Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেহেরুকে নির্বাচিত করেছিলেন গান্ধীজি?

ইতিহাস কি সবসময় সত্য কথা বলে? সম্ভবত না। বরং ইতিহাস অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিজয়ীর প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে থাকে। কেননা ইতিহাস যে বিজয়ীর হাত ধরেই রচিত হয়।

তাই ইতিহাসের কাছে যখন আমরা হাত পাতি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের বিবরণ জানতে, আমরা জানতে পারি ‘সর্বসম্মতিক্রমেই’ নাকি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন জওহরলাল নেহেরু, আর সরদার বল্লভভাই প্যাটেল তার ডেপুটি। আমরা আরো জানতে পারি, এই পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াই নাকি সম্পন্ন হয়েছিল প্রধান দুই প্রার্থীর ‘মেধার ভিত্তিতে’।

আনুষ্ঠানিক ইতিহাসে এ বিষয়টি সাধারণত ঊহ্য থাকে, কিংবা স্থান পায় বড়জোর ফুটনোট হিসেবে যে, নেহেরুর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিল মহাত্মা গান্ধীর, এবং জনমত মূলত ছিল সরদার প্যাটেলেরই পক্ষে, কেননা তিনিই তৎকালীন সময়ে বিবেচিত হতেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পদের ‘সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী’ হিসেবে।

কিন্তু তাহলে কেন শেষ পর্যন্ত সরদার প্যাটেলের প্রধানমন্ত্রী হওয়া হলো না? কেন তার বদলে গান্ধীজি বেছে নিয়েছিলেন নেহেরুকে? এসব প্রশ্নের জবাব পেতে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে ১৯৪৬ সালে।

গান্ধীজির সাথে নেহেরু ও সরদার প্যাটেল; Image Source: Scroll.in

১৯৪৬ সাল ভারতের ইতিহাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কেননা ততদিনে মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে ভারতের স্বাধীনতা লাভ সময়ের ব্যাপার মাত্র। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছিল, কিন্তু সে যুদ্ধ ব্রিটেনের উপর এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে, ব্রিটিশ শাসকরা ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়ে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছিল।

তবে তার আগে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছিল, যেটির প্রধান হবেন কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট, যেহেতু ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসই সর্বোচ্চ আসনে জয়লাভ করেছিল। সে কারণেই, হঠাৎ করে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট পদটি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল, কারণ নতুন কংগ্রেস প্রেসিডেন্টই হবেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।

ওই সময় কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। আসলে বিগত ছয় বছর ধরেই তিনি ছিলেন দলটির প্রেসিডেন্ট। কারণ ১৯৪০ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনের পর থেকে আর দলটির প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন হয়নি। তাছাড়া এর মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও যেমন চলছিল পুরোদমে, তেমনই অধিকাংশ নেতাও ছিলেন জেলবন্দি।

নতুন করে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঘোষণা আসা মাত্রই মাওলানা আজাদ ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন নতুন দফায় প্রেসিডেন্ট পদ লাভের। কেননা তার মনে যথেষ্ট আকাঙ্ক্ষা ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার। তাছাড়া দলের মধ্যে অনেকেও তাকেই নতুন দফায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চাইছিলেন। তাই পরবর্তীতে তিনি তার আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন,

“স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল যে নতুন করে কংগ্রেসের নির্বাচন হওয়া এবং একজন নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নেয়া উচিৎ কি না। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে উত্থাপিত হতেই একটি সাধারণ চাহিদাও সামনে এসেছিল যেন আমিই আরেক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হই।”

প্রথম প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন মাওলানা আজাদও; Image Source: India Today

তবে মাওলানা আজাদের পুনর্নির্বাচিত হবার স্বপ্ন খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি। গান্ধীজি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি মাওলানা আজাদের দ্বিতীয় মেয়াদে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট হওয়া সমর্থন করেন না। এ কথা শুনে, অনিচ্ছাসত্ত্বেও, মাওলানা আজাদকে তা মেনে নিতে হয়েছিল। এদিকে গান্ধীজি আরেকটি ব্যাপারও তখনই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট পদে তার পছন্দের ব্যক্তি নেহেরু।

কংগ্রেসের নতুন প্রেসিডেন্ট তথা ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী মনোনয়নের শেষ দিন ধার্য হয়েছিল ১৯৪৬ সালের ২৯ এপ্রিল। মনোনয়নে অংশ নেয়ার কথা ছিল ১৫ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির (পিসিসি)। সেখানে দেখা গিয়েছিল, নেহেরুর প্রতি গান্ধীজির সমর্থন থাকলেও, একটি কংগ্রেস কমিটির পক্ষ থেকেও নেহেরুর নাম মনোনীত হয়নি।

অপরদিকে, ১৫টির মধ্যে ১২টি কংগ্রেস কমিটিই মনোনীত করেছিল সরদার প্যাটেলকে। বাকি তিনটি কংগ্রেস কমিটি কারো নামই দেয়নি। সুতরাং, তর্কাতীতভাবেই দলের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন ছিল সরদার প্যাটেলের পক্ষে।

এদিকে গান্ধীজির জন্য গোটা পরিস্থিতিই হয়ে উঠেছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। তিনি খুব ভালো করেই জানতেন, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির (সিডব্লিউসি) সদস্যদের কোনো অধিকারই নেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের প্রার্থী মনোনয়নের। তারপরও তিনি আচার্য জে বি কৃপালনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ওয়ার্কিং কমিটি থেকে নেহেরুর জন্য কতিপয় সমর্থকগোষ্ঠী নিয়ে আসার। আর কৃপালনীও গান্ধীজির বাধ্য অনুসারীর মতো ওয়ার্কিং কমিটির কয়েকজন সদস্যকে রাজি করিয়ে ফেলেছিলেন যেন তারা প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নেহেরুর নাম প্রস্তাব করেন।

দলীয় বিধি মোতাবেক কাজটি ছিল নীতিবিরুদ্ধ। তারপরও গান্ধীজি তা করেছিলেন। তবে তিনি তখন তলে তলে নেহেরুকেও প্রকৃত বাস্তবতা বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, কোনো পিসিসিই তাকে (নেহেরুকে) মনোনীত করেনি, এবং সিডব্লিউসিরও হাতেগোনা অল্প কয়েকজন সদস্য তাকে মনোনীত করেছেন। তবে গান্ধীজির এসব কথা শুনেও নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকেছিলেন নেহেরু, জানিয়েছিলেন তিনি অন্য কারো অধীনে কাজ করবেন না।

শেষ পর্যন্ত নেহেরুর একগুঁয়েমিতে হার মেনেছিলেন গান্ধীজি। নেহেরুকে আর কিছু না বলে, তিনি বরং সরদার প্যাটেলকে বলেছিলেন নাম প্রত্যাহার করে নিতে। সরদার প্যাটেল গান্ধীজিকে প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করতেন। তাই গান্ধীজির কথা মনঃপুত না হলেও, তিনি কোনো আপত্তি ছাড়াই সে কথা মেনে নিয়েছিলেন। আর এভাবেই পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর জন্য পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ।

সরদার প্যাটেল ও নেহেরু; Image Source: Getty Images

আর এখানেই থেকে যায় বিশাল বড় খটকা। কেন গান্ধীজি সরদার প্যাটেল পন্থী বিপুল সমর্থকগোষ্ঠীকে অগ্রাহ্য করেছিলেন? কেনই বা তিনি নেহেরুর প্রতি এত বেশি স্নেহশীল ছিলেন?

তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই অস্বাভাবিকতা সকলের কাছেই দৃষ্টিকটু লেগেছিল। যেমন সরদার প্যাটেলের নাম প্রত্যাহারের খবর শুনে ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ খুবই হতাশ হয়ে বলেছিলেন,

“আরো একবার গান্ধীজি তার আস্থাভাজন সেনানীকে বিসর্জন দিলেন ‘গ্ল্যামারাস নেহেরু’-র জন্য।”

তবে কি নেহেরুর গ্ল্যামারেই কুপোপাত হয়েছিলেন গান্ধীজি, যে কারণে সরদার প্যাটেলের প্রতি অন্যায় আচরণ করতেও তিনি কুণ্ঠাবোধ করেননি?

এ প্রশ্নের উত্তর খুব সহজে দেয়ার মতো নয়। তবে আমরা যদি গোটা বিষয়টিকে একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করি, তাহলে কিছু বিষয় খানিকটা হলেও স্পষ্ট হয়ে উঠবে, যা বিদ্যমান রহস্যের জট ছাড়াতে সহায়ক হতে পারে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নেহেরুর প্রতি গান্ধীজির সেই শুরু থেকেই এক প্রকার দুর্বলতা ছিল। তাই শুধু ১৯৪৬ সালেই নয়, এর আগেও অন্তত দুইবার তিনি নেহেরুর জন্য সরদার প্যাটেলকে বঞ্চিত করেছিলেন। সে দুইটি ঘটনা ঘটেছিল ১৯২৯ ও ১৯৩৭ সালে। মূলত এ কারণেই ডঃ প্রসাদ “আরো একবার” শব্দযুগল ব্যবহার করেছিলেন।

নেহেরুর প্রতি গান্ধীজির চিরন্তন মুগ্ধতার কারণ নেহেরুর আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি। সে তুলনায় সরদার প্যাটেলকে কিছুটা গোঁড়াই বলা যেত। তাই গান্ধীজি ভাবতেন, ভারতের নেতৃত্বে নেহেরুর মতো কোনো আধুনিকমনস্ক ব্যক্তিকেই প্রয়োজন।

তাছাড়া গান্ধীজি এ কথাও জানতেন যে সরদার প্যাটেল কখনোই তার অবাধ্য হবেন না বা তার সাথে দ্বন্দ্বে জড়াবেন না। নেহেরুর ব্যাপারে তিনি এতটা নিশ্চিত কখনোই ছিলেন না। নেহেরু বিদ্রোহী হয়ে উঠবেন, এ আশঙ্কা তিনি সবসময়ই করতেন, এবং তা আরো জোরদার হয়ে উঠেছিল যখন নেহেরু সরাসরি বলে দিয়েছিলেন তিনি কারো অধীনস্থ থাকতে পারবেন না।

নেহেরু ছিলেন নেতা হিসেবে গ্ল্যামারাস; Image Source: The Economic Times

ধারণা করা যেতে পারে, গান্ধীজি নেহেরু ও সরদার প্যাটেল উভয়কেই ভারতের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে দেখতে চাইতেন। তাই তার মনে হয়েছিল, নেহেরুকে প্রধানমন্ত্রী হতে দিলেই বোধহয় সব দিক থেকে মঙ্গল। কেননা একবার যদি নেহেরু বেঁকে বসতেন, তা দেখে ব্রিটিশরাও হয়তো একটি নতুন ছুতো পেয়ে যেত যথাসময়ে ভারতকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার।

কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এ দাবিও করে থাকেন যে নেহেরু নাকি গান্ধীজিকে হুমকি দিয়েছিলেন, তাকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দিলে তিনি দলছুট হবেন, কংগ্রেসে ভাঙন ধরাবেন। এই শ্রেণীর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নেহেরু সম্ভবত গান্ধীজিকে বলেছিলেন যে একবার তিনি যদি কংগ্রেসের একতায় চিড় ধরান, তাহলে ব্রিটিশরা আর কখনোই রাজি হবে না এমন দ্বিখণ্ডিত কংগ্রেসের হাতে ভারতের স্বাধীনতা তুলে দিতে।

সুতরাং গান্ধীজি কেন সরদার প্যাটেলের বদলে নেহেরুকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করেছিলেন, এর পেছনে আমরা প্রধান দুইটি কারণ দাঁড় করাতে পারি। প্রথমত, গান্ধীজি বিশ্বাস করতেন বিদেশী শিক্ষায় শিক্ষিত নেহেরু নেতৃত্বগুণে গোঁড়া-রক্ষণশীল সরদার প্যাটেলের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। দ্বিতীয়ত, গান্ধীজি ক্ষমতালিপ্সু নেহেরুকে ভয় পেতে শুরু করেছিলেন। তিনি জানতেন সরদার প্যাটেলের তরফ থেকে কোনো ভয় নেই, তাই নেহেরুকে হাতে রাখার মাধ্যমেই তিনি ব্রিটিশদের কাছ থেকে ভারতের স্বাধীনতা লাভ নিশ্চিত ও নির্বিঘ্ন করতে চাইছিলেন।

এদিকে মাওলানা আজাদও সে সময় নেহেরুর প্রতি সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ১৯৪৬ সালের ২৬ এপ্রিল, অর্থাৎ মনোনয়নের জন্য নির্ধারিত সর্বশেষ তারিখের তিনদিন আগে, তিনি একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন, যেখানে লিখেছিলেন:

“সকল সুবিধা-অসুবিধা বিচার করে আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরদার প্যাটেলকে নির্বাচিত করা কাম্য হবে না। সবকিছু বিবেচনাপূর্বক আমার কাছে মনে হচ্ছে জওহরলালেরই নতুন প্রেসিডেন্ট হওয়া উচিৎ।”

কিন্তু গান্ধী, এবং মাওলানা আজাদের, এই সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে গোটা জাতির জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একে তো এটি দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের যে চর্চা তাকে গলা টিপে মেরেছিল, তার উপর কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেহেরুর গৃহীত পদক্ষেপগুলোও ছিল দেশের জন্য ক্ষতিকর। প্রথমেই তিনি দেশভাগের সিদ্ধান্তে হ্যাঁ বলেছিলেন। তারপর কাশ্মীর ও চীন ইস্যুতে তার অবস্থানও সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিল।

তাই যে মাওলানা আজাদ ১৯৪৬ সালে নেহেরুকে সমর্থন করেছিলেন, তিনিও পরবর্তীতে তার আত্মজীবনীতে লিখতে বাধ্য হয়েছিলেন,

“এটি আমার তরফ থেকে একটি ভুল ছিল যে আমি সরদার প্যাটেলকে সমর্থন করিনি। আমাদের হয়তো বিভিন্ন প্রসঙ্গে মতপার্থক্য রয়েছে, তবে আমি নিশ্চিত যে আমার পরে তিনি যদি কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট হতেন, তাহলে তিনি মন্ত্রী মিশন পরিকল্পনার সফল প্রয়োগ ঘটাতে পারতেন। তিনি কখনোই ওই ধরনের ভুল করতেন না, যা জওহরলাল করেছিলেন, ফলে জিন্নাহ পরিকল্পনাটি বানচালের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন। আমি কখনোই নিজেকে ক্ষমা করতে পারি না, যখন আমি চিন্তা করি যে আমি এই ভুলটি না করলে সম্ভবত গত দশ বছরের ইতিহাস ভিন্নভাবে রচিত হতো।”

সরদার প্যাটেল প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতের ইতিহাস হয়তো অন্যরকম হতো; Image Source: Express photo by Bhupendra Rana

এদিকে চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী, যিনি ইতঃপূর্বে সরদার প্যাটেলকে দায়ী করেছিলেন তার স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রেসিডেন্ট হতে না পারার জন্য, তিনিও লিখেছিলেন:

“নিঃসন্দেহে এটি অনেক বেশি ভালো হতো যদি নেহেরুকে বিদেশমন্ত্রী হতে বলা হতো, এবং প্যাটেলকেই প্রধানমন্ত্রী বানানো হতো। আমিও ভুলের ফাঁদে পড়ে ভেবেছিলাম জওহরলালই ওই দুজন ব্যক্তির মধ্যে বেশি আলোকিত… একটি মিথ গড়ে উঠেছিল যে প্যাটেল মুসলিমদের প্রতি সদয় হবেন না। এটি ছিল একদমই ভুল, যদিও তখন আমাদের পূর্বধারণা থেকে এমনটিই মনে হয়েছিল।”

অবশ্য এ আলোচনায় সরদার প্যাটেলের দিকে আঙুল তোলারও যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। প্রশ্ন জাগতেই পারে মনে, তিনি কার প্রতি অনুগত ছিলেন? কোনো ব্যক্তিবিশেষের প্রতি, কোনো সংগঠনের প্রতি, নাকি তার মাতৃভূমির প্রতি? যদি তিনি বুঝে থাকতেন যে নেহেরুর পক্ষে প্রধানমন্ত্রিত্ব সঠিকভাবে পরিচালনা সম্ভব নয়, তাহলে কেন তিনি গান্ধীজির মুখের উপর কিছু বলেননি, কেন নিজের মতামত জোর গলায় পেশ করেননি?

অনেক বিশেষজ্ঞই আজ মনে করেন, নেহেরুর জায়গায় সরদার প্যাটেল ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলে অনেক হিসাব-নিকাশই পাল্টে যেত। হয়তো ভারতকে ১৯৬২ সালের যুদ্ধে চরম লজ্জার সম্মুখীন হতে হতো না। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও সরদার প্যাটেল নেহেরুকে চিঠি লিখে চীনের ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছিলেন, কিন্তু নেহেরু তার সাবধান বাণীতে কর্ণপাত করেননি। তাছাড়া আজ জনপ্রিয় অভিমত এ-ও যে, নেহেরুর বদলে সরদার প্যাটেল ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলে কাশ্মীর ভারতের গলার কাঁটা হয়ে উঠত না।

ভারতীয় রাজনীতি সম্বন্ধে আরো জানতে পড়ুন এই বইটি- ইন্দিরা (দ্য লাইফ অব ইন্দিরা নেহেরু গান্ধী)। অনলাইনে কিনতে ক্লিক করুন নিচের লিংকে- 

https://rb.gy/cv8wdw

This article is in Bengali language. It discusses why Mahatma Gandhi elected Nehru over Sardar Patel as the first Prime Minister of India. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © Scroll.in

Related Articles