Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কার্বোহাইড্রেট: স্বাস্থ্যের জন্য কি আসলেই ক্ষতিকর?

কার্বোহাইড্রেট বা কার্ব বা শর্করা হচ্ছে ফলফলাদি, সবজি, শস্যদানা এবং দুধ জাতীয় খাদ্য থেকে পাওয়া সুগার, স্টার্চ এবং ফাইবার। যদিও হাল-ফ্যাশনের ডায়েটগুলোতে কার্বোহাইড্রেটকে ক্ষতিকর উপাদান হিসেবে দেখানো হয়। বলা হয়ে থাকে, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির মূলে রয়েছে কার্ব। কিন্তু এটি স্বাস্থ্যকর ডায়েটের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

আমাদের শরীর ঠিকঠাক কাজ করার জন্য তিন ধরনের উপাদান খুব বেশি পরিমাণে প্রয়োজন। উপাদানগুলো যথাক্রমে ফ্যাট, প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট। এদেরকে একত্রে ম্যাক্রো-নিউট্রিয়েন্ট ডাকা হয়। আমাদের শরীর নিজে ম্যাক্রো-নিউট্রিয়েন্ট উৎপাদন করতে পারে না, তাই এদেরকে খাবারের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করাতে হয়। অন্যান্য ম্যাক্রো-নিউট্রিয়েন্টের মতো কার্বোহাইড্রেটও শরীরের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। একে কার্বোহাইড্রেট বলা হয়, কেননা রাসায়নিক স্তরে এরা কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের সংমিশ্রণ।

কার্বোহাইড্রেট স্বাস্থ্যকর ডায়েটের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান; Image Source: wellthy.care

ডায়েটিশিয়ান সিয়ান পোর্টার কার্বোহাইড্রেট বিষয়ক বিতর্ক এবং আমাদের কার্বোহাইড্রেট ভীতির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন,

“কার্বোহাইড্রেট নিয়ে আলোচনার জায়গাটি বেশ বড়। প্রত্যেকের জানা উচিত, সব কার্ব খারাপ না। আমরা কী ধরনের কার্ব গ্রহণ করছি, সেগুলোর ধরন, গুণমান এবং পরিমাণ হচ্ছে কার্ব খারাপ, না ভালো বিষয়ক আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আজ এই লেখায় কার্ব বিষয়ক বিতর্কে না জড়িয়ে কার্বোহাইড্রেটের প্রকার, প্রয়োজনীয়তা, এটি শরীরে কীভাবে কাজ করে, সুস্বাস্থ্যের জন্য কী ধরনের কার্ব গ্রহণ এবং বর্জন করা জরুরি এবং কার্বোহাইড্রেটের ঘাটতি শরীরের জন্য কী ধরনের সমস্যা বয়ে আনতে পারে, সেগুলো সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানব।

কার্বোহাইড্রেটের কাজ

কার্বোহাইড্রেট কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রদান জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি শরীরের যে সমস্ত মাংসপেশি নিয়মিত কোনো না কোন কাজে নিয়োজিত, সেগুলোর জন্য শক্তি যোগায়। তাছাড়া কার্বোহাইড্রেট প্রোটিনকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহারে বাধা প্রদান করে এবং ফ্যাট মেটাবলিজম চালু করে; অর্থাৎ, পাকস্থলীতে থাকা ফ্যাট বা চর্বিগুলোকে ভেঙে ফ্যাটি এসিড এবং গ্লিসারিনে রূপান্তর করে। যেগুলো সহজেই দেহকোষগুলোকে শক্তি যোগাতে পারে।

অন্যদিকে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বজায় রাখতেও কার্বোহাইড্রেটের বেশ বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে মেজাজ, স্মৃতি এবং মস্তিষ্কের কাজগুলো ঠিকঠাক বজায় রাখতে দ্রুত শক্তির যোগান আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে। এমনকি প্রত্যেকদিন আনুমানিক কী পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট ভিত্তিক পুষ্টির প্রয়োজন, তা নির্ভর করে আমাদের মস্তিষ্ক ঠিকমতো কাজ করার জন্য কী পরিমাণ পুষ্টি দাবি করে।

সাধারণ বনাম জটিল কার্বোহাইড্রেট

রাসায়নিক গঠন এবং কার্বোহাইড্রেটে থাকা সুগার কত দ্রুত জারিত ও শোষিত হয়, তার উপর ভিত্তি করে কার্বোহাইড্রেটকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে; সাধারণ ও জটিল কার্বোহাইড্রেট। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অভ হেলথের মতে, সাধারণ কার্বগুলো জটিল কার্ব থেকে খুব দ্রুত এবং সহজে জারিত ও শোষিত হয়

সাধারণ কার্বোহাইড্রেটে একটি, অথবা দুটি সুগার রয়েছে। যেমন: ফ্রুকটোজ, যা ফলফলাদিতে পাওয়া যায় এবং গ্যালাকটোজ, যা দুধজাতীয় খাবারে পাওয়া যায়। এগুলোকে মনোস্যাকারাইড ডাকা হয়, কেননা এরা একটি সুগারে তৈরী। অন্যদিকে সাধারণ চিনিতে পাওয়া সুক্রোজ, দুগ্ধজাত পণ্যে পাওয়া ল্যাকটোজ এবং বিয়ার ও কিছু শাকসবজিতে পাওয়া ম্যালটোজ দুটি সুগারে গঠিত বিধায় এদের ডিস্যাকারাইড ডাকা হয়।

ক্যান্ডি, সোডা এবং সিরাপ জাতীয় খাবারগুলোও সাধারণ কার্বোহাইড্রেটের অংশ। কিন্তু এগুলো প্রক্রিয়াজাতকৃত এবং পরিশোধিত চিনিতে তৈরি হওয়ায় ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবার জাতীয় উপাদান নেই বললেই চলে। যে কারণে খুব সহজেই এধরনের মুখরোচক খাবার স্থূলতা বৃদ্ধির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

ক্যান্ডি, সোডা এবং সিরাপ জাতীয় মুখরোচক খাবারগুলো স্থূলতা বৃদ্ধির কারণ হয়ে উঠতে পারে; Image Source: udoerasmus.com

অন্যদিকে তিনটি বা তার বেশি সুগার নিয়ে তৈরি হয় জটিল কার্বোহাইড্রেট, যা পলিস্যাকারাইড হিসেবে পরিচিত। সাধারণত মটরশুঁটি, ডাল, ভুট্টা, বাদাম, আলু, সিরিয়াল, গম এবং গাজর জাতীয় খাবারে এদেরকে দেখা যায়। 

উথাহ ভিত্তিক ডায়েটিশিয়ান পাইগ স্মেথার্সের মতে, যেহেতু সাধারণ কার্বোহাইড্রেটগুলো জটিল কার্বোহাইড্রেটগুলো থেকে বেশি দ্রুত জারিত হয়, সেহেতু সাধারণ কার্বগুলো গ্রহণের ফলে হঠাৎ করেই দেহে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়। যে কারণে হৃদরোগ সহ টাইপ-টু ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে আমাদের খাবারের তালিকায় জটিল কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারগুলোই বেশি থাকলে ভালো হয়। 

কার্বোহাইড্রেটের নানান রূপ

শরীরে নানান রূপে কার্বোহাইড্রেটের উপস্থিতি থাকলেও তিন ধরনের কার্বোহাইড্রেট সবচাইতে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। যথাক্রমে এরা সুগার, স্টার্চ এবং ফাইবার নামে পরিচিত।

সুগার

উপরে আমরা জেনেছি, কার্বোহাইড্রেট ভেঙে কয়েক ধরনের সুগার বা চিনিতে পরিণত হয়। আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্র সেগুলোকে রক্তে প্রবাহের মাধ্যমে লিভারে পৌঁছে দেয়। লিভার সুগারগুলোকে গ্লুকোজে পরিবর্তন করে ইনসুলিনের সাহায্যে দেহকোষে জমা রাখে এবং প্রয়োজনে শারীরিক ক্রিয়াকলাপের জন্য শক্তি উৎপাদন করে।

তাৎক্ষণিকভাবে যদি শক্তি উৎপাদনে গ্লুকোজের প্রয়োজন না হয়, তাহলে আমাদের শরীর সর্বোচ্চ ২০০০ ক্যালোরি গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেন রূপে লিভার এবং কঙ্কাল পেশিতে জমা রাখতে পারে। কিন্তু গ্লাইকোজেনের পরিমাণ তার চাইতে বেশি হয়ে গেলে কার্বোহাইড্রেটগুলো চর্বি আকারে শরীরে জমা হয়। এই চর্বি নানান ধরনের রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

কিন্তু যদি শরীরে পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট জমা না থাকে, তাহলে আমাদের শরীর প্রোটিনকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার শুরু করে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, দেহকোষ তৈরি এবং পুনরুদ্ধারের জন্য প্রোটিন প্রয়োজন। তাছাড়া জ্বালানি হিসেবে কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে প্রোটিন ব্যবহারের ফলে কিডনিতে চাপ বাড়ে।

স্টার্চ

স্টার্চ বা শ্বেতসার হচ্ছে উপরে আলোচিত দুইয়ের অধিক সুগারের জটিল কার্বোহাইড্রেটগুলো। ডাল, ভুট্টা, আলু, মটরশুঁটি, ওটমিল, শিম, পাস্তা এবং ভাতে এদের উপস্থিতি দেখা যায়। আলুর মতো খাবার গ্লাইসেমিক সূচকে উপরের দিকে থাকার কারণে খুব দ্রুত রক্তে সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি করলেও, এটি পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস। অর্থাৎ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আলু বেশ কাজের।

আলু খুব দ্রুত রক্তে সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধির করলেও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বেশ কাজের; Image Source: Pexels

অন্যদিকে, শিম জাতীয় খাবারে ফাইবার, উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিনের পরিমাণ পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উৎপাদন করে শরীরের ক্ষতিকর জারক এজেন্টদের সরিয়ে ফেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এমনকি ওটমিল জাতীয় শস্যদানাগুলো কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।   

ফাইবার

অন্যদিকে, ফাইবার পরিপাকে সাহায্য করে। সুগার এবং শ্বেতসারের মতো ক্ষুদ্রান্ত্র বদলে এরা প্রায় অক্ষত অবস্থায় বৃহদান্ত্র দ্বারা শোষিত হয়। এমনকি এরা গ্লুকোজে পরিবর্তন না হয়ে হাইড্রোজেন, কার্বনডাই অক্সাইড এবং ফ্যাটি এসিডে পরিবর্তিত হয়।

ফাইবার হজম শক্তি বৃদ্ধি সহ আমাদের শরীরের অন্ত্রগুলোর সুস্বাস্থ্য ঠিক রাখার পাশাপাশি আমাদেরকে ভরপুর পাকস্থলীর অনুভূতি জাগায়। এর ফলে আমাদের বেশি খাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়া দুরারোগ্য করোনারি হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাসে এই কার্বোহাইড্রেটটি সাহায্য করে। সাধারণত শস্যদানা এবং চামড়া সহ সবজিতে ফাইবারের উপস্থিতি রয়েছে। বিশেষ করে শিম জাতীয় খাদ্যে এদের বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।

খারাপ বনাম ভালো কার্ব

পেস্টি, সোডা, কর্ণ সিরাপ, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার, ভাত, ময়দাজাত খাবারগুলোতে থাকা সাধারণ কার্বোহাইড্রেটগুলোকে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। একে তো এরা দ্রুত জারিত হয়ে শরীরের দ্রুত সুগারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, দ্বিতীয়ত, এদের মাঝে পুষ্টি উপাদান থাকে না বললেই চলে। ক্যালোরির মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ, কম ফাইবার, অতিরিক্ত সোডিয়াম, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ এদের মাঝে বেশি থাকে।

অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবারগুলোতে থাকা সাধারণ কার্বোহাইড্রেটগুলোকে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়; Image Source: byrdie.com

অন্যদিকে, দানাজাতীয় শস্য, ফলফলাদি, শাকসবজি, মটরশুঁটি এবং শিম জাতীয় খাবারের মতো জটিল কার্বোহাইড্রেটগুলোকে ভালো কার্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এরা ধীরে ধীরে জারিত হয়। ফলে লম্বা সময় ধরে শরীর এদের কাজে লাগানো সুযোগ পায়। এদের মাঝে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, সোডিয়াম, কোলেস্টেরল এবং ক্যালোরির পরিমাণ কম হয়, কিন্তু পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে।

তবে সম্প্রতি পুষ্টিবিদেরা দাবি করেছেন, কার্বোহাইড্রেটের ধরন নয়, বরং কার্বোহাইড্রেটের গ্লাইসেমিক সূচকের উপর ভিত্তি করে কোন কার্ব খারাপ নাকি ভালো, তা বিবেচনা করা হয়।

বিভিন্ন খাবারের গ্লাইসেমিক সূচক; Image Source: fdbusiness.com

সাধারণত কী পরিমাণ কার্ব কত দ্রুত রক্তে সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, তা গ্লাইসেমিক সূচকের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়। যে ধরনের খাবার গ্লাইসেমিক সূচকের উপরের দিকে থাকে, সেগুলো দ্রুত রক্তে সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ফলে ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হৃদরোগ এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

ওজন কমাতে কার্বোহাইড্রেট

বেশিরভাগ সময়ই কার্বোহাইড্রেটকে ওজন বৃদ্ধির প্রদান কারণ হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু সঠিক ধরনের কার্বোহাইড্রেট স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে। ওপরে আমরা জেনেছি, ফাইবার আমাদেরকে ভরপুর পাকস্থলীর অনুভূতি দেয়। ফলে, আমরা কম খাবার গ্রহণ করি। আর বেশি পরিমাণে ফাইবারের উপস্থিতি থাকে হাই-কার্ব জাতীয় খাবারগুলোতে।

নানান ধরনের স্বাস্থ্যকর কার্ব জাতীয় খাবার; Image Source: Shutterstock

জার্নাল অভ নিউট্রিশন সহ আরো কয়েকটি গবেষণায় অতিরিক্ত ফাইবার গ্রহণের ফলে যে ওজন হ্রাস পায়, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। গবেষণাগুলোতে এ-ও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, লো-ফ্যাট ডায়েটের পাশাপাশি লো-কার্ব ডায়েটের মাধ্যমে অল্প সময়ে অতিরিক্ত ওজন কমানো গেলেও, দীর্ঘমেয়াদী সফলতা পাওয়া যায় না। বছর খানেকের মধ্যে শরীর আগের অবস্থানেই ফিরে আসে, যেখানে হাই-কার্ব জাতীয় খাবারে থাকা ফাইবার দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখতে সাহায্য করে।

কার্বোহাইড্রেটের প্রয়োজনীয়তা

গ্লুকোজের উৎপাদন ঘটে কার্বোহাইড্রেট থেকে, যা প্রয়োজনে শরীরের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু শরীরের গ্লুকোজের পরিমাণ অপর্যাপ্ত হলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ফলে মাথা ঘোরা সহ শারীরিক এবং মানসিক দুর্বলতা দেখা দেয়।

অন্যদিকে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইবার রক্তে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। সাধারণত হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য বাইল এসিডের প্রয়োজন, যেটি কোলেস্টেরলের মাধ্যমে তৈরি হয়। হজম বৃদ্ধির সাথে সাথে বাইল এসিড তৈরির জন্য আমাদের যকৃৎ রক্ত থেকে কোলেস্টেরল ওঠানো শুরু করে, ফলে কম ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন (LDL); অর্থাৎ, খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ হ্রাস পায়।

ফাইবার রক্তে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে; Image Source: stylecraze.com

এমনকি কার্বোহাইড্রেটের ঘাটতি দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা এবং রাগ বৃদ্ধির কারণ হয়ে উঠতে পারে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের উৎপাদনের সাথে কার্বোহাইড্রেটের সংযোগ রয়েছে বিধায় এমনটা ঘটে। এছাড়া স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও কার্বোহাইড্রেটের ভূমিকা থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। ২০০৯ সালে টুফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক, মাত্রাতিরিক্ত ওজনের কয়েকজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীকে এক সপ্তাহ পুরোপুরি কার্ব বিহীন খাবার গ্রহণ করতে বলে। এক সপ্তাহ পর গবেষক দল তাদের জ্ঞানীয় দক্ষতা, মনোযোগ এবং দূরত্ব-সংক্রান্ত স্মৃতি পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট ঘাটতি স্মৃতিশক্তিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে।

কার্বোহাইড্রেট ভালো কি খারাপ, তা নির্ভর করে আমরা কোন ধরনের কার্ব কী পরিমাণ গ্রহণ করছি, তার ওপর। স্বল্প কার্বযুক্ত খাবার খেলে হয়তো স্থূলতা, মাত্রাতিরিক্ত ওজন থেকে অল্প সময়য়ের জন্য রক্ষা পাওয়া যাবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী সুস্বাস্থ্যের জন্য কার্বোহাইড্রেটের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কার্বোহাইড্রেটের অপর্যাপ্ততা যেমন শরীরের জন্য নানান সমস্যা বয়ে আনতে পারে, তেমনি নিয়মিত খাবার তালিকায় থাকা কার্বোহাইড্রেট ভিত্তিক উপাদানগুলোর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হয়ে গ্রহণের ফলেও আমরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারি।

This Bengali article provides some dissertation points of view about carbohydrates, the most important source of energy for our body. 

Necessary references are hyperlinked inside the article.

Featured Image: iStock

Related Articles