১৪৪৫ সালে দিল্লী সালতানাতের সৈয়দ রাজবংশের সুলতান মোহাম্মদ খান মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আলাউদ্দীন আলম শাহ দিল্লী সালতানাতের সিংহাসনে বসেন। সত্যিকার অর্থে দিল্লী সালতানাতে সেসময় চরম অস্থিরতা চলছিলো। তৈমুরের আক্রমণে হিন্দুস্তান আগেই বিধ্বস্ত হয়ে ছিলো। নতুন সুলতানদের প্রধান কাজ ছিলো সাম্রাজ্যের হৃত ভূ-খন্ডগুলোকে পুনরুদ্ধার করে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা। অবশ্য ইতোমধ্যেই সৈয়দ শাসনের অধীনে বেশ কিছু ভূ-খন্ড পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু অস্থির পরিবেশের কারণে নতুন সুলতানের দিল্লীর জটিল রাজনীতি ভালো লাগছিলো না। দিল্লীর জটিল রাজনীতিতে বিরক্ত হয়ে ১৪৫১ সালের ১৯ এপ্রিল সুলতান আলাউদ্দীন আলম শাহ বাহালুল খান লোদীর কাছে দিল্লী সালতানাতের দায়িত্ব অর্পণ করে বাদাউন চলে যান। বাদাউনে অবস্থানকালেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিলো।
১৪৫১ সালের ১৯ এপ্রিল বাহলুল লোদি সুলতান হিসেবে দিল্লী সালতানাতের সিংহাসনে আরোহণ করেন। বাহলুল লোদির মাধ্যমেই সূচনা হয় দিল্লী সালতানাত শাসনকারী পঞ্চম রাজবংশ লোদি রাজবংশের। লোদিরা ছিলো মূলত একটি শক্তিশালী আফগান পরিবার। হিন্দুস্তানের দিল্লী সালতানাতের বিভিন্ন ঘটনাবহুল পটভূমির প্রেক্ষিতে তাঁরা দিল্লীর সিংহাসনের অধিকার লাভ করেন। তাদের শাসন সিন্ধু নদের পূর্ব তীর থেকে আগ্রা পর্যন্ত বজায় ছিলো।
বাহলুল লোদি সম্পর্কের দিক দিয়ে পাঞ্জাবের সিরহিন্দের গভর্নর মালিক সুলতান শাহ লোদির বোনের ছেলে ছিলেন। সৈয়দ সালতানাতের সুলতান মোহাম্মদ শাহের সময়ে তিনি সিরহিন্দের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। গভর্নর হিসেবে তাঁর প্রধান কৃতিত্ব ছিলো উদ্ধত আফগান গোত্রপতিদের নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা। এই আফগান গোত্রগুলো সাম্রাজ্যে সবসময়ই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতো। নিজের সফলতার জন্য তিনি পরবর্তীতে ‘আমীর’ পদে উন্নীত হতে পেরেছিলেন।
যা-ই হোক, সুলতান বাহলুল লোদি এমন একসময়ে দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করলেন, যখন দিল্লী সালতানাতের অতীত গৌরবের বলতে গেলে আর তেমন কিছুই অবশিষ্ট ছিলো না। এমনকি একসময়ের দুর্ধর্ষ আর গোটা হিন্দুস্তান শাসনকারী দিল্লী সালতানাত দিল্লী আর এর আশেপাশের কিছু এলাকার উপরে নিজের প্রভাব ধরে রাখতে পেরেছিলো মাত্র। কাজেই বলা যায়, সুলতান বাহলুল লোদির সিংহাসনে আরোহণ আসলে তাঁর জন্য তেমন সুখকর কিছু ছিলো না।
বাহলুল লোদি যখন সিংহাসনে আরোহণ করেন, তখন দিল্লীর কাছেই সম্ভলের দখল ছিলো দরিয়া খান নামের এক বিদ্রোহী সভাসদের হাতে। এছাড়া ঈশা খান তুর্কী জলসা জেলা দখল করে নেন। ফারুকাবাদ জেলা দখল করে নেন রাজা প্রতাপ সিংহ। বায়ানা দখল করে নিয়েছিলো দাউদ খান লোদি। এছাড়াও মুলতান, জৈনপুর, মালব, বঙ্গদেশ আর গুজরাট ছিলো ভিন্ন ভিন্ন রাজাদের দখলে। বাহলুল লোদির দখলে ছিলো কেবলমাত্র লাহোর, সিরিহিন্দ, দিপালপুর আর পানিপথের দক্ষিণাঞ্চল।
সুলতান হিসেবে সিংহাসনে আরোহণের পর বাহলুল লোদির প্রথম কাজ ছিলো দিল্লী সালতানাতের হারানো ভূ-খন্ডগুলো উদ্ধারে অভিযান প্রেরণ করা। এজন্য তিনি সেনাবাহিনীর সংস্কারকাজে হাত দেন। বিভিন্ন আফগান উপজাতি থেকে তিনি তাঁর সেনাবাহিনীতে লোক নিয়োগ করেন। বাহালুল লোদির সিংহাসনে আরোহণের পর তাঁর বেশিরভাগ সময় ব্যয় হয়ে যায় শক্তিশালী জৈনপুরের শর্কি রাজবংশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে। দিল্লী সালতানাতের অস্থির দিনগুলোতে (তুঘলক সুলতান নাসরুদ্দীন মুহাম্মদ তুঘলকের সময়ে) খাজা জাহান মালিকের নেতৃত্বে ১৩৯৪ সালে জৈনপুরে প্রতিষ্ঠা লাভ করে শর্কি রাজ্য। শর্কি রাজ্যটি বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশে নিয়ে গঠিত হয়েছিলো। ১৩৯৪ সাল থেকে শুরু করে ১৪৭৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে মোট ৬ জন সুলতান এই রাজ্যটি শাসন করেন। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ১৪৭৯ সালে সুলতান বাহালুল লোদি শর্কি রাজ্যের বিরুদ্ধে সফলতা লাভ করেন। এর আশেপাশের এলাকাগুলোর রাজা আর বিদ্রোহীরা বাহলুল লোদির প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশে বাধ্য হয়।
প্রায় ৩৮ বছর রাজ্য পরিচালনার পর ১৪৮৮ সালে বাহলুল লোদি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি পাঞ্জাব, জৈনপুর, দোয়াব, ঔধ, বিহার, তিরহুত, শতদ্রু, বুন্দেলখন্ডসহ নিজের এলাকাগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পেরেছিলেন। দিল্লী সালতানাতের ইতিহাসে তাঁর কৃতিত্ব অবশ্যই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বাহালুল লোদির মৃত্যুর পর তাঁর সাম্রাজ্য তাঁর পুত্র আর আত্মীয়দের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়। জৈনপুরের দায়িত্ব পান বারবাক খান, আলম খান আলাউদ্দীনকে দেয়া হয় মানিকপুর ও কারা, বাহরাইচের দায়িত্ব পান সুলতান বারবাক খানের ভাগ্নে শাহজাদা মুহাম্মদ ফারমুলি (কালাপাহাড়), আজম হুমায়ুনে লখনৌ ও কালপীর দায়িত্ব পান, বাদাউনের দায়িত্ব পান খান জাহান। এছাড়া সুলতানের পুত্র নিজাম খান দায়িত্ব পান দিল্লী ও আশেপাশের কয়েকটি জেলার।
সুলতান বাহলুল লোদির মৃত্যুর পর ১৪৮৯ সালের ১৭ জুলাই দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন তাঁর পুত্র নিজাম খান। সিংহাসনে বসে তিনি ‘সিকান্দার লোদি’ উপাধি ধারণ করেন।
দিল্লীর সিংহাসনে বসে অবশ্য সিকান্দার লোদি খুব একটা স্বস্তিতে থাকতে পারেন নি। বিগত বেশ কিছু বছরের অস্থিরতার জন্য প্রদেশিক শাসনকর্তারা সুযোগ পেলেই বিদ্রোহ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসতো। প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের এই প্রবণতা রোধ করতে তিনি দুর্ধর্ষ একটি গুপ্তচরবাহিনী তৈরি করেন। বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করতে তিনি তাঁর রাজধানী দিল্লী থেকে আগ্রা স্থানান্তর করে নিয়ে যান। দোয়াবের বিদ্রোহী রাজাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যমুনার তীরে আগ্রায় দুর্গ নির্মান করে। সুলতান সিকান্দার লোদির একটি বিশেষ কৃতিত্ব হলো বিহারের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেন। বিহারে সেনা অভিযানের ফলে বিহার সুলতানের আনুগত্য স্বীকার করতে বাধ্য হয়। এছাড়া বাংলাতেও তিনি একটি অভিযান প্রেরণ করেছিলেন।
পিতা বাহলুল লোদির মতোই তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিলো অবাধ্য, উশৃঙ্খল আফগান গোত্রগুলোকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা। এই অবাধ্য আফগান গোত্রগুলো প্রায়ই রাজ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতো। অবশ্য এ আফগান গোত্রগুলো তাঁর সময়ে হিন্দুস্তানে বেশ ভালো সুযোগ-সুবিধা লাভ করতো। তাদের বিভিন্ন পরগনার জায়গীরদার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিলো।
এদিকে জৈনপুরের বারবাক খানের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী প্রেরণ করলে বারবাক খান সিকান্দার লোদির আনুগত্য প্রকাশ করেন। কিন্তু শর্কী শাসক হুসাইন শাহ তাঁর থেকে আবারো জৈনপুরের সিংহাসন কেড়ে নেন। সিকান্দার লোদি জৈনপুর আক্রমণ করেন। শর্কি শাসক হুসাইন শাহ বঙ্গে পালিয়ে যান। বঙ্গের শাসক হুসাইন শাহকে আশ্রয় দেন। ফলশ্রুতিতে তিনি বঙ্গের বিরুদ্ধে একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। দিল্লী আর বঙ্গের মাঝে পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে এই সামরিক সংকটের সমাধান করা হয়।
১৫১৭ সালে সুলতান সিকান্দার লোদি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি পাঞ্জাব, জৈনপুর, মধ্য ভারত আর পশ্চিম বিহারে নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পেরেছিলেন।
সিকান্দার লোদির মৃত্যুর পর দিল্লী সালতানাতের সিংহাসন নিয়ে তীব্র প্রতিযোগীতা হয়। অবশ্য এই প্রতিযোগীতায় ভালো অবস্থানে ছিলে তাঁর দুই পুত্র- ইব্রাহীম লোদি আর জালাল খান লোদি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিংহাসন দখলের প্রতিযোগীতায় ইব্রাহীম লোদি বিজয়ী হন। ১৫১৭ সালে তিনি দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন। ভাইয়ের সাথে সিংহাসন দখলের প্রতিযোগীতায় ব্যর্থ হয়ে জালাল খান লোদি জৈনপুরে হামলা চালান। তিনি সেখানেও ব্যর্থ হন। পরে তিনি কালপিতে চলে যান। সিকান্দার লোদির শাসনকালে তিনি কালপির গভর্নর হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। জালাল খান লোদি কালপি এসে নিজেকে কালপির সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে তিনি আবার জৈনপুরের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছিলেন।
কিন্তু মূল সমস্যা তৈরি করে সিকান্দার লোদির সময়ে সিকান্দার লোদির সমর্থনপুষ্ট সেই আফগান জায়গিরদাররা! তারা সিংহাসন দখলে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। তাদের ষড়যন্ত্রে ইব্রাহীম লোদি আর তাঁর ভাই জালাল খান লোদি নিরুপায় হয়ে পড়েন। এই আফগান জায়গিরদাররা ইব্রাহীম লোদির কাছে শুধু দিল্লী আর জালাল খান লোদির হাতে জৈনপুরের দখল দিয়ে দিল্লী সালতানাতের বাকি সব ভূ-খন্ড নিজেদের ভেতরে ভাগাভাগি করে নিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্তই করে ফেলে। অবশেষে ইব্রাহীম লোদি পাল্টা পরিকল্পনা গ্রহণ করে নিজের ভাই জালাল খানকে দিল্লী ডেকে পাঠান। কিন্তু জালাল খান দিল্লী যেতে অস্বীকৃতি জানান। ইব্রাহীম লোদি জালাল খানকে আক্রমণ করে জৈনপুরকে দিল্লীর সাথে একীভূত করেন। এরপর তিনি অবাধ্য আফগান আমিরদের তাঁর অনুগত করার জন্য তাদের ক্ষমতা হ্রাসের পরিকল্পনা করেন।
মূলত ইব্রাহীম লোদির সিংহাসনে আরোহণের পর থেকেই রাজদরবারে আফগান আমিরদের সাথে বিভিন্ন অশোভন আচরণ করা হত। ইব্রাহীম লোদির আচরণগত রুক্ষতা আর অশোভন আচরণের জন্য আফগানরা মনে মনে বিরক্ত হতে থাকে। একসময় তারা ইব্রাহীম লোদির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ইব্রাহীম লোদি চরম নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে তাদের বিদ্রোহ দমন করেন। এই জায়গাটিতেই ইব্রাহীম লোদি ভুল করেন। তিনি আফগানদের বিরুদ্ধে চরম নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন না করলেও পারতেন। তাঁর এই অতিরিক্ত নিষ্ঠুরতাই আবার নতুন করে বিদ্রোহের জন্ম দেয়। পাঞ্জাব সহ বিহার, ঔধ আর জৈনপুরের জায়গীরদাররা ইব্রাহীম লোদির বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে। বিহারের দরিয়া খান নিজেকে বিহারের সুলতান ঘোষণা করেন।
এদিকে পূর্ববর্তী সুলতান সিকান্দার লোদির ভাই আলম খান দিল্লী সিংহাসনের প্রতি তাঁর দাবী তুলে ধরেন। তিনি আলাউদ্দীন উপাধি ধারণ করেন। গুজরাটসহ বিভিন্ন আফগান নেতারা তাকে সুলতান হিসেবে মেনে নেয়। আলম খান আলাউদ্দীন লোদি দিপালপুর দখল করে নেন। কিন্তু লাহোরের বিদ্রোহী গভর্নর দৌলত খান লোদি আলম খান লোদিকে দিপালপুর থেকে বিতারিত করেন। দৌলত খান লোদিকে পরাজিত করতে ইব্রাহীম লোদি বাহার খানের নেতৃত্বে একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। দৌলত খান লোদি ইব্রাহীম লোদির হাতে পরাজিত হলে লাহোর দিল্লীর অধীনে চলে আসে। উপায় না পেয়ে দৌলত খান তাঁর এক পুত্রকে কাবুলে প্রেরণ করেন। দৌলত খান লোদি কাবুলের সুলতানকে হিন্দুস্তান আক্রমণ করতে উৎসাহ দেন। কাবুলের সুলতান নিজেকে দিল্লী সিংহাসনের বৈধ উত্তরাধিকারী হিসেবে দাবী করে ইব্রাহীম লোদির কাছে দিল্লীর সিংহাসন ফেরত চান! স্বভাবতই ইব্রাহীম লোদি কাবুলের সুলতানের এই দাবীকে প্রত্যাখ্যান করেন। ১৫২৬ সালে কাবুলের সুলতান হিন্দুস্তান আক্রমণে এগিয়ে আসেন। শুধু হিন্দুস্তান না, বরং সমস্ত পৃথিবীর ইতিহাসের ধারা পরিবর্তনকারী এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা হয়! সেই যুদ্ধে ইব্রাহীম লোদি নিহত হন। আর এর সাথে সাথে শুধু লোদি সাম্রাজ্যেরই না, বরং সমাপ্তি হয় খোদ দিল্লী সালতানাতেরই! হিন্দুস্তানের ভূ-খন্ড সত্যিকার অর্থেই একটু বিচিত্র! একে দখলে রাখতে হলে প্রয়োজন পড়ে পর্যাপ্ত শক্তির!
একজন যোদ্ধা হিসেবে ইব্রাহীম লোদি ছিলেন প্রচন্ড সাহসী আর বীর। নিজের লক্ষ্যের ব্যাপারে সবসময়ই তিনি স্থির ছিলেন। কিন্তু তাঁর চরিত্রে একটি জিনিসের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, আর তা হলো নম্রতা। মানুষ হিসেবে তিনি বেশ রুক্ষ প্রকৃতির ছিলেন, যা তাঁর আর তাঁর নিজের লোকদের মাঝেই বিশাল দূরত্ব সৃষ্টি করেছিলো। সম্রাটদের জীবন আর দশ জন মানুষের স্বাভাবিক হয় না। তাদের সবকিছু হিসাব নিকাশ করে করতে হয়। সম্ভবত এই ব্যাপারটা তিনি উপলব্ধি করতে পারেন নি। তাঁর এই অযাচিত রুক্ষ আচরণ তাঁর অভিজাতদের মাঝে বিদ্রোহী মনোভাব তৈরি করেছিল, যা একসময় আক্ষরিক অর্থেই বিদ্রোহের সৃষ্টি করেছে। যে বিদ্রোহের সূচনা তিনি নিজেই তৈরি করেছিলেন, তা আর তিনি নেভাতে পারেন নি! এই মূল্য তাকে নিজের জীবন দিয়েই পরিশোধ করতে হয়েছিলো!
তথ্যসূত্র:
১। বাবরনামা (জহির উদ দিন মুহাম্মদ বাবর, অনুবাদঃ মুহম্মদ জালালউদ্দীন বিশ্বাস)
২। মোগল সাম্রাজ্যের সোনালী অধ্যায়- সাহাদত হোসেন খান
৩। ভারতবর্ষের ইতিহাস- কোকা আন্তোনোভা, গ্রিগোরি বোনগার্দ-লেভিন, গ্রিগোরি কতোভস্কি
৪। বিশ্বসভ্যতা- এ. কে. এম. শাহনাওয়াজ
এই সিরিজের আগের পর্ব
১। প্রাক-মুঘল যুগে হিন্দুস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা
২। তরাইনের যুদ্ধ: হিন্দুস্তানের ইতিহাস পাল্টে দেওয়া দুই যুদ্ধ
৩। দিল্লী সালতানাতের ইতিকথা: দাস শাসনামল
৪। রাজিয়া সুলতানা: ভারতবর্ষের প্রথম নারী শাসক
৫। দিল্লি সালতানাতের ইতিকথা: খিলজী শাসনামল
৬। দিল্লি সালতানাতের ইতিকথা: তুঘলক শাসনামল
৭। দিল্লি সালতানাতের ইতিকথা: তৈমুরের হিন্দুস্তান আক্রমণ ও সৈয়দ রাজবংশের শাসন
ফিচার ইমেজ: Wikimedia Commons