“এ জগতে হায়, সেই বেশি চায়, যার আছে ভুরি ভুরি” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই উক্তিটি প্রমাণ করবার জন্য যুগে যুগে সম্পদশালী মানুষের অভাব হয়নি, যারা তাদের সম্পদ নিয়ে কখনোই তুষ্ট ছিলেন না। এক্ষেত্রে মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডকের নামের সাথে তো আগে থেকেই নানান কেলেঙ্কারি লেপ্টে আছে। নিত্যনতুন বান্ধবী চাই, আর সাথে চাই বিশ্বব্যাপী মিডিয়ার উপর একচ্ছত্র আধিপত্য। এ নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। কিন্তু সমালোচকদের কথায় কান দেবার সময় কই মারডকের? ২১ শতকের আবির্ভাবের সাথে তিনি যেন আগের চেয়েও অধিক গতিতে এগোতে লাগলেন। নতুন শতাব্দীতে এসেও তার প্রতিষ্ঠিত ‘নিউজ কর্প’ এর (নিউজ কর্পোরেশন) একের পর এক নতুন নতুন মিডিয়া কোম্পানি কারায়ত্ত করা চলতে থাকলো আগের মতোই।
২১ শতকে রুপার্ট মারডকের প্রথম বড় পদক্ষেপ ছিল ‘ইন্টারমিক্স মিডিয়া’ কিনে ফেলা। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ‘মাইস্পেস ডট কম’ এর স্বত্বাধিকারী ইন্টারমিক্স মিডিয়া কেনার পরপরই ‘ডো জোনস’ কেনার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন মারডক। ডো জোনস হচ্ছে শেয়ারবাজারের সূচক প্রস্তুতকারী একটি প্রতিষ্ঠান যা জনপ্রিয় ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ এরও স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান। আর মারডক যা একবার কিনবেন বলে ঠিক করে ফেলেন, তা না কিনে বসে থাকবার পাত্র তিনি নন। দুই বছরের মাথায় ২০০৭ সালে ডো জোনস এর মালিক বনে যান তিনি। তার সাম্রাজ্যের সীমানা, এই ক্রয়ের মাধ্যমে আরো বিস্তৃত হলো। সাথে পুরনো সমালোচনার আগুনে নতুন করে ঘি ঢালা হলো, সমালোচকদের ঘুম নতুন করে ভাঙা হলো যেন!
প্রশ্ন হতে পারে, কেউ নিজের বুদ্ধি আর যোগ্যতায় সম্পদের মালিক হলে তা নিয়ে সমালোচনার কী আছে? তবে সম্পদ যখন মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আয় করা হচ্ছে, তখন কিঞ্চিৎ সমালোচনা হবে বৈকি! ইন্টারমিক্স মিডিয়া কেনার পরও একই কারণে সমালোচনা শুরু হয়। অধিকাংশের মতেই, মিডিয়ার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের উপর, যা কিনা ‘মানুষের বিবেক’ বলে পরিচিত, কোনো ব্যক্তির একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হওয়া অনৈতিক। তাছাড়া আমেরিকায় বারাক ওবামার প্রথম মেয়াদে, ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচনের পর মারডকের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট হবার অভিযোগ আরো জোরালো হয়। তার মালিকানাধীন মিডিয়া আউটলেটগুলো, যেমন ফক্স নিউজ কিছুটা পক্ষপাতমূলক সংবাদ প্রচার করতো বলে আগে থেকেই অভিযোগ ছিল। এর উপর সে নির্বাচনে তিনি প্রত্যেক রিপাবলিকান গভর্নরকে ১ মিলিয়ন ডলার করে অর্থ সহায়তাও করেছিলেন!
রুপার্ট মারডকের মিডিয়া মোগল হওয়াটা যেন লিপিবদ্ধ গল্পেরই প্রদর্শনী ছিল! তার বাবা কেইথ মারডক ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার স্বনামধন্য সাংবাদিক এবং প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া ব্যবসায়ী। বাবাকে দেখে অনুপ্রাণিত রুপার্টও মিডিয়া জগতেই নিজের ক্যারিয়ার গড়বার স্বপ্ন দেখতেন। আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত জিলং গ্রামার স্কুলে মিডিয়া স্টাডিজে পড়ালেখা করেন তিনি। সেখানে স্নাতক শেষ করে, ১৯৪৯ সালে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরচেস্টার কলেজে ভর্তি হন মারডক। ওরচেস্টারে তিনি বেশ প্রাণবন্ত হয়ে ওঠেন। নিজের পছন্দের মিডিয়া বিষয়ক পড়ালেখা, একাধিক সুন্দরী মেয়ের সাথে ফ্লার্ট, প্রতিদিন সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে মদের আসরে যাওয়া, সব মিলিয়ে বেশ কাটছিল তার জীবন। কিন্তু এসবে হঠাৎ বাঁধ সাধলো তার বাবা কেইথের মৃত্যু। আর বাবার অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতেই রুপার্ট মারডকের মিডিয়া মোগল হবার সূচনা হয়!
১৯৫২ সালে কেইথ মারডক মারা গেলে অস্ট্রেলিয়া ফিরে আসেন রুপার্ট মারডক। বাবার মৃত্যুশোকও ঠিকমতো পালন করবার সুযোগ পাননি তিনি। কারণ, কেইথের উইল অনুসারে তার মৃত্যুর সাথে সাথেই তার মালিকানাধীন তিনটি মিডিয়া কোম্পানি ‘দ্য নিউজ’, ‘অ্যাডিলেইড নিউজপেপার’, ‘দ্য সানডে মেইল’ এর মালিক বনে যান তার ছেলে রুপার্ট মারডক। আর যেহেতু মিডিয়া কোম্পানি একদিনও বন্ধ রাখার জো নেই, তাই বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করে এসেই কাজে লেগে পড়েন তিনি। কিন্তু একেবারেই নতুন আর অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে তিন তিনটি মিডিয়া হাউজ চলা আদৌ সম্ভব নয়। তাই এক বছরের জন্য ইন্টার্নশিপ নিয়ে মারডক চলে গেলেন ইংল্যান্ডের ‘ডেইলি এক্সপ্রেসে’। সেখান থেকে ফিরেই শুরু করেন মিডিয়া জগতে তার অদম্য যাত্রা।
বাবার প্রতিষ্ঠা করা মিডিয়া কোম্পানিগুলোর দায়িত্ব নিয়েই মারডক বুঝিয়ে দেন তিনি কোনো সাধারণ মিডিয়া কোম্পানির সিইও হতে আসেননি, তিনি এসেছেন বিশ্বজয় করতে। প্রথমেই তিনি পত্রিকাগুলোর অঙ্গসজ্জায় পরিবর্তন আনেন। তিনটি পত্রিকার অধিকাংশ শিরোনাম নিজে লিখে দিতেন এজন্য যে, অন্যদের লেখা শিরোনাম তার নিকট খুব একটা চিত্তাকর্ষক মনে হতো না! বিখ্যাত ভারতীয় সাংবাদিক এম.ভি কামাথ বলেছেন, “Sex, money, crime- that is news!” কামাথের এই উক্তি বহু আগেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন মারডক। নান্দনিক অঙ্গসজ্জার সাথে তিনি তার পত্রিকার পাতাগুলো ছেয়ে দেন চটুল, রসালো সব যৌন উত্তেজক সংবাদ, অপরাধ আর স্ক্যান্ডালে। ফলাফল? সমালোচকদের তীব্র সমালোচনা আর রাতারাতি পত্রিকার জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া!
১৯৫৩ সালে মিডিয়া ব্যবসায় জড়ানোর মাত্র তিন বছরেই মারডক এত পরিমাণ মুনাফা অর্জন করেন যে, ১৯৫৬ সাল থেকেই শুরু হয় তার নিত্যনতুন মিডিয়া হাউজ ক্রয় করা। অস্ট্রেলিয়ার পার্থের ‘সিডনি টাইমস’ নামক মোটামুটি জনপ্রিয় একটি পত্রিকা ক্রয়ের মাধ্যমে শুরু হয় তার উচ্চাভিলাষী যাত্রা। ১৯৬০ সালে ‘মিরর’ কেনার মাধ্যমে তিনি প্রবেশ করেন সিডনির বাজারে। মিরর তখন প্রচারণার অভাবে ধুঁকছিল। বন্ধ হবার দ্বারপ্রান্তে থাকা এই পত্রিকা কিনে, এক বছরের মধ্যেই এর খোলনলচে পাল্টে দিয়ে সিডনির সবচেয়ে প্রচলিত সংবাদপত্রে পরিণত করেন মারডক। এই সাফল্য তাকে আরো উৎসাহিত করে। তিনি অস্ট্রেলিয়ার বড় বড় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সম্পর্ক গড়তে শুরু করেন। আর রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের প্রথম জাতীয় দৈনিক ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’। এটি প্রকাশের পরই বিশ্বজুড়ে মিডিয়া পাড়ায় তার পরিচিতি ছড়িয়ে যায়।
১৯৬৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিষ্ঠিত মারডকের মিডিয়া সাম্রাজ্যের মূল্য ৫০ মিলিয়নে গিয়ে দাঁড়ায়! এই বিপুল বৈভবের উপর দাঁড়িয়েও এক রত্তি সন্তুষ্টি ছিল না তার মনে। তিনি তাই পা বাড়ান দেশের বাইরে, কিনে নেন লন্ডনের জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড ‘দ্য নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। এই পত্রিকাটি আগেই জনপ্রিয় ছিল, মারডকের হাত ধরে এর জনপ্রিয়তা আরো বাড়ে। পরের বছর তিনি ধুঁকতে থাকা ‘দ্য সান’ এর স্বত্বাধিকার ক্রয় করে নেন। যথারীতি সানের পাতাগুলোও যৌনতা আর সন্ত্রাসে সয়লাব হলো, কাটতি বেড়ে গেল অবিশ্বাস্যভাবে। তার মালিকানাধীন হবার পর সানের ৩ নম্বর পাতাটি ‘এন্টারটেনমেন্ট’ এর পাতা হিসেবে ব্যবহৃত হতো যেখানে নিত্যদিন নারীদের যৌন উদ্দীপক ছবি থাকতো। এই পাতাটি এত জনপ্রিয়তা লাভ করে যে এটি ‘টপলেস পেইজ’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে!
আলেকজান্ডারের মতো বিশ্বজয়ের নেশায় বুঁদ মারডকের থামবার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। ইংল্যান্ডের বাজার ধরেই তিনি পৌঁছুলেন আমেরিকায়। ১৯৭৩ সালে কিনে নিলেন টেক্সাস ভিত্তিক জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড ‘স্যান অন্টনিও নিউজ’। ১৯৭৬ সালে তিনি ক্রয় করলেন ‘নিউ ইয়র্ক পোস্ট’। আর নিজে প্রতিষ্ঠা করলেন একটি জাতীয় ট্যাবলয়েড ‘দ্য স্টার’। ১৯৭৯ সালে মারডক তার মিডিয়া সাম্রাজ্যের জন্য আক্ষরিক অর্থে একটি ‘প্রাসাদ’ তৈরি করেন। আর তা হচ্ছে ‘নিউজ কর্পোরেশন’, যা নিউজ কর্প নামেই অধিক পরিচিত। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা মারডকের সকল মিডিয়া কোম্পানির সমন্বয়কারী ও ধারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি করা হয়।
১৯৮০ ও ৯০’এর দশকজুড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একের পর এক মিডিয়া কোম্পানি, সংবাদপত্র ক্রয় করে চলেন মারডক। ততদিনে বিশ্বে তিনি মিডিয়া মোগল বলে খ্যাতি লাভ করে ফেলেছেন। তিনি পরিণত হন রূপকথার মাইডাসের প্রতিচ্ছবিতে, যার হাত যেখানেই পড়ে, সেখানেই সোনা ফলে! ১৯৮৫ সালে তিনি ক্রয় করে নেন বিখ্যাত ‘টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্স’ ও আরো কিছু টেলিভিশন স্টেশন। এগুলোকে একত্র করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘ফক্স ইনকর্পোরেশন’। এই ফক্স ইনকর্পোরেশন বর্তমানে আমেরিকার অন্যতম বৃহত্তম টেলিভিশন নেটওয়ার্ক। ১৯৯০ সালে মারডক প্রতিষ্ঠা করেন হংকং ভিত্তিক টিভি চ্যানেল ‘স্টার টিভি’। একই বছর তিনি প্রথম মিডিয়া জগতের বাইরে পদার্পন করে খেলাধুলায় অর্থলগ্নি করেন। তিনি ‘লস এঞ্জেলস লেকারস এনবিএ ফ্যাঞ্চাইজ’ এর অংশীদার হন এবং ‘ফক্স স্পোর্টস-১’ টিভি চ্যানেল ও ‘ফক্স স্পোর্টস ওয়েবসাইট’ প্রতিষ্ঠা করেন।
রুপার্ট মারডকের দীর্ঘকালের সাম্রাজ্যে সমালোচকদের সমালোচনা কোনোরূপ আঁচ ফেলতে পারেনি। কিন্তু ২০১১ সালে গিয়ে প্রথমবারের মতো আক্ষরিক অর্থেই তার সাম্রাজ্য একটা প্রবল ঝাঁকুনি খায়। লন্ডনে মারডকের অত্যন্ত জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর বিরুদ্ধে টেলিফোন হ্যাকিংয়ের অভিযোগ ওঠে। ট্যাবলয়েডটির বেশ কয়েকজন সাংবাদিক এবং সম্পাদককে, লন্ডনের একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির ভয়েস মেইল হ্যাক করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। মারডক এবং তার ছেলে জেমসকে একাধিকবার আদালতে সাক্ষ্য দিতে হয় এ ব্যাপারে। বছরের শেষের দিকে বিখ্যাত এই ট্যাবলয়েডটি বন্ধ করে দেন মারডক এবং হ্যাকিংয়ের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেন।
এই ঘটনা অবশ্য মারডকের সাম্রাজ্যের দৃশ্যমান কোনো ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হয়নি। তার ফক্স ইনকর্পোরেশন এবং নিউজ কর্প এখনো রাজত্ব করে চলেছে পুরোদমে। তবে বয়স হয়ে আসায় ধীরে ধীরে রাজদণ্ডটা ছেলেকেই বুঝিয়ে দিতে চান তিনি। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে ‘টুয়েন্টিফাস্ট সেঞ্চুরি ফক্স’ এর সিইও পদে ছেলে জেমস মারডককে অধিষ্ঠিত করে নিজে এক্সিকিউটিভ কো-চেয়ারম্যান পদে সরে আসেন। এদিকে ২০১৭ সালের পুরো দ্বিতীয়ভাগ জুড়ে কানাঘুষা চলে যে, ফক্সের অধিকাংশ মালিকানা কিনে নেবে ডিজনি। এই গুজব গুঞ্জনে পরিণত হয় নভেম্বরের দিকে এবং মিডিয়াপাড়া সরগরম হয়ে ওঠে। হলিউডের এক নম্বর স্টুডিও কিনে নিচ্ছে তার সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী স্টুডিওকে, উত্তেজিত হবার মতোই একটা সংবাদ। ডিসেম্বরে ৫২.৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যে ‘টুয়েন্টিফাস্ট সেঞ্চুরি ফক্স’ এর অধিকাংশ স্বত্ব কিনে নিতে একটি চুক্তি করে ডিজনি। মারডক কেবল ‘ফক্স নিউজ’, ‘ফক্স ব্রডকাস্ট নেটওয়ার্ক’ এবং ‘ফক্স স্পোর্টস-১’ এর মালিকানা ধরে রাখেন।
১৯৩১ সালের ১১ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে জন্মগ্রহণ করেন কেইথ রুপার্ট মারডক। তার বাবা কেইথ মারডকও ছিলেন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক। তার নামের মধ্যাংশ ‘রুপার্ট’ আসে তার দাদার নাম থেকে। মেলবোর্নের ছায়াঘন বৃক্ষ সমৃদ্ধ অঞ্চলে অবস্থিত ছিল মারডকের বাড়ি। সকালবেলা বাবার সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারে বই পড়ে, আর বিকালে ঘোড়ার পিঠে চড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করেই কাটে তার শৈশব। প্রাথমিক শিক্ষা গৃহে সমাপ্ত করে জিলং গ্রামার স্কুল এবং অক্সফোর্ডের ওরচেস্টার কলেজে পড়ালেখা করেন তিনি। ১৯৫৬ সালে প্যাট্রিসিয়া বুকারকে বিয়ে করেন। একাধিক বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জের ধরে চলমান সাংসারিক বিবাদ চূড়ান্ত রূপ পায় ১৯৬৫ সালে ডিভোর্সের মাধ্যমে।
১৯৬৭ সালে মারডক দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। আনা টর্ভের সাথে তার দ্বিতীয় সংসার স্থায়ী হতে হয়েও হলো না। ওয়েন্ডি ডেংয়ের প্রেমে পড়ে ১৯৯৯ সালে টর্ভের সাথে ৩২ বছরের সংসার জীবনের ইতি ঘটান মারডক। মাত্র ১৭ দিনের মধ্যেই ডেংকে বিয়ে করে ঘরে তোলেন তিনি। তবে চতুর্থ বউ ঘরে তোলেন ঠিক ১৭ বছর পর! ২০১৪ সালে ডেংকে ডিভোর্স দেন মারডক। দু’বছর পর ব্রিটিশ গায়ক মিক জ্যাগারের সাবেক স্ত্রী জেরি হলের সাথে গাঁটছড়া বাঁধেন তিনি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখন হলের সাথেই আছেন মারডক! চার স্ত্রীর প্রথম তিনজনের ঘরে মারডকের ৬ সন্তানের জন্ম। বর্তমান স্ত্রী জেরি হলের ঘরে সন্তান নেই তার।
রুপার্ট মারডক ছিলেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের ভালো বন্ধু। তবে গুজব শোনা যায়, তার সাবেক স্ত্রী টর্ভের সাথে ব্লেয়ারের পরকীয়া সম্পর্ক আছে সন্দেহে তিনি ব্লেয়ারের সাথে সম্পর্ক ছেদ করেন! মারডক একজন দূরদর্শী ‘মিডিয়াম্যান’ই নন, তিনি একজন চমৎকার ব্যবসায়ী এবং পরিকল্পনাবিদও বটে। প্রযুক্তি জগতে অধিকাংশই স্টিভ জবসকে একজন আদর্শ সিইও হিসেবে স্মরণ করে। ঠিক তেমনি মিডিয়া জগতের পুরোধা মারডকও হতে পারেন অনেকের আদর্শ। বিস্তর সমালোচনা থাকা সত্বেও মিডিয়া বিকাশে তার অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। ৮৭ বছর বয়সী রুপার্ট মারডক আজও কাজ করে চলেছেন অদম্য গতিতে। এই মিডিয়া মোগলের জীবনী থেকে মিডিয়া জগত নিয়ে স্বপ্ন দেখাদের তাই শেখার আছে অনেক কিছুই।
ফিচার ছবি: CNN Money