Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আমেরিকান পিরামিডোপিডিয়া: আমেরিকা মহাদেশে নির্মিত পিরামিডগুলোর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

নির্দিষ্ট দিনে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন রাজাকে বরণ করে নিলো প্রজারা। পুরো রাজ্য জুড়ে সপ্তাহব্যাপী এক রঙিন উৎসবের প্রাণবন্ত আমেজ সৃষ্টি হলো। প্রতিবেশী রাজাগণ ঢালিভর্তি উপঢৌকনের মাধ্যমে নতুন রাজাকে শুভেচ্ছা জানালেন। রাজপ্রাসাদ আঙিনায় প্রায় ছয়শত পশু বলি দেয়া হলো। বলির রক্তের স্রোতে যদি দেবী তুষ্টি লাভ করেন, তাহলে পুরো রাজ্যের উপর মঙ্গল বর্ষিত হবে বলে বিশ্বাস করে প্রজারা। নতুন রাজার সম্মানার্থে প্রজাদের এক কিস্তি কর মওকুফ করে দেয়া হলো। রাজার মহানুভবতা, দানশীলতা এবং বীরত্বগাথার আগাম প্রশংসা করে সভাকবিরা একের পর এক কবিতা রচনা করে চলছেন। আর সেই কবিতায় বাহারি সুর মিশিয়ে গীতিকাররা সুরঝংকার তুলে মাতিয়ে রাখছেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দকে।

কিন্তু এত আয়োজনের পরেও যেন আরো একটি কাজ না করলেই নয়। দেবতাদের আশীর্বাদ লাভের উদ্দেশ্যে প্রত্যেক নতুন রাজা তার অভিষেকের পর পরই সেই কাজটি করার নির্দেশ দেন। এ রাজার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। প্রাসাদ থেকে কয়েক ক্রোশ পথ দূরে নির্জন বৃক্ষঘেরা এক বিশাল প্রান্তরে তখন হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে চলেছেন। আর সেই কাঙ্ক্ষিত কাজ ছিল দেবতাদের উৎসর্গ করে পিরামিড নির্মাণ করা। শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তিলে তিলে গড়ে উঠছে বিশাল পিরামিড।

পিরামিডের কথা শুনে পাঠকদের চোখের সামনে নিশ্চয়ই মিশরের ছবি ভেসে উঠছে। কিন্তু রাজার অভিষেক উপলক্ষ্যে নির্মিত এই পিরামিডের অবস্থান মিশর নয়। এমনকি আফ্রিকার কোনো দেশও নয়। এর অবস্থান সুবিশাল আটলান্টিকের অপর তীরে অবস্থিত মহাদেশ আমেরিকা। আফ্রিকার ন্যায় ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নির্মিত হয়েছে শত শত পিরামিড। পাঠক, জেনে অবাক হবেন যে, পুরো আমেরিকা জুড়ে যত পরিমাণ পিরামিড রয়েছে, তার সমপরিমাণ পিরামিড পৃথিবীর অন্যান্য মহাদেশে সমষ্টিগতভাবেও তৈরি হয়নি!

পিরামিড! পিরামিড!!

পিরামিডের দেশ মিশরের তুলনায় মেসো-আমেরিকা অঞ্চলে অবস্থিত পিরামিডগুলোর গড়ন অনেকটাই আলাদা। এই অঞ্চলের পিরামিডগুলো মূলত সিঁড়ির ন্যায় ধাপ তৈরি করে বানানো হয়েছিল। এছাড়া পিরামিডের চূড়ার আকৃতি কিছুটা চতুর্ভূজের ন্যায়। মেসো-আমেরিকান কারিগরদের অনন্য কীর্তি এই পিরামিডগুলোর অধিকাংশই ১০০০ খ্রিস্টপূর্বের দিকে নির্মিত হয়েছে। এই অঞ্চলের প্রাচীনতম পিরামিডের সন্ধান পাওয়া গেছে মেক্সিকোর লা ভেন্তা অঞ্চলে। আমেরিকার অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা অলমেকের শ্রমিকরা এই পিরামিডটি নির্মাণ করেন। ল্যাটিন আমেরিকার পিরামিডগুলো সাধারণত মাটি দ্বারা নির্মিত হতো। তবে পিরামিডের বাইরের আবরণ শক্ত পাথর দ্বারা জ্যামিতিকভাবে গড়ন দেয়া হতো।

ল্যাটিন আমেরিকান পিরামিড; Source: Globetrottergirls

এই অঞ্চলের পিরামিড নির্মাণের উদ্দেশ্যও ছিল কিছুটা বৈচিত্র্যময়। বিভিন্ন দেবতার উপাসনার মাধ্যম ছাড়াও শহরের প্রাণকেন্দ্র চিহ্নিতকরণ, মানুষ বলির পবিত্র স্থানসহ বিভিন্ন কারণে পিরামিড নির্মিত হতো। নতুন রাজার দীর্ঘায়ু এবং সফলতা কামনা করে দেবতাদের উৎসর্গ করে পিরামিড নির্মিত হতো। বিভিন্ন বিপদ-আপদে দেবতার করুণা ভিক্ষা করতে মানুষ জড়ো হতো পিরামিড প্রাঙ্গণে। স্বেচ্ছাসেবীদের বলির মাধ্যমে দেবতাকে তুষ্ট করতো পুরোহিতগণ। অনেক ক্ষেত্রে পিরামিডগুলো ভেঙে পুনরায় নির্মাণ করার রীতি ছিল। এর মাধ্যমে প্রজারা তাদের রাজাকে সম্মানিত করতো। তারা বিশ্বাস করতো, পিরামিড পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে রাজ্যের হৃত গৌরব ফিরে আসে। ইতিহাসবিদগণের মতে, মিশরের পিরামিডের ন্যায় প্রাক-কলম্বিয়ান পিরামিডগুলো সমাধিক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো না। বরং পিরামিডের অভ্যন্তরে স্থান পেত হাজারো দেবতার মূর্তি। তবে সাম্প্রতিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে কিছু পিরামিডের অভ্যন্তরে বেশ কিছু সমাধিক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে জানান গবেষকগণ। অনেক শহরে পিরামিডকে সামরিক ব্যূহ হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

ল্যাটিন আমেরিকার পিরামিডের আকার মিশরের পিরামিডের চেয়ে ভিন্ন; Source: Crysta Link

সূর্যকে নিয়ে গড়া পিরামিড

মেসো-আমেরিকার পিরামিড নিয়ে কথা বলতে হলে সবার প্রথমেই যে নাম চলে আসে, তা হচ্ছে মেক্সিকোর ‘সূর্য পিরামিড’টেওতিহুয়াকান জাতির অনন্য কীর্তি এই সূর্য পিরামিড যেন তাদের প্রতিপত্তিরই বহিঃপ্রকাশ। পঞ্চম শতাব্দীর দিকে এদের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১ লক্ষ। টেওতিহুয়াকান নামক এই উন্নত জাতির একটি অদ্ভুত বিশ্বাস ছিল। তারা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতো যে, পৃথিবী, চন্দ্র এবং সূর্য এসব কিছুই উৎপত্তিগতভাবে টেওতিহুয়াকানদের সাথে জড়িত। পুরো আজটেক রীতির বিভিন্ন পাণ্ডুলিপিতে এ কথা বার বার উল্লেখ করে হয়েছে। মূলত এই বিশ্বাসের ফলেই মেসো-আমেরিকার অন্যান্য শহরের চেয়ে এই অঞ্চলে মন্দিরের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।

মেক্সিকোর সূর্য পিরামিড; Source: Wikimedia Commons

সময়ের হিসেবে সূর্য পিরামিডের নির্মাণকালকে ১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২৫০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি যেকোনো সময়ে ফেলেছেন বিজ্ঞানীগণ। পুরো পিরামিডের বাইরের আবরণ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছে মূল্যবান চুনাপাথর। পাঁচ ধাপে নির্মিত এই পিরামিডের উচ্চতা প্রায় ২০০ ফুট। এর বিশালতার জন্য পিরামিডের সামনে দাঁড়ানো পর্যটকদের যেন মনে পড়ে যায় মিশরের বিখ্যাত খুফুর পিরামিডের কথা।

১৯৭১ সালে একদল গবেষক সূর্য পিরামিডের অভ্যন্তরে একটি গোপন কুঠুরির সন্ধান লাভ করেন। বহু গবেষণার পর তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে, পিরামিড নির্মাণের বহু আগে থেকেই এই কুঠুরি ছিল। ধর্মীয় অর্চনা পালনের উদ্দেশ্যে এটি মন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তবে মূল পিরামিড নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য সম্পর্কে গবেষকগণ এখনো দ্বিধান্বিত রয়েছেন। পিরামিডের চূড়ায় একটি মন্দিরের সন্ধান পাওয়া যায়, যা থেকে মনে করা হতো টেওতিহুয়াকানদের উপাসনার জন্য ব্যবহৃত হতো সূর্য পিরামিড। কিন্তু ১৯৭১ সালে গোপন কুঠুরি আবিষ্কারের পর এই ধারণা বদলে যায়। কারণ, সূর্য পিরামিডের গোপন কুঠুরি যেন কোনো গোলকধাঁধার খণ্ড সূত্র। পুরো শহর জুড়ে বিভিন্ন স্থাপনায় এরূপ শত শত কুঠুরির সন্ধান পাওয়া যায়। প্রাচীন আজটেক সভ্যতার কোনো গূঢ় রহস্য কি লুকিয়ে আছে এর মাঝে? উত্তর মেলা ভার।

পিরামিডের নিচে রহস্যময় কুঠুরির পথ; Source: Ancient Origins

মায়াবী মায়ান পিরামিড

মায়ান পিরামিডের সাথে জড়িত রয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত মায়া সভ্যতার নাম। পৃথিবীর বুকে প্রায় তিন হাজার বছর ধরে দাপটের সাথে প্রভাব বিস্তার করেছিল মায়া সভ্যতার অধিবাসীরা। এই সভ্যতার অধিবাসীদের নিবাস ছিল বর্তমান মানচিত্রের মধ্য আমেরিকা অঞ্চলে (গুয়াতেমালা, বেলিজ, হন্ডুরাস এবং এল সালভাদর)। বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন সম্বলিত এই অঞ্চলের মানুষরা জ্ঞান বিজ্ঞানে সমসাময়িক অন্যান্য সভ্যতার তুলনায় বেশ এগিয়ে ছিল। তাদের অগ্রগতির তালিকায় বাদ যায়নি পিরামিডের নাম। ল্যাটিন আমেরিকা পিরামিডের বৈশিষ্ট্যের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে মায়ান পিরামিডগুলোও সিঁড়ির ন্যায় ধাপ সৃষ্টি করে তৈরি করা হয়েছে। তবে সময়ের পরিক্রমায় মায়ান পিরামিডের আকারেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়েছে। ধারণা করা হয়, অঞ্চলভেদে মায়ানরা ভিন্ন আকারের পিরামিড নির্মাণ করতো। মায়ান পিরামিডগুলো আকারের জটিলতা, সূক্ষ্ম নির্মাণশৈলী এবং নিখুঁত গড়ন বিজ্ঞানীদের নিকট আজও এক অভেদ্য রহস্য।

চিচেন ইৎজার পিরামিড এল কাস্তিলো; Source: International Traveller

মায়ান পিরামিডের কথা উঠলে সবার প্রথমেই যে পিরামিডের নাম চলে আসে, সেটি হচ্ছে চিচেন ইৎজার ‘এল কাস্তিলো‘। মেক্সিকোর উত্তর উপদ্বীপে অবস্থিত এই পিরামিডের নিচে খনন করে একটি খাতের সন্ধান পাওয়া যায়। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, এই খাতের মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে একটি নদী। প্রায় এক হাজার বছর পুরাতন এই পিরামিডটি মূলত ‘কুকুলকানের মন্দির’ হিসেবে পরিচিত। মেক্সিকোর উক্সমাল (উশমাহল) শহরে অবস্থিত আরেকটি মায়ান পিরামিডের সন্ধান পাওয়া যায়। আনুমানিক দশম শতাব্দীতে নির্মিত এই পিরামিডের ডাকনাম ‘জাদুকরের পিরামিড’। এই অদ্ভুত নামকরণের কারণ হিসেবে বলা হয়, মায়ান পুরাণ অনুযায়ী, জাদুর দেবতা ইৎজানা তার শিষ্যদের জন্য এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন এই পিরামিডকে।

রহস্যময় জাদুকরের পিরামিড; Source: Wikimedia Commons

অ্যাজটেকের পিরামিড

মেক্সিকো উপত্যকার বিখ্যাত অ্যাজটেক জাতির পিরামিডগুলো নির্মিত হয়েছে দ্বাদশ থেকে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে। সময়ের হিসেবে এই পিরামিডগুলো অনেকটাই আধুনিক বলে বিবেচিত হয়। অ্যাজটেকের পিরামিডগুলোর নামকরণ করা হতো নিজেদের সংস্কৃতি এবং দিগ্বিজয়ী যোদ্ধাদের নামানুসারে। এই কারণে অ্যাজটেক যোদ্ধাদের প্রতীক হিসেবে ‘একটি জ্বলন্ত পিরামিড‘ ব্যবহার করা হতো। অ্যাজটেক সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে আজ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি পিরামিডের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পিরামিড ছিল চলুলা পিরামিড

গিজার পিরামিডের চেয়েও বিশালতর পিরামিড চলুলার গ্রেট পিরামিড; Source: The Life Pile

মেক্সিকোর পুয়েবলা রাজ্যে অবস্থিত এই বিশাল পিরামিডকে অনেকেই ‘দ্য গ্রেট পিরামিড‘ নামে চিনে থাকেন। স্থানীয় ভাষায় এর বেশ কিছু ডাকনাম রয়েছে, যার একটি হচ্ছে ‘তলাচিহুয়ালতেপেতল’। দাঁতভাঙা উচ্চারণের এই দুর্বোধ্য শব্দটির অর্থ হচ্ছে ‘কৃত্রিম পাহাড়’। দেবতা কুয়েতজালকোতলকে উৎসর্গ করে প্রায় চার পর্যায়ে বিরতি দিয়ে পিরামিডটি সম্পূর্ণ নির্মিত হয়। এই পিরামিডটির দখলে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম পিরামিডের অনন্য রেকর্ড। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এর মতে, শুধু বৃহত্তম পিরামিডই নয়, এর দখলে রয়েছে বৃহত্তম স্থাপনার একচ্ছত্র আধিপত্য। এর আয়তন পরিমাপ করা হয়েছে প্রায় ৪.৪৫ মিলিয়ন ঘন মিটার। অপরদিকে মিশরের গিজা পিরামিডের আয়তন প্রায় ২.৫ মিলিয়ন ঘনমিটার। তবে উচ্চতার দৌড়ে গিজা পিরামিড কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকায় এই রেকর্ডটি চলুলার দখলে নেই।

দূর থেকে দেখলে পিরামিডটিকে একটি পাহাড়ের মতো দেখায়। স্প্যানিশদের দখলে যাওয়ার পর পিরামিডের আশেপাশে বেশ কয়েকটি গির্জা নির্মিত হয়েছিলো। চলুলা পিরামিড মূলত ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল।

দক্ষিণের ইনকা পিরামিড

প্রাচীন ইনকা সভ্যতার নামের সাথে জড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক ‘মাচু পিচু’ শহরের নাম। আন্দিজের পাদদেশে এক অনবদ্য সভ্যতার নাম ইনকা সভ্যতা। স্প্যানিশ যোদ্ধা ফ্রান্সিসকো পিজারো ইনকা আক্রমণের প্রায় ৮০ বছর পূর্বে রাজা পাহাচুতির নির্দেশে সাসচাহুয়ামান পিরামিড নির্মাণকাজ শুরু হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পিরামিড নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত ছিল। সময় লেগেছে প্রায় ৫০ বছর। সাসচাহুয়ামান পিরামিড যেন ইনকা সভ্যতার প্রতিনিধিত্ব করছে। কারণ মাচু পিচু শহরের প্রায় সবগুলো স্থাপনা এই পিরামিডের আদলে নির্মিত হয়েছিল।

সাসচাহুয়ামান পিরামিডের ধ্বংসাবশেষ; Source: Ancient Code

ইনকার বাইরে আরো দক্ষিণে মোচে এবং ছিমু সভ্যতায় বহু পিরামিডের নিদর্শন পাওয়া যায়। বর্তমান স্বাধীন রাষ্ট্র পেরুর প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব পিরামিডের অবস্থান। এই অঞ্চলে ‘হুয়াকা দেল সল’ নামক প্রায় ১০০ ফুট উচ্চতার পিরামিড নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৪৩ মিলিয়ন ইট

মিশর বনাম আমেরিকা

পিরামিড নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশ্বের যে দুটো অঞ্চল সবচেয়ে নিখুঁত নির্মাণশৈলীর পরিচয় দিয়েছে, তা হলো- প্রাচীন মিশর এবং মেসো-আমেরিকা অঞ্চল। তবে এই দুই অঞ্চলের পিরামিডের মাঝে নির্মাণ কৌশল, গড়ন, নির্মাণ উদ্দেশ্য, নির্মাণকালসহ বহু ক্ষেত্রেই পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। সবচেয়ে বড় পার্থক্য রয়েছে নির্মাণকাল বিবেচনায়। মিশরের পিরামিডগুলো নির্মিত হয়েছিলো খ্রিস্টপূর্ব ২৬৪০ সাল থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১৮১৪ সালের মধ্যবর্তী সময়ে। অপরদিকে মেসো-আমেরিকার পিরামডগুলো খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সাল থেকে নির্মাণ শুরু হয়। এমনকি ১০০০ খ্রিস্টাব্দের পরেও বেশ কিছু মায়ান পিরামিড নির্মিত হয়েছিলো। মিশরের সর্বশেষ পিরামিডটি মায়ানদের প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বেই নির্মিত হয়েছিলো। উপরন্তু মায়ানরা পিরামিডের কাজ শুরু করার সময় মিশরে পিরামিডের রীতি বাতিল হয়ে গিয়েছিল।

মিশরের পিরামিডগুলো মূলত ফারাওদের সমাধিক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মিশরের বহু পিরামিডের কোনো প্রবেশদ্বার নেই। অপরদিকে মেসো-আমেরিকান পিরামিডগুলো মূলত দেবতাদের উৎসর্গ হিসেবে নির্মিত হতো। প্রতিটি পিরামিডের অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য দ্বার নির্মিত হতো। মিশরের পিরামিডগুলোর আকার অনুসরণ না করে সম্পূর্ণ ভিন্ন উপায়ে নির্মিত হয়েছে এগুলো। মিশরের পিরামিডগুলোর বাইরের আবরণ পাথর দ্বারা মসৃণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু মেসো-আমেরিকানরা বিভিন্ন মূল্যবান পাথরের প্রলেপ দিয়ে বাইরের আবরণ তৈরি করতো। এই দুই অঞ্চলের পিরামিডের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। আর তা হচ্ছে, দুই অঞ্চলের পিরামিডগুলো ছিল আকারে বেশ বড়। এরা পিরামিড কেন নির্মাণ করতো? এ প্রশ্নের উত্তরে ইতিহাসবিদগণ জানান, তৎকালীন কারিগরদের নিকট পিরামিড নির্মাণের চেয়ে সহজতর উপায়ে নিখুঁত স্থাপনা নির্মাণের কৌশল জানা ছিল না। এর ফলে এই দুই অঞ্চলে শত শত পিরামিড গড়ে উঠেছে।

পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ এই পিরামিডগুলো; Source: The Yucatan Time

পিরামিড স্রেফ পাথরের উপর পাথর ঢালাই করে বানানো কোনো সাধারণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নয়। এর মাঝে লুকিয়ে আছে হাজার বছরের না বলা হাজারো গল্প। ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পিরামিডগুলো বর্তমানে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। এর ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় সংরক্ষিত হচ্ছে এসব পিরামিড। তবে গবেষণার কাজও থেমে নেই। তা চলছে পুরোদমে। গবেষকদের নিত্য নতুন আবিষ্কারে আরো মহিমান্বিত হচ্ছে পিরামিডের মাহাত্ম্য।

ফিচার ইমেজ: ThoughtCo

Related Articles