বিভিন্ন প্রবাদ, রুপকথা বা উপকথার গল্পে বনের রাজা সিংহ হলেও, বনের পণ্ডিত বলা হয়ে থাকে শিয়ালকে। এসব গল্পে বনের কোনো সংকটময় অবস্থায় বুদ্ধি চাওয়া হতো শিয়ালের কাছে। শিয়ালের চাতুর্যের জন্যই তাকে পণ্ডিত মনে করতো বনের অন্যান্য প্রাণী। অন্যদিকে বীর যোদ্ধা শের-ই-মহীশুর বা মহীশুরের বাঘ উপাধিপ্রাপ্ত টিপু সুলতানের কথিত একটি উক্তি হচ্ছে,
শিয়ালের মতো ১০০ বছর বাঁচার চাইতে সিংহের মতো একদিন বেঁচে থাকাও অধিক সম্মানজনক।
বোঝাই যাচ্ছে, ব্রিটিশদের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা টিপু সুলতানের মন জয় করতে পারেনি শিয়াল পণ্ডিত। কিন্তু এই পাতিশিয়ালই বর্তমানে সংখ্যাগত দিক দিয়ে ধীরে ধীরে ইউরোপ দখল করে ফেলছে।
শিয়াল বাংলাদেশে পাতিশিয়াল (ইংরেজিতে Golden Jackal) নামেই বেশি পরিচিত। অনেক রাত জেগে থাকলেও এখন আর শিয়ালের হুক্কা হুয়া ডাক শোনা যায় না। বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশের পাতিশিয়াল ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে থাকলেও তাদের জনসংখ্যা বিস্ফোরণ হচ্ছে ইউরোপে! আজকের পুরো লেখায় শিয়াল বলতে পাতিশিয়ালকেই বোঝানো হয়েছে।
১.
একশ থেকে দেড়শ বছর আগেও ইউরোপিয়ান অঞ্চলে কালেভদ্রে দুই-একটা শিয়ালের দেখা পাওয়া যেত। আর এখন শিয়ালের সংখ্যা পুরো ইউরোপেই এমনভাবে বেড়ে চলেছে যে, পরিবেশ বিজ্ঞানীদের টনক নড়েছে। তারা শিয়ালের ব্যাপক বিস্তারের কারণ তদন্ত করার পাশাপাশি এর ফলে পরিবেশগত কী কী প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়েও গবেষণা করতে শুরু করেছেন।
স্লোভেনিয়ার পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলে, ট্রায়েস্তি পাহাড়ের উপর এখন প্রায়শই শিয়ালের ডাক শোনা যায়। ইউনিভার্সিটি অফ লুবিয়ানার জীববিজ্ঞানী মিহা ক্রোফেল এখানে শিয়ালের উপর গবেষণা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্রোফেলের সাথে এই গবেষণার কাজটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন হার্ভার্ডের একজন ডক্টরাল ছাত্র নাথান র্যাঞ্চ। তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছে ইতালির এডমুন্ড ফাউন্ডেশন।
ইউরোপে দিনকে দিন ইউরোপিয়ান নেকড়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে আর পাল্লা দিয়ে বেড়েই যাচ্ছে শিয়ালের সংখ্যা। সাম্প্রতিক হিসেব অনুসারে, ইউরোপে এখন শিয়ালের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার। অন্যদিকে ইউরোপিয়ান নেকড়ের সংখ্যা মাত্র ১৭ হাজার। শুধুমাত্র স্লোভেনিয়াতেই শিয়ালের সংখ্যা প্রায় ৪০০। এর বিপরীতে নেকড়ের সংখ্যা মাত্র ৭৫!
শিয়ালের এই ব্যাপক বংশবিস্তারের কারণে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে ভেড়া পালকরা। যেভাবে দিনকে দিন শিয়ালের সংখ্যা বেড়ে চলছে, এই হঠাৎ বাড়তে থাকা শিয়ালের সাথে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কীভাবে মানিয়ে নেবে সেটিই এখন প্রধান ভাবনার বিষয়।
২.
দক্ষিণ আমেরিকার কোয়টের চাইতে আকারে ছোট পাতিশিয়ালের ওজন গড়ে ২০ পাউন্ড। পাতিশিয়াল মূলত মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশীয় শিয়ালের একটি প্রজাতি। এদের প্রধান বিচরণ ছিল থাইল্যান্ড, ইরাক, ইরান, পাকিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশে।
শিয়ালের ফসিল থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, এরা ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলে এসেছিল আজ থেকে প্রায় ৮ হাজার বছর আগে। এখানে এদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে উনিশ শতক থেকে। কিন্তু বর্তমানে তাদের বংশবৃদ্ধির যে বিস্ফোরণ শুরু হয়েছে, তা ১৯৫০ এর পর সবচাইতে বেশি ত্বরান্বিত হয়েছে গত বিশ বছর ধরে।
শিকারি শ্বাদন্ত (কুকুর প্রজাতি) প্রাণীদের মধ্যে শিয়ালের উপরে বৈজ্ঞানিক গবেষণার হার সবচাইতে কম। কুকুর ও নেকড়ের মতো শিয়ালরাও পরিবারভিত্তিক বা দলবদ্ধ জীবনযাপন করে থাকে। তবে নেকড়ের দলের চাইতে শিয়ালের একটি দলে সদস্য সংখ্যা কম দেখা যায়। নেকড়েদের একটি দল সর্বোচ্চ ১৫ সদস্যের হলেও শিয়ালদের একটি দল সর্বোচ্চ ৪-৬ সদস্যের হয়। প্রতিটি দলের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে একটি পুরুষ এবং একটি নারী শিয়াল। কখনো কখনো দলের সবচাইতে কনিষ্ঠ সদস্য দল ত্যাগ করে নিজের অধীনে আলাদা দল তৈরি করে থাকে।
৩.
প্রবাদ বা রূপকথায় শিয়ালকে যতটা ধুরন্ধর হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, বাস্তবে শিয়াল ততটা নয়। তবে তারা কখনো কখনো ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে। শিয়ালের অতীত ইতিহাসও কিন্তু বেশ গৌরবের। ধারণা করা হয়, মিশরীয় দেবতা আনুবিসের মাথা ছিল শিয়ালের মাথার মতো। তবে শিয়ালের এই খ্যাতি নস্যাৎ হয়ে গেছে আনুবিসের ভাস্কর্যগুলোর কাছে। ভাস্কর্যগুলো তৈরি করা হয়েছে নেকড়ের মাথার আদলে।
তবে এখনও কোনো কোনো জায়গায় শিয়ালের সুখ্যাতি রয়েছে। নিউ জার্সির মন্টিক্লারা ইউনিভার্সিটির ইয়োগি বেরা স্টেডিয়ামের একটি বেসবল দলের নাম হচ্ছে নিউ জার্সি জ্যাকলস। বেশিরভাগ লিগে বা ক্লাবের নামের শেষে ভিক্টোরিয়ান্স, রাইডার্স, ডেয়ারডেভিলসের মতো হিংস্র ও বিজেতা ঘরানার নাম ব্যবহার করলেও এই বেসবল ক্লাবটি নামের শেষ জ্যাকেলস যুক্ত করেছে, কারণ বেসবল খেলার জন্য যে তিনটি গুন (চাতুর্য, সুযোগসন্ধানী এবং স্থিতিশীলতা) দরকার, তার সবগুলোই একটি শিয়ালের চারিত্রিক গুণ।
৪.
ইউরোপের গ্রিস, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, ইউক্রেন, অস্ট্রিয়া, ইতালিতে শিয়ালের সংখ্যা বেশ ভালোভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বলিভিয়াতে শিয়ালের সংখ্যা সবচাইতে বেশি। এছাড়াও ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, বেলারুশ, পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া, নেদারল্যান্ড এবং ডেনমার্কেও কখনো কখনো যাযাবর প্রকৃতির শিয়ালের দেখা পাওয়া যাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, শিয়াল ধীরে ধীরে ইউরোপের উত্তর দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বলকান অঞ্চলের দিকে, যেখানে নেকড়ের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। যেহেতু শিয়াল সবসময় নেকড়েকে এড়িয়ে চলতো, তাই নেকড়ের সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে এসব অঞ্চলে শিয়ালদের প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত হয়ে গেছে।
ইউরোপ জুড়ে শিয়ালদের আধিপত্য বিস্তারে জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো প্রভাব রয়েছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে আগামীতে জলবায়ু পরিবর্তন নেকড়েদের দেশান্তরী হবার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যেসব দেশে বছরের প্রায় একশ দিন তুষারপাত হয়ে থাকে, সেসব দেশে শিয়ালের অস্তিত্ব তেমন একটা পাওয়া যায় না। কিন্তু গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে যেহেতু ইউরোপের শীতপ্রধান দেশের তাপমাত্রা বাড়ছে এবং তুষারপাতের হার কমে যাচ্ছে, তাই ধীরে ধীরে শিয়ালের বংশবিস্তারও সেসব অঞ্চলে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শিয়ালের এই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর কারণ সহজেই অনুমান করা যায়। র্যাঞ্চ এবং ডক্টর ক্রোফেল একটি স্ত্রীলিঙ্গের শিয়ালের উপর লাগাতার নজরদারি করেছিলেন। এই শিয়ালটি প্রায় একশ কিলোমিটার পথ ঘুরে বেড়িয়েছে একটি পুরুষ সঙ্গী খোঁজার জন্য, যাতে করে সে নিজস্ব একটি দল গঠন করতে পারে। উত্তর আমেরিকাতে কয়োটের বিস্তৃতি লাভের মতো বিশাল না হলেও, ইউরোপে শিয়ালের বিস্তৃতি একটি বড়সড় প্রাকৃতিক বিস্ময়ের ব্যাপার বলা চলে।
৫.
স্লোভেনিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি পাহাড়ি অঞ্চলের নাম সেনোজেক। সেনোজেকের পাহাড়ি এলাকায় একটি মধ্যম আকৃতির ভেড়ার খামার আছে। এই খামারে ভেড়ার সংখ্যা প্রায় ৩৫০টি। এই ভেড়ার খামারের পরিচালক লিওনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই অঞ্চলে শিয়ালের উপদ্রব দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। তবে তারা যে নেকড়ের উপদ্রবের সাথে পরিচিত, তা-ও জানিয়েছেন লিওন। বিগত তিন বছরে ভেড়ার উপর নেকড়ের আক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছে। অপরদিকে বেড়েছে শিয়ালের উপদ্রব। ভেড়ার খামারি লিওন বলেন, ২০১৭ সালে তিনি শিয়ালের আক্রমণে প্রায় ২৫টি ভেড়া হারিয়েছিলেন।
যদিও প্রথমদিকে শিয়ালকে নেকড়ের বিচরণস্থলের আশেপাশে তেমন একটা দেখা যেত না। তবে যতই দিন যাচ্ছে এই দুটো প্রজাতিরই এখন একই বাস্তুসংস্থানের মধ্যে বসবাস করার একটি প্রবণতা দেখা দিয়েছে। নেকড়েগুলো আগে লোকালয়ের কাছে বিচরণ করলেও, এখন তাদের প্রধান বিচরণক্ষেত্র হচ্ছে স্লোভেনিয়ার বনের গভীরে। অন্যদিকে শিয়ালের দল বনের সীমান্তে, লোকালয়ের কাছাকাছি তাদের অবস্থান তৈরি করতে শুরু করেছে।
নেকড়ে যখন ভেড়া শিকার করে তখন তারা খুব পেশাদার উপায়ে ভেড়ার উপরে আক্রমণ চালায় এবং হত্যা করে। এবং হত্যা করার পর ভেড়ার প্রায় পুরোটাই দলবেঁধে ভক্ষণ কর ফেলে। অপরদিকে শিয়ালের আক্রমণ অতর্কিত এবং অপেশাদার। তারা একটি ভেড়া শিকার করতে পারলে মৃত ভেড়ার অল্প কিছু অংশ খাওয়ার পর বাকিটুকু ফেলে রেখে চলে যায়।
স্লোভেনিয়ার বন কর্মকর্তা মারজান তোমাসিকের মতে, অনেক ভেড়া পালকই শিয়ালের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে কিছুটা আতঙ্কিত। তবে তারা লিওনের মতো নেকড়ের আক্রমণকেও অতটা অগ্রাহ্য করছে না। কখনো কখনো কোনো কারণ ছাড়াই একদল নেকড় যদি একটি ভেড়ার পালের উপর আক্রমণ করে থাকে, তাহলে প্রায় ৫০টি পর্যন্ত ভেড়া নেকড়েদের কাছে ঘায়েল হয়ে যেতে পারে। তাই নেকড়েদের ভয়াবহতা সম্পর্কে এখনকার ভেড়া পালকদের মধ্যে একটি আতংক অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান।
৬.
স্লোভেনিয়ার বনে শিয়াল পর্যবেক্ষণ করার জন্য ডক্টর ক্রোফেল একটি অভিনব পদ্ধতি অনুসরণ করেন। তিনি শিয়ালের ডাক রেকর্ড করে নিয়ে যান এবং বনের ভেতর এই রেকর্ড বাজিয়ে শিয়ালদেরকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। কারণ শিয়াল তার আশেপাশে অন্য কোনো শিয়ালের ডাক শুনতে পেলে সেদিকে ধাবিত হয়।
শিয়ালের ডাক সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তারা খেয়াল করে দেখবেন, শিয়াল অনেকটা সাইরেনের মতো নরম সুরে ডাক দেয়। অনেকে বলে থাকেন, শিয়ালের ডাক লাগাতার শুনলে মনে হয়, দূরে কোনো শিশু কান্না করছে। ডক্টর ক্রোফেল এবং তার অনুসারী গবেষকরা নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে শিয়ালের ডাকের রেকর্ড বাজান। এভাবে কয়েকবার বাজালে দূরে একটি-দুটি শিয়ালের ডাক শোনা যায়। যদি ভাগ্য ভাল থাকে, তাহলে শিয়ালের একটা দলের দেখা পাওয়া যেতে পারে।
ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব পাতিশিয়াল ইতোমধ্যে দলবদ্ধভাবে জীবনযাপন শুরু করে দিয়েছে এবং তাদের বংশবৃদ্ধি করে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে তারা পশ্চিম ইউরোপেও ছড়িয়ে যাবে এবং সংখ্যায় আরো বৃদ্ধি পাবে।
ইউরোপ জুড়ে শিয়ালের বিস্তৃতি যদি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে পরিবেশের উপর এর প্রভাব কেমন হবে তা এখনি অনুমান করা একটু কষ্টসাধ্য। তবে র্যাঞ্চ মনে করেন, শিয়াল যদি আসলেই সমগ্র ইউরোপে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তা ইউরোপের মৌলিক পরিবেশ এবং বাস্তুসংস্থানের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে। ইউরোপের বলকান অঞ্চলের নেকড়েকে হটিয়ে শিয়ালরা যে এখানে তাদের রাজত্ব গড়ে তুলতে পারে, এটি অনেক ইউরোপীয় গবেষকের কল্পনাতেও ছিল না।
কিন্তু পশ্চিম ইউরোপে শিয়াল নিয়ে মানুষের মনোভাব কেমন হতে পারে তা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে না। প্রাথমিক পর্যায়ে ইতালি, জার্মানি এবং অস্ট্রিয়াতে শিয়ালরা তাদের ভিত্তি স্থাপন করছে। এদের সংখ্যা যত বাড়বে, ইউরোপে তাদের ভাগ্যে কী আছে তা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
হয়তো ইউরোপীয় বনগুলোতে চতুর এবং বুদ্ধিদীপ্ত জীবন বজায় রেখে বিচরণ করতে পারবে শিয়ালেরা। আর আজ থেকে হাজার বছর পরে, ভারতীয় উপমহাদেশের রুপকথার গল্পের মতো, ইউরোপের শিশু-কিশোররা তাদের রুপকথার গল্পে শিয়ালকে ‘শিয়ালপণ্ডিত’ হিসেবেই চিনবে!