Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রহস্যময় কৈলাস পর্বত

কৈলাস পর্বত পশ্চিম তিব্বতে অবস্থিত একটি পবিত্র স্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬,৬৫৬ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই পর্বতটি হিন্দু, বৌদ্ধ, বন এবং জৈন ধর্মের অগণিত মানুষের কাছে পবিত্র জায়গা হিসেবে বিবেচিত। হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী এই পর্বতটি দেবতা শিবের বাসস্থান এবং বিশ্বের কেন্দ্রস্থল। আবার জৈন ধর্মমতে পর্বতটি সেই জায়গা যেখানে তাদের পূর্বপুরুষ ঋষভনাথ পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। তিব্বতী বৌদ্ধরা বিশ্বাস করেন যে এই পর্বত সীমাহীন সুখের প্রতিনিধিত্বকারী চক্রসমভারের আবাসস্থল। বন ধর্মের কাছে কৈলাস একটি স্বস্তিকা পর্বত, যা আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী এই পর্বত ও তার আশপাশের এলাকায় বেশ কিছু অলৌকিক ঘটনা বহুকাল আগে থেকেই ঘটে আসছে। এসব ঘটনা লোকমুখে শোনা যায়। সেখানে তদন্ত করা হলেও এখনও পর্যন্ত কোনো উপসংহার পৌঁছান যায়নি। কৈলাস পর্বতকে ঘিরে তেমনই কিছু রহস্য নিয়ে আজকের লেখা।

কৈলাস পর্বত; Image source: Isha Foundation

হিমালয়ে অবস্থিত কৈলাস পর্বত সেখানকার সবচেয়ে উঁচু পর্বত না হলেও এই পর্বতশৃঙ্গে কেউ আরোহণ করেনি। কারণ, এটা বিশ্বাস করা হয় যে কৈলাস পর্বতে আরোহণ করা দেবতাদের অপমান করার সামিল। তবে প্রাচীন কিংবদন্তী অনুযায়ী, মিলারেপা নামে একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এ পর্বতে আরোহণ করেছিলেন। চারজন পর্বতারোহী এই পর্বতে আরোহণের সময় মারা গিয়েছিলেন। ধর্মীয় বিশ্বাস হোক বা প্রাকৃতিক কারণ, কৈলাস পর্বতে আরোহণ যেন একপ্রকার নিষিদ্ধ কাজ

বিজ্ঞানীদের অনুমান, কৈলাস পর্বতের চূড়াটি আসলে একটি মনুষ্যসৃষ্ট ভ্যাকুয়াম পিরামিড, এবং এটি ১০০টিরও বেশি ছোট পিরামিড দিয়ে বেষ্টিত। প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, পিরামিড কমপ্লেক্সের উচ্চতা ১০০ থেকে ১,৮০০ মিটারের মধ্যে, যেখানে মিশরীয় পিরামিডের উচ্চতা মাত্র ১৪৬ মিটার। এই অনুমান যদি সত্য হয়, তবে এটি আজকের যেকোনো পরিচিত পিরামিডের চেয়ে বড় হবে

ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে একে পৃথিবীর কেন্দ্র হিসেবে ধরা হয়। তবে ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে এর বিশেষত্ব রয়েছে। কারণ, যুক্তরাজ্যের স্টোনহেঞ্জ থেকে এর দূরত্ব ৬,৬৬৬ কিলোমিটার, যা কৈলাস থেকে উত্তর মেরুর দূরত্বও বটে। আবার কৈলাস থেকে দক্ষিণ মেরুর দূরত্ব ১৩,৩৩২ কিলোমিটার, যা উত্তর মেরু বা স্টোনহেঞ্জের দূরত্বের ঠিক দ্বিগুণ

কিছু বিজ্ঞানীর মতে, কৈলাস পর্বতমালায় এমন কোনো শক্তি রয়েছে যা শরীর এবং মনকে উদ্দীপ্ত করে। বলা হয়ে থাকে, কৈলাসের আশেপাশে যারা ১২ ঘন্টা সময় ব্যয় করেন, তাদের চুল এবং নখের বৃদ্ধি এত বেশি হয় যা স্বাভাবিক সময়ের দুই সপ্তাহের সমান!

কৈলাস পর্বতের পাদদেশে দুটি হ্রদ রয়েছে। একটি মানস সরোবর হ্রদ ও আরেকটি রাক্ষস তাল হ্রদ। মানস সরোবর হ্রদটি পবিত্র এবং এটি একটি মিঠা পানির হ্রদ। আবার রাক্ষস তাল হ্রদ একটি লবণাক্ত জলের হ্রদ যা ভূতের হ্রদ হিসেবে পরিচিত। মানস সরোবরের একটি বৃত্তাকার আকৃতি রয়েছে যা সূর্যের অনুরূপ এবং রাক্ষস তাল দেখতে অর্ধচন্দ্রের মতো। এজন্য হ্রদ দুটি যথাক্রমে আলো ও অন্ধকারের প্রতিনিধিত্ব করে।

মানস সরোবর হ্রদ ও রাক্ষস তাল হ্রদ; Image source: Eugene Kaspersky

যখন সূর্য অস্ত যায়, তখন পর্বতের ছায়া এমনভাবে পড়ে যে ধর্মীয় প্রতীক স্বস্তিকার সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়, যা হিন্দুদের মধ্যে একটি শুভ চিহ্ন হিসেবে বিবেচিত হয়

হিমালয়ের কৈলাস এবং নিকটবর্তী মানস সরোবর হ্রদ থেকে এশিয়ার সিন্ধু, গঙ্গা, সতলজ নদী এবং ব্রহ্মপুত্র নদের জন্ম হয়েছে। সেখান থেকে উৎপন্ন হয়ে চারটি নদী হাজার হাজার মাইল পথ প্রবাহিত হয়ে ভারত মহাসাগরে পতিত হয়েছে।

দক্ষিণ দিক থেকে দেখলে কৈলাস পর্বতের গায়ে ওম (ॐ) প্রতীক আছে বলে মনে হয়। বিশেষত পাহাড়ের চূড়া থেকে বিশাল বরফের গর্ত এবং অনুভূমিক শিলা গঠনের ভূপ্রাকৃতিক কারণে এরূপ আকৃতি গঠন করে। তবে ধর্মীয় দিক থেকে এই বিষয়টি বিশ্বাসের সাথে জড়িত।

বরফের আবরনে কৈলাশ পর্বতের গায়ে ওম প্রতীক ফুটে উঠেছে; Image source: Trip Advisor

হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বেদে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, কৈলাস পর্বত স্বর্গ ও পৃথিবীর মধ্যে একটি সিঁড়ি। মহাভারত অনুসারে, পাণ্ডবরা তাদের একমাত্র সঙ্গী দ্রৌপদীর সাথে মোক্ষ অর্জনের জন্য কৈলাস পর্বতে আরোহণ করেছিলেন। স্বর্গে যাওয়ার পথে, যুধিষ্ঠির ব্যতীত সকলেই চূড়ায় আরোহণ করার সময় একে একে পিছলে গেল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে স্বর্গের দরজা শুধুমাত্র যুধিষ্ঠিরের জন্য খোলা হয়েছিল। পিরামিড-আকৃতির কৈলাস পর্বতের চারটি ঢাল কম্পাসের চারটি দিকের দিকে মুখ করে রয়েছে, যা একে পরিপূর্ণতার প্রতীক করে তোলে। শিষ্যরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে এটি স্বর্গের প্রবেশদ্বার

কৈলাস পর্বত গ্রানাইট দিয়ে গঠিত। এ পর্বতের চারটি মুখ চারটি দিক, যেমন- উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে মুখ করে আছে। ধর্মীয় বিশ্বাসমতে, এই পর্বত তার চারটি দিক থেকে বিভিন্ন শক্তি নির্গত করে। প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বিষ্ণু পুরাণে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে- কৈলাস পর্বতের পশ্চিম মুখ চুনি বা পদ্মরাগমণি দিয়ে, দক্ষিণ মুখ নীলকান্তমণি দিয়ে, উত্তর মুখ স্বর্ণ দিয়ে এবং পূর্ব মুখ ক্রিস্টাল বা স্ফটিকের মতো মূল্যবান পাথর দিয়ে গঠিত। এটি কৈলাস পর্বতের রহস্য নিয়ে আরও একটি আলোচিত বিষয়।

কৈলাস পর্বতের চারটি দিকের আলাদা ছবি; Image source: Aradhya Tour

কেউ কেউ দাবি করেছেন যে তারা রাতে কৈলাস পর্বতের কাছ থেকে অদ্ভুত ফিসফিস শুনতে পান। প্রকৃতপক্ষে, এই কৈলাস পর্বত রহস্য ড. আর্নস্ট মুল্ডাশিফের লেখা একটি বইয়েও নথিভুক্ত করা হয়েছে। কৈলাস পর্বতের নিঃশব্দ প্রাসাদ থেকে আসা অদ্ভুত ফিসফিসের বিষয়ে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন

ড. আর্নস্ট মুল্ডাশিফ; Image source: Russia Beyond

অন্য একরাতে ড. মুল্ডাশিফ এবং তার দলের সদস্যরা পাথর পড়ার একটি বিভীষিকাময় শব্দ শুনতে পান যা কৈলাস পর্বতের ভেতর থেকে আসার মতো মনে হয়েছিল। তার মতে, এটা খুবই সম্ভব যে এখনও কিছু জীবিত প্রাণী কৈলাস পর্বতের পিরামিডের ভেতরে বাস করে

এটি কৈলাস পর্বতের সেই রহস্যগুলোর একটি যা দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। তিব্বতি গুরুদের মতে, কৈলাস পর্বতের আশেপাশের অঞ্চলে অতিপ্রাকৃত শক্তি রয়েছে যা বর্ণনা করা যায় না। প্রকৃতপক্ষে, তিব্বতীরাও বিশ্বাস করে যে রহস্যময় শহর শাম্ভালাও কৈলাস পর্বতের আশেপাশের অঞ্চলে অবস্থিত। বৌদ্ধ বিশ্বাস অনুসারে, সিদ্ধা এবং তপস্বী লোকেরা এখনও রহস্যময় শাম্ভালা শহরে বাস করে।

অনেকে বলেন, কৈলাস পর্বত ভেতর থেকে ফাঁপা। কেউ কেউ আবার দাবি করেছেন, ‘ওম’ শব্দ কৈলাস পর্বত থেকে আসে। কোনো কোনো বিজ্ঞানীর আবার দাবি, এই শব্দ আসলে বরফ গলার আওয়াজ। বলা হয়, যখন শব্দ ও আলো মিলিত হয়, তখনই ‘ওম’ শব্দটি উৎপন্ন হয়

কৈলাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ; Image source: Medium

মানস সরোবর হ্রদের রহস্যময় আলো কৈলাসের সবচেয়ে বড় রহস্য। বেশ কয়েকবার মানস সরোবর হ্রদের উপরে রহস্যময় আলো দেখা গেছে। এছাড়া এলিয়েন নিয়েও এই পর্বতকে ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু তত্ত্ব। অনেক অভিযাত্রীর ভাষ্যে, তারা কৈলাস পর্বতের আশেপাশে রহস্যময় আলোর পাশাপাশি ‘এলিয়েন শিপ’ দেখেছে! অনেকের ধারণা, কৈলাস আসলে এলিয়েনদের গোপন শহর, যেখানে তারা একটি নির্দিষ্ট সময়ে এসে বৈঠক করে।

তবে এতসব রহস্য থাকলেও কৈলাস পর্বত ধর্মীয় দিক থেকে একটি অনন্য স্থান দখল করে আছে। এই পর্বতের রহস্য উদঘাটন করতে না পারলেও এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবশ্যই মানুষকে বিমোহিত করবে।

This bengali article discusses about the mysteries of the Mount Kailash. References have been hyperlinked inside.

Related Articles