Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.
হিব্রু ভাষায় গাল শব্দটির বাংলা অর্থ তরঙ্গ বা ঢেউ এবং গাদোত শব্দটির বাংলা অর্থ নদীর তীর। নদীর তীরে বিরাটাকার ঢেউ সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা না দিতে পারলেও এতটুকু নিশ্চিন্তে বলা যায় যে, গাল গাদোত ইতোমধ্যেই পুরো বিশ্বকে নিজের রূপ আর গুণে নাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। কেননা, ফার্স্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস দিয়ে হলিউডে পা রেখেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন, কিন্তু সেই জনপ্রিয়তাকে চিরস্থায়ীভাবে পাকাপোক্ত করেছেন ডিসি কমিকসের অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র ওয়ান্ডার ওম্যানের ভূমিকায় নিখুঁত অভিনয় করে।
Image Source: wallpapersite.com
১৯৮৫ সালের ৩০ এপ্রিল ইসরায়েলের রোশ হায়োয়াইন শহরে জন্ম হয়েছিল গাল গাদোতের। মা আইরিত গাদোত ছিলেন শিক্ষিকা এবং বাবা মাইকেল গাদোত ছিলেন একজন প্রকৌশলী। এক সাক্ষাৎকারে গাল গাদোত জানিয়েছিলেন, তিনি আশকেনাজি ইহুদী পরিবার থেকে এসেছেন, অর্থাৎ তিনি এমন এক পরিবার থেকে এসেছেন, যেটা সম্পূর্ণরূপে ইসরায়েলি ইহুদি গোত্রীয়; এবং যে পরিবারের পেছনের ইতিহাসে বলা আছে, এর এক-চতুর্থাংশ পোলিশ, এক-চতুর্থাংশ অস্ট্রিয়ান, এক-চতুর্থাংশ জার্মান এবং বাকি এক-চতুর্থাংশ ছিল চেক প্রজাতন্ত্রের।
স্কুলে বায়োলজি ছিল তার মেজর এবং পছন্দের বিষয়। তার উচ্চতা তাকে বরাবরই বাস্কেটবল খেলায় একজন দারুণ খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল, যার জন্যে স্কুল জীবনে বাস্কেটবলে গাল গাদোতের বেশ সুনাম ছিল। পরবর্তীতে আইন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে আইডিসি হার্জলিয়া কলেজ থেকে নিজের ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। তবে, এই পড়াশোনাকালীন সময়েই কিন্তু গাল গাদোত বেবিসিটিং এবং বার্গার কিংয়ে কাজ করে উপার্জন করতেন।
Image Source: eononline.com
২০০৪ সালে আঠারো বছর বয়সে গাল গাদোত ইসরায়েলের সম্মানসূচক মিস ইসরায়েল প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করে জয়ের মুকুট ছিনিয়ে নেন। একই বছর ইকুয়েডরে অনুষ্ঠিত মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং ইসরায়েলের প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০০৬ সালে গাল গাদোতের বয়স যখন ২০ এর কোঠায়, তখন তিনি দুই বছরের জন্য ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগদান করেন একজন যুদ্ধ প্রশিক্ষক হিসেবে। এর পরের বছর ২০০৭ সালে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ম্যাক্সিমের ফিচারে তার নাম আসে ‘ওম্যান অফ দ্য আইডিএফ’ শিরোনামে এবং সেই সময়ই নিউ ইয়র্ক পোস্টে ফিচার ছাপা হয় তাকে নিয়ে।
সামরিক বাহিনী থেকে বের হয়ে গাল গাদোত দুটি কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে তিনি আইন বিষয়ের ডিগ্রী নেয়ার জন্যে পড়াশোনা শুরু করেন এবং শোবিজ দুনিয়ায় নিজেকে পুরোপুরিভাবে মেলে ধরেন। ২০০৭ সালে ‘বুবোত’ নামক ইসরায়েলি এক টেলিভিশন সিরিজে অভিনয়ের কাজও জুটে যায়। আরো মজার বিষয় হচ্ছে, পরের বছর, অর্থাৎ ২০০৮ সালে জেমস বন্ড সিরিজের কোয়ান্টাম অফ সোলাস মুভিতে বন্ড গার্ল ক্যামিল মন্তের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য গাল গাদোত অডিশন দিয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে সেই চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন ওল্গা কুরিনেঙ্কো।
একই বছর সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলের নাগরিক এবং রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ইয়ারুন ভারসানোর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন গাল গাদোত। এই সুখী দম্পতির দুটি কন্যাসন্তান আছে; ২০১১ সালে আলমা ভারসানো এবং ২০১৭ সালে মায়া ভারসানোর জন্ম হয়। আর এই দম্পতি ইসরায়েলের বিলাসবহুল হোটেলেরও মালিক বটে। গাল গাদোত এবং ইয়ারুন ভারসানোর দেখা হয়েছিল ইসরায়েলের এক পার্টিতে। যদিও গাদোতের চাইতে বয়সে ভারসানো প্রায় ১০ বছরের বড়, তবুও দুই বছরের প্রণয় বিয়েতে পরিণত হয়। গাল গাদোত একজন মোটরসাইকেলপ্রেমী, বর্তমানে তিনি ডুকাটি মনস্টার এস২আর ২০০৬ মডেলের একটি মোটরসাইকেল চালান।
বিয়ের পরের বছর গাল গাদোত আর ইয়ারুন ভারসানো ততদিনে নিজেদের বিলাসবহুল হোটেল রাশিয়ান এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেন এবং জীবনে সামনে কে কী করবেন তা নিয়ে চিন্তা করছিলেন। আর ঠিক তখনই জেমস বন্ডের অডিশন দিতে গিয়েছিলেন যে কাস্টিং ডিরেক্টরের কাছে তার ফোন পান গাল গাদোত। জনপ্রিয় ফার্স্ট এন্ড ফিউরিয়াস মুভির চতুর্থ পর্বে গিজেলের ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান। বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে ইয়ারুন ভারসানোর উৎসাহে গাল গাদোত হলিউডের বড় পর্দায় নিজের নাম লেখান ফার্স্ট এন্ড ফিউরিয়াসের চতুর্থ পর্বে।
দুই মেয়ে এবং স্বামীর সাথে গাল গাদোত; Image Source: pinterest.com
দর্শকপ্রিয়তার পাশাপাশি আলোচক এবং সমালোচকদের নজর কাড়তে সক্ষম হন গাল গাদোত। এরই মাঝে পরের বছরে ডেট নাইট এবং নাইট অ্যান্ড ডে নামক আরো দুটি মুভিতে অভিনয় করেন। তবে ফার্স্ট এন্ড ফিউরিয়াসের চতুর্থ পর্বের অভিনয় দক্ষতায় আবারো পরিচালকের কাছ থেকে ডাক পান এবং একে একে পঞ্চম ও ষষ্ঠ পর্বেও অভিনয় করেন। ষষ্ঠ পর্বে গিজেলের সাথে হানশিওল (সান কাং) এর প্রেম দেখানো হয় এবং শেষে টিমের জন্য নিজেকে বিসর্জন দিয়ে ফার্স্ট এন্ড ফিউরিয়াসকে বিদায় জানান গাল গাদোত। গিজেল ভূমিকায় শুধুমাত্র অভিনয়ই নয়, বরং ঝুকিপূর্ণ দৃশ্যসমূহের অভিনয়ও নিজেই করেছিলেন। এক সাক্ষাতকারে গাল গাদোত বলেন,
আমাকে ফার্স্ট এন্ড ফিউরিয়াসে নেয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে যে আমি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষক ছিলাম; কেননা পরিচালক জাস্টিন লিন অস্ত্র সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানসমূহ খুব ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন।
ফার্স্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস মুভির একটি দৃশ্য; Image Source: imdb.com
ফার্স্ট এন্ড ফিউরিয়াসের সাথে চুক্তি শেষে গাল গাদোত পরের বছর একটি ইসরায়েলী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং তার পরের বছর আবারো হলিউডে ফেরত আসেন ট্রিপল নাইন মুভিতে অভিনয় করে। আর ঠিক এরপরই গাল গাদোতের নাম পরিবর্তন হয়ে যায় পুরো বিশ্বের কাছে, যদিও কেউ কেউ তাকে প্রিন্সেস ডায়ানা বলেও ডাকেন, কিন্তু পুরো বিশ্বই তাকে এখন চেনে এবং জানে ওয়ান্ডার ওম্যান নামে। জ্যাক স্নাইডার পরিচালিত ‘ব্যাটম্যান ভার্সেস সুপারম্যান: ডন অফ জাস্টিস’ মুভিতে প্রথমবারের মতো ওয়ান্ডার ওম্যানের চরিত্রে নিজেকে প্রকাশ করেন গাল গাদোত। ঐ বছরই ‘ক্রিমিনাল’ এবং ‘কিপিং আপ উইথ জোনেসেস’ নামে আরো দুটি মুভিতে অভিনয় করেন গাল গাদোত।
জাস্টিস লিগ মুভির দৃশ্য; Image Source: imdb.com
২০১৬ সালে ‘ব্যাটম্যান ভার্সেস সুপারম্যান ডন অফ জাস্টিস’ মুভিতে ওয়ান্ডার ওম্যানকে দেখার পর থেকেই বিশ্বব্যাপী দর্শক উৎসুক হয়ে ছিল- কবে দেখা মিলবে ওয়ান্ডার ওম্যান মুভির। ২০১৭ সালেই পেটি জেনকিংস বিশ্বব্যাপী দর্শকদের উপহার দেন ওয়ান্ডার ওম্যান মুভিটি। দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে হলিউডে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে ফেলেন গাল গাদোত। ওয়াল্ট ডিজনি অ্যানিমেশন স্টুডিওর ‘রালফ ব্রেকস দ্য ইন্টারনেট’ নামক অ্যানিমেশন মুভিতে সাং এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এছাড়াও, জনপ্রিয় মিউজিক ব্যান্ড মেরুন ফাইভ এর একটি মিউজিক ভিডিওতে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
ওয়ান্ডার ওম্যান মুভির একটি দৃশ্য; Image Source: imdb.com
গাল গাদোত যে শুধুমাত্র সিনেমার পর্দার ওয়ান্ডার ওম্যান নয় তার প্রমাণ তিনি নিজেই দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। ওয়ান্ডার ওম্যানের দ্বিতীয় পর্বে অভিনয়ের জন্য গাল গাদোত শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। প্রযোজন সংস্থা র্যাটপেক – ডান এন্টারটেইনমেন্টের প্রধান প্রযোজক ব্রেট র্যাটনারের বিরুদ্ধে একাধিক নারী অভিনেত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন। তাই র্যাটনারকে প্রত্যাহার না করলে ওয়ান্ডার ওম্যানের দ্বিতীয় পর্ব তিনি করবেন না বলেই জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ভ্যানিটি ফেয়ারকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে গাল গাদোত বলেন,
নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে এবং কথা বলে ওয়ান্ডার ওম্যান। বিশ্বব্যাপী নারীদের অনুপ্রেরণার উৎস এই ওয়ান্ডার ওম্যান। এটা কেবল একজন প্রতিবাদী নারীর গল্প নয়, বরং সকল নারীর প্রতিনিধিত্ব করা প্রতিবাদী এক নারীর রূপ। তাই যৌন নিপীরক এবং নারী নির্যাতনকারীর প্রযোজনায় এই সিনেমা বানানো যাবে না।
রালফ ব্রেকস দ্য ইন্টারনেট মুভির প্রিমিয়ার শো; Image Source: imdb.com
গাল গাদোতের গ্ল্যামার ম্যাগাজিনে দেয়া সাক্ষাতকারের থেকে খানিকটা তুলে ধরা হলো এখানে,
গ্ল্যামার ম্যাগাজিন: ইসরায়েলের নাগরিক হিসেবে আপনাকে বাধ্যতামূলক দুই বছর প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কাজ করতে হয়েছে। এই ব্যাপারে কিছু বলেন?
গাল গাদোত: বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমি আশা করি কোনো দেশেরই যেন সেনাবাহিনীর দরকার না পড়ে। তবে ইসরায়েলের ব্যাপারটা ভিন্ন, আপনি যেখানেই থাকুন না কেন আপনাকে আপনার রাষ্ট্রের কাছে ফিরে আসতে হবে এবং আপনাকে দুই বা তিন বছর সময় দিতে হবে। আপনাকে নিজের মুক্ত জীবন ত্যাগ করতে হবে। আপনাকে শৃঙ্খলা এবং সম্মানবোধের বিষয়ে শিখতে হবে। আর আমি মনে করি এই ব্যাপারটা জীবনের অনেক কিছুর ব্যাপারেই শিক্ষা দেয়।
Image Source: celebritywallpaper.com
গ্ল্যাম: ওয়ান্ডার ওম্যান সম্পর্কে কিছু বলুন?
গাল: ওয়ান্ডার ওম্যানের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিকটা হচ্ছে কতটা স্বাধীনচেতা নারী ওয়ান্ডার ওম্যান। কোনো পুরুষের উপর নির্ভরশীল নয় সে, এবং প্রেমের জন্য নয় কিংবা কারো সেবা করার জন্য নয়। কারো কাছ থেকে সাহায্যেরও দরকার পড়ে না ওয়ান্ডার ওম্যানের। তার নিজের দুঃখ-কষ্ট আছে, কিন্তু তবুও সবকিছুকে উৎসর্গ করে মানবতার সেবায় নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দেয়। আবার দিন শেষে ওয়ান্ডার ওম্যান কিন্তু একজন নারীই।
গ্ল্যাম: আপনার মেয়েরা কি জানে ওদের মা ওয়ান্ডার ওম্যান?
গাল: হ্যাঁ, অবশ্যই; আপনি যদি ওদের জিজ্ঞেস করেন, মা কোথায়? তাহলে ওরা হাত দুটো ক্রস করে চেঁচিয়ে বলবে, ওয়ান্ডার ওম্যান। আর ওরা আমার কস্টিউমটাও দেখেছে। ওরা সবসময়ই জানতে চায় কেন আমি মাথায় একটা মুকুট পরি? এবং এ-ও জিজ্ঞাসা করে, মা, আমরা কি তাহলে রাজকন্যা? হা… হা… হা!
গ্ল্যাম: শেষ প্রশ্ন, এত বড় নারীবাদী চরিত্রে অভিনয় আপনার ব্যক্তিগর জীবনে কতটা প্রভাব ফেলেছে?
গাল: হ্যাঁ, অবশ্যই প্রভাব ফেলেছে। নারীবাদ মানে যা ধারণা করা হয় তা নয়। সম্পূর্ণটাই আসলে সমঅধিকারের কথা। ইতিমধ্যেই জেনেছেন যৌন নিপীড়কের বিরুদ্ধে আমার ঘোষণা। তাই বলার অপেক্ষা রাখে না- এই চরিত্র শুধুমাত্র আমারই নয়, বরং পুরো বিশ্বের নারীদের আদর্শ।