তখনকার দিনের সংগীত সাধনা সম্ভবত এখনকার দিন থেকে বেশ আলাদা, দুঃসাধ্য এবং কষ্টকর ছিলেন। কোথাও গান শুনলেন আর গাওয়া শুরু করে দিলেন কিংবা জন্মগত প্রতিভার কারণে গাইতে গাইতে নিজে নিজেই শিল্পী হয়ে উঠলেন- এমন রেওয়াজ হয়তো তখনও চালু হয়নি। তখনও সংগীত সাধনা মানে গুরুজনের কাছে দীর্ঘকাল সংগীতের ‘তালিম’ নেয়া, তারপর গুরু শিষ্যকে যখন যোগ্য মনে করেন, তখন গুরুর ‘এজাজত’ বা ‘অনুমতি’ সাপেক্ষে জনসম্মুখে গান পরিবেশন করতে শুরু করা। বিশেষত শাস্ত্রীয় সংগীতে এ যেন এক অলিখিত সংবিধান।
এখনও যে এমন রেওয়াজ নেই তা নয়। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়া ও পারিপার্শ্বিক নানা কারণে এমন প্রথা দিন দিন কমে আসছে। তবে বেশি দিন আগের কথা নয়, উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে জন্ম নেওয়া এক মহান সংগীত সাধকের জীবন নিয়ে আজকের লেখাটি সাজানো হয়েছে, যিনি জীবনের পরতে পরতে এক মহা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগীতজ্ঞ।
তখন তিনি তরুণ। তারুণ্যের উচ্ছাস সমগ্র দেহ ও মনে। চোখে প্রতিভার দীপ্তি। চেহারায় দৃঢ় সংকল্পের ছাপ। সফলতা যত দূরেই হোক না কেন, তা যেন তাকে অর্জন করতেই হবে, কেননা তিনি জানেন, ‘সাধনায় সাধ্য মেলে’।
তরুণের জীবন যেন নাটকের চেয়েও বৈচিত্রময়। ঘটনার পটভূমি একটি সামন্তরাজ্যে, বাংলাদেশ থেকে বহুদূরে অবস্থিত ভারতের রামপুরায়। রাজ্যের শাসনকর্তা একজন নবাব। নামজাদা এক সংগীতজ্ঞ তার রাজ দরবারের সভাবাদক। তরুণ ঐ সভাবাদকের শিষ্যত্ব গ্রহণের অভিলাষী।
প্রভাত এসেছে। সূর্য উঠেছে। আলো ঝলমল পৃথিবী। সভাবাদক রাজ দরবারের সুরক্ষিত এক প্রাসাদে থাকেন। তরুণ অন্তরে অসীম আশা ও উৎসাহ নিয়ে সেই প্রাসাদের দিকে এগিয়ে চললো। প্রবেশদ্বারের কাছে এসে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়ালো। ফটকের উপর তার দৃষ্টি নিবদ্ধ, লক্ষ্য ঐ সভাবাদকের সাক্ষাৎ লাভ করা। তরুণের পরনে তখন পাজামা-শার্ট। গরিবী হাল। উদাস দেহ। সকালের মৃদু হাওয়ায় মাথার চুলগুলো যেন পাটের রশির মতো এলোমেলো উড়ছিলো।
সকাল গড়িয়ে দুপর, দুপর গড়িয়ে সন্ধ্যা। কিন্তু সভাবাদকের কোনো দেখা নেই। তরুণের মনে তখনও নিদারুণ চাঞ্চল্য। নিরুপায় যুবক রাস্তার পাশে পায়চারী শুরু করলো। ফটকের দিকে বারবার তাকাতে লাগলো। প্রথমদিনের প্রতীক্ষা বিফলে গেল। কিন্তু গুরুর দেখা মিললো না। তা হোক। আবার আগামীকাল আসবে। নতুন উদ্যমে প্রতীক্ষা করবে। হয়তো তাহলে তার মনোবাসনা পূর্ণ হবে।
অন্ধকার নেমে এলো। তরুণ ফিরে চললো আস্তানায়। এক মসজিদে তার আস্তানা। এই সুদূর রামপুরায় তার কোনো আত্মীয় স্বজন নেই। এখানে সে নতুন। কেউ তাকে চেনে না। কেউ তার ভাষাও (বাংলা) বোঝে না। পথে পথে সে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। হঠাৎ ঐ মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে দেখা হয়ে গেল তার। আধা হিন্দী আর আধা বাংলায় সে তার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলো। ইমাম সাহেবের দয়া হলো। তরুণকে মসজিদে থাকতে দিলেন। ইমাম সাহেবের কাছে তরুণ তখনও তার মনের গোপন বাসনা খুলে বলেনি।
পরের দিন আবার প্রতীক্ষার পালা। আজকে সাহস করে সে প্রাসাদ ফটকে ঢুকে যেতে চাইলো। কিন্তু পারলো না, প্রাসাদের দারোয়ান তাকে বাধা দিলো। নিরুপায় তরুণ গতদিনের মতো আজও দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়ালো। ফের প্রতীক্ষার পালা শুরু হলো। গুরুর দর্শন লাভের প্রতীক্ষা। দুপুর গেলো, সন্ধ্যা গেলো। কিন্তু আজও গুরুর দেখা মিললো না।
একদিন গেলো, দুদিন গেলো। এভাবে বহু দিন চলে গেল। প্রতিদিন প্রতীক্ষা। তবুও গুরুর দেখা পাওয়া গেলো না। তরুণের মনের বাসনা পূর্ণ হলো না। সভাবাদকের কাছে পৌঁছাতে পারলো না। ব্যর্থতার গ্লানি তাকে আচ্ছন্ন করে ফেললো। সফলতাই যদি না আসে তাহলে এ জীবন রেখে কী লাভ? তার চেয়ে আত্মহত্যা করা শতগুণে ভালো। তরুণ সিদ্ধান্ত নিলো, সে আত্মহত্যাই করবে।
ততদিনে ইমাম সাহেবের সাথে তার বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাই আত্মহত্যার পূর্বে ইমাম সাহেবকে তার আগমনের আসল উদ্দেশ্য খুলে বললো। ইমাম সাহেব মন দিয়ে সব শুনলেন। তিনি ইতিমধ্যেই তরুণটিকে ভালবেসে ফেলেছেন। অনাত্মীয় এই তরুণের প্রতি তার মনের কোনে একটি স্নেহ বাসা বেঁধে ফেলেছে। তিনি তরুণের এমন আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছিলেন না। তাকে এ থেকে রক্ষার কোনো উপায় খুঁজতে লাগলেন।
অনেক ভেবে তিনি একটি বুদ্ধি বের করলেন। কাগজ-কলম নিয়ে হিন্দিতে তিনি একটি চিঠি লিখলেন। চিঠিটি তরুণের হাতে দিলেন। তারপর কী কী করতে হবে সব বুঝিয়ে বললেন। ইমাম সাহেবের উপদেশ শুনে তরুণের মন খুশিতে নেচে উঠলো। আত্মহত্যার পথ ধরেই তাকে শেষ চেষ্টা করতে হবে- এটিই ইমামের শেখানো পদ্ধতি! সিদ্ধান্ত হলো নবাবের গাড়ির নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ার অভিনয় করবে তরুণ! আর সেই পথ ধরেই যদি আসে সফলতা।
নবাবের গাড়ি এগিয়ে আসছে। তরুণ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। অবশেষে নবাবের গাড়ি দেখা গেলো। নিমিষে গাড়ির নিচে ঝাঁপিয়ে পড়লো তরুণ। গাড়ি থেমে গেলো। নবাব নিচে নেমে এলেন। সুযোগ পেয়ে এক নিঃশ্বাসেই সে নবাবের কাছে তার পুরো কাহিনী তুলে ধরলো। পাশাপাশি ইমাম সাহেবের লেখা চিঠিখানা নবাদের দিকে বাড়িয়ে দিলো। নবাব চিঠি পড়লেন। তরুণের অদম্য আগ্রহ দেখে বিস্মিত হয়ে গেলেন। তার দৃঢ় সংকল্পে নবাব মুগ্ধ হলেন।
নবাব তরুণের প্রতি খুশি হলেন। তরুণকে দরবারে যেতে বললেন। তরুণের মন আনন্দে আত্মহারা। নবাবের আদেশ পালন করে সে যথাসময়ে দরবারে হাজির হলো। নবাবের অনুরোধে সভাবাদক তরুণকে শিষ্য করে নিলেন। তরুণের জীবন আজ সার্থক, তার স্বপ্ন আজ সফল। ইমামের কৌশলও সার্থক।
সংকল্পে অটল এই তরুণ হলেন বিশ্ববরেণ্য সংগীত যাদুকর ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। ১৮৬২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শিবপুর গ্রামে আলাউদ্দিনের জন্ম। বাবা-মা আদর করে তাকে ডাকতেন আলম নামে। আলাউদ্দিনের বাবার নাম সবদার হোসেন খাঁ ওরফে সদু খাঁ। তিনি ছিলেন আগরতলা মহারাজের সভাবাদক ওস্তাদ কাশেম আলী খাঁর শিষ্য এবং একজন সেতারা বাদক।
সদু খাঁনের পাঁচ পুত্রের মধ্যে আলাউদ্দিন তৃতীয়। ছমিরউদ্দিন সকলের বড়, তিনি তাল যন্ত্রে পারদর্শী ছিলেন। দ্বিতীয় ফকির আফতাবউদ্দিন, তিনি সারা জীবন সুর সাধনায় কাটিয়েছেন। চতুর্থ নায়েব আলী ক্ল্যারিওনেট বাজাতেন। কনিষ্ঠ আয়েত আলী ছিলেন খ্যাতিমান সংগীতজ্ঞ।
বাল্যকাল থেকেই আলাউদ্দিনের সংগীতের প্রতি প্রবল অনুরাগ জন্মে। যেখানে সুর সেখানেই আলাউদ্দিন। বড় ভাই ফকির আফতাবউদ্দিনের কাছে সংগীতের হাতেখড়ি।
আলাউদ্দিনকে পাঠশালায় ভর্তি করানো হলো। কিন্তু তিনি ছিলেন সুরপাগল। তাই বইপাগল হতে পারলেন না। গান বাজনার প্রতি তার ছিল অদ্ভুত আকর্ষণ। তাই তিনি ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে পারলেন না। একদিন তিনি সবার অগোচরে সুরের সন্ধানে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন।
পাশের গ্রামে এক যাত্রাদলের দেখা পেলেন তিনি। ঢুকে পড়লেন সেই যাত্রাদলে। তারপর তাদের সাথে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়ালেন। একপর্যায়ে ঢাকা পৌঁছালেন। সেখান থেকে পাড়ি জমালেন কলকাতায়। তিনি ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছিলেন, কলকাতায় পৌঁছাতে পারলে তার সংগীত শেখার পথ খুলে যাবে।
তখন কলকাতায় সংগীত সাধক হিসেবে নুরো গোপালের খুব নাম-ডাক। আলাউদ্দিন খাঁ তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন। শর্ত ছিল সুদীর্ঘ বারো বছর তাকে কেবল সরগম সাধনা করতে হবে। তারপর তিনি রাগের তালিম নিতে পারবেন। সুরপাগল আলাউদ্দিন ওস্তাদের দেয়া এই শর্তে রাজি হয়ে গেলেন।
শিক্ষা শুরু হলো। তালিম চললো। সাত বছর কাটলো। হঠাৎ ছন্দপতন ঘটলো। সংগীত গুরু নুরো গোপাল মারা গেলেন। আলাউদ্দিন নিদারুণ আঘাত পেলেন। তবে সাত বছরের তালিমেই আলাউদ্দিন একজন চৌকস সংগীত শিল্পী হয়ে উঠেছিলেন। যেকোনো গান শুনেই তিনি স্বরলিপি তৈরি করে ফেলতে পারতেন।
নিরুপায় আলাউদ্দিন তারপর কিছুদিন মিনার্ভা থিয়েটারে চাকরি করেছিলেন। কিন্তু সংগীতের প্রতি তার অদম্য আকর্ষণ থাকায় চাকরিতে মন বসছিল না। যদিও গুরুর মৃত্যুর পর মনের দুঃখে তিনি গান ছেড়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু চাকরি ছেড়ে দিয়ে ফের যন্ত্র-সংগীত শিখতে লাগলেন। গোয়ানিজ লবো সাহেবের কাছে পাশ্চাত্য রীতিতে বেহালা বাজানো শিখলেন। আর অমর দাশের কাছে শিখলেন ভারতীয় রীতিতে। মৃদঙ্গবাদক নন্দবাবুর কাছে শিখলেন পাখোয়াজ। হাবু দন্তের কাছে তালিম নিলেন ক্ল্যারিওনেটের, সানাই শিখলেন হাজারী ওস্তাদের কাছে। আলাউদ্দিন এভাবে সর্ববিদ্যা বিশারদ হয়ে উঠলেন।
আলাউদ্দিন এমন সময় মুক্তাগাছায় আমন্ত্রণ পেলেন। রাজা জগৎকিশোর রাজদরবারে তাকে সংগীত পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। তিনি রাজ দরবারে সে যুগের প্রখ্যাত সরোদবাদক ওস্তাদ আহমদ আলী খাঁর সাক্ষাৎ লাভ করেন। ওস্তাদজীর বাজনা শুনে আলাউদ্দিন বুঝতে পারলেন এতদিন তিনি যা শিখেছেন তা কিছুই নয়, তাকে আরও অনেক শিখতে হবে। ওস্তাদ আহমদ আলী খাঁর কাছে সরোদ শিখবার জন্য তার মন ব্যাকুল হয়ে উঠলো। মহারাজাকে অনুরোধ করলেন। মহারাজ আলাউদ্দিনকে ওস্তাদ আহমদ আলী খাঁর শিষ্য করে দিলেন। ওস্তাদজীর সঙ্গে আলাউদ্দিন কলকাতায় চলে আসলেন। তার কাছে দীর্ঘ চার বছর পর্যন্ত সংগীতের তালিম নিলেন। এই সময় তিনি ওস্তাদের রান্নাবান্না করে দিতেন। ঘরবাড়ির কাজ করতেন। সর্বোপরি ওস্তাদের সার্বিক সেবা করতেন।
আলাউদ্দিন বাজনা শুনে স্বরগ্রাম করতে পারতেন। ওস্তাদজীর রেওয়াজের সময় তিনি গভীর মনোযোগ সহকারে বাজনা শুনতেন। ওস্তাদজী বাইরে গেলে সেই সুযোগে তিনি সে সকল রাগ-রাগিণীর রেয়াজ করতেন। আলাউদ্দিন খাঁ এভাবেই তার সংগীত ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে তুলতে লাগলেন। আলাউদ্দিন তারপর ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর কাছে সংগীত শিখবার বাসনা করেন। ওয়াজির খাঁ ছিলেন তানসেনের বংশধর। তার মতো বড় ওস্তাদ তখন সারা ভারতবর্ষে আর কেউ ছিল না। তিনি রামপুরের নবাবের সভাবাদক। তিনি ছিলেন একজন বীণাবাদক।
আলাউদ্দিন রামপুরা পৌঁছালেন। তার পরের ঘটনা শুরুতেই আপনারা জেনেছেন: নবাবের গাড়ির নিচে আত্মহত্যার বিনিময়ে তিনি ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর শিষ্যত্ব লাভ করলেন। কিন্তু ওস্তাদ তার উপর সন্তুষ্ট নন, আর ওস্তাদকে খুশি করতে না পারলে সংগীত শেখা অসম্ভব। ফলে আলাউদ্দিন খাঁর শুরু হলো ওস্তাদের মন জয়ের সংগ্রাম। রাতদিন চলতে থাকলো গুরুর খেদমত। শেষপর্যন্ত গুরুর মন গললো। শুধু যে মন গললো তা নয়, ওস্তাদ ওয়াজির খাঁ তাকে প্রধান ও প্রিয় শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করলেন। তাকে ধ্রুপদ, ধামার থেকে শুরু করে রবাব, সুরশৃঙ্গার সব কিছু শিখালেন। তানসেনের ঘরানার সংগীতে আলাউদ্দিন শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করলেন।
১৯১৮ সালে মাইহারের রাজা রামপুরের নবাবের কাছে অনুরোধ পাঠালেন। আলাউদ্দিনকে তিনি সভা সংগীতজ্ঞ পদে অধিষ্ঠিত করতে চান। আলাউদ্দিন মাইহারে গেলেন। রাজার শিক্ষাগুরু হলেন। তারপর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি মাইহারেই ছিলেন।
আলাউদ্দিনের খ্যাতি চতুর্দিক ছড়িয়ে পড়লো। তিনি হয়ে উঠলেন উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগীত সম্রাট। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ১৯৩৫ সালে বিশ্ব ভ্রমণ শুরু করেন। ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকার প্রতিটি দেশে তিনি শ্রোতাদের বিমোহিত করে তোলেন।
ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘খাঁ সাহেব’ উপাধিতে সম্মানিত করে। ১৯৫২ সালে ভারতের সংগীত নাটক একাডেমির ‘ফেলো’ নির্বাচিত হন এবং ১৯৫৮ সালে ‘পদ্মভূষণ’ এবং ১৯৭২ সালে ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাব অর্জন করেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘ডক্টরেট’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৬১ সালে তিনি বিশ্বভারতীর ‘দেশীকোত্তম’ উপাধি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হল তাকে আজীবন সদস্য সম্মানে ভূষিত করে।
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ অনেক নতুন রাগ সৃষ্টি করেন। তার মধ্যে হেমন্ত, প্রভাত কেলী, হেম বেহাগ, মদন মঞ্জরী, রাগ আলাউদ্দিন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। মাইহার রাজ্যে তার বাসভবন ‘মদিনা ভবনে’ ১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।ওস্তাদ আলাউদ্দিন ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বলে গেছেন যে, তিনি কিছুই শিখতে পারেননি, শেখার আরও অনেক কিছু শেখা বাকি রয়ে গেলো। দৃঢ় সংকল্প, অধ্যবসায় ও ঐকান্তিকতা থাকলে মানুষ যে যেকোনো অসাধ্য সাধন করতে পারে, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সূত্র:
১. মোবারক হোসেন খান,ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ জীবনী ও পত্রসম্ভার, সাহিত্য প্রকাশ, প্রথম প্রকাশ ২০১১
২. মোবারক হোসেন খান, বাংলাদেশের মুসলিম সংগীতসাধক, চোখ প্রকাশন, প্রথম প্রকাশ ২০০৪