ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে নানারকম জল্পনা-কল্পনা আর পরিকল্পনা থাকে মানুষের। তবে কিছু মানুষের সেই পরিকল্পনা কিংবা ইচ্ছা চকলেট বা গোলাপের তোড়া উপহার দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। আর সেটা যে কেবল সাধারণ মানুষের বেলাতেই ঘটে তা নয়, রুপালী পর্দার তারকারাও ভালোবাসা দিবসকে আরো একটু বেশি স্মরণীয় করে রাখতে চান নিজেদের জীবনে। নিজেদের ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করার জন্য বিশেষ কোনো দিনকে বেছে নেওয়ার চেষ্টা করেন সবাই। এই হিসেবের বাইরে নন সমাজের নানা অংশে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে তোলা তারকারাও। আজ এমন কিছু মানুষকে নিয়েই কথা বলবো, যারা নিজেদের বিয়ে কিংবা বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার দিন হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ১৪ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ ভালোবাসা দিবসকে।
বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ ও সোফি হান্টার
ডক্টর স্ট্রেঞ্জের কথা মনে আছে? সম্প্রতি ‘থর: র্যাগনারক’ এ খুব কম সময়, অথচ অসাধারণ অভিনয় পারদর্শিতা দেখিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন এই ব্রিটিশ অভিনেতা। টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র সবখানেই প্রতাপের সাথে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বেনেডিক্ট। অন্যদিকে সোফি হান্টারও কম প্রতিভার অধিকারী নন। বর্তমানে থিয়েটার এবং অপেরা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। এই তারকা দম্পতি বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন ২০১৫ সালে। এর আগে টানা ছয় বছর ধরে ভালোবেসে যান তারা একে অপরকে। নিজেদের সম্পর্কে সবাইকে বলতে অবশ্য ২০১৪ পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। আর বিয়েটা কখন হয়? ২০১৫ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি, অর্থাৎ ভালোবাসা দিবসে।
সালমা হায়েক ও ফান্সোয়া-হেনরি পিনো
জীবনে অনেকের সাথেই ঘনিষ্ঠ হয়েছেন সালমা হায়েক। অনেকের সাথেই ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়েছেন। তবে তাদের কেউই শেষপর্যন্ত বিশ্বস্ত হতে পারেনি। অবশ্য ফ্রেঞ্চ ব্যবসায়ী ফ্রান্সোয়া-হেনরি পিনোর সাথে দেখা হওয়ার পর পুরো হিসেবটা বদলে যায় এই অভিনেত্রীর। প্রথমে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিতে বেশ খানিকটা দ্বিধায় ভুগছিলেন সালমা হায়েক। নিজের অতীত প্রেমগুলোই তাকে বাঁধা দিচ্ছিল এই ক্ষেত্রে। তবে শেষ পর্যন্ত বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি। ভালোবেসে বিয়ে করেন পিনোকে ২০০৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি। এখন পর্যন্ত তাদের সংসার বেশ চলে যাচ্ছে। মাঝে বেশ কিছু সমস্যা এসেছে বটে, তবে সেগুলোর কোনোটাই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
হ্যারিসন ফোর্ড ও ক্যালিস্টা ফ্লোকহার্ট
‘স্টার ওয়ার্স’ খ্যাত হ্যারিসন ফোর্ডের জীবন কখনো খুব একটা সহজ ছিল না। বিশেষ করে পারিবারিক জীবনে অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এই তারকাকে। মোট তিনবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এই তারকা। ক্যালিস্টার সাথে তার পরিচয় হয় ছবির সেটে। সেখান থেকেই ভালো লাগা, ভালোবাসা। ফোর্ডের পরিবার, তার সন্তান এবং নাতি-নাতনীদের সাথে বেশ মিশে যান ক্যালিস্টা। তবে নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে কাউকে তেমন কোনো আভাস দিতে রাজী হননি তিনি। ফোর্ড অবশ্য এদিক দিয়ে বেশ সোচ্চার ছিলেন। সবসময় ক্যালিস্টার সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। ফলে ২০০৯ সালে এক ভালোবাসা দিবসে সারাজীবন একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তারা। আর এখন? বিয়ের তো প্রায় ৯ বছর হয়েই গেল এই দম্পতির!
আরশাদ ওয়ারসি ও মারিয়া গোরেট্টি
হলিউড নয়, এবার চলে আসা যাক বলিউড প্রেম ভালোবাসার গল্পে। বলিউড মানেই সবসময় ভালোবাসা, একটুখানি বাড়তি রোম্যান্স আর মশলা। কিন্তু সেটা তো পর্দায়। বাস্তবেও কি বলিউড তারকাদের মধ্যে এতটা নাটকীয়তা আছে? উত্তর যে হ্যাঁ সেটা বোঝাতে হলে যাদের নাম নিতে হয় সেই তালিকায় প্রথমেই পড়ে যান আরশাদ ওয়ারসি এবং তার স্ত্রী মারিয়া গোরেট্টি। মারিয়া অভিনয় জগতের সাথে সেভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তবে আরশাদ ওয়ারসিকে চেনেন না এমন খুব কম বলিউড দর্শক আছেন। অভিনয়ে বেশিরভাগ সময়ে কমেডি ধাঁচের চরিত্রেই বেশি দেখা যায় এই অভিনেতাকে। তবে বাস্তব জীবনে যে তিনি কতটা রোমান্টিক সেটা বোঝাতেই হয়তো ১৯৯৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে বিয়ে করে ফেলেন তারা। এর আগে টানা ৮ বছর প্রেম করেন এই জুটি। এখনো পর্যন্ত বেশ বহাল তবিয়তেই আছেন তারা।
মন্দিরা বেদী ও রাজ কৌশল
কেবল আরশাদ ও মারিয়াই নয়, ১৯৯৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি নিজেদের ভালোবাসাকে পূর্ণতা দিতে বিয়ে করেন মন্দিরা বেদী আর রাজ কৌশলও। এখন পর্যন্ত বেশ সুখের সংসার করছেন এই সম্পতি। মন্দিরা বেদী অভিনেত্রী এবং ক্রিকেট উপস্থাপক। অন্যদিকে রাজ কাজ করেন বলিউড পরিচালক হিসেবে। অভিনয়ের মাধ্যমেই একে অন্যের সাথে পরিচিত হন তারা।
কেরি রাসেল ও শেন ডেয়ারি
‘মিশন ইম্পসিবল’ এবং ‘ডন অব দ্য প্ল্যানেট অব দ্য এপস’ এর মতো অনেকগুলো চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ হয়েছে কেরি রাসেলের। নিজের অভিনয় প্রতিভা দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন তিনি। ঠিক তেমনি ভালোবাসার ক্ষেত্রেও এগিয়ে ছিলেন কেরি সবসময়। ভালোবেসে শেন ডেয়ারিকে বিয়ে করেন কেরি ২০০৭ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি। তবে নিজের বিয়ে নিয়ে এবং এই বিয়ের দিন নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাননি এই অভিনেত্রী। ভালোবেসেছিলেন তিনি শেন ডেয়ারিকে, তবে বিয়ের ব্যাপারে কখনো ভাবেননি। হুট করে এই জুটি বিয়ে করে ফেলেন কেবল নিজেদের অনাগত সন্তানের কথা ভেবে।
কেরি এবং শেন দুজনেই চেয়েছিলেন তাদের সন্তান যেন পৃথিবীতে আসে তাদের বিয়ের পর। কিন্তু তখন হাতে খুব বেশি সময় ছিল না। আর ছুটিও ছিল না সেভাবে। তাই কাছের যে দিনটিতে সবকিছু মিলে যায়, ছুটি এবং স্থান ফাঁকা পাওয়া যায়, সেই দিনটিকেই বিয়ের জন্য বেছে নেন এই তারকা। আর সামনের সেই দিনটি গিয়ে পড়ে ভালোবাসা দিবসে। প্রথমে একটু বাড়াবাড়ি মনে হলেও ১৪ই ফেব্রুয়ারিতেই বিয়ে করে ফেলেন তারা। অবশ্য, ২০১৬ সালে সেই বিচ্ছেদ করে ফেলেন এই দম্পতি।
দারিয়ুন দানেশ ও নাতাশা হ্যান্সট্রেজ
হলিউড তারকা নাতাশা এবং দানেশে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল অনেকদিনের। তবে সেটা শেষ পর্যন্ত সবার সামনে স্বীকার করে সম্পর্কটিকে পরিণয়ে রূপ দিতে ২০১১ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে করে ফেলেন তারা। ২০১৩ সালে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তারা এবং বিচ্ছেদও করে ফেলেন। তবে সেই বিচ্ছেদ কাটিয়ে ২০১৬ সালে আবার একত্র হয়ে যান এই তারকা দম্পতি!
আদ্রিয়ানা লিমা ও মার্কো জারিক
ভিক্টোরিয়া সিক্রেটের সুপরিচিত তারকা আদ্রিয়ানা লিমা সবার কাছেই কমবেশি পরিচিত। ব্রাজিলিয়ান এই নারী অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্র এবং টিভি শোগুলোতে। হলিউডে তারকাখ্যাতি পেয়েই অবশ্য বসে থাকেননি লিমা। সেইসাথে খুঁজে নিয়েছেন নিজের ভালোবাসার মানুষটিকেও। সার্বিয়ান বাস্কেটবল খেলোয়াড় মার্কো জারিকের সাথে দীর্ঘদিন প্রেম করার পর বিয়ে করেন এই তারকা। ২০০৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে নিজেদের বিয়ের দিন হিসেবে বেছে নেন তারা। তবে তাদের সেই ভালোবাসার সম্পর্ক খুব বেশিদিন টেকেনি। ২০১৪ সালেই সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক তখনই এ ব্যাপারে খুব একটা কথা না বললেও পরবর্তীতে ২০১৬ সালে একেবারে আলাদা হয়ে যান এই জুটি। বর্তমানে নিজের সন্তানদের নিয়েই ব্যস্ত আছেন আদ্রিয়ানা লিমা।
ফিচার ইমেজ: HD Wallpapers Rocks