কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষি খাতকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দরকার কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিচার করলে দেখা যায়, কৃষিখাতে উদ্যোক্তাদের সংখ্যা খুবই কম। তাই উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত হয়ে গেলো ‘Trail Blazer 2.0’, যা একটি বিজনেস আইডিয়া প্রতিযোগিতা।
বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য দরকার নতুন কিছু করা। সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণীদের মাথায় ঘুরতে থাকা চমৎকার বিজনেস প্ল্যানগুলোকে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিতেই নেদারল্যান্ডসের ‘দ্য ডাচ প্রজেক্ট অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি অফ টোয়েন্টে’-এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাব এই প্রতিযোগিতার সূচনা করে।
গত বছরের মতো এ বছরও এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থী অংশ নেয়। ৭০টি টিম তাদের বিজনেস আইডিয়া জমা দেয়। দ্বিতীয় রাউন্ডের জন্য বাছাই করা হয় ১৫টি টিম। পরবর্তীতে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে ফাইনালের জন্য ৫টি টিম নির্বাচিত হয়। ২০ অক্টোবর, ২০১৯ তারিখে ফাইনাল রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়। বিজয়ীদের বিজনেস আইডিয়াকে বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য প্রদান করা হয় ১ হাজার ইউরো। অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের প্রফেসর ড. ইসমাইল হোসেন, BYLC থেকে হাসিব আল মামুন সুমন, এবং ওয়ান ইয়ং ওয়ার্ল্ডের অ্যাম্বাসেডর তন্ময় কুমার ঘোষ। সঞ্চালক হিসাবে ছিলেন স্বপ্নীল আহমেদ জাহিন। এছাড়া তরুণ উদ্যোক্তাদের দিকনির্দেশনা দিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভিসি, প্রো-ভিসি, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং উপদেষ্টাগণ তাদের মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন।
প্রতিযোগিতায় ফাইনালিস্ট নির্বাচিত হওয়া ৫টি টিম হলো: KABULIWALA, AGRO-EXPLORER, TRIOS, EKARAS এবং ecoSHIELD। এই পাঁচটি টিমের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে Trail Blazer 2.0 পায় তাদের চ্যাম্পিয়ন এবং দারুণ কিছু উদ্যোক্তা।
অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকাল ৪.৪৫ মিনিটে। প্রতিযোগী টিমগুলো তাদের প্রেজেন্টেশন তুলে ধরে। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় ‘টিম ইকারাস’। তাদের আইডিয়াটি ছিল ছানার পানি দিয়ে বেভারেজ ড্রিংকস তৈরি করা। ছানার পানি সাধারণত ফেলে দেয়া হয়, কিন্তু এতে থাকে দুধের অনেক পুষ্টিগুণ। তাই যদি এই পানিকে ড্রিংকস হিসেবে বাজারজাত করা যায়, তবে সেটা শুধু ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে লাভ নিয়েই আসবে না, পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করবে।
এই আসরের প্রথম রানার্সআপ হয়েছে ‘টিম কাবুলিওয়ালা’। তাদের আইডিয়া ছিল পকেট স্ন্যাক্স তৈরি করা, যাতে উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে মুড়ি। প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানারআপ হয় ‘টিম অ্যাগ্রো এক্সপ্লোরার’। তারা হাজির হয়েছিল ডিমের খোসা থেকে নানাবিধ জিনিস, যেমন- সার বা পোল্ট্রি খাদ্য তৈরির এক আইডিয়া নিয়ে। এছাড়া, বাকি টিমগুলোর আইডিয়াও ছিল সময়োপযোগী। সব টিমের প্রেজেন্টেশন শেষে সম্মানিত বিচারকগণ সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান পর্যালোচনা করেন। এভাবেই শেষ হয় প্রথম অংশ।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান সৌরভ, প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান শিকদার, প্রো-ভিসি ড. মো. জসিমউদ্দীন খান, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মো. সোলায়মান আলী ফকির তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। বক্তব্য শেষে মাননীয় উপাধ্যক্ষ বিচারকদের হাতে তুলে দেন সম্মানসূচক ক্রেস্ট।
এরপর ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফলাফল ঘোষণার পর চ্যাম্পিয়ন, প্রথম রানার্সআপ ও দ্বিতীয় রানার্সআপ টিমের হাতে তুলে দেয়া হয় যথাক্রমে ৫০০ ইউরো, ৩০০ ইউরো ও ২০০ ইউরো প্রাইজমানি। মাননীয় উপাধ্যক্ষ এ পর্যায়ে তার বক্তব্য প্রদান করেন, এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের আরো অনুষ্ঠানের আয়োজন করার আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবের প্রেসিডেন্ট জনাব ড. মো. হামিদুল ইসলাম অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এরপর শুরু হয় ফটোসেশন পর্ব। সবশেষে সম্মানিত অতিথি, প্রতিযোগী এবং আয়োজকদের জন্য ছিল খাবার ব্যবস্থা।
সম্মানিত শিক্ষকদের মাঝে প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান, বাউসিসি সহ-সভাপতি ড. বাপন দে, এবং বাউসিসি উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান শিকদার সবসময়ই ছাত্রদের উৎসাহ প্রদান করে আসছেন এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য। আশা করা যায়, উদ্যোক্তা তৈরির এই উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে বের হয়ে আসবে এমন কিছু প্রতিভা ও আইডিয়া, যা আমাদের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারবে।
চমৎকার এই আয়োজনের মিডিয়া পার্টনার হিসাবে ছিল রোর বাংলা।