Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিস্ময়ে ভরা সাভন দুর্গের কেল্লা

ভারতের বেঙ্গালুরু শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে মাগাডি রোডের নিকটে অবস্থিত জঙ্গল আর পাহাড়ে ঘেরা ছোট এক অখ্যাত গ্রাম। অল্প কয়েকটি পরিবারের বাস এই গ্রামে। দূর থেকে দেখলে গ্রামটির তেমন কোন বৈশিষ্ট্যই চোখে পড়ে না। গাঁয়ে রয়েছে দুটি প্রাচীন মন্দির, আর একটি বিশাল খাড়া পাহাড়।  সমুদ্রপৃষ্ট থেকে এর উচ্চতা ৪০০০ ফুট আর গ্রাম থেকে ২০০০ ফুট। এই গ্রামের অন্যতম আকর্ষণ হল এই খাড়া পাহাড়ের উপর অবস্থিত একটি দুর্গ।

বেঙ্গালুরু থেকে সাভন দুর্গের কেল্লার মানচিত্র

বেঙ্গালুরু থেকে সাভন দুর্গের কেল্লার মানচিত্র

দুর্গটির নাম ‘সাভন দুর্গ’। কন্নর ভাষায় এর অর্থ মৃত্যুর কেল্লা। কেল্লাটি যেমনি প্রাচীন, তেমনি অদ্ভুত এর অবয়ব। পাহাড়ের শীর্ষে অবস্থিত কেল্লাটি এখন এক ধ্বংসাবশেষ। তবে প্রশ্ন জাগে, আধুনিক কোন মেকানিজম ব্যবহার ছাড়াই কীভাবে একটি পাহাড়ের সর্বোচ্চ শীর্ষে প্রাচীনকালে এক পাথরের কেল্লা নির্মাণ সম্ভবপর হয়েছিল? এই নিয়ে স্থানীয়দের মতোই দেশ বিদেশের মানুষের মনে রয়েছে নানা কৌতুহল!

জেঙ্গলে ঘেরা সাভন দুর্গের কেল্লা

জেঙ্গলে ঘেরা সাভন দুর্গের কেল্লা

এই পাহাড়ের শীর্ষে শুধু যে কেল্লাই তৈরি করা তা কিন্তু নয়। কেল্লার পাশে রয়েছে এক পাথরের বাড়ি। পাথরের গায়ে খোদিত রয়েছে নানা কারুকার্যময় মূর্তি। তাছাড়া এই পাথরের বাড়ির মাঝখানেই রয়েছে একটি ছোট্ট ডোবা। অবাক করা ব্যাপার হল, এই ডোবার পানি কখনই শুকোয় না। কিন্তু কে প্রথম এই পাহাড়ের উপর এইসব জিনিস নির্মাণ করল? ঐতিহাসিকদের মধ্যে রয়েছে নানা মতভেদ।

তবে এই পাহাড়ের ইতিহাস জানার আগে জানতে হবে এর সম্বন্ধে। দুইটি গ্রানাইট পাথরের সম্মিলিত রূপ হচ্ছে এই পাহাড়। এর বাঁ দিকের রঙ মিশমিশে কালো। স্থানীয় ভাষায় যার নাম ‘বিলি গুড্ডা’। আর  এই পাহাড়ের ডান দিকে রয়েছে হালকা রঙের পাথর, যাকে বলা হয় ‘কারি গুড্ডা’। কী করে একই পাহাড়ের দুইদিকের রঙ দুই রকম হয় তাও এক চরম বিস্ময়ের। এই রঙের তারতম্যটা ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করলে তবেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

সাভান দুর্গের কেল্লা

সাভন দুর্গের কেল্লা

এখন আসা যাক ইতিহাস থেকে কী জানা যায় এই পাহাড় সম্বন্ধে। এই পাহাড় হতে একটি শিলালিপি পাওয়া যায়। শিলালিপি অনুসারে জানা যায়, দ্বাদশ শতকে হোয়শালা বংশের রাজা বিষ্ণু বর্ধন সর্বপ্রথম এই পাহাড়ের উপরে এক ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করেন। সেই ওয়াচ টাওয়ার থেকেই রাজার সৈন্যরা আশেপাশের সবদিক নজর রাখত। সে টাওয়ারটি এখন আর নেই। ভেঙে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এখনও এই পাহাড়ের চারদিকে ভাঙা পাথরের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়।

পাহাড়ে ওঠার মুখে পাথরের তোরণ আর নিরাপত্তা প্রহরীদের মোতায়ন করার ব্যবস্থা ছিল। ষোড়শ শতকে এসে এলাহাঙ্কা নাদা প্রভু বংশের রাজা ও বেঙ্গালুরু শহরের প্রতিষ্ঠাতা কেম্পে গৌড়া (রাজত্বকাল ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫৬৯ খ্রিস্টাব্দ) এখানে বেশ কিছুদিন গা ঢাকা দিয়েছিলেন তা এলাকার অনেকেই বিশ্বাস করেন। তিনি ষোড়শ শতকে এসে নরসিংহ মন্দির এবং বীরভদ্র মন্দির পুনরায় নির্মাণ করেন বলে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। মন্দিরে তার নামাঙ্কিত তাম্রপত্র থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। কিন্তু রাজা কেম্পে গৌড়া কেন এই এলাকাটিতে লুকিয়ে ছিলেন তাও বেশ চমকপ্রদ।

সাভান দুর্গে অবস্থিত মন্দির

সাভন দুর্গে অবস্থিত মন্দির

রাজা কেম্পে গৌড়ার সময়কালে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন অচ্যুতদেব। কেম্পে গৌড়া ছিলেন শাসক অচ্যুতদেবের অধীনে একজন সামন্ত রাজা। কিন্তু তার চরিত্র ছিল অদ্ভূত আর কাজকর্ম ছিল খাম খেয়ালিতে ভরা। তিনি নিজেকে স্বাধীন রাজা মনে করতেন। একবার তিনি নিজের নামাঙ্কিত স্বর্ণমুদ্রা চালু করেন। এটি একজন স্বাধীন রাজাই করতে পারেন। কোন সামন্ত রাজার পক্ষে তা করা ধৃষ্টতার শামিল। ফলে শাসক অচ্যুতদেব কেম্পে গৌড়ার উপর ক্ষেপে যান। অচ্যুতদেব গৌড়াকে অপরাধী ঘোষণা করেন এবং তাকে গ্রেফতারের জন্য সৈন্য পাঠান। তখন কেম্পে গৌড়া এই পাহাড়ে বেশ কয়েক মাস লুকিয়ে ছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা করা গেল না। তাকে আত্মসমর্পণ করতেই হয়। এরপর রাজাকে আনেগোন্ডির কারাগারে রাখা হয়। রাজা দোষ স্বীকার করে শাসক অচ্যুতদেবের কাছে তার কার্যক্রমের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বছর খানেক পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় ও তিনি পুনরায় রাজত্ব লাভ করেন।

রাজা কেম্পে গৌড়া

রাজা কেম্পে গৌড়া

অনেক ঐতিহাসিকরাই মনে করেন কেম্পে গৌড়া তার রাজত্ব হারানোর অনেক আগেই তিনি পাহাড়ের চূড়ায় দুর্গ ও পাথরের বাড়িটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। কিন্তু পাহাড়টি যে ধরনের খাড়া তাতে ওঠা বেশ কষ্টসাধ্য। সেখানে ওঠার মত তেমন কোন রাস্তাই নেই। সেই পাহাড়ের উপরেএকটি কেল্লা, মাটির বাড়ি কিংবা মূর্তি নির্মাণ করা কোনভাবেই সম্ভব নয়, তা দেখলেই বোঝা যায়। এ ব্যাপারে স্থানীয় পত্র পত্রিকা হতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম তথ্য পাওয়া গেছে।  তাতে কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া যায়নি।

পাহাড়ের চূড়ায় কেল্লা আর অন্যান্য জিনিসগুলার নির্মাণের জন্য পাহাড়ের উপর থেকে কোন পাথর সংগ্রহ করা হয়নি, তা উপরে উঠলেই বেশ বোঝা যায়।  পাথরের টুকরোগুলোকে যে নীচে থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে , তা বেশ স্পষ্ট। পাথরের পাদদেশে কাটা পাথরগুলো তারই সাক্ষ্য দেয়।

সাভানদুর্গের চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী

সাভন দুর্গের চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ২০০০ ফুট খাড়া উঁচুতে কীভাবে এই পাথর এবং অন্যান্য সামগ্রী তুলে আনা সম্ভবপর হল? কেননা, সেইসময় ছিল না কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি যার মাধ্যমে এই অসম্ভব কাজটি সম্ভব করা যায়। এর উত্তর এখনও কোন ঐতিহাসিক বা কোন প্রযিুক্তিবিদও দিতে সক্ষম হননি।

খাড়া পাহড়ের উপর সাভান দুর্গ

খাড়া পাহাড়ের উপর সাভন দুর্গ

তবে প্রযুক্তিবিদদের কেউ কেই এই মতামত দেন যে, মোটা রশি বা লোহার শিকল দিয়ে বেঁধেই এসব সামগ্রী পাহাড়ের উপর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আর উপরে মানুষের সহায়তায় তা টেনে তোলা হয়েছিল। এজন্য পাহাড়ের এক জায়গায় খাঁজমতো একটি জায়গা তৈরি করা হয়েছিল যাতে নীচ থেকে তুলে আনা সাজসরঞ্জাম জমা রাখা যায়। আর এ কাজে জড়িত ছিল প্রচুর মানুষ। ব্যয় হয়েছিল প্রচুর সময়।

পাথরের পাদদেশে কাটা পাথরের চিহ্ন

পাথরের পাদদেশে কাটা পাথরের চিহ্ন

পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত হয়েছিল সেই কেল্লাটি, বর্তমানে যার ধ্বংসাবশেষটুকুই শুধু রয়েছে। এই পাহাড়ে উঠবার জন্য যেহেতু কোন ‍সিঁড়ি নেই, নেই কোন ধরার অবলম্বন, তাই পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। এর ফলে ঘটতে পারে মর্মান্তিক মৃত্যু। তাই এই পাহাড়ে ওঠার জন্য স্থানীয় আদিবাসীদের সাহায্য নিতে হয়। পাহাড়ের নাড়িনক্ষত্র তাদের মুখস্ত। তাদের সাহায্য নিয়ে পায়ে রবার সোলের জুতো পরে তবেই এটিতে ওঠা সম্ভব। গ্রামবাসীরা পর্যটকদের নিরাপদে পথ দেখিয়ে উপরে নিয়ে যান কোন রকম সমস্যা ছাড়াই।

সাভান দুর্গে অভিযাত্রীদের ট্রেকিং

সাভন দুর্গে অভিযাত্রীদের ট্রেকিং

সাভন দুর্গ, স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয়ে থাকে মৃত্যুর কেল্লা। নিরাপদে যদি না উঠতে পারা যায় তাহলে মৃত্যু যেখানে অবিশ্যম্ভাবী, সেজন্যই এই নাম। এক সময় পর্যটকদের তেমন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে এ স্থান না থাকলেও বর্তমানে দেশ বিদেশের ট্রেকিং পাগল অভিযাত্রীদের আনাগোনা হরহামেশাই চোখে পড়ে। অজানাকে জানা আর অদেখাকে দেখার নেশায় তারা জড়ো হোন এই পাহাড়ের পাদদেশে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিক্রম করতে থাকেন দুর্গম এই পাহাড়। আমজনতার কাছে এ জায়গা পর্যটনমুখর না হলেও সকলের কাছে সাভন দুর্গ তাই এক বিস্ময়েরই নাম।

This article is in Bangla language. It's about the Savan Fort of India.

References

1. www.india.com/travel/articles/bangalore-to-savandurga-how-to-reach-savandurga-hill-from-bangalore-by-road/

2. www.trawell.in/karnataka/bangalore/savandurga-hills
3. hibengaluru.com/savandurga/

Featured Image: anutoursandtravels.com

Related Articles