Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইতিহাসের পাতায় রোমান সম্রাট নিরো

রোমান সম্রাট নিরোর নাম কিংবা তাকে নিয়ে সেই বিখ্যাত উক্তি শোনেননি, এমন মানুষ বিরল। জুলিও-ক্লডিয়ান রাজতন্ত্রের সবচাইতে কুখ্যাত এ সম্রাট আত্মহত্যা করেছিলেন মাত্র ৩০ বছর বয়সে। অথচ দু’হাজার বছরেও বিস্মৃত হয়নি তার নিষ্ঠুরতার ইতিহাস। সৎ বাবা সম্রাট ক্লডিয়াসের মৃত্যুতে মাত্র ১৭ বছর বয়সে সম্রাট হন নিরো। তার শাসনকালের প্রথম পাঁচ বছর ছিল রোমানদের স্বর্ণযুগ। মন্ত্রণা পরিষদের স্বাধীনতা বৃদ্ধি, গোপন বিচারের নামে হত্যা ও দুর্নীতি কমিয়ে আনা, খেলাধুলা ও বিনোদনভিত্তিক অনুষ্ঠান আয়োজনসহ নানা কারণে রোমানদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলেন নিরো।

এছাড়াও কর কমানো ও দাস অধিকার বৃদ্ধি তার জনপ্রিয়তা আরো উসকে দেয়। খেলাধুলার নামে প্রাণী হত্যা ও রক্তক্ষয়ী গ্ল্যাডিয়েটর কমব্যাট বন্ধ করে গ্রিক কুস্তি চালু করেন তিনি। এসব কারণে তার সকল পাগলামি সত্ত্বেও লোকজন তাকে পছন্দ করত। বিখ্যাত সম্রাট ট্রাজান, নিরোর শাসনামলের প্রথম পাঁচ বছরকে উল্লেখ করেছেন রোমানদের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ শাসনামল হিসেবে। কিন্তু সহিংসতা আর নিষ্ঠুরতার পূজারী নিরোর আসল রূপ ফুটে উঠতে বেশি সময় লাগেনি। রাজনৈতিক খুন, লাম্পট্য, খ্রিষ্টানদের উপর অমানবিক অত্যাচার নিরোকে শীঘ্রই পরিণত করে একজন অত্যাচারী সরম্রাটে।

রোমান ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুর শাসক- নিরো; Image Source: Pocketmags

মায়ের সাহায্যে ক্ষমতায় এসেছিলেন নিরো। তার মা এগ্রিপিনা দ্য ইয়াঙ্গার ছিলেন প্রথম সম্রাট অগাস্টাসের সরাসরি বংশধর। তার ভাই সম্রাট ক্যালিগুলা- নিরোর পূর্বে যিনি পরিচিত ছিলেন সবচাইতে অত্যাচারী রোমান সম্রাট হিসেবে, তার সৎ পিতামহ টিবেরিয়াসকে হত্যা করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। জুলিও-ক্লডিয়ান পরিবারের ইতিহাস ছিল ভাতৃহত্যায় সমৃদ্ধ আর টিবেরিয়াসের মৃত্যু ছিলো এর সূচনা। নিরোর জন্মের পর ক্যালিগুলা তার বোন এগ্রিপিনার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে একটি ছোট্ট দ্বীপে নির্বাসিত করেন। শিশু নিরোর শিক্ষক হিসেবে এক নর্তকীকে নিয়োগ করেন। তখনকার যুগে নর্তকী বা অভিনেতাদের সামাজিক অবস্থান ছিল অত্যন্ত নিচু। অত্যাচারী ক্যালিগুলার অধীনে শিশু নিরোর বেঁচে থাকা অনেকটা অসম্ভব ছিল। দুর্ভাগ্যবশত (!), সে অসম্ভব সম্ভব হয়ে যায় ক্যালিগুলার আকস্মিক মৃত্যুতে। যার ফলে পরবর্তীকালে আমরা দেখা পাই ভয়ংকর ‘সম্রাট নিরো’র।

২৪ জানুয়ারি, ৪১ খ্রিষ্টাব্দ। নিজস্ব এলিট প্রিটোরিয়ান রক্ষীবাহিনী কর্তৃক ছুরিকাঘাতে নিহত হন ক্যালিগুলা। প্রিটোরিয়ান বাহিনী সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করে এগ্রিপিনা’র সৎ চাচা ক্লডিয়াসকে। ‘সম্রাট ক্লডিয়াস’ টিবেরিয়াস বা ক্যালিগুলার মতো রক্তপিপাসু ছিলেন না। তিনি নির্বাসন থেকে ফিরিয়ে আনেন এগ্রিপিনাকে।

কিন্তু এগ্রিপিনা কীভাবে একজন কপর্দকহীন নারী থেকে নিজেকে রোমান সাম্রাজ্যের একজন সম্রাজ্ঞী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? আরো একবার নিজেকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেবার মতো নারী এগ্রিপিনা ছিলেন না। তিনি সম্রাট ক্লডিয়াসকে চাপ প্রয়োগ করে তার একজন কাউন্সেলকে বিয়ে করেন। পরে তাকে কৌশলে হত্যা করে তার সমস্ত সম্পত্তির মালিক হন। এ ছিল কেবলই শুরু।

৪৮ খ্রিষ্টাব্দ। ক্লডিয়াস তার নিজের স্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পর এগ্রিপিনাকে বিয়ে করেন। এগ্রিপিনা এ বিয়ের মাধ্যমে জুলিও-ক্লডিয়ান পরিবারদ্বয়কে একত্রকরণ ও সকল ভাতৃহত্যা বন্ধের টোপ রেখেছিলেন ক্লডিয়াসের সামনে। এমনকি তিনি ক্লডিয়াসকে আক্ষরিক অর্থেই বাধ্য করেছিলেন নিরোকে দত্তক নিতে এবং তার একমাত্র কন্যা ক্লডিয়া অক্টাভিয়ার সাথে বিয়ে দিতে।

৫১ খ্রিষ্টাব্দ। স্ত্রীর পরামর্শে ক্লডিয়াস তার পুত্র ব্রিটানিকাসের পাশাপাশি নিরোকে উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করেন। আর নিরো ছিলেন ব্রিটানিকাসের চেয়ে বয়সে বড়। এভাবেই এগ্রিপিনা তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। যদিও ক্লডিয়াসের মন্ত্রণাদাতারা নিরোকে উচ্ছন্নে যাওয়া এক বালক হিসেবেই দেখতেন। রাজ্য পরিচালনার চেয়ে অভিনয়, সুর আর সুরায় তার আগ্রহ ছিল ঢের। একইসাথে তার ভেতর তৈরি হচ্ছিল এক নিষ্ঠুর ব্যক্তিত্ব। রোমের জনগণ ইতোমধ্যেই তাদের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ রাজার মধ্যে আরেক ক্যালিগুলার ছায়া দেখতে পাচ্ছিল।

১৩ অক্টোবর, ৫৪ খ্রিষ্টাব্দ। হঠাৎই মারা যান সম্রাট ক্লডিয়াস। ধারণা করা হয়, ক্লডিয়াসের খাদ্য পরীক্ষককে ঘুষ দিয়ে খাবারে বিষ মিশিয়েছিলেন এগ্রিপিনা। সেটা সত্য হোক বা মিথ্যা, ফলাফল দাঁড়ায় একই। ১৭ বছরের বালক নিরো, পৃথিবীর ইতিহাসের সবচাইতে বৃহৎ সাম্রাজ্যকে বেছে নেন তার স্বেচ্ছাচারিতার উপকরণ হিসেবে।

নিরো ও এগ্রিপিনা
নিরো ও এগ্রিপিনা; Image Source: Wikimedia Commons

এগ্রিপিনা- দ্য ইয়াঙ্গার, রোমের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্র। অত্যাচারিত শৈশব কাটাবার পর নিজের দ্বিতীয় স্বামীকে হত্যা, একজন সম্রাটকে স্বকাজে ব্যবহার করার পর হত্যা- তারপর নিজের ছেলেকে সিংহাসনে বসিয়ে নিজেকে রোমান সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছিলেন তিনি। যদিও এর ফল খুব বেশিদিন সুখকর হয়নি তার নিজের জন্য। ক্ষমতায় এসে মাকে নিজের প্রধান উপদেষ্টা বানালেও পরে শিক্ষাগুরু ও বিদ্বান দার্শনিক সেনেকার পরামর্শে মায়ের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসেন নিরো। পাশাপাশি এগ্রিপিনার অমতে পপেয়া সাবিনার প্রতি অনুরক্ত হন তিনি, পরবর্তীকালে তাকে বিয়েও করেন।

ক্ষিপ্ত এগ্রিপিনা ব্রিটানিকাস ও তার চাচাতো ভাইদেরকে সাথে নিয়ে চক্রান্ত শুরু করেন। কিন্তু নিরো তার মাকে ভালোভাবেই চিনতেন। তিনি এগ্রিপিনাকে নৌকাডুবিতে হত্যা করার চেষ্টা করেন। এগ্রিপিনা কোনোভাবে সেখান থেকে বেঁচে ফিরলেও নিরো তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করার নির্দেশ দেন। কী ঘটতে যাচ্ছে, তা বুঝতে পেরে এগ্রিপিনা নিজের পেটের দিকে ইশারা করে চিৎকার করেন-

“আমাকে এখানে ছুরিকাঘাত করো, যেখানে এক দানব বেড়ে উঠেছিল!”

২৩ মার্চ, ৫৯ খ্রিষ্টাব্দ। নিহত হন এগ্রিপিনা। ক্লডিয়াসের মন্ত্রণাদাতারা ভুল ভেবেছিলেন। নিরো ‘পরবর্তী ক্যালিগুলা’ ছিলেন না। তিনি ছিলেন তার চেয়েও জঘন্য।

এর পরবর্তী বছরগুলোতে নিরো রাজকার্য ছেড়ে দিয়ে সঙ্গীত-অভিনয়-নারীসঙ্গ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি অলিম্পিকেও অংশগ্রহণ করেন। বলাই বাহুল্য, তার অংশগ্রহণ করা সবগুলো ইভেন্টে তিনিই বিজয়ী হয়েছিলেন।

৬২ খ্রিষ্টাব্দ। নিরোর উপপত্নী পপেয়া সাবিনা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। অথচ নিরো তখনো সম্ভ্রান্ত ক্লডিয়া অক্টাভিয়ার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। কলঙ্ক এড়াতে নিরো ক্লডিয়ার সাথে বিবাহবিচ্ছেদ করে তাকে নির্বাসনে পাঠান। রোমের জনগণ এর বিরোধিতা করায় তিনি ক্লডিয়াকে হত্যা করেন। প্রথমে নিজের মা, তারপর স্ত্রী। নিরোর জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে। একই বছরে তার প্রিয়পাত্র ও প্রিটোরিয়ান রক্ষীবাহিনীর প্রধান ব্যুরোস মারা যান। যিনি নিরোর সমস্ত কুকর্মের সাহায্যকারী ছিলেন এবং তাকে আগলে রাখতেন। তবে এসব নয়, নিরো কুখ্যাত হয়ে আছেন অন্য কীর্তির জন্য।

Nero Becomes Emperor of Rome | History On This Day
“রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল”; Image Source: History on this day

সময়কাল ১৮ জুলাই, ৬৪ খ্রিষ্টাব্দ। বলা হয়, নিজ প্রাসাদসহ রোমনগরী যখন আগুনে পুড়ে ছাই হচ্ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন এবং মহাকাব্য থেকে গান গাচ্ছিলেন। এ নরকযজ্ঞ চলেছিল এক সপ্তাহ ধরে। যদিও বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ট্যাসিটাসের মতে, নিরো তখন রোম থেকে কয়েক মাইল দূরে জন্মস্থান এন্টিয়ামে তার নিজস্ব প্রাসাদে ছিলেন। আগুন লাগার খবরকে নিরো গুজব বলে এড়িয়ে যান এবং হয়তোবা কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছিলেন। এ ব্যাপারে মতভেদ আছে।

এ বিশাল অগ্নিকাণ্ডের পেছনে নিরোকে দায়ী করা হলেও ট্যাসিটাসের মতে, নিরো এটা করেননি। বরং রোমে ফিরে এসে দুর্গতদের জন্য খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করেন এবং অগ্নিকাণ্ড পরবর্তী সময়ে নাকি রোমের অনেক সংস্কার ও উন্নতি সাধন করেন নিরো। এছাড়া এ অগ্নিকাণ্ডে তার নিজের প্রাসাদও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে নিরো নিজে এ অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী করেন সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদেরকে। সংখ্যালঘু-বিদেশি-শরণার্থী খ্রিস্টানরা ছিল তার সব দোষ চাপানোর জন্য আদর্শ ছিল। তাদেরকে জীবিতাবস্থায় গায়ে অগ্নিসংযোগ করে, ক্রুশবিদ্ধ করে ও বন্যপ্রাণী লেলিয়ে দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেন এবং এ উপলক্ষে উৎসব অনুষ্ঠানের ও আয়োজন করেন নিরো।

খ্রিস্টানদের উপর অত্যাচার
খ্রিস্টানদের উপর অত্যাচার; Image Source: Times Literary Supplement

এ ঘটনা নিরো’র জনপ্রিয়তা আরো কমিয়ে দেয়। অবস্থা আরো খারাপের দিকে যেতে থাকে এরপর। চক্রান্তের অভিযোগে ২৩ জন অভিজাতকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেন তিনি। যাদের মধ্যে তার শিক্ষাগুরু সেনেকাও ছিলেন। তিনি পুনরায় ‘রাজদ্রোহ বিচার’ চালু করেন। ৬৫ খ্রিষ্টাবে নিরোর শত্রুতালিকা হয়তো তলস্তয়ের গোটা ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’-এর চেয়েও দীর্ঘ হতো। একই বছরে ক্ষিপ্ত অবস্থায় অন্তঃসত্ত্বা পপেয়া সাবিনাকে পেটে লাথি মারায় মারা যান তিনি। পপেয়ার মৃতদেহ স্টাফ (মৃতদেহ সংরক্ষণ পদ্ধতি) করে সমাধিমন্দিরে রেখে দেন নিরো।

এরপর তার উন্মাদনা আরো বেড়ে যায়। তিনি ১৩ বছরের এক বালকের মধ্যে তার মৃত স্ত্রীর প্রতিচ্ছবি দেখতে পান। স্পুরোস নামের এই বালককে নিরো অপহরণ করে আনেন ও নপুংসক করে দেন। তাকে পপেয়ার বেশে সাজিয়ে রাজদরবারে নিজের পাশে বসাতেন এবং আদর করতেন। তিনি নিজে পপেয়ার চেহারার আদলের মুখোশ পরে মঞ্চে অভিনয় করতেন। বেশিরভাগ সময় বেছে নিতেন অন্তঃসত্ত্বা নারীর চরিত্র।

এর পরের বছর তিনি রাজকার্য থেকে সাময়িক বিদায় নিয়ে রোমান সাম্রাজ্যের পূর্ব প্রদেশে চলে যান এবং মঞ্চাভিনয় চালিয়ে যান। এতসব পাগলামি সত্ত্বেও পূর্ব প্রদেশে নিরো একজন ‘রকস্টার’ হিসেবে গৃহীত হন। আর কোনো সম্রাট তো জনগণের এত কাছে আসেননি। নিরো জানতেন, কীভাবে জনগণকে সামলাতে হয়। গ্রিসে, তিনি সাধুবেশে খালি পায়ে হাটতেন। তিনি যেখানেই যেতেন, সে শহরকে স্বাধীন হিসেবে মঞ্জুর করতেন।

৬৮ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে, নিরো ‘গল’ (বর্তমানে ফ্রান্স) এর রাজা ভিনডেক্সকে আঞ্চলিক কর বাড়িয়ে দেওয়ার আদেশ করেন। ক্রমশ কর বৃদ্ধিতে বিরক্ত ভিনডেক্স বিদ্রোহ করে বসেন। এখানে মজার এক কাজ করে বসেন ভিনডেক্স। তিনি স্পেনের রাজা গালাবাকে নতুন সম্রাট ঘোষণা করে বসেন। যদিও গালাবা নিরোর অনুরক্ত ছিলেন, কিন্তু পাগলাটে রাজাকে খেপাবার জন্য ভিনডেক্সের ঘোষণাই যথেষ্ট ছিল। গালাবা বাধ্য হয়ে অস্ত্র তুলে ধরেন। এদিকে নিরোর উপর বিরক্ত সিনেট ও প্রিটোরিয়ান রক্ষীবাহিনী এমন একটা বিদ্রোহের অপেক্ষাতেই ছিল।

৯ জুলাই, ৬৮ খ্রিষ্টাব্দ। ঘুম থেকে উঠে, নিরো নিজেকে নিঃসঙ্গ অবস্থায় আবিষ্কার করেন। নিরো প্রথমে তাকে সাহায্য করার জন্য ও পরে হত্যা করার জন্য চিৎকার করেন। ভবিতব্য বুঝতে পেরে সকলেই নিরোকে ছেড়ে গিয়েছিল। উন্মাদ রাজা বিলাপ শুরু করেন,

“আমার কি কোনো বন্ধু নেই, শত্রুও নেই?”

কিন্তু না, বন্ধু না থাকলেও শত্রুর অভাব ছিল না নিরোর। পরিস্থিতি অনুধাবন করে তিনি পালিয়ে যান ও নিস্তার অসম্ভব বুঝতে পেরে শেষমেশ আত্মহত্যা করেন আত্মপ্রেমে বুঁদ এই সম্রাট। মৃত্যুর আগে তিনি বিড়বিড় করছিলেন,

“আহ, আমার সাথে সাথে কত বড় একজন শিল্পীর মৃত্যু হলো!”

সেদিন সকালে, একাকী এবং ঘৃণিত হয়ে সম্রাট নিরো দুনিয়া ত্যাগ করেন। তার সাথে সাথে যবনিকাপাত ঘটে জুলিও-ক্লডিয়ান সাম্রাজ্যের।

ডোমাস অরিয়া
ডোমাস অরিয়া; Image Source: Colosseumrometickets.com

“অগ্নিকাণ্ড নিরোই ঘটিয়েছেন”- এ গুজব তার সময়ে ডালপালা মেললেও প্রতিষ্ঠিত হয় তার মৃত্যুরও প্রায় দুই শতাব্দী পরে, ক্যাসিও ডিও’র হাত ধরে। এটি আরো বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে নিরোর স্বপ্নের ডোমাস অরিয়া বা স্বর্ণগৃহ। স্থাপত্যশিল্পের অভূতপূর্ব নিদর্শন ডোমাস অরিয়া নির্মাণ করা হয় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত নিরোর প্রাসাদের উপরই। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, এটি নির্মাণের জন্যই অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন নিরো। এতে এমনকি তার ১২০ ফুটের একটি মূর্তিও সংযুক্ত ছিল। কিংবা কে জানে, হয়তো অগ্নিকাণ্ডের কদর্যতা আর বীভৎসতা মুছে ফেলার জন্যই ডোমাস অরিয়া নির্মাণ করেছিলেন তিনি। তবে এটিই পরবর্তী সময়ে ব্যবহৃত হয়েছে তার চরিত্রের সর্বোচ্চ কদর্যতার প্রমাণ হিসেবে। ‘পোয়েটিক জাস্টিস’ আর কাকে বলে!

Related Articles