Last thing I remember,
“I was running for the door
I had to find the passage back
To the place I was before“Relax”, said the night-man
“We are programmed to receive.
You can check-out any time you like
But you can never leave.”
ধীরে ধীরে ভক্তদের মন জয় করা, ভালো ক্যারিয়ার গড়া, ২-১ টা অ্যাওয়ার্ড জেতা নিতান্তই মামুলি কাহিনি। ক্যারিয়ারের প্রথমে কষ্ট করে কয়েকটা গান রেকর্ড করা, মানুষের মধ্যে ক্রেজ ভাব আনার জন্য দিনরাত ছোটাছুটি করা, তারপর কিছু অর্জন করা এসব দেখতে দেখতে আমরা অভ্যস্ত। তবে এই সাধারণ কিছুর পেছনে অসাধারণ কিছুও থাকে, এমন কিছুও থাকে যা দেখে তাক লেগে যায় সবার।
ঠিকই ধরেছেন এমন কিছু রয়েছে ঈগলসের। বিটলস, মাইকেল জ্যাকসন, লেড জেপেলিন কিংবা এলভিস প্রিসলি নয়; সত্তরের দশকের কান্ট্রি মিউজিক, ক্লাসিক মিউজিক ও সফট রক নিয়ে কাজ করা এই সামান্য ব্যান্ডেরই ছিল আমেরিকার বেস্ট সেলিং ৩টির মধ্যে ২টি অ্যালবাম। ৫টি নম্বর ১ সিঙ্গেল, ১৪টি টপ-৪০ হিটস, ৪টি নম্বর ১ অ্যালবাম ও ৬টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড খেতাবধারী ব্যান্ডের নামই ঈগলস, যার ভক্ত কমপক্ষে ৪০ মিলিয়ন। শুধু তা-ই নয়, তাদের নানা অর্জনের মধ্যে আরেকটি অর্জন হিসেবে, উপরের লাইনগুলোই প্রতিদিন নাসার নভোচারীদের ওয়েকআপ কল হিসেবে বাজানো হয়! এমনকি বিদ্যুৎবিহীন কোনো এক অজপাড়াগাঁ এর ক্যাসেট প্লেয়ারেও বেজে ওঠে ঈগলসের গাওয়া সেই বিখ্যাত হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া।
ঈগলসের জন্মসূত্র
বর্তমান সময়ের বিলবোর্ড তথা জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা দ্য ব্যান্ড ঈগলসের সৃষ্টি হয়েছিল লিন্ডা রোন্সটাডের ব্যাক আপ ব্যান্ড হিসেবে কাজ করার সময়। সময়টা তখন ১৯৭১ সাল, গ্লেন ফ্রে ও ডন হেনলি সবেমাত্র জুটি বেঁধে কাজ শুরু করেছেন তখনই ডাক পড়ে লিন্ডা রোন্সটাডের হয়ে কাজ করার জন্য। সেখানে আগেই কাজ করেছেন র্যান্ডি মিসনার ও বার্নি লিডন। সে বছরের জুলাই মাসে ডিজনিল্যান্ডের একটি শো-তে এক গিগেও একসাথে কাজ করেছেন এই চার সদস্য । তাদের পারফর্মেন্সে খুশি হয়ে ডেভিড গিফেন সেপ্টেম্বর মাসে গ্লিন ফ্রে, ডন হেনলি, বার্নি লিডন, র্যান্ডি মিসনারকে এসাইলাম রেকর্ডসে কাজ করার জন্য আহবান জানান। আর সেই সু্যোগে এই চার সদস্য নিজেদের মধ্যে আন্তরিকতার সম্পর্ক গড়ে তোলে। চার সদস্যের ই তখন ইতোমধ্যে বেশ ভালো মিউজিক ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল। পরবর্তী সময়ে এই চার বন্ধুর দলই হয়ে উঠে আজকের ঈগলস এর পথিকৃৎ।
প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও লাইনআপ পরিবর্তন
I. ডন হেনলি (প্রতিষ্ঠাকালীন ও বর্তমান সদস্য)– পূর্বে বিখ্যাত রক এন্ড রোল ব্যান্ড শিলোহ’তে কাজ করেছেন যা এমস রেকর্ডসে একক এলবাম তৈরি করত। পরবর্তী সময়ে ১৯৭০ সালে লস এঞ্জেলসে আসেন এবং গ্লেন ফ্রের সাথে গান লিখার কাজে মনোনিবেশ করেন।
II. গ্লেন ফ্রে (প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য)– ১৯৬৮ সালের পূর্বে বব সেগারের ব্যাকআপ মিউজিশিয়ান হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি তিনি জে. ডি সাউথারের সাথে লংব্রাঞ্চ পেনিহুইসেল-এ ডুয়েট কাজ করেছেন। পরবর্তী সময়ে ঈগলস সৃষ্টির আগ পর্যন্ত ডন হেনলির সাথে গান লেখার কাজ শুরু করেন।
III. বার্নি লিডন (প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য)–পূর্বে হার্টস এন্ড ফ্লাওয়ারস এর সদস্য ছিলেন, পরে ডিলার্ড এন্ড ক্লার্ক ও দ্য ফ্লাইং বুরিটো ব্রাদার্সে কাজ করেছেন।
IV. র্যান্ডি মিসনার (প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য) – বিখ্যাত ব্যান্ড সোউল সার্ভাইভরস-এ কাজ করেছেন যার পরবর্তী নাম হয় পোর। র্যান্ডি মিসনার ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পোকোর প্রতিষ্ঠাতা। তারপর কিছুদিন ঈগলস-এ কাজ করার পর তিনি রিক নেলসনের ব্যাকআপ গ্রুপ দ্য স্টোন এন্ড ক্যাননে যোগ দেন।
V. ডন ফেল্ডার (বর্তমান সদস্য)– প্রযোজক বিল সিমজেক এর আহবানে পরবর্তী সময়ে বার্নি লিডন এর বন্ধু ডন ফেল্ডারকে গিটারিস্ট হিসেবে ব্যান্ডে যোগ দেন।
VI. জো ওয়ালশ (বর্তমান সদস্য)– ওয়ান অফ দ্য নাইটস এর ট্যুর এর মাঝামাঝি এসে বার্নি লিডন ব্যান্ড থেকে বিরতি নেয়ার ঘোষণা দিলে তার পরিবর্তে জো ওয়ালশকে আনা হয়।
VII. টিমোথি বি. স্মিত (বর্তমান সদস্য)– হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া ট্যুরের পর র্যান্ডি মিসনার গ্রুপ থেকে ইস্তফা নিলে তার পরিবর্তে টিমোথি বি. স্মিতকে নেয়া হয় যিনি পূর্বে র্যান্ডি মিসনার কেও পোকো তে আহবান জানিয়েছেন।
VIII. ডিকন ফ্রে (বর্তমান সদস্য)– গ্লেন ফ্রের মৃত্যুর পর তার পুত্র ডিকন ফ্রেকে ব্যান্ডের সদস্যরা তাদের বন্ধুর স্মৃতিচারণের উদ্দেশ্যে এবং মিউজিকের প্রতি আগ্রহ দেখে ডিকনকে ডন হেনলি ব্যান্ডে স্বাগত জানায়।
যাত্রারম্ভ
১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে স্বীকৃতি পাওয়া ঈগলসের যাত্রা শুরু হয় ডন হেনলি, গ্লেন ফ্রে, বার্নি লিডন ও র্যান্ডি মিসনারের হাত ধরে। এই চার তারকার মেধা, অক্লান্ত পরিশ্রম, জয়ের আকাঙ্ক্ষা, হার না মানা সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি যেন প্রতিটি এলবাম। পথ চলতে চলতে হোচঁট খাওয়া আবার উঠে দাড়ানো তো নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রশংসার পেছনে সমালোচনার ফুলঝুরি সবকিছুই ছিল ঈগলসের সঙ্গী। তবু তাদের দেশ দেশান্তরে ছুটেছে দিনের পর দিন, জয় করেছে মানুষের মন, পেয়েছে বিশ্বজয়ী পুরস্কার। হ্যাঁ, এটিই ঈগলস। সেই ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলসে যার জন্ম। নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে আজকে বিলবোর্ডে শীর্ষস্থানে অবস্থান ঈগলসের। চলুন দেখে আসা যাক, তাদের প্রতিটি এলবামের কাহিনি।
ঈগলস, ১৯৭২
১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঈগলসের অভিষেক এলবামের জন্য ইংল্যান্ডে ট্যুরে যান চার তারকা। অভিষেক এলবাম হিসেবে এলবামের নাম হয় ঈগলস, ১৯৭২। এলবামটি প্রযোজনা করেন গ্লিন জন্স। জুন মাসে প্রকাশিত হয় এই এলবাম। এই এলবামের ২টি গান ‘টেক ইট ইজি’ ও ‘উইচি উইমেন’ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিলবোর্ডে স্বর্ণজয়ী হয়ে আসছিল যা ২টি শীর্ষ টপ টেনে থাকা গানের সমান এবং আরেকটি গান ‘পিসফুল ইজি ফিলিং’ টপ-২০ তে জায়গা করে নেয়। প্রথম এলবামে এত জনপ্রিয়তা পেলে পরবর্তী এলবামগুলোতে কী হতে পারে সেটা আন্দাজ করলেই বোঝা যায়।
ডেসপারেডো, ১৯৭৩
ঈগলসের প্রথম ট্যুর হিসেবে ১৯৭২ এর পুরোটা সময়ই তারা বাইরে ছিল এবং ১৯৭৩ এর প্রথম দিকে তাদের দ্বিতীয় এলপি, ডেসপারেডো নিয়ে কাজ শুরু করার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন এবং গ্লিন জন্সের প্রযোজনায় এর কাজ শেষ হয়। এপ্রিল মাসে প্রকাশিত হওয়া এই এলবামটি এক বছরের কম সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং বিলবোর্ডে টপ-৪০ তে অবস্থান করে ও স্বর্ণ জয় করে। এলবামের ‘টেকুলা সানরাইজ’ গানটিও টপ-৪০ এর মধ্যে ঘুরতে থাকে। এই এলবামের টাইটেল ট্র্যাক কখনো একক হিসেবে বের না হলেও পরবর্তী সময়ে তা প্রকাশিত হলে ব্যান্ডের নামকরা গান হয়ে ওঠে এবং ঈগলসের প্রথম হিট কালেকশনে অন্তর্ভুক্ত হয়।
অন দ্য বর্ডার, ১৯৭৪
ডেসপারেডো প্রকাশিত হওয়ার পর ঈগলস তাদের তৃতীয় এলবামের জন্য গ্লিন জন্সের সাথে কাজ শুরু করে। কিন্তু কিছুদিন পর তারা উপলব্ধি করে এবার একটু ভিন্ন কিছু চেষ্টা করা যাক। একটু হার্ড রক মিউজিকের প্রতি ঝোঁক থাকায় অন দ্য বর্ডার এর ২টি গান ‘ইউ নেভার ক্রাই লাইক এ লাভার’ ও ‘দ্য বেস্ট অফ মাই লাভ’ রেকর্ড হওয়ার পর গ্লিনের থেকে আলাদা হয়ে যায় ঈগলস। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৪ এর শুরুর দিকে গিটারিস্ট জো ওয়ালশ এর প্রযোজক বিল সিজমেক কে ব্যান্ডে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
১৯৭৪ এর মার্চ মাসে প্রকাশিত হয় ঈগলসের তৃতীয় এলবাম, অন দ্য বর্ডার। জুন মাসেই এই এলবামটি বিলবোর্ডে স্বর্ন জয় করে এবং টপ-১০ এ পৌছাঁনোর পাশাপাশি ঈগলসের ফাস্টেস্ট বেস্ট-সেলিং এলবাম হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। তাছাড়া এই এলবামের প্রথম একক ‘অলরেডি গন’ জুন মাসেই টপ-২০ তে পৌছাঁয়। কিন্ত এই এলবামের যে গানটি সবচেয়ে বেশি সফল ও জনপ্রিয় হয় সেটি বের হয় নভেম্বর মাসে, যার নাম ‘দ্য বেস্ট অফ মাই লাভ’। গানটি ১৯৭৫ এর ফেব্রুয়ারিতে ইজি লিসেনিং চার্টে প্রথম হয় এবং এক মাস পর টপ চার্টে শীর্ষ হয়।
ওয়ান অফ দিস নাইটস,১৯৭৫
ঈগলসের চতুর্থ এলবাম, ওয়ান অফ দিস নাইটস প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ এর জুন মাসে। আর ঐ মাসেই এলবামটি বিলবোর্ডে স্বর্ণ জয় করে আর জুলাই মাসে শীর্ষস্থান দখল করে। এই এলবামের টাইটেল ট্র্যাক ও ‘লয়েন আইজ’ এবং ‘টেক ইট টু দ্য লিমিট’ গানগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ডুয়েট, গ্রুপ ও কোরাসে ‘লয়েন আইজ’ বেস্ট পারফর্মেন্সের জন্য ১৯৭৫ সালে গ্র্যামি এওয়ার্ড পায় এবং ‘ওয়ান অফ দিস নাইটস’ এলবাম অফ দ্য ইয়ার ও ‘লয়েন আইজ’ রেকর্ডস অফ দ্য ইয়ার হিসেবে ঈগলস গ্র্যামি এওয়ার্ড এর নমিনেশন পায়। অতঃপর ঈগলস আমেরিকা থেকে শুরু করে সুদূর ইউরোপ পর্যন্ত বেশ লম্বা ট্যুর দেয়।
দেয়ার গ্রেটেস্ট হিটস (১৯৭১-১৯৭৫)
পরপর বেশ কয়েকয়েকটি ট্যুরের জন্য ঈগলস বেশ কয়েকদিন স্টুডিওর বাইরে ছিল। অতঃপর কোনো লম্বা পরিকল্পনা ছাড়াই ঈগলস ‘দেয়ার গ্রেটেস্ট হিটস (১৯৭১-১৯৭৫)’ নামে একটি এলবাম ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাজারে ছাড়ে। এই এলবামটিও আশ্চর্যজনকভাবে সফল হয় এবং ২,৫০,০০,০০০ এর উপরে কপি বিক্রি হয় ও বিলবোর্ডে শীর্ষ-১ এ অবস্থান করে। পরবর্তী সময়ে এলবামটি মাইকেল জ্যাকসনের থ্রিলারের ডুয়েট শিরোনামে এলবামটি আমেরিকাতে বেস্ট সেলিং এলবাম হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে।
হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া, ১৯৭৬
ঈগলসের ওয়ান অফ দিস নাইটস এলবামের ১৮ মাস পর অর্থাৎ ১৯৭৬ সালে ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয় বিখ্যাত সেই এলবাম ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’। এই এলবামটি এতই জনপ্রিয় হয় যে আগের এলবামগুলোর সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এলবাম প্রকাশিত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই এলবামটি বিলবোর্ডে প্লাটিনাম সার্টিফিকেট পায় ও ১,০০,০০,০০ কপির উপরে বিক্রি হওয়ায় ১৯৭৭ সালের জানুয়ারিতে এটি টপ চার্টে প্রথম হয়।
এই এলবামের ২টি গান ‘নিউ কিড ইন টাউন’ ও ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ ১ নম্বর হিট হয় এবং ‘লাইফ ইন দ্য ফাস্ট লেন’ গানটি টপ-২০ তে জায়গা করে নেয়। তাছাড়া ডুয়েট, গ্রুপ ও কোরাসে বেস্ট পপ ভোকাল পারফর্মেন্স এর জন্য ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ ১৯৭৭ সালে রেকর্ড অফ দ্য ইয়ার হিসেবে গ্র্যামি এওয়ার্ড অর্জন করে এবং এলবামটি এলবাম অফ দ্য ইয়ার হিসেবে নির্বাচিত হয়। তারপরে ঈগলস আবার আমেরিকা ও ইউরোপ এ ট্যুর দেয়া শুরু করে।
দ্য লং রান, ১৯৭৮
১৯৭৮ সালের মার্চ মাসে শুরু হয় ঈগলসের নতুন এলবাম, দ্য লং রান এর কাজ। তারপর দীর্ঘ দেড় বছর পর, ১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বরে এলবামটি প্রকাশিত হয়। এটিও বিলবোর্ডে ১ নম্বর হিট হয় ও চার মাস পরে প্লাটিনাম সার্টিফিকেট পায়। পরবর্তী সময়ে মাল্টি প্লাটিনাম সার্টিফিকেটও অর্জন করে এলবামটি। এ এলবামের ‘হার্টেক টুনাইট’ গানটি ১নম্বর হিট হয় এবং ‘আই কান্ট টেল ইউ হোয়াই’ ও ‘দ্য লং রান’ গানটি টপ-১০ হিসেবে নির্বাচিত হয়। তাছাড়া ডুয়েট ও গ্রুপে বেস্ট রক পারফর্মেন্সের জন্য ‘হার্টেক টুনাইট’ গানটি ১৯৭৯ সালে গ্র্যামি এওয়ার্ড স্বীকৃতি পায়।
এরপর ১৯৮০ সালে আমেরিকাতে ট্যুরকালীন ঈগলস সান্টা মনিকা সিভিক অডিটোরিয়ামে ‘ঈগলস লাইভ’ নামে এক সপ্তাহব্যাপী একটি সিরিজ রেকর্ড করে। অতঃপর ১৯৮০ সালের নভেম্বরে তাদের ডাবল এলপি টপ-৫ ও ‘সেভেন ব্রিজেস রোড’ একক টি টপ-৪০ এ অবস্থান করে। আর এটিই ছিল ঈগলস এর বিরতি নেয়ার আগ মুহূর্তের শেষ কাজ।
বিরতি অতঃপর সাময়িক মিলন
১৯৮০ সালের পর হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় চিরচেনা সেই ঈগলসের সুরের আনাগোনা। প্রথমে ভক্তদের কাছে গোপন রাখলেও ১৯৮২ সালের মে মাসের পর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে ঈগলসের বিরতির। ভক্তদের মনে বেশ বড়সড় আঘাতই লাগে। অতঃপর ব্যান্ডের প্রত্যেকে আলাদাভাবে একের পর এক একক গান প্রকাশ করতে শুরু করলে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পায়। তবুও কি আগের মত সেই উচ্ছ্বাস আর হৈচৈ করার সুযোগ পায় না কোনো ভক্তই। অধীর আগ্রহে বসে ছিল তারা, এই বুঝি ঈগলস আবার জেগে উঠবে, এই বুঝি আবার তাদের এক স্টেজে সুরের ঝঙ্কার তুলতে দেখা যাবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি, ৮০-র দশকের শেষের দিকে বেশ কয়েকটি লোভনীয় অফার পেলেও ব্যান্ডের সদস্যরা নাকচ করে দেয়।
তারপর অনেকদিন পর, ১৯৯০ সালের দিকে ফ্রে ও হেনলি সেই ঠিক আগের মত একসাথে জুটি বেঁধে লিখা শুরু করে এবং পরে স্মিত ও ওয়ালশ এর সাথে একটি দাতব্য কনসার্টে এক স্টেজে পারফর্ম করেন। কিন্ত ভক্তরা আশার আলো দেখার পরে সেটা নিভেও যায় যখন তারা দেখে ঈগলসের পুনরায় মিলন হলেও প্রকৃত পুনর্মিলন হয়নি।
এক নজরে যত অর্জন:
সাল-এলবাম/ট্র্যাক-এওয়ার্ড
২০০৮ – আই ড্রিমড দেয়ার ওয়াজ নো ওয়ার – বেস্ট পপ ইন্সট্রুমেন্টাল পারফর্মেন্স
২০০৭ – হাউ লং – বেস্ট কান্ট্রি পারফর্মেন্স
১৯৭৯ – হার্টেক টুনাইট – বেস্ট রক পারফর্মেন্স
১৯৭৭ – হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া – রেকর্ড অফ দ্য ইয়ার
১৯৭৭ – নিউ কিড ইন টাউন – বেস্ট এরেঞ্জম্যান্টস ফর ভয়েসেস
১৯৭৫ – লয়েন আইজ – বেস্ট পপ পারফর্মেন্স
ঈগলসের ১০টি বিগেস্ট হিট
• হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া
• টেক ইট ইজি
• লয়েন আইজ
• পিসফুল ইজি ফিলিং
• ওয়ান অফ দিস নাইটস
• লাইফ ইন দ্য ফাস্ট লেন
• নিউ কিড ইন টাউন
• আই কান্ট টেল ইউ হোয়াই
• হার্টেক টুনাইট
• ডেসপারেডো
ঈগলসের পুনর্জন্ম
১৯৯০ সালের সাময়িক মিলনের পর আবার বিচ্ছেদ হওয়ার চার বছর পর ঈগলসের সত্যিকার অর্থেই মিলন হয়েছিল ১৯৯৪ সালের এমটিভি কনসার্টে যোগ দেয়ার পর। তারপর ঈগলস আগের মতো ট্যুরে বের হয় যেটি ১৯৯৬ সালের আগস্টে শেষ হয়। এমটিভিতে করা ঈগলসের শো’টির অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অডিও ভার্সন প্রকাশিত হওয়ার পর ‘হল ফ্রিজেস ওভার’ এলবামটি বিলবোর্ডে শীর্ষ স্থান অর্জন করে এবং মাল্টি মিলিয়ন সেলার হিসেবে নির্বাচিত হয়। এছাড়া এলবামটির ২টি গান ‘গেট ওভার ইট’ ও ‘লাভ উইল কিপ আস এলাইভ’ টপ-৪০ তে পৌঁছায়।
অতঃপর ১৯৯৮ সালের জানুয়ারি মাসে রক এন্ড রোল অফ ফেমের আবেদনের জন্য ঈগলসের বর্তমান ৫ সদস্য ও প্রাক্তন ২ সদস্য লিডন ও মিসনার আবার একত্রিত হয়। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর লস এঞ্জেলসের স্টেপলস সেন্টারের এক মিলেনিয়াম কনসার্টে ঈগলস পারফর্ম করে এবং সেটি রেকর্ড করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০০ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত হওয়া ‘সিলেক্টেড ওয়ার্কস : ১৯৭২- ১৯৯৯’ তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
যেথায় আছে যত দ্বন্দ সেথায় আছে তার অন্ত
সবকিছুই যে ভালো হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। অনেক ভালোর মাঝখানে একটু মন্দ তো থাকবেই, এটাই তো দুনিয়ার নিয়ম। সেই নিয়মের বাইরে নয় ঈগলসও। নারীঘটিত কেলেঙ্কারি নয় কিছু মনোমালিন্য আর রেষারেষির জের ধরেই ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারীর লাইনআপ থেকে বহিষ্কৃত হয় ডন ফেল্ডার। শুরু হয় ঈগলসের মধ্যে আইনি যুদ্ধ। আর আইনি ঝামেলা চলাকালে ২০০৩ সালেই প্রকাশ পায় ঈগলসের ‘দ্য ভেরি বেস্ট অফ দ্য ঈগলস’ এলবামটি এবং এই এলবামের ‘হোল ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ এককটি সামান্য সাফল্যও অর্জন করে। অতঃপর ২০০৭ সালে ফেল্ডারের আইনি যুদ্ধ শেষ হলে ঐ সালেই তিনি ঈগলসের সপ্তম স্টুডিও এলবাম ‘লং রোড আউট অফ ইডেন’ এ যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে এই এলবামটি বিলবোর্ডে মাল্টি প্লাটিনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়।
ডকুমেন্টারি ‘হিস্ট্রি অফ দ্য ঈগলস’
সকল সমস্যার সমাধানের পর ঈগলস আবার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করে। এত বছরে ঈগলসের স্মৃতির পাতা নানা অভিজ্ঞতা, প্রশংসা, সম্মাননা, টানাপোড়েন, সমালোচনায় যেন পরিপূর্ণ রূপ ধারণ করে। আর সেগুলো একসাথে মিলিত করার উদ্দেশ্যে ঈগলস ‘হিস্ট্রি অফ দ্য ঈগলস’ নামে একটি ডকুমেন্টারি বানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে যার প্রথম অংশ ছিল দুই ঘন্টা ব্যাপী। ব্যান্ডের সদস্যদের কল্পনার উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছিল ডকুমেন্টারিটি। যেখানে সফলতার পাশাপাশি নানা ব্যর্থতাও তুলে ধরা হয়েছে। ডকুমেন্টারি তৈরির জন্য ফ্রে ও হেনলি আহ্বান জানিয়েছিল এলিমন ইলউড এবং এলেক্স গিবনি নামক ২জন ডকুমেন্টারিয়ানকে। ডকুমেন্টারিতে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয় ইলউড ও গিবনিসহ ব্যান্ডের সকল প্রাক্তন ও বর্তমান সদস্যকে। ডকুমেন্টারির দ্বিতীয় শটে হেনলি বলেছেন-
It’s something
that you can’t do forever.
It’s not a lifetime career, you know.
বর্তমান হালচাল
২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারিতে রিউমাটয়েড আর্থাইটিস, তীব্র আলসিরেটিভ কোলাইটিস ও নিউমোনিয়া জনিত সমস্যার কারণে মারা যান ঈগলসের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও ডন হেনলির বন্ধু গ্লেন ফ্রে। তখন তার বয়স ছিল ৬৭ বছর। প্রিয় বন্ধুকে হারিয়ে ডন হেনলি যেন নিঃস্বঙ্গ হয়ে পড়েন। ফ্রের মৃত্যুর ১ বছর পর একদিন স্টুডিওতে বসে ড্রাম বাজানোর সময় গ্লিন ফ্রের ছেলে ডিকন ফ্রের চুল, বেশভূষা দেখে হেনলি কিছুক্ষণের জন্য হ্যালুসিনেশনে পড়ে যান। হুশ ফিরলে তিনি সরাসরি ডিকনকেই ব্যান্ডে আমন্ত্রণ জানিয়ে বসেন। তিনি হয়তো জানতেন ডিকন প্রত্যাখান করবে না, তা-ই হলো। ডিকন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে প্রস্তাবে রাজি হয় এবং ব্যান্ডে যোগ দেয়।
তার ব্যান্ডে যোগ দেয়ার খবর শুনে ডিকনের মা ও ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্য প্রায় অবাকই হয়েছিল। অবশেষে ডিকন তার বাবার যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করে ডজার স্টেডিয়ামে ৫৬,০০০ ভক্তদের সামনে তার প্রথম শো তে পারফর্ম করে। ঈগলস তার পুরোনো আধিপত্য ফিরে পায় ডিকন ফ্রে ও ভিন্স গিল নামক আরেক নামকরা গিটারিস্ট ব্যান্ডে সদস্যপদ গ্রহণ করার পরে। ২০১৭ সালে নতুন সদস্যদের নিয়েই ঈগলস ক্লাসিক ওয়েস্ট ও ক্লাসিক ইস্ট ফেস্টিভ্যালে অংশ নেয় এবং ২০১৮ সাল থেকে আবার ট্যুর শুরু করে।
এ বছরের মার্চ ও ফেব্রুয়ারি মাসেই ডালাস, ডেনভার, লস এঞ্জেলস, ফোয়েনিক্স, সান্ ফ্রান্সিসকো ও সেন্ট পলে হতে যাওয়ার কথা ছিল ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’র আরেকটি ট্যুর যা করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারনে ডন হেনলি, জো ওয়ালশ, টিমোথি বি. স্মিত, ডিকন ফ্রে ও ভিন্স গিল কনসার্ট স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। ঈগলসের ওয়েবসাইটে জানানো হয় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখে ডেনভার থেকে শুরু হবে স্থগিত হয়ে যাওয়া ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ ট্যুর।