পাঠক-দর্শকদের ভালোবাসায় সফলতার ৫ বছর পেরিয়ে রোর বাংলা পা রেখেছে অগ্রযাত্রার ৬ বছরে। অর্ধ-দশকের এই যাত্রাকালে ১৩ সহস্রাধিক কন্টেন্ট নিয়ে হাজির হয়েছি আমরা, পেয়েছি সকলের কাছ থেকে ভালবাসা, ও গঠনমূলক নানা সমালোচনা, যেগুলো আমাদের ক্রমোন্নতিতে অবদান রেখেছে নিঃসন্দেহে।
এই উপলক্ষে আমরা রোর বাংলার প্রতিটি বিভাগের সেরা ৫টি করে লেখা প্রকাশ করতে চলেছি পুরো অক্টোবর মাসজুড়েই। আজ থাকছে ‘জীবজগৎ’ বিভাগের লেখাগুলো।
১
ভোঁদরের প্রিয় খাদ্য মাছ। তবে মাছ ছাড়াও বিভিন্ন জলজ প্রাণী শিকারে পটু ভোঁদর। বসবাস জলাশয়ের পাশে বনজঙ্গলে। জলাশয়ের গতিপথ পরিবর্তন, বনজঙ্গল ধ্বংস করে নদীর পারে বসতি নির্মাণ, কারেন্ট জালে মাছ শিকারের সময় ধরা পড়া ভোঁদড় মেরে ফেলার ফলে ভোঁদরের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে কমে আসছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রাণীটিকে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা করা হলেও স্থানীয় মানুষের নানা কুসংস্কার আর অসচেতনতার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে এই প্রাণীটি। পুকুরের মাছ খেয়ে ফেলবে এই ভয়ে অনেকেই লোকালয়ের আশেপাশের ভোঁদর মেরে ফেলতে উদ্যত হোন। অনেক চক্র আবার ভোঁদরের চামড়ার ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ের জেলেরা শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখে পালন করে যাচ্ছেন ভোঁদর।
মূলত পোষা ভোঁদরের সাহায্যে তারা মাছ শিকার করেন। পাশাপাশি ভোঁদরের মত একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীকে সংরক্ষণেও তাদের অবদান অনস্বীকার্য। কীভাবে? জানতে পড়ে নিন এই লেখা:
নড়াইলের ভোঁদর জেলে: বিলুপ্তপ্রায় এক বন্যপ্রাণীকে বাঁচিয়ে রেখেছেন যারা
২
বলা হয়ে থাকে, পারমাণবিক যুদ্ধে যদি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে পৃথিবীর সব প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত যে অল্প কিছু প্রাণী বেঁচে থাকতে পারবে, তাদের মধ্যে তেলাপোকা অন্যতম। এর অর্থ অবশ্য এই নয় যে, তেলাপোকা অমর। বরং এই ধারণা এসেছে এই কারণে যে, তেলাপোকা অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে। এরা পানি ছাড়া প্রায় এক সপ্তাহ এবং কোনো খাবার ছাড়া প্রায় এক মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এমনকি, কোনো আঘাতে তেলাপোকার মাথা তাদের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও তারা খুব দ্রুত কাটা জায়গার ছিদ্র বন্ধ করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে!
কিন্তু তা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট জীবনসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর, শত্রুর আক্রমণে অথবা কীটনাশক প্রয়োগে নিয়মিতই তেলাপোকা মৃত্যুবরণ করে। এদের মধ্যে যেগুলো মানুষের বাসাবাড়িতে মৃত্যুবরণ করে, তাদের অধিকাংশকেই পিঠ নিচের দিকে দিয়ে উল্টো হয়ে মারা যেতে দেখা যায়। কেন তেলাপোকা চিৎ হয়ে মৃত্যুবরণ করে, বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা বিভিন্ন সময় এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বিস্তারিত পড়ুন এখানে:
তেলাপোকা কেন চিৎ হয়ে মৃত্যুবরণ করে?
৩
ঘটনাটি ঘটেছিলো স্বর্গে। চমৎকার সুন্দর একটি গাছ ছিলো সেখানে। কিন্তু সুন্দর জিনিসের ভাগ্য বরাবর খারাপ হয়; সবার কুদৃষ্টি পড়ে তার উপরে। আর শয়তানের মাথায় তো মন্দবুদ্ধি গিজগিজ করছে। সে তখন স্বর্গেই থাকতো। শয়তান যখন অত সুন্দর গাছটিকে দেখলো, তার গা জ্বলে উঠলো। গাছটির পেছনে না লাগলে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিল না সে। তাই তক্কে তক্কে রইলো। একদিন সুযোগ বুঝে গিয়ে গাছটিকে উপড়ে ফেলল সে। তারপর সেটাকে পৃথিবীতে এনে ডালপালা শুদ্ধ মাটির গভীরে উল্টো করে পুঁতে ফেললো। আর শিকড়গুলো রয়ে গেলো মাটির উপরে।
বেচারা গাছ! তার তো আর হাত-পা নেই যে চাইলেই সোজা হয়ে যাবে। উল্টো হয়েই রইল অমন। গল্পটি সত্য কি মিথ্যা তা কে জানে? তবে গাছটি কিন্তু সত্যি। বিশ্বাস না হলে যেতে হবে আফ্রিকার মরুভূমির বুকে। সেখানে কাউকে বলবেন, “মশাই, একটু বাওবাব গাছ দেখতাম! দেখানো যাবে?”
আরও জানতে পড়ে নিন এই লেখাটি:
বাওবাব: মরুভূমির এক অদ্ভুত গাছের সন্ধানে
৪
বনের ভেতর দিয়ে কিংবা গভীর জঙ্গলের পাশ দিয়ে হেঁটে চলেছে পথিক। হঠাৎ নাকে ভেসে আসছে পোলাওয়ের চালের গন্ধ। আশেপাশে তাকালো পথিক। কোথাও কালিজিরা, চিনিগুঁড়া ধান আছে বোধহয়। কিন্তু আশেপাশে পোলাওয়ের চাল নেই কিংবা পোলাও রান্না হচ্ছে না। ভৌতিক চিন্তা-ভাবনা কল্পনায় আসতেই গাছের পাতা নড়ে উঠল। পথিক লক্ষ্য করল কাঠবিড়ালীর মতো একটি মাঝারি আকারের প্রাণী লাফ দিয়ে পালিয়ে গেল। বাস্তবে এটা কোনো ভৌতিক গল্প নয়। পোলাওয়ের চালের মতো গন্ধ ছড়ানো একটি প্রাণীর নাম হচ্ছে গন্ধগোকুল। এরকম গন্ধ ছড়ায় বলেই এদের এমন নামকরণ করা হয়েছে। আমাদের দেশে এটি খাটাশ নামেও পরিচিত।
আরও জানতে পড়ুন:
গন্ধগোকুল: পোলাওয়ের চালের ঘ্রাণ ছড়ায় যে প্রাণী
৫
প্রথমবার দেখে পাখিগুলোকে খানিকটা ভয় পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কেননা উচ্চতায় এরা প্রায় সাড়ে তিন ফুট পর্যন্ত লম্বা হতো। আর একেকটি পাখির ওজন প্রায় ২০ কেজির বেশি হতো। কিন্তু দেহের আকার বড় হলেও এদের পাখা ছিল এদের দেহের তুলনায় অনেক ছোট। পাখার ওজনও ছিল বেশ হালকা। তাই এই পাখি উড়তে বা দৌড়াতে পারতো না। হাঁটার ক্ষেত্রেও এদের খুব ধীরগতি লক্ষ্য করা যেত। পাখিগুলোর পাখার রং হতো ধূসর বা বাদামী রঙের। পাখিগুলোর ঠোঁটও ছিল বেশ বাহারি রঙের। সবুজ, কালো ও হলুদ রঙের মিশেলে তাদের ঠোঁটে ছিল ভিন্ন রঙের ছোঁয়া। আর এদের ঠোঁট প্রায় ৯ ইঞ্চির মতো লম্বা হতো। পায়ের দিকটা অনেকটাই মুরগীর মতো হলেও পাগুলো কিন্তু বেশ শক্ত-পোক্ত হতো। কেননা এত ভারি একটি শরীর ঐ ছোট্ট দুটি পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকতো। এতক্ষণ যে পাখির কথা বলছিলাম, তার নাম ডোডো। আজ থেকে অনেকদিন আগে নির্দয় কিছু মানুষের জন্য এই পাখি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
মর্মান্তিক সেই ইতিহাস জানতে পড়ুন এই লেখাটি: