Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ড. ডেভিড লিভিংস্টোন: এক দুর্দমনীয় অভিযাত্রীর রোমাঞ্চকর জীবনগাথা

সাল ১৮৫৬, ব্রিটেন। দেশে এক যাযাবর ধর্মপ্রচারক এলেন। নাম তাঁর লিভিংস্টোন, ডেভিড লিভিংস্টোন। তাঁকে ঘিরে আমজনতা থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী মহল- সকলের মাঝেই উন্মাদনা, উত্তেজনা আর কৌতূহলের এক অভূতপূর্ব সমাবেশ। বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও তখন উৎসবের আমেজ। কেম্ব্রিজ যদি তাঁকে বক্তৃতা দিতে ডাকে, তো অক্সফোর্ড তাঁকে দেয় অনারারি ডক্টরেট- এ যেন সম্মান প্রদানের এক উদ্দাম ইঁদুরদৌড়!

কিন্তু কী এমন বিশেষত্ব এই ভবঘুরে মানুষটির? তিনি কি নিছকই একজন মিশনারি, নাকি আরো কিছু? কোথা থেকেই বা এলেন তিনি? ছুটছেনই বা কীসের পিছু?  

ডক্টর ডেভিড লিভিংস্টোন; Image Source: livingstoneonline.org 

স্কটল্যান্ডের ছোট শহর ব্লানটায়ার। এখানেই ছিল নিল ও অ্যাগনেস লিভিংস্টোনের বসবাস। ১৮১৩ সালে এই দম্পতির কোল আলো করে জন্ম হয় ডেভিডের। শৈশব থেকেই ছেলেটি ছিল সংগ্রামী। মাত্র ১০ বছর বয়সে তাকে যোগ দিতে হয়েছিল কাপড়ের কলে। সকাল ছ’টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত হাড়ভাঙা খাটুনির পর ডেভিড করতো লেখাপড়া, নিজের গরজে।

বয়স যখন উনিশ তখন নিজের জমানো টাকা সম্বল করে ডেভিড ভর্তি হয়ে যায় গ্লাসগো শহরের অ্যান্ডারসন কলেজে। তালিম নিতে শুরু করে চিকিৎসা শাস্ত্রে। স্বপ্ন, দেশ-বিদেশে ঘুরে ধর্মপ্রচার করার আর চিকিৎসা সেবা দেওয়ার। সেই স্বপ্ন তার সফল হয়েছিল। পরবর্তী জীবনে ডাক্তার লিভিংস্টোনের চিকিৎসা ক্ষেত্রের বিস্তৃতি ছিল বিশাল। ধাত্রীবিদ্যা, চক্ষুচিকিৎসা, টিউমার অপসারণসহ যক্ষা এবং যৌনব্যাধির প্রতিবিধানও তিনি করতেন স্বচ্ছন্দে। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, অর্থাৎ ১৮৩০ এর দশকে, ইংরেজ চিকিৎসা পদ্ধতিতেও সাধারণ চিকিৎসা এবং শল্যচিকিৎসা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি পেশা। কিন্তু লিভিংস্টোন ছিলেন সব্যসাচী, ছিলেন এহেন শ্রেণীবিভাজনের উর্ধ্বে।

তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে স্কটিশ প্রগতিশীলতা ও বাস্তববাদীতার প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। নবযৌবনে দর্শন ও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক থমাস ডিকের রচনা তাঁর ব্যক্তিত্বকে দারুণভাবে আন্দোলিত করে। ডিকের লেখা পড়েই লিভিংস্টোন জানতে পারেন, ধর্ম ও বিজ্ঞান পরস্পরের শত্রু নয়, বরং পরম বন্ধু।

১৮৩৮ এ তিনি লন্ডন মিশনারি সোসাইটিতে যোগদান করেন। এসেক্সের চিপিং অংগারে ধর্মতত্ত্বের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন এবং লন্ডনে চিকিৎসা বিষয়ে আরো পড়াশোনা করেন। মোদ্দাকথা, তাঁর পরিকল্পিত ভবিষ্যতের কর্মপ্রবাহে নিজেকে ভাসিয়ে দেবার সকল আয়োজনই তিনি সুসম্পন্ন করেন। কিন্তু তাঁকে ঘিরে অদৃষ্টের পরিকল্পনা হয়তো অন্য কিছু ছিল, এমন কিছু যা হয়তো স্বদেশ ত্যাগ করার আগে স্বয়ং লিভিংস্টোনের কাছেও ছিল কল্পনাতীত!

নাগামী হ্রদের তীরে লিভিংস্টোন; Image Source: livingstoneonline.org 

ইচ্ছে ছিল সুদূর চীন দেশে পাড়ি জমানোর। কিন্তু ১৮৩৯ এর আফিম যুদ্ধের কারণে সেটা সম্ভব হলো না। পা বাড়াতে হলো দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে। ১৮৪১ সালে গন্তব্যে পৌঁছান ধর্মপ্রচারক লিভিংস্টোন। সেখানকার বিভিন্ন স্থানে ধর্মপ্রচার করে আর চিকিৎসাসেবা দিয়ে কাটিয়ে দেন সুদীর্ঘ ১১টি বছর। এই সময়ের ভেতর স্থানীয় ভাষা রপ্ত করা ও ধর্মপ্রচারের নতুন এলাকা অনুসন্ধানের জন্য তিনি মাঝে মাঝে উত্তর দিশায় যাত্রা করতেন। সঙ্গে থাকতো স্থানীয় আস্থাভাজন আদিবাসীরা। এই সব ছোটখাট ভ্রমণ তাঁর ভেতরে ভ্রমণের এক উদগ্র নেশার উদ্রেক করে। আর সেই নেশাকে আরো বেশি তীব্র করে তোলে মধ্য আফ্রিকায় অবস্থিত এক হ্রদের গল্প এবং মাকোলোলো জাতির সর্দার সেবিচুয়েনের সাথে দেখা করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা। লিভিংস্টোন অজানা পথের ডাকে হয়ে ওঠেন দিশেহারা।

কথায় আছে, “ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়”। স্বপ্নবাজ লিভিংস্টোনের ইচ্ছেগুলোও উপায় খুঁজে পেল। ১৮৪৯ সালে ইংরেজ অভিযাত্রী উইলিয়াম কটন অসওয়েলের সহযোগিতায় তিনি পৌঁছে গেলেন নাগামী হ্রদের তীরে। দেখা হলো মাকোলোলো গোষ্ঠীর সর্দারের সাথে। এই দুঃসাহসিক অভিযানের স্বীকৃতিস্বরূপ পরবর্তীকালে যুক্তরাজ্যের রয়্যাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি  তাঁকে ভূষিত করে বিশেষ সম্মানে।

এবার লিভিংস্টোনের স্বপ্নালু চোখে ভর করলো নতুন স্বপ্ন। মহাদেশেটির অভ্যন্তর থেকে সমুদ্রতট পর্যন্ত একটি সুগম্য পথ খুঁজে বের করতে চাইলেন তিনি- আফ্রিকার সৌন্দর্য, ঐশ্বর্য এবং বিবিধ বৈচিত্র গোটা পৃথিবীর সামনে মেলে ধরার উদ্দেশ্যে। এই স্বপ্ন রঙিন হয়ে উঠলো উত্তর দিশায় এক সুদীর্ঘ নদীর অস্তিত্ব আছে জেনে। লিভিংস্টোন অনুমান করলেন, এই নদীই  হতে পারে তাঁর কাঙ্ক্ষিত হাইওয়ে, যেটা গোটা আফ্রিকা মহাদেশকে জুড়ে দেবে সভ্য দুনিয়ার সঙ্গে। ১৮৫১ সালের আগস্ট মাসে তিনি পৌঁছে গেলেন সেই দীর্ঘাঙ্গীনী নদীর তীরে, অর্থাৎ জাম্বেসি নদীর তীরে। এবং অল্প সময়ের মধ্যেই বুঝতে পারলেন, তাঁর অনুমান মিথ্যে নয়!

১৮৫২ সালে লিভিংস্টোন তাঁর স্ত্রীকে ব্রিটেনে পাঠিয়ে দেন, যাতে করে তিনি পরবর্তী অভিযানগুলোতে আরো বেশি মনোযোগী হতে পারেন। এই সময়ে তাঁর সার্বক্ষণিক সহচর ছিলো সর্দার সেবিচুয়েনের ছেলে সেকেলেতু। 

১৮৪৯ থেকে ১৮৫৬ পর্যন্ত লিভিংস্টোন হেঁটেছিলেন এই পথে; Image Source: livingstoneonline.org 

এখানে বলে রাখা ভালো, আমরা প্রায়শই ভৌগোলিক অভিযাত্রী বা অন্বেষকদের বীরোচিত ও সর্বগুণসম্পন্ন মূর্তিতে কল্পনা করতে পছন্দ করি। কিন্তু বাস্তবের রক্তমাংসের অভিযাত্রীদের বেশিরভাগই মোটেও আমাদের কল্পনার বীরপুরুষ নয়। তারাও আমাদেরই মতো সাধারণ মানুষ। আর সাধারণ বলেই সাহায্যপ্রত্যাশী। তাঁরা স্থানীয় লোকেদের ভাষাগত দক্ষতা আর অঞ্চলভিত্তিক স্বাচ্ছন্দ্যের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে। তাই প্রতিটি অভিযানের শেষে যে ফলাফলটা আসে, সেটা কখনোই একপক্ষীয় অর্জন বা ব্যর্থতা না- সেটা যৌথ সমাপ্তি! কিন্তু আর্য ঐতিহাসিকেরা বারংবার সেসব অকুতোভয় ভূমিপুত্রদের ভূমিকা বর্ণনা করতে ভুলে যায়। তাদের পাণ্ডুলিপিতে কেবলমাত্র সুসভ্য অভিযাত্রীদের কথারই ঠাঁই হয়! লিভিংস্টোনও তাঁর স্থানীয় বন্ধুদের ওপর দারুণভাবে নির্ভরশীল ছিলেন। তারা তাকে সঠিক দিশা বাতলাতে ও কিছু কিছু আঞ্চলিক ভাষা বুঝতে সহায়তা করতো। 

এক দীর্ঘ এবং বিপদসংকুল ভ্রমণ শেষে লিভিংস্টোন তাঁর দলবল নিয়ে ১৮৫৪ সালের মে মাসে লুয়ান্ডাতে পৌঁছান। কিন্তু যে পথে তারা সেখানে পৌঁছেছিল, সেই পথ বিশেষ পছন্দ না হওয়ায় তারা পুনরায় যাত্রা শুরু করে পূর্ব উপকূলে পৌছানোর সহজতর পথের সন্ধানে। এই অভিযানে লিভিংস্টোন গোটা আফ্রিকা মহাদেশ পাড়ি দেন! এবং পথিমধ্যে স্থানীয় সঙ্গীদের পরামর্শে তিনি ‘মোসি-ওয়া-তুনিয়া’ দর্শনে যান। ‘মোসি-ওয়া-তুনিয়া’ একটি আফ্রিকান আঞ্চলিক নাম, যার অর্থ ‘যে ধোঁয়া বজ্রনাদ করে’। আর এই নামটি যে বস্তুটিকে নির্দেশ করে সেটিকে সমগ্র পৃথিবী আজ ‘ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত’ নামে জানে।

১৮৫৬ সালের মার্চে লিভিংস্টোন মোজাম্বিকের টেটেতে পৌঁছান আর মে মাসে কেলিমেন শহরে। প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে আফ্রিকা মহাদেশ অতিক্রম করায় চতুর্দিকে তখন তাঁর জয়জয়কার। এজন্য এখনও তাঁকে স্মরণ করা হয় পরম শ্রদ্ধায়। কিন্তু একটা কথা আমাদের বিস্মরণ যেন না হয়, লিভিংস্টোনই প্রথম ব্যক্তি নন যিনি আফ্রিকা মহাদেশ পাড়ি দেন। কেননা, তাঁর আগে থেকেই পূর্বনির্ধারিত ক্যারাভান রুটে আরব এবং আফ্রিকান বণিকদের যাতায়াত ছিল এই মহাদেশ ফুঁড়ে।

দীর্ঘকাল আফ্রিকায় কাটিয়ে ১৮৫৬ সালে লিভিংস্টোন প্রথমবার ব্রিটেনে ফেরেন। তাঁর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আভাসই  দেওয়া হয়েছে লেখার শুরুতে। রয়্যাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি তাকে সোনার মেডেল প্রদান করে। বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান তাকে তাঁর ভ্রমণকাহিনী লেখার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকে। একজন প্রকাশক লিভিংস্টোনকে ২০০ গিনি অগ্রিম পারিতোষিক দিয়ে এবং প্রতি সংস্করণের দুই-তৃতীয়াংশ প্রদানের শর্তে চুক্তিবদ্ধ করে। বই বাজারে আসে ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। প্রথম দুটি সংস্করণের যথাক্রমে ১২,০০০ ও ৩০,০০০ কপি বিক্রি হয়ে যায় অল্প সময়ের মধ্যে। 

পোমোনি পোতাশ্রয় থেকে লিভিংস্টোন নিয়াসা অভিযানে বেরিয়েছিলেন; Image Source: livingstoneonline.org 

১৮৫৮ সালের মার্চে লিভিংস্টোন পুনরায় দেশ ছাড়লেন। তিনি তখন জাতীয় বীর, মিশনারির কাজে ইস্তফা দিয়ে পুরোদস্তুর ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত। তাঁর নেতৃত্বে থাকলো জনাছয়েক ইউরোপীয়। সেবারের অভিযানের উদ্দেশ্য ছিলো জাম্বেসি নদীপথে ব্রিটেনের বাণিজ্য বিস্তারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা এবং দাস ব্যবসার বিলোপের উপায় খোঁজা। কিন্তু লিভিংস্টোনের নেতৃত্বশক্তির অভাবে সেই অভিযান সফলতার মুখ দেখেনি। দলের সব সদস্যই হয় ইস্তফা দিয়ে চলে যায়, নয়তো লিভিংস্টোনের দ্বারা বরখাস্ত হয়। 

বলতে গেলে একক উদ্যোগেই তিনি নিয়াসা হ্রদের কিছু অংশ জরিপ করেন এবং এই হ্রদের নতুন নাম দেন লেক অব স্টারস। তবে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে লিভিংস্টোন এই লেকের উত্তরাংশে পৌঁছতে পারেননি। তাই তার পক্ষে গোটা হ্রদটা জরিপ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে ১৮৬২ সালে মিসেস লিভিংস্টোন তাঁর কাছে যান এবং অল্পকাল পরেই চুপাঙ্গা গ্রামে তার মৃত্যু হয়। ১৮৬৩-তে কিছু দাপ্তরিক কারণে তাঁর ডাক পড়ে ব্রিটেনে।

পুনরায় যখন আফ্রিকায় ফিরলেন তখন তিনি সরকারের অবৈতনিক ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি। সে পদের জন্য রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ অতি সামান্য। লিভিংস্টোন তখন কপর্দকশূন্য। সেই দুঃসময়ে তাঁর পাশে দাঁড়ালো তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পুরনো বন্ধু। সেই বন্ধু তাঁকে ১০০০ পাউন্ড দিয়ে সহায়তা করে। 

পূর্বেকার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে লিভিংস্টোন সেবারের অভিযানে কোনো ইউরোপীয়দের দলে ভেড়াননি। এর পরিবর্তে বোম্বাইয়ের কিছু সিপাহী আখড়া আর মিশন স্কুল ঘেঁটে সঙ্গে নেন বেশ কিছু আফ্রিকানকে। জাম্বেসি থেকে আরো কিছু সঙ্গী জুটে যায় তাঁর। কিন্তু এই এতগুলো লোকের ভেতর থেকে শেষাবধি তাঁর সঙ্গে ছিলেন মাত্র ৫ জন। ৭ বছরের সেই অভিযানে লিভিংস্টোন আর তাঁর দলবল পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকার বিশাল অঞ্চল অতিক্রম করেছিল। বর্তমানে সেসব এলাকার মধ্যে পড়ে মোজাম্বিক, তানজানিয়া, মালাউই, জাম্বিয়া এবং কঙ্গোর ডোমিনিক প্রজাতন্ত্র। এই ভ্রমণের সময় লিভিংস্টোন মধ্য আফ্রিকার নদীসমূহের ভাবগতিক সম্পর্কে স্পষ্ট একটি তত্ত্ব দাঁড় করান। 

হেনরি মর্টন স্ট্যানলির সাথে সাক্ষাত হয় লিভিংস্টোনের; Image Source: livingstoneonline.org 

১৮৬৯ এর জুলাই মাসে লিভিংস্টোন উজিজি থেকে লুয়ালাবা নদীর উদ্দেশ্য যাত্রারম্ভ করেন। টাঙ্গানাইকা হ্রদের তীরে উজিজি একটা বাণিজ্য আখড়া। এক দুর্ধর্ষ অভিযানের পর ১৮৭১ সালের মে মাসে তাঁরা নদীতীরের নিয়াংউই নামক এক গ্রামে এসে পৌঁছান। নদীটি জরিপ করার জন্য প্রয়োজনীয় ডোঙার অভাবে বেশ কয়েক মাস তাঁকে সেই গ্রামে অবস্থান করতে হয়। এই সময়ে তিনি নিয়মিতভাবে স্থানীয় বাজারে যেতেন এবং সেখানকার লোকেদের কাছ থেকে ঐ অঞ্চল সম্পর্কে নানাবিধ খোঁজখবর নিতেন। দিনগুলো কাটছিল বেশ। কিন্তু গোল বাঁধালো ঐ অঞ্চলের দাস ব্যবসায়ীরা। তারা স্থানীয় মেনিয়েমা বাজারে নারকীয় এক হত্যাযজ্ঞ চালায়। সেই গণহত্যায় ৩০০-৪০০ লোক প্রাণ হারায়, যাদের অধিকাংশই নারী। 

এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতায় ব্যথিত হয়ে লিভিংস্টোন উজিজি ফিরে যান এবং সেখানে তাঁর সাক্ষাত হয় স্বনামধন্য সাংবাদিক এবং অভিযাত্রী হেনরি মর্টন স্ট্যানলির সাথে। স্ট্যানলি তাঁর একটা বিশেষ সাক্ষাত্কার নেন, যা ইউরোপ এবং আমেরিকা, দুই মহাদেশেই সমানে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। স্ট্যানলির অনেক পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও লিভিংস্টোন সভ্য দুনিয়ায় ফেরেননি। অবশেষে ১৮৭৩ এর এপ্রিলে বর্তমান জাম্বিয়া অঞ্চলের তৎকালিন চিতাম্বো নামক গ্রামে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

Related Articles