Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এক রোহিঙ্গা স্কুলশিক্ষক এবং তার গণহত্যার ডায়েরি (৪র্থ পর্ব)

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীর মধ্যে একজন ফুতু। তার এবং তার পরিবারের করুণ কাহিনী উঠে এসেছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনের Sarah A. Topol-এর The Schoolteacher and the Genocide শিরোনামের একটি সুদীর্ঘ প্রবন্ধে। আমাদের এই সিরিজটি সেই প্রবন্ধেরই অনুবাদ। এটি হচ্ছে সিরিজের চতুর্থ পর্ব

সবগুলো পর্ব: ১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব | ৬ষ্ঠ পর্ব | ৭ম পর্ব | ৮ম পর্ব | ৯ম পর্ব | ১০ম পর্ব

নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনে ফুতুকে নিয়ে লেখা প্রবন্ধটি; Image Source: Twitter

২০১৩ সালে বিশাল একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ফুতু বিয়ে করেন। তার স্ত্রী ছিল সুন্দরী। তার চেহারা ছিল কিছুটা গোলাকার এবং নরম ধরনের, তার দৃষ্টি ছিল দ্যুতিময়, ত্বক ছিল জলপাইয় রঙের এবং তার হাসি ছিল ঘণ্টার ছোট ছোট ধ্বনির মতো। ছোটবেলা থেকেই ফুতু তাকে ভালবাসতেন এবং সময়ের সাথে সাথে তিনি গোপনে তার মন জয় করে নিতে পেরেছিলেন।

ফুতুর বাবা-মা যখন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন, তার মা এবং ভাইয়েরা আগ্রহের সাথে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন: ফুতু ছিলেন শিক্ষিত এবং ইংরেজি জানা যুবক। ফুতুর শাশুড়ি তাদের জুটিকে আশীর্বাদ করেছিলেন।

ততদিনে ফুতুর লাল নোটবুকটি গ্রামবাসীদের উপর নাসাকার অত্যাচার সম্পর্কে ছোট ছোট লেখা দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। তিনি ডায়রিটি লিখেছিলেন রোহিঙ্গা ভাষায়, কিন্তু শব্দগুলোর বানান তিনি করেছিলেন ইংরেজি এবং বার্মিজের মিশ্রণে। এটি ছিল এক ধরনের কোড, যার অর্থ কেবল তার পক্ষেই উদ্ধার করা সম্ভব ছিল।

ফুতু তার নিজের দৈনন্দিন কার্যক্রমেরও একটি ডায়েরি রেখেছিলেন। প্রতি রাতে স্ত্রীর সাথে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তিনি সেখানে কিছু না কিছু লিখে রাখতেন। দীর্ঘ সময় ধরে কেরোসিনের লণ্ঠন জ্বালিয়ে রাখার কারণে মাঝে মাঝে তার স্ত্রী তার উপর রেগে যেত। গভীর রাতে রোহিঙ্গাদের বাতি জ্বালানোর অনুমতি ছিল না। এ নিয়ে তাদের কথোপকথনগুলো উত্তপ্ত হয়ে উঠত এবং কখনও কখনও তা ঝগড়ায় রূপ নিত। ফুতু তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতেন, তিনি যে তথ্যগুলো লিখছেন সেগুলো অর্থের চেয়েও মূল্যবান। যদি কখনও তার কিছু ঘটে যায় অথবা তিনি মৃত্যুবরণ করেন, তাহলেও তার সংগৃহীত জ্ঞান টিকে থাকবে অনন্তকাল।

ফুতুর ডায়েরির সংখ্যা দিনে দিনে বাড়তে থাকে। যতদিনে তার স্ত্রী দুই পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়, ততদিন পর্যন্ত তার ডায়েরির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০টিরও বেশিতে। বাবা-মা এবং তিন ভাইয়ের সাথে ফুতু এবং তার স্ত্রী একই বাড়িতে বসবাস করতেন। সেখানেই অল্প খরচে বানানো একটি কাঠের সিন্দুকের ভেতর তিনি তার ডায়রিগুলো লুকিয়ে রাখতেন। সেগুলোকে স্কুলের অন্যান্য বই এবং কাগজপত্রের সাথে একত্রে মিশিয়ে রাখতেন, অনেকটা ক্যামোফ্লাজের মতো করে।

স্কুলটির প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর এর কাঠামোতে সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দেয়। অর্থ সংগ্রহের জন্য ফুতু একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেন। ২০১২ সালের জুনের গোড়ার দিকে ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন গ্রামবাসীরা যখন মাঠের দিকে যাচ্ছিল, তখন তারা রাখাইনদেরকে দল বেঁধে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে দেখতে পায়।

ফুতু ভেবেছিলেন তারা কাছের একটি পাহাড়ের দিকে যাচ্ছিল, যেখানে রাখাইন বর্ষের সমাপ্তি উপলক্ষে তারা বার্ষিক উৎসবের আয়োজন করে এবং গান ও নাটক পরিবেশন করে। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যার সময় দুনসে পাড়ার লোকেরা যখন খেলা শেষে মাঠ পরিষ্কার করছিল, তখন তারা গুঞ্জন শুনতে পায় যে, কাছের শহরগুলোতে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পরবর্তী কয়েকদিন ধরে আশেপাশের গ্রামগুলো থেকে দুনসে পাড়ায় ছুটে আসা রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে রাখাইনদের দ্বারা তাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার এবং তাদেরকে লাঠি ও ছুরি দিয়ে হত্যা করার কাহিনী ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সেবারের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় শেষপর্যন্ত কয়েক শত লোক মারা গিয়েছিল। এদের মধ্যে কয়েক ডজন শিশুকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয়েছিল। আর পুরো সময়জুড়ে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা হয় অন্যদিকে তাকিয়েছিল, অথবা নিজেরাই রাখাইনদের সাথে এই হত্যাযজ্ঞে অংশ নিয়েছিল।

এরকম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা ফুতু আগেও শুনেছিলেন, কিন্তু তিনি নিজে কখনো চোখে দেখেননি। পরে তিনি জানতে পেরেছিলেন, পুরো ব্যাপারটি শুরু হয়েছিল এক বৌদ্ধ মহিলাকে ধর্ষণ এবং হত্যা করার পর। গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে, ঘটনাটি মুসলমান পুরুষরা ঘটিয়েছে। কাহিনীটি তাৎক্ষণিকভাবে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং পাল্টা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মুসলমান পুরুষদের একটি বাসের উপর শতশত রাখাইন ঝাঁপিয়ে পড়ে দশজন মুসলমানকে হত্যা করেছিল।

দুনসে পাড়া যদিও ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে ছিল, কিন্তু সহিংসতার প্রভাব থেকে গ্রামটি মুক্ত ছিল না। বাস্তুচ্যুতদেরকে স্থান দিতে হয়েছিল গ্রামবাসীদের জমির উপর। পাহাড়ের উপর দিয়ে দলে দলে দুনসে পাড়া এবং পার্শ্ববর্তী চেইন খার লি গ্রামে ছুটে আসার পর গৃহহীন রোহিঙ্গারা আর কখনোই ফেরত যায়নি। তারা জানতে পেরেছিল, রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তুইয়ে রোহিঙ্গাদেরকে স্থান দেওয়া হয়েছিল কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা শহরের কয়েকটি ব্লকে। এরপর থেকে তারা সেই ঘেটোতেই বসবাস করে আসছিল।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা; Image Source: Himaloy Joseph Mree

রোহিঙ্গাদের অধিকার যখন হরণ করা হচ্ছিল, বহির্বিশ্ব তখনও সেদিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছিল না। ২০১২ সালের উপ-নির্বাচনে অং সান সু চি পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করার পর তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা মায়ানমারের উপর জারি থাকা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে দেন। ২০১২ সালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পরপরই প্রথম মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে ওবামা মায়ানমার সফর করেন। তার ভাবাবেগপূর্ণ বক্তৃতায় রোহিঙ্গাদের কথা খুবই সংক্ষেপে একবার স্থান পেলেও বাকি সময়টাতে তিনি জোর দেন মূলত মায়ানমারের নতুন গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের উপর।

দুই বছর পর ফুতু প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট অ্যাক্সেসসহ একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সুযোগ পান, এবং সেটা তার জীবনকে পাল্টে দেয়। ক্ষুদ্র বস্তুটিতে ধারণকৃত বিপুল পরিমাণ তথ্যভাণ্ডার দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে যান। কিন্তু যখন তিনি ফেসবুকে প্রথমবারের মতো একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন, তখন তার সামনে উন্মোচিত হয় ভিন্ন একটি জগত। তার চোখে পড়ে তাদের সম্প্রদায়কে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে রাখাইনদের দেওয়া পোস্টগুলো, তাদেরকে কালার (বিদেশীদের জন্য ব্যবহৃত অবমাননাকর শব্দ), কুকুর এবং ধর্ষক হিসেবে উল্লেখ করে তৈরি করা তাদের ভিডিওগুলো এবং তাদেরকে মায়ানমার থেকে বহিষ্কার করার আন্দোলনগুলো।

তিনি দেখতে পান, দেশের অন্যান্য অংশে মুসলিম মালিকানাধীন দোকানগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, রাস্তাঘাটে মুসলমানদেরকে হত্যা করা হচ্ছে, প্রথমে ‘৯৬৯’ এবং পরবর্তীতে ‘মাবাথা’ নামে পরিচিত একদল ধর্মান্ধ বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের সংগঠন বছরের পর বছর ধরে সহিংসতার পক্ষে প্রচার চালিয়ে আসছিল। কিন্তু এগুলো দেখার পরেও ঘটনাগুলো ফুতুর মনে কোনো ধরনের আগাম সতর্কতা সৃষ্টি করেনি।

২০১৫ সালে ফুতু পার্শ্ববর্তী চেইন খার লি গ্রামের প্রথম সরকারি মিডল স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। স্কুলটি পাশাপাশি অবস্থিত দুটি গ্রামের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষজন ভাগাভাগি করে ব্যবহার করত। সে সময় ফুতুর পূর্ণ মনোযোগ ছিল তার ছাত্রদের উপর। অধিকাংশ দিনই তিনি বাসায় যেতেন না, স্কুলের ছাত্রাবাসেই রাত কাটাতেন।

২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ভোরবেলা ফুতু যখন চেইন খার লি গ্রামের মিডল স্কুলের ছাত্রাবাসে ঘুমাচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ করেই দুনসে পাড়ার ধানক্ষেত এবং খড়ের তৈরি বাড়িগুলোর মধ্য থেকে গোলাগুলির আওয়াজ আসতে শুরু করে। কী ঘটছে বোঝার জন্য গ্রামের পুরুষরা বাইরে ছুটে যায়। চোর ধরা পড়েছে? ডাকাত আক্রমণ করেছে? নাকি কোনো দল হানা দিয়েছে? ঘটনা জানার জন্য কর্দমাক্ত পথ মাড়িয়ে তারা ছুটে যায় গ্রামের প্রধান আইয়ুবের কাছে। তাদের ধারণা, আইয়ুবের নিশ্চয়ই ঘটনা জানা থাকার কথা।

আইয়ুব দুই বছর ধরে এই পদে ছিলেন। তিনি পার্শ্ববর্তী রাখাইন গ্রামের প্রধানের অধীনে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, যাকে অনেকেই চেয়ারম্যান নামে চিনত। আইয়ুব ছিলেন ছোটখাটো, গাট্টগোট্টা ধরনের একজন ধনী ব্যবসায়ী। কর্তৃপক্ষের সাথে তার বেশ সুসম্পর্ক ছিল। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি তাদের প্রতি তার আনুগত্য এবং অনুরাগ প্রকাশ করে আসছিলেন।

গ্রামের লোকেরা যখন তার টিনের তৈরি বাড়ির সামনে গিয়ে পৌঁছাল, তখন বাড়ির দরজা ছিল ভেতর থেকে বন্ধ। গ্রামবাসীরা তার দরজা পেটাতে শুরু করল। “কী হচ্ছে এখানে?” বেরিয়ে এসে জানতে চাইলেন তিনি। তার কোনো ধারণাই ছিল না বাইরে কী ঘটছে।

জ্বলিয়ে দেওয়া রোহিঙ্গাদের একটি গ্রাম; Image Source: USG/Amnesty International

ভোর হওয়া পর্যন্ত গ্রামের লোকেরা একসাথে রাত কাটালো। বন্দুকযুদ্ধ ততক্ষণে স্তিমিত হয়ে এসেছিল এবং উদ্বিগ্ন জনতার ভিড় আইয়ুবের বাড়ি ছেড়ে বড় গ্রামের প্রধান মসজিদের পাশের চায়ের স্টলটিতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। সকাল বেলা ফুতু যখন ফিরে এলেন, ততক্ষণে পুরো দুনসে পাড়ায় আতঙ্কে ছড়িয়ে পড়েছিল।

আইয়ুব এবং ছোট ছোট গ্রামগুলোর নেতৃত্বে থাকা তার ডেপুটি চিফদের ডাক পড়ল মায়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ তথা বিজিপির (BGP) চেকপোস্টে। নিরাপত্তাবাহিনীর একটি দল পুরো গ্রামটিকে ঘিরে রেখেছিল। পুরুষরা গ্রামের মহিলাদেরকে বাড়ির ভেতর থাকতে নির্দেশ দিলো। তারা নিজেরা এদিকে সেদিকে বিচ্ছিন্নভাবে ঘোরাঘুরি করে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করতে লাগল।

চেকপোস্টে বিজিপি সদস্যরা আইয়ুবকে ভেতরে নিয়ে গেল। তাদের সেক্টর কমান্ডার আইয়ুবকে এক বন্দী জঙ্গির ছবি দেখালেন। সম্ভবত সে ছিল সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন।

“আপনি কি একে চেনেন?” কমান্ডার জিজ্ঞেস করলেন।

আইয়ুব উত্তর দিলেন, তিনি চেনেন না।

এরপর তারা তাকে আরেক জঙ্গির মৃতদেহ দেখাল।

“একে চেনেন?”

আইয়ুব কসম কেটে বললেন, তিনি চেনেন না। জিজ্ঞাসাবাদের পর বন্দী লোকটাও আইয়ুবের দাবিকে সমর্থন জানাল। সে বলল, তারা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কোনো সহযোগিতা ছাড়াই চেকপোস্টে হামলা করতে এসেছিল।

বিকেলে সেক্টর কমান্ডার আইয়ুবকে মৃতদেহটি গোপনে দাফন করে ফেলার নির্দেশ দিলেন। লোকটির দাড়ি ছিল, কাজেই সে নিশ্চয়ই মুসলমান। কমান্ডার তাকে বললেন, “সবচেয়ে ভালো হবে আপনি যদি একে মুসলমানদের কবরস্থানে কবর দেন। তিন জন লোককে সাথে নিয়ে যাবেন, আর নিশ্চিত করবেন যেন কেউ দেখে না ফেলে।”

গ্রামে ফিরে এসে আইয়ুব দুজন সাইঙ্গম তথা ঘোষককে ডেকে পাঠান। তিনি তাদের হাতে কর্তৃপক্ষের জারি করা নতুন একটি বিধি-নিষেধের তালিকা তুলে দেন। ঘোষকদুজন গ্রামের কর্দমাক্ত পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ঘোষণাটি পাঠ করে গ্রামবাসীদেরকে জানিয়ে দিতে থাকে: সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কারফিউ! আজান দেওয়া নিষিদ্ধ! পুরুষদের চারজনের বেশি একত্রিত হওয়া নিষিদ্ধ! মাদ্রাসাগুলো স্থগিত! মাছ ধরা এবং কাঠ সংগ্রহের জন্য পাহাড়ে যাওয়া নিষিদ্ধ! প্রতিটি বাড়ির বাইরের বেড়া ভেঙে ফেলা বাধ্যতামূলক!

এক মুহূর্তের মধ্যে গ্রামের মানুষদের জীবিকা অর্জনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। কেউ বুঝতে পারছিল না কী ঘটছিল। দুদিন পর ৯ অক্টোবরের হামলার দায় স্বীকার করে একটি গ্রুপ অনলাইনে একটি ভিডিও পোস্ট করে। তারা প্রথমে নিজেদেরকে হারাকাহ আল ইয়াকিন তথা ফেইথ মুভমেন্ট এবং পরবর্তীতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি তথা আরসা (ARSA) বলে দাবি করে।

হঠাৎ করেই দুনসে পাড়ার সবাই, এমনকি ছোট ছোট বাচ্চারাও, তাদেরকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। তারা অবাক হয়ে ভাবতে থাকে, এই লোকগুলো কারা? তারা কোন গ্রাম থেকে এসেছে?

দলটি ছিল রাজনৈতিক কারণে সৌদি আরবে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের একটি কমিটির নেতৃত্বে গঠিত। রোহিঙ্গা ভাষায় অনলাইনে পোস্ট করা ভিডিওতে তারা ব্যাখ্যা করে, ২০১২ সালের অত্যাচার তাদেরকে সংগঠিত হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তারা একইসাথে বিজিপির দুটি চেকপোস্টে এবং মংডু শহরের বিজিপি সদর দফতরে হামলা চালিয়েছিল।

এটা বড় ধরনের কোনো আক্রমণ ছিল না, কিন্তু এটা সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল। মোট নয় জন পুলিশ এবং আট জন জঙ্গি নিহত হয়েছিল। জঙ্গিরা ৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১০,০০০-এরও বেশি গোলাবারুদ নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। সরকারের ধারণা অনুযায়ী মোট হামলাকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০০। তারা স্থানীয় জনগণের বিরুদ্ধেও জঙ্গিদেরকে সাহায্য করার অভিযোগ তোলে।

পরবর্তী পর্ব পড়ুন এখান থেকে

সবগুলো পর্ব: ১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব | ৬ষ্ঠ পর্ব | ৭ম পর্ব | ৮ম পর্ব | ৯ম পর্ব | ১০ম পর্ব

This article is in Bangla language. It's a translation of the article "The Schoolteacher and the Genocide" by Sarah A. Topol, published in The New York Times Magazine.

Featured Image: New York Times

RB-SM

Related Articles