দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে আলাদিনের জাদুর চেরাগ হাতে পায়ে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হয়ে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে হামলা চালায় তারা। পারমাণবিক শক্তির ধ্বংসলীলা দেখে পুরো বিশ্বের পাশাপাশি খোদ যুক্তরাষ্ট্রও হতবাক হয়ে যায়। বোমাটি আসলে কতটা ভয়ংকর সেটি নিয়ে আরো পরীক্ষানিরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ফলে একের পর এক পরমাণু বিস্ফোরণে কেঁপে উঠতে শুরু প্রশান্ত মহাসাগরের বিকিনি আইল্যান্ড। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৮ পর্যন্ত মোট ২৩টি সিরিজ নিউক্লিয়ার বোমার টেস্ট করা হয়। তবে আজ আপনাদের জানানো হবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী প্রথম পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা তথা ‘অপারেশন ক্রসরোড’ নামক ২টি নিউক্লিয়ার বোমার সিরিজ টেস্টের গল্প!
আপনার মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে যে উক্ত দ্বীপের নাম কেন বিকিনি আইল্যান্ড? সেই প্রশ্নের উত্তর একটু পরে দেয়া হবে। আগে আপনাকে এই লেখার শুরুতেই কয়েকটি তারিখ সম্পর্কে জানতে হবে যাতে আপনি তৎকালীন টাইমলাইন সম্পর্কে ভালো ধারণা পেতে পারেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেক আগে থেকেই জার্মানিতে নিউক্লিয়ার ফিশন নিয়ে কাজ শুরু করেন অনেক বিজ্ঞানী ও প্রতিষ্ঠান। ১৯৩৩ সালের জানুয়ারিতে হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর নিযুক্ত হয়ে এপ্রিলেই জার্মানিতে ইহুদিবিরোধী প্রথম আইন জারি করেন। এই আইনে ‘অনার্য’ তথা ইহুদি বিজ্ঞানী ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করা হয়। এ ঘটনার পর শতাধিক ইহুদি পদার্থবিজ্ঞানী জার্মানি ছেড়ে প্রধানত যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে চলে যান। ইহুদি নন এমন অনেক বিজ্ঞানী কাজ করার অনুকূল পরিবেশ না পেয়ে জার্মানি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সেসব বিজ্ঞানীর মধ্যে আইনস্টাইনসহ ১৫ জন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ছিলেন!
১৯৩৮ সালে দুই জার্মান বিজ্ঞানী অটো হান আর ফ্রিটজ স্ট্রেসম্যান মিলে আবিষ্কার করেন ইউরেনিয়াম পরমাণুর ফিশন বিক্রিয়া। ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯ সালে হিটলারের জার্মানি কর্তৃক পোল্যান্ড আক্রমণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। এর আগে ১৯৩৯ সালের ২ আগস্ট বিজ্ঞানী আইনস্টাইন-সাইলার্ডসহ কয়েকজন বিজ্ঞানী ফিশন বিক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে জার্মানির বোমা তৈরির সম্ভাব্য প্রচেষ্টা সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের কাছে চিঠি লেখার পর ২১ অক্টোবর, ১৯৩৯ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্র নিউক্লিয়ার শক্তিকে সামরিক কাজে বিশেষত শক্তিশালী বোমা বানানোর কাজে লাগানোর জন্য ইউরেনিয়াম সংগ্রহ ও প্রাথমিক গবেষণা কাজ শুরু করে। যদিও তারা ৭ ডিসেম্বর, ১৯৪১ সালে পার্ল হারবার আক্রমণের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অফিশিয়ালি যোগ দেয়।
এরপর ১৩ আগস্ট, ১৯৪২ সালে কুখ্যাত ‘ম্যানহাটন প্রজেক্ট’ এর অধীনে পুরোদমে নিউক্লিয়ার বোমা বানানো শুরু করা হয়। ১৬ জুলাই, ১৯৪৫ সালে প্রথম নিউক্লিয়ার বোমা ‘ট্রিনিটি’ এর বিস্ফোরণ ঘটানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের Jornada del Muerto মরুভূমিতে। ম্যানহাটন প্রজেক্টের দ্বিতীয় ও তৃতীয় নিউক্লিয়ার বোমা লিটল বয় ও ফ্যাটম্যানকে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে নিক্ষিপ্ত হয় ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট ও ৯ আগস্ট, যা দুই লাখের বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ ছিল। ৭ মে, ১৯৪৫ সালে জার্মানি আত্মসমর্পণ করার পর ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫ সালে জাপান নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। তবে যুদ্ধের পর পরই ১৯৪৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মাঝে কোল্ড ওয়্যার বা স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়। এটা অফিশিয়ালি কোনো প্রথাগত যুদ্ধ নয়, তবে দুই পক্ষই একে অপরকে প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও সামরিক দিক দিয়ে ঘায়েল করার জন্য প্রতিযোগিতা করতো।
এবার চলে আসা যাক মূল প্রসঙ্গে।
প্রথম নিউক্লিয়ার বোমা ট্রিনিটি মানুষকে অবাক করে দিয়েছিল। আর হিরোশিমা-নাগাসাকি হামলা বিশ্ববাসীকে নির্বাক করে দিয়েছিল। তারপরও ঐ হামলার এক বছর যেতে না যেতেই ১৯৪৬ সালের ৩০ জুন প্রশান্ত মহাসাগরের মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের Bikini আইল্যান্ডে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী প্রথম নিউক্লিয়ার বোমার পরীক্ষা চালায়। এটিই ছিল সাগরে চালানো প্রথম নিউক্লিয়ার বোমার পরীক্ষা।
১৯৪৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের নিউক্লিয়ার প্রজেক্ট শুরু করে। হিরোশিমায় বোমা হামলার পর তারাও উঠে-পড়ে লাগে নিউক্লিয়ার বোমার জন্য। বিকিনি আইল্যান্ডের ঐ নিউক্লিয়ার বোমার পরীক্ষা সোভিয়েত জেনারেলদের, বিশেষত জোসেফ স্ট্যালিনকে, চিন্তায় ফেলে দেয়। সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি তখন ম্যানহাটন প্রজেক্টে যুক্ত কয়েকজন বিজ্ঞানীকে কাজে লাগিয়ে তথ্য হাতিয়ে নিতে শুরু করে। তারা বেশ দ্রুতই ১৯৪৯ সালে প্রথম নিউক্লিয়ার বোমার পরীক্ষা করায়। এটিই কয়েক দশকব্যাপী নিউক্লিয়ার স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা করে, যার শুরুটা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ঐ ভয়ানক নিউক্লিয়ার বোমা পরীক্ষার হাত ধরে। আজকের বিশ্বের পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো তাদের নিউক্লিয়ার অস্ত্রের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল জাপান ও বিকিনি আইল্যান্ডে পারমাণবিক বোমার ধ্বংসলীলা দেখে।
এবার চলুন পরীক্ষার ঘটনায় যাওয়া যাক। প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে অনেকগুলো দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে। মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ তেমনই একটি অঞ্চল। এখানকার অনেকগুলো দ্বীপের মধ্যে ‘বিকিনি’ ৬ বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট একটি দ্বীপ, যা আমাদের সেন্ট মার্টিনের ৬ ভাগের ১ ভাগ। এই দ্বীপটি ছাড়া আশেপাশে প্রায় বৃত্তাকারে আরো ২৩টি ছোট দ্বীপ রয়েছে। উল্লেখ্য, ইংরেজি bikini এর মার্শালিজ ভাষার উচ্চারণ Pikinni, যার অর্থ coconut place। বিকিনিসহ অন্য দ্বীপগুলোতে প্রচুর নারকেল গাছ ছিল। এ কারণে স্থানীয় লোকজন এমন নাম দিয়েছে। এর সাথে পশ্চিমা নারীদের বিশেষ সাঁতারের পোশাক ‘বিকিনি’-এর সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই।
Bikini Atoll শব্দটি দিয়ে পুরো ২৩টি দ্বীপ ও মাঝখানের ৫৯৪ বর্গ কিলোমিটারের সাগর ‘বিকিনি লেগুন’ বা উপহ্রদকে বোঝানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদামতো সাগরের পানিতে পরীক্ষা করা হলেও রেডিয়েশন ও বোমার ধ্বংসযজ্ঞ বেশি দূর ছড়াতে পারবে না- এধরনের প্রাকৃতিক সুবিধার কারণে এই অঞ্চলকে নিউক্লিয়ার বোমার পরীক্ষার জন্য বেছে নেয়া হয়, যার ফলে ১৬৭ জন আদিবাসী তাদের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র পুনর্বাসিত হতে বাধ্য হন।
সাগরে ভালোভাবে পরীক্ষার জন্য ১০০ (শর্ট) টন ডিনামাইট ব্যবহার প্রবাল প্রাচীর ধ্বংস করা হয়। এই পরীক্ষায় যুদ্ধজাহাজের উপর পারমাণবিক বোমার ধ্বংসলীলা কেমন হয় তা পরীক্ষা করার জন্য ৯৫টি যুদ্ধজাহাজ ব্যবহার করা হয়! এর মধ্যে ছিল ৪টি মার্কিন ব্যাটলশিপ, দুটো এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, দুটো ক্রুজার, ১৩টি ডেস্ট্রয়ার, ৮টি সাবমেরিনসহ অন্যান্য অক্সিলারি শিপ ও অ্যাম্ফিবিয়াস অ্যাসল্ট শিপ। এছাড়া আলাদা করে বলতে হবে ৩টি জার্মান-জাপানি যুদ্ধজাহাজের কথা, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল এবং সেগুলো এই পরীক্ষায় ধ্বংস করা হয়।
এটা তো গেলো শুধু যুদ্ধজাহাজের হিসাব। প্রাণীদেহের উপর নিউক্লিয়ার হামলার প্রভাব পরীক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট কর্তৃক ২৬০টি শুকর, ২০৪টি ছাগল, ৫ হাজার ধেড়ে ইঁদুর, ২০০ ছোট ইঁদুর এবং অসংখ্য পোকামাকড় ভর্তি কন্টেইনার রাখা হয়। এই পরীক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ৪২ হাজার মানুষ বিভিন্নভাবে অংশ নেয়। তার মধ্যে ৩৭ হাজার ছিল নৌসেনা/নাবিক। মানুষকে ব্লাস্ট জোনের বাইরে ১৯ কি.মি. দূরে রেখে পরীক্ষা চালানো হয় নিউক্লিয়ার হামলার প্রভাব কেমন দেখার জন্য। এদেরকে নিউক্লিয়ার ভেটেরান হিসেবেও ডাকা হয়। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো- এই ভেটেরানদের কাউকেই জানানো হয়নি যে হিরোশিমা-নাগাসাকির মতো নিউক্লিয়ার বোমা তাদের আশপাশে ফেলা হতে যাচ্ছে! পরবর্তীতে মানবাধিকার কর্মীদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে মার্কিন-ব্রিটিশ সরকার।
১ জুলাই, ১৯৪৬ সাল; সকাল ৯টায় Able টেস্ট নামের প্রথম পরীক্ষার সময় ঠিক করা হয়। এ সময় বোমারু বিমান থেকে Gilda নামের ২৩ কিলোটন ধ্বংস ক্ষমতার বোমাটি বিকিনি লেগুনের উপর ফেলা হয়। হিরোশিমার মতো এটিও মাটিতে পড়ার আগেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পানির পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৫২০ ফুট উপরে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এই বোমার শক্তি ছিল হিরোশিমা-নাগাসাকিতে ফেলা বোমার চেয়েও বেশি। বিস্ফোরণটি মিলি সেকেন্ডের মধ্যে কয়েক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মাশরুম ক্লাউড সৃষ্টি করে, বাতাসের চাপে আগুন ও ধোঁয়া তীব্র গতিতে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় ৫টি জাহাজ সাথে সাথে ডুবে যায়, ১৮টি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে এই ক্ষয়ক্ষতি আশানুরূপ ছিল না, কারণ ক্রুদের ভুলের কারণে বোমাটি টার্গেট পয়েন্টের ৬৪৯ মিটার দূরে পড়েছিল। তাদের দাবি ছিল বোমা ফেলার গানসাইটে সমস্যা ছিল যা তদন্তে ভুল প্রমাণিত হয়।
প্রথম বোমা পরীক্ষার পর পরই সারাবিশ্ব থেকে বিজ্ঞানী, পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক চাপ আসতে শুরু করে। কিন্তু মার্কিন সরকার সেগুলো পাত্তা দেয়নি। শিডিউল অনুযায়ী ২৫ জুলাই, ১৯৪৬ সালে Baker টেস্ট নামের দ্বিতীয় বোমার পরীক্ষা চালানো হয়। আগেরটি পানির ৫২০ ফুট উপরে হলেও এবার পানির ৯০ ফুট নিচে ২৩ কিলোটন ধ্বংস-ক্ষমতার আরেকটি নিউক্লিয়ার বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে এবারের প্রভাব ছিল খুবই ভয়াবহ। মেরিন সেনা বড় জাহাজ থেকে তীরে পৌঁছে দেয়ার কাজ করে যে ছোট আকারের জাহাজকে ল্যান্ডিংক্রাফট বলে। এরকম ২০৫ ফুট লম্বা ৭৫৫ টনের যে জাহাজটির নিচে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় তার একটি টুকরোও খুঁজে পাওয়া যায়নি, সম্পূর্ণ বাষ্পীভূত হয়ে গিয়েছিল সেটি! প্রথম সেকেন্ডে সৃষ্টি হওয়া ১৫২ মিটার ব্যাসার্ধের বাবল প্রায় দুই লাখ টন বালি-মাটিকে সরিয়ে জায়গা করে নেয়!
কাদা-পানির স্তম্ভ মুহূর্তেই ৬ হাজার ফুট উচ্চতায় পৌঁছে যায় এবং বিপুল শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়ে। ফলে ১৫ থেকে ৮ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের শিকার হয় আশেপাশের দ্বীপগুলো। যদিও বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট কৃত্রিম সুনামির প্রথম ঢেউটি প্রায় ১ হাজার ফুট (৩০৫ মিটার) উঁচু ছিল, ৯টি ধাপে ভেঙে গিয়ে শক্তি অনেকখানি কমে আসে। তবে এটি ৬ কি.মি. দূরে থাকা বিকিনি আইল্যান্ড প্রায় সম্পূর্ণ প্লাবিত করে দেয়। এই পরীক্ষায় ১০টি জাহাজ ডুবে যায়। অন্যগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছু জাহাজের তেজস্ক্রিয়তা দূর করার ও মেরামত করার চেষ্টা করা হয়, বাকিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ডুবিয়ে দেয়া হয়।
এই পরীক্ষার পর যুক্তরাষ্ট্রের উপর আন্তর্জাতিক চাপ আরো বেড়ে যায়। যদিও তারা তৃতীয় পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিভিন্ন কারণে বিকিনি আইল্যান্ডের তৃতীয় পরীক্ষা ‘চার্লি’ শেষ পর্যন্ত বাতিল করা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপকে মোটেও পাত্তা দেয়নি সুপার পাওয়ার হতে যাওয়া দেশটি। পরবর্তীতে ১৯৫৮ পর্যন্ত মোট ২৩টি নিউক্লিয়ার বোমার পরীক্ষা করা হয় বিকিনি আইল্যান্ডের আশেপাশের এলাকায়। পুরো প্রশান্ত মহাসাগরে ৩১টি পরীক্ষা করা হয়। এসব পরীক্ষা পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলে ও তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়। পরবর্তী কয়েক বছর তেজস্ক্রিয়তার কারণে এসব দ্বীপের আশেপাশেও যাওয়া যেত না। ২০১৭ সালের পর থেকে সীমিত আকারে পর্যটক ও পেশাদার স্কুবা ডাইভারদের এই দ্বীপে যেতে দেয়া হয়।
বিকিনি আইল্যান্ডের পরীক্ষা অন্যান্য দেশকে নিউক্লিয়ার অস্ত্র পেতে ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করে। বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন তড়িঘড়ি করে ১৯৪৯ সালের ২৯ আগস্ট প্রথম পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা করে। পরবর্তী কয়েক দশক ধরে চলা যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধের আগুনে বারুদ ঢেলেছিল বিকিনি আইল্যান্ডের ঐ নিউক্লিয়ার বোমা পরীক্ষা। ভিডিওতে দেখুন দুটো বোমা পরীক্ষার ভয়ংকর দৃৃশ্য।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় পৃথিবী প্রায় প্রতিদিনই পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকিতে থাকত। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে সেই যুদ্ধ শেষ হলেও পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি এখনও শেষ হয়নি। ১৯৯৮ সালে সালের ভারত-পাকিস্তানের সর্বশেষ নিউক্লিয়ার পরীক্ষার পর ২০০৬ সালে উত্তর কোরিয়ার অঘোষিত পরীক্ষার মাধ্যমে আবারও পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণে পৃথিবীর মাটি কেঁপে ওঠে। আমাদের এই সুন্দর বাসযোগ্য গ্রহটিকে ধ্বংস করতে না চাইলে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়া একান্ত কাম্য। এ ব্যাপারে বিশ্বনেতাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক, এটাই শান্তিকামী বিশ্ববাসীর চাওয়া।