Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্যাটল অফ মিডওয়ে (শেষ পর্ব): প্যাসিফিকে বদলে গেল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গতিপথ

গত পর্বে আমরা জেনেছি কীভাবে ছয় মিনিটের আক্রমণে তিন তিনটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার হারায় জাপান। আজকের পর্বে জাপানিদের পাল্টা হামলা ও যুক্তরাষ্ট্রের শেষ আক্রমণ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে মিডওয়ে যুদ্ধ নিয়ে সাজানো পাঁচ পর্বেই এই সিরিজ শেষ করা হবে।

জাপানি কাউন্টার অ্যাটাক

এডমিরাল নাগুমো কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না যে তার গোয়েন্দা বিমান একটিমাত্র মার্কিন ক্যারিয়ারকে (ইয়র্কটাউন) শনাক্ত করেছিল, কিন্তু আক্রমণ এসেছে তিনদিক থেকে! অথচ তার কাছে নির্ভুল গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে মার্কিনিদের কাছে এই মুহূর্তে দুটো এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে। দেরি না করে আক্রমণ শেষে ফিরে যাওয়া মার্কিন বিমানের পিছু নেয় জাপানিরা। টিকে থাকা একমাত্র ক্যারিয়ার হিরয়ূ থেকে প্রথম দফায় ১৮টি D3A ডাইভ বোম্বার ও ৬টি এস্কর্ট ফাইটার টেকঅফ করে।

একই সময়ে হিরয়ূর বর্তমান অবস্থান খুঁজে বের করতে ইয়র্কটাউনের এডমিরাল ফ্লেচার ১০টি বিমান মিশনে পাঠান। কিন্তু তাদের আগেই জাপানিরা ইয়র্কটাউনকে খুঁজে পায়। বেলা ১২:০৫ মিনিটে আক্রমণ শুরু হয়, ইয়র্কটাউন এঁকেবেঁকে জাপানি বোমাগুলো ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করে। এর মধ্যে একটি বোমা জাহাজের পাশ ঘেঁষে পরে এন্টি এয়ারক্রাফট গান সিস্টেম ধ্বংস করে। আরেকটি বোমা ফ্লাইট ডেক ভেদ করে ভেতরে বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ইয়র্কটাউনে আগুন ধরে যায়, একটি বয়লার ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এডমিরাল ফ্লেচার ও তার স্টাফরা এডমিরাল ফ্ল্যাগ নিয়ে ক্রুজার এস্টোরিয়াতে স্থানান্তরিত হন। 

এন্টি এয়ারক্রাফট গোলার বিস্ফোরণ (আকাশে কালো ধোঁয়া) ফাঁকি দিয়ে ইয়র্কটাউনে ফেলা জাপানি বোমা আঘাত করার মুহূর্ত (বামে) ও ক্রুদের আগুন নেভানোর প্রচেষ্টা (ডানে); Image source : theatlantic.com

উল্লেখ্য, এক মাস আগে কোরাল সি যুদ্ধে ইয়র্কটাউন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। জাহাজটিকে মিডওয়ে যুদ্ধে জোড়াতালি দিয়ে নামানোর কাজ করতে সেখানে একদল ইঞ্জিনিয়ার-ক্রু ছিলেন। ফলে ড্যামেজ কন্ট্রোল টিম আগুন নিভিয়ে জাহাজকে ঘন্টাখানেকের মধ্যে চলাচলের উপযোগী করতে সক্ষম হয়। এবার এর স্পিড হয় ঘন্টায় ১৯ নট বা ৩৫ কিলোমিটার। জাহাজের ফ্লাইট ডেক কোনোরকমে লোহার পাত দিয়ে জোড়া দিয়ে বিমান ওঠানামার ব্যবস্থা করা হয়।

এই খুশিতে ক্যাপ্টেন বাকমাস্টার ১০x১৫ ফুট সাইজের বিশাল মার্কিন পতাকা জাহাজের মাস্তুলে উড়িয়ে দেন যা টাস্কফোর্স ১৬-এর অন্যান্য যুদ্ধজাহাজগুলোকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করে। এই আক্রমণে জাপানিরা ১৮টির মধ্যে ১৩টি ডাইভ বোম্বার ও ৬টির মধ্যে ৩টি এস্কর্ট ফাইটার হারায়। দুটো ফাইটার যুদ্ধ শুরুর আগেই এন্টারপ্রাইজে ফিরতে থাকা বিমানগুলোর হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হিরয়ূতে ফিরে যায়। অর্থাৎ ২৪টি জাপানি বিমানের মধ্যে মাত্র ৭টি ফিরে যায়।

ইয়র্কটাউনের আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে ড্যামেজ কন্ট্রোল টিম, পাশে ৫ ইঞ্চি ব্যাসের কামান ও এর ক্রুরা; Image courtesy: William G. Roy/US Navy combat photographer 

শত্রুর উপর মরণ কামড়

জাপানিরা বুঝতে পারে যে তাদের সময় ঘনিয়ে এসেছে। এডমিরাল নাগুমোর হাতে তখন তিনটি অপশন। হয় রণেভঙ্গ দিয়ে পিছিয়ে গিয়ে এডমিরাল ইয়ামামোতোর সেন্টার ফোর্সের সাথে যুক্ত হওয়া। অথবা গোয়েন্দা বিমান পাঠিয়ে টাস্কফোর্স ১৬-এর দুটো ক্যারিয়ার খুঁজে বের করে হামলা করা। অথবা অবশিষ্ট বিমান দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ইয়র্কটাউনের উপর আবার হামলা করে তাকে ডুবিয়ে দেয়া। জাপানিরা নিজেদের শেষ ক্যারিয়ারটি হারানোর ঝুঁকি নিয়ে শেষোক্ত অপশনটি বেছে নেয়।

ইয়র্কটাউনের গতি কম থাকায় এখন সেটি টর্পেডোর জন্য সহজ টার্গেট ছিল। ফলে বেলা দেড়টায় মাত্র ১০টি B5N2 Kate টর্পেডো বোম্বার ও তাদের প্রটেকশনের জন্য ৬টি জিরো ফাইটার হিরয়ূ থেকে টেকঅফ করে। এর ঠিক এক মিনিট আগে ২৪টি আমেরিকান ডাইভ বোম্বার হিরয়ূকে ধ্বংস করতে টেকঅফ করে! ইয়র্কটাউনের পাঠানো সেই ১০টি গোয়েন্দা বিমান বেশ দ্রুতই জাপানি ক্যারিয়ারকে খুঁজে বের করে। কিন্তু জাহাজটির তখনও বিমান লঞ্চ করার সক্ষমতা ছিল না। তাই ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ ও হরনেটের কমান্ডার এডমিরাল রেমন্ড স্প্ৰুয়েন্স দেরি না করে দুই ডজন বিমান আকাশে ওড়ান।

ইয়র্কটাউনকে এত দ্রুত মেরামত করা হয়েছিল যে একে আকাশ থেকে অক্ষত জাহাজ মনে হবে। জাপানিরা একে অপর আরেকটি মার্কিন ক্যারিয়ার ভেবে হামলা করে। তবে জাহাজটির গতি কমে যাওয়ায় এটি টর্পেডো বোম্বারের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। বেলা আড়াইটায় শুরু হওয়া এই হামলায় দুটো টর্পেডোর আঘাতে জাহাজটি ২৩ ডিগ্রি কাত হয়ে যায়। ফলে বেলা তিনটায় জাহাজটি ত্যাগ করে নাবিকরা। এই হামলার সময় মার্কিনিরা দুটো জাপানি ফাইটার ও ৫টি টর্পেডো বোম্বার ভূপাতিত করে। বাকি ৯টি বিমান হিরয়ূতে ফিরে এডমিরাল নাগুমোকে নতুন আরেকটি অক্ষত ক্যারিয়ার ডুবিয়ে দেয়ার রিপোর্ট করে। ফলে তিনি ভাবেন যে একটু আগে ক্ষতিগ্রস্ত ইয়র্কটাউন নিজে নিজে ডুবে গেছে এবং এবারের হামলায় অপর আরেকটি মার্কিন ক্যারিয়ার ডুবেছে! এই আক্রমণের পর তার পিছু হটার কথা ছিল। কিন্তু পাইলটদের রিপোর্ট পেয়ে নাগুমো ভাবলেন যে অবশিষ্ট বিমান যা আছে তা দিয়ে টিকে থাকা একটিমাত্র মার্কিন ক্যারিয়ারে হামলা করাই যায়! প্রকৃত ঘটনা হলো, একই কুমির ছানা দুবার গণনার মতো ইয়র্কটাউনকে দুবার গণনা করা হয়েছে। ফলে ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’ হলো টিকে থাকা একমাত্র জাপানি ক্যারিয়ার হিরয়ূর।

 ইয়র্কটাউনে টর্পেডো হামলা করছে জাপানি বিমান (বামে-গোল দাগ) ও ২৩ ডিগ্রি কাত হয়ে যায় জাহাজটি (ডানে);
Image source : theatlantic.com

আমেরিকান কাউন্টার অ্যাটাক

সকালের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত জাপানি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার সরয়ূ সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় ডুবে যায়। একদম সন্ধ্যা সাতটার সময় এর সিস্টার শিপ হিরয়ূতে হামলা শুরু হয়। এন্টারপ্রাইজ এয়ার গ্রুপের ডাইভ বোম্বারগুলোর ৫টি বোমা একে আঘাত করে (জাপানি বর্ণনামতে চারটি)। এতে হিরয়ূ তার বিমান ওঠানামা করার শক্তি হারায়। আকাশে তখনও এক ডজন জিরো ফাইটার CAP হিসেবে মার্কিনিদের সাথে লড়াই করছে। এবার যোগাযোগ বিভ্রাটের কারণে হরনেটের এয়ার গ্রুপ এন্টারপ্রাইজের পাইলটদের সাথে যোগ দিতে ব্যর্থ হয়। তারা ক্যারিয়ারগুলোর সাথে থাকা অন্যান্য এস্কর্ট শিপে হামলা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।

হিরয়ূর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা অসম্ভব হয়ে উঠলে এর নাবিকরা অন্যান্য জাহাজের দ্বারা উদ্ধার হয়। জাহাজটি যে ডুবে যাবে তা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল জাপানিরা। কম ক্ষতিগ্রস্ত আকাগির উপর যেন আর হামলা না আসে সেজন্য একে ডুবিয়ে দেয়ার চেষ্টা হিসেবে একটি জাপানিজ ডেস্ট্রয়ার টর্পেডো হামলা করে। কিন্তু এটি তারপরও কয়েক ঘন্টা ভেসে থেকে পরদিন সকাল নয়টায় ডুবে যায়। জাপানের ক্যারিয়ার ফোর্সের সবচেয়ে সেরা দুই অফিসার হিসেবে স্বীকৃত রিয়ার এডমিরাল টামন ইয়ামাগুচি ও ক্যাপ্টেন টামেও কাকু সমুদ্রের নাবিকদের প্রাচীন একটি প্রথা মেনে জাহাজের সাথে ডুবে গিয়ে নিজেদের শেষ করে দেন। এর আগে সরয়ূ ডুবে যাওয়ার সময় সেটির ক্যাপ্টেন ইয়ানাগিমতোও একইভাবে আত্মাহুতি দেন।

৫ জুন, ১৯৪২ সালের ভোরবেলা জাপানি বিমান থেকে তোলা ছবিতে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার হিরয়ূ। বোমা
হামলায় জাহাজটির ফ্লাইট ডেকে বিশাল গর্ত সৃষ্টি হয়েছে; Image source : theatlantic.com

ভাইস এডমিরাল ফ্লেচার নিজের ক্যারিয়ার ইয়র্কটাউন ডুবতে শুরু করায় অপারেশনাল কমান্ড রিয়ার এডমিরাল স্প্ৰুয়েন্সের নিকট হস্তান্তর করেন। তিনি এতক্ষণ এডমিরাল নাগুমোর ক্যারিয়ার ফোর্সের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন যাতে পাইলটদের আসা-যাওয়ার দূরত্ব কমে আসে। চতুর্থ ক্যারিয়ার হিরয়ূতে হামলার পরপরই কোর্স বদলে নেন। কেননা তার আশঙ্কা ছিল রাতের বেলা নাগুমোর পিছু পিছু আসা এডমিরাল ইয়ামামোতোর দুর্ধর্ষ সেন্টার ফোর্সের সাথে তার লড়াই বেধে যাবে। এক্সট্রা ফোর্স হিসেবে নিমিটজের পাঠানো অপর সাবমেরিন ইউএসএস টাম্বর পাঠানো মেসেজে এডমিরাল ইয়ামামোতোর অবস্থান সম্পর্কে ভুল রিপোর্ট পান স্প্ৰুয়েন্স।

সেই সাবমেরিনের ডেপুটি কমান্ডার ছিল স্প্ৰুয়েন্সের ছেলে! সেই অনুযায়ী তিনি তার ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ নিয়ে মিডওয়ের পূর্ব দিকে সরে আসেন। এদিকে সবগুলো ক্যারিয়ার হারিয়ে রেগে থাকা এডমিরাল ইয়ামামোতো তার ক্রুজার ফোর্সকে রাতের আঁধারে পশ্চিম দিয়ে মিডওয়ের দিকে পাঠান যেন তারা অপ্রস্তুত অবস্থায় আমেরিকানদের পেয়ে যায়। ক্রুজারগুলোকে মিডওয়ে আইল্যান্ডে ব্যাপক হামলা করার নির্দেশ দেয়া হয় যেন পরদিন নির্ধারিত সময়ে ইনভেশন ফোর্স মিডওয়েতে বিনা বাধায় ল্যান্ড করতে পারে। এডমিরাল ইয়ামামোতোর নিজের জাহাজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাটলশিপ ‘ইয়ামাটো’সহ সেন্টার ফোর্সের বেশিরভাগ জাহাজ শনাক্ত করলেও আক্রমণে যাননি। কেননা রাতের বেলা আক্রমণ করলে উল্টো তিনিই বিপদে পড়বেন। শক্তিশালী জাপানি ব্যাটলশিপগুলোর সামনে তার ক্যারিয়ারগুলো স্রেফ লোহার ভাসমান জঞ্জাল ছাড়া আর কিছুই না।

ব্যাটলশিপ ইয়ামাটো ও এডমিরাল ইয়ামামোতো; Image source : weaponsandwarfare.com

পরদিন ৫ জুন সকালে স্প্ৰুয়েন্স রিকনসিস বিমান পাঠিয়ে চারদিকে খোঁজ শুরু করেন। কিন্তু ইয়ামামোতোর নৌবহরের খোঁজ পাওয়া গেল না। সেদিন বিকালে নাগুমোর বহরের অচল হয়ে যাওয়া ক্যারিয়ার আকাগিসহ বাদ বাকি জাহাজগুলো ধ্বংস করতে বিমান পাঠান এডমিরাল স্প্ৰুয়েন্স। কিন্তু তাকে খুঁজে না পেয়ে ফেরার পথে ইয়ামামোতোর বহরের কয়েকটি ডেস্ট্রয়ার শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজ খুঁজে পায় মার্কিন পাইলটরা। তবে এই হামলায় তারা সাফল্য পায়।

এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের চেয়ে আকারে ছোট এসব জাহাজে বোমা ফেলা বেশ কঠিন। রাত হয়ে যাওয়ায় এডমিরাল স্প্ৰুয়েন্স আবার আক্রমণ করতে পারেননি। ইয়ামামোতোর ব্যাটলশিপের চোখে ধরা পড়ার ঝুঁকি নিয়ে সার্চ লাইট জ্বালিয়ে নিজের বিমানগুলোকে অবতরণের সুযোগ দেন তিনি। এই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ক্যাপ্টেন মাইলস ব্রাউনিংয়ের সাথে তার বাদানুবাদ হয়। ভাইস এডমিরাল ফ্লেচার রিয়ার এডমিরাল স্প্ৰুয়েন্সকে কমান্ডার বানালেও ক্যারিয়ারগুলোর ভালোমন্দ দেখার দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন ব্রাউনিং। সেদিন রাত সোয়া দুটোয় মিডওয়ে দ্বীপের ১০০ মাইল পশ্চিমে অবস্থান নেয়া মার্কিন সাবমেরিন ইউএসএস টাম্বরের কমান্ডার জন মারফি বেশ কয়েকটি জাহাজ পেরিস্কোপে দেখতে পান। কিন্তু তিনি বা তার ডেপুটি এডওয়ার্ড স্প্ৰুয়েন্স (এডমিরাল রেমন্ড স্প্ৰুয়েন্সের ছেলে) জাহাজগুলো কী ধরনের বা কাদের জাহাজ সেটি বুঝতে পারেননি। ফলে তারা হেডকোয়ার্টারে ফ্লিট এডমিরাল নিমিটজের কাছে “four large ships” মেসেজটি পাঠান।

এই রিপোর্ট মারাত্মক ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে যার কারণে মার্কিন নৌবহর আরেকটু হলেই ফাঁদে পড়ে যেত। তৃতীয় পর্বে বলা হয়েছিল যে ৩ জুন সকাল নয়টার সময় PBY রিকনসিস বিমান একটি জাপানি নৌবহরকে মিডওয়ে দ্বীপের ৯৩০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে (west-southwest) অবস্থান শনাক্ত করে। কিন্তু ভুলবশত বিমানটি শত্রুর ‘Main Body’ তথা মূল ক্যারিয়ার স্ট্রাইক ফোর্স হিসেবে রিপোর্ট করেন। বস্তুত, সেগুলো ছিল এডমিরাল কন্ডোর ‘ইনভেশন ফোর্স’ যারা মিডওয়ে দ্বীপ দখল করার জন্য আস্তে আস্তে আসছে। গতকাল নাগুমোর ক্যারিয়ারগুলোর মোকাবেলা করার পর PBY এর ভুল রিপোর্ট এখন সংশোধিত।

এডমিরাল রেমন্ড স্প্ৰুয়েন্স ও তাঁর ছেলে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এডওয়ার্ড স্প্ৰুয়েন্স এবং সাবমেরিন ইউএসএস টাম্বর; Image source : warhistoryonline.com

কিন্তু সাবমেরিন কমান্ডার জন মারফির ঐ রিপোর্ট থেকে প্রতীয়মান হয় যে উক্ত চারটি বড় জাহাজ ইনভেশন ফোর্সের! তাহলে গত দুদিন যুদ্ধ করে কী লাভ হলো? জাপানিরা তো মিডওয়েতে সেনা নামাবে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই! এজন্য এডমিরাল স্প্ৰুয়েন্স ইয়ামামোতোর ‘Main Body‘ এর ফাঁদে পড়ার ভয় থাকা সত্ত্বেও উক্ত জাহাজগুলোকে আক্রমণ করতে এগিয়ে যান। কিন্তু সেগুলো ছিল ইয়ামামোতো পাঠানো সেই ক্রুজার, ইনভেশন ফোর্সের নয়। অর্থাৎ যার ভয়ে স্প্ৰুয়েন্স কয়েক ঘন্টা আগে পূর্ব দিকে সরে গিয়েছিলেন তার কাছেই এবার এগিয়ে যাচ্ছেন! রাত তিনটার সময় মার্কিনিদের খুঁজে না পেয়ে এডমিরাল ইয়ামামোতো রণেভঙ্গ দেন এবং ক্রুজারগুলোকে ফিরে আসতে বলে তিনি তার ব্যাটলশিপ ফোর্স (মেইন বডি) নিয়ে বাড়ির পথ ধরেন। তিনি যদি আর ঘন্টাখানেক সার্চ চালিয়ে যেতেন বা ক্রুজারদের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য এগিয়ে যেতেন তবে এডমিরাল স্প্ৰুয়েন্স দুই নৌবহরের মাঝখানে পড়ে যেতেন।

কিন্তু ভাগ্য সেদিন মার্কিনিদের পক্ষে ছিল। ক্রুজারগুলো কোর্স পরিবর্তন করে ফিরে যাওয়ার সময় সাবমেরিন টাম্বরকে দেখে ফেলে। তার সম্ভাব্য হামলা থেকে বাঁচতে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে হেভি ক্রুজার মোগামি ও মিকুমা পরস্পরের সাথে সংঘর্ষ হয়। এ সময় মিকুমার ইঞ্জিন বয়লার ও মোগামির সামনের বো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মিকুমার গতি কমে গিয়ে ২২ কিলোমিটার/ঘন্টাতে নেমে আসে। ভোর সোয়া চারটায় আকাশ কিছুটা আলোকিত হওয়ার পর ইউএসএস টাম্বর জাপানি ক্রুজার ফোর্স সম্পর্কে নিশ্চিত হয় এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এডওয়ার্ড স্প্ৰুয়েন্স বাবাকে সতর্ক করে দেন।

ভোর ছয়টায় কমান্ডার জন মারফি টর্পেডো হামলা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে ঘাঁটিতে ফিরে আসেন। এত কম গতির ক্রুজারে টর্পেডো হিট করানো মারফির মতো অভিজ্ঞ সাবমেরিনারদের জন্য একদমই সহজ ব্যাপার ছিল। ক্রুজারের গতি তিনভাগের একভাগ থাকায় স্প্ৰুয়েন্স আবার উল্টো ঘুরে পালানোর সুযোগ পান। কমান্ডার মারফি ঘাঁটিতে পৌঁছানোর পরই এডমিরাল স্প্ৰুয়েন্স তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার নির্দেশ দেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে ছেলেকে ইউএসএস টাম্বরের কমান্ডার বানানোর জন্য বাবা এই কাজ করেছেন। কিন্তু মারফির ভুল রিপোর্ট ও টর্পেডো হামলার ব্যর্থতার কারণে পুরো মার্কিন ক্যারিয়ার স্ট্রাইক ফোর্স আরেকটু হলেই বিপদে পড়ত।

ক্ষতিগ্রস্ত জাপানি হেভি ক্রুজার মোগামির পাশ দিয়ে বিপদজনকভাবে উড়ে যাওয়ার সময় ছবিটি
তুলেছেন জনৈক মার্কিন পাইলট; Image source : theatlantic.com

শত্রুর পশ্চাৎধাবন

পরবর্তী দুদিন ধরে স্প্ৰুয়েন্স ও মিডওয়ে দ্বীপের বোম্বারগুলো এডমিরাল ইয়ামামোতোর নৌবহরের খোঁজে প্রশান্ত মহাসাগর চষে বেড়ায়। মূল বাহিনী থেকে পিছিয়ে থাকা ক্রুজার শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজ মিকুমা ডাইভ বোম্বারের আক্রমণে ডুবে যায়, মোগামি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জাপানে ফেরত যায়। ডেস্ট্রয়ার শ্রেণীর আরাশিও ও আশাসিও যুদ্ধজাহাজ দুটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্যাপ্টেন রিচার্ড ফ্লেমিং নামে এক মেরিন পাইলট মিকুমাতে হামলা করতে গিয়ে নিহত হন, পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সামরিক পদক ‘মেডেল অফ অনার’ লাভ করেন।

এদিকে ইউএসএস ভিরেও ও ইউএসএস হাম্মান নামক যুদ্ধজাহাজ দুটো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত ইউএসএস ইয়র্কটাউনকে ক্যাবল দিয়ে টেনে ঘাঁটিতে নিয়ে যাচ্ছিল। ৬ জুন, ১৯৪২ সালের বিকেলবেলা আই-১৬৮ নামক একটি জাপানি সাবমেরিন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মার্কিন জাহাজে হামলা করে। সাবমেরিনটি নাগুমো বা ইয়ামামোতো কারো বহরের সঙ্গে যুক্ত ছিল না এবং তাকে কোনোপ্রকার হামলার নির্দেশও দেয়া হয়নি। এর একটি টর্পেডো ইউএসএস হাম্মানের ডেপথ চার্জ গোডাউন ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে নিজের অস্ত্রে নিজেই কুপোকাত হয়ে জাহাজটি দুই টুকরা হয়ে ৮০ জন নাবিক নিয়ে ডুবে যায়।

জাপানি সাবমেরিনের অপর দুটো টর্পেডো ইয়র্কটাউনকে আঘাত করে। জাহাজের অবশিষ্ট ড্যামেজ কন্ট্রোল ক্রু/ইঞ্জিনিয়ারদের জাহাজ ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। ভোর সাড়ে পাঁচটায় জাহাজটি খুবই ধীরে ধীরে ডুবতে শুরু করে এবং সকাল সাতটায় পুরোপুরি ডুবে যায়। মার্কিন নাবিকরা অশ্রুসজল চোখে স্যালুট জানিয়ে জাহাজটিকে বিদায় জানায়। অপরদিকে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ‘কাগা’ ডুবে যাওয়ার পরের দিন ভোর পাঁচটায় জাপানের শেষ ভরসা আকাগি ও সকাল নয়টায় হিরয়ূ ডুবে যায়। জাপানি সাবমেরিনটি নিজে থেকে ইয়র্কটাউনে হামলা না করলে সেটি হয়তো বেঁচে যেত। ১৯৯৮ সালে সাড়ে ১৬ হাজার ফুট পানির নিচে প্রায় অক্ষত অবস্থায় ইয়র্কটাউনকে শনাক্ত করে একদল মার্কিন ডুবুরি।

ডুবে যাওয়ার আগমুহূর্তে ইয়র্কটাউন ও পানির নিচে প্রায় অক্ষত জাহাজটি; Image source : warhistoryonline.com

দুই পক্ষের ক্ষয়ক্ষতি পরিসংখ্যান, যুদ্ধবন্দি ও যুদ্ধের ফলাফল

এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একটিমাত্র এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ডুবে যায় ও দেড়শো বিমান ধ্বংস হয়। এছাড়া একটি ডেস্ট্রয়ার ডুবে যায়। সব মিলিয়ে ৩০৭ জন নিহত হয় যার মধ্যে তিনজন ছিল বন্দি। ইয়র্কটাউন পাইলট ওয়েসলি অসমুসকে ক্ষিপ্ত জাপানিরা কুড়াল দিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনায় নির্দেশদাতা ক্যাপ্টেন ইয়াসুমাসাকে যুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজা পেতে হয়। এন্টারপ্রাইজের পাইলট ফ্র্যাঙ্ক ফ্লাহের্থী ও তার রেডিওম্যান-টেইল গানার ব্রুনো পিটার গাইডোকে কেরোসিনের ক্যানে পানি ঢুকিয়ে হাত-পা বেঁধে সমুদ্রে ফেলে দেয়া হয়েছিল।

অন্যদিকে জাপানের চারটি ফ্লিট ক্যারিয়ার, একটি হেভি ক্রুজার ডুবে যায় এবং একটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের ২৪৮টি বিমানের সবগুলো ধ্বংস হয় এবং প্রায় সম-সংখ্যক পাইলট নিহত হন! সব মিলিয়ে জাপানের ৩,০৫৭ জন নিহত হয় এবং ৩৭ জন মার্কিনিদের হাতে বন্দি হয়। তাদেরকে হত্যা করা হয়নি, বরং পার্ল হারবারে পাঠানো হয়। জাপানি নাবিকদের মনোবল যেন ভেঙে না পড়ে সেজন্য ক্ষয়ক্ষতির অনেক কম প্রকাশ হয়। সংবাদপত্রে দুটো মার্কিন ক্যারিয়ার ডুবানোর ভুয়া সংবাদের পাশাপাশি মিডওয়ের যুদ্ধকে প্রচুর রক্তপাতে অর্জিত বিজয় বলে প্রোপাগান্ডা চালানো হয়।

নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা কেবলমাত্র জাপান সম্রাট হিরোহিতো এবং গুটিকয়েক উচ্চপদস্থ নৌ কর্মকর্তা জানতেন। মিডওয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়া জীবিত নাবিকদের বিভিন্ন ইউনিটে ট্রান্সফার করে দেয়া হয়। আহতদের এতটাই গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় যে তাদেরকে মৃত্যুশয্যায়ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি।

আহত নাবিককে রশিতে ঝুলিয়ে অন্য জাহাজে স্থানান্তর করা হচ্ছে (বামে) ও যুদ্ধবন্দি জাপানি নাবিকগণ (ডানে); Image source : theatlantic.com

যুদ্ধের ফলাফল এবং প্রভাব

যুদ্ধের পর এডমিরাল স্প্ৰুয়েন্স তার বহরের সবগুলো জাহাজ রিফুয়েলিং শেষ করে ইয়ামামোতোর নৌবহরকে খুঁজতে বের হন। এরই মধ্যে ইউএসএস সারাটোগা নামের অপর একটি ক্যারিয়ার মেরামতের কাজ অসমাপ্ত রেখে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জরুরি ভিত্তিতে ফিরে এলে এডমিরাল ফ্লেচার সেটির দায়িত্ব নিয়ে আবার ফ্লিট কমান্ড নিজের হাতে নেন।

১০ জুন পর্যন্ত জাপানিদের খোঁজে প্রশান্ত মহাসাগর চষে বেড়ানো হয়। ইতিহাসবিদ স্যামুয়েল মরিসন তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে সেদিন রাতে জাপানিদের আক্রমণ না করে পশ্চাৎপসরণের সুযোগ দেয়ায় যুদ্ধের পর এডমিরাল স্প্ৰুয়েন্সের বেশ সমালোচনা হয়। কিন্তু রাতে হামলা করার মতো পর্যাপ্ত টর্পেডো বোম্বার তার কাছে ছিল না। এডমিরাল নাগুমো ১৫ জুন পোস্ট-ব্যাটল এনালাইসিস রিপোর্ট দেন যে আমেরিকানরা তাদের প্ল্যান ৫ জুনের আগপর্যন্ত জানত না। কিন্তু নিজেদের অপর্যাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যের কারণে আকস্মিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন বলে ধারণা করেন তিনি।

বাস্তবতা হলো মার্কিন ক্রিপ্টোগ্রাফাররা জাপানি নেভাল কমিউনিকেশন কোডবুকের ৮৫% কোড ভেঙে ফেলেছিল। ফলে জাপানি রেডিও কমিউনিকেশনের অনেকাংশই যুদ্ধের পূর্বেই ফাঁস হয়ে যায়, যা প্রথম পর্বে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এ কারণে এই যুদ্ধকে “The turning point of the Pacific” বলা হয়। কোরাল সি যুদ্ধের ফলাফল যদি ড্র ধরা হয়, তবে মিডওয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘Total Victory‘। এই যুদ্ধের পর মার্কিনিরা বিশ্বাস করতে শুরু করে যে কম শক্তি নিয়েও জাপানিদের যুদ্ধে হারানো সম্ভব।

 এক ছবিতে পাঁচটি Essex ক্লাস এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার। এই শ্রেণীর ২৪টি জাহাজ বানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র; Image source : wikipedia.org

তবে মিডওয়ের মতো বেকায়দা অবস্থায় যেন আর না পড়তে হয় সেজন্য তাদের যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ প্রোগ্রাম ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত করা হয়। পরবর্তী তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্র ২৪টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার নির্মাণ করে! একই সঙ্গে তাদের পাইলট ট্রেনিং প্রোগ্রাম ও যুদ্ধবিমান নির্মাণ ত্বরান্বিত হয়। অপরদিকে জাপানের নতুন বিমান তৈরির ধারা মোটামুটি অক্ষুণ্ন থাকলেও পাইলট ট্রেনিং প্রোগ্রাম খুবই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হয়, যা অনভিজ্ঞ পাইলট তৈরি করে। উল্লেখ্য, জাপানের মোট ভেটেরান পাইলটদের ২৫% এবং মোট এয়ারক্রাফট মেকানিক ও টেকনিশিয়ানের ৪০% মিডওয়ের যুদ্ধে নিহত হয়েছিল।

তাছাড়া কোরাল সি ও মিডওয়ে যুদ্ধে জাপানের ৩টি ক্যারিয়ার ডিভিশন নন-অপারেশনাল হয়ে যায়। এতে প্যাসিফিক অঞ্চলে জাপানের একের পর এক এলাকা দখলের পরিকল্পনা একেবারে হোঁচট খায়। এর ফলে গুয়াডালক্যানাল ও সলোমন আইল্যান্ডে সেনা নামানোর সুযোগ পায় যুক্তরাষ্ট্র। মিডওয়ে যুদ্ধের ধোঁকা হিসেবে যে এলিউশন আইল্যান্ড দখল করেছিল, সেটিও পুনরুদ্ধার হয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূমিতে জাপানের হামলার আশা কেবল স্বপ্নই থেকে যায়। সর্বোপরি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত মিডওয়ে যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব কোনো না কোনোভাবে জাপান অনুভব করেছে।

এই সিরিজের পূর্ববর্তী পর্বসমূহ

১) ব্যাটল অফ মিডওয়ে (পর্ব-১): যে কারণে মার্কিন বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ করেছিল জাপান

২) ব্যাটল অফ মিডওয়ে (পর্ব-২): জাপান-যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ প্রস্তুতি

৩) ব্যাটল অফ মিডওয়ে (পর্ব-৩): মার্কিন ঘাঁটিতে জাপানি বিমান হামলা

৪) ব্যাটল অফ মিডওয়ে (পর্ব-৪): দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া এক স্মরণীয় নৌযুদ্ধ

Related Articles