৃথক টাওয়ার, যা ঘনক্ষেত্রের আদলে গড়া এবং অনন্যভাবে দুটো টাওয়ার একটাতে এসে মিলিত হয়েছে। কিন্তু এই ঘনক্ষেত্র আদলের ভবনের মাঝে আবার খোদাই করা- যা দু’টি ভবনের মাঝে এক নান্দনিক আর স্থাপত্যিক শূন্যতা তৈরি করেছে। দু’টি টাওয়ার মূল স্থল স্তর থেকে চারতলা বিশিষ্ট অলিন্দ দ্বারা যুক্ত, যা মাটি থেকে ৭১ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। তিনতলা সমপরিমাণ এই অপ্রতিসম সেতুটি ৩৮ মিটার প্রশস্ত। মি দুবাইয়ের পাশাপাশি ওপাসে আছে ১২টি রেস্তোরাঁ এবং একটি রুফটপ বার; এছাড়া, ৫৬,০০০ বর্গফুট জায়গা থাকবে অফিস করার জন্যে।
![](https://assets.roar.media/assets/SRL2LucgPCpOTT3E_05_ZHA_Opus_%C2%A9LaurianGhinitoiu.jpg)
এই নকশাটা জাহা হাদিদ প্রথম ২০০৭ সালে প্রদর্শন করেন। তবে কাজটা পরিপূর্ণ হবার আগেই ২০১৬ সালে তিনি ইহলোক গমন করেন। জাহা হাদিদ নির্মিত একমাত্র স্থাপত্যশৈলী এটি, যার ইন্টেরিয়র এবং এক্সটেরিয়র- দুটোই তার করা।
জেনেসিস
লন্ডন, ইংল্যান্ড
ডেনিজেন ওয়ার্কস পূর্ব লন্ডনের একটি খালের ভাসমান নৌকায় তৈরি করেছেন একটি গীর্জা, যার উপর একটা পপ-আপ ছাদ রয়েছে। ছাদটি মূলত গীর্জার পাইপ অর্গানের আদলে গড়া এবং তা অর্গানের কাজও করে থাকে। কুইন এলিজাবেথ পার্কের কাছেই থাকা লেকে বর্তমানে এই গীর্জাটি নোঙ্গর করা। ভাসমান গীর্জার নামকরণ করা হয়েছে জেনেসিস। এটি একটি ভাসমান ও মোবাইল সমাবেশ কেন্দ্র, যা একইসাথে গীর্জা এবং কমিউনিটি হাবের কাজ করে।
জেনেসিস নির্মাণে যৌথভাবে কাজ করেছে ডেনিজেন ওয়ার্কস আর্কিটেকচার ফার্ম, তুর্কি শিপইয়ার্ড এবং নেভাল স্থপতি টনি টাকার। প্রসারিত আর পপ-আপ ছাদ এর অন্যতম আকর্ষণ। শুধু তা-ই নয়, বরং গীর্জার পাইপ অর্গানের সুর নিয়ে তা পাইপ অর্গানের কাজও করে। মূলত ভক্সওয়াগনের ক্যাম্পের ভ্যানের উপর নির্মাণ করা হয়েছে এ জেনেসিস। ছাদটি নির্মাণ করা হয়েছে হাইড্রোলিক র্যাম দ্বারা। এতে ব্যবহার করা হয়েছে স্বচ্ছ আলো আসতে পারে এমন ক্যানভাস কাপড়, যার পুরোটা জুড়ে এলএইডি বাতি লাগানো। যখন এটি প্রসারিত হয়, তখন দেখে যেন আলোকিত বাতিঘর বলেই মনে হয়।
একটি সুইচের বাটনে চাপ দেয়ামাত্রই গুটিয়ে নেওয়া যাবে, যাতে এটি ইংল্যান্ডের সরু খালগুলো জুড়ে অনায়াসে চলাচল করতে পারে। জাহাজের মধ্যভাগ দিয়ে প্রবেশপথ প্রধান সমাবেশের স্থান হিসেবে নির্বাচিত। একে সামনের দিকও বলা হয়। পেছনের দিকে রয়েছে রান্নাঘর, অফিস আর বাথরুম। ভেতরের ইন্টেরিয়র হালকা প্লাইউড দিয়ে নির্মিত দেয়াল, সবুজ লিনোলিয়ামের মেঝে; মূল হলটা বেশ মিনিমাল ডিজাইনে করা এবং ৩.৬ মিটার উচ্চতা পায় ছাদটা ওঠানো হলে। ডেনিজেন ওয়ার্কসের এ নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করে পর্যটক আর স্থাপত্যপ্রেমীরা।
দ্য লাখটা সেন্টার
সেইন্ট পিটার্সবার্গ, রাশিয়া
লাখটা সেন্টারটি আরএমজেএমের ডিজাইনকৃত, যা রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গে অবস্থিত। ৪৬২ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন টাওয়ারটি শুধু রাশিয়াই নয়, বরং ইউরোপের সর্বাধিক উঁচু ভবন। মোচড়ানো আদলে গড়া এ আকাশচুম্বী অট্টালিকাটি পৃথিবীর ১৩তম উঁচু ভবন। রাশিয়ান রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস সংস্থা গ্যাজপ্রম, এ ভবনের বেশিরভাগ অংশই ইতোমধ্যেই নিয়ে নিয়েছে এবং তাদের হেডঅফিস হিসেবে ব্যবহার করছে। ব্রিটিশ স্থপতি টনি কেটল যখন আরএমজেএম-এর অধীনে ছিল তখন এ ভবনের নকশা করে দেন এবং পরবর্তী সময়ে কাজ পরিপূর্ণ করার জন্য রাশিয়ান ডিজাইনার ফার্ম গোরপ্রজেক্টের কাছে প্রকল্পটি হস্তান্তর করা হয়।
![](https://assets.roar.media/assets/2J0QAvULRabO1xhq_1c._Lakhta_Center_%28c%29GORPROJECT.jpg)
ভবনটি একদম নিচ থেকে শীর্ষবিন্দু অবধি ৯০ ডিগ্রী মোচড়ানো। স্থিতিশীল ভিত্তি এবং মজবুত নোঙ্গর করানোর জন্য জমিন থেকে প্রায় ৮২ মিটার গভীর অবধি পাইলিং করানো হয়েছে, ভবনটিকে গগনচুম্বী অট্টালিকায় রূপান্তরের জন্য। সেইন্ট পিটার্সবার্গের ৪০০ মিটার উচ্চতায় বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৮৭ মাইল বেগে বয়ে, যেজন্য সেখানকার কাঠামোগত ব্যবস্থাটি বেশ শক্তপোক্ত আর মজবুত হওয়া দরকার ছিল। ভবনের মসৃণ সম্মুখভাগটি প্রায় ১৬,৫০০টি বাঁকানো কাঁচের টুকরো দিয়ে নির্মিত। এটি একটি অটো শাটার ও ভাল্ভ সিস্টেমে চলে, ফলে ভবনটি নিজের শক্তি যোগাতে পারে।
ইডেন টাওয়ার
নিউটন, সিঙ্গাপুর
হেদারউইক স্টুডিও সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে একটি ২০ তলা বিশিষ্ট আবাসিক ভবন উন্মোচন করেছে। ১০৪.৫ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট অ্যাপার্টমেন্ট ভবনটি সিঙ্গাপুরে নিউটনে অবস্থিত। পুরো ভবনটিই একটি আস্ত উঁচু বাগানসদৃশ। তাই নামকরণ করা হয়েছে ‘ইডেন টাওয়ার’। টাওয়ারের প্রতিটি ব্লকের ফ্লোরে মোট ২০টি করে অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। প্রতিটি চার কক্ষবিশিষ্ট এসব অ্যাপার্টমেন্টের মূল আকর্ষণ হচ্ছে এগুলোর লিভিং রুম এবং বাগান থাকা ব্যালকনি।
![](https://assets.roar.media/assets/kKauxO2mhzhZxCI7_headimageth.jpg)
লিভিং রুম ছাড়াও মাস্টার রুমের সঙ্গে রয়েছে আরেকটি ছোট সবুজে ঘেরা ঝুলন্ত ব্যালকনি। সব ব্যালকনি সাদা রঙের পলিশ করা কংক্রিট, যা খোলসের মতো আকৃতিতে গড়া। ভবনটিকে এক বিশাল রোপণযন্ত্র বলে মনে হয়, যা সবুজে ছেয়ে আছে আকাশের উচ্চতায়। হেদারউইক স্টুডিও এমনকি ভবনের ইন্টেরিয়েরও নিজেরাই করেছে এবং ভবনটি আকর্ষণীয়তার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধবও হয়ে উঠেছে।
কোর্টইয়ার্ড কিন্ডারগার্টেন
বেইজিং, চীন
কোর্টইয়ার্ড কিন্ডারগার্টেনের নতুন ডিজাইন প্রকাশ করেছে বেইজিংয়ের আর্কিটেকচার ফার্ম- ম্যাড আর্কিটেকচার। ঐতিহ্যবাহী চৈনিক উঠোনের আদলে গড়া হয়েছে এ ভবনের ছাদ, যা একইসঙ্গে বাচ্চাদের খেলার উপযোগী মাঠ হিসেবেও ব্যবহৃত হবে। মূলত ১৮ শতকের নির্মিত ভবনের সঙ্গে জুড়ে আছে এ নতুন ধারার স্থাপত্যশৈলী। স্থপতি চেয়েছেন, এমন একটা জায়গা তৈরি করতে, যা নান্দনিকতার পাশাপাশি স্কুলের বাচ্চাদের অবসর আর খেলাধুলার জায়গা হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
১৭২৫ সালে নির্মিত ঐতিহাসিক সিহিয়ান উঠোনে অবস্থিত কিন্ডারগার্টেন ভবনটি। ম্যাড ডিজাইন পুরনো স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে নতুন ফর্মগুলোকে এমনভাবে জুড়ে দিয়েছে যেন সেটা অতীতকে বর্তমানে ধরে রাখে এবং ভবিষ্যতের কাছে তা প্রকাশ করে। ছাদটি বিভিন স্কুল ভবনের মধ্যবর্তী সীমিত জায়গাটিকে রঙিন এক খেলার মাঠে পরিণত করেছে। ছাদের দক্ষিণ পার্শ্বের সবচেয়ে উজ্জ্বল জায়গাটিতে ছোট ছোট পাহাড় আর সমতল ভূমির অনুকরণে এমনভাবে ঢেউ খেলানো আকৃতি দেয়া হয়েছে যে, তা প্রাকৃতিক বলে ভ্রম হতে পারে। এই ভাসমান উঠানের নিচের অংশে থাকা কিন্ডারগার্টেনও উন্মুক্ত ধারাতেই গড়ে উঠবে।
![](https://assets.roar.media/assets/pUMUtcTmKbPeGVvI_Photo-Arch-Exist.jpg)
৪০০ শিশুর জন্য নির্মিত এই কোর্টইয়ার্ড কিন্ডারগার্টেনে বেশ পুরনো আর ঐতিহ্যবাহী কিছু গাছ রয়েছে। সেগুলোর জন্য জায়গা ছেড়ে দেয়া হয়েছে যেন প্রাকৃতিক আলো আসে এবং সেগুলোও বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়।
লে মোন্ডে
প্যারিস, ফ্রান্স
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য পিক্সেল জুড়ে দিয়ে যেমন একটি ছবি তৈরি হয়, ঠিক তেমন ছোট ছোট অসংখ্য কাঁচের গ্লাস জুড়ে দিয়ে বাঁক খাওয়া এক স্থাপত্যশৈলী তৈরি করেছে নরওয়েজিয়ান আর্কিটেকচারাল ফার্ম স্নোহেট্টা। ফ্রান্সের প্রখ্যাত এবং প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকা লে মোন্ডের হেডকোয়ার্টার হিসেবে এই স্থাপত্যিক নিদর্শন গড়ে তোলা হয়েছে রাজধানী প্যারিসেই। লে মোন্ডে মূলত অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। প্রকাশনা সংক্রান্ত তাদের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সবমিলিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে থাকা তাদের কর্মীকে এবারই প্রথমবারের মতো একত্র আনতে পেরেছে লে মোন্ডে। স্নোহেট্টা স্থানীয় আর্কিটেকচারাল ফার্ম এসআরএ’র সঙ্গে যৌথভাবে মিলিত হয়ে এই ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছে।
২৩,০০০ বর্গ মিটারের অফিস ভবনটি ধনুকাকৃতির। এর কারণ অবশ্য স্থাপত্যিক নকশার পাশাপাশি মূল সাইটের সংলগ্ন মেট্রো রেললাইন এবং স্টেশন। রেললাইনের কারণে সাইটের প্রান্তদ্বয়ই কেবল কোনো ভবনের ওজন ধরে রাখার উপযুক্ত ছিল। উপরন্তু, বেসমেন্ট করার সুযোগও মেলেনি। ফলে, অফিসের প্রযুক্তিগত আর বৈদ্যুতিক সব সরঞ্জামই এর কাঠামোর মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত করতে হয়েছে। ৮০ মিটার লম্বা ভবনটি উভয় প্রান্তেই সাততলা সমান দু’টি খিলানের উপর দাঁড়িয়ে এবং এর ইস্পাতের কাঠামোটি বাঁক খাওয়ায় দুই প্রান্ত একসঙ্গে মিলিত হয়েছে।
২০,০০০ কাঁচের টাইলস জুড়ে দিয়ে এর সম্মুখভাগ নির্মাণ করা হয়েছে, যা ভেতর থেকে বাইরের দৃশ্যকে অধিকতর স্বচ্ছ করে এবং বাইরের আলো প্রবেশে সাহায্য করে। বেশ দূর থেকে দেখলে খবরের কাগজে মুদ্রিত ছাপার অক্ষরের মতোই লাগে এই কাঁচের প্রতিবিম্বকে। ভবনটিতে প্রবেশের দু’টি পথ রয়েছে। একটি সর্বসাধারণের জন্য; যেখানে খাবার-দাবারসহ অন্যান্য বিপণী-বিতানের জন্য প্লাজা রয়েছে এবং দ্বিতল অডিটোরিয়ামও রয়েছে। আর অন্যটি কেবল লে মোন্ডে গ্রুপের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এমপ্লাস মিউজিয়াম,
ওয়েস্ট কাউলুন, হংকং
উদ্বোধনের আগেই হংকংয়ের এমপ্লাস মিউজিয়াম ফর ভিজ্যুয়াল কালচার ২০২০ সালের স্থাপত্যশৈলীগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। ভবনটির স্থপতি হিসেবে কাজ করেছেন হার্জগ অ্যান্ড ডি মরিয়ন। বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দীর আর্ট, ডিজাইন, আর্কিটেকচার এবং মুভিং ইমেজ- এসবকিছুই স্থান পাবে হংকংয়ের এ মিউজিয়ামে। এশিয়ার ভিজ্যুয়াল আর্ট এবং পারফর্মিং আর্টের অন্যতম সেরা এক স্থানে পরিণত হবে এমপ্লাস মিউজিয়াম। ৬০,০০০ বর্গমিটারের এই বিশাল মিউজিয়ামটি আধুনিক ও সমসাময়িক ভিজ্যুয়াল কালচারের সর্ববৃহৎ জাদুঘর বলে ধারণা করা হচ্ছে।
![](https://assets.roar.media/assets/iToXNm4mtT9JJFCH_Image-Courtesy-of-Herzog-%26-de-Meuron.jpg)
হার্জগ অ্যান্ড ডি মরিয়ন এই ভবনটিকে দু’টি ভাগে তৈরি করেছেন। একটি হচ্ছে অর্ধ-স্বচ্ছ এক টাওয়ার যেখানে মূলত একটি গবেষণা কেন্দ্র, দোকান, রেস্তোরাঁ এবং সমতল পাথর ফলকের উপর নির্মিত প্রদর্শনীর জন্য গ্যালারি। ভবনটিতে একটি ভূগর্ভস্থ টানেল রয়েছে, যা মূলত বিমানবন্দরের এক্সপ্রেস রেলওয়ের জন্য নির্মিত। সেখানে ইনস্টলেশন এবং পারফর্মিং এরিয়া হিসেবে থাকা জায়গাটির নাম ‘ফাউন্ড স্পেস’।
ভিস্তা টাওয়ার
ইলিনিয়র, শিকাগো
৯৫ তলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল আবাসিক ভবন বলে স্থাপত্যশৈলীতে সবার নজর কেড়েছে স্টুডিও গ্যাং নির্মিত ভিস্তা টাওয়ার। ভবনটি ফ্রাস্টাম আদলে তৈরী, যা মূলত রত্নপাথরে বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়। টাওয়ারটিতে সর্বমোট ২০টি পেন্টহাউজ আছে; পেন্টহাউজ হচ্ছে অট্টালিকার দেওয়ালে ঠেস বা হেলান দেয়া ঢালু ছাদ বিশেষ।
![](https://assets.roar.media/assets/Kaf2UrsBw3HUnFQH_Courtesy-of-Magellan-Development-Group.jpg)
এতে দ্বিতল বিশিষ্ট পেন্টহাউজ রয়েছে, যা মূলত ৭,০০০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে গড়া। ভিস্তা টাওয়ারে সর্বমোট ৪০৬টি ইউনিট রয়েছে। পেন্টহাউজ বাদে সবক’টাই ৪ কক্ষের বিশাল আকারের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট।
এছাড়াও, যেসব স্থাপত্যশৈলী সেরাদের তালিকায় উপরের দিকে ছিল, সেগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণী দেয়া হলো-
ইউএস অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিক মিউজিয়াম,
কলারাডো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
স্থপতি – ডিল্লার স্কোফিডিও + রেইনফ্রো
![](https://assets.roar.media/assets/hrPegTKUzfp44EFl_Olympic-Paralympic-Museum-colorado-springs-866x487.jpg)
ইউনিক,
প্যারিস, ফ্রান্স
স্থপতি – ম্যাড আর্কিটেক্ট ফার্ম
মিউজিয়াম অফ ফিউচার,
দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত
স্থপতি – কিল্লা ডিজাইন
![](https://assets.roar.media/assets/5ABb5C2KyQL32Oyg_Image-Credit-Museum-of-the-Future.jpg)
ল্যান্টার্ন হাউজ,
নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট
স্থপতি – হেদারউইক স্টুডিও
![](https://assets.roar.media/assets/v7Xokq8hfzNhAz3n_heatherwick-News-stories-15887.jpg)
ভ্যানকুইভার হাউজ,
কানাডা
স্থপতি – বিগ – বিজার্ক ইঙ্গেলস গ্রুপ
![](https://assets.roar.media/assets/oNE5IerU69OqxnTK_2020_10_14_06_23_38_westbank_big_vancouverhouse_0575-edit.jpg)
নানজিং জেন্ডাই হিমালায়াস সেন্টার,
নানজিং, চায়না
স্থপতি – ম্যাড আর্কিটেক্ট ফার্ম
![](https://assets.roar.media/assets/CJftEyv3kQ8rDAiN_01_MAD_Nanjing_Zendai_Himalayas_Center_by_CreatAR_Images.jpg)
১০০০ ট্রিস,
সাংহাই, চায়না
স্থপতি – হেদারউইক স্টুডিও
![](https://assets.roar.media/assets/65NCuq6aVApUp13W_Qingyan-Zhu-Courtesy-Heatherwick-Studio.jpg)