Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যুক্তরাষ্ট্রের যেসব জায়গা দিয়ে বিমান ওড়ানো নিষেধ

পরাক্রমশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং অন্যান্য পরিস্থিতির স্বার্থে বেশ কিছু নিয়ম রক্ষা করে চলে। এর মধ্যে একটি হলো নির্দিষ্ট অঞ্চল বা এলাকার উপর দিয়ে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

সহজ করে বললে, কেউ চাইলেও ঐ সব এলাকার ওপর দিয়ে বিমান নিয়ে উড়ে যেতে পারবে না। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতির পিতা ওয়াশিংটনের বাসভবন, এরিয়া ফিফটি ওয়ান, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের বাসভবন, প্যানটেক্স নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটি এবং আরও বেশ কিছু জায়গা।

নাইন-ইলেভেনের ঘটনার পর এই নিয়ম নতুন করে আরও অনেক জায়গায় আরোপ করা হয়েছে। বিমান নিয়ে আকাশে ওড়ার আগে আপনার গতিবিধি ঠিক করে নিতে হবে, যাতে ভুলেও এসব এলাকায় ঢুকে না পড়েন। কেন এসব এলাকা দিয়ে বিমান ওড়ানোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেসব নিয়েই আলোচনা করা হবে এই লেখায়।

ওয়াশিংটনের বাস ভবন

কাঠ দিয়ে নির্মিত এই বাসভবনটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি জাতীয় এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা। জাতির পিতার বাসভবনের কোনো প্রকার ক্ষতি হোক, এটা তারা কখনোই চায় না।

১৭৫৮ থেকে ১৭৭৮ সালের মধ্যে নির্মিত হওয়া এই বাসভবনটি সময়ের সাথে অনেক কিছুরই সাক্ষী হয়েছে এবং সেই সাথে ‘বয়সের ছাপ’ও পড়েছে বাড়িটির ওপর। বাড়িটির সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এর আশেপাশে ভারী কম্পন সৃষ্টি করে এমন সবকিছুর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বিমান চলাচলও।

ওয়াশিংটনের বাসভবনের নিরাপত্তার স্বার্থে বিমানের ভারী কম্পনে যাতে কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়, সেজন্য ভার্জিনিয়ার মাউন্ট ভার্নন অঞ্চলের ১,৫০০ ফুট উচ্চতার মধ্য দিয়ে কোনোপ্রকার বিমান চলাচল করতে পারবে না। এমনকি ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহারের অনুমতি পেতেও সেখানে বেশ বেগ পেতে হয়।

মার্কিনিদের জাতির পিতা জর্জ ওয়াশিংটনের বাসভবন; Image source: BUDDY SECOR/travel.usnews.com

 

ডিজনি থিম পার্ক

ফ্লোরিডার ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ড এবং ক্যালিফোর্নিয়ার ডিজনিল্যান্ড এই দুটো পার্কের জন্যই নো ফ্লাই জোন সুবিধা দেওয়া হয়েছে। মূলত ২০০১ এর নাইন-ইলেভেনের ঘটনার পর এই আবেদন করে ডিজনি থিম পার্ক প্রতিনিধিরা।

এই বিশেষ সুবিধা পাওয়ার জন্য অবশ্য তাদের বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। মাত্র (!) ৪০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার খরচ করে তারা এই বিশেষ সুবিধার অধিকারী হয়। চুক্তি অনুযায়ী দুটো ডিজনি পার্কেরই চারপাশে ৩ মাইল এলাকার ভেতর এবং ৩,০০০ ফুট উচ্চতার মধ্যে কোনো প্রকার বিমান প্রবেশ করতে পারবে না।

ডিজনির মতে, থিম পার্ক দুটিতে যে বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থী প্রতিদিন আসে, তাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এটি করা হয়েছে। কিন্তু এদের বিপরীত পক্ষের মত হলো, ডিজনি থিম পার্কের এলাকায় বাণিজ্যিক বিমান দিয়ে প্রচারণা চালানোর প্রতিযোগিতা বন্ধ করার উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়েছে। অন্যদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার ডিজনিল্যান্ডের মতোই পরিচিত নট’স বেরি ফার্মও একইভাবে নো ফ্লাই জোনের আবেদন করেছিল, অথচ নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে তাদের আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়।

প্যানটেক্স নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটি

টেক্সাসের আমারিলো থেকে ১৭ মাইল উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই প্যানটেক্স নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটি। সর্বসাধারণের জন্য তালাবদ্ধ এই জায়গাটিতে আমেরিকার পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ ও তার রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয়।

স্বাভাবিকভাবেই কেউ চাইবে না এই এলাকায় কোনো বিমান দুর্ঘটনা ঘটুক কিংবা নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে এর ওপর দিয়ে বিমান চলাচল করুক। এজন্য এই অঞ্চলের চারপাশে দশ মাইল এলাকা জুড়ে কোনো প্রকার বিমান চলাচল করতে পারে না।

প্যানটেক্স নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটি; Image source: ananuclear.org

ওয়াশিংটন ডি.সি.

নাইন-ইলেভেনের আক্রমণের পর নড়ে চড়ে বসে পুরো আমেরিকার নিরাপত্তা বাহিনী। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আক্রমণের পর সরকারি অফিস এবং আদালতগুলোতে যে আক্রমণ হবে না- তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডি.সির নিরাপত্তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ মিলে একটি সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে সমুদ্র সীমার ১৮,০০০ ফুট উচ্চতার নিচে কোনো বিমান চলাচল করতে পারবে না এবং ওয়াশিংটন ডি.সির চারপাশ ঘিরে একটি বলয় তৈরি করা হয়েছে, যার মধ্যে কোনো বিমান প্রবেশ করতে চাইলে, আগে তাদের পরিচয় দিয়ে অনুমতি নিয়ে নিতে হবে।

এই বলয়ের মধ্যেই আবার রেগান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি ১৫ নটিক্যাল মাইল জুড়ে একটি ছোট জায়গা আছে। এই এলাকার মধ্যে সব রকমের বিমান চলাচল নিষিদ্ধ। আপনি যদি ভুল করেও এই এলাকায় প্রবেশ করে ফেলেন, তাহলে ফাইটার বিমানের সাথে দেখা হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারেন।

ওয়াশিংটন ডিসি; Image source: Lucky-photographer/Shutterstock

এরিয়া ফিফটি ওয়ান

আমেরিকার ব্যাপারে জানেন, কিন্তু এরিয়া ফিফটি ওয়ানের নাম শোনেননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। এমন একটি জায়গা, যেটি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। বলা হয়, এলিয়েনদের সাথে নাকি এখান থেকে নিয়মিত যোগাযোগ করা হয়। অনেকে নাকি এখানে ইউএফও নামতে দেখেছেন। যদিও এসব দাবির স্বপক্ষে কোনো শক্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

নেভাডার বিশাল মরুভূমির মাঝে এই জায়গায় সাধারণত নতুন মিলিটারি প্রযুক্তির পরীক্ষা চালানো হয়। তাই যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রশ্নে অনেক গোপনীয় এবং সুরক্ষিত একটি জায়গা এটি। আর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্যই এর আশেপাশে কোনোরকম বিমান চলাচল করতে পারে না; হোক সেটি যাত্রীবাহী কিংবা সামরিক বিমান।

এরিয়া ফিফটি ওয়ান; Image source: John Locher/AP

কেনেডি স্পেস সেন্টার

ফ্লোরিডার স্পেস বন্দরে সবসময় হাজার খানেক মানুষ জড়ো হয় সামনে থেকে রকেট উৎক্ষেপনের দৃশ্য দেখার জন্য। কার না ভালো লাগবে লৌহযানের খাড়াভাবে মহাকাশে উড়ে যাবার সাক্ষী হতে!

কিন্তু এই দৃশ্য কেবল মাটিতে থেকেই দেখতে হবে আপনাকে; বিমানে চড়া অবস্থায় এই দৃশ্য দেখার কপাল খুব একটা হওয়া সম্ভব না। কেননা, কেনেডি স্পেস সেন্টারের আকাশ দিয়ে বিমান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ; Image source: BRAC Blog

ক্যাম্প ডেভিড

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের সময় থেকে এই প্রথা চালু হয় যে, গুরুত্বপূর্ণ সকল কূটনৈতিক চুক্তি এই ক্যাম্প ডেভিডে বসে সই করা হবে। ম্যারিল্যান্ডের থারমাউন্টে অবস্থিত ক্যাম্প ডেভিডের আগের নাম হলো নাভাল সাপোর্ট ফ্যাসিলিটি।

রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে প্রায়ই বিভিন্ন দেশের নেতাদের আগমন দেখা যায়। মিশর এবং ইসরাইলের মাঝে সমঝোতা চুক্তির মতো বেশ কিছু চুক্তি এখানে স্বাক্ষরিত হয়। তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানটির ওপর দিয়েও বিমান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

ক্যাম্প ডেভিডে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের চলাফেরা; Image source: Dennis Brack-Pool/Getty Images

এরকম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানের উপর দিয়ে বিমান চলাচলে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে বিমান চালককে সম্মুখীন হতে হয় কঠিন পরিস্থিতির, যা কেউই মোকাবেলা করতে চান না। যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সম্ভাব্য সকল দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্যই এই ব্যবস্থা। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও পৃথিবীর আরও অনেক জায়গায় রয়েছে এমন বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা। পৃথিবীর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ সকল স্থাপনা রক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে এমন পদক্ষেপ।

This is a Bengali article about no fly zones in USA.

All the refereneces are hyperlinked in this article.

Featured Image: Disney

Related Articles