মিথ্যার দুঃশাসনে নম্রতা ও ধর্ম হারিয়ে গেছে। মুসলিম মোল্লা এবং হিন্দু পণ্ডিতেরা দায়িত্ব থেকে করেছে পদত্যাগ। বিবাহের শপথ পাঠ করাচ্ছে শয়তান। হত্যা করা হচ্ছে মানুষ; লোকজন জাফরানের বদলে রক্ত দিয়ে নিজেদের করছে কলঙ্কিত। (গুরু নানক)
১৩৯৮ সালে তৈমুরের আক্রমণের পর বাস্তবিকই সমাপ্তি ঘটে উত্তর ভারতের সংগঠিত সরকার ব্যবস্থার। স্থানীয় রাজ্যপালরা দিল্লির আনুগত্য ত্যাগ করে নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করতে থাকেন। স্থায়ী বিরোধ চলতে থাকে রাজা এবং প্রাদেশিক শাসনকর্তার মধ্যে। মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে যুদ্ধ। রাজকোষ খালি হয়ে যাবার দরুন স্বেচ্ছাচারে বসতে থাকে করের বোঝা। চলতে থাকে ধর্মীয় পীড়ন। রাজনৈতিক হাঙ্গামা জনমনে প্রভাব ফেলে। নতুন অরাজকতায় আবার যেন শুরু হয় বৈষম্যের ধারা।
অথচ কিছুদিন আগেও মুসলিম সুফিবাদ আর হিন্দু ভক্তিবাদের প্রভাবে ঈশ্বরপ্রেমে প্লাবিত হয়েছিল ভারত। একদিকে চৈতন্য ও রামানন্দ, আর অন্যদিকে শেখ ফরিদ উদ্দীন এবং আলি মখদুম হুজুরি। সকল প্রকার বৈষম্য পাশ কাটিয়ে গীত হচ্ছিল মানবতার জয়গান। জেনেছিল, বর্ণপ্রথা স্বর্গীয়ভাবে আদেশপ্রাপ্ত নয়; প্রত্যেক মানুষ সমান। কেবল উপাসনালয় ছাড়া বাকি প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সুফি আর ভক্ত সম্প্রদায় ছিল অভিন্ন। এবার এমন কাউকে দরকার, যে মন্দির আর মসজিদের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানটুকু পূরণ করবে। সে কাজের দায়িত্ব থেকেই জন্ম নিলেন নতুন আদর্শিক মহাপুরুষ- গুরু নানক।
ঊষাপর্ব
১৫ই এপ্রিল, ১৪৬৯ খ্রিষ্টাব্দ। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের বর্তমান নানকানা সাহিবের নাম তখন রাই ভো দি তালওয়ান্দি। গ্রামের কোষাধ্যক্ষ মেহতা কালিয়ার স্ত্রী তৃপ্তির কোল আলো করে জন্মগ্রহণ করেন নানক। ছেলেবেলায় থেকেই তিনি ছিলেন বুদ্ধিমান। বয়স পাঁচ হবার পর জীবনের অর্থ ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করেন। সাত বছর বয়সে বর্ণমালা ও সংখ্যা শেখানোর জন্য পাঠানো হয় পণ্ডিতের কাছে। পরের দুই বছর মুসলিম আলেমের কাছে থেকে রপ্ত করেন আরবি এবং ফারসি। অবশ্য পড়াশোনায় তার আগ্রহ তেমন ছিল না। পুণ্যবান মানুষের সংশ্রব কিংবা নির্জনতায় একাকী ধ্যানে নিমগ্ন থেকে পার হতো দিন।
বারো বছর বয়সে বাটালার মুল চাঁদ চোনার মেয়ে সুলক্ষ্মীর সাথে বিয়ে হয়। কোষাধ্যক্ষ বাবা চাচ্ছিলেন ছেলেকে জাগতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে। বয়স ঊনিশে পড়লে স্ত্রীকে পাঠিয়ে দেয়া হয় নানকের সাথে থাকতে। অল্প সময়ের জন্য পিতার উদ্দেশ্য সফল হয়। ১৪৯৪ সালে শ্রী চাঁদ এবং ১৪৯৭ সালে লক্ষ্মী দাস নামে দুই সন্তান হয় তার। কিন্তু অচিরেই সংসারের মায়া কেটে আধ্যাত্মিকতায় মনোনিবেশ করেন। বাবা অনেক তোড়জোর করে সুলতানপুরের নওয়াব দৌলত খান লোদীর হিসাবরক্ষক হিসাবে কাজে লাগিয়ে দেন নানককে। নেহায়েত অনিচ্ছা নিয়েই সততার সাথে কাজ করতে থাকেন তিনি।
এরপর দেখা হয় সুলতানপুরের মুসলিম চারণ কবি মারদানার সাথে। অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের মিত্রতা গড়ে ওঠে। শহরে দু’জন স্তুতিগানের আয়োজন করেন। প্রতি রাতে স্তুতিগান চলত। যারা আসত; তাদের প্রত্যেককে খাবার দেয়া হতো। সূর্যোদয়ের সোয়া এক ঘণ্টা আগে নদীতে গোসল করতেন তারা। তারপর দিনের বেলায় চলত দরবারের কাজ। এমনি এক ভোরে গোসলে নেমে দৈববাণী শুনতে পেলেন।
নানক, আমি তোমার সাথে আছি। তোমার মাধ্যমেই আমার নাম বিস্তৃতি হবে। যারা তোমাকে অনুসরণ করবে; আমি তাদের রক্ষা করব। দুনিয়ায় আমার প্রার্থনা করো; মানুষকে শেখাও কীভাবে প্রার্থনা করতে হয়। দুনিয়ার রাস্তাগুলোর দ্বারা কলঙ্কিত হয়ো না। জীবনে যাতে নাম, দান, স্নান, সেবা এবং প্রার্থনার প্রশংসা থাকে। তুমি যাকে দয়া করবে, আমি তাকে দয়া করব। যে তোমার প্রতি সদয়; আমি তার প্রতি সদয়।
নয়া জীবন
তিনদিন তিনরাত নিখোঁজ ছিলেন নানক। মানুষ ধরেই নিয়েছিল, তিনি পানিতে ডুবে মারা গেছেন। কিন্তু চতুর্থ দিন ঠিক ফিরে এলেন এক অন্য নানক। বাড়িতে গিয়েই সবকিছু দান করে দিলেন, যোগ দিলেন ফকিরদের সাথে। সাথে ছিলেন পুরাতন বন্ধু মারদানা। একদিন পর নানক দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন,
“কোনো হিন্দু নেই; কোনো মুসলমান নেই।”
তখন সম্ভবত ১৪৯৯ সাল, নানকের বয়স ত্রিশ বছর। এবার তিনি দীর্ঘ ভ্রমণে বের হন। প্রথম দফায় মথুরা, বেনারস, গোয়া, বাংলা এবং আসাম। তারপর কিছুদিন পাঞ্জাবের সুফি স্থাপনাগুলোতে। দক্ষিণে তামিলনাড়ু হয়ে শ্রীলঙ্কা, পশ্চিমে মালাবার, বোম্বে ও রাজস্থানের মতো অঞ্চল এবং উত্তরে হিমালয় অঞ্চলের লাদাখ অব্দি। গুরুর শেষ দীর্ঘ ভ্রমণ ছিল মক্কা, মদিনা এবং বাগদাদে। দীর্ঘ ভ্রমণে মারদানা ছিলেন তার সঙ্গী। সাইদপুর হয়ে তিনি যখন ফিরছেন; তখন জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর সে শহর দখলে ব্যস্ত।
একদিন নানক হরিদ্বারে গেলেন। উদীয়মান সূর্যের দিকে গঙ্গাজল উৎসর্গ করছেন তীর্থযাত্রীরা। কারণ জানতে চাইলে তারা বলল, পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে। নানক নিজে পানিতে নেমে গিয়ে আরো জোরে পানি ছুঁড়তে লাগলেন। সবাই কারণ জানতে চাইলে এবার। গুরু বললেন, “আমার খামার খুব শুকনো; সেখানে পাঠাচ্ছি”। এখান থেকে পানি ছুঁড়লে যে খামারে পৌঁছাবে না; একথা বোঝাতে এল তারা। নানক জবাব দিলেন, “আমার খামার তোমাদের মৃত পূর্বপুরুষের চেয়ে কাছে। অত দূরে জল গেলে ওখানে যাবে না কেন?” কথাটা দারুণভাবে প্রভাবিত করে তাদের। আরেকবার নানক মক্কা যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে এক মসজিদে ঘুমিয়ে গেলেন কা’বার দিকে পা দিয়েই। হঠাৎ এক মোল্লা তাকে ঝাঁকালেন কঠিনভাবে; “কী হে খোদার বান্দা, তোমার পা খোদার ঘরের দিকে। এমন হীন কাজ তুমি কীভাবে করলে?” নানক জবাব দিলেন, “তাহলে পা টা সেদিকেই ঘুরিয়ে দিন; যেদিকে খোদা নেই”।
ধর্মের ভিত
শেষ বছরগুলো কর্তারপুরেই কাটান নানক। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষ ব্যাপক জনগোষ্ঠী তার আলোচনা শুনতে হাজির হতো। অনুসারীদের ডাকা হতো শিখ নামে। অনুসারীরা দিন শুরুর আগে উঠেই ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করত। মন্দিরে সমাবেত হয়ে প্রার্থনা ও স্তুতিগান করত। সূর্যোদয়ের সামান্য পর সবাই ছড়িয়ে পড়ত পার্থিব কর্মের জন্য। আবার সন্ধ্যায় মন্দিরে একত্র হয়ে স্তুতিগান শেষ করে ফিরে যেত ঘরে। বিভিন্ন শহরের শিষ্যরাও অনুকরণ করত এই আচার। তাদের জন্যও নির্ধারিত ছিলেন স্থানীয় নেতা।
শিষ্যদের মধ্যে কর্তারপুরে গুরুর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন লেহনা। ক্ষত্রিয় গোত্র থেকে আসা লেহনার ভক্তি ও নেতৃত্বের গুণাবলিতে মুগ্ধ হয়ে নানক তাকে ‘অঙ্গদ’ উপাধি দিয়েছিলেন। নানকের নিজের এক পুত্র শ্রী চাঁদ সংসারত্যাগী হয়ে যান এবং অন্য পুত্র আধ্যাত্মিকতায় আকর্ষণ দেখা্ননি। যোগ্যতা বিচারে তাই অঙ্গদকেই দায়িত্ব দিয়ে ১৫৩৯ সালের ২২ ডিসেম্বর ভোরে মৃত্যুবরণ করেন নানক। ভোর ছিল তার প্রিয় সময়, ভালোবেসে নাম দিয়েছিলেন ‘অমৃতবেলা’।
নানকের আমৃত্যু প্রচেষ্টা ছিল হিন্দু-মুসলমানকে একত্র করার। মৃত্যুশয্যায় মুসলমানরা দাবি নিয়ে এল, “আমরা গুরুকে কবর দেব”। অন্যদিকে হিন্দুরা বলল, “আমরা দাহ করব”। সমাধান দিতে নানক বলেছিলেন, “তোমরা আমার দুইপাশে ফুল দাও; হিন্দুরা ডানে এবং মুসলমানরা বামে। যাদের ফুল কাল তাজা থাকবে; তাদের ইচ্ছাই পূরণ হবে।” তিনি তাদেরকে প্রার্থনা করতে বললেন। প্রার্থনা শেষ হলে গুরু তার উপর চাদর টেনে নিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। পরদিন সকালে চাদর তুলে তারা কিছুই পেল না। দুই সম্প্রদায়ের ফুলগুলোই সতেজ ছিল। হিন্দুরা তাদের ফুলগুলো তুলে নিল, মুসলমানেরা তাদের। পাঞ্জাবে এখনো বলা হয়-
বাবা নানক শাহ ফকির
হিন্দু কা গুরু, মুসলমান কা পীর।
শিক্ষা
নিঃসন্দেহে সুফিবাদ এবং ভক্তিবাদ নানকের মতবাদ প্রচারের ভিত হিসাবে কাজ করেছে। কিন্তু নানকের সাম্যনীতি নিম্ন বর্ণের হিন্দু এবং গরিব মুসলমান কৃষকদের আকৃষ্ট করেছে। তার ব্যক্তিত্ব, সাহসের সাথে বিনয়ের সমন্বয় খুব অল্প সময়েই তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। সেইসাথে তিনি ছিলেন প্রচণ্ড অনুভূতিশীল এক কবি। প্রচলিত প্রথার ঊর্ধ্বে গিয়ে তিনি খুঁজতে চেয়েছেন পরম সত্য। তার ভাষায়-
যখন চুপ থাকি, ওরা বলে আমার জ্ঞান নেই।
যখন বলি, ওরা বলে আমি বাচাল,
যখন বসি, ওরা বলে একজন অনভ্যর্থিত অতিথি থাকতে এল,
যখন চলে যাই, ওরা বলে আমি পরিবার ছেড়ে পালাচ্ছি,
যখন নত হই, ওরা বলে ভয়ের কারণে।
সময় কাটানোর জন্য শান্তিতে কিছুই করতে পারব না,
এখন আপনিই আপনার সেবকের সম্মান রক্ষা করুন, হে প্রভু মহান।
নানক একেশ্বরবাদী। ঈশ্বর নিরাকার হবার কারণে অবতারবাদ এবং ঈশ্বরের পুনর্জন্মকে অস্বীকার করতেন। মূর্তিপূজা অনুমোদন করেননি; কারণ মানুষ মূর্তিকে প্রতীক হিসাবে না দেখে ঈশ্বর হিসাবে দেখে। কেবল আধ্যাত্মিক পবিত্রতার মানে নেই; যদি সামাজিক আচরণে তার প্রকাশ না থাকে। তাই শিখকে কেবল বিশ্বাস করলেই হবে না; মিথ্যাচার, প্রতারণা, ব্যাভিচার, অন্য কারো অধিকারে প্রবেশ এবং কাউকে কষ্ট দেয়া থেকে মুক্ত থাকতে হয়। নানক হিন্দু ও মুসলিমদের ব্যবহৃত নাম ‘রাম’, ‘হরি’, ‘রব’, ‘রহিম’কেই ঈশ্বরের জন্য ব্যবহার করেছেন।
গুরু ও পথ
ভক্ত এবং সুফিরা একজন আধ্যাত্মিক পরামর্শদাতা থাকার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন। নানক আরো অগ্রসর হয়ে গুরুবাদকে ধর্মের কেন্দ্রে স্থাপন করেন। নানকের মতে, গুরুকে শ্রদ্ধা করতে হবে, কিন্তু ঈশ্বর হিসাবে না। গুরুর পরামর্শ মানতে হবে শিক্ষক হিসাবে; তাকে উপাসনা করা যাবে না। তার লেখাগুলোতেও নিজেকে সবসময় ‘ঈশ্বরের বান্দা’ হিসাবে উপস্থাপন করেছেন।
এত ভ্রমণ আর ঘরহীন জীবনের পরেও নানক সন্ন্যাসবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি জনগণের সাথে বসবাসের পক্ষপাতী। তার মতে, সংসারধর্ম আধ্যাত্মিকতা অর্জনের পথে বাধা নয়। মানুষকে আত্মিক বিশুদ্ধতা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক বিশুদ্ধতাও অর্জন করতে হবে। তার মতে,
সাকোন ওরে সবকো
ওপার সেক আকার,অর্থাৎ,
সবার উপরে সত্য, আর সত্যের উপরে সৎ ব্যবহার।
ইতোপূর্বে বর্ণহীন সমাজ ব্যবস্থার কেবল তাত্ত্বিক প্রস্তুতি চলছিল। গুরু নানক তার বাস্তবিক প্রয়োগ দেখান। শিখ মতবাদ প্রচারের প্রতিটি কেন্দ্রে গুরু কা লঙ্গর বা বিনামূল্যে গণখাবারের ঘর চালু করে বর্ণপ্রথার খাঁচা ভাঙার জোর পদক্ষেপ নেন। অনুসারীদের উপদেশ দেন, সকাল প্রকার বর্ণ ও জাতির উর্ধ্বে উঠে একসাথে খাবার খেতে। সেই ষোড়শ শতকের ভারতে নারী-পুরুষ, জাত-ধর্ম, সাদা-কালো ভেদাভেদহীনতার কথা বলা কম আশ্চর্যের বিষয় নয়।
সাধারণত হিন্দুধর্মে মুক্তির জন্য তিনটি বিকল্প পথ সমর্থন করে- কাজ (কর্মমার্গ), জ্ঞান (জ্ঞানমার্গ) এবং ভক্তি (ভক্তিমার্গ)। নানক আরেক ধাপ এগিয়ে নামমার্গ বা ঈশ্বরের নাম জপকে অন্তর্ভুক্ত করেন। তার মতে,
হাত বা পা যেমন কাদায় বিবর্ণ হলে পানি দিয়ে ধুতে হয়,
পোশাক নোংরা হলে যেমন সাবান লাগাতে হয়,
আত্মা পাপে কলুষিত হলে তেমন নামজপ সেটিকে ত্রুটিমুক্ত করে।
অবশেষ
নানকের পথ ছিল সহজ। তিনি একাই সবগুলো মতকে একটি পদ্ধতির ভেতরে এনে উদারপন্থা জারি করেন; যা অতি সাধারণ গ্রাম্য লোকটিও বুঝতে পারে। তার নির্দেশনা সংক্ষিপ্ত- কীর্তন করো, নাম জপ করো, কাজ করো, উপাসনা করো এবং দান করো। এ কারণেই ওই সময়ের অন্যান্য সাধুরা ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে গেলেও দিন দিন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে নানক আর তার ‘ইক ওয়াঙ্কার’ বা ‘সৃষ্টিকর্তা এক’ মন্ত্র।
নানকের ধর্ম রাজনৈতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। তিনিই পাঞ্জাবের ইতিহাসের প্রথম জনপ্রিয় নেতা। তার আসল শিষ্যের সংখ্যা হয়তো খুব বেশি ছিল না। কিন্তু যারা অন্য সম্প্রদায়ের হয়েও ‘কোনো হিন্দু নেই, কোনো মুসলিম নেই’ আদর্শে শ্রদ্ধাশীল হয়েছিল; তাদের সংখ্যা যথেষ্ট। এ আদর্শই পরবর্তী সময়ে পাঞ্জাবি জাতীয়তাবোধের জন্ম দেয়। বর্তমান ভারতেই শিখধর্মের অনুসারীর সংখ্যায় ২ কোটির বেশি। ২০০১ সালের হিসাব মতে, যুক্তরাজ্যে সাড়ে তিন লাখ এবং কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে তিন লাখের মতো এই মতাবলম্বী। অন্যান্য দেশেও তাদের অবস্থান বেশ পোক্ত। ৫০০ বছর আগে গুরু নানক যে বীজ বপন করে গেছেন; তা এখন অব্দি সাম্যের বার্তা ছড়িয়ে চলছে বিশ্বব্যাপী।
[Guru Nanak The Enlightened Master (Puffin Lives) বইটি কিনতে ভিজিট করুন রকমারি ডট কমে।]