Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বাংলাদেশে রেলওয়ের ইতিহাস (১১শ পর্ব): ব্রিটিশদের বার্মা দখল এবং চট্টগ্রাম-বার্মা রেলপথ নির্মাণ পরিকল্পনা

চট্টগ্রাম থেকে আরাকানের পাহাড়ি পথ ধরে রেঙ্গুন (বর্তমানে ইয়াঙ্গুন) পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয় সেই উনবিংশ শতাব্দীর শেষাংশে। প্রায় ১৩০ বছর অতিক্রম করলেও ১৮৯০ সালে নেওয়া ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।

কালাদান নদীর প্রবেশ মুখ ও আকিয়াবের (বর্তমানে সিত্বে) ভৌগলিক চিত্রের স্কেচ, ১৮৮৫ সাল; image source: Antiqua Print Gallery

ব্রিটিশদের বার্মা দখল

সে সময় আসামের মতো মিয়ানমারও ছিল যোগাযোগবিচ্ছিন্ন একটি অঞ্চল। তবে ধনসম্পদ আর প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর ছিল এই দেশটি। তাছাড়া সমুদ্রপথে কলকাতা হয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া যেতে হলে বার্মার একাধিক সমুদ্র বন্দর অতিক্রম করতে হতো। ভারতবর্ষের সাথে দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ রক্ষায় বার্মা ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এসমস্ত কারণে দেশটির উপর ব্রিটিশদের নজর পড়ে। কীভাবে এই দেশটি দখল করে উপনিবেশ কায়েম করা যায় সেই মতলব করতে থাকে তারা।

প্রথম ইঙ্গ-বার্মা যুদ্ধ; image source: wikipedia commons 

সেই সময় বার্মা শাসন করত কোনবাউং রাজবংশ। চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে ব্রিটিশ সরকার ও বার্মার রাজার মধ্যে বিবাদ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ১৭৮৪ সালে বার্মার রাজা চট্টগ্রাম বন্দর দখল করে আরাকান রাজ্যের সীমানা প্রসারিত করতে চাইলে ব্রিটিশদের সাথে সংঘর্ষ বাধে। ১৭৮৪-৮৫ সালব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের একপর্যায়ে বার্মার সৈন্যরা পিছু হটে। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে সমগ্র আরাকান রাজ্য দখল করে চট্টগ্রামের অন্তর্ভুক্ত করে ব্রিটিশরা। কিন্তু ১৮২৩ সালে বার্মার রাজা পুনরায় আরাকান দখল করতে আসলে প্রথম ইঙ্গ-বার্মা যুদ্ধের সূচনা হয়। এই যুদ্ধে আবার বার্মার সৈন্যরা ব্রিটিশদের কাছে ব্যাপক হারে মার খায় এবং বিশাল ভূখণ্ড হারায়।

প্রথম ইঙ্গ-বার্মা যুদ্ধে জয়ের মধ্য দিয়ে সর্বপ্রথম ১৮২৬ সালে বার্মায় আংশিক ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে সমগ্র বার্মা তখনও ব্রিটিশদের অধিকারে আসেনি। কারণ একটি শান্তিচুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশদের ব্যবসায়ের অনুমতি দেন বার্মিজ রাজা। কিন্তু দিন যত এগোচ্ছিল ব্রিটিশদের কূটকৌশলের কাছে হেরে যাচ্ছিল বার্মার রাজা। এভাবেই আস্তে আস্তে ব্রিটিশ সরকার বার্মাকে তাদের করাল গ্রাসে নিতে থাকে।

চিত্রগ্রাহক উইলগবাই ওয়ালেসের তোলা তৃতীয় ইঙ্গ-বার্মা যুদ্ধের শেষে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের ২৮শে নভেম্বরে ব্রিটিশ বাহিনির মান্দালয়ে আগমন; image source: wikimedia commons 

১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা দক্ষিণ বার্মার একটি বিস্তীর্ণ সেগুন বন দাবী করলে বার্মার রাজা ব্রিটিশদের উপর ক্ষিপ্ত হন। তৎক্ষণাৎ তিনি বার্মা থেকে ব্রিটিশদের লেলিয়ে দেওয়া গুপ্তচর সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ব্রিটিশরা পূর্ব থেকেই আঁটঘাট বেধে নেমেছিল। যুদ্ধের জন্য সর্বত্মক প্রস্তুতি নিতে থাকল ব্রিটিশরা। এ খবর রাজার কানে গেল। তিনিও সৈন্যদের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বলেন। অবশেষে দীর্ঘ ২৫ বছর শান্তিচুক্তির পর দ্বিতীয় ইঙ্গ-বার্মা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। মাত্র কয়েকদিনের এই যুদ্ধে ব্রিটিশরা বার্মার বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নেয়।

১৮৫২ সালে দ্বিতীয় ইঙ্গ-বার্মা যুদ্ধে জয়ের মধ্য দিয়ে বার্মায় স্থায়ী শাসন প্রতিষ্ঠা করে ব্রিটিশরা। দখলকৃত সেগুন বন, খনিজ সম্পদসহ বিপুল পরিমাণ অমূল্য সম্পদ ব্রিটিশদের করতলগত হয়।

রাজা মিন্দন মিন মান্দালয়কে রাজধানী করে এই আধিপত্য এবং ঔপনিবেশিকতা আটকানোর জন্য অনেক তদবির করেন। পাশাপাশি বার্মা রাজ্যকে পুনরায় ঢেলে সাজানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। কিন্তু তলে তলে ব্রিটিশরা রাজা মিন্দন মিনকে হটানোর ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এরই ধারাবাহিতায় ১৮৮৫ সালের নভেম্বরে সূচনা হয় তৃতীয় ইঙ্গ-বার্মা যুদ্ধের।

ব্রিটিশ শাসনে দুর্ভিক্ষে পড়া ইয়াঙ্গুনের মাদ্রাজ সেন্স রোডের কিছু সবজির দোকান, ১৮৮৬ সাল; image source: wikimedia commons 

১৮৮৫ সালের ২৮ নভেম্বর ব্রিটিশ সৈন্যরা মান্দালয় আক্রমণ করে। এই আক্রমণের পেছনে তারা যুক্তি দেখায় মিন্দন মিন একজন অত্যাচারী রাজা ছিলেন এবং ষড়যন্ত্র করে তার দেশে ফ্রান্সের প্রভাব বৃৃদ্ধি করতে চাইছেন। এই যুদ্ধে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বার্মার স্বাধীন রাজতন্ত্রের সূর্য চিরতরে অস্তমিত হয়। ১লা জানুয়ারি, ১৮৮৬ সালে বার্মাকে ব্রিটিশ ভারতের একটি প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা দেয় ব্রিটিশরা। এরপর ১৮৮৬ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি বার্মার আরো বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে দিয়ে ‘ব্রিটিশ বার্মা’ নামে উপনিবেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

চট্টগ্রাম থেকে বার্মায় রেলপথ

উনবিংশ শতাব্দীর শেষাংশে যখন আসাম থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়, তখন ঐ লাইনকে বর্ধিত করে বার্মা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল ব্রিটিশদের। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৯২ সালে লন্ডনে প্রতিষ্ঠা করা হয় আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে। এই প্রতিষ্ঠানটি পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম থেকে আখাউড়া, বদরপুর, করিমগঞ্জ হয়ে ডিব্রুগড় পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করে। কিন্তু দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ার কারণে বার্মা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কার্যক্রম সেসময় স্তিমিত হয়ে পড়ে।

কক্সবাজার থেকে সিত্বের দূরত্ব মাত্র ২০০ কিলোমিটার; image source: Al Jazeera 

চট্টগ্রাম থেকে আসাম পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলে জমজমাট হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম বন্দর। তখন ব্রিটিশ সরকার চট্টগ্রাম বন্দরকে বার্মার সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য পুনরায় তৎপর হতে শুরু করে। প্রথমে পরিকল্পনা করা হয় চট্টগ্রাম থেকে বার্মার আকিয়াব বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এই আকিয়াব ছিল বর্তমানে আরাকান রাজ্যের রাজধানী ‘সিত্বে’ এর পূর্বনাম। কক্সবাজার থেকে সিত্বের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। মাঝখানে বিশাল নাফ নদী।

কিন্তু কয়েক দফা দৌড়ঝাঁপ করে এবারও ব্যর্থ হলো ব্রিটিশরা। উচ্চ নির্মাণব্যয় এবং দুর্গম ভৌগলিক অবস্থান এবারও হতাশ করল আসাম বেঙ্গল রেলওয়েকে। তাছাড়া এ ধাপে কোম্পানিটি সরকারের কাছ থেকেও তেমন উৎসাহ পায়নি। এরপর ১৯০৮-০৯ সালে মিয়ানমার রেলওয়েও সমীক্ষা চালায়। কয়েক বছর পর ১৯১৭-১৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম-দোহাজারী-রামু হয়ে আকিয়াব পর্যন্ত আবারও সমীক্ষা চালানো হয়।

আরাকানের রাজধানী সিত্বের প্রধান রেলওয়ে স্টেশন; image source: The Guardian 
১৮৭৭ সালে স্থাপিত ইয়াঙ্গুন সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশন; image source: wikimedia commons 

১৯২৫ সালে এসে পুনরায় তৎপরতা দেখা গেল আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের মাঝে। সেসময় চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাট ও চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা পাকাপোক্ত করা হয়। সেই মাফিক কাজ শুরু হয় গেল ১৯২৬ সালে। পরিকল্পনা ছিল চট্টগ্রাম থেকে ষোলশহর হয়ে কালুরঘাট ব্রিজের উপর দিয়ে দোহাজারী, কক্সবাজার, রামু হয়ে সিত্বে পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হবে।

চট্টগ্রাম থেকে ষোলশহর হয়ে সাঙ্গু নদীর পাড়ে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কার্যক্রম সমাপ্ত হলো ১৯৩১ সালে। দুর্গম অঞ্চল হওয়ার কারণে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করতে গিয়ে মোটা অংকের অর্থ খরচ করতে হলো ব্রিটিশদের। কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর নির্মাণ করতে হলো এক বিশাল ব্রিজ। তাই ব্রিটিশ সরকার এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য দোহাজারী পর্যন্তই সে সময় থেমে গেল। কারণ সাঙ্গুর মতো বড় নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ করে এত বড় আর্থিক ঝুঁকি তারা আর নিতে চাইল না।

দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন; image source: Prothom Alo

ততদিনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। যুদ্ধ শেষ হতে না হতেই ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমার নামের তিনটি দেশ স্বাধীন হয়ে গেল। ব্রিটিশরাও উপমহাদেশের পাঠ চুকিয়ে পাড়ি জমাল লন্ডনে। পরিকল্পনা আর বাস্তবে রূপ লাভ করতে পারলো না। সেই সাথে চাপা পড়ে গেল চট্টগ্রাম থেকে বার্মা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা।

এরপর এলো পাকিস্তানি আমল। সেসময় পাকিস্তানের শাসক ছিলেন আইয়ুব খান। ১৯৫৮ সালে একবার এই রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সফল হয়নি। ১৯৭১ সালে এই রুটের ট্রাফিক সম্ভাবনা সমীক্ষা চালানোর উদ্যোগ নেয় জাপান রেলওয়ে টেকনিক্যাল সার্ভিস। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সেই উদ্যোগও ভেস্তে যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে ১৯৭৬-৭৭ সালে পুনরায় সমীক্ষা চালায় জাপান রেলওয়ে টেকনিক্যাল সার্ভিস।

১৯৯২ সালে এসকাপ কমিশন অধিবেশনে তিনটি ইউরো-এশিয়া রেল নেটওয়ার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। এর একটি রুট বাংলাদেশ হয়ে মিয়ানমার যাওয়ার কথা। দীর্ঘদিন বিরতি দিয়ে এই লাইনটি পুনরায় পাদপ্রদীপে উঠে আসে ২০০৯ সালে। যেহেতু ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে। তাই সরকারের পরিকল্পনা ভবিষ্যতে এই লাইন মিয়ানমারের আকিয়াব হয়ে তা চীন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন রেলওয়ে স্টেশন নির্মিত হচ্ছে কক্সবাজারে; image source: bangla tribune

২০১০ সালে ১,৮৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটে গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু এই রেলপথ নির্মাণ কার্যক্রম অনেকটাই ধীর গতিতে এগোচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে ২০২২ সাল নাগাদ দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।

সেই ব্রিটিশ যুগ গেছে, পাকিস্তান পর্বও পার হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের বয়সও অর্ধ শতাব্দী চলছে। কিন্তু প্রায় ১৩০ বছর আগের সেই পরিকল্পনা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কার্যক্রম চলমান থাকলেও মিয়ানমার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ পরিকল্পনা অনেকটাই অনিশ্চিত।

এই সিরিজের পূর্ববর্তী অন্যান্য পর্বগুলো পড়তে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে:

১. ভারতবর্ষে রেলওয়ের আগমণ-১ম পর্ব

২. প্রথম যেদিন রেল এলো বাংলায়-২য় পর্ব

৩. বিহার দুর্ভিক্ষ ও সাঁড়া-পার্বতীপুর-শিলিগুড়ি রেল সেকশন-৩য় পর্ব

৪. যশোর-খুলনায় রেল যুগের সূচনা এবং রূপসা-বাগেরহাট সেকশন-৪র্থ পর্ব

৫. উত্তরবঙ্গে যেভাবে ছড়িয়ে পড়ল রেলপথ-৫ম পর্ব

৬. রেলগাড়ি যখন নদীপথে-৬ষ্ঠ পর্ব

৭. ঢাকায় এলো রেল-৭ম পর্ব

৮. কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের সেকাল-একাল-৮ম পর্ব

৯. চা শিল্প যেভাবে সিলেট ও আসামের ইতিহাস বদলে দিয়েছিল-৯ম পর্ব

১০. সবুজ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে চট্টগ্রামে রেল এলো-১০ম পর্ব

This is a Bengali article. It is the 11th part of the series 'History of Railway in Bangladesh'. The British occupation of Burma and plans to build the Chittagong-Myanmar railway are discussed here.

Necessary references have been hyperlinked inside the article.

Featured Image: FolkestoneJack's Tracks

Related Articles