Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বনাঞ্চল বনাম ওয়াইল্ড কফি: ইথিওপিয়ার বহুলালোচিত সমস্যা

ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ হাতে নিয়ে বিশ্বজুড়ে কতই না বড় বড় পরিকল্পনা ও উন্নয়নের গাঁথা রচিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে কতই না মহাকাব্য। কিন্তু এই ধোঁয়া ওঠা কফি পানের সময় একবারও কি ভেবেছেন এর অন্তরালের গল্পটি কেমন? ১০ টাকায় কেনা এক প্যাকেট কফি হাতে নিয়ে যদি কখনো এই পানীয়ের উৎপত্তিস্থল নিয়ে জানার চেষ্টা করেন, তাহলে সবার আগে যে নামটি আপনার সামনে উপস্থিত হবে, তা হলো ইথিওপিয়া। একমাত্র ইথিওপিয়ায় উৎপন্ন হয় এই পানীয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রজাতি, ওয়াইল্ড কফি, যা ‘ওয়াইল্ড কফি অ্যারাবিকা’ নামেও পরিচিত। আর এই কফি পরিবেশনের জন্য ইথিওপিয়ায় প্রচলিত রয়েছে বিশেষ প্রথা। কিন্তু কী এই ওয়াইল্ড কফি? আর কেনই বা এটি আলোচনার বিষয়?

জালের ওপরে রোদে শুকানো কফি বীজ সংগ্রহ করছেন স্থানীয় চাষী; Image Source: blogs.sciencemag.org

উৎপাদন, প্রস্তুতি ও পরিবেশন

ইথিওপিয়ার সবচেয়ে বড় বনাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম হ্যারেনা বনাঞ্চল। দেশটির রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণের ‘বেল ন্যাশনাল পার্ক’ এর পর্বতমালা জুড়ে এই বনাঞ্চল রয়েছে। প্রায় ১৮০০ মিটার উঁচু এই বনে বিভিন্ন সুউচ্চ গাছের ছায়ায় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে একধরনের অ্যারাবিকা কফি জন্মায়। এটিই বিশ্বজুড়ে সমাদৃত ‘ওয়াইল্ড কফি’ নামে। 

খোসা ছাড়ানো শুকনো কফি বীজ ধোয়ার কাজ চলছে; Image Source: bbc.com

চাষীরা এই কফির বীজগুলো খালি হাতেই সংগ্রহ করেন। আর এক্ষেত্রে তাদের প্রধান প্রতিকূলতা হলো বন্য বেবুন। পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে বিশেষত লাতিন আমেরিকার প্রেসিডিয়ায় কফির বীজগুলো সংগ্রহের পরই পানি দিয়ে ধোয়া হয়। কিন্তু ইথিওপিয়ার এই কফির ক্ষেত্রে ধোয়াধুয়ির কাজ আসে আরও পরে। সংগ্রহের পরপরই এই ওয়াইল্ড কফির বীজগুলো ঝুলন্ত জালে রেখে রোদে শুকানো হয়। এরপরে শুকনো বীজগুলোর খোসা ছাড়ানো হয়। তারপরে সেগুলোকে ধোয়া হয়।

চলছে কফি বীজ রোস্টিং এর কাজ; Image Source: matadornetwork.com

শুধু উৎপাদন ও প্রস্তুতিতেই নয়, এই কফির রয়েছে খুব স্বকীয় ও ঐতিহ্যবাহী পরিবেশন প্রথা। এই কফি পরিবেশনের দায়িত্ব থাকে পরিবারের একজন নারীর ওপর। প্রথমেই অতিথিকে স্বাগত জানানোর জন্য সদ্য কেটে আনা ঘাস ও তাজা ফুলের সাহায্যে একটি কার্পেট বা মাদুর তৈরি করা হয়। এই ঘাস ও ফুলের তৈরি মাদুরের ওপরেই একটি ট্রেতে রাখা হয় হাতলবিহীন (কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাতল থাকতেও পারে) চায়ের কাপ।

এরপরে ধুয়ে রাখা শুকনো বীজগুলো রোস্ট করা বা ভাজা হয়। এই প্রক্রিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত চলে যতক্ষণ পর্যন্ত বীজগুলোর রঙ কিছুটা হালকা না হয়। এরপরে অতিথিদের সেই হালকা রঙের বীজগুলো দেখানো হয়। এ সময় সদ্য রোস্ট করা বীজগুলো থেকে সৃষ্ট মন মাতানো গন্ধে ঘরের পরিবেশ মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। আর এই সুগন্ধটি উক্ত নারী তার হাতের বিশেষ ভঙ্গিমার সাহায্যে আরও ভালভাবে ছড়িয়ে দেন।

মর্টারে কফি বীজ গুঁড়ো করা হচ্ছে; Image Source: justanotheramericanprincess.blogspot.com

এই প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপে মর্টারে গুঁড়ো করা কফি ইথিওপিয়ার ঐতিহ্যবাহী কফি পট ‘জাবানা’তে ফুটন্ত গরম পানিতে মেশানো হয়। এই পাত্রেই কফিতে চিনিও মেশানো হয়। এরপর আসে পরিবশেনের পালা। কিন্তু এখানেও রয়েছে বিশেষ ঐতিহ্য।

আমরা প্রায় সকলেই ‘ভার্জিন অলিভ অয়েল’ সম্পর্কে জানি। অর্থাৎ জলপাই পেষার পর কোনো রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর আগে প্রথমেই যে ঘন তেল উৎপাদন করা হয়, তাকেই ভার্জিন অলিভ অয়েল বলে। এই কফি পরিবেশনের ক্ষেত্রেও এই আইডিয়া ব্যবহার করা হয়। প্রস্তুত করা হয় ‘ভার্জিন’ কফি। ইথিওপিয়ান এই ভার্জিন কফিকে বলা হয় অ্যাবোল বা প্রথম কফি। এই অ্যাবোল পরিবেশিত হয় সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে।

একইভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় কফিও তৈরি হয় যা যথাক্রমে টোনা ও বারাকা নামে পরিচিত। এই দুটি তৈরি হয় প্রথম কাপটি পরিবেশনের পরে জাবানাতে আরও খানিকটা পানি যোগ করে। এই তিন ধরনের কফি পরিবেশন করা হয় ভুট্টা, গম বা ভাজা বার্লির সাথে। মাঝে মাঝে পরিবেশনের ঠিক আগে, তৈরি কফিতে সামান্য লবণও যোগ করা হয়ে থাকে।

কফি পরিবেশনের এই ঐতিহ্যবাহী প্রথা ইথিওপিয়ায় মর্যাদার প্রতীক, যার মাধ্যমে আগত অতিথির প্রতি আতিথেয়তা, বন্ধুত্ব ও সম্মান প্রদর্শন করা হয়। বিশেষ উৎপাদন প্রক্রিয়ার কারণে ইথিওপিয়ার কফি বিশ্বজুড়ে কফিপ্রেমীদের কাছে অনেক বেশি সমাদৃত। ইথিওপিয়ায় বর্তমানে এই প্রাকৃতিক কফির উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় স্থানের পরিমাণ কমতে কমতে মাত্র ১০ শতাংশ অবশিষ্ট রয়েছে। মাত্র ২,০০০ বর্গ কিলোমিটার উৎকৃষ্ট বন্য এলাকা জুড়ে এই ওয়াইল্ড অ্যারাবিকা কফির চাষ হচ্ছে। ইথিওপিয়ার এই অংশটি বিখ্যাত ‘অ্যাফ্রোমন্টেন’ অঞ্চলের খুব ছোট একটি অংশ।

আগত অতিথিদের কফি আপ্যায়নে ব্যস্ত ইথিওপীয় নারী; Image Source: cnn.com

পরিবেশ বনাম জীবিকা

পাহাড় কেটে বাড়িঘর তৈরি, বনাঞ্চল সাফ করে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ বাড়ানোর গল্প আমাদের দেশে যেমন সাধারণ, তেমনি বনাঞ্চল সাফ করে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রজাতির কফি চাষের সমস্যাটি আফ্রিকার তৃতীয় বিশ্বের অন্তর্ভুক্ত দেশ ইথিওপিয়ায়ও খুব সাধারণ। পার্থক্য এই যে, এই কফি উৎপাদন ঐ অঞ্চলের স্থানীয় অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা এবং হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। তাই একদিকে বনাঞ্চল ধ্বংস আর অন্যদিকে মানুষের জীবিকা নির্বাহ- কোনটির গুরুত্ব বেশি, কোনটির ক্ষেত্রে আপোষ মেনে নেওয়া যায়- এই আলোচনায় বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংস্থা ও বোদ্ধারা বেশ সময় ও অর্থ ব্যয় করে চলেছেন।

উল্লেখ্য, এই কফি চাষের প্রক্রিয়াটি উক্ত অঞ্চলের পর্যটন শিল্পেও ভূমিকা রেখেছে। তবে বনাঞ্চলও এদিক থেকে পিছিয়ে নেই। কিন্তু একদিকে এই কফির চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জমি তৈরিতে বনাঞ্চল যেমন ধ্বংস হচ্ছে তেমনি আধা-প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরির কারণে এই ‘ওয়াইল্ড কফি’র মান ও মূল্য উভয়ই কমে যাচ্ছে। সেই সাথে কমে যাচ্ছে এই অঞ্চলের স্থানীয় বন্যপ্রাণী ও পাখির সংখ্যাও।

যদিও শুধুমাত্র প্রাকৃতিক উপায়ে বনে উৎপাদিত কফিকেই ওয়াইল্ড কফি বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে দেখা যায় যে, ইথিওপিয়ায় বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এই ওয়াইল্ড কফি উৎপাদন করা হয়। এই বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ প্রাকৃতিক উপায়ে বনাঞ্চলে উৎপন্ন হয়। ১০ শতাংশ উৎপাদিত হয় কফি উৎপাদনের জন্য অনুমোদিত জমিতে। ৫০ শতাংশ উৎপাদিত হয়ে থাকে চাষীদের বাড়ির পাশের বাগানে। আর বাকি ৩৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় ‘আধা-প্রাকৃতিক’ উপায়ে। এই শেষ উপায়টিতেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ‘খাঁটি’ ওয়াইল্ড কফি উৎপাদিত হয়ে থাকে। পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত কফির সাথে এই আধা-প্রাকৃতিক পদ্ধতির পার্থক্য এই যে, এক্ষেত্রে গাছের ছায়ার পরিমাণ অনেক কম থাকে। আর এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত বীজ ও চারা বিভিন্ন উপায়ে সংগৃহীত হয়। এমনকি সরকার কর্তৃকও এই চারা চাষীদের প্রদান করা হয়।

ইথিওপিয়ার ওয়াইল্ড কফি; Image Source: cnn.com

কিন্তু এই পদ্ধতিতে বনাঞ্চল ও পরিবেশের ওপর ভীষণ চাপ পড়ছে। এতে প্রায় ৩০ শতাংশ বড় বড় ছায়া প্রদানকারী গাছ, যেগুলো পুরোপুরি বড়ও হয়ে ওঠেনি, সেগুলো কেটে চাষের জমির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও এই পদ্ধতিতে গাছের প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ২৬ শতাংশ বেড়েছে, কিন্তু ছায়া প্রদানকারী প্রায় ১৫ মিটার লম্বা গাছের সংখ্যা বিলুপ্তির পথে। আর এসকল গাছের পুনরায় জন্মানোর পন্থাও বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

তবে কফি উৎপাদন ছাড়া আবহাওয়ার পরিবর্তন ও গবাদী পশুর খাবারের যোগান দেওয়ার জন্যও এই বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে। ২০১৭ সালে ন্যাচার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মাটি অতিরিক্ত উষ্ণ ও শুষ্ক হয়ে যাওয়ায়, বেল পর্বতমালায় কফি উৎপাদন আর সম্ভব হবে না। বন্য ও প্রাকৃতিকভাবে কফি জন্মানোর স্থানে গাছের ছায়া যেমন অনেক বেশি হয়, তেমনি রোদের পরিমাণও হয় অনেক কম। আর তাই ঐ স্থানটি বেশ স্যাঁতস্যাঁতেও থাকে।

বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় গাছের পাশাপাশি আরও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে হ্যারেনা বনের প্রধান বন্যপ্রাণী নেকড়ে। এই তালিকায় আরও রয়েছে বড় মাথাওয়ালা আফ্রিকান ছুঁচো। এই প্রাণীটি শুধুমাত্র এই বেল পর্বতমালাতেই অবশিষ্ট রয়েছে। এছাড়াও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পাহাড়ী নায়ালার বসবাসও এই বনাঞ্চলে। ইথিওপিয়ার প্রায় ৬ শতাংশ পাখি এই বনেই বাস করে।

সন্তানের সাথে কফি সংগ্রহ করছেন একজন চাষী; Image Source: news.nationalgeographic.com

প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় গাছের ছায়ায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সংখ্যাও বেশি হয়, যা অবাক করা হলেও চাষকৃত কফি বাগানেও দেখা যায় (এরকম ঘটনা অন্য কোন চাষযোগ্য জমি বা বাগানে ঘটে না), তবে অবশ্যই সংখ্যায় অনেক কম। বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে এই অঞ্চলের মধু সংগ্রহকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই মধু সংগ্রহ করা হয় প্রায় ২১ মিটার (৭০ ফুট) লম্বা গাছ থেকে। আর কফি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য উঁচু ও লম্বা গাছগুলোই সবার আগে কাটা পড়ছে।

খালি হাতেই গাছ থেকে কফি সংগ্রহ করছেন একজন চাষী; Image Source: modernsurvivalliving.com

প্রতিরোধ ব্যবস্থা

বর্তমান পরিস্থিতি প্রতিরোধ ব্যবস্থার অনেক ঊর্ধ্বে থাকায় প্রতিকারের দিকেই এখন সবার মনোযোগ। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে ভূমিকা পালন করছে। প্রতিকার উপলক্ষ্যে করা পরিকল্পনার মধ্যে চাষীদের কফি উৎপাদন সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ দেওয়া, তাদের উৎপাদিত কফির জন্য সঠিক মূল্য প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এই প্রতিকার ব্যবস্থায় বনাঞ্চল পুনরুদ্ধারের কোনো পরিকল্পনা সেভাবে উল্লেখযোগ্য নয়।

তবে ক্ষতিবৃদ্ধি যেন না হয়, সে উদ্দেশ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যেমন ফার্ম আফ্রিকার উদ্যোগে উক্ত বনাঞ্চলের নিম্নভাগে বসবাসকারী বাসিন্দাদের উন্নত জীবনযাপন ও বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থার চেষ্টা চলছে। এই বাসিন্দারা পর্বতমালার উচ্চ অংশে গিয়ে একাধারে কয়েক সপ্তাহ যাবৎ তাদের গবাদীপশু চারণ করে। প্রতিষ্ঠানটির রিপোর্ট অনুযায়ী, এতে প্রায় ৭ শতাংশ বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে। গবাদী পশু চারণ বন্ধ করেও যেন উন্নত জীবনযাপন সম্ভব হয় সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে, রপ্তানির জন্য প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত কফির সাথে নিকটস্থ ডেলো মেনা থেকে চাষকৃত কফি মিশিয়ে তারপরে রোস্টিং করা হয়। স্থানীয়রা খুব সহজেই পার্থক্য ধরতে পারলেও বহির্বিশ্বে এই পার্থক্য কেউ তেমন একটা ধরতেই পারেন না। যদি বিশ্ব বাজারে এই বিষয়ে প্রচার শুরু হয় তাহলে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত কফির চাহিদা মেটানোর জন্য আরও বনাঞ্চল ধ্বংস হবে। এই উদ্বেগের পক্ষে তথ্য দিয়ে ২০০৬ সালে ফরেস্ট ইকোলজি এণ্ড ম্যানেজমেন্ট এ প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, যেসকল স্থানে কফি উৎপাদনের জন্য গাছ কেটে বন ধ্বংস করা হয়েছে, সেসকল স্থানে লিয়ানা নামক লতাসহ বিভিন্ন ছোট ছোট গাছ ও গুল্মের পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে।

অনুমোদিত জমিতে জালের ওপর রোদে কফি শুকাতে ব্যস্ত চাষীরা; Image Source: axumtrading.com

খাদ্য সংস্থানের কোনো সমস্যা না হলেও, এই বনের নেকড়ে সংখ্যার বিলুপ্তির মূলে রয়েছে গৃহপালিত কুকুর দ্বারা ছড়ানো ভাইরাস, যাতে আক্রান্ত হলে ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই নেকড়ে মারা যায়। তবে ইথিওপিয়ান উলফ্ রিজারভেশন প্রোগ্রামের মতে, এই নেকড়েগুলোর শরীর নিজে থেকেই এক ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলায় ভাইরাসজনিত মৃত্যুর হার এখন অনেক কম। এই সংস্থাটিই উক্ত কুকুরগুলোর টিকাদানের ব্যবস্থা করে থাকে। তবে বাসস্থানের অভাব এই নেকড়ে প্রজাতির বিলুপ্তির জন্য আরও বেশি দায়ী।

২০১০ সালে এই অঞ্চল ইউনেস্কো বায়োস্ফেয়ার রিজার্ভ এর অন্তর্ভুক্ত হয়। এই ধরনের অন্যান্য রিজার্ভের মতোই এক্ষেত্রেও সুরক্ষিত বনাঞ্চল ও চাষের জন্য আলাদাভাবে এলাকা নির্ধারণ করা থাকবে। এই রিজার্ভের বিভিন্ন পরিকল্পনার মধ্যে পুনরায় বনায়ন উল্লযোগ্য। কফি চাষীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কফি উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত করতে ও স্থানীয় অধিবাসীদের বনাঞ্চল সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করতে দ্য হ্যারেনা ফরেস্ট ওয়াইল্ড কফি প্রেসিডিয়াম বেশ কয়েক বছর যাবৎ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এছাড়া অধিবাসীদের গাছ কাটতে নিরুৎসাহিত করা এবং অবৈধভাবে গাছ কাটা প্রতিরোধেও এটি ভূমিকা রাখছে। এই সংস্থাটি স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত কফির প্রচারণা ও বিক্রিতেও ভূমিকা পালন করছে। এটি ২০১২ সালে হ্যারেনা ফরেস্ট ওয়াইল্ড কফি স্লো ফুড প্রেসিডিয়ার লোগো প্রাপ্ত হয়।

হাজার বছরেরও বেশি সময় যাবৎ কফি উৎপাদন হ্যারেনা বনের অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা; Image Source: coutausse.com

কফি উৎপাদন ইথিওপিয়ার এই অঞ্চলের অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা। তাই এই উৎপাদন বন্ধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু এমন কোনো বিকল্প বের করা প্রয়োজন যাতে একইসাথে জীবিকা, বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণী প্রত্যেকেই স্বাভাবিকভাবে সহাবস্থান করতে পারে। হতে পারে উৎপাদনের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া। তবে সেক্ষেত্রে অধিবাসীদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থাও করতে হবে।

This article is written in Bengali language. It describes the current scenario of the wild coffee produciton in Ethiopia and its effect on the forest and wild life. Sources of information are hyperlinked inside the article.

Feature image: dailycoffeenews.com

Related Articles