Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

শাহজাদা মুস্তাফা (২য় পর্ব): সুলতান সুলেমান কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কারণ

শাহজাদা মুস্তাফাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল সাফাভিদের বিরুদ্ধে নাহচিভান অভিযান পরিচালনা করার সময়। কিন্তু তাকে হত্যা করার পর সেই অভিযান অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। এর পেছনে অবশ্য অনেক ঘটনা রয়েছে। সেদিকে নজর দেওয়া যাক।

১৫৩৯ সালে পূর্ব আনাতোলিয়া থেকে অটোমান সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর কিজিলবাস বাহিনী সেখানকার স্থানীয়দের উপর অত্যাচার শুরু করে। ফলে সেখানে আবারো সেনা উপস্থিতি বাড়ানো এবং অভিযান পরিচালনা করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু এই অভিযানে কে নেতৃত্ব দেবেন, সেটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।

১৫৪৮-৪৯ সালের পর প্রায় তিন বছর কোনো অভিযানে যাননি সুলতান সুলেমান। এদিকে রুস্তম পাশার অনুরোধে আহমেদ পাশা ট্রানসেলভেনিয়া অভিযানে চলে যান। ফলে এবারো রুস্তম পাশাকে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে সুলেমান রাজধানী থাকতে চাচ্ছিলেন।

সুলতান ভেবেছিলেন, এর আগে ১৫৩৩-৩৬ সালে দুটি সেনা অভিযানে রুস্তম পাশা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাই এবারের শীতে সেনারা তার সাথে পূর্বাঞ্চল অভিযানে যেতে রাজি হবে। আর যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে বসন্তে তিনি নিজেও যোগ দেবেন।

এদিকে রুস্তম পাশা শুধু রুমেলি থেকে আসা সেনাদের সমবেত করে, তাদের সংগঠিত করায় ব্যস্ত ছিলেন। ১৫৫২ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি প্রায় ৫০ হাজার সেনা নিয়ে ইস্তাম্বুল ত্যাগ করেন।

তিনি ধারণা করেছিলেন, তাকে কায়সেরি পর্যন্ত যেতে হবে। কিন্তু রুস্তম পাশা এতদূর যেতে চাননি। তার ভয় ছি্‌ সুলতানের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে পড়লে জেনেসারিদের সহায়তা নিয়ে সিংহাসন দখল করতে পারেন শাহজাদা মুস্তাফা।

রুস্তম পাশার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ওজান গুভেন;  Image Source: Magnificent Century (Muhteşem Yüzyıl)

প্রাথমিকভাবে এই অভিযানে সাফাভিদের সাথে রুস্তম এবং সুলতান সুলেমানের যুদ্ধ করার কোনো অভিপ্রায় ছিল না। বরং চেয়েছিলেন সাফাভিদের শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করতে।

অটোমানদের সাথে যুদ্ধ করতে সেই সময় অনেক রাজ্য ভয় পেয়েছে। সাফাভিরাও এর ব্যতিক্রম নয়৷ এই সুবিধা অটোমানরা ইতোমধ্যে হাবসবুর্গের সাথে কাজেও লাগিয়েছে। এই পরিকল্পনা থেকে রুস্তম পাশা তার সেনা নিয়ে রাজধানী থেকে দূরবর্তী পূর্বাঞ্চলে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি।

উজির যখন তার সেনাদের নিয়ে আনাতোলিয়ায় আসলেন, তখন মুস্তাফার ভাগ্য নির্ধারণের মতো এক পরিস্থিতি তৈরি হয়। একদিকে হুররাম ও রুস্তাম যেমন মুস্তাফাকে সরিয়ে দিতে পরিকল্পনা করছিলেন, শাহজাদাও তখন সেনা ও প্রভাবশালী আমলাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করছিলেন। উভয় পক্ষ নিজেদের দিক থেকে রাজনৈতিক চাল দিচ্ছিলেন।

রুস্তম সত্যিকার অর্থেই মুস্তাফাকে একজন বিদ্রোহী শাহজাদা বানানোর পাঁয়তারা করছিলেন। প্রজাদের কাছে তাকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনি সেনাদের মধ্যে প্রচার করেন যে, সুলতান সুলেমান স্বেচ্ছায় শাহজাদাকে সিংহাসন ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু তিনি তা হতে দেননি। তবে সেই সময় মুস্তাফা চাইলে রুস্তম পাশাকে তার ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে পারতেন। তার সামান্য একটি পদক্ষেপই যথেষ্ট ছিল৷ কিন্তু উজিরে আযমের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া মানে সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা।

শাহজাদা মুস্তাফার চরিত্রে অভিনয় করেছেন মেহমেত গুনসুর; Image Source: milliet.com.tr

১৫৫৩ সালের শীতে, শাহজাদা মুস্তাফার এক বেপরোয়া সিদ্ধান্ত তার শত্রুদের এক মূল্যবান সুযোগ তৈরি করে দেয়। সুলতান সুলেমান মনে করতেন শাহজাদার প্রতি সেনাদের যে অগাধ সমর্থন এবং তিনি যে তা গ্রহণ করছেন, এটি এক প্রকারের বিদ্রোহ। কারণ এর মধ্যে সাম্রাজ্যে সুলতানের সম্মান ও গুরুত্ব কমে যায়। তবে এরপরও জানা দরকার আনাতোলিয়ায় আসলে কী হয়েছিল?

আলি নামে এক ইতিহাসবেত্তা সেই সময়ের ঘটনা তুলে ধরে লিখেছেন:

সেই সময় উজিরে আযম এবং রাজপরিবারের জামাতা রুস্তম পাশাকে সেনা অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। অভিযানের একসময় তিনি কারামান প্রদেশের আকসারায় জেলাতে উপস্থিত। ঠিক তখন একমাত্র ঈশ্বর জানেন কীভাবে যেন কিছু গুজব সেনাদের মধ্যে প্রচার হয়ে যায়। কিছু নির্বোধ লোক কোনোভাবে সেনাদের শাহজাদা মুস্তাফার প্রতি আনুগত্য প্রকাশের প্রস্তাব দেন এবং তাদের শাহজাদাকে বলতে বলেন,

“তোমার মহৎ বাবার বয়স হয়েছে। তিনি চলাফেরা করতে এবং অভিযান পরিচালনা করতে অক্ষম। এ কারণেই তিনি রুস্তম পাশাকে সেনা অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন এবং তাকে আনাতোলিয়ায় পাঠিয়েছেন। এই পাশা আপনার প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ। কিন্তু আপনি যদি এখন শিবিরে আসেন এবং তাকে হত্যা করেন। তাহলে আপনার ভবিষ্যতের কার্যোদ্ধার হবে।”

ওপরের লেখায় একটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা হলো ‘নির্বোধ’। শাহজাদা মুস্তাফা বিশ্বাস করতেন, কিছু সেনা রুস্তম পাশাকে হত্যা করে তার বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে চায়। তিনি জানতে্‌ রুস্তম পাশা তাকে সিংহাসনে চান না। কিন্তু এরপরও মুস্তাফা সেনাদের আহ্বানে সাড়া দেননি কেন? এর উত্তর হচ্ছে তিনি ছিলেন সরল। অথবা তিনি প্রতারিত বা ভুল পথে পরিচালিত হয়েছেন।

নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন সুলতান সুলেমানের যোগ্য পুত্র শাহজাদা মুস্তাফা; Image Source: Alchetron

হুররাম সুলতানের জীবনকাহিনী নিয়ে ভেনিসের এক লেখকের ‘রেলাজিওনে অ্যানোনিমা’। এই বইতেও লেখক আনাতোলিয়ার ঘটনা তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন:

ইস্তাম্বুল থেকে কোনিয়া পৌঁছানোর ঠিক দুইদিন আগে একটি জায়গায় এসে পৌঁছায় অটোমান সেনারা৷ সেখান থেকে আমাসিয়া যাওয়ার পথ ছিল, যেখানে শাহজাদা মুস্তাফা থাকতেন।

রুস্তম পাশা যখন সেখানে পৌঁছালেন, তখন অধিকাংশ সেনা কোনিয়ার পথে চলে গেছে। কিন্তু জেনেসারিরা কোনিয়ার পথে না গিয়ে আমাসিয়া গিয়ে শাহজাদা মুস্তাফাকে সম্মান প্রদর্শন করে আসতে চাইলেন। যাকে তারা ভবিষ্যতের সুলতান হিসেবে একপ্রকার মেনেই নিয়েছেন।

রুস্তম পাশা তখনই পরিস্থিতি বুঝতে পারলেন এবং তার জন্য যে বিপদ থাকতে পারে তা আন্দাজ করতে পারলেন। তখন তিনি আদেশ দিলেন তাকে ছেড়ে কোনো সৈন্য যেন অন্য কোথাও না যান। তার সাথে সবাইকে কোনিয়া যেতে হবে।

কিন্তু জেনেসারিরা তার আদেশ অমান্য করেই আমাসিয়ার পথ ধরেন। অন্যদিকে, রুস্তম পাশা কোনিয়ার দিকে চলে যান।

জেনেসারিরা আমাসিয়া পৌঁছে শাহজাদা মুস্তাফার হাতে চুম্বন করলেন। শাহজাদা তাদের বাহারি খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করার পাশাপাশি সবাইকে স্বর্ণমুদ্রা উপহার দেন। পরের দিন জেনেসারিদের কোনিয়া পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ তারা গিয়ে দেখেন রুস্তম পাশা তাদের আগেই সেখানে পৌঁছে গেছেন।

তখন রুস্তম পাশার হাতে ইস্তাম্বুল থেকে আসা একটি চিঠি ছিল৷ চিঠিতে জানানো হয় সুলতান সুলেমান খুবই অসুস্থ এবং তার বাঁচার আর কোনো সম্ভাবনা নাই।

এমন খবর মুস্তাফাও পেয়েছিলেন। খবর পাওয়ার সাথে সাথে তিনি ইস্তাম্বুল যাওয়ার প্রস্তুতি। খবর রটে যায় শাহজাদা মুস্তাফা এক লাখ সেনা নিয়ে রাজধানীর উদ্দেশ্য রওনা হয়েছেন।

কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা ছিল সবেমাত্র পাঁচ হাজার। তবে তাদের একজন সেনা তিনজনের সাথে লড়াই করতে সক্ষম ছিলেন।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে সুলতান সুলেমানের অসুস্থের খবরটি ছিল মিথ্যা। শাহজাদা মুস্তাফাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য উজিরে আযম সুনিপুণভাবে মিথ্যা খবরটি মুস্তাফার কাছে পৌঁছে দেন।

ওপরের লেখা থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, সুলতান সুলেমান জেনেসারিদের ওপর নিজের কর্তৃত্ব প্রায় শূন্য। যা তাকে বৈধ সুলতানের স্থান থেকে কিছুটা দূরে ঠেলে দিয়েছিল। কেননা উজিরে আযমের স্থান সুলতানের পরেই৷ তাকে সেনাদের সাথে পাঠানো মানে পরোক্ষভাবে সুলতান সেখানে উপস্থিত। কিন্তু জেনেসারিরা ভালোভাবে জেনেও রুস্তমকে অমান্য করে শাহজাদা মুস্তাফার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, মুস্তাফা তার হাতে জেনেসারিদের চুম্বন গ্রহণ করেছিলেন। যার একমাত্র অধিকার ছিল সুলতান সুলেমানের। যদি মুস্তাফা এই অভিবাদন ফিরিয়ে দিতেন, তাহলে হয়তো তিনি বাবার চোখে বিদ্রোহী শাহজাদা হতেন না।

সুলতান সুলেমান জীবিত অবস্থায় রাজধানীতে থাকার পরও শাহজাদা হিসেবে তার এমন কাজ গ্রহণযোগ্য ছিল না। তবে মুস্তাফা এই কাজ বুঝে করেছিলেন, নাকি আবেগের বশবর্তী হয়ে করেছিলেন তা বলা কঠিন।

শাহজাদা মুস্তাফা; Image Source: Milliet.com.tr

এদিকে সুলতান সুলেমানের অসুস্থতার গুজব যখন সৈন্য শিবিরে এসে পৌঁছায়, তখন সেনাদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়। এর মধ্যে মুস্তাফাও রাজধানীর উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছিলেন, যাতে তার অন্য ভাইদের আগেই তিনি ইস্তাম্বুলে উপস্থিত থাকতে পারেন।

তিনি তার সেনাদের দ্রুত প্রস্তুত হতেও বলেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি ইস্তাম্বুলে আসেননি। সম্ভবত তিনি কোনো দূত মারফত সুলতান সুলেমানের খবর নিয়েছিলেন।

এদিকে রুস্তম পাশা তার সৈন্যদের নিয়ে মধ্য আনাতোলিয়ার আকসারায় এসে পৌঁছালে প্রচুর তুষারপাতে সৈন্যরা আটকে যায়৷ এরপরও রুস্তম সৈন্যদের নিয়ে ধীরে ধীরে অনিচ্ছুক এক যাত্রাপথে এগিয়ে যেতে থাকেন। তখন তার সৈন্যরা বলেন,

যদি কোনো শত্রু থাকে, তাহলে চলুন তাদের পরাজিত করি। নয়তো ইস্তাম্বুলে ফিরে যাই।

জবাবে রুস্তম জানান, এক্ষেত্রে তিনি সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। কোনিয়ার যাওয়ার পর সুলতানের আদেশ পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তখন সৈন্যরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

রুস্তম পাশা নিজেও বুঝতে পারেন বিশাল বাহিনী পরিচালনা করার মতো দক্ষতা নেই। তবে তিনি জানতেন মুস্তাফা যদি একবার অগ্রসর হন, তাহলে সব সৈন্য তার পক্ষে চলে যাবে। তিনি নিজে অনিরাপদ পরিস্থিতিতে পতিত হবেন।

তবে মুস্তাফার কিছু পদক্ষেপ এবং তার প্রতি সৈন্যদের অগাধ আনুগত্য দিনশেষে হুররাম এবং রুস্তমকে লাভবান করেছিল। সেসময় রুস্তম কোনিয়াতে অবস্থান করছিলেন। তিনি আর বেশিদূর অগ্রসর না হয়ে সেখানেই অবস্থান নেন। তিনি সেমসি আগা ও চাভুসবাসি আগাকে রাজধানীতে পাঠান সুলতানকে তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করতে।

সুলতান সুলেমান যখন মুস্তাফার প্রতি তার চেয়ে বেশি অনুরাগের খবর জানতে পারেন, তখন তিনি খুবই মনঃক্ষুণ্ন হন। তিনি বিশ্বাসই করতে পারেননি তার বিরুদ্ধে মুস্তাফা বিদ্রোহ করবে। তার ধারণা ছিল, এই কাজ অবশ্যই কারো না কারো প্ররোচনায় করছেন। এর জন্য তার সত্য জানা দরকার ছিল।

তখন সুলতান সুলেমান দূত পাঠিয়ে রুস্তম পাশাকে ইস্তাম্বুলে ফেরত আসতে বলেন। তিনি নিজেই পুনরায় এই অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন বলে জানান। রাজধানীতে ফিরে সুলতানকে সুস্থ দেখে রুস্তম নিজেও স্বস্তিবোধ করেন। যদিও তিনি জানতেন, তবু ধারণা ছিল- মুস্তাফা এর মধ্যে রাজধানী আসতেও পারেন।

ষড়যন্ত্রকারী রুস্তম পাশা; Image Source: Wikipedia Commons

প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ১৫৫৩ সালের ২৮ আগস্ট ইস্তাম্বুল ত্যাগ করেন। রুস্তম পাশা তার ভাই সিনান পাশাকে ইস্তাম্বুলের দায়িত্ব দিয়ে যান এবং শাহজাদা বায়েজিদকে এদির্নের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এর আগেই রুস্তম তার ভাই সিনানকে অটোমান নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। যদিও তার কোনো দক্ষতাই ছিল না। শুধু সমুদ্রপথে মুস্তাফাকে প্রতিরোধ করার জন্য তাকে এই দায়িত্বে বসানো হয়েছিল। কারণ সমুদ্র পথ ছাড়া মুস্তাফার অন্য শাহজাদাদের আগে ইস্তাম্বুল পৌঁছানো সহজ ছিল না।

এদিকে সুলতান সুলেমান তার সৈন্যদের নিয়ে নাহচিভান অভিযানে যাওয়ার পথে আমাসিয়া যাওয়ার সেই রাস্তার অভিমুখে এসে পৌঁছান। তখন তিনি একাধিক ‘চাভুস’ বা বার্তাবাহক পাঠিয়ে শাহজাদা মুস্তাফাকে এরেগলিতে যোগ দিতে বলেন।

তিনি সুলতানের ডেকে পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে তার কাছের লোকজনের সাথে আলোচনা করেন। তারা সবাই তাকে সুলতানে সৈন্য শিবিরে যেতে নিষেধ করেন। সেখানে তার প্রাণহানি সম্ভাবনা আছে, এমন হুশিয়ারি প্রদান করেন।

নাহচিভান অভিযানে সুলতান সুলেমান খান; Image Source: Ottomans Picture

কিন্তু শাহজাদা মুস্তাফা উভয় সঙ্কটে পড়ে যান। যদি তিনি সৈন্য শিবিরে গিয়ে তার বাবাকে ক্রোধান্বিত দেখেন, তাহলে তিনি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। আর তিনি যদি তা এড়িয়ে যেতে চান, তাহলে তার বাবার আদেশ অমান্য করে আমাসিয়ায় থাকতে হবে। আর তিনি যদি এমন কিছু করেন, তাহলে সুলতান সুলেমান তাকে বিদ্রোহী শাহজাদা হিসেবে আখ্যা দেবেন।

শেষ পর্যন্ত তিনি নিজের সরল বিশ্বাস থেকে সৈন্য শিবিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার ধারণা ছিল, সৈন্যদের উপস্থিতিতে তার তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।

৫ অক্টোবর সুলতান সুলেমান এরেগলি এসে পৌঁছান। সুলতানের শিবির থেকে দুই কিলোমিটার দূরে শাহজাদা মুস্তাফা শিবির তৈরি করেন। প্রথমদিন প্রত্যেক উজির ও গভর্নর তার সাথে দেখা করেন। পরের দিন তার সুলতান সুলেমানের সাথে দেখা করার সময় নির্ধারিত ছিল।

শাহজাদা মুস্তাফাকে হত্যার দৃশ্য, আড়াল থেকে দেখছেন সুলতান সুলেমান; Image Source: Vladimir Kapustin

সুলতানের শিবির থেকে তীর মেরে শাহজাদা মুস্তাফাকে সতর্ক করা হয়েছিল। ইঙ্গিত করা হয়েছিল, তিনি সুলতানের সাথে দেখা করতে আসলে প্রাণ হারাতে পারেন। সহজ-সরল শাহাজাদা মনে করেছিলে্‌ এটি হয়তো রুস্তমের কোনো কৌশল! এই কারণে সতর্কের বিষয়টি এড়িয়ে যান।

পরের দিন ৬ অক্টোবর সুলতান সুলেমানের সাথে দেখা করতে গিয়ে কোনো কথা বলার আগেই ঘাতকদের হাতে প্রাণ হারান। নিষ্পাপ শাহজাদাকে হত্যার পেছনে প্রকৃতপক্ষে অপরাধী কে ছিলেন? তা জানতে পড়ুন পরের কিস্তি।   

 

This article is in Bangla language. It is about Shehzade Mustafa, Son of Ottoman Sultan Suleiman The Magnificent.

Featured Image Source:  Magnificent Century (Muhteşem Yüzyıl)

 References:  

1. ResearchGate  

2. The Ottoman Centuries by Lord Kinorss 

 

Related Articles