Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রুশিয়া থেকে জার্মানি (পর্ব-১৯): উত্থান-পতনের দুই বছর

১৭৫৮ সাল থেকেই ভার্সাই চুক্তি সংশোধনের বিষয়ে ফ্রান্স আর অস্ট্রিয়ার কথাবার্তা চলছিল। মার্চের ২১ তারিখ সংশোধিত এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে সব পক্ষ। ফ্রান্সের তরফ থেকে অস্ট্রিয়াকে দেয়া সহায়তার পরিমাণ কমানো হলো, এবং অস্ট্রিয়া কর্তৃক ফ্রান্সের হাতে নেদারল্যান্ডসের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ছেড়ে দেয়ার শর্তও রহিত হয়। তবে ফ্রান্স অঙ্গীকার করে তারা জার্মানিতে এক লক্ষ সেনা রাখবে।

ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং ওয়েসেলের কাছে ফরাসিদের শিবির ছিল। ব্রান্সউইকের ফার্দিন্যান্দ তাদের উপর হামলা করা শুরু করলেন। স্যাক্সোনির বার্গেন শহরের কাছে ১৭৫৯ সালের ১৩ এপ্রিল তিনি ব্রগ্লির দ্বিতীয় ডিউক ভিক্টর ফ্রাসোঁয়ার নেতৃত্বে ফরাসিদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। ফার্দিন্যান্দ এখানে কিছু ভুল করেন। আর্টিলারি প্রস্তুত হবার আগেই তিনি সেনাদের ময়দানে নামিয়ে দিলে তারা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে ফরাসিরা তার হঠকারিতার পরিপূর্ণ সুবিধা নিতে ব্যর্থ হয়। ফলে পরাজয়ের সম্মুখিন হলেও ফার্দিন্যান্দ সক্ষম হন তার বেশিরভাগ সেনা নিয়ে নিরাপদে সরে পড়তে।

ব্যাটল অফ মিন্ডেন

হ্যানোভারের দিকে যাত্রাপথে ওয়েস্তফ্যালেয়া অঞ্চলের মিন্ডেন শহর ছিল ফার্দিন্যান্দের মালামালের ডিপো। বার্গেনের পর ফ্রান্স হ্যানোভারের দিকে নতুন করে হামলা শুরুর পরিকল্পনা করে। মধ্য জুন থেকে দুটি ফরাসি বাহিনী গতিশীল করা হলো। মার্শাল লুই জর্জের ৬০,০০০ আর ভিক্টর ফ্রাসোঁয়ার অধীনে ২০,০০০ সেনা। ফ্রাসোঁয়ার সেনারা জুলাইয়ের ৯ তারিখ মিন্ডেন দখল করে, ফলে হ্যানোভারের দিকে ফরাসি হামলার একটি পথ উন্মুক্ত হয়ে যায়।

ভিক্টর ফ্রাসোঁয়া; Image source: Wikimedia Commons

ফার্দিন্যান্দের ৩৫,০০০ সেনা মিন্ডেনের পশ্চিমে অবস্থান নিল, তাদের সাথে ব্রিটিশ রেজিমেন্টও ছিল। ফরাসিরা মিন্ডেন থেকে ছোট ছোট দল ছড়িয়ে দিয়েছিল চারিদিকে, উদেশ্য রসদপত্র সংগ্রহ করা। ফলে ফার্দিন্যান্দ নিজের বাহিনী কয়েক ভাগে ভাগ করতে বাধ্য হলেন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফরাসিদের ব্যবস্থা করে জুলাইয়ের শেষদিকে তিনি প্রস্তুত হলেন চূড়ান্ত আঘাত হানতে।

১ আগস্ট, ১৭৫৯।

ফ্রাসোঁয়া আর লুই জর্জ মধ্যভাগে অশ্বারোহী আর দুই পাশে ইনফ্যান্ট্রি সাজিয়ে ভোর চারটায় প্রুশিয়ান ক্যাম্পের দিকে এগিয়ে গেলেন। ফার্দিন্যান্দ জানতেন এরকম কিছু হতে পারে। তিনি প্রস্তুত ছিলেন।প্রুশিয়ানদের অসতর্ক অবস্থায় পাবার আশা ফ্রাসোঁয়ার পূরণ হলো না। কাজেই দুই পক্ষ রণক্ষেত্রে সমবেত হল। কামানের গর্জনে প্রকম্পিত হল চারিদিক। ফরাসি আর্টিলারির মুহুর্মুহু গোলার মধ্য দিয়েই ফার্দিন্যান্দের বাহিনীর ব্রিটিশদের ছয়টিসহ নয়টি ব্যাটালিয়ন ফরাসি মধ্যভাগের দিকে অগ্রসর হয়। গোলার আঘাতে বহু ক্ষয়ক্ষতি হলেও তারা লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত না হয়ে ফরাসি অশ্বারোহীদের ঠিক সামনে অবস্থান নেয়।

ফরাসিরা ঘোড়া হাঁকিয়ে তাদের ৩০ ফুটের মধ্যে চলে এলে এবার ব্যাটালিয়নগুলো বন্দুক ছুঁড়ল। প্রথম দফাতেই অনেক ফরাসি সেনা ধরাশায়ী হলে তারা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মার্শাল জর্জ এবার সম্মিলিত অশ্বারোহী এবং ইনফ্যান্ট্রি আক্রমণ করে শত্রুদের ঘায়েল করতে চাইলেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন।     

শত্রু হামলার মুখে অবিচল ব্রিটিশ ব্যাটালিয়ন; Image source: royalhampshireregiment.org

নিজের নয়টি ব্যাটালিয়নের দৃঢ়তায় মুগ্ধ ফার্দিন্যান্দ এবার তাদের সহায়তায় অশ্বারোহীদের চার্জ করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তাদের কম্যান্ডার লর্ড স্যাকভিল সেনাপতির নির্দেশ পালনে অযোগ্যতার পরিচয় দেন। এজন্য যুদ্ধের পরপরই তাকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়েছিল। ফার্দিন্যান্দ আরো ইনফ্যান্ট্রি সামনে পাঠালেন। ফরাসিরা দুই পাশ থেকে হামলা করতে চেষ্টা করলেও তাদের ঠেকিয়ে দেয়া হয়। মার্শাল জর্জ আবার অশ্বারোহী দিয়ে আক্রমণ চালান, এবারও তাকে ব্যর্থ করে দেয়া হল।

সকাল যখন এগারটা তখন ফার্দিন্যান্দের বাহিনীর বাম বাহু ফ্রাসোঁয়ার বাহিনীর দুই পাশ থেকে চাপ দিয়ে তাদের পিছনের দিকে ঠেলে দেয়। ৮,০০০ সেনা ফেলে ফরাসিরা পালিয়ে গেল। ফার্দিন্যান্দের ২,৬০০ সৈন্য হতাহত হয়, যাদের বেশিরভাগই সেই নয়টি ব্যাটালিয়নের সদস্য ছিল। তবে ফার্দিন্যান্দ ফরাসিদের উপর মরণ আঘাত হানতে পারেননি, কারণ ইতোমধ্যে কুনাসদর্ফে (Kunersdorf) ফ্রেডেরিক পরাজয়ের সম্মুখিন হয়ে অতিরিক্ত সেনা চেয়ে পাঠিয়েছেন।

ব্যাটল অফ মিন্ডেন; Image source: Wikimedia Commons

ফরাসিরা তখন সবদিকে মার খাচ্ছে। ইংল্যান্ডে সরাসরি হামলা করবার পরিকল্পনাও তাদের বানচাল হয়ে যায় ব্যাটল অফ লাগোস এবং কুইবেরন বে-র পরাজয়ের পর। ফলে বছর শেষ হবার আগেই ইংল্যান্ডের সাথে শান্তির কথা জোরেশোরে উচ্চারিত হতে থাকে। কিন্তু ব্রিটেনের কঠিন শর্ত এবং চুক্তিতে প্রুশিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি ফ্রান্সের মনঃপুত হয়নি। ততদিনে ফ্রেডেরিকের অবস্থা সঙ্গিন এবং শত্রুদের ধারণা ছিল আর দু-একবার আক্রমণ করলেই প্রুশিয়ান সামরিক শক্তি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। রাশিয়া এবং অস্ট্রিয়াও ফ্রান্সের একাকী ইংল্যান্ডের সাথে আলোচনায় বসা পছন্দ করেনি।

রাশিয়ান আগ্রাসন

১৭৫৯ সালের মে মাসে জার্মানিতে রাশিয়ান সেনাদলের সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হন জেনারেল স্যাল্টিকভ। পোল্যান্ডের মধ্য দিয়ে ৫০,০০০ রাশিয়ান সেনা মার্চ করে ব্র্যান্ডেনবার্গের দিকে এগিয়ে এলো। ২৩ জুলাই তারা অডার নদীর কাছে পেল্টজিগে কার্ল হাইনরিখের অধীনস্থ ২৬,০০০ প্রুশিয়ানকে পরাস্ত করে।

স্যাল্টিকভ এবার ফ্রাঙ্কফুর্টের দিকে যাত্রা করলেন। স্যাক্সোনিতে তখন মার্শাল ডন আর ফ্রেডেরিক একে অপরের উপর চোখ রেখে বসে আছেন। ডন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ল্যুডনের অধীনে ২০,০০০ অস্ট্রিয়ান প্রেরণ করেন স্যাল্টিকভের সাথে যোগ দিতে। এই সম্মিলিত বাহিনীর লক্ষ্য একটাই, চূড়ান্তভাবে ফ্রেডেরিকের সামরিক শক্তি ধ্বংস করে দেয়া। ফ্রেডেরিকের শক্তি আসলেই তখন পতনের মুখে। অভিজ্ঞ সেনাদের হারিয়ে তিনি নতুন করে ৪০,০০০ সেনা দলে ভিড়িয়েছেন যারা একেবারেই আনকোরা। এদের অনেকই কয়েকদিন আগেও কৃষিকাজ করত। অনেক অপরাধী এবং ভাড়াটে যোদ্ধাকেও তিনি সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে তিনি হাল ছাড়ার পাত্র নন। রাশিয়ানদের খবর পেয়ে তিনি প্রথমে পেল্টজিগে এসে পরাজিত প্রুশিয়ান সেনাদের দলভুক্ত করেন। এরপর রওনা দিলেন ল্যুডেন আর স্যাল্টিকভের সম্মিলন রুখতে। তবে তিনি ব্যর্থ হলেন।

ব্যাটল অফ কুনার্সদর্ফ

অডার নদীর পূর্বে কুনাসদর্ফ গ্রামে অস্ট্রো-রাশান বাহিনীর ঘাঁটি। তাদের বিপক্ষে ফ্রেডেরিকের ৫০,০০০ সেনা। ১২ আগস্ট রাত ২টার সময় তেমন কোনো পর্যবেক্ষণ ছাড়াই ফ্রেডেরিক হামলা শুরু করেন। রাশিয়ানরা ঘাঁটি করেছিল শক্ত করে। তাদের চারিদিকে বসিয়েছিল কামান আর অনেক প্রতিরক্ষা প্রাচীর।কয়েক জায়গায় ট্রেঞ্চ খনন করে সেখানে প্রহরীদের সদাসতর্ক রাখা হয়েছিল। ফলে প্রুশিয়ানরা যখন বাম দিক থেকে হামলা করলে তাদের সহজেই ঠেকিয়ে দেয়া হলো।

কয়েকবার চেষ্টার পর ফ্রেডেরিক উত্তরপূর্বে কিছু জায়গা দখল করতে সক্ষম হলেও আদতে কোনো লাভ হলো না। রাশিয়ানদের তোপ আর বন্দুকের গুলিতে তাদের শিবিরের উপর প্রুশিয়ান চার্জ বারবার ব্যর্থ হয়। বিশৃঙ্খল প্রুশিয়ান ইনফ্যান্ট্রি অস্ট্রো-রাশান অশ্বারোহীদের আঘাতে ঘায়েল হতে থাকে। ফ্রেডেরিক নিজে সামনে থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করতে গিয়ে দুটি ঘোড়া হারালেন, তার পোশাকও বারুদ আর গুলির চিহ্নে জর্জরিত। ছয় ঘণ্টার মধ্যে ১৮,০০০-২০,০০০ প্রুশিয়ান সেনার পতনে ফ্রেডেরিক পরাজিত হলেন শোচনীয়ভাবে। শত্রুদের হতাহত সংখ্যা ১৫,০০০।

ব্যাটল অফ কুনাসদর্ফ © Alexander Kotzebue/ Hermitage Museum

জয়ের পর স্যাল্টিকভের ইচ্ছে ছিল সোজা বার্লিনের রাস্তা ধরবার। কিন্তু দক্ষিণে ছোট একটি অস্ট্রিয়ান সেনাদলকে প্রুশিয়ানদের থেকে বাঁচাতে গিয়ে সেই পরিকল্পনা এই বছর বাস্তবায়িত হয়নি। মার্শাল ডন কিন্তু বিজয় কাজে লাগিয়ে সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ ড্রেসডেন অধিকার করে নেন। ফ্রেডেরিক এদিকে সরাসরি সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে থাকেন। সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়ায় স্যাল্টিকভ দৃশ্যপট থেকে সাময়িকভাবে অন্তর্হিত হলে ফ্রেডেরিক ১৩,০০০ সৈনিক পাঠালেন ড্রেসডেনে মার্শাল ডনের বাহিনীকে পেছন থেকে আঘাত করতে। ডন প্রস্তুত ছিলেন এবং শহরের দক্ষিণে ম্যাক্সেন অঞ্চলে ৪২,০০০ অস্ট্রিয়ান সেনা নিয়ে ফ্রেডেরিকের সৈনিকদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করেন। কিন্তু এবারও ফ্রেডেরিকের সামরিক শক্তি চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করবার পরিকল্পনা সফল হল না।

হ্যানোভারে ফরাসিদের শেষ চেষ্টা

১৭৬০ সালের শুরুতে অস্ট্রিয়া এবং রাশিয়ার প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র ছিল সিলিসিয়া, ফরাসিরা তাদের মনোযোগ নিবদ্ধ রাখে হ্যানোভারের দিকে। আমেরিকা এবং ভারতে উপুর্যুপুরি পরাজয়ের পর তাদের একমাত্র আশা ছিল হ্যানোভার দখল করে ব্রিটিশদের সাথে নিজেদের অনুকূলে সন্ধিচুক্তি করতে বাধ্য করা। তাদের সামনে বাধা হয়ে আছেন মূর্তিমান আপদ ব্রান্সউইকের ফার্দিন্যান্দ। তার সাথে ইংল্যান্ড থেকে পাঠানো আরো সৈন্য নতুন করে যোগ দিয়েছে।

ফার্দিন্যান্দকে পরাস্ত করতে ফরাসিরা বড় একটি বাহিনী তৈরি করল। ফার্দিন্যান্দ তাদের সরবরাহের রাস্তায় ছোটখাট হামলা চালিয়ে তাদের কিছুটা বেসামাল করে দেন। জুলাইয়ের ১০ তারিখ ফরাসিরা কর্বাশের লড়াইয়ে জয়ী হয়। এরপর ওয়েস্টফ্যালেয়ার বানিজ্য নগরী ওয়ারবার্গে’র নিকটে ৩১ জুলাই দুই পক্ষই জড় হলো। ফরাসিদের নেতৃত্বে শ্যেভালিয়র দ্যু ম্যুই।   

ফার্দিন্যান্দ নিজ বাহিনীকে তিন ভাগ করলেন।এরা তিন দিক থেকে আক্রমণ করে ফরাসিদের নাভিশ্বাস তুলে দেয়। ফলে শ্যেভালিয়র পিছিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। এমন সময় ফার্দিন্যান্দ মাঠে নামালেন ব্রিটিশ অশ্বারোহীদের। প্রায় পাঁচ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে তারা ঝড়ের বেগে বিপক্ষের অশ্বারোহীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। তাদের ছত্রভঙ্গ করে ব্রিটিশরা ফরাসি ইনফ্যান্ট্রি ব্যূহ তছনছ করে দেয়। ৬,০০০ ফরাসি সেনা আহত, নিহত বা বন্দি হলো। 

ওয়ারবার্গের পর বেশ কয়েক মাস দুই পক্ষ বড় কোনো সংঘর্ষে জড়ায়নি।তারা একে অপরের রসদপত্র সরবরাহের রাস্তায় ব্যাঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করতে থাকে। অক্টোবরে ফরাসি বাহিনী আবার হ্যানোভারে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। ফলে ওয়েস্টফ্যালেয়ার ক্লস্টার ক্যাম্পে ১৬ তারিখে আবার লড়াই হয়। সকাল থেকে দুপুর অবধি দুই পক্ষের ইনফ্যান্ট্রি এক অপরের উপর গোলাগুলি চালাতে থাকে। কিন্তু কোনো পক্ষেই জয়ের আভাস পরিলক্ষিত হচ্ছিল না।

অবশেষে ওয়ারবার্গের মতো অশ্বারোহী বাহিনীর আঘাতে ফরাসি ব্যূহ দুর্বল হয়ে গেলে ফার্দিন্যান্দের সেনারা চূড়ান্ত হামলা চালাল। এবারও ফরাসিরা পরাজিত হয়। তারা জার্মানিতে নিজেদের ঘাঁটিতে ফেরত গেল। ফার্দিন্যান্দ এরপর ১৬ অক্টোবর রাইন অতিক্রমের চেষ্টা করলেও সেখানে শত্রু সেনাপতি চার্লস ইউজিন তা ব্যর্থ করে দেন। এদিকে ২৫ অক্টোবর ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় জর্জের মৃত্যু হলে তৃতীয় জর্জ হিসেবে তার নাতি সিংহাসনে বসেন। তার জন্মভূমি ইংল্যান্ড, কাজেই হ্যানোভারের প্রতি তার আলাদা কোনো টান ছিল না।    

সিলিসিয়া

বিগত বছরগুলোর রক্তক্ষয়ে প্রুশিয়ান সামরিক শক্তি নিঃশেষের দ্বারপ্রান্তে। মারিয়া থেরেসা উল্লসিত। বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এইবার ঘুঘু তোমার বধিব পরাণ! তিনি নিশ্চিত এই বছরই ফ্রেডেরিকের শেষ বছর।ওদিকে প্রুশিয়ার রাজা রাজ্যের বুড়ো আর তরুণদের মধ্য থেকে মোটামুটি ৭৫ হাজার লোক সেনাদলে নিয়োগ করেছেন। এরা একদমই কাঁচা হলেও তাদের নিয়েই লড়তে হবে।

ফ্রেডেরিক স্যাক্সোনিতে মার্শাল ডনের গতিবিধির উপর চোখ রাখলেন। এদিকে ১৭৬০ সালের ২৩ জুন অস্ট্রিয়ান জেনারেল ল্যুডন ল্যান্ডেশুটে (Landeshut) সংখ্যালঘু একটি প্রুশিয়ান বাহিনীকে পরাজিত করেন। এখানে প্রুশিয়ানরা প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ২৬ জুলাই গ্লাতযে প্রুশিয়ান দুর্গ ল্যুডন দখল করে নেন। স্যাল্টিকভ পোল্যান্ডের পজনানে রাশিয়ান শিবির থেকে রওনা হন তার দিকে।

ফ্রেডেরিক ল্যুডনের দিকে অগ্রসর হতে গিয়ে খবর পেলেন মার্শাল ডন ড্রেসডেন ছেড়ে সেদিকে যাত্রা করেছেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অবিলম্বে তিনি জুলাইয়ের ১২ তারিখ ড্রেসডেন অবরোধ করেন। ডন ড্রেসডেনের দিকে ফিরে আসলে ফ্রেডেরিক পিছিয়ে সিলিসিয়াতে ঢুকে পড়েন। ব্রেস্লাউয়ের কাছে তার ভাই হেনরিকে অবরোধ করে রেখেছিল চেরিনশেভের অধীনে ২০,০০০ রাশিয়ান। কিন্তু সেদিকে যাবার আগে অস্ট্রিয়ানদের হুমকি মোকাবেলা করা দরকার।

ইত্যবসরে লিখনেটজ গ্রামের উপকণ্ঠে ১৫ আগস্ট ডন আর ল্যুডন একত্রিত হলেন। ৯০,০০০ শত্রুসেনার মোকাবেলায় ফ্রেডেরিকের মাত্র ৩০,০০০ সৈনিক। চেরিনশেভ আরেকদিক থেকে এসে ফ্রেডেরিককে ঘিরে ফেললেন। রাতের আঁধারে গা ঢাকা দিয়ে প্রুশিয়ানরা নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করল। ফলে ল্যুডন সকালে ফ্রেডেরিকের উপর আঘাত হানতে গেলে প্রুশিয়ানরা তাকে চমকে দিতে সক্ষম হয়। বহু হতাহত ফেলে দু’ঘণ্টা পর রণক্ষেত্রে থেকে তিনি পিছু হটেন। ল্যুডনের পরাজয়ের পর সিলিসিয়া আরেকবার ফ্রেডেরিকের সামনে নতি স্বীকার করে। কিন্তু স্যাক্সোনি তখনও ডনের সামনে উন্মুক্ত।

বার্লিন

রাশান জেনারেল ততলুবেনের অধীনে ৩৫,০০০ জোট সেনা অতর্কিতে বার্লিনে হামলা করে। অক্টোবরের ৯ তারিখের রাতে তারা বার্লিনে ঢুকে পড়ে। এই আক্রমণের মূল উদ্দেশ্য ছিল লুণ্ঠন, এবং ফ্রেডেরিক দ্রুত রাজধানীর দিকে এগিয়ে এলে তারা ১৩ তারিখ বার্লিন ত্যাগ করে চলে যায়।

ব্যাটল অফ টোর্গাউ

অস্ট্রিয়ান মূল বাহিনী নিয়ে ডন স্যাক্সোনিতে অবস্থান নিলেন। তার সাথে ৫৫,০০০ সৈন্য। ফ্রেডেরিক নিজের ৪৮,০০০ সেনাকে দুই ভাগে ভাগ করলেন। একদল দক্ষিণে ড্রেসডেনের রাস্তা আটকে বসে রইল, যাতে সেখান থেকে কোনো সহায়তা ডন না পান। মূল বাহিনী নিয়ে ফ্রেডেরিক মার্চ করে টোর্গাউ শহরের কাছে চলে এলেন, যেখানে ডন শিবির ফেলেছেন। ৩ নভেম্বর দুই পক্ষ মুখোমুখি হলো। 

ব্যাটল অফ টোর্গাউ; Image source: weaponsandwarfare.com

দুপুর দুটোয় ফ্রেডেরিক অস্ট্রিয়ান ব্যূহের মধ্যভাগে আক্রমণের মাধ্যমে সংঘর্ষের সূচনা করেন। শত্রুদের তুমুল গোলাবর্ষণে এই হামলা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো। দ্বিতীয় আঘাতের পরিণতিও হলো একই। কয়েকবার হামলার পর বিকালের দিকে জেনারেল জোয়াচিম ভন জেইটন সফল হন ব্যূহ ভেদ করতে। এদিকে ড্রেসডেনের দিক থেকে ফ্রেডেরিকের বাহিনীর অন্য অংশ ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তারাও বিকালের মধ্যেই রণক্ষেত্রে এসে উপস্থিত হলো। এই বাহিনী পেছন দিক থেকে ডনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে ডন বাধ্য হন পরাজয় স্বীকার করতে। তার ১৮,০০০ সেনা হতাহত বা বন্দি হয়, ফ্রেডেরিকের ১১,০০০ সৈনিক আহত বা নিহত হয়।

This is a Bengali language article about the rise and eventual downfall of Prussia and how it led to a unified Germany. Necessary references are mentioned below.

References

  1. Abbott, J. S. C. (1882). The history of Prussia. New York, Dodd, Mead, and company.
  2. Marston, D. (2013). The Seven Years' War. Botley. Oxford: Osprey Publishing Limited.
  3. Seven Years War. Encyclopedia Britannica

Feature Image:  nam.ac.uk

Related Articles