Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফ্ল্যাভিয়াস বেলিসারিয়াস: রোমের পুনরুদ্ধারকারী জেনারেল

সম্রাট জাস্টিনিয়ান যখন পূর্ব রোমান তথা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের ক্ষমতায় এলেন, তখন ৫২৭ খ্রিস্টাব্দ। প্রায় ৫০ বছর হলো পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের। যে রোম নগরী থেকে গোড়াপত্তন হয় সুবিশাল রোমান সাম্রাজ্যের, সেই রোম নগরী বর্বর জার্মানিক গথদের দখলে। একসময় রোম সাম্রাজ্যের অংশ উত্তর আফ্রিকাও আরেক বর্বর জার্মানিক গোত্র ভ্যান্ডালদের দখলে। সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাংশে ক্রমাগত যুদ্ধ লেগেই আছে পার্সিয়ান পরাশক্তি সাসানিদ সাম্রাজ্যের সাথে। তার উপর আবার সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ লেগেই আছে, সাথে প্রাসাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থেকেও সতর্ক থেকে চলতে হয়। একসময় ব্রিটেন থেকে ব্যাবিলন পর্যন্ত সুবিস্তৃত রোমান সাম্রাজ্যের শুধুমাত্র পূর্বাঞ্চলই টিকে আছে, তা-ও আবার চারিদিকে এত সমস্যা নিয়ে।

সেই সম্রাট জাস্টিনিয়ান একে একে নিকার দাঙ্গা থামালেন, সাসানিদদের বিরুদ্ধে কয়েকটি জয়-পরাজয়ের পর সাময়িক শান্তিচুক্তি করতে সমর্থ হলেন, উত্তর আফ্রিকায় ভ্যান্ডালদের পরাজিত করলেন এবং শেষ পর্যন্ত রোম নগরীকে আবারও রোমান শাসনে নিয়ে এলেন। এই সবগুলো বিজয়াভিযানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন সম্রাট জাস্টিনিয়ানের প্রতি আমৃত্যু অনুগত এক জেনারেল। নাম তার ফ্ল্যাভিয়াস বেলিসারিয়াস। ইতিহাসের অনবদ্য এক সেনানায়ক, যদিও কখনই সেভাবে ইতিহাসের পাতায় তাকে অর্জনের অনুপাতে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। ইতিহাস দূরে থাক, যে সম্রাটের প্রতি আমৃত্যু অনুগত ছিলেন, সেই সম্রাটের থেকেও আনুগত্যের যোগ্য পুরষ্কার কখনই পাননি।

প্রথম জীবন

বলকান উপদ্বীপের পশ্চিমপার্শ্বের ইলিরিয়া অঞ্চলে অবস্থিত জার্মানিয়া শহরে ৫০৫ খ্রিস্টাব্দে একটি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ফ্ল্যাভিয়াস বেলিসারিয়াস। বাইজেন্টাইন সম্রাট প্রথম জাস্টিনের আমলে যোগ দেন রোমান সেনাবাহিনীতে। কয়েক বছরের মধ্যেই সম্রাটের দেহরক্ষী হিসেবে উন্নীত হন। জাস্টিনের সময়েই প্রথম কমান্ডারের দায়িত্ব পান বেলিসারিয়াস। জাস্টিনের পরবর্তী সম্রাট জাস্টিনিয়ান নিশ্চয়ই বিশেষ কিছু দেখতে পেয়েছিলেন বেলিসারিয়াসের মধ্যে। তাই হয়তো ত্রিশের ঘরে পা রাখার আগেই বেলিসারিয়াসকে দায়িত্ব দেন নিয়মিত পার্সিয়ানদের সাথে বিবাদ লেগে থাকা পূর্ব ফ্রন্টে।

সাসানিদদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন

৫৩০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমানের তুরস্কে অবস্থিত তৎকালীন রোমান দুর্গ দারাতে ২৫ হাজার সৈন্য নিয়েই বেলিসারিয়াস পরাস্ত করেন ৪০ হাজার (মতান্তরে ৫০ হাজার) সৈন্যবিশিষ্ট সাসানিদদের।

দারা’র যুদ্ধ ; Image Source: Wikipedia
দারা’র যুদ্ধ; Image Source: Wikimedia Commons

যদিও ৫৩১ খ্রিস্টাব্দেই সাসানিদদের বিরুদ্ধে বেলিসারিয়াসের কৌশল পেরে উঠতে ব্যর্থ হয় ক্যালিনিকামের যুদ্ধে। তবে সেই যুদ্ধে সাসানিদদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেশ ছিল, এবং এরপর সম্রাট জাস্টিনিয়ান সন্ধিচুক্তি করেন সাসানিদদের সঙ্গে, যা ৫৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিরাজমান ছিল।

নিকা’র দাঙ্গা

এরপর বেলিসারিয়াসের ডাক পড়ে রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপোলে, যেখানে ৫৩২ খ্রিস্টাব্দে ঘটে যাওয়া নিকা’র দাঙ্গা ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই জেনারেল। এখানেই তিনি প্রমাণ দেন সম্রাটের প্রতি তার আনুগত্যের। শহরজুড়ে চালানো বেলিসারিয়াসের এই অভিযানে প্রাণ যায় প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষের। পরিস্থিতি সম্রাটের অনুকূলে আসে। কিছুদিনের মধ্যেই সম্রাজ্ঞী থিওডোরার বান্ধবী অ্যান্টোনিনার সাথে বিয়ে হয় বেলিসারিয়াসের। পশ্চিমে প্রথম অভিযানের দায়িত্ব বেলিসারিয়াসের হাতে অর্পিত হওয়াতে এই দুটি ঘটনার বড় ভূমিকা রয়েছে।

এরপরেই শুরু হয় বেলিসারিয়াসের অধীনে পশ্চিমে ভ্যান্ডাল এবং গথদের বিরুদ্ধে রোমানদের জয়রথ।

উত্তর আফ্রিকার অভিযান

৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকান অঞ্চলগুলো পুনর্বিজয়ের উদ্দেশ্যে সম্রাট জাস্টিনিয়ান অভিযানে পাঠান বেলিসারিয়াসকে। একসময় রোমান সাম্রাজ্যের অংশ থাকা আফ্রিকান অঞ্চল তখন ভ্যান্ডালদের দ্বারা শাসিত।

৩৫ হাজার সৈন্য ও ৫০০ যুদ্ধজাহাজ বিশিষ্ট বিশাল এক বাহিনী নিয়ে বেলিসারিয়াস রওনা দেন তার পুনরুদ্ধার অভিযানে। রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপল থেকে রওনা দিয়ে প্রথমে বর্তমান ইতালির দক্ষিণের দ্বীপ সিসিলিতে পা রাখেন রোমান জেনারেল, যেখানে তিনি তথ্য পান যে তৎকালীন ভ্যান্ডাল রাজা গেলিমার তার আগমন সম্পর্কে একদমই অবগত নন। এই সুযোগে তিনি সিদ্ধান্ত নেন দ্রুতই আফ্রিকা গমনের।

উত্তর আফ্রিকাতে নেমেই বেলিসারিয়াস তার বাহিনী নিয়ে ভ্যান্ডাল রাজ্যের রাজধানী তৎকালীন কার্থেজের (বর্তমান তিউনিসিয়া) উদ্দেশ্যে মার্চ শুরু করেন। বাহিনীর প্রতি তার স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল স্থানীয়দের যেন কোনো হয়রানি করা না হয়। কারণ এই অভিযানের পেছনে সম্রাট মূল কারণ হিসেবে দেখিয়েছিলেন সেখানকার খ্রিস্টানদের, যারা কিনা অনেকটা রোমান ধাঁচের খ্রিস্টবাদের অনুসারী, তাদেরকে ভ্যান্ডালদের থেকে রক্ষা করা। তৎকালীন ভ্যান্ডালরা রোমানদের থেকে কিছুটা ভিন্ন ধাঁচের খ্রিস্টবাদ অনুসরণ করত, যেটাকে তারা বলতো ‘আরিয়ান খ্রিস্টবাদ’। দুটোর মধ্যে কিছু ভিন্নতা থাকায় দুই ধাঁচের অনুসারীদের মধ্যে তখন বিরোধ বিরাজমান ছিল।

এতে স্থানীয় অধিবাসীদের আস্থা অর্জন করেন বেলিসারিয়াস, যা তার অভিযানের জন্য সুবিধাজনক ছিল। এরই মধ্যে ভ্যান্ডালরাজ রোমানদের আগমন সম্পর্কে অবগত হলে প্রস্তুতি নেন প্রতি-আক্রমণের।

কার্থেজের নিকটে আদ দেসিমাম উপত্যকায় সংঘটিত হওয়া এ যুদ্ধে ভ্যান্ডালদের প্রতি-আক্রমণ রোমানদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয় এবং সেখানে ভ্যান্ডাল রাজা গেলিমারের ভাই এবং ভ্রাতুষ্পুত্র প্রাণ হারান। গেলিমারের মূল বাহিনী তেমন ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার না হলেও কার্থেজের পথে আর কোনো বাধা না থাকায় রোমান সেনাবাহিনী তৃতীয় পুনিক যুদ্ধের পর আবারও বিজয়ীরূপে প্রবেশ করে উত্তর আফ্রিকার এই শহরে।

এ যুদ্ধে হেরেও গেলিমার যাত্রা শুরু করেন কার্থেজ পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে, কিন্তু এবারও তিনি হেরে যান রোমানদের নিকটে এবং এবারের পরাজয়টি ছিল চূড়ান্ত পরাজয়, যেখানে বন্দী হন গেলিমার।

https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/f/f0/Vandalic_War_campaign_map.png/1280px-Vandalic_War_campaign_map.png
ভ্যান্ডালিক যুদ্ধাভিযান; Image Source: Wikipedia

 

যুদ্ধশেষে বিজয়ী সেনাপতি বেলিসারিয়াস বন্দী গেলিমারকে নিয়ে ফিরে আসেন রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপোলে, যেখানে তার বিজয় শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

রোম বিজয়

৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে সেনাপতি বেলিসারিয়াসকে আবারও অভিযানে পাঠান সম্রাট জাস্টিনিয়ান। এবার লক্ষ্য রোম, যে শহরে সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন।

রোমসহ পুরো ইতালিই তখন আরেক জার্মানিক জাতি অস্ট্রগোথদের অধীনে। ৫২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজা থিওডোরিকের আমল সমৃদ্ধশালী হলেও, থিওডোরিকের মৃত্যুর পর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দ্রুতই কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে গোথ সাম্রাজ্য। তখনকার রাজা থিওডাহাডের দুর্বলতার সুযোগে খুব দ্রুতই একে একে সিসিলি, নেপলস, এবং ৫৩৬ খ্রিস্টাব্দে রোম জয় করেন সেনাপতি বেলিসারিয়াস। তারপর গথরা রোমানদের ঠেকানোর চেষ্টা করলেও ৫৪০ খ্রিস্টাব্দে বেলিসারিয়াসের হাত ধরে আবারও রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে আসে গুরুত্বপূর্ণ শহর র‍্যাভেনা, যেখানে তৎকালীন গথরাজ, এবং আগে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের আগে বাস করতেন সম্রাট নিজে।

এরপর সম্রাট জাস্টিনিয়ান সিদ্ধান্ত নেন গথদের সাথে চুক্তি করার। কিন্তু গথরা রোমান সম্রাটের কথায় আস্থা পেল না। তবে যুদ্ধে সম্মানজনক আচরণ দিয়ে গথদের নিকট বেশি আস্থাভাজন ছিলেন বেলিসারিয়াস নিজেই। তাই গোথিক নোবেলরা বেলিসারিয়াসকেই প্রস্তাব দিয়ে বসেন নিজেদের রাজা হবার।

কিন্তু জেনারেল বেলিসারিয়াসের রাজা হবার মতো উচ্চাভিলাষ ছিল না, এবং তিনি ছিলেন সম্রাট জাস্টিনিয়ানের প্রতি সম্পূর্ণরূপে অনুগত। তাই তিনি সম্রাট জাস্টিনিয়ানের নামেই লিখে নেন অস্ট্রগোথিক রাজ্যের পুরোটাই।

https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/5/54/Gothic_War_-_First_Phase%2C_535-540.svg/1280px-Gothic_War_-_First_Phase%2C_535-540.svg.png
রোমান-গোথিক যুদ্ধ; Image Source: Wikipedia

প্রতিটি বিজয়ের সাথে সাথেই বৃদ্ধি পেতে থাকে বেলিসারিয়াসের জনপ্রিয়তা। সেনাপতির অতি-জনপ্রিয়তায় সন্দেহপরায়ণ হয়ে ওঠেন সম্রাট জাস্টিনিয়ান। তাই দ্রুতই তিনি সেনাপতিকে ডেকে আনেন রাজধানীতে। বেলিসারিয়াসের স্থানে ইতালিতে পাঠানো হয় সম্রাটের বিশ্বস্ত এক অফিসিয়ালকে।

আবারও পারসিয়া এবং আবারও ইতালি

সন্দেহপ্রবণ হয়ে অনুগত সেনাপতিকে ডেকে আনলেও পরের বছরই পারসিক সাসানিদদের বিরুদ্ধে তাকে পাঠান সম্রাট। সেখানেও নিজের চিরাচরিত ক্যারিশমা এবং কৌশল দিয়ে দ্রুতই বিজয় ছিনিয়ে আনেন বেলিসারিয়াস।

পুর্বে বিজয় অর্জিত হলেও পশ্চিমে অবস্থার অবনতি দেখা দেয়। বেলিসারিয়াসের জায়গায় যে অফিসিয়াল নিয়োগ দেয়া হয়, পরে দেখা যায় তিনি দুর্নীতিপরায়ণ ছিলেন, এবং তার দুঃশাসনে স্থানীয়রা, বিশেষ করে গথরা অধৈর্য হয়ে পড়ে দ্রুতই। ফলে দেখা দেয় গথিক বিদ্রোহ। গথরা আবারও ইতালিতে প্রভাব বিস্তার করে নতুন রাজা টটিলার অধীনে। টটিলার বিরুদ্ধে যেসকল রোমান জেনারেলদের পাঠানো হয়, প্রত্যেকেই পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হন এবং চমৎকার কৌশল ও ক্যারিশমার মিশেলে নতুন গথরাজ দ্রুতই রোমানদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নেন একের পর এক অঞ্চল। 

পরে অনিচ্ছা সত্ত্বেও একপ্রকার বাধ্য হয়েই আবারও বেলিসারিয়াসকে রোমে পাঠান জাস্টিনিয়ান। ততদিনে রোম শহরকে আবারও দখল করে নেয় গোথরা। বেলিসারিয়াস প্রথমেই দক্ষিণ ইতালির কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করেন। কিন্তু রোম দখলের কিছুদিনের মাথায়ই কৌশলগত কারণে নিজের সৈন্যসহ রোম শহরকে অরক্ষিত রেখেই চলে যান গথিক রাজা টটিলা। টটিলাও বেলিসারিয়াসের মতোই সম্মানীত ছিলেন একজন সেনানায়ক হিসবে। তাই রোমান সিনেটর কিংবা অধিবাসীদের উপর তেমন অত্যাচারও চালানো হয়নি তার তরফ থেকে। এই সুযোগে অরক্ষিত রোমকে আবারও উদ্ধার করেন জেনারেল বেলিসারিয়াস।

তবে বেলিসারিয়াসের প্রতি সম্রাটের সন্দেহ দিন দিন বৃদ্ধি পেতেই থাকে। এই সন্দেহ থেকেই ইতালিতে থাকা বেলিসারিয়াসকে অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল, এমনকি রসদও ঠিকভাবে পাঠানো হয়নি। এদিকে টটিলাও দিন দিন শক্তি বৃদ্ধি করতেই থাকেন। একসময় কৌশলে বেলিসারিয়াসকেও পরাস্ত করে ফেলেন টটিলা। সেই সাথে ৫৫০ খ্রিস্টাব্দে রোমকেও পুনরায় গোথিক রাজ্যের অধীনে নিয়ে আসেন তিনি।

রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন

ওদিকে ৫৪৮ খ্রিস্টাব্দে সম্রাজ্ঞী থিওডোরা মৃত্যুবরণ করলে রাজসভায় নিজের শেষ প্রভাবটুকুও হারান জেনারেল বেলিসারিয়াস, যার ফলে জাস্টিনিয়ানের সন্দেহপ্রবণ স্বভাব অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে।

পরে আবারও রাজধানীতে বেলিসারিয়াসকে ডেকে আনা হয়। ইতালিতে তার জায়গায় আবারও পাঠানো হয় আরেক সেনাপতিকে। সেখানেই বেলিসারিয়াস সেনাজীবন থেকে অবসর নেন।

অনাড়ম্বর জীবনযাপন করা বেলিসারিয়াস একপ্রকার নিষ্ক্রিয়ই থাকেন কনস্ট্যান্টিপোলে। তবে ৫৫৯ খ্রিস্টাব্দে হুনরা রোমান সাম্রাজ্যে হানা দিলে সম্রাট জাস্টিনিয়ান আবারও একপ্রকার বাধ্য হয়েই অবসর থেকে ফিরে আসার নির্দেশ দেন তার সেনাপতিকে। বেলিসারিয়াস ফিরে আসেন এবং আবারও কৌশল দিয়ে পরাস্ত করেন সাম্রাজ্যের শত্রুদের।

শেষ জীবন

হুনদের পরাস্ত করার তিন বছর পর বেলিসারিয়াসের উপর মিথ্যা অভিযোগ আসে সম্রাট জাস্টিনিয়ানের প্রতি হত্যাচেষ্টার। যদিও বেলিসারিয়াসের সম্রাটের প্রতি আনুগত্য প্রশ্নাতীত ছিল, তবুও সম্রাটের সন্দেহপ্রবণতার বলি হয়ে বেলিসারিয়াস হারান তার জীবনের সকল অর্জন এবং সম্মান। তাকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয় সম্রাটের নির্দেশে। এমন কথাও প্রচলিত আছে যে বেলিসারিয়াসকে নাকি সম্রাটের নির্দেশে অন্ধ করে দেয়া হয় যার কারণে তিনি শেষ জীবনে নাকি ভিক্ষে করতেন। যদিও এটা প্রমাণিত কোনো সত্য নয়।

https://assets.roar.media/assets/VD6UOs6Tm9ZoHL1G_belisarius_by_francois-andre_vincent-e1594782066431.jpg
‘ভিক্ষারত বেলিসারিয়াস’ শীর্ষক ফরাসি এক চিত্রকরের চিত্রকর্ম; Image Source: craftytheatre

পরের বছরই বেলিসারিয়াসকে মুক্তি দেয়া হয় এবং তিনি তার সম্মানও ফিরে পান। আজীবনই ব্যক্তিজীবন অনাড়ম্বরভাবে কাটানো বেলিসারিয়াস ৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে অনেকটা নিভৃতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সম্রাট জাস্টিনিয়ানের প্রতি সেনাপতি বেলিসারিয়াসের আনুগত্য ছিল প্রশ্নাতীত। গথদের থেকে রাজা হবার প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন বেলিসারিয়াস শুধুমাত্র সম্রাটের প্রতি তার আনুগত্য থেকে। যখনই সম্রাটের তরফ থেকে ডাক পড়েছে, তখনই কোনো ধরনের দোটানা ছাড়াই ময়দানে নেমে পড়েছেন। তারপরও সম্রাটের কাছ থেকে মেলেনি সন্দেহ ছাড়া কিছুই। হয়তো ক্ষমতা হারানোর ভয়, হয়তো রাজসভার নোংরা রাজনীতি, কিংবা অন্য কিছুই সম্রাটের মনে জুগিয়ে গেছে এক বেলিসারিয়াসের প্রতি অজানা ঘৃণা, কিংবা ভয়। এমনকি বেলিসারিয়াসের স্ত্রীও নাকি সম্রাজ্ঞী থিওডোরার গুপ্তচর হিসেবেই নিযুক্ত ছিলেন বলে বলা হয়।

সম্রাটের কাছ থেকে যোগ্য সম্মানটা কখনোই না পেলেও ইতিহাস ভোলেনি অন্যতম সেরা এই জেনারেলকে। অনেকের মতে, রোমের সর্বশেষ সুযোগ্য জেনারেল তিনি। রাজনীতির নোংরা খেলার চেয়ে যুদ্ধের ময়দানের প্রতিই আকৃষ্ট এই জেনারেলই প্রায় ভঙ্গুর রোমান সাম্রাজ্যকে ফিরিয়ে দিতে পেরেছিলেন পুরনো গৌরবের অনেকটাই।

Related Articles