Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গ্রিনফিল্ড ভিলেজ: এডিসনস ইনস্টিটিউটের বিস্ময়কর সংগ্রহশালা

এডিসনস ইনস্টিটিউটের আরেকটি দর্শনীয় সংগ্রহশালা হচ্ছে গ্রিনফিল্ড ভিলেজ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ঐতিহাসিক আউটডোর মিউজিয়াম। গ্রিনফিল্ড ভিলেজ দেখতে একটা গ্রামের মতো। ২৪০ একর জায়গার বিস্তৃত প্রান্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা ঐতিহাসিক সব নিদর্শন। ভিলেজটি ডিজাইনের দায়িত্বে ছিলেন রবার্ট ও ডেরিক। ১৯৩৩ সালে জাদুঘরটি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

হেনরি ফোর্ডের বসতবাড়ি; Image Sorce: pinterest.com

গ্রিনফিল্ড ভিলেজের চতুর্দিকে আমেরিকান শিল্প ও প্রযুক্তির জয়যাত্রার নানা কাহিনী স্থান পেয়েছে। এ অগ্রযাত্রায় ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করা সে সময়ের বিভিন্ন শিল্পকারখানার অনুলিপি এ জাদুঘরে স্থান পেয়েছে। এখানে আরও রয়েছে আমেরিকার ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক সব ব্যক্তিত্বের স্মৃতিবিজড়িত নানা নিদর্শন।

লোগান কান্ট্রি কোর্ট হাউস, যেখানে আব্রাহাম লিংকন আইন চর্চা করতেন; Image Sorce: mommysfabulousfinds.com

অসংখ্য বিজ্ঞানী, চিন্তাবিদ ও কর্মবীরদের অবদানের কথা যেমন তুলে ধরা হয়েছে তেমনি এই সংগ্রহশালার মাধ্যমে তাদের ব্যক্তিগত জীবনযাত্রার নানা প্রতিচ্ছবিও উঠে এসেছে। অনেকক্ষেত্রেই তাদের ঘর-বাড়ি, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠিয়ে এনে বসানো হয়েছে গ্রিনফিল্ড ভিলেজে। ব্যাপারটা অবাক করার মতোই বটে। 

১৮৭০ সালের স্কুল-বাড়ি স্কচ সেটলমেন্ট স্কুল; Image Sorce: wishuponanrvstar.blogspot.com

এ জাদুঘরে হেনরি ফোর্ডের বসতবাড়িসহ  প্রায় ৮৩টির মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের ঘরবাড়ি, তাদের গবেষণাগার, উনিশ শতকের কলকারখানা থেকে শুরু করে সে সময়ের রেস্তোরাঁ, দোকানপাট সাজিয়ে রাখা হয়েছে। গ্রিনফিল্ড ভিলেজে এলে দর্শকরা তাই আঠারো-উনিশ শতকের জীবনযাত্রার এক পূর্ণাঙ্গ চিত্রও দেখতে পান।

হেনরি ফোর্ডের গাড়ির ওয়ার্কশপ; Image Sorce: britannica.com

স্বয়ং হেনরি ফোর্ড ডেট্রয়েটের কাছাকাছি গ্রিনফিল্ড কাউন্টির যে বাড়িতে জন্মেছিলেন সেই বাড়িটি, তখনকার আসবাব, পিয়ানো, রান্নাঘরের বাসনপত্র সমেত তুলে এনে এই মিউজিয়ামে রাখা হয়েছে। শুধু বাড়ি নয়, হেনরি ফোর্ডের কারখানা, যেখানে প্রথম মোটরগাড়ি তৈরি হয়েছিল, তাও রয়েছে। রয়েছে ফোর্ডের গোড়ার দিকের তৈরী বিভিন্ন মোটরগড়ির মডেলও। এ জাদুঘরে আরও রয়েছে টমাস আলভা এডিসনের ওয়ার্কশপ মেনলো পার্ক, যা উঠিয়ে আনা হয়েছে নিউজার্সি থেকে। এই ওয়ার্কশপেই এডিসন প্রথম বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার করেছিলেন।

এডিসনের ওয়ার্কশপ মেনলো পার্ক; Image Sorce: thehenryford.org

শুধু তাই নয়, রয়েছে এরোপ্লেনের আবিষ্কারক রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের বাই সাইকেলের দোকান, যার পেছনের দিকটায় দুই ভাই উড়োজাহাজ তৈরির কাজে নানা গবেষণা চালাতেন। এদের বসত বাড়িটাও গ্রিনফিল্ড ভিলেজে তুলে আনা হয়েছে। ওয়েবস্টার ডিকশনারির লেখক নোয়া ওয়েবস্টারের বাড়ি, পড়ার ঘর- সবই দেখতে পাওয়া যাবে গ্রিনফিল্ড ভিলেজে। অন্যান্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে রয়েছে লোগান কাউন্টির কোর্ট হাউস। এই কোর্টে আব্রাহাম লিঙ্কন ওকালতি করতেন। লিঙ্কনের ব্যবহার করা আইনের বিভিন্ন বই আলমারিতে সাজিয়ে রাখা আছে।

ইতিহাসের প্রথমদিকে নির্মিত স্টিম ইঞ্জিনযুক্ত খোলা কামরার রেলগাড়ি ; Image Sorce: youtube.com

এছাড়াও আঠারো ও উনিশ শতাব্দীর আমেরিকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রার প্রণালী ও বিকাশ বোঝাবার জন্য উদাহরণস্বরূপ অনেক বাড়িঘর তুলে এনে গ্রিনফিল্ড ভিলেজে স্থাপন করা হয়েছে। তুলে আনা হয়েছে ১৮৭০ সালের স্কুল-বাড়ি ‘স্কচ সেটলমেন্ট স্কুল’, যাতে হেনরি ফোর্ড পড়াশোনা করেছিলেন। দেখা যাবে পুরনো দিনের আইসক্রিম পার্লার, মুদির  দোকান ও জেনারেল স্টোর, যেখানে সেকালে যেসব জিনিসপত্র বিক্রি হতো- তার অনেক কিছুই দোকানগুলোতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

 এরোপ্লেনের আবিষ্কারক রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের বাই সাইকেলের দোকান; Image Sorce: pinterest.com

এ তো গেলো বিখ্যাত ব্যক্তিদের ঘর-বাড়ি, ওয়ার্কশপ এবং সে সময়ের আমেরিকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রার এক প্রতিরূপ। বিগত শতাব্দীতে শিল্প ও দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য দিকটার চেহারা কেমন ছিল, তাও দেখা যাবে গ্রিনফিল্ড ভিলেজে। পুরনো ধাঁচের স্টিম ইঞ্জিনযুক্ত খোলা কামরার রেলগাড়ি এখনও সে সময়ের মতোই চলছে। দর্শকেরা তাতে চড়তে পারেন। সেই রেলগাড়ি করে ঘুরে বেড়ানো যাবে বহু পুরনো একটি ব্রিজের পাশ দিয়ে, লন্ডনের সেই ব্রিজটিও তুলে আনা হয়েছে এখানে। এই রেলগাড়ি ছাড়াও দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য রয়েছে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ার ব্যবস্থা।

দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য গ্রিনফিল্ড ভিলেজে রয়েছে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ার ব্যবস্থা; Image Sorce: mommysfabulousfinds.com

দর্শকেরা ভ্রমণের জন্য রয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দীতে তৈরি ‘শুওয়ানি’ নামে একটি স্টিমার। এই স্টিমারটি ফ্লোরিডাতে যাত্রী আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহার করা হতো। এডিসন প্রায়ই এটিতে যাতায়াত করতেন। দর্শকরা আরো দেখতে পাবেন মুদ্রণ, টেক্সটাইল, পটারি, কাচ ইত্যাদি বিভিন্ন শিল্পের পুরনো সব কারখানার অনুলিপি। গ্রিনফিল্ড ভিলেজে গোড়ার দিকের এইসব শিল্পের কারখানাগুলোতে কীভাবে কাজ করা হতো, তা দেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে। বিগত সময়ে কোনো যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়া কৃষকেরা কীভাবে শস্য ফলাতো, তা দেখানোর জন্য বিরাট এক শস্যক্ষেত্র রয়েছে। সেই শস্যক্ষেত্রে প্রাচীন নিয়মে ফসল ফলানোর যাবতীয় ব্যবস্থা রয়েছে।

দর্শকেরা ভ্রমণের জন্য রয়েছে উনবিংশ শতাব্দীতে তৈরি ‘শুওয়ানি’ নামের স্টিমার; Image Sorce: pinterest.com

পুরনো দিনের যেসব দোকানঘর এই জাদুঘরে স্থান পেয়েছে, তাদের মধ্যে ‘স্যার জনবেনেট স্টোর’ এর কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দোকানটি ছিল লন্ডনে এবং কোনো কারণে দোকানটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু হেনরি ফোর্ড এই দোকানটি পুরোপুরি উঠিয়ে নিয়ে আসেন। এই দোকান-বাড়িটির বিশেষত্ব হলো, এর চূড়ায় রয়েছে একটি বিরাট ঘড়ি এবং তার সাথে বিশাল ঘণ্টা। আর রয়েছে কয়েকটি ধাতুর তৈরী মূর্তি। প্রতি ঘণ্টায়ই মূর্তিগুলো সচল হয়ে হাতের ধাতুর টুকরো দিয়ে ঘণ্টাটিতে আঘাত করে টুং টাং আওয়াজ তোলে, এবং তা বেজে ওঠে।

স্যার জনবেনেট স্টোর; Image Sorce: thehenryford.org

দর্শকেরা সার বেঁধে দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন সেই দৃশ্য। এছাড়াও গ্রিনফিল্ড ভিলেজে রয়েছে বিগত শতাব্দীর পুরনো গির্জা, টাউন হল এবং ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত ‘ঈগল ট্যাভার্ন’। এটি একটি রেস্তোরাঁ। দর্শকেরা এখানে খাদ্য, পানীয় পেতে পারেন। তবে এই রেস্তোরাঁর সব খাবারের মেন্যু হচ্ছে ঊনবিংশ শতাব্দীর। শুধু কী তা-ই! ট্যাভার্নে খাবার পরিবেশনকারীই হোন বা কাঁচশিল্প কি পটারি ইত্যাদির পরিবেশনকারীই হোন, সবারই পোশাক-পরিচ্ছদ বিগত শতাব্দীর।

 ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত রেস্তোরাঁ ইগল ট্যাভার্ন; Image Sorce: onlyinyourstate.com

গ্রিনফিল্ড ভিলেজে  ঘুরতে ঘুরতে দর্শকদের মনে হয়, তার যেন গত যুগের আমেরিকায় চলে গেছেন। কাচ ও কংক্রিটের তৈরী স্ক্রাই স্ক্র্যাপারের জঙ্গল, চওড়া ফ্রি-ওয়েতে অগুনতি গাড়ির স্রোত, এসব কিছুরই অস্তিত্ব এখানে নেই। নেই কোনো শব্দ, বায়ু দূষণের বাড়াবাড়ি।

হেনরি ফোর্ড মিউজিয়াম ও গ্রিনফিল্ড ভিলেজ আকারে এতই বড় এবং তাতে এতো সব নিদর্শন রয়েছে যে, একটা পুরো দিন ব্যয় করেও এ দু’টি মিউজিয়াম দেখে ওঠা সম্ভব নয়। এই দুই মিউজিয়ামের পাশেই রয়েছে একটি আইএমএক্স থিয়েটার এবং ফোর্ড রুজ কারখানা।

আইএমএক্স থিয়েটার; Image Sorce: turnerconstruction.com

২৪০ একরের বিশাল ও বিস্তৃত বিশ্বের প্রথম ওপেন এয়ার মিউজিয়াম গ্রিনফিল্ড ভিলেজটি দেখতে হলে প্রচুর হাঁটতে হয়। তবে সারা ভিলেজ জুড়ে কিছু দূর পর পর বসার সুব্যবস্থা রয়েছে। সময় কাটানোর জন্য রয়েছে ক্যাফেটারিয়া।

ফোর্ড রুজ কারখানা; Image Sorce: flickr.com

লেখাটি পড়তে পড়তে হয়তো অনেকেরই মন খারাপ হয়ে যেতে পারে এই ভেবে যে কেন আমাদের দেশে এমন একটি মিউজিয়াম হয় না? আমাদের দেশে কত মনীষী, কত আবিষ্কারকের বসতবাটি, তাদের কাজের জায়গা আজ অবহেলায় জীর্ণ, হয়তো কিছুদিনের মধ্যে তা নষ্ট হয়ে যাবে। এই ঐতিহাসিক ঘরবাড়িগুলো সংরক্ষণ কি একেবারে অসম্ভব? আমাদের দেশে কেন গড়ে ওঠে না এমন একটি গ্রিনফিল্ড ভিলেজ? 

This article is in Bengali language. This is story about the Henry Ford museum and Greenfield Village are two wonderful and largest indoor-outdoor historical museum in the United States. All the sources are hyperlinked inside the article.

Featured Image: expedia.com

Related Articles