ব্র্যাড পিট নামটা শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে আসে রুপালি পর্দার সুদর্শন এক তারকার অবয়ব, যিনি হলিউডে সফল ক্যারিয়ারের পাশাপাশি বিলাসবহুল জীবনযাপন বা সুন্দরী নায়িকাদের সাথে সম্পর্কের সুবাদে সবসময়ই মিডিয়া বা সাধারণ মানুষজনের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন। গত তিন দশকে ইন্টার্ভিউ উইথ দ্য ভ্যাম্পায়ার, ওশেনস ট্রিলজি, ট্রয়, মিস্টার এন্ড মিসেস স্মিথ, ওয়ার্ল্ড ওয়ার জিয়ের মতো বাণিজ্যিকধর্মী ছবির জন্য যেমন তিনি বক্স অফিসে সাফল্যের মুখ দেখেছেন, ঠিক তেমনি টুয়েলভ মাংকিস, বাবেল, দ্য ট্রি অব লাইফ, মানিবলের মতো ছবির মাধ্যমে অভিনেতা হিসেবে নিজের সামর্থ্যটাও ভালোমতোই প্রমাণ করেছেন।
তাকে সবসময়য় খ্যাতির শীর্ষে দেখে যারা অভ্যস্ত; তাদের অনেকেরই হয়তো জানা নেই যে, হলিউডে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য প্রথমদিকে তার বহু কাঠখড় পোহাতে হয়েছিল। ১৯৮৬ সালে হঠাৎ করে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া ছেড়ে অভিনেতা হওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি মিসৌরি থেকে লস অ্যাঞ্জেলসে পাড়ি জমিয়েছিলেন, তখন তার পকেটে ছিল মাত্র ৩২৫ ডলার।
মিসৌরিতে বড় হলেও তার জন্ম হয়েছিল ওকলাহামা অঙ্গরাজ্যের শনি অঞ্চলে (ডিসেম্বর ১৮, ১৯৬৩), বিনোদন জগতে সবাই তাকে ‘ব্র্যাড’ নামে ডাকলেও তার পুরো নাম উইলিয়াম ব্র্যাডলি পিট। জন্মের কিছু সময় পর তার মা-বাবা তাকে নিয়ে মিশৌরির স্প্রিংফিল্ড অঞ্চলে চলে আসেন। তার বাবা ছিলেন পেশায় একজন ট্রাক ব্যবসায়ী ও মা স্কুল শিক্ষিকা। পরিবারের তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবার বড়। স্কুলে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন পিট। চলচ্চিত্রের ব্যাপারে ঐ সময় তার আগ্রহ থাকলেও অভিনেতা হওয়ার কথা তখনো ভাবেননি তিনি। স্কুল-কলেজের পড়া শেষে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ার জন্য তিনি ১৯৮২ সালে মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষদিকে এসে বিষয়টির উপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এবং চলচ্চিত্রের প্রতি দুর্বলতার কারণে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, অভিনেতা হওয়ার অন্তত একবার চেষ্টা করে দেখবেন।
কিন্তু অতীতে তার অভিনয়ের কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না বলে, লস অ্যাঞ্জেলেসে আসার পর প্রথম দিকে কোনো কাজই পাননি তিনি। টাকা-পয়সার জন্য ঐ সময় স্ট্রিপারদের ভাড়া করা গাড়ি চালানো, মেক্সিকান রেস্টুরেন্টে মাস্কট সেজে দাঁড়িয়ে থাকা, মানুষজনের বাসায় ফ্রিজ ডেলিভারি ইত্যাদি কাজ করেই চলতে হতো তাকে। স্ট্রিপারদের গাড়ি চালাতে গিয়েই একদিন তিনি অভিনয় শিক্ষক রয় লন্ডনের সন্ধান পেয়েছিলেন। এ ব্যাপারে পিট একটি সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, “স্ট্রিপারদের ব্যাচেলর পার্টিতে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পার্টি চলাকালীন সময় তাদের টাকা সংগ্রহ বা পোশাক ধরার কাজগুলো আমাকেই করতে হতো। স্বাভাবিকভাবেই পরিস্থিতিটা আমার জন্য সুখকর ছিল না। কিন্তু একরাতে ডিউটি করার সময়ই এক মেয়ের সাথে পরিচয় হয়, যার কাছে থেকে আমি রয় লন্ডনের কথা জানতে পারি। এরপর আমি উনার অভিনয় ক্লাসে ভর্তি হয়ে যাই এবং এর ফলেই আজ আমি অভিনেতা হিসেবে এতদূর আসতে পেরেছি। সুতরাং স্ট্রিপাররাই আমার জীবন পাল্টে দিয়েছিল।”
১৯৮৭ সালে অভিনেতা হিসেবে পিটের অভিষেক হয়েছিল। ঐ সময় বেশ কিছু টিভি অনুষ্ঠানে অতিথি চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি নো ওয়ে আউট, নো ম্যান’স ল্যান্ড, লেস দ্যান জিরো ইত্যাদি ছবিগুলোতে এক্সট্রা হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। ঐ ছবিগুলোতে এক বা দুই দৃশ্যে তাকে একপলকের জন্য দেখা গিয়েছিল। আর দশজন জুনিয়র আর্টিস্টের মতো পিট ছবিতে নিজের একটা সংলাপ পাওয়ার আশায় মুখিয়ে থাকতেন, সেটা যতোই ছোট হোক না কেন। ক্যামেরার সামনে সংলাপ বলার জন্য তিনি এতোটাই মরিয়া ছিলেন যে নো ম্যান’স ল্যান্ড ছবির শুটিং এর সময় ওয়েটারের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে জোর করেই নিজে থেকে একটা লাইন বলে ফেলেছিলেন, সাথে সাথেই পরিচালক তাকে ছবি থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে আরো কিছু টিভি অনুষ্ঠানে ছোটখাটো চরিত্রে ও স্বল্প বাজেটের সাদামাটা কিছু ছবির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে তাকে দেখা যায়। পিট প্রায়ই অকপটে বলে বেড়ান যে, তার তখনকার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায় যে অভিনেতা হিসেবে তিনি কতোটা দুর্বল ছিলেন।
তবে ১৯৯১ সালে রিডলি স্কট পরিচালিত থেলমা এন্ড লুইসে ছোটখাটো কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুবাদে আবেদনময়ী তরুণ অভিনেতা হিসেবে ইন্ডাস্ট্রির অনেকেরই নজরে এসেছিলেন। এব্যাপারে পিট বলেছিলেন, “ছবিটি করে অবশ্যই আমি রাতারাতি তারকা বনে যায়নি, তবে এই ছবির সুবাদেই পরবর্তীতে বিভিন্ন কাজ পেতে সুবিধা হয়েছিল।”
এরপর তিনি অস্কারজয়ী নির্মাতা রবার্ট রেডফোর্ডের অ্যা রিভার রানস থ্রু ইট এর প্রধান দুই চরিত্রের একটিতে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু অডিশনটা এতোই বাজে হয়েছিল যে ছবিতে সুযোগ পাওয়ার কোনো আশাই ছিল না, কিন্তু এতে দমে যাননি তিনি। বাসায় এসে ছবির একটি দৃশ্যে নিজের অভিনয়ের ভিডিও করে সেটা পরিচালকের কাছে পাঠিয়েছিলেন। অবশেষে এই ভিডিও দেখেই ছবিতে পিটকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রেডফোর্ড। ১৯৯২ সালে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর পিট তার অভিনয়ের জন্য চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের প্রশংসা পেয়েছিলেন।
১৯৯৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়া নামক ছবিতে ব্র্যাড পিটকে একজন সাইকোপ্যাথ খুনীর চরিত্রে দেখা যায়। ছবিটি বক্স অফিসে ব্যবসা করতে না পারলেও তার অভিনয় কিংবদন্তি চলচ্চিত্র সমালোচক রজার ইবার্টকে মুগ্ধ করেছিল। ছবিটি দেখার পর পিট সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, “সে আর দশটা উঠতি অভিনেতাদের মতো নয়, সে অনেক প্রতিভাবান।”
১৯৯৪ সালটা ছিল তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। সেবছর ইন্টার্ভিউ উইথ দ্য ভ্যাম্পায়ার ও লিজেন্ডস অব দ্য ফলের মতো দু’টি ব্যবসাসফল ছবিতে অভিনয় করে হলিউডে তারকা হিসেবে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে ফেলেছিলেন পিট। বিশেষ করে পিরিয়ড ফ্যামিলি ড্রামা লিজেন্ডস অব দ্য ফল দেখে অনেকেই তাকে হলিউড কিংবদন্তি জেমস ডিনের সাথে তুলনা করেছিলেন। এডওয়ার্ড জুইক পরিচালিত এই ছবিটিতে অভিনয়ের জন্য তিনি গোল্ডেন গ্লোবে সেরা অভিনেতার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
১৯৯৫ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত দুই ছবি সেভেন এবং টুয়েলভ মাংকিস। মাঝারি বাজেটে নির্মিত দুটি ছবিই বক্স-অফিসে খুব ভালো ব্যবসা করেছিল। ডেভিড ফিঞ্চার পরিচালিত সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার সেভেনে পিট একজন অনভিজ্ঞ ও মাথা গরম ডিটেকটিভের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ৩০ মিলিয়ন ডলার বাজেটে নির্মিত এই ছবিটি বক্স অফিসে ৩২৭ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিল। মজার বিষয় হচ্ছে, ছবিটিতে পিটের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথমে ডেনজেল ওয়াশিংটনকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেন। কিন্তু পরে ছবিটি দেখার পর তিনি খুব আফসোস করেছিলেন। অন্যদিকে টেরি গিলিয়াম পরিচালিত সাই-ফাই থ্রিলার টুয়েলভ মাংকিজসে একজন মানসিক রোগীর চরিত্রে দেখা যায় পিটকে। ছবির চরিত্রের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে শুটিং শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগে তিনি ফিলাডেলফিয়ার টেম্পল ইউনিভার্সিটি হসপিটালের সাইকিয়াট্রিক ওয়ার্ডে নিয়মিত গিয়ে সেখানকার রোগীদের কার্যকলাপ মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করতেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে টেরি গিলিয়ামের সন্দেহ ছিল যে এরকম জটিল একটা চরিত্রে পিট আদৌ অভিনয় করতে পারবেন কি না, তিনি এই চরিত্রে আরো অভিজ্ঞ কোনো অভিনেতাকে চেয়েছিলেন। কিন্তু ছবিটিতে দুর্দান্ত অভিনয় করে পরিচালকের আশংকাকে উড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি গোল্ডেন গ্লোবে সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার জিতেছিলেন এবং মর্যাদাপূর্ণ অস্কারেও প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
তবে পরবর্তীতে তার অভিনীত সেভেন ইয়ার্স ইন তিব্বত (১৯৯৭), দ্য ডেভিলস অউন (১৯৯৮), মিট জো ব্ল্যাক (১৯৯৮) সমালোচকদের হতাশ করেছিল এবং বক্স অফিসেও আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেনি। বিশেষ করে মিট জো ব্ল্যাক এ মৃত্যুদূতের চরিত্রে তার অভিনয়টা খুব সমালোচিত হয়েছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৯ সালে ফাইট ক্লাব ছবিটিও মুক্তির পর দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ ছিল। কিন্তু এই ছবির ব্যাপারে পিট নিজে খুব সন্তুষ্ট ছিলেন, দর্শক ও চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের সমালোচনায় জর্জরিত হওয়ার পরও তিনি ঐসময় খুব আত্মবিশ্বাসের সাথেই সহ-তারকা এডওয়ার্ড নর্টনকে বলেছিলেন, “এটা আমার সেরা ছবি।”
পিট তখন ভুল বলেননি, কারণ সময়ের সাথে সাথে ফাইট ক্লাবের জনপ্রিয়তা বাড়তে বাড়তে এটি এখন কাল্ট ক্লাসিকে পরিণত হয়েছে। চাক প্যালাহনিউকের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিটিতে টাইলার ডারডেনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি, যে হতাশাগ্রস্ত মানুষজনদের নিয়ে একটি ফাইট ক্লাব গড়ে তুলেছিল। ডেভিড ফিঞ্চারের এই ছবিতে টাইলার ডারডেন চরিত্রে পিট এতোটাই দারুণ ছিলেন যে এই চরিত্রে তাকে ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনা করা অসম্ভব।
এরপর তাকে দেখা যায় ব্রিটিশ ডার্ক কমেডি স্ন্যাচে, যেখানে তিনি আইরিশ জিপসি বক্সারে ওয়ান পাঞ্চ মিকির চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছিলেন। ২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিটিতে তার জিপসি অ্যাক্সেন্টের কথাবার্তা দর্শকদের ভালোই বিনোদন দিয়েছিল।
ঐ বছরই তিনি অভিনেত্রী জেনিফার অ্যানিস্টনকে বিয়ে করেছিলেন। অ্যানিস্টনের সাথে প্রেমের পূর্বে জুলিয়েট লুইস, থ্যান্ডি নিউটন, গিনেথ প্যালট্রোসহ আরো অনেক সহ-তারকাদের সাথেই সম্পর্ক ছিল তার।
পরবর্তীতে ওশেনস ইলেভেন (২০০১), ট্রয় (২০০৪), মিস্টার এন্ড মিসেস স্মিথ (২০০৫) এর মতো বাণিজ্যিকধর্মী ছবিগুলো বক্স অফিসে খুব ভালো ব্যবসা করেছিল।
অভিনয়ের পাশাপাশি ২০০২ সালে প্রযোজনা কোম্পানি প্ল্যান বি এন্টারটেইনমেন্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রযোজক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছিলেন পিট।
রোমান্টিকধর্মী একশন-থ্রিলার মিস্টার এন্ড মিসেস স্মিথ এর শুটিং চলাকালীন সময় পিট তার সহ-তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলির প্রেমে পড়ে যান, ফলে ২০০৫ সালের শুরুতে স্ত্রী জেনিফার অ্যানিস্টনের সাথে তার বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
২০০৬ সালে মেক্সিকান নির্মাতা আলেহান্দ্রো গঞ্জালেজ ইনারিতুর ড্রামা ছবি বাবেল এ কেট ব্ল্যানচেটের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন পিট। মুক্তির পর ছবিটি ব্যাপক প্রশংসা লাভ করেছিল এবং পিট গোল্ডেন গ্লোবে সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
২০০৭ সালে দ্য অ্যাসাসিনেশন অব জেসি জেমস বাই দ্য কাওয়ার্ড রবার্ট ফোর্ড এ বুনো পশ্চিমের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ দস্যু জেসি জেমসের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। জেসি জেমস চরিত্রে অতীতে প্রচুর অভিনেতারা অভিনয় করলেও পিটের অভিনয়টাকেই সেরা ধরা হয়।
২০০৮ সালে ডেভিড ফিঞ্চার পরিচালিত দ্য কিউরিয়াস কেইস অব বেঞ্জামিন বাটন এর জন্য পিট অস্কারে প্রথমবারের মতো সেরা অভিনেতার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এফ স্কট ফিটজগেরাল্ডের ছোটগল্প অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিটি বক্স অফিসে ৩৩৪ মিলিয়ন ডলার আয়ের পাশাপাশি অস্কারে মোট ১৩টি শাখায় মনোনয়ন পেয়েছিল। এছাড়াও ঐ বছর কোয়েন ব্রাদার্সের ডার্ক কমেডি বার্ন আফটার রিডিং এ গর্দভ প্রকৃতির এক জিম ইন্সট্রাক্টরের চরিত্রে দারুণ অভিনয়ের জন্য বাফটায় সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
২০০৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে বানানো কোয়েন্টিন ট্যারান্টিনোর ছবি ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস এ লেফট্যান্যান্ট আইডো রেইনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ছবিটি অস্কারে ৮টি শাখায় মনোনয়নের পাশাপাশি বক্স অফিসে ৩১১ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিল।
২০১১ সালে তার অভিনীত ও প্রযোজিত দুই ছবি দ্য ট্রি অফ লাইফ এবং মানিবল সমালোচকদের মন জয় করে নিয়েছিল। টেরেন্স মালিক পরিচালিত দ্য ট্রি অফ লাইফ কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবির পুরস্কার জিতেছিল, অন্যদিকে স্পোর্টস ড্রামা মানিবল এ জনপ্রিয় বেসবল ম্যানেজার বিলি বিনের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে অস্কারে দ্বিতীয়বারের মতো সেরা অভিনেতার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রাইম ড্রামা কিলিং দেম সফটলি এ তিনি একজন মব হিটম্যানের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ২০১৩ সালে তার অভিনীত ও প্রযোজিত জোম্বি থ্রিলার ওয়ার্ল্ড ওয়ার জি বক্স অফিসে ৫৪০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিল। এছাড়াও একই বছর মুক্তি পাওয়া টুয়েলভ ইয়ার্স এ স্লেইভ প্রযোজনার জন্য তিনি অস্কারে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কারটাও জিতে নিয়েছিলেন।
ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস এর পর ২০১৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে বানানো আরেকটি ছবি ফিউরি এ অভিনয় করেছিলেন। ছবিটি বক্স অফিসে ভালোই ব্যবসা করেছিল এবং পিট ও তার সহ-তারকারা ছবিতে তাদের অভিনয়ের জন্য প্রশংসা লাভ করেছিলেন। ঐ একই বছর পিট তার দীর্ঘদিনের সঙ্গিনী অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে বিয়ে করেছিলেন। পিট ও জোলির ৬ সন্তান রয়েছে, এদের মধ্যে অবশ্য ৩ সন্তানই দত্তক নেয়া।
মিস্টার এন্ড মিসেস স্মিথের পর পিট দ্বিতীয়বারের মতো অ্যাঞ্জেলিনা জোলির বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন ড্রামা ছবি বাই দ্য সি এ, জোলি নিজেই ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু ছবিটি সমালোচিত হওয়ার পাশাপাশি বক্স অফিসেও ফ্লপ ছিল।
২০১৬ সালে অস্কারজয়ী নির্মাতা রবার্ট জিমেকিসের রোমান্টিকধর্মী স্পাই-থ্রিলার অ্যালাইড এ ফরাসী অভিনেত্রী মারিয়ন কোতিয়ার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন পিট, কিন্তু ছবিটি বক্স অফিসে সুবিধা করতে পারেনি। ২০১৭ সালে নেটফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত তার স্যাটায়ারধর্মী ছবি ওয়ার মেশিন ও সমালোচকদের সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ ছিল।
সর্বশেষ কিছু ছবির ব্যর্থতার পাশাপাশি ২০১৬ সালে অ্যাঞ্জেলিনা জোলির সাথে বিবাহ-বিচ্ছেদ, অতঃপর বাচ্চাদের দেখাশুনার দায়িত্ব নিয়ে জোলির সাথে দীর্ঘ আইনি লড়াই – সবকিছু মিলিয়ে সময়টা খুব একটা ভালো কাটছিলো না পিটের। তবে এই বছর ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন হলিউড ও এড আস্ট্রা – এই দুই ছবিতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।
১৯৬৯ সালের হলিউডের প্রেক্ষাপট নিয়ে বানানো ছবি ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন হলিউড এ ক্লিফ বুথ নামক এক দুঃসাহসী স্টান্টম্যানের চরিত্রে পিটের অভিনয় খুব সহজেই দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে যে আগামী বছরের শুরুতে সেরা পার্শ্ব অভিনেতার অস্কারটা তার হাতেই উঠবে। একইভাবে স্পেস ড্রামা এড আস্ট্রা-য় অ্যাস্ট্রোনাট রয় ম্যাকব্রাইডের চরিত্রে অভিনয়ের জন্যও ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছেন।
প্রায়ই বলা হয়ে থাকে যে চলচ্চিত্র তারকারা সাধারণত চরিত্রাভিনেতা হিসেবে সুবিধা করতে পারেন না। কিন্তু পিট হলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় তারকা হওয়ার পাশাপাশি চরিত্রাভিনেতা হিসেবেও যথেষ্ট সফল। স্যার এন্থনি হপকিন্স একবার তার সম্পর্কে বলেছিলেন, “সে একজন চরিত্রাভিনেতা, যে কিনা তারকার শরীরে বন্দি।”
বয়স এখন ৫৬ হয়ে গেলেও বিনোদন জগতে সামনেও ব্র্যাড পিটের দাপট কমবে বলে হয় না। ২০১৯ সালের মতো সামনেও যেন তিনি নিয়মিত ভালো ছবি উপহার দেন – তার জন্মদিনে এটাই ভক্তদের প্রত্যাশা।