
১৯০৩ সালে রাইট ভ্রাতৃদ্বয় বিমান উদ্ভাবনের পর তারা নিশ্চয়ই ভাবতেও পারেননি যে ভবিষ্যতের যুদ্ধের অন্যতম এক হাতিয়ার তারা বানিয়ে ফেলেছেন। ১৯১১ সালের ১ নভেম্বর লিবিয়ার ত্রিপোলিতে ইতালি-তুরস্কের যুদ্ধে বিমান থেকে হাত দিয়ে বোমা ফেলা হয়। আজকের লেখাটি নেভাল এভিয়েশনকেন্দ্রিক। তাই ইতিহাস সম্পর্কে সামান্য কথা না বললেই নয়। ১৪ নভেম্বর ১৯১০ সালে মার্কিন ক্রুজার শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজ ‘ইউএসএস’ বার্মিংহামের ডেক থেকে প্রথম উড্ডয়ন করেন ইউজেন এলি। পরের বছর তিনি জাহাজ থেকে সফলভাবে উড্ডয়ন-অবতরণ সম্পন্ন করে নেভাল এভিয়েশন জগতের সূচনা করেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিমানগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯১৪ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানি রাজকীয় নৌবহর থেকে জার্মান নৌবহরের ওপর এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার থেকে হামলা করা হয়। তখনকার দিনে বড় বড় মালবাহী ও কয়লাবাহী জাহাজ, ক্রুজার শ্রেণীর ভারী যুদ্ধজাহাজগুলোকে মডিফাই করে বিমান উড্ডয়ন-অবতরণের উপযোগী করা হত। অনেকেই ব্রিটিশদের ‘এইচএমএস আর্গাস’ (১৯১৮)-কে প্রথম এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার বললেও কথাটি সত্য নয়। এটি পূর্বে একটি যাত্রীবাহী জাহাজ ছিল, পরে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারে রুপান্তর করা হয়।
১৯২২ সালে জাপান প্রথম ‘হোসো’ নামে সত্যিকারের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার বানায়। এরপরই শক্তিশালী নৌবাহিনীগুলো বিমানবাহী বিশেষ ধরনের যুদ্ধজাহাজ বানানোতে মনোযোগ দেয়। পার্ল হারবার আক্রমণে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার দিয়ে জাপান যেমন যুক্তরাষ্ট্রকে নাজেহাল করেছে, তেমনই নৌ-যুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পেছনে মার্কিন ক্যারিয়ারগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এসব জাহাজ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত হওয়া প্রতিটি বড় বড় যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারগুলো তাদের টাইপ, সাইজ ও রোল অনুযায়ী বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত, যার বেশিরভাগই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই লেখায় আমি বর্তমান যুগের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। তাই সংক্ষেপে অন্যান্যগুলো নিয়ে দু-চার লাইন বলে নেয়া ভাল।
প্রথমদিকে ক্রুজার মডিফাই করে ক্যারিয়ার বানানো হতো দেখে এদের এয়ারক্রাফট ক্রুজার বলা হত। একইসাথে পানিতে অবতরণ করতে পারে এমন বিমান দিয়ে সি-প্লেন ক্যারিয়ারও বানানো হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাবমেরিনের হামলায় বাণিজ্যিক জাহাজগুলো সাগরে ধ্বংস হওয়া ঠেকাতে ফ্রিগেট, ডেস্ট্রয়ার শ্রেণীর উচ্চগতির সাবমেরিন হান্টার যুদ্ধজাহাজগুলো দিয়ে এদের এস্কর্ট করা তথা নিরাপত্তা দেয়া হত। কিন্তু সাবমেরিন হামলা ঠেকানোর জন্য সেটি যথেষ্ট ছিল না।
এজন্য আবির্ভাব ঘটে এন্টি-সাবমেরিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের। এরা সাবমেরিন বিধ্বংসী বোমা (ডেপথ চার্জ) ও টর্পেডো বহন করতো। সাধারণ ক্যারিয়ার বলতে আমরা ফ্লিট ক্যারিয়ারকে বুঝে থাকি। এ ধরনের ক্যারিয়ার আকারে সবচেয়ে বড় হয় এবং বেশি পরিমাণ বিমান বহন করে। ফ্লিট ক্যারিয়ারের চেয়ে ছোট সাইজের ক্যারিয়ারগুলোকে লাইট ক্যারিয়ার বলা হয়। তবে ফ্লিট ক্যারিয়ারসহ বাণিজ্যিক জাহাজগুলো সাবমেরিন হামলা থেকে বাঁচতে দ্রুত ম্যানুভার করতে সক্ষম ছিল না।
এছাড়া ভারী ভারী কামান বহন করা ব্যাটলশিপ ও ক্রুজার শ্রেণীর জাহাজগুলোতে প্রচুর এন্টি এয়ারক্রাফট মেশিনগান থাকলেও সেটি একসাথে একাধিক বিমানের হামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম ছিল না। এজন্য এদেরকে সাবমেরিন ও শত্রু বিমানের হামলা থেকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য এস্কর্ট ক্যারিয়ার নামে একধরনের লাইট ক্যারিয়ারের আবির্ভাব ঘটে। ফ্লিট ক্যারিয়ারের সাথে এদের পার্থক্য হলো এদের গতি ও ম্যানুভার ক্ষমতা বেশি। ফ্লিট ক্যারিয়ারগুলো প্রয়োজনে ভারী বোম্বারসহ সব ধরনের বিমান বহন করতে পারতো। অন্যদিকে এস্কর্ট ক্যারিয়ারগুলো শুধুমাত্র এন্টি সাবমেরিন, এন্টি এয়ারক্রাফট অপারেশনের উপযোগী বিমান বহন করতো।

Image source : wikipedia.org
বর্তমান যুগে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার বলতে ফ্লিট ক্যারিয়ারকেই বোঝায়। এগুলো অফেন্সিভ ও ডিফেন্সিভ- দুই ধরনের অস্ত্রবাহী যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার বহন করে থাকে। লাইট ক্যারিয়ার টার্মটি আজকের যুগে পুরোপুরি অচল সেকথা বলা যাবে না। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের ১ লাখ টনি ফ্লিট ক্যারিয়ারের সাথে অন্যান্য দেশের ফ্লিট ক্যারিয়ার (৬৫ হাজার থেকে ২১.৫ হাজার টন) এর তুলনা দিলে বাকি সবাইকে লাইট ক্যারিয়ার মনে হবে। কিন্তু আধুনিক যুগের ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টনি ফ্রিগেট/ডেস্ট্রয়ার/ক্রুজার শ্রেণীর জাহাজের তুলনায় অন্যান্য দেশের ক্যারিয়ারগুলো কিন্তু যথেষ্ট বড় এবং ভারী। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের ১ লাখ টনের বিশালাকায় এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারগুলো ‘সুপার ক্যারিয়ার’ নামক নতুন শব্দ দ্বারা আলাদা করা হয়।
এছাড়া বর্তমান সময়ে লাইট ক্যারিয়ার বলতে অ্যাম্ফিবিয়াস অ্যাসল্ট শিপকেও বোঝানো হয়েছে। এ ধরনের জাহাজ সাধারণত জলপথে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে গিয়ে মেরিন সেনা, ট্যাংক, আর্মাড ভেহিকেল ইত্যাদি পৌঁছে দেয়ার কাজ করে। আগের যুগে লাইট ক্যারিয়ার থেকে তুলনামূলক হালকা বিমানগুলো উড়তো। বর্তমানে এর জায়গায় এসেছে অ্যাটাক হেলিকপ্টার গানশিপ। তাই অনেক দেশেই অ্যাম্ফিবিয়াস অ্যাসল্ট শিপকে ‘হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার’ নামে ডাকা হয়। এগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের লাইট ক্যারিয়ারের সমতুল্য।

এবার কনফিগারেশন অনুযায়ী এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের শ্রেণীবিভাগ নিয়ে আলাপ করা হবে। কেননা পরের আলোচনাতে বার বার কিছু শব্দ ব্যবহৃত হবে যার ব্যাখ্যা আগেই দিয়ে নেয়া উত্তম।
Catapult-assisted take-off barrier arrested-recovery বা CATOBAR শ্রেণীর এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারগুলোর ফ্লাইট ডেক আকারে তুলনামূলক বড় হয়। এ ধরনের ক্যারিয়ারে বিশেষ পদ্ধতিতে এয়ারক্রাফটকে অল্প সময়ে প্রচণ্ড গতি লাভ করার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। ফলে যুদ্ধবিমানগুলো তার সম্পূর্ণ সক্ষমতার অস্ত্র ও ফুয়েল নিয়ে টেকঅফ করতে পারে। এ ধরনের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারগুলো নিউক্লিয়ার শক্তিচালিত হয়ে থাকে।
বর্তমানে এই শ্রেণীর এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লিট ক্যারিয়ারের সবগুলোই এই শ্রেণীর। এখানে ‘ক্যাটাপুল্ট’ খুবই জটিল একটি ইঞ্জিনিয়ারিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয়। যেকোনো জাহাজের সামনের অংশকে ‘বো’ ও পেছনের অংশকে ‘স্টার্ন’ বলে। ডান ও বামের অংশকে যথাক্রমে স্টারবোর্ড সাইড ও পোর্ট সাইড বলে। মার্কিন ক্যারিয়ারগুলোর বো-তে দুটি ও পোর্ট সাইডে দুটি ক্যাটাপুল্ট সিস্টেম থাকে। ফলে এগুলো একসাথে দুটি এয়ারক্রাফটসহ ৪০ সেকেন্ড বিরতিতে ৪টি এয়ারক্রাফট লঞ্চ করতে পারে। ক্যাটাপুল্ট সিস্টেমের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যেন একইসাথে দুটো এয়ারক্রাফট লঞ্চ করা যায় এবং একটি এয়ারক্রাফট যেন ল্যান্ড করতে পারে। ল্যান্ডিং রানওয়ে স্টার্ন থেকে শুরু হয়ে পোর্টসাইড ও বো-এর কোনাকুনি বরাবর অবস্থিত।

এবার বলা হবে ক্যাটাপুল্ট সিস্টেম কীভাবে কাজ করে। প্রতিটি ক্যাটাপুল্টে একটি করে রেইল ট্র্যাক ও শাটল থাকে। শাটলের মধ্যে বিমানের সামনের চাকা বা নোজ ল্যান্ডিং গিয়ার এমনভাবে আটকানো থাকে যাতে এটি ইঞ্জিন চালু থাকা সত্ত্বেও সামনে ও যেতে পারে না, পেছনেও আসতে পারে না। এরপর বিমানের ইঞ্জিনের পেছনে ‘জেট ব্লাস্ট ডিফ্লেকটর‘ নামে একটি শিল্ড যান্ত্রিক পদ্ধতিতে দাঁড় করানো হয়। ফলে জেট ইঞ্জিনের শক্তিশালী থ্রাস্ট পেছনে থাকা অন্যান্য বিমান বা মানুষের ক্ষতি করতে পারে না। ততক্ষণে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের নিচে থাকা একটি অ্যাকুমুলেটর ট্যাংকে পানি উত্তপ্ত করে তৈরি করা বাস্প হাই প্রেশারে (প্রায় ৪৬৫ পিএসআই চাপে) জমা রাখা হয়। এবার পাইলটের সিগন্যাল পেলে গ্রাউন্ডসম্যান/ফ্লাইট ডেক ক্রুরা ক্যাটাপুল্ট কন্ট্রোল অফিসারকে নির্দেশ দেন। তিনি শাটল লঞ্চ করতেই ঐ রেইল ট্র্যাকের নিচে থাকা হাইড্রোলিক পিস্টনটি বাস্পের চাপে প্রচণ্ড গতি লাভ করে। এই গতি আসলে কত সেটি এয়ারক্রাফট এর ভরের উপর নির্ভর করে।

ক্যাটাপুল্ট সিস্টেমের মাধ্যমে একটি ২০ টন ভরের বিমান ০ থেকে ২৬৫ কি.মি./ঘন্টা গতি লাভ করে মাত্র ২ সেকেন্ডে! এসময় একজন পাইলট মধ্যাকর্ষণের ৪ গুন চাপ অনুভব করেন, যা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গতির রোলার কোস্টারের থেকে দ্বিগুণ। অবশ্য পাইলটদের জন্য এটি আহামরি কিছু নয়, কেননা যুদ্ধবিমান নিয়ে টার্ন নেয়ার সময় ৯জি লোড পর্যন্ত তারা সহ্য করতে পারেন। এভাবে ক্যাটাপুল্ট সিস্টেমের মাধ্যমে একটি বিমান সহজেই তার টেকঅফ করার মতো প্রয়োজনীয় গতি ছোট্ট রানওয়ে থেকে আদায় করতে পারে।

Image source : Photographer Benjamin D.Olvey, US Navy.
দ্বিতীয় ধরনের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার হচ্ছে Short take-off barrier-arrested recovery (STOBAR) টাইপের। এ ধরনের ক্যারিয়ারের সামনের ফ্লাইট ডেক ঢালু থাকে যা বিমানকে ‘স্কাইজাম্প’ পদ্ধতিতে নিজ ইঞ্জিনের শক্তি ব্যবহার করে টেকঅফ করতে সাহায্য করে। তবে ক্যাটাপুল্ট সিস্টেম না থাকায় এ ধরনের ক্যারিয়ার থেকে যুদ্ধবিমানগুলো তাদের পূর্ণ সক্ষমতার অস্ত্র নিয়ে আকাশে উড়তে পারে না। এ ধরনের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারগুলো নিউক্লিয়ার বা নন-নিউক্লিয়ার, দু’ধরনের শক্তিচালিত হয়ে থাকে। ফ্লিট ক্যারিয়ার আছে এমন সব দেশের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারগুলো STOBAR শ্রেণীর। CATOBAR শ্রেণীর মার্কিন ক্যারিয়ার যেখানে ৭৫ থেকে ৯০টি বিমান বহন করতে পারে (ব্যতিক্রম ফ্রান্স), সেখানে STOBAR ক্যারিয়ারগুলো ৩০ থেকে ৫০টি এয়ারক্রাফট বহন করে। রাশিয়া, চীন ও ভারত এ ধরনের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ব্যবহার করে।


Image source : theaviationist.com
উপরে বর্ণিত দুই ধরনের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারেই ছোট রানওয়েতে ল্যান্ডিংয়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। এ ধরনের জাহাজে ল্যান্ড করতে সক্ষম প্রতিটি যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিনের ঠিক নিচেই থাকে একটি বিশেষ ধরনের হুক বা আংটা, একে অ্যারেস্টর হুক/টেইল হুক বলে। বিমানটি খুবই অল্প স্পিডে ল্যান্ড করার জন্য ক্যারিয়ারের দিকে এগিয়ে আসে এবং ল্যান্ড করার সাথে সাথেই অ্যারেস্টর হুক আগে থেকে ফ্লাইট ডেকে পেতে রাখা ইস্পাতের তৈরি শক্তিশালী ক্যাবলের সাথে আটকে যায়। উক্ত ক্যাবল বিশেষ ধরনের হাইড্রোলিক পিস্টন সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত থাকে। ফলে খুব সহজেই ক্যাবলে টান খেয়ে প্রচন্ড গতির বিমানটি থেমে যায়।
এই সিস্টেম ঘন্টায় ২৪০ কিঃমিঃ বেগে ধেয়ে আসা বিমানকে ১০০ মিটার রানওয়েতে মাত্র ২ সেকেন্ডের মধ্যে থামিয়ে দিতে পারে! অবাক করা ব্যাপার হলো, বিমানটি ক্যাবলের সাথে আটকে যাওয়ার পর পরই ইঞ্জিনে ফুল থ্রটল খুলে দেয়া হয় যাতে কোনো কারণে বিমানটি ফ্লাইট ডেকে পর পর পেতে রাখা তিনটি ক্যাবল যদি মিস করে তাহলে যেন পুনরায় টেকঅফ করতে পারে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, এই ক্যাবল কতটা শক্তিশালী টান সহ্য করতে পারে। যুদ্ধবিমানের ইমারজেন্সি ল্যান্ডিংয়ের জন্য ফ্লাইট ডেকে জালের মতো একটি সিস্টেম থাকে যা পাইলট যদি ল্যান্ডিংয়ের সময় বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারায় তবে সেটি চালু করা হয় যাতে বিমানটি আটকে গিয়ে থেমে যায়।

তৃতীয় ধরনের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার হচ্ছে Short take-off vertical-landing (STOVL) সিস্টেম। এ ধরনের ক্যারিয়ারকে অনেকে হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার বলে। তবে হেলিকপ্টারের ভার্টিক্যাল টেকঅফ ও ল্যান্ডিং করতে পারে এমন যুদ্ধবিমানও আছে। এসব বিমান যেকোনো সমতল জায়গায় হেলিকপ্টারের ন্যায় ল্যান্ড করতে পারে। তবে ইঞ্জিনের উপর চাপ কমাতে এতে STOBAR ক্যারিয়ারের ন্যায় সামান্য ঢালু ও ছোট রানওয়ে আছে। ফলে STOVL শ্রেণীর ক্যারিয়ারে যুদ্ধবিমানগুলো হয় সরাসরি ভার্টিক্যাল টেকঅফ করে, নাহয় ছোট রানওয়ে ব্যবহার করে টেকঅফ করে। ল্যান্ডিং হেলিকপ্টারের ন্যায় খাড়াভাবে ল্যান্ড করে কারণ খুবই ছোট ক্যারিয়ার হওয়ায় অ্যারেস্টর হুক বা ঐ ধরনের ক্যাবল ব্যবহার করা ল্যান্ডিং সিস্টেম নেই। এ ধরনের STOVL ক্যারিয়ারকে ‘অ্যাম্ফিবিয়াস ল্যান্ডিং শিপ‘ বলা হয় যারা সবচেয়ে কম এয়ারক্রাফট বহন করে। এদের মূল কাজ মেরিন সেনা ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র (ট্যাংক, কামান ইত্যাদি) সমুদ্রপথে গিয়ে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছে দেয়া এবং বিমান/হেলিকপ্টার থেকে শত্রুর উপর হামলা করে তাদের এয়ার সাপোর্ট দেয়া। এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার আছে এমন ধরনের বেশিরভাগ দেশের হাতে এই টাইপের ক্যারিয়ার রয়েছে।


বর্তমানে বিশ্বে ১৬০টি দেশের নৌবাহিনী থাকলেও এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার আছে মাত্র ১৪টি দেশের। একেকটি ক্যারিয়ার যেন সমুদ্রের বুকে ভাসমান বিমানঘাঁটি। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, যেকোনো দেশের উপকূল থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল বা ২২.২ কিলোমিটার পর্যন্ত রাজনৈতিক সমুদ্রসীমা। এর বাইরের জলসীমায় এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার মোতায়েন করা আর ঘরের সামনে বিমানঘাঁটি বানানো একই কথা। এজন্য প্রাক্তন রয়াল নেভির প্রধান এডমিরাল স্যার মার্ক স্টেনহোপ বলেছেন, “যদি সহজভাবে বলতে হয়, কৌশলগত দিক থেকে যেসকল উচ্চাভিলাষী দেশ আন্তর্জাতিক প্রভাব বিস্তার করতে চায়, তাদেরই কেবল এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার রয়েছে। তাই এই শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজকে আধুনিক নৌবাহিনীর তুরুপের তাস বলা যায়।“