তাঁকে বলা হয় থান্ডার শিন ম্যান, আচার্য বজ্রমুনি, শতবর্ষে ফোটা এক ফুল। তিনি বুত্থান মার্শাল আর্টসের জনক, বজ্রপ্রাণ ধ্যান-সাধনা পদ্ধতির প্রতিষ্ঠাতা। বার্মিজ ব্যান্ডো মার্শাল আর্টসে সপ্তম ডিগ্রী ব্ল্যাক বেল্ট, বানশে মার্শাল আর্টসে পঞ্চম ডিগ্রী ব্ল্যাক বেল্ট আর বুত্থান মার্শাল আর্টসের সর্বোচ্চ দশম ডিগ্রী ব্ল্যাক বেল্ট পাওয়া এই বিরল আশ্চর্য চল্লিশটিরও বেশি বিভিন্ন ধরণের ফাইটিং স্টাইলে পারদর্শী। ভারতের কাঞ্চিভরম মার্শাল আর্টস ভার্মা কালাই আর চীনের শাওলিন মন্দিরের বিখ্যাত মার্শাল আর্টসের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করেন তিনি। ডিসকভারি চ্যানেলের Superhuman Showdown-এর পাঁচ সুপার হিউম্যানের মধ্যে অন্যতম বিস্ময়, চার চারটি বিশ্বরেকর্ডধারী একজন গ্র্যান্ডমাস্টার। তিনি আচার্য বজ্রমুনি ড. ম্যাক ইউরি। আমাদের এই জন্মভূমির এক কিংবদন্তী সূর্যসন্তান।
কে এই আচার্য বজ্রমুনি?
আমিনা আলম ও শামসুল আলমের সন্তান আচার্য বজ্রমুনি। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। বিশ্বের প্রথম মহাকাশচারী ইউরি আলেক্সেইভিচ্ গ্যাগারিনের নামানুসারে মা-বাবা তাদের প্রথম সন্তানের নাম রাখেন ইউরি। পুরো নাম মোহাম্মদ আনোয়ারুল কামাল ইউরি; সংক্ষেপে ম্যাক ইউরি। শৈশবের পড়াশোনা শুরু এলিজাবেথ মার্বেল প্রাইমারী স্কুলে; এটি একটি ব্রিটিশ মিশনারি স্কুল। পঞ্চম শ্রেণীতে থাকার সময়ই তিনি তাঁর সহপাঠী ও জুনিয়রদের নিয়ে একটা ক্লাব গঠন করেন। শারীরিক প্রশিক্ষণের উপর হাতে লিখে একটা ছোটখাটো হ্যান্ডবুক সবার মাঝে বিতরণ করেন। মাত্র এগারো বছর বয়সেই তিনি বার্মিজ বানশে ও ব্যান্ডো মার্শাল আর্টসের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিলেন। সেখানে নবম শ্রেণীতে থাকার সময় গঠন করেন ‘Self Defence Society’; যেখানে আত্মরক্ষা, ইয়োগা ও ধ্যানচর্চা করা হতো। ছোটবেলা থেকেই ইউরি বইয়ের পোকা ছিলেন। শারীরবিদ্যা, মানসিকতা, ইয়োগা, বিভিন্ন সামরিক ড্রিল, ইত্যাদি নানা বিষয়ের প্রতি ছিল তাঁর অপার আগ্রহ।
রহস্যময় জ্ঞানের খোঁজে নিরন্তর যাত্রা
জ্ঞান ও গুরুর সন্ধানে কোথায় যাননি তিনি! তিব্বতের হিমালয় থেকে দক্ষিণ ভারত, মায়ানমার থেকে সুইজারল্যান্ড- প্রাচ্য থেকে প্রতীচ্য পঞ্চাশটিরও বেশি দেশে অসংখ্যবার গিয়েছেন তিনি। দেহ ও মনের রহস্যময় ঐকতান এবং মার্শাল আর্টসের সাথে তাদের সহস্রকালের মেলবন্ধনের খোঁজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন অসংখ্য সাধু, সন্ত, গুরু ও সুফির নৈকট্যে। তিনি শিখেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাচীন ও দুর্গম অঞ্চলগুলোতে লুকিয়ে থাকা ও হারিয়ে যাওয়া জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও কৌশল।
মার্শাল আর্টসের টানে ম্যাক ইউরি চলে যান মায়ানমার। সেখানে তিনি বার্মিজ প্রথাগত মার্শাল আর্টস ব্যান্ডো ও বানশে মার্শাল আর্টসের উপর প্রশিক্ষণ নেন। ব্যান্ডো ও বানশে ক্লাসিকাল থাইং মার্শাল আর্টসের অন্তর্ভুক্ত। মূলত ইউরির মার্শাল আর্টসের ক্যারিয়ার শুরু হয় এই সময় থেকেই। সেখানে তিনি মায়ানমারের প্রসিদ্ধ গ্র্যান্ডমাস্টার এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ব্যান্ডো এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট খিং মং জি-এর সান্নিধ্য পান। তিনি তার প্রিয় ছাত্র ইউরিকে বার্মিজ ব্যান্ডো মার্শাল আর্টসে সপ্তম ডিগ্রী ব্ল্যাক বেল্ট আর বানশেতে পঞ্চম ডিগ্রী ব্ল্যাক বেল্ট প্রদান করেন। শুধু তা-ই নয়, ব্যান্ডোতে তিনি তার ছাত্র ইউরিকে সারা পৃথিবীতে তার উত্তরাধিকারী এবং গ্র্যান্ডমাস্টার মনোনীত করেন।
দক্ষিণ ভারতের সহস্র বছরের লুপ্তপ্রায় বিদ্যা ভার্মা কালাইয়ের চর্চা করতো তামিলনাড়ু, কেরালা ও বর্তমান অন্ধ্রপ্রদেশের দক্ষিণের মানুষেরা। ভার্মা কালাই পৃথিবীর অন্যতম প্রাণঘাতী এক মার্শাল আর্টসের নাম। তামিল ভাষা থেকে আগত ভার্মা কালাই (ভার্মা মানে Vital points আর কালাই অর্থ Arts) হলো মার্শাল আর্টসের সাথে শতাব্দী প্রাচীন সিদ্ধ চিকিৎসার এক সংমিশ্রণ। ভার্মা কালাইকে বলা হয় ‘The art of healing and killing’। ম্যাক ইউরি প্রায় বিলুপ্ত এই বিদ্যা শিক্ষা করেন ভার্মা কালাইয়ের প্রয়াত প্রখ্যাত গ্র্যান্ডমাস্টার আসান ভাস্করনের কাছ থেকে। এই মার্শাল আর্ট যিনি শেখান অর্থাৎ ভার্মা কালাইয়ের শিক্ষককে আসান বলা হয়।
এই ভার্মা কালাইয়ের বিদ্যা বোধিধর্মার মাধ্যমে চীনে পৌঁছায়। আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে, চীনের শাওলিন মন্দিরের জগদ্বিখ্যাত মার্শাল আর্টসের সূচনা হয়েছিল দক্ষিণ ভারতের তামিল রাজপুত্র বোধিধর্মার হাত ধরে! গুরু প্রজ্ঞাতারার আদেশে তিনি ৫২০ খ্রিস্টাব্দে চীন গমন করেন। বোধিধর্মাই ভার্মা কালাইকে সেখানকার (তৎকালীন) শারীরিকভাবে দুর্বল ও অস্ত্রহীন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মাঝে ছড়িয়ে দেন হেনান প্রদেশে শাওলিন মন্দির প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
ম্যাক ইউরি ভারতের ভার্মা কালাই আর চীনের শাওলিন মার্শাল আর্টসের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে পুনরাবিষ্কার করেন। এই অসামান্য অবদানের কারণে আসান ভাস্করন তাঁর ছাত্রকে বজ্রমুনি উপাধিতে ভূষিত করেন।
ম্যাক ইউরি দক্ষিণ ভারতের কেরালার মার্শাল আর্টস কালারিপায়াত্তুর উপরও বিশেষভাবে পারদর্শী। কালারিপায়াত্তুকে অনেকেই ভারতের সর্বপ্রাচীন মার্শাল আর্ট বলে মনে করে থাকেন। ভারত মহাসাগরের তীরে পাথরের কাঠিন্য আর আছড়ে পড়া ঢেউয়ের ছিটকে আসা পানির মাঝে ঢাল-তলোয়ার হাতে দীক্ষা নেন ৩,০০০ বছরেরও অধিক পুরাতন কালারিপায়াত্তু মার্শাল আর্টসের।
মার্শাল আর্টের টানে কেবল ভিনদেশী মুসাফির হয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি, এদেশের কিংবদন্তীদের সাহচর্যেও এসেছেন। কুষ্টিয়ার প্রখ্যাত প্রয়াত সিরাজুল হক চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশে লাঠি খেলার জনপ্রিয়করণের পথিকৃৎ। ওস্তাদ ভাই বলে পরিচিত সিরাজুল হক চৌধুরীর কাছেও ম্যাক ইউরি গিয়েছিলেন।
অন্যদিকে শুধু মার্শাল আর্টেই সীমাবদ্ধ ছিল না ম্যাক ইউরির আগ্রহ। সাথে সাথে তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে, বিভিন্ন ধরণের সামরিক প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেন। ইংল্যান্ড থেকে Counter Surveillance-এর উপর একটি ওয়ার্কশপ করেন ম্যাক ইউরি। লাটভিয়ার স্পেশাল ফোর্সের সাথে নেন সামরিক অস্ত্রের প্রশিক্ষণ।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি একাডেমি (NSA) থেকে কমিশন অফিসার্স কোর্স সম্পন্ন করেন। ইংল্যান্ডের নিউ সুইন্ডন কলেজ থেকে অর্জন করেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তাদানের (Close Protection) উপর সর্বোচ্চ SIA Level-3 ডিগ্রী। এগুলোর পাশাপাশি আরো অনেক বিষয়ে ম্যাক ইউরির অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ। তিনি বিস্ফোরক অনুসন্ধান ও চিহ্নিতকরণ, অগ্নি-নির্বাপণ ও প্রতিরোধকরণ, বিভিন্ন স্থাপনা ও ক্ষেত্রে যেমন বিমান, ব্যাংক, সুউচ্চ দালান, ইত্যাদির পরিপূর্ণ নিরাপত্তাপ্রদানের উপর বিশেষভাবে পারদর্শী। এসব যোগ্যতাই তাঁকে পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ক্ষেত্রে আইকন ব্যক্তিতে পরিণত করে।
ডিসকভারির অতিমানব ও বিশ্বরেকর্ড
ডিসকভারি চ্যানেলের Superhuman Showdown প্রোগ্রামে বিশ্বের সেরা পাঁচ অতিমানবের (সুপার হিউম্যান) একজন মনোনীত হন। ২০১২ সালের ৭ মে প্রায় ২০ বছরের মার্শাল আর্টের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি Superhuman Showdown প্রোগ্রামের তিনজন উপস্থাপকের সামনে হাজির হন। প্রায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার ম্যাক ইউরির বিশেষত্ব ছিল পায়ের জঙ্ঘাস্থি (Shin bone) দিয়ে একসাথে তিনটি বেসবল ব্যাট ভেঙে ফেলা। তিনি মুহূর্তের ভিতরে মস্তিষ্কের আলফা লেভেলে (এই লেভেলে মন খুব প্রশান্ত থাকে) চলে যেতে পারতেন, যার কারণে তাঁর পক্ষে পেশীর প্রায় শতভাগ ব্যবহার করা সম্ভব হতো। আর এই শক্তি দিয়েই তিনি ভেঙে ফেলেন মাটির সমান্তরালে একসঙ্গে রাখা তিনটি সুপার হাই গ্রেড লুইসভিল স্লাগার গ্রান্ডস্ল্যাম বেসবল ব্যাট। রীতিমতো হুলুস্থুল পড়ে যায় চারিদিকে। তাঁকে নিয়ে গবেষণায় বসে যান সবাই।
পায়ের সিটি স্ক্যান রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ইউরির পায়ের জঙ্ঘাস্থি অপেক্ষাকৃত পুরু। কিন্তু বিজ্ঞানীরা শুধু এতেই সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। তারা চিন্তা করলেন, ইউরির পায়ের পেশীশক্তিরও নিশ্চয়ই কোনো ভূমিকা আছে এতে। তারা দেখতে চাইলেন, লাথি দেয়ার সময় তাঁর শতকরা কতভাগ পেশীশক্তি কাজ করে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। তারা ডায়নামো মিটার ও ট্রান্সক্র্যানিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিম্যুলেটরের সাহায্যে ইউরির কোয়াড্রাটিক মাসল এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইলেন। ড. এমা রোজের তত্ত্বাবধানে ইউরির মাথায় ট্রান্সক্র্যানিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিম্যুলেটরটি লাগিয়ে পরীক্ষাটি করা হলো। ড. ম্যাক ইউরি তাঁর পায়ের ৯৬% পেশীকে একসাথে কাজে লাগাতে পেরেছিলেন। গবেষকদের কাছে এটি ছিল এক অপার বিস্ময়। কারণ আমেরিকার ওয়েন ইউনিভার্সিটির গবেষক দলের মতে, প্রতিটি বেসবল ব্যাট ভাঙতে ৭৪০ পাউন্ড শক্তির দরকার! বিজ্ঞানী প্রফেসর গ্রেগ হোয়াইট বলেন,
“What we saw with MAK Yuree is that he can actually recruit virtually all of his muscles. Strength or power production is about not only the size of the muscle itself, bigger muscle, more power. It’s actually about the amount of muscle we can recruit consciously with our brain.”
ইউরি বজ্রমুনির দখলে আছে চার চারটি বিশ্বরেকর্ড। সারা বিশ্বে তিনি থান্ডার শিন ম্যান বলে সুপরিচিত। তার পা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর রিপলিস বিলিভ ইট অর নটের প্রচ্ছদে ম্যাক ইউরির বেসবল ভাঙার বিশ্বরেকর্ড নিয়ে একটি কার্টুন ছাপা হয়।
বুত্থানের উত্থান ও বজ্রমুনির অবদান
মনোদৈহিক উন্নয়নে তিনি বর্তমান পৃথিবীর পাঞ্জেরি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে মার্শাল আর্টের উপর ডক্টরেট করা আচার্য ইউরি বজ্রমুনিকে বলা হয় প্রাচীন ভারতীয় মনোদৈহিক পদ্ধতির আধুনিক জনক। মন ও দেহের আন্তঃসংযোগ এবং আত্মা ও সত্ত্বার আলোকায়নের নিমিত্তে প্রতিষ্ঠা করেন বুত্থান মার্শাল আর্ট। এটি একদিকে যেমন মনোবিদ্যা, শারীরবিদ্যা, দর্শন, বজ্রপ্রাণ, সিদ্ধ ঔষধের অতি প্রাচীন জ্ঞানের সংকলন; তেমনি ভার্মা কালাই, বানশে, ব্যান্ডো, কালারিপায়াত্তু, বজ্রমুষ্টি, মিংজিংসহ প্রাচীন সভ্যতার বিভিন্ন ধরণের আত্মরক্ষার কৌশলের সম্মেলন। বুত্থানের এই বিশাল জ্ঞানভান্ডার মন ও দেশের ঐকতানে সহায়তা করে।
‘বুত্থান’ একটি সংস্কৃত শব্দ; এর অর্থ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়ন। চতুর্মাত্রিক এই চর্চার অনুশীলনকারীকে বলা হয় বুত্থানাচার্য (Butthanchariya) যারা চারটি মাত্রালোকে নিজেদের মনোদৈহিক উন্নয়ন করেন। এই চার মাত্রা হলো-
- সাধনা,
- প্রজ্ঞা,
- বর্জন ও
- সজ্ঞা তথা স্বতঃলব্ধ জ্ঞান।
বুত্থান মার্শাল আর্ট মন ও দেহের উপর ভারসাম্য ও নিয়ন্ত্রণ আনার একটি কার্যকর পদ্ধতি। জ্ঞান, নৈতিকতা, অধ্যবসায়, সাহস ও ভক্তির সম্মিলিত প্রয়াসেই আসবে কাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তি- মনোদৈহিক উন্নয়ন। তাঁর মতে, দেহ ও মন হলো একটি পাখির দুটি ডানার মতো। ভারসাম্য রেখে ঠিকমতো উড়ার জন্য পাখিকে যেমন দুটি ডানার উপরই সমান নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে হয়, ঠিক তেমনি জীবনের আলোকায়নে দরকার দেহ ও মনের সঠিক ভারসাম্য। ম্যাক ইউরি তাঁর এই বুত্থান মার্শাল আর্টের প্রচার ও প্রসারে প্রতিষ্ঠা করেন ইন্টারন্যাশনাল বুত্থান ফেডারেশন (IBUF)। ইউরির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশেও চালু বুত্থান মার্শাল আর্টস; প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ বুত্থান ফেডারেশন (BBUF)। শুধু তা-ই নয়, ২০১৩ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বুত্থানকে খেলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে।
বুত্থান মার্শাল আর্টসের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য বজ্রমুনির অবদান সারাবিশ্বে ব্যাপৃত। ধ্যান ও আত্মনির্মাণ, খালি হাতে আত্মরক্ষা আর সশস্ত্র নিরাপত্তা- তিন ক্ষেত্রেই তাঁর রয়েছে বিশ্বমানের পেশাদারী দক্ষতা ও সক্ষমতা। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকারি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, সশস্ত্র বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
তাঁর নিজের Global Executive Protection and Security Training Agency (GEPSTA) নামে একটি নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ এজেন্সি আছে।
তিনি বাস্তব বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশের মোকাবিলায় তৈরি করেন Combat Self Defense (CSD) যা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সদস্যদের সম্যক ধারণা প্রদান করে।
তাঁর উদ্ভাবিত ম্যাক ইউরি ব্যাটন (MY Baton) পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবহার করছে। তিনি অ্যামেরিকান সোসাইটি অব ল’ এনফোর্সমেন্ট ট্রেইনারস অর্থাৎ অ্যাসলেট-এর প্রশিক্ষক সদস্য।
আচার্য বজ্রমুনি মার্শাল আর্ট ও ধ্যানবিজ্ঞানের উপর বিভিন্ন সময়ে বেশকিছু বই লিখেছেন। সহজ বজ্রপ্রাণ, হাইট অব জিরো, ডোর টু ইনফিনিটি, লাইট অব ডার্কনেস, বুত্থান মেডিটেশন, এসেন্স অব মাস্টারি তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু বই।
আচার্য বজ্রমুনিঃ শত বছরে ফোটা এক ফুল
- থাম সিং পা- এটি একটি ফুলের নাম। এই ফুল প্রতি একশ’ বছরে একবার ফোটে। ২০০৫ সালে মায়ানমার থাইং (মার্শাল আর্ট) ফেডারেশন সেদেশের ৩০ জন গ্রান্ড মাস্টারের উপস্থিতিতে আচার্য ইউরি বজ্রমুনিকে ‘থাম সিং পা’ উপাধিতে ভূষিত করে।
- ঐতিহাসিক শাওলিন মন্দিরের ৩১তম প্রধান প্রয়াত গ্রান্ড মাস্টার শি দে কিয়ানের আশীর্বাদপুষ্ট হয়েছেন আচার্য ইউরি।
- ২০০৬ সালে ভুটানের রাজকীয় পরিবার তাঁকে বাংলাদেশস্থ ভুটান দূতাবাসের বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে সোনালি নখের শান্তির ড্রাগন (Peaceful Dragon with Golden Claw) উপাধিতে ভূষিত করেন।
- তিনি ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড গ্রান্ডমাস্টারস কাউন্সিল কর্তৃক গ্রান্ডমাস্টার পিনাকল পুরস্কারসহ বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের পাঁচটি প্রধান হল অব ফেইমে গ্র্যান্ড মাস্টার অফ দ্যা ইয়ার মনোনীত হন। এটি একটি বিরল রেকর্ড।
ডঃ মোহাম্মদ আনোয়ারুল কামাল ইউরি- মার্শাল আর্টসের ইতিহাসে এক বিস্ময়ের নাম। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশের নাম বিশ্ব দরবারে বেশ শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারিত হয়েছে। তিনি আমাদের এই জন্মভূমির এক কিংবদন্তী সূর্যসন্তান।
ফিচার ইমেজঃ mybutthanlife.blogspot.com