Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অপারেশন সালদা নদী

অক্টোবর, ১৯৭১; আট মাস ধরে দেশে যুদ্ধ চলছে। দেশের ভেতরে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। সীমান্তে পাকবাহিনী নিয়মিত বড় আক্রমণের সম্মুখীন হচ্ছে। নৌ-কমান্ডোদের অপারেশনে উপকূলেও দিশেহারা পাকবাহিনী। এবার আস্তে আস্তে তাদের ঝেটিয়ে বিদায় করার সময়!

বৃহত্তর ঢাকা, কুমিল্লার কিছু অংশ, ফরিদপুরের পূর্বাঞ্চল ও নোয়াখালীর অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত হয়েছিল ২ নং সেক্টর। এই সেক্টরে প্রথমে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর খালেদ মোশাররফ (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল, বীর উত্তম)।

মেজর খালেদ মোশাররফ (পরে মেজর জেনারেল, বীর উত্তম)

 

অন্যান্য সেক্টরের সাথে এই সেক্টরের কিছু ভিন্নতা ছিল। এলাকা, সেনা এবং অফিসারের সংখ্যা, গেরিলা অ্যাকশন- সব দিক থেকেই এই সেক্টর ছিল অপেক্ষাকৃত বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং মহাসড়ক ছিল এই সেক্টরে। দেশের তিন প্রধান নদী- পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা এই সেক্টর এলাকার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ভারতের আগরতলা রাজ্যের মেলাঘরে এই সেক্টরের সদর দপ্তর। ৩৫ হাজার গেরিলা যোদ্ধা ছিল এবং ইস্ট বেঙ্গল, ইপিআর ইত্যাদি নিয়মিত বাহিনীর অন্তত ৮,০০০ সুপ্রশিক্ষিত সেনা ছিল এই সেক্টরে।

অক্টোবর থেকে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে গঠিত মুক্তিবাহিনীর সামরিক ব্রিগেড কে-ফোর্স গড়ে ওঠে। ব্রিগেডটি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অধীনে গঠিত নিয়মিত বাহিনী হিসেবে কাজ করত। এটি গঠিত হয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৪, ৯ এবং ১০ ব্যাটালিয়ন দ্বারা। সাপোর্ট হিসেবে ছিল ১ ফিল্ড আর্টিলারি ব্যাটারি। খালেদ মোশাররফের নামের প্রথম অক্ষর অনুসারে দুর্ধর্ষ এই ব্রিগেড কে-ফোর্স নামে পরিচিত।

দুই নম্বর সেক্টর ছ’টি সাব-সেক্টরে বিভক্ত। সালদা নদী, নয়নপুর, বুড়িচং, দেবীদ্বার, ব্রাহ্মণপাড়া এলাকাগুলো নিয়ে সালদা নদী সাব-সেক্টর। বাংলাদেশের মানচিত্র পূর্বে যেখানে ভারতের ত্রিপুরা এলাকা ভেতরের দিকে ঢুকে গেছে, সেই বাঁকে কুমিল্লা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মিলনস্থলে সালদা নদী সাব-সেক্টর। কসবা থেকে সোজা দক্ষিণে বায়েক (বায়েক ইউনিয়ন)। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি কোম্পানি অবস্থান নিয়েছে। বায়েকের দক্ষিণে পাকবাহিনীর সালদা নদী ঘাঁটি। সালদা রেলওয়ে স্টেশন এবং আশপাশের এলাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্টেশনের সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেটের রেল যোগাযোগ আছে। চট্টগ্রাম থেকে সিলেটের দিকে রেল যোগাযোগের অন্যতম পথও এটি।

সালদা নদী সাব সেক্টর; Image Credit: ১৯৭১: ফ্রন্টলাইনের সেরা অপারেশন

 

যুদ্ধের শুরু থেকেই দফায় দফায় লড়াই হয়েছে এখানে। তবে পাকবাহিনীকে কোনোভাবেই নিউট্রালাইজ (নিস্ক্রিয়) করা যাচ্ছে না। এই সাব-সেক্টরে তারা প্রচুর বাংকার নির্মাণ করেছিল। সীমান্তের কাছাকাছি এই বাংকারগুলোতে দিনে অবস্থান করলেও প্রায়ই রাতে বাংকার ফেলে মূল ঘাঁটিতে অবস্থান নিত শত্রু সেনারা। আর রাতের বেলা প্রায়ই সীমান্ত পেরিয়ে গেরিলারা অতর্কিত হামলা চালাত। এভাবে শত্রুকে চাপে রাখা গেলেও সমূলে উৎপাটন করা যাচ্ছিল না। 

১৯ জুলাই ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের এক কোম্পানি সৈন্য সালদা নদী দিয়ে নৌকায় করে মন্দভাগ এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুল গাফফার হালদারের (পরবর্তীতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল এবং বীর উত্তম) নেতৃত্বে মন্দভাগ সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা ফাঁদ পাতে।

ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুল গাফফার হালদারের (পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল এবং বীর উত্তম); Image credit: প্রথম আলো

 

সুবেদার আব্দুল ওহাব এই খবর পেয়েছিলেন। তিনি সাথে সাথেই ক্যাপ্টেন গাফফারের কাছে অ্যামবুশ করার অনুমতি চান। অনুমতি পাবার পর সুবেদার ওহাবের (বীর বিক্রম) নেতৃত্বে মন্দভাগ সাব-সেক্টরের মুক্তিবাহিনীর একটা প্লাটুন মন্দভাগ বাজারের কাছে শত্রুদের এই ফরওয়ার্ড পার্টি বা অগ্রবর্তী দলটির ওপর অ্যামবুশ করে। নদীর তীর থেকে চালানো এই অ্যামবুশে অন্তত ৬০-৭০ জন পাক সেনা হতাহত হয়। অনেকেই নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ হারায়। ৪ বেঙ্গল রেজিমেন্টের অ্যামবুশে ৩১ বেলুচ রেজিমেন্টের অধিনায়ক কর্নেল কাইয়ুম, ৫৩ গোলন্দাজ বাহিনীর কুখ্যাত অফিসার ক্যাপ্টেন বোখারী, আরো তিন-চারজন অফিসার এবং ৮-১০ জন জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (JCO) প্রাণ হারায়। ২৫ মার্চ রাতে কুমিল্লা শহরে বর্বর গণহত্যাসহ বেশ কিছু গণহত্যা চালায় এই ক্যাপ্টেন বোখারী। মার খেয়েই সালদা নদী এলাকায় ঘাঁটি বানিয়ে পুরো দখল নেয় পাকবাহিনী। ট্রেঞ্চ, বাংকার খুঁড়ে নিজেদের অবস্থান মজবুত করে।

পাকবাহিনীর ৩১ বালুচ রেজিমেন্ট, রাজাকার, আধাসামরিক বাহিনীসহসহ প্রায় এক ব্রিগেড সৈন্য কুটি ও কসবা এলাকায় শক্ত ঘাঁটি বানিয়ে পজিশন নেয়। প্রতিটি ঘাঁটিতে ব্যাপক অস্ত্র এবং কয়েক সপ্তাহের খাবার মজুদ রেখেছিল তারা। সালদা নদীর দক্ষিণে নয়নপুরে পজিশন নেয় পাকবাহিনীর ৩০ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। এই শক্তিশালী ঘাঁটির উত্তরে সালদা নদী। ফলে নদীর দিক থেকে তেমন আক্রমণ আসার সম্ভাবনা নেই এবং এই জায়গা তাদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। পূর্ব দিকে রেলওয়ে স্টেশন ও উঁচু রেললাইন পাকবাহিনীর পজিশন নেয়ার জন্যে চমৎকার আড়াল তৈরি করেছে। এদিক থেকেও হামলা হলে রেললাইনে প্রতিরক্ষা লাইন বানিয়ে হামলা ঠেকিয়ে দেয়া যাবে। পশ্চিমের গুদামঘর সেদিকেও নিরাপত্তার জন্যে বাড়তি সুবিধা এনে দিয়েছে।

পাকসেনাদের পজিশনের একদিক খোলা মাত্র, বাকি তিনদিক বাধা আছে যা সেসব দিক থেকে হামলাকে খুব কঠিন করে তুলেছে। শত্রুঘাঁটির এমন বৈশিষ্ট্যের জন্য স্বাভাবিক যুদ্ধরীতিতে কুলিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। এছাড়াও মূল ঘাঁটির পাশে বোরধুসিয়া, চাঁদলো, সাহেব বাড়ি, গোবিন্দপুর এবং কায়ামপুরে ছোট ছোট ঘাঁটি করেছে পাকবাহিনী।

সালদা ঘাঁটির ম্যাপ; Image credit: ১৯৭১: ফ্রন্টলাইনের সেরা অপারেশন

সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ করেও সফল হওয়া যায়নি। সেদিন ক্যাপ্টেন মাহবুবের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল পাকসেনাদের ঘাঁটির কংসুলা এবং নয়নপুরে একসাথে হামলা করে। ক্যাপ্টেন পাশার আর্টিলারি সাপোর্ট নিয়ে একদল মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আশরাফের দল এগিয়ে যায়। পাকবাহিনী নয়নপুর ছেড়ে সালদা নদী রেলওয়ে স্টেশনের মূল ঘাঁটিতে আশ্রয় নেয়। পরে ক্যাপ্টেন গাফফারের দল এসে রিইনফোর্সমেন্ট বা শক্তিবৃদ্ধি করে। একই সময়ে মেজর সালেকের (বীর উত্তম) বাহিনী সালদা নদী আক্রমণ করে। অন্যান্য স্থান থেকে পাকবাহিনী এখানে জমায়েত হলে তাদের সাথে সালেকের বাহিনী পেরে উঠছিল না। সালেকের বাহিনীর গোলাবারুদ কমে গেলে উত্তরে মন্দভাগ চলে আসেন। আস্তে আস্তে মুক্তিবাহিনী নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় এবং সালদা ঘাঁটির পতন সম্ভব হয় না। তবে শত্রুর ব্যাপক ক্ষতি হয় সেদিন। 

মেজর খালেদ মোশাররফ নতুন করে আক্রমণের চিন্তা করলেন। দায়িত্ব দিলেন ক্যাপ্টেন গাফফারকে।

মেজর আবদুস সালেক চৌধুরী; Image Credit: Khaled’s war

যুদ্ধের পরিকল্পনা

শক্রবাহিনীর খবর নিতে মুক্তিবাহিনীর গোয়েন্দারা খোঁজখবর নিতে শুরু করে। তারা জানাল, সালদা নদীর তীর বরাবর বড় চারটা বাংকার খনন করা হয়েছে। গুদামঘরের পাশ দিয়েও এরকম বাংকার আছে। রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখলেন ক্যাপ্টেন গাফফার। শক্রর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশ মজবুত। এখানে অনিয়মিত যুদ্ধের জটিল কৌশল খাটাতে হবে। দাবার ছকের মতো আক্রমণের পরিকল্পনা মাথায় সাজালেন তিনি।

সালদা হামলার সেনা বিন্যাস:

১) নায়েব সুবেদার সিরাজের নেতৃত্বে এক প্লাটুন সৈন্য সালদা নদী রেলওয়ে স্টেশনের পূর্বে টিলা এলাকায় অবস্থান নেবে।
২) সুবেদার মঙ্গল মিয়া এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে সালদা নদীসংলগ্ন গোডাউনের কাছে অবস্থান নেবে।
৩) সুবেদার বেলায়েত এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে পাক ঘাঁটির বিপরীতে নদীর অপর পাড়ে থাকবে।
৪) শক্রপক্ষ যাতে ঘুরে পেছন থেকে আক্রমণ করতে না পারে সেজন্য সুবেদার ওহাবের নেতৃত্বে এক কোম্পানি সৈন্য সুবেদার মঙ্গল মিয়ার পেছনে অবস্থান নিয়ে থাকবে।

তিনদিক থেকে  আক্রমণ হবে। ক্যাপ্টেন গাফফার এবার পাকবাহিনীকে ধরাশায়ী করার জন্যে একটু অন্যরকম পরিকল্পনা করেন। এই এলাকায় মুক্তি এবং পাকবাহিনীর Fighting Patrol Party-গুলোর (মূল প্রতিরক্ষার একটু সামনে বা শত্রুর নিয়ন্ত্রিত এলাকার কাছে গিয়ে টহল দেয় যে দল, শত্রু অগ্রসর হলে এরা মূল বাহিনীকে জানাতে পারে। প্রয়োজনে ফায়ার করে শত্রুর গতিকেও সাময়িকভাবে কমিয়ে দিতে পারে) মধ্যে নিয়মিত গোলাগুলি হতো। মূল ঘাঁটি আক্রমণের আগে আশেপাশে ছোট এক বা একাধিক হামলা করে পাকবাহিনীর মনোযোগ সেদিকে সরিয়ে নিতে হবে। সামরিক পরিভাষায় এ ধরনের হামলার নাম Diversionary Attack।

৭ অক্টোবর তিনি চারটি Raiding Party (যে বাহিনী হামলা করে ফিরে আসে, ভূমি/শত্রু ঘাঁটি দখল করে না) পাঠালেন বোরধুসিয়া, চাঁদলো, সাহেব বাড়ি, গোবিন্দপুর এবং কায়ামপুরে শত্রপক্ষের ঘাঁটিতে হামলা করতে। সারা রাত রেইডিং পার্টি ব্যস্ত রাখল শত্রুদের। এদিকে রেইডিং পার্টিগুলোর ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে পাকবাহিনী। তা-ও তারা মাটি কামড়ে পড়ে থাকে। সালদা থেকে ওই ঘাঁটিগুলোতে রসদ সরবরাহ করা হতে থাকে। শক্রদের পুরো দৃষ্টি চলে গেল এ ঘাঁটিগুলোর দিকে। এতে শত্রুদের পেট্রল পার্টির আনাগোনা কমে গেল। ক্যাপ্টেন গাফফার এটাই চাইছিলেন। এই সুযোগে সুবেদার সিরাজ, সুবেদার মঙ্গল, বেলায়েত এবং সুবেদার ওহাব তাদের প্লাটুন নিয়ে মূল ঘাঁটির কাছে পজিশন নেন। 

রাতভর গোলাবর্ষণের পর শক্রপক্ষ ক্লান্ত। ভোরের দিকে পাক আর্মি বিশ্রামে যায়। আধা-সামরিক ইপিসিএফ এবং রাজাকারদের হাতে পাহারার দায়িত্ব দেয় তারা। আঘাত হানার মোক্ষম সময় এটাই।

 সালদায় মুক্তিবাহিনী (একাত্তরের কোনো একসময় তোলা) Photo credit: moddb.com

৮ অক্টোবর, সকাল ৮টা; সুবেদার মঙ্গল মিয়া গোডাউনের কাছের পজিশন থেকে পাকবাহিনীর বাংকারগুলোর ওপর একযোগে ফায়ার শুরু করেন। বাকি সব অবস্থান থেকেও মুক্তিযোদ্ধারা হামলা শুরু করলেন। সুবেদার বেলায়েতের টার্গেট নদীর উল্টোদিকের চারটি বাংকার। ক্যাপ্টেন গাফফার আগেই নির্দেশ দিয়েছেন এই বাংকারগুলো দ্রুত ধ্বংস করতে। এগুলো ধ্বংস করতে পারলেই শত্রুপক্ষকে পিছু হটান যাবে। অন্যদিকে, সুবেদার সিরাজ টিলার ওপর থেকে একটানা গোলাবর্ষণ করছেন। পাকসেনারাও সমানে জবাব দিচ্ছে। তাদের হাতে আধুনিক অস্ত্র এবং প্রচুর গোলাবারুদ। বৃষ্টির মতো গুলি ছুটে যাচ্ছে, কিন্তু কেউই তেমন সাফল্য পাচ্ছে না। এমন সময় শক্রদের ওপর মরণকামড় বসালেন নায়েক সুবেদার মোহাম্মদ হোসেন।

তার কাছে ছিল রিকয়েললেস গান। পরপর দুটি ফায়ার করলেন তিনি। নির্ভুল লক্ষ্যে দুটো বাংকার নষ্ট হয়ে গেল। পাকসেনারা এগুলো ছেড়ে পালিয়ে গেল অন্য দুই বাংকারে। সুবেদার বেলায়েত এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন। কভার ফায়ারের আড়ালে সঙ্গীদেরসহ নদী সাঁতরে অবস্থান নিলেন পরিত্যক্ত বাংকার দুটোতে। এতে পাকসেনারা কার্যত দু’ভাগে ভাগ হয়ে গেল। সালদা নদী রেল-স্টেশনের সৈন্যদের সঙ্গে গোডাউনের সৈন্যদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। এছাড়াও আরেক বিপদে পড়ে পাকবাহিনী। মুক্তিযোদ্ধাদের এই অবস্থানের ওপর কামানের গোলা ফেলা আর সম্ভব হচ্ছে না। কারণ গোলা নিক্ষেপ করলে নিজেদেরও ক্ষতি হবে। দু’পক্ষের এরকম কাছাকাছি অবস্থানকে বলা হয় Danger Close।

গোডাউনের পাশে অবস্থানরত পাকসেনারা সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় পড়ল। তাদের দুদিক থেকে ঘিরে ধরা হয়েছে। মূল দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা। এভাবে টিকে থাকা সম্ভব নয়। এ অবস্থান থেকে পাকসেনারা পালিয়ে নয়নপুর রেলওয়ে স্টেশনে তাদের অন্য ঘাঁটিতে যাওয়া শুরু করল। সুবেদার মঙ্গল মিয়া গোডাউন দখল করে নেন।

সকাল ১১টা।

পাকবাহিনীর এক রেডিও মেসেজ ইন্টারসেপ্ট করে মুক্তিবাহিনী। সেখানে শত্রুরা বলেছিল, 

মুক্তিবাহিনীর এক ব্যাটালিয়ন আক্রমণ করেছে। এই মুহূর্তে আর টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।

যোদ্ধাদের মনোবল বহুগুণ বেড়ে গেল। শত্রুর মনোবল ভেঙে পড়েছে, তাই এই ঘাঁটির দখল নিতে সুবিধা হবে। ক্যাপ্টেন গাফফারের নির্দেশে মুক্তিবাহিনী এবার সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে। সালদা নদী রেল-স্টেশনের অবস্থান থেকে পাকসেনারা পিছিয়ে রেললাইন বরাবর বাংকারগুলো দিয়ে লুকিয়ে নয়নপুরের দিকে যেতে থাকল। ক্যাপ্টেন গাফফার তার দলসহ পিছ দিয়ে শত্রুদের ফেলে যাওয়া বাংকারে পজিশন নেয়। পালিয়ে গেল পাকসেনারা।

নয়নপুর ঘাঁটি থেকে বৃষ্টির মতো মর্টার আর গোলা ছুড়তে থাকে পাকসেনারা। মুক্তিযোদ্ধারা ততক্ষণে সালদা নদী ঘাঁটিতে অবস্থান শক্ত করেছেন। ভোর পাঁচটায় অবস্থান নেয়া থেকে রাত প্রায় দশটা পর্যন্ত একটানা লড়াইয়ের পর বিজয়ী হলো মুক্তিযোদ্ধারা। অনেক চেষ্টা করেও সেদিন এই ঘাঁটি আর কব্জা করতে পারল না শক্রপক্ষ।

এই ঘাঁটি দখল করার পর মুক্তিযোদ্ধারা ২১টি রাইফেল, ১টি মেশিনগান, ২০০ বোমা, গোলাবারুদ, ওয়্যারলেস সেট দখল করল। আরও পেল গুরুত্বপূর্ণ কিছু ম্যাপ, দলিলপত্র। শত্রুপক্ষের অন্তত ২৭ জন সৈন্য নিহত হয়। ২ জন জীবিত ধরা পড়ে।

This article is in Bangla language. As Bangladesh freedom fighters tried to outrun enemy from the border area and made their way to Dhaka during 1971 war, Salda, a very strategic postion in B.Baria set as a priority target. Sector 2 launched a planned an assualt to pushback enemies from that area.

  1. ১. ১৯৭১: ফ্রন্টলাইনের সেরা অপারশেন, সারতাজ আলীম (একই লেখকের বইয়ের অংশবিশেষের পরিমার্জিত সংস্করণ)
  2. মুক্তিযুদ্ধের সামরিক অভিযান (২)। সামরিক বাহিনী কর্তৃক সংগৃহীত সম্মুখযুদ্ধের তথ্যবিবরণী
  3. মুক্তিযুদ্ধের দুশো রণাঙ্গন–মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত।
  4. কে ফোর্স এস ফোর্স জেড ফোর্স- মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি
  5. স্বাধীনতা যুদ্ধে একটি পদাতিক প্লাটুনের অভিযান। মেজর জেনারেল আমীন আহম্মদ চৌধুরী, বীর বিক্রম
  6. মুক্তিযুদ্ধের সেরা লড়াই-সেজান মাহমুদ
  7. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস ১২ - গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
  8. এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম – লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী

Feature Image: Daily Ittedfaq

 

Related Articles