১৪৯২ সালের ১২ অক্টোবর পৃথিবীর মানচিত্রে এক নতুন ভূখণ্ডের আবির্ভাব ঘটলো। হাজার বছর ধরে সভ্য পৃথিবীর আড়ালে থাকার পর সেদিন তা ধরা দিলো এক স্প্যানিশ নাবিকের চোখে। সেই নাবিকের নাম ক্রিস্টোফার কলম্বাস। এক অসম্ভবের আহ্বানে তিনি ইউরোপ থেকে পাড়ি দিয়েছিলেন অসীম সমুদ্র। তার অদম্য অভিসারের নিকট সেই অসীম পরাজিত হয়েছে। তিনি আবিষ্কার করেছেন পশ্চিমের এক বিশাল মহাদেশ। সেই মহাদেশের নাম আমেরিকা। সেদিনের নতুন ভূখণ্ড আজ কালের আবর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর মহাদেশে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক খাতে তারা রাজত্ব করছে পুরো পৃথিবীর উপর। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, পঞ্চদশ শতাব্দীতে কলম্বাসের আবিষ্কৃত এই আমেরিকা মহাদেশের নামকরণ করার ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয়েছে আরেক অভিযাত্রিকের নামকে, যার নাম আমেরিগো ভেসপুচি।
কে এই আমেরিগো ভেসপুচি? আর কেনই বা এক নতুন ভূখণ্ডের নাম রাখা হলো এই ব্যক্তির সাথে মিলিয়ে? এই প্রশ্ন দু’টি বেশ সহজ হলেও এর উত্তর কিন্তু অতটা সহজ নয়। বরং এর পেছনে লুকিয়ে আছে হাজারো আলোচনা ও বিতর্ক। আর এসব বিতর্কের জালে জড়িয়ে আমেরিগো ভেসপুচি হয়ে উঠেছেন পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত অভিযাত্রিক।
অভিযাত্রিকের স্বর্ণযুগ
চতুর্দশ শতাব্দী থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়টুকু ছিল অনুসন্ধানের যুগ, আবিষ্কারের যুগ। স্বপ্নালু অভিযাত্রিকরা ঝুলিতে মানচিত্র বোঝাই করে, এক চোখ টেলিস্কোপের লেন্স বরাবর রেখে জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে এক অজানা নতুন জগতের সন্ধানে বের হতো। অনেকে ফিরে আসতো নতুন ভূমির সন্ধান নিয়ে। সাথে থাকতো হাজার বছরের হারানো গুপ্তধনের সম্ভার। তারা রীতিমতো জাতীয় বীরের সম্মাননায় ভূষিত হতো। তাদের নাম উঠে যেত ইতিহাসের স্বর্ণপত্রে। কিন্তু বেশিরভাগ অভিযাত্রিকই আর ফিরতো না। তারা হারিয়ে যেত কালের অসীম আঁধারে। তাদের নাম জমা পড়তো ইতিহাসের ভুলোমনা দপ্তরে। কিন্তু তারপরেও এরা থেমে যায়নি। উল্টো ফি বছর এই দলে লোকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এজন্য এই সময়সীমাকে ইতিহাসবেত্তারা ‘অভিযাত্রিকের যুগ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এই যখন যুগের অবস্থা, তখন ইতালির সুন্দর শহর ফ্লোরেন্সের এক ধনী পরিবারে জন্ম নিলেন আমেরিগো ভেসপুচি নামক এক বালক। গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকার হিসেবে সেটা ১৪৫১ সালের ৯ই মার্চ। জন্মগতভাবে ইতালীয় হলেও, আমেরিগো পরবর্তীতে একজন স্প্যানিশ নাগরিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ধনী পরিবারের জন্মের সুবাদে ছোট থেকেই আমেরিগোর সাথে ইতালির বড় বড় পরিবারের ব্যক্তিবর্গের পরিচয় ছিলো। এদের মধ্যে মেদিসি পরিবারের কথা না বললেই নয়। মেদিসি পরিবার তখন ইতালি শাসন করতো। আমেরিগো ছিলেন বইপাগল মানুষ। শৈশবে চাচা অ্যান্তোনিওর কাছে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়েছিলো। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে তিনি প্রচুর বই পড়তেন। বই পড়ার ফলে আমেরিগোর চিন্তাধারা ছিল সমসাময়িক অন্যদের তুলনায় ভিন্ন এবং প্রগতিশীল। পরিবারের বাইরেও এজন্য আমেরিগোর সুনাম ছিল। ফলে মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি রাজা একাদশ লুইয়ের দূত হিসেবে প্যারিসে একটি সংক্ষিপ্ত কূটনৈতিক সফর করার সুযোগ লাভ করেছিলেন। জীবনীকারদের মতে, ঠিক এই সময়ে তিনি ভ্রমণ এবং নতুন দেশ আবিষ্কারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন।
চলো অভিযাত্রিক হই
প্যারিসফেরত তরুণ আমেরিগো সিদ্ধান্ত নিলেন, অজানার সন্ধানে বের হবেন। অঢেল সম্পত্তির মালিক পিতা-মাতার সন্তান আমেরিগোর অভাবের কিছু নেই। ইচ্ছে করলেই প্রয়োজনীয় জনবল নিয়ে আজই বের হয়ে পড়া যায়। যে-ই ভাবা, সে-ই কাজ। কিন্তু বাস্তবে ঘটনা এত সহজ ছিল না। উল্টো দেশ আবিষ্কারের নেশা মাথায় নিয়ে তাকে ব্যবসায় নেমে পড়তে হয়। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে তাকে স্পেনের সেভিয়া শহরে পাড়ি জমাতে হয়েছিলো। সেখানে জিয়ানেত্ত বেরার্দি নামক এক ব্যক্তির সাথে তিনি বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তবে অনেকের মতে, সেভিয়ায় তিনি পাঁচ বছর অবস্থান করেন এবং বন্ধু মেদিসি পরিবারের হয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করেছেন। ব্যবসায়ের চাপে তিনি যেন অভিযাত্রিক হওয়ার স্বপ্ন বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন।
১৪৯০ সালে তিনি এক বণিকের সাথে ব্যবসা শুরু করেন, যিনি স্বয়ং ক্রিস্টোফার কলম্বাসের জাহাজের প্রধান সরবরাহকারী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। কলম্বাস তখন স্পেনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার নাম শোনার পর নতুন করে অভিযাত্রার নেশা চেপে ধরলো তাকে। কিন্তু সেবার তিনি কলম্বাসের সাক্ষাৎ লাভে ব্যর্থ হন। ১৪৯২ সালে কলম্বাস যখন নতুন ভূমি আবিষ্কারে মত্ত, তখন আমেরিগো ব্যবসায়িক দলিলের ভারে ছটফট করছিলেন। ১৪৯৬ সালে কলম্বাস যখন তার ভ্রমণ শেষে দেশে ফেরত আসেন, তখন সর্বপ্রথম আমেরিগো-ক্রিস্টোফার সাক্ষাৎ হয়েছিলো। মুগ্ধ আমেরিগো সেদিন কলম্বাসকে তার অভিযাত্রিক হওয়ার আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছিলেন। এরপর থেকে আমেরিগোর জীবনে বিচিত্র পরিবর্তন আসে। ব্যবসায়িক দিক থেকে বড় লোকসানের মুখ দেখেন তিনি। এর পেছনে বিধাতার কোনো ইশারা ছিল কি না, তা কেউ জানে না। কিন্তু আমেরিগো এই লোকসানকে এক অপূর্ব সুযোগ হিসেবে দেখলেন। সহসা জানতে পারলেন, স্পেনের মহামান্য রাজা ফার্দিনান্দ এবং রানী ইসাবেলা নতুন দেশ আবিষ্কারে ইচ্ছুক অভিযাত্রিকদের পৃষ্ঠপোষক হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। চল্লিশোর্ধ্ব আমেরিগো এবার আর দেরি করলেন না। ঝুলিতে মানচিত্র আর টেলিস্কোপ হাতে বেরিয়ে পড়লেন নতুনের সন্ধানে।
বিতর্কিত অভিযাত্রিক
পাঠকরা প্রবন্ধের এই পর্যন্ত পড়ার পর নিশ্চয়ই ভাবছেন, আমেরিগো ভেসপুচি কীভাবে বিতর্কিত হয়ে উঠেছেন ইতিহাসবিদদের কাছে? স্পেনের সেভিয়ার ব্যবসায়িক আমেরিগোর জীবনে কোনো শুভঙ্করের ফাঁকি কারো চোখে পড়ার কথা নয়, কারণ সেখানে কোনো ফাঁকি ছিল না। কিন্তু অভিযাত্রিক আমেরিগোর যাত্রা শুরু হয় এক বিতর্কের জন্ম দিয়ে। সেই বিতর্ক ছিল এক চিঠিকে ঘিরে। ইতিহাসবিদ এবং সমসাময়িক অন্যান্য তথ্যমতে, আমেরিগো ভেসপুচির অভিযাত্রা শুরু হয়েছিলো ১৪৯৯ সালে, কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের প্রায় ৭ বছর পরে। সেবছর তিনি দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের উত্তরাংশে পৌঁছান। ঘন অরণ্যে ঢাকা সেই অঞ্চল বিচরণকালে তিনি বর্তমান পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী আমাজনের মুখোমুখি হন। কিন্তু কলম্বাসের মতোই আমেরিগো নিশ্চিত ছিলেন না এটি নতুন কোনো ভূমি। তিনি এটিকে ভারতবর্ষের অনাবিষ্কৃত অংশ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। এজন্য তিনি ভুলক্রমে এক উপসাগরের নাম রাখেন গঙ্গা উপসাগর।
কিন্তু এক রহস্যময় চিঠির মাধ্যমে পৃথিবী জানতে পারে ভিন্ন কথা। ফ্লোরেন্সের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর আমেরিগো ভেসপুচি স্বাক্ষরিত সেই চিঠিটি ১৪৯৭ সালে ডাকে ফেলা হয়েছিলো। সেখানে জানা যায়, আমেরিগো ভেসপুচি সেই বছর বাহামাস এবং কেন্দ্রীয় আমেরিকা অঞ্চলের বিভিন্ন দ্বীপে অভিযান পরিচালনা করেছেন। কিন্তু ইতিহাসবিদরা জানেন, আমেরিগো তখনও কোনো অভিযানে বের হননি। চিঠির ভাষ্যমতে, ১৪৯৭ ছিল তার প্রথম অভিযান। ১৪৯৯ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো অভিযানে বের হয়েছিলেন। চিঠির কথা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে আমেরিগো ভেসপুচি কলম্বাসের এক বছর পূর্বে ভেনেজুয়েলা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এই চিঠির যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকের মতে, চিঠিটি অভিযাত্রিক যুগের সবচেয়ে বড় প্রতারণা। এই চিঠির সূত্র ধরে অনেকে আমেরিগো ভেসপুচিকে প্রতারক অভিযাত্রিক হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন।
বিতর্কের বাইরে অসাধারণ আমেরিগো
আমেরিগোর জীবন থেকে যদি আমরা এই বিতর্কিত চিঠিকে বাদ দিয়ে দিই, তাহলে আমরা আবিষ্কার করবো এক নতুন আমেরিগোকে। বনেদি ব্যবসায়ী থেকে স্বপ্নালু অভিযাত্রিকে পরিণত হওয়া আমেরিগো তখন ছুটছেন নতুনত্বের পানে। ১৪৯৯ এর অভিযানে আলোঞ্জো ডি ওডেহা নামক এক নাবিকের অধীনে তিনি স্প্যানিশ পতাকা উড়িয়ে যাত্রা শুরু করেন। বর্তমান গায়ানা পর্যন্ত যাওয়ার পর তিনি একাই বাকি পথ পাড়ি দেন। প্রথম অভিযানে তিনি আবিষ্কার করেন এক নদী। আমেরিগো ভেসপুচি আবিষ্কৃত সেই বিশাল নদীর মায়ায় আবদ্ধ অরণ্যানীর মাঝে সুপ্ত ছিল এক অন্ধকার মহাদেশ। সেই ঐতিহাসিক নদীটি বর্তমান আমাজন।
১৫০১ সালের ১৪ মার্চ শুরু হয় তার দ্বিতীয় অভিযান। কিন্তু সেবার তিনি পর্তুগিজ পতাকা উড়িয়ে যাত্রা করেছিলেন। এটি ছিল আমেরিগোর অভিযাত্রিক জীবনের সবচেয়ে সফল অভিযান। সেবার তিনি রিও ডি জেনেইরো এবং রিও ডি লা প্লাটা নামক দুটি নদী আবিষ্কার করেছিলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তখনও তিনি বিশ্বাস করতেন এই ভূমি ভারতবর্ষের অনাবিষ্কৃত অংশ। তবে অচিরেই তার ভুল ভাঙে। তিনি বুঝতে পারেন, এটি ভারতবর্ষ নয়; বরং মানবচক্ষুর আড়ালে থাকা এক নতুন মহাদেশ। আর এই মহাদেশের আবিষ্কর্তা তিনি। প্রশ্ন করতে পারেন, তিনি কীভাবে তার ভুল বুঝতে পেরেছিলেন? ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, তিনি আকাশের তারকারাজির অবস্থান সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান রাখতেন। তারকার অবস্থান বিবেচনা করে তিনি জাহাজের অবস্থান নির্ণয় করতে পারতেন। নতুন ভূখণ্ডে অবস্থানকালে তিনি লক্ষ করলেন, আকাশের তারকার অবস্থান ভারতবর্ষের চেয়ে আলাদা। তার সন্দেহ প্রমাণের জন্য তিনি ৪০০ মাইল দক্ষিণে ভ্রমণ করে এক নতুন দ্বীপ আবিষ্কার করেন, যা মানচিত্রের হিসেবের পরিপন্থী ছিল। এভাবে তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি তার নতুন ভূখণ্ডে বিচরণ করেন এবং স্থানীয়দের সাথে আলাপ করার চেষ্টা করেন। এর ঘটনাপ্রবাহে তিনি বিভিন্ন রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন।
পরবর্তীতে তিনি তার এই অভিজ্ঞতার কথা চিঠির মাধ্যমে ইউরোপের বন্ধুদের সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন। তার এই চিঠিগুলো কিন্তু ভুয়া ছিল না! স্থানীয়দের সংস্কৃতি, সামাজিক ব্যবস্থা, জীবনধরন নিয়ে রচিত এই পত্রগুলো পরবর্তী সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়।
আমেরিগো থেকে আমেরিকা
আমেরিগো ভেসপুচি আমেরিকা মহাদেশের প্রথম আবিষ্কর্তা নন। তার পূর্বে কলম্বাসসহ বেশ ক’জন অভিযাত্রিক আমেরিকার বুকে পদার্পণ করেছেন। কিন্তু তারপরেও মহাদেশের নামকরণের সময় সেটি ‘কলম্বিয়ানা’ না হয়ে আমেরিকা হওয়ার পেছনে মূল কারণ, আমেরিগো ছিলেন নব্য আবিষ্কৃত ভূমিকে মহাদেশ হিসেবে দাবি করা সর্বপ্রথম অভিযাত্রিক। ১৫০৭ সালের দিকে ফ্রান্সের একটি পাঠাগারে গবেষণাকালীন এক পণ্ডিত ‘কসমোগ্রাফি ইন্ট্রোডাকশিও’ নামক একটি মানচিত্র পুস্তকের সন্ধান পান। এর প্রতিটি পাতায় বেশ সূক্ষ্মভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের মানচিত্র অঙ্কিত ছিল। এর মধ্যে কলম্বাস, আমেরিগোর নতুন মহাদেশও অন্তর্ভুক্ত ছিল। পুস্তকের প্রধান নকশাকার মার্টিন ভাল্ডজিমুলার সেখানে নতুন মহাদেশের দক্ষিণাংশের নাম ‘আমেরিকা’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আমেরিকা শব্দটি মূলত আমেরিগোর স্ত্রীবাচক শব্দ। তিনি এর কারণ হিসেবে আবিষ্কারকের প্রতি যথার্থ সম্মাননা প্রদানের যুক্তি দেখিয়েছেন।
এই ঘটনার এক দশক পর মার্কাটর নামক এক মানচিত্রকার তার নকশাতে উত্তর ও দক্ষিণ দুই অংশের নামকরণে আমেরিকা শব্দটি ব্যবহার করেন। তাছাড়া আমেরিকা শব্দটির মাঝে একটি সুন্দর অনুরণন আছে, যা খুব সহজে গবেষকদের মাঝে প্রচলিত হয়ে গেলো। ধীরে ধীরে আমেরিকা শব্দের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। দক্ষিণের মহাদেশ থেকে একসময় সেটা কলম্বাস আবিষ্কৃত অঞ্চলের নামকেও গ্রাস করে ফেলে। এভাবে আমেরিগো ভেসপুচি জিতে গেলেন কলম্বাসের সাথে।
শেষের গল্প
পরবর্তী সময়ে তিনি আরো দু’বার আমেরিকা অঞ্চল অভিযান পরিচালনা করেছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নতুন কিছু আবিষ্কার করতে ব্যর্থ হন। এজন্য তার শেষ জীবনের অভিযান নিয়ে ইতিহাসে তেমন কিছু বর্ণিত নেই। তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৫০৫ সালে স্পেন রাজপরিবার তাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করেন। এর তিন বছর পর তাকে সম্মানজনক‘পাইলট মেজর’ পদবীতে ভূষিত করা হয়। একজন পাইলট মেজরের দায়িত্ব ছিল নিজের অভিযাত্রিক অভিজ্ঞতাকে রাজতন্ত্রের উপকারে ব্যয় করা। আমেরিগো ভেসপুচি আমৃত্যু নিষ্ঠার সাথে এই পদে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
কিন্তু একবার সেভিয়া শহরে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ শুরু হয়। আমেরিগো নিজে সেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হন। শেষপর্যন্ত তাকে ম্যালেরিয়ার কাছে হার মানতে হয়। ১৫১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সেভিয়াতে মৃত্যুবরণ করেন এই অসাধারণ অভিযাত্রিক। তাকে তার জন্মস্থান ফ্লোরেন্সে সমাধিত করা হয়। এরই সাথে অবসান ঘটে এক আলোচিত আবিষ্কারকের জীবনগাথার।