ইংল্যান্ডের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হচ্ছে ইংরেজদের মাটিতে নর্মানদের বিজয়। নরম্যান্ডি থেকে আসা নর্মানদের কাছে ইংরেজরা পরাজিত হবে সেটি হয়তো অনেকটাই অকল্পনীয় মনে হতে পারে। তবে ১০৬৬ সালে তা সত্যিই ঘটেছিল।
অনিশ্চয়তাপূর্ণ সিংহাসনের ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যে নর্মান রাজত্বের অভূতপূর্ব এই পর্বটি শুরু হয় যা তখনকার ইংরেজদের জন্য মেনে নেওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তবে এর কিছুই হয়তো ঘটতো না যদি ইংল্যান্ডের তৎকালীন রাজা এডওয়ার্ডের কোনো সন্তান থাকতো।
এডওয়ার্ড ছিলেন একজন নিঃসন্তান রাজা। তাই ১০৬৬ সালের জানুয়ারিতে যখন তিনি মৃত্যুবরণ করলেন, তখন সিংহাসন কার কাছে যাবে তা নিয়ে তৈরি হয় নানান অনিশ্চয়তা। ঐদিকে কালক্ষেপণ না করে এডওয়ার্ডের শ্যালক হ্যারল্ড গডউইনসন সিংহাসনে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে প্রয়াত রাজার শেষকৃত্যের দিনই ইংল্যান্ডের রাজা হিসেবে মুকুট পরে আত্মপ্রকাশ করলেন। তবে এর মাধ্যমে চারিদিক থেকে রাজত্ব হাসিলের চেষ্টা থেমে যায়নি। ফ্রান্স ও স্ক্যান্ডিনিভিয়ার অঞ্চল থেকে সেই চেষ্টা শুরু হয়ে যায় তখনই।
তারই ধারাবাহিকতায় ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধটি সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে রাজা হ্যারল্ড গডউইনসন নরম্যান্ডির ডিউক উইলিয়ামের কাছে পরাজিত হন এবং ইংল্যান্ড চলে যায় নর্মানদের দখলে। এরই মাধ্যমে অ্যাংলো-স্যাক্সন শাসনামলের পতন ঘটে এবং নর্মানদের রাজত্ব শুরু হয়।
ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়টির বিভিন্ন ধাপ এমন কিছু জায়গায় ঘটেছে যে, সেসব জায়গা চিরকাল ইতিহাসের পাতায় অন্যরকম গুরুত্ব বয়ে বেড়াবে। সেগুলো কোন জায়গা এবং সেখানে কী ঘটেছিল তা পুরো লেখা জুড়ে তুলে ধরা হয়েছে।
স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ
রাজা হ্যারল্ড নরম্যান্ডি থেকে আসন্ন আক্রমণ সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তাই তিনি আগে থেকেই সৈন্য ও হাতিয়ারসহ প্রস্তুত ছিলেন দক্ষিণ দিক থেকে আসা আক্রমণ সামলানর জন্য। কিন্তু হঠাৎ করে তার সম্পূর্ণ মনোযোগ চলে যায় ইংল্যান্ডের উত্তরপার্শ্বে। কিন্তু তা কেন? নরম্যান্ডি থেকে উইলিয়াম ও নর্মানরা তো আক্রমণ করবে দক্ষিণপার্শ্বে। তবে দেখা গেল নরওয়ে থেকে হেরাল্ড হারদ্রাডা নামে একজন ভাইকিং রাজা অন্যান্য ভাইকিং জোট নিয়ে ইংল্যান্ডে আক্রমণ করে বসলো। তাদেরও উদ্দেশ্য ছিল ইংল্যান্ডের সিংহাসন দখলে নিয়ে তাদের রাজত্ব কায়েম করা।
স্ক্যান্ডিন্যাভিয়ান রাজত্বে সংযুক্ত করার জন্য ইংল্যান্ড জয়ের লক্ষ্যে হারদ্রাডা ১০৬৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর টাইন নামক একটি জায়গায় আক্রমণ করে। সেখানে রাজা হ্যারল্ডের অনুগত আর্ল এডউইন ও মোরকার তাদের সৈন্য নিয়ে ভাইকিংদের মোকাবেলা করার চেষ্টা করে। তবে ২০ সেপ্টেম্বরের একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ইংরেজদের বাহিনী পরাজিত হয় এবং ইয়র্কের দিকে ভাইকিংদের প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়।
এই খবর পেয়েই হ্যারল্ড সেদিকে রওনা দেয়। ২৫ সেপ্টেম্বরে এই স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে তারা একে অপরের মুখোমুখি হয়। সেই যুদ্ধে ইংরেজদের জয় হয় এবং ভাইকিংদের দল সেখান থেকে পরাজিত হয়ে তাড়াহুড়ো করে ফিরে যায়। ভাইকিংরা ৩০০ জলতরী নিয়ে নরওয়ে থেকে এসেছিল। কিন্তু পরাজিত হয়ে বেঁচে থাকা যোদ্ধাদের নিয়ে নরওয়েতে ফিরে যাওয়ার জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল মাত্র ২৪টি জলতরী । বাকি সবাই যুদ্ধে নিহত হয়। ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর নিকলাস হাইএমের মতে, এটি ছিল সেই ৩০০ বছরের মধ্যে ভাইকিংদের বিরুদ্ধে ইংরেজ কোনো রাজার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজয়লাভ।
যদিও আসল ব্রিজটি এখন আর নেই, তবে বর্তমান ব্রিজটি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে স্মৃতির অংশ হিসেবে। যারা সেই জায়গা ভ্রমণ করতে যান, তারা স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ দেখে যুদ্ধের স্থানটি সম্পর্কে একটি ধারণা পান।
পেভেনসি ক্যাসেল, পূর্ব সাসেক্স
অন্যদিকে ২৮ সেপ্টেম্বরে উইলিয়াম তার সমস্ত বহর নিয়ে পেভেনসি আসে। তারা সেখানে গিয়ে সেখানকার গ্রামাঞ্চলে হানা দেয়া শুরু করে এবং হ্যারল্ডের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। সেই সাথে একটি কাঠের দুর্গ তারা নির্মাণ করে যেটির পাশে একটি রোমান দুর্গ ছিল। এই ঐতিহাসিক স্থানে পরবর্তী শতকেই পাথরের নরমান দুর্গ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন যুদ্ধে যেমন স্প্যানিশদের আক্রমণ থেকে রক্ষায় ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে এই দুর্গটি নানাভাবে ব্যবহৃত হয়। পেভেনসি ক্যাসেলের তুলনা অন্য কোনো দুর্গের সাথে করা যায় না।
হেস্টিংস ক্যাসেল, পূর্ব সাসেক্স
পেভেনসিতে নামার পর নর্মানদের ইচ্ছা ছিল হেস্টিংসে নিজেদের অবস্থান চূড়ান্ত করা। তাই তারা সেখানেও একটি পূর্ব নির্মিত কাঠের দুর্গ স্থাপন করে ফেলে। ততক্ষণে রাজা হ্যারল্ড স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ থেকে উইলিয়ামের বহরে আক্রমণ করে জয়লাভের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দেয়। হ্যারল্ডের ধারণা ছিল তিনি আচমকা নরমানদের উপর আক্রমণ করবেন। কিন্তু উইলিয়াম আগে থেকেই সে বিষয়ে জানতেন এবং তারা বহর নিয়ে আরো ভিতরে প্রবেশ করলেন যাতে ইংরেজরা কিছুটা দুর্বল পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। ১৪ অক্টোবর শুরু হয় হেস্টিংসের যুদ্ধ।
ভাইকিংসদের থেকে নর্মানদের সৈন্য বহর ভিন্ন ছিল। উইলিয়ামের বহরে ছিল তীরন্দাজ ও বীর ঘোরসওয়ার যোদ্ধা। কিন্তু অন্যদিকে হ্যারল্ডের সৈন্য পায়ে হেঁটে যুদ্ধ করছিল এবং ঢালের দেয়াল তৈরি করে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করে। এভাবেই ঢাল তৈরি করে তারা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছিল এবং পাশাপাশি উইলিয়ামের যোদ্ধারাও সেভাবে আঘাত চালাতে থাকে।
অনেক সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হচ্ছিলো না, এতে নর্মান যোদ্ধারা প্রায় আশাহত হয়ে পড়ছিল। তাছাড়া কথা রটে গেলো যে উইলিয়াম শত্রুর আক্রমণে নিহত হয়েছেন। তখনই উইলিয়াম তার মাথার হেলমেট উঁচু করে ধরে সবাইকে দেখান, যে দৃশ্য দেখে তার যোদ্ধারা নতুন উদ্দীপনা ফিরে পায়। আস্তে আস্তে ইংরেজদের ঢাল দুর্বল হতে থাকলো। যুদ্ধের একপর্যায়ে রাজা হ্যারল্ড তীরের আঘাতে নিহত হন। পাশাপাশি তার দুই ভাইও মৃত্যুবরণ করেন। এরই মাধ্যমে নর্মানরা উইলিয়ামের নেতৃত্বে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করে।
যুদ্ধটি স্মৃতিময় করে রাখার জন্য উইলিয়াম পরবর্তীতে যুদ্ধের স্থানে ব্যাটল এবে নামক স্থাপনা নির্মাণ করেন। তাছাড়া বিজয়ের কয়েক বছর পর হেস্টিংসে উইলিয়াম নতুন করে পাথর দিয়ে হেস্টিংস দুর্গ নির্মাণ করেন। তবে এরপর বহুবার এটি নানাভাবে আঘাতের শিকার হয়। রাজা জন এটি ধ্বংস করে দেন যার কয়েক বছর পরে রাজা তৃতীয় হেনরি সেটি পুনর্নির্মাণ করেন। এরপর দুর্গের বেশ কিছু অংশ ভেঙে সাগরে পড়ে যায়। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যকার একশ বছরের যুদ্ধের সময় ও ১৯৪০ সালে জার্মান বোমা হামলায় এই দুর্গটি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবুও তার ধ্বংসাবশেষ এখনো রয়েছে যা দেখতে বহু মানুষ সেখানে যায়।
বার্কহেমস্টেড ক্যাসেল, হার্টফোর্ডশায়ার
যুদ্ধ জয়ের পরেই সিংহাসন জয়ের পথ তেমন সহজ ছিল না উইলিয়ামের। সমাজের উঁচু পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ ও ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের লোকজন উইলিয়ামের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে চেয়েছিল। আর তা তারা করতে চেয়েছিল প্রয়াত রাজা এডওয়ার্ডের আত্মীয় এডগারের ছায়ায় ও পাশাপাশি তাকে সমর্থন জানিয়ে। উইলিয়ামকে রাজা হিসেবে মেনে নিতে তারা তৈরি ছিল না।
উইলিয়াম জানতেন, তাকে এই বাধা অতিক্রম করতে হবে এবং সেজন্য তিনি পরিকল্পনা করে সামনে এগোতে থাকলেন। অবশেষে এডগার বুঝতে পারলো যে তার দ্বারা উইলিয়ামকে আটকানো আর সম্ভব হবে না। পাশাপাশি ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গ ও উঁচু পর্যায়ের নেতারা সবাই বার্কহেমস্টেডে উইলিয়ামকে রাজা হিসেবে মেনে নিলেন। পরবর্তীতে উইলিয়াম তার সৎ ভাই রবার্টকে বার্কহেমস্টেড ক্যাসেলের দায়িত্ব অর্পণ করলেন। এই দুর্গটি বর্তমানে অসাধারণ ধ্বংসাবশেষের নিদর্শন হয়ে রয়েছে।
ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবে, লন্ডন
ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতেই প্রয়াত রাজা এডওয়ার্ড শায়িত হয়ে ছিলেন। এখানেই রাজা হিসেবে হ্যারল্ডের অভিষেক ঘটে। তাই স্বাভাবিকভাবেই উইলিয়ামের রাজ্যাভিষেক এখানে হবে বলেই সবকিছু প্রস্তুত ছিল। এতে করে ইংরেজদের রাজকীয় প্রথার আরো বেশি গভীরে প্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়। বড়দিনেই এটি সংগঠিত হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু সেসব পরিকল্পনায় গুড়েবালি। রাজ্যাভিষেকের সময় হঠাৎ করে অ্যাবের বাইরে থেকে হট্টগোলের আওয়াজ আসতে থাকে। তা দাঙ্গায় পরিণত হয় এবং আশেপাশের বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন লেগে যায়। এর মধ্যে অ্যাবের ভেতরে যারা অবস্থান করছিলেন তারা পালিয়ে গেলেন। শুধুমাত্র গোটা কয়েক ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন যারা রাজ্যাভিষেকের কাজটি সম্পাদন করেন। তবে তারা সবাই প্রচন্ড ভয়ে কাঁপছিলেন।
ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবে বহুকাল ধরেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে বহু রাজা মৃত্যুর পর শায়িত হয়েছেন এবং রাজা-রানীদের রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠান এখানেই সংঘটিত হয়ে আসছে।
রুজমন্ট ক্যাসেল, এক্সেটার
ইংল্যান্ডের রাজত্ব নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাস ছিল উইলিয়ামের। তাই তিনি ১০৬৭ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত নরম্যান্ডিতে অবস্থান করেন। কিন্তু যখন তিনি ফিরে আসলেন, দেখতে পেলেন অন্য চিত্র, এবং বুঝতে পারলেন যে রাজত্ব কায়েম করার জন্য আরো প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
হ্যারল্ডের মা অবস্থান করছিলেন এক্সেটারে এবং হ্যারল্ডের ছেলেরা আয়ারল্যান্ডে বসে উইলিয়ামের বিরুদ্ধে সৈন্যসামন্ত একত্র করছিল। সেই সময় এক্সেটারের স্থানীয় মানুষজন উইলিয়ামের বিরুদ্ধাচরণ স্বরূপ শহরের প্রধান গেট বন্ধ করে দিল যাতে উইলিয়াম প্রবেশ করতে না পারেন। এটি দেখে নতুন রাজা বেশ হতাশ হন এবং শহরটিকে ঘিরে রাখলেন। ১৮ দিন পর শহরের মানুষ আত্মসমর্পণ করলো এবং উইলিয়াম শহরে প্রবেশ করলেন।
উইলিয়াম তার পরপরই নিজের শক্তিশালী চিহ্ন হিসেবে শহরের উঁচু একটি জায়গায় রুজমন্ট ক্যাসেল নির্মাণ করেন।
লিংকন ক্যাথেড্রাল
নগর কেন্দ্র হিসেবে লিংকন বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা ছিল। স্থানীয়দের বিদ্রোহের মধ্যে উইলিয়াম এই জায়গাটিতে তার উপস্থিতি আরো পাকাপক্ত করতে চাচ্ছিলেন। তাই সেখানে ১০৬৮ সালে একটি দুর্গ নির্মাণ করা হয়, যদিও সেটির অবশিষ্ট আর তেমন কিছু নেই। তবে লিংকন ক্যাথেড্রাল রয়ে গেছে যেটি ছিল একটি নর্মান গির্জা। তখন সারা দেশ জুড়েই নর্মান গির্জা স্থাপন করা হচ্ছিল। এই লিংকন ক্যাথেড্রালের যাত্রা শুরু হয় ১০৭২ সালে। গির্জায় নর্মান চিহ্নগুলো সময়ের সাথে অনেকটা হারিয়ে গেছে বটে। স্থাপত্যশিল্প হিসেবে এই ক্যাথেড্রালের তুলনা হয় না। তাছাড়া ম্যাগনা কার্টার কয়েকটি প্রচলিত অনুলিপি এখানে আছে।
ক্লিফোর্ড’স টাওয়ার, ইয়র্ক
ইংল্যান্ডের নর্থাম্ব্রিয়ার দিকে তখনও উইলিয়ামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চলছিল। ১০৬৮ সালে সেখানে একটি অভ্যুত্থান গড়ে ওঠে, যেটি সামলাতে উইলিয়ামকে উত্তরে যেতে হয়। তার পরেই শীতকালে আবারও রাজা উইলিয়ামকে সেখানে যেতে হয়, কারণ নতুন করে একটি ড্যানিশ সেনাবহর সেখানে আক্রমণ করে বসে। এই সুযোগে উইলিয়াম প্রচন্ড রক্তক্ষয়ী উপায়ে পুরো বিষয়টি সামলানোর চেষ্টা করেন, যাতে ভবিষ্যতে এরকম আক্রমণ কিংবা বিদ্রোহ করার সাহস কেউ না করতে পারে। হাজার হাজার মানুষ এই সংঘর্ষে নিহত হয়।
ভবিষ্যত আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য এবং নিজের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য উইলিয়াম সেখানে কয়েকটি দুর্গ নির্মাণ করলেন। তিনি ইয়র্কে দুটি দুর্গ নির্মাণ করেন যার একটি ছিল ক্লিফোর্ড’স টাওয়ার। এই জায়গাটি অন্য আরেকভাবে কলঙ্কিত হিসেবে পরিচিত। এখানেই ১১৯০ সালে ১৫০ জন ইহুদীকে হত্যা করা হয়।
ডারহাম ক্যাসেল ও ক্যাথেড্রাল
নর্মান রাজত্বের বিরুদ্ধে অন্যতম রক্তাক্ত বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল ডারহামে, ১০৬৯ সালে। সেটি সামলানোর জন্য উইলিয়াম সেখান ৭০০ সেনা প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু সবাইকেই স্থানীয় ইংরেজরা হত্যা করে। এটি দেখে উইলিয়াম অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে পূর্ণ শক্তি দিয়ে ডারহামে বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা চালান। এতে বিদ্রোহের পতন ঘটে এবং অনেক স্থানীয় পালিয়ে অন্যত্র চলে যায়।
নর্মানদের বিজয়ের পূর্বে ইংল্যান্ডে মাত্র তিনটি দুর্গ বা প্রাসাদ ছিল। উইলিয়ামের শাসনামলে পুরো ইংল্যান্ড জুড়ে শত শত নর্মান দুর্গ নির্মাণ করা হয়। ডারহামের সাধারণ জনগণের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ সামলানোর জন্য সেখানেও একটি দুর্গ নির্মাণ করা হয়। ১০৭২ সালে এই ডারহাম ক্যাসেল স্থাপিত হয় এবং এখনও সেটি বেশ কিছু পরিবর্তনের পরও দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমানে এটি ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ। এটির সবুজ অংশ পেরিয়েই ১০৯৩ সালে ডারহাম ক্যাথেড্রাল স্থাপিত হয়েছে যেটি নর্মান স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম একটি নিদর্শন।
ইংল্যান্ডের রাজত্বে নর্মানদের বিজয় লাভ অনেক দিক থেকে নানা পরিবর্তন নিয়ে আসে। যেমন- ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামাজিক বিভিন্ন পরিবর্তনের পেছনে নর্মান শাসনামলের প্রভাব রয়েছে।