সভ্যতার উৎকর্ষতায় মানুষ তৈরি করেছে বহু স্থাপনা, যা সেই সভ্যতা হারিয়ে যাবার পরও বিলীন হয়নি। নিমজ্জিত হয়ে রয়ে গেছে মাটির গভীরে। হয়তো কোনোদিন কারো হাত ধরেই মাটির বুক চিরে বেরিয়ে আসবে আজকের পৃথিবীতে, হাজার বছর পরেও।
ঠিক তেমনইভাবে সভ্যতার ধ্বংসের ফল আমাদের দেখিয়ে দেয় পৃথিবীতে কিছুই স্থায়ী নয়, একসময় সব কিছুরই পতন ঘটবে। আর এই পতন থেকেই একসময় রচিত হবে নতুন ইতিহাস যা ভবিষ্যতের পৃথিবীর জন্য একটি নিদর্শন হয়ে থাকবে।
আজকে এমনই এক সভ্যতার কথা আলোচনা হবে যা একসময় সমৃদ্ধির শিখরে আরোহণ করলেও এখন শুধু তার ধ্বংসাবশেষই পড়ে রয়েছে- টিওয়ানাকু।
টিওয়ানাকু কী?
টিওয়ানাকু বলিভিয়ার পশ্চিমে টিটিকাকা লেকের কাছে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ও সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ।প্রায় ৪ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই জায়গাটি দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এটি প্রায় ৪,০০০ মিটার উপরে অবস্থিত। এই সভ্যতা বলিভিয়ার পশ্চিম থেকে চিলির উত্তরে, পেরুর দক্ষিণে এবং আর্জেন্টিনার উত্তর থেকে পশ্চিম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। এটি ছিল তৎকালীন আন্দীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির কেন্দ্র, এবং পরবর্তীতে এটি ইনকা সভ্যতায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে।
স্পেনীয় দখলদার পেদ্রো সিয়েজা দে লেওন দক্ষিণ ইনকা সভ্যতার রাজধানী কুলাসুয়ু খুঁজতে গিয়ে ১৫৪৯ সালে এটি খুঁজে পান এবং লিপিবদ্ধ করেন। কোনো কোনো পুরাতত্ত্ববিদ অনুমান করেন, টিওয়ানাকুর আধুনিক নামটি আয়মারা শব্দ টাইপিকালা থেকে এসেছে, যার অর্থ কেন্দ্রের পাথর (Stone in the center), কারণ তারা মনে করত এটিই পৃথিবীর কেন্দ্র। কিন্তু টিওয়ানাকুর মানুষদের কোনো লিখিত ভাষা না থাকায় এর আসল নাম কী তা জানা যায়নি। হ্যাগার্টি এবং বেরেসফোর্ড জোন্স পুকুনা ভাষাকে টিওয়ানাকুর একটি ভাষা হিসেবে মনে করেন।
এই স্থানটির বয়স নির্ণয়ে বিভিন্ন মতামত দেয়া হয়েছে। ১৯১০-৪৫ সালের মধ্যে আর্থার পোসনান্সকি এর বয়স ১১,০০০-১৭,০০০ বছর হবে বলে অনুমান করেন। ১৯৭০ এর দিকে কার্লোস পোন্স সানগিনেস এটি ১৫৮০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে গড়ে উঠেছিল বলে ধারণা করেন। তবে কিছু গবেষক মনে করেন, এই স্থানটি ২০০ বা ৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে গড়ে ওঠে। আধুনিক রেডিওকার্বন ডেটিং থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, স্থানটি ১১০ খ্রিষ্টাব্দে গড়ে উঠেছিল বলে ধারণা করা হয়। কিছু গবেষক মনে করেন, এই সভ্যতার শাসনব্যবস্থা অন্তত ৫০০ বছর এই শহরেই ছিল।
পুরাতত্ত্ববিদ পল গোল্ডস্টেনের মতে, টিওয়ানাকু সাম্রাজ্য আল্টিপিনো ছাড়িয়ে পেরুর মোকিউগুয়া উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এছাড়া ওমো উপনিবেশদের এলাকায় খননকার্য চালিয়েও টিওয়ানাকুর মতো মন্দির এবং মঞ্চ পাওয়া গিয়েছে।
প্রথমদিকে এটি কৃষিপ্রধান গ্রাম থাকলেও খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ সাল থেকে ৩০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থানে পরিণত হয়। আশেপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তীর্থযাত্রীরা এখানে আসত। এভাবে এটি ধীরে ধীরে শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত হয়। আনুমানিক ৬০০ থেকে ৯০০ সালের মধ্যে এই সভ্যতা শিখরে পৌঁছে যায়। ৮০০ খ্রিষ্টাব্দে এটি সমৃদ্ধির শিখরে আরোহণ করে। তখন এর সর্বোচ্চ জনসংখ্যা ছিল ১০,০০০-২০,০০০ জন।
এখানের কৃষিকাজ টিটিকাকা হ্রদ সংলগ্ন নিচু জমিতে হতো, তবে এই নিচু জমির কিছু অংশ উঁচু করে সেখানে ছোট ছোট খাল কেটে সেচ দেয়ার ব্যবস্থা ছিল। হ্রদের পানি কৃষিকাজে সহায়ক ছিল। এর সাথে কিছু শ্যাওলা আর জলজ উদ্ভিদ চলে আসতো যা জৈব সার হিসেবে কাজ করতো। এছাড়া পাহাড়ি ঝর্ণার পানি আর বৃষ্টির পানিও এখানে নেমে আসত, যার ফলে এখানে প্রচুর ফসল উৎপন্ন হতো। সাধারণত কন্দ, আলু ও ওল উৎপন্ন হতো।এছাড়া কিনওয়া নামে একপ্রকার লম্বা খাদ্যশস্যের গাছও হতো এখানে। লামা পালন করা হতো এবং তাদের সাহায্যে জিনিসপত্র বহন করা হতো। একই সাথে মাছ চাষও ছিল তাদের উল্লেখযোগ্য পেশা। এটি বিভিন্ন আচার ও অনুষ্ঠানের কেন্দ্র বলে বিবেচিত ছিল, তবে এর সাথে ব্যস্ততম নগরও ছিল এটি।
স্থানটিতে খোদাই করে যেসব স্থাপত্য পাওয়া গেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আকাপানা, পূর্ব আকাপানা, পুমাপুংকুর খাড়া মঞ্চ, কালাসাসায়া, খেরি কালা, পুতিন বেষ্টনী ও অর্ধভূগর্ভস্থ মন্দির। এসব জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। এছাড়া এখানে পাওয়া গেছে অলংকৃত চীনামাটির জিনিসপত্র, স্মারকস্তম্ভ ও বৃহাদাকৃতির প্রস্তরখণ্ড।
আকাপানা
আকাপানা স্থাপনাটি প্রায় ২৫৭ মিটার প্রশস্ত, লম্বায় এটি প্রায় ১৬.৫ মিটার। এর মধ্যভাগে একটি নিচু প্রাসাদ আছে। এখানে পানি চলাচলের জন্য ছোট নালা ছিল। সর্বোচ্চ যাজকদের এখানে কবর দেয়া হতো আর সাথে থাকত পুমার প্রতিকৃতি, ধূপকাঠি জ্বালানোর পাত্র, পুমার মাথাযুক্ত মানুষের মূর্তি। এর পশ্চিমদিকে একটি নক্সাখচিত সিঁড়ি রয়েছে। এর উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মানববসতি গড়ে ওঠার কারণে সেসব জায়গা তাদের দখলে চলে গিয়েছে। এছাড়া এর মধ্যভাগ থেকে পূর্ব অংশ পর্যন্ত গভীর খনন এবং লুটতরাজের কারণে অধিকাংশই ধ্বংস হয়ে যায়।
মনে করা হয়, আকাপানা স্থাপনাটি পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু একুশ শতকের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে এটি সম্পূর্ণ মনুষ্যনির্মিত মাটির প্রাচীর, যা ছোট-বড় পাথর দিয়ে তৈরি। এখানে ব্যবহৃত মাটি আশেপাশের পরিখার গর্ত থেকে নেয়া হয়েছে। এখানের সবচেয়ে বড় পাথরটির ওজন প্রায় ৬৫.৭ টন।
পূর্ব আকাপানা টিওয়ানাকুর পূর্ব দিকে অবস্থিত। এটি আনুষ্ঠানিক কেন্দ্রকে শহরাঞ্চল থেকে পৃথক করেছে।নান্দনিকতা ও সৌন্দর্যবোধ সৃষ্টির জন্য এতে হলুদ ও লাল রংয়ের মাটি ব্যবহার করা হয়েছে।
পুমাপুংকু
পুমাপুংকু মঞ্চটি পূর্ব থেকে পশ্চিম অক্ষরেখা বরাবর তৈরি। এটি আয়তাকার, মাটির তৈরি প্রাচীর, যার চারপাশে বৃহাদাকার পাথর আছে। উত্তর-দক্ষিণ বরাবর এটি ১৬৭.৩৬ মিটার প্রশস্ত, পূর্ব-পশ্চিম বরাবর ১১৬.৭ মিটার প্রশস্ত এবং ৫ মিটার লম্বা।
পুমাপুংকুর একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো পাথরের ব্লক দ্বারা বাধানো বৃহৎ পাথরের চত্বর। এর আয়তন ২৬১.৩৬ বর্গ মিটার, ওজন ১৩১ মেট্রিক টন। এটি টিওয়ানাকুতে পাওয়া সবচেয়ে বড় পাথর।
কালাসাসায়া
কালাসাসায়া হলো একটি বৃহৎ চত্বর, যা ৩০০ ফুট লম্বা। এটি আকাপানার উত্তরে এবং অর্ধভূগর্ভস্থ মন্দিরের পশ্চিমে অবস্থিত। কালাসাসায়ার আসল পাথরগুলো স্টোনহেঞ্জের মতো ছিল বলে ধারণা করা হয়, যেগুলো ছিল উল্লম্বভাবে দাঁড় করানো এবং সমানভাবে ছড়ানো। কালাসাসায়ার সবচেয়ে বড় পাথরের ব্লকটির ওজন ২৬.৯৫ মেট্রিক টন। এই চত্বরের মধ্যেই সূর্যতোরণ রয়েছে। এটি লম্বায় ৯.৮ ফুট এবং চওড়ায় ১৩ ফুট। এটি একটিমাত্র পাথরের ব্লক কেটে তৈরি করা হয়েছে। এর ওজন প্রায় ১০ টন।
এখানে খোদাই করা কিছু দুর্বোধ্য লিপি রয়েছে। ধারণা করা হয়, এসব লিপি দিনলিপি হিসেবে বা জ্যোতিবিদ্যা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত হতো। একে সূর্যকেন্দ্রিক ধর্ম ব্যবস্থার ও একটি প্রতীক হিসেবে ভাবা হয়।
সূর্যদেবতা
তোরণের উপরিভাগের মাঝে রয়েছে দণ্ডদেবতা (Staff God) বা তোরণদেবতা (Gateway God) বা সূর্যদেবতা (Sun God), যাকে বৃষ্টি, বজ্র এবং বিজলীর দেবতা হিসেবে মানা হতো। এটি থুনুপা (Thunupa) নামেও পরিচিত, যা আবহাওয়ার দেবতা হিসেবে পরিচিত। তারা মনে করত এই দেবতা টিটিকাকা হ্রদ ও আশেপাশের সব জায়গায় বৃষ্টিপাত ও বজ্রপাত ঘটান। তার দুই হাতে দুটি দণ্ড আছে, যা বজ্র আর বিজলীর প্রতীক। সূর্যের রশ্মি বিচ্ছুরণের মতো তার মাথায় ২৪টি রশ্মির বিচ্ছুরণ আছে। এছাড়া তার চারপাশে রয়েছে পাখাযুক্ত মূর্তির ৪৮টি বর্গাকার টালি, যার ৩২টি মানুষের মুখযুক্ত মূর্তি এবং ১৬টি শকুনের মুখযুক্ত মূর্তি। এসব কিছু দণ্ডদেবতার দিকে মুখ করে আছে। এখানের অনেক তোরণদ্বারেই লাঠি হাতে ধরে থাকা দেবতার মূর্তি দৃশ্যমান।
অর্ধভূগর্ভস্থ মন্দির
এই চত্বরের কাছেই রয়েছে অর্ধভূগর্ভস্থ মন্দির। এটি একটি বর্গাকৃতির নিচু চত্বর। অন্যান্য স্থাপনা পূর্ব-পশ্চিম অক্ষরেখা বরাবর অবস্থিত হলেও এটি উত্তর-দক্ষিণ বরাবর অবস্থিত। এটিই এর মূল বৈশিষ্ট্য। বেলেপাথরের ৪৮টি স্তম্ভ এবং ছোট পাথরের গাঁথুনি দ্বারা নির্মিত। এখানের দেয়ালে বাইরের দিকে বের হয়ে থাকা কিছু মুখাবয়ব আছে। এগুলো মানুষেরও না আবার কোনো প্রাণীও না। গবেষকরা এটি নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন। তবে কেউ কেউ এগুলো ভিনগ্রহের প্রাণীর মুখ বলে দাবী করেন!
এছাড়া চত্বরে রয়েছে কিছু স্তম্ভ যা টিওয়ানাকুর শাসক বা ধর্মযাজকের অবয়ব হিসেবে নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। ক্রন্দনরত এই মূর্তির এক হাতে লাঠি আর এক হাতে পানপাত্র ধরে রাখা আছে। এছাড়া এর চারপাশে ৩০টি প্রাণী এবং পৌরাণিক জীবের ছোট মূর্তিও আছে।
টিওয়ানাকুর স্থাপত্যবিদ্যার কৌশল সম্পর্কে অনেক তত্ত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের আদর্শ মান ছিল ৬০ সেন্টিমিটার।তারা পিথাগোরাসের অনুপাত অনুযায়ী স্থাপনা নির্মাণ করতো। অর্থাৎ ৫:৪:৩ এই নিয়মে। তাদের সব স্থাপনায় আলাদা আলাদা নির্মাণশৈলী ও কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে।
এখানের স্থাপত্যে বড় বড় পাথরের ব্যবহার অত্যধিক। নলখাগড়ার তৈরি নৌকার সাহায্যে টিটিকাকা হ্রদ দিয়ে এই পাথরগুলো আনা হয়। ধারণা করা হয়, এসব জটিল অথচ চমৎকার স্থাপত্য যারা তৈরি করেছিলেন এবং যাদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি ১২০০ সালের দিকে হারিয়ে যায়, তারা বলিভিয়ার পার্বত্যাঞ্চলের আয়মারা ইন্ডিয়ানদের পূর্বসূরি।
টিটিকাকা লেকের পানির নিচে গবেষকরা অনেক জিনিসপত্র পান, যা ধর্মীয় বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য দেবতাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়েছিল বলে তারা মনে করেন। এর মধ্যে রয়েছে স্বর্ণালংকার, লোহার তৈরি বস্তু, মূল্যবান রত্ন, ঝিনুক, ধূপকাঠি জ্বালানোর পাত্র প্রভৃতি। ধূপকাঠি জ্বালানোর পাত্রগুলোয় পুমার মুখাবয়ব আছে। ধারণা করা হয়, পুমা ছিল তাদের ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। এছাড়া লামার কিছু হাড়ও পাওয়া গেছে, যা দ্বারা বোঝা যায় এখানে পশুবলিও দেয়া হতো।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এখানে বিভিন্ন পেশার সৃষ্টির হয়। মানুষ বিভিন্ন কাজে নিজেদের দক্ষতা দেখাতে শুরু করে। বিভিন্ন শিল্পী এবং কারিগর তাদের নিজ নিজ দক্ষতা ব্যবহার করে এবং তৈরি করে মাটির তৈরি জিনিসপত্র, গহনা এবং অলংকারসামগ্রী আর হাতে তৈরি কাপড়। এখানের কিছু কিছু জায়গায় ছিল বাজার ব্যবস্থা।
তবে এখানে অভিজাত আর ধনী ব্যক্তিদের আধিপত্য ছিল। সাম্রাজ্যের ধনী ব্যক্তিরা সকল উৎপাদিত পণ্যদ্রব্যের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রক ছিল। উদ্বৃত্ত শস্য নিজেদের কাছে এনে সেগুলো পুনঃববণ্টন করে দিত। এছাড়া এখানে ছিল কৃষক, পশুপালক ও মেষপালক। এসব পেশা সমাজের বিভিন্ন সাধারণ মানুষকে তাদের দক্ষতা এবং মান বিভাজন করে দেয়া হতো।
অভিজাত আর ধনী ব্যক্তিরা চার-দেয়ালের প্রাসাদে বাস করতো, যার চারপাশে ছিল পরিখা আর দুর্গ। একে পবিত্র হিসেবে মনে করা হতো। শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্যে সাধারণ ব্যক্তিরা এখানে ঢুকতে পারত। দেয়ালের ভেতরদিকে অনেক ছবি আঁকা থাকত, যা অভিজাত ব্যক্তিদের মনোরঞ্জনের জন্য তৈরি করা হতো।
১৯৬০ এর দিকে বলিভিয়ান সরকার এই স্থানের পুনরুদ্ধার ও পুনর্নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। এগুলোর মধ্যে কালাসাসায়ার প্রায় পুরোটাই নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়। কিন্তু পুনর্নির্মিত স্থাপনাটি গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা হয়নি। তাছাড়া কালাসাসায়ার চারপাশে একটি নতুন দেয়াল তৈরি করা হয়েছে যা আগে ছিল না। আবার এতে যেসব পাথর ব্যবহার করা হয়েছে তা মূল টিওয়ানাকুর চেয়ে কম গুণমান সম্পন্ন।ধারণা করা হয়, সূর্যতোরণ, যা এখন কালাসাসায়াতে অবস্থিত, সেটিও তার আসল অবস্থান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে ইউনেস্কো ২০০০ সালে টিওয়ানাকুকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত দেয়।
সভ্যতার পতন
১৯৭৮-৯০ সালের একটি পুরাতাত্ত্বিক খননকার্য থেকে জানা যায়, এই সভ্যতা খরার কারণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ধারণা করা হয়, ১০০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে আয়মারা রাজ্যের আক্রমণে এই সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিল।১১০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এই শহরটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। অতি-খরার কারণেই এটি হয়েছিল বলে মনে করা হয়, যা ঐ অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হয়।
টিওয়ানাকু সভ্যতা পতনের পর এই জায়গায় লুটতরাজের পরিমাণ বেড়ে যায়। এছাড়া কিছু অপেশাদার খোদাইকারী এখানে খনন কাজ চালায়। ১৯ শতক থেকে ২০ শতকের গোড়ার দিকে স্পেনীয়দের আগমন এবং তাদের কলোনী স্থাপন পর্যন্ত এসব চলছিল। এছাড়া দালান নির্মাণ এবং রেলপথ তৈরির জন্য এখানকার পাথর নিয়ে যাওয়া হয়। মিলিটারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়েছে।
টিওয়ানাকু সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেছে, কিন্তু রেখে গেছে এমন কিছু বৃহৎ স্থাপনা আর চিহ্ন যাতে করে মানুষ তাদের কাজ সম্পর্কে জানতে পারে।