
এটিস অন্থনিয়াস গুনাওয়াং আগুং
সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৮ সাল। দিনটি ছিলো শুক্রবার, সময় বিকেলবেলা। ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপ সুলাওয়েসির পালু বিমানবন্দরে চলছিলো নিত্যদিনের ব্যস্ততা। কিন্তু অন্যান্য দিনের মতো দিনটি স্বাভাবিক ছিল কি? ঘটনাস্থল মুটিয়ারা এসআইএস আল জাফরি বিমান বন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার। ২১ বছর বয়সী এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার অন্থনিয়াস গুনাওয়াং আগুং তখন দায়িত্বরত ছিলেন। কিছুক্ষণ পরই পালু বিমানবন্দর থেকে পাইলট ও ক্রু সহ ১৪৭ জন যাত্রী নিয়ে মাকাসসারের উদ্দেশ্যে উড়াল দেবে বাটিক এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৬৩২১।
হঠাৎ, কন্ট্রোল টাওয়ারে বসে আগুং তীব্র ভূকম্পন অনুভব করলেন। পেছনে ফিরে দেখলেন সহকর্মীরা বিপদের আভাস পেয়ে প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত কন্ট্রোল টাওয়ার ত্যাগ করছেন। তারা আগুংকেও অনুরোধ করলেন সঙ্গে আসার জন্য। ভূকম্পনের মাত্রা তখন বেড়েই চলেছে। কিন্তু আগুং তার আসন ছেড়ে নড়লেন না। দৃঢ়ভাবে কানে হেডসেট নিয়ে তিনি তখন বাটিক ৬২৩১ এর পাইলটকে সতর্ক করে চলেছেন।

ইতিমধ্যে তীব্র ভূকম্পনে বিমান বন্দরের রানওয়েতে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিমানচালক মাটেলাও বিমানের ককপিটে বসে টের পেলেন বিমান যেন ডানে-বাঁয়ে দুলছে। তিনি সহকারী বিমান চালককে দ্রুত বিমানবন্দর ত্যাগ করার নির্দেশ দিলেন। সেসময় তার কানে বেজে চলেছে স্থির নিস্কম্প নির্দেশনা একইসাথে দ্রুত বিমান নিয়ে আকাশে ওড়ার তাগিদ। হেডসেটে ভেসে আসা কন্ঠস্বরটি ছিলো আগুংয়ের।
বিমানটি আকাশে উড়ার ১ মিনিট পূর্ণ হবার পূর্বেই ৭.৫ মাত্রার তীব্র ভূমিকম্প পালুতে আঘাত হানে। চারতল বিশিষ্ট কন্ট্রোল টাওয়ারটি পুরোপুরি বিধস্ত হতে চলেছে টের পেয়ে কর্তব্য পরায়ন আগুং জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন। উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তাকে নেবার পূর্বেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

পরবর্তীতে ৪৪ বছর বয়সী পাইলট রিকোসেটা মাফেলা, যিনি ফ্লাইট ৬২৩১ উড়ানোর দায়িত্বে ছিলেন তিনি বলেন, সে মুহূর্তে যদি আগুং কন্ট্রোল টাওয়ার ত্যাগ করতেন তবে বিমানের কোনো যাত্রী প্রাণে বাঁচতেন না। কিন্তু, এখানেই কি শেষ? না, প্রিয় পাঠক যুগে যুগে ঘটেছে এমন আরও নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের ঘটনা যা অতীতে ঘটুক বা বর্তমান সৃষ্টি করেছে ইতিহাস। এমন কিছু আত্মত্যাগের ঘটনায় সাজানো হয়েছে আজকের লেখাটি।
লেফটেন্যান্ট জন আর ফক্স
ডিসেম্বর ২৫, ১৯৪৪। স্থান ইতালীর বার্গায় অবস্থিত পাহাড়ি গ্রাম সোমোকোলোনিয়া।
উৎসব চলছিলো গ্রামটিতে। সেদিন যে বড়দিন। কিন্তু ঘটনার প্রেক্ষাপট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যেখানে প্রতিমুহূর্তে মিত্রবাহিনীর সাথে চলছে নাৎসি বাহিনীর তীব্র লড়াই। ২৯ বছর বয়সী মার্কিন মিত্র বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জন আর ফক্স তার ৯২তম পদাতিক বাহিনীর সাথে অবস্থানরত। কিছু সময়ের জন্য হলেও গ্রামটিকে নাৎসি বাহিনীর কবল হতে মুক্ত করেছে মিত্রবাহিনী। বড়দিন উপলক্ষে সহকর্মীদের সাথে নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে চকলেট ও পনির বিতরণ ও প্রায় শেষ। প্রতি মুহূর্তে নাৎসি বাহিনীর পুনরায় হামলার আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে মিত্র বাহিনী।

২৬ ডিসেম্বর ভোরবেলা সকলের আশঙ্কাকে সত্যে পরিণত করে হামলা চালালো নাৎসি বাহিনী। সেদিন ভোরবেলা ফক্স গোলন্দাজ বাহিনীর হয়ে সীমানায় নজরদারি করার দায়িত্বে ছিলেন। তার উপর নির্দেশ ছিলো সকল ধরনের গতিবিধির উপর নজর রাখার পাশাপাশি এমন স্থানের সন্ধান জানানো যেখানে নিরাপদে সৈন্য বাহিনীর প্রয়োজনীয় যুদ্ধাস্ত্র, যানবাহন ও উপকরণ সরবরাহ করা সম্ভব। ফক্স একটি বাড়ির দোতলা থেকে চারদিকে নজর রাখছিলেন।
নাৎসি বাহিনীর আক্রমণ এতটাই তীব্র ছিলো যে মিত্রবাহিনী সম্মুখ যুদ্ধে টিকতে না পেরে পিছু হটতে বাধ্য হয়। কিন্তু পিছু হটার মুহূর্তে মিত্র বাহিনীর কিছু সৈন্য স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে পেছনে রয়ে যায়। উদ্দেশ্য ছিলো সহকর্মীদের নিরাপদে পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। এই সেচ্ছাসেবীদেরও একজন ছিলেন ফক্স। সহকর্মীদের প্রাণ রক্ষায় ফক্স নিজের কাঁধে গোলন্দাজদের আত্মরক্ষামূলক আঘাত হানার জায়গা দেখানোর দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন। নিঃস্বার্থ এই ত্যাগ মিত্রবাহিনীকে নিরাপদে পিছু হটার সুযোগ করে দিয়েছিলো। সেই সুযোগকে সঙ্গী করে নতুন রণকৌশল খাটিয়ে মিত্রবাহিনী পুনরায় ফিরে পেয়েছিলো সোমোকোলোনিয়ার দখল।

লেফটেন্যান্ট জন আর ফক্স ছিলেন জীববিজ্ঞান ও বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক। সুতীক্ষ্ণ মেধা ও হিসাবী মন ফক্সকে পরিণত করেছিলো এক আদর্শ সেনা অফিসারে। যখন তিনি মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে গোলন্দাজ বাহিনীর জন্য নজরদারি রাখার দায়িত্ব পালন করছিলেন তখন কি ম্যাসাচুসেটসে থাকা স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ের কথা একবারও মনে আসেনি তার? তিনি কি একবারও ভাবেননি যুদ্ধে তিনি শহীদ হলে তারা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? নিশ্চয়ই ভেবেছিলেন। কিন্তু সবকিছুর ঊর্ধ্বে তিনি দেশপ্রেম ও কর্তব্যের ডাকে সাড়া দেওয়াকেই শ্রেয় ভেবেছিলেন।
লেফটেন্যান্ট ফক্স রণক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাবার যথেষ্ট সময় পেয়েছিলেন। এমনকি তার উচ্চপদে থাকা অফিসাররা ধরে নিয়েছিলেন, ফক্স জীবন বাঁচাতে স্বেচ্ছাবাহিনী নিয়ে পিছু হটবেন। কারণ নাৎসি বাহিনীর সৈন্যরা সংখ্যায় এত বেশি ছিলো যে, তাদের হারানো অসম্ভব ছিলো। কিন্তু ফক্স বা তার সাথীরা আত্মসমর্পণও করেননি, পিছুও হটেননি।
২০ জনের ছোট দল নিয়ে বিশাল নাৎসি বাহিনীর মোকাবেলা করে বেঁচে থাকার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। এই ধ্রুব সত্যটি সকলেই উপলদ্ধি করতে পেরেছিলো। সকাল নয়টার মধ্যেই প্রতিরোধ ও আত্মরক্ষার লড়াই সোমোকোলোনিয়ার অলিগলিতে হাতাহাতির লড়াইয়ে রূপ নেয়। ততক্ষণে মিত্রবাহিনীর স্বেচ্ছাসেবীদের এক-তৃতীয়াংশ হয় মারা গিয়েছে, নয়তো গুরুতরভাবে আহত।
এদিকে দোতলা ভবনে নিজের লুকোনো অবস্থান হতে ঠাণ্ডা মাথায় গোলন্দাজ বাহিনীকে হামলার নির্দেশনা দিয়ে চলেছে ফক্স। তখন মধ্য দুপুর। রেডিওতে ফক্স গোলন্দাজ বাহিনীকে অনুরোধ জানালো তাদের অবস্থান হতে ৬০ গজ দূরবর্তী স্থানে হামলা করতে। গোলন্দাজ বাহিনীর অফিসার তখন ফক্সকে সতর্ক করে বললেন-
– তুমি কি পাগল হলে? তোমার দেখানো জায়গায় হামলা করলে গোলার আঘাতে তুমিও মারা পড়বে।
– আমি অনুরোধ জানাচ্ছি বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে নির্দেশিত স্থানে হামলা চালান। আমার যা হয় হবে, কিন্তু প্রতিপক্ষ বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আঘাত হানুন।
লেফটেন্যান্ট ফক্সের অটল জেদের কাছে হার মেনে গোলন্দাজ বাহিনীর অফিসার হামলার নির্দেশ দেন। কামানের শেলের অনবরত আঘাতে নির্ধারিত এলাকার চারপাশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। নাৎসি বাহিনীতে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। সেই হামলায় লেফটেন্যান্ট জন আর ফক্স শহীদ হন। তার মৃতদেহ যখন খুঁজে পাওয়া যায় তখন চারপাশে ছিল শতাধিক নাৎসি সৈন্যের মরদেহ। কর্তব্য পালনের খাতিরে শহীদ হওয়া বীর সেনানী লেফটেন্যান্ট জন আর ফক্সকে আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে ৫০ বছর পর মেডেল অব অনারে ভূষিত করা হয়।
আরল্যান্ড ডি উইলিয়ামস
জানুয়ারি ১৩, ১৯৮২ সাল। এই দিনে এয়ার ফ্লোরিডার বোয়িং ৭২৭ বিমানটি দুঘটনা কবলিত হয়ে ওয়াশিংটন ডিসির পটোম্যাক নদীতে আছড়ে পড়ে। মুহূর্তেই ৭৮ জনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার কারণ ছিলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

এয়ার ফ্লোরিডা ফ্লাইটটি শেষবারের মতো ৭৪ জন যাত্রী এবং ৫ জন ক্রুকে নিয়ে ভার্জিনিয়ার আরলিংটনের ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে উড়েছিল। বিমানটি সন্ধ্যার কিছু পূর্বে মায়ামি থেকে ওয়াশিংটন এসে পৌঁছায়। স্বল্প বিরতি নিয়ে বিমানটির ফ্লোরিডায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত তুষারপাত ও রানওয়েতে বরফ জমে যাবার কারণে ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিলো।
যখন বিমানবন্দর পুনরায় সচল হয়, তখন বিমানটিকে রাসায়নিক অ্যান্টি-ফ্রিজের সাহয্যে বরফ মুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু বরফের কারণে বিমানটিকে রানওয়ে পর্যন্ত আনা সম্ভব হচ্ছিলো না। অবশেষে এটি বিমানবন্দরের একমাত্র ব্যবহারযোগ্য রানওয়েতে আনা সম্ভব হয়। কিন্তু বিমান ওড়ার পূর্বে রানওয়ের বরফ সরাতেই পয়তাল্লিশ মিনিট সময় চলে যায়।
ফ্লাইট বিলম্বিত করতে না চাওয়ায় পাইলট, ল্যারি হুইটন বিমানটিকে পুনরায় অ্যান্টি-ফ্রিজ করার ঝামেলায় যাননি। এমনকি বিমানটির পাইলট ও কো-পাইলট প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যবহৃত বিমানের নিজস্ব অ্যান্টি-ফ্রিজ সিস্টেমও চালু করতে ব্যর্থ হন। অ্যান্টি-ফ্রিজ সিস্টেম চালু না হবার বিষয়ে পাইলট ও কো-পাইলট নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, বৈরী আবহাওয়ায় অ্যান্টি-ফ্রিজ সিস্টেম তেমন কোনো উপকারে আসতে পারতো না। নিছক মিথ্যা নিরাপত্তার আশ্বাসে আকাশ পথ পাড়ি দেয়া আর নিজেদের চেষ্টায় পাড়ি দেওয়া একই কথা। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ই বিমানের দুই ডানায় বরফ জমে যায়। রানওয়ে ধরে কিছু সময় চলেও আকাশে ওড়ার মতো প্রয়োজনীয় উচ্চতা অর্জনে পাইলটদ্বয় ব্যর্থ হন।
এয়ার ফ্লোরিডার বোয়িং ৭২৭ বিমানটি উড্ডয়নের ত্রিশ সেকেন্ড পরই পটোম্যাক নদীর উপর ফোরটিন্থ স্ট্রিট সেতুতে বিধ্বস্ত হয়। সেতুটির অবস্থান ছিলো রানওয়ে থেকে মাত্র এক মাইল দূরে। সেতুতে চলমান সাতটি গাড়ি বোয়িং ৭২৭ এর আঘাতে বিধ্বস্ত হয় এবং বিমানটি পটোম্যাক নদীর হিমায়িত পানির মধ্যে আছড়ে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় বিমানে অবস্থানরত ৭৩ জন যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন, নদীতে অবস্থানকালীন মাত্র ছয়জন যাত্রী বেঁচে ছিলেন। একই দুর্ঘটনায় চারজন মোটরসাইকেল আরোহীর ও মৃত্যু হয়।
সেই দিন ওয়াশিংটনের ভয়াবহ যানজট উদ্ধার কর্মীদের ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর কাজটি কঠিন করে তুলেছিলো। বরফ আবৃত নদীতে আটকে থাকা জীবিত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা জনতা কী করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলো না। অবশেষে, একটি পুলিশ হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় এবং খুব ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনের মাধ্যমে বেঁচে থাকা লোকদের সহায়তা করেছে।

এই ঝুঁকিপূর্ণ উদ্ধার অভিযানে দুজন মানুষ নিজেদের প্রাণ বাজি রাখেন। তারা হলেন আর্ল্যান্ড উইলিয়ামস এবং লেনি স্কুটনিক। ষষ্ঠ যাত্রী হিসেবে পরিচিত উইলিয়ামস বিমান দুর্ঘটনা হতে বেঁচে গিয়েছিলেন এবং নিজের জন্য লাইফ জ্যাকেট গ্রহণ করার পরিবর্তে অপরিচিত মানুষের জীবন বাঁচাতে তা দিয়ে দিয়েছিলেন। উইলিয়ামস ছিলেন এই দুর্ঘটনার প্রথম অবস্থায় বেঁচে গিয়েও অন্যকে বাঁচাতে ডুবে মারা যাওয়া একমাত্র যাত্রী।
উইলিয়ামস যখন ডুবে যাচ্ছিলেন তখন তাকে বাঁচাতে স্কুটনিক ও রজার পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত উইলিয়ামস পটোম্যাকে ডুবে যান। নিঃস্বার্থ ত্যাগের জন্য স্কুটনিক, রজার এবং উইলিয়ামস কোস্ট গার্ড গোল্ড লাইফ সেভিং পদক পেয়েছেন। পরবর্তীতে ফোরটিন্থ স্ট্রিট সেতুটি উইলিয়ামস এর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে আরল্যান্ড ডি উইলিয়ামস জুনিয়র মেমোরিয়াল ব্রিজ নামে নামকরণ করা হয়।
ফোর চ্যাপলেইন্স
জর্জ এল ফক্স, আলেকজান্ডার ডি গুড, ক্লার্ক ভি পোলিং এবং জন পি ওয়াশিংটন। যৌথভাবে তারা ‘ফোর চ্যাপলাইনস’ নামে ইতিহাস বিখ্যাত। শুধুমাত্র অন্যকে বাঁচাতে নিজেদের জীবন দেওয়ার জন্য নয়, বরং অনুপ্রেরণা হয়েও তারা মার্কিনীদের স্মৃতিপটে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। ঘটনার প্রেক্ষাপট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
ফেব্রুয়ারি ৩, ১৯৪৩ সাল।
ইউএস এটি ডরচেস্টার নামক এক মার্কিন সামরিক জাহাজ ৯০২ জন সামরিক বাহিনীর সদস্য ও সাধারণ পেশাজীবী নিয়ে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে নিউ ফাউন্ডল্যান্ড হতে গ্রিনল্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলো। গ্রিনল্যান্ড থেকে ১০০ মাইল দূরত্বে থাকাকালীন জার্মান ইউ-বোট দ্বারা ডরচেস্টার আক্রান্ত হয়। টর্পেডোর আঘাতে জাহাজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এই সময় সকলের সহায়তায় এগিয়ে আসেন ৪ নির্ভীক পুরুষ। ধর্ম, বিশ্বাস, মতবাদ ও অবস্থান হতে তারা চারজন ভিন্ন হলেও মানুষের জীবন বাঁচাতে তারা এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করেন। তাদেরকে ইতিহাস ফোর চ্যাপলেইন্স বলেছে। কারণ তাদের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিলো হার্ভার্ডের আর্মি চ্যাপলাইন্স স্কুলে।

ফক্স ছিলেন মেথডিস্ট মন্ত্রী, গুয়েড ছিলেন পিএইচডি ও রাবি (ইহুদিদের ধর্ম গুরু), ওয়াশিংটন ছিলেন একজন ক্যাথলিক যাজক এবং ক্লার্ক ছিলেন প্রোটেস্ট্যান্ট, যিনি আমেরিকার সংস্কারিত চার্চের ভক্ত ছিলেন। ইতিহাস তাদের সবাইকে যেন এই বিশেষ দিনটির জন্য একত্রিত করেছিল। সেই ভয়াল রাতে ২৩০ জন মানুষ বেঁচে যায়। তারা সবাই এই চারজনের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের সাক্ষী। শেষ বেঁচে থাকা মানুষটিকে উদ্ধার করার পরও তারা জাহাজ ছাড়েননি। নিজেদের লাইফ বোটটিও তুলে দিয়েছিলেন সহযাত্রীদের প্রাণ বাঁচাতে। মাত্র ১৮ মিনিটে সমুদ্রের গর্ভে হারিয়ে যায় ডরচেষ্টার, সাথে দ্য ফোর চ্যাপলেইন্স। ১৯৬১ সালে, মার্কিন কংগ্রেস ফোর চ্যাপলেইন্সকে মরণোত্তর বিশেষ পদকে ভূষিত করে। পোষ্ট স্ট্যাম্প, মূর্তি, চ্যাপেল ও মুদ্রায় তাদের স্মৃতি আজও বিরাজমান।