Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জ্ঞান ও চিন্তা-ভাবনায় পিছিয়ে নেই পশুরাও

প্রাণীদের চিন্তা-ভাবনা, বুদ্ধিমত্তা এবং সংবেদনশীলতার ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা নিয়মিত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিজ্ঞানীদের নানা গবেষণা থেকে উঠে এসেছে এমন কিছু তথ্য, যা বেশ রোমাঞ্চকর ও ঈর্ষণীয়। বেশ কয়েকটি গবেষণা থেকে বিজ্ঞানীরা উপলব্ধি করেছেন যে, কিছু শিখে নেওয়া অথবা কাউকে দেখে অবিকল অনুসরণ করার অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে পশু-পাখিদের। কোনো কোনো পশু-পাখির ক্ষেত্রে এ ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বহুগুণে। কিছু পশু-পাখির চিন্তা-ভাবনা, আবেগ, ভালবাসা, দুঃখের অনুভূতি কিছু ক্ষেত্রে মানুষকেও ছাপিয়ে যায় বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। তেমনি কয়েকটি অনুভূতিপ্রবণ, সংবেদনশীল প্রাণীর কথা জানার চেষ্টা করবো আজ।

অদ্ভুত স্মরণশক্তিসম্পন্ন প্রাণী শিম্পাঞ্জি

সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন এক অবাক করা তথ্য। স্মরণশক্তির বিচারে মানুষের চেয়েও এগিয়ে গেছে শিম্পাঞ্জিরা। বিশেষ করে সংখ্যা মনে রাখার ক্ষেত্রে যেকোনো মানুষকে টেক্কা দিতে ওস্তাদ শিম্পাঞ্জিরা। বিজ্ঞানীরা চৌদ্দটি শিম্পাঞ্জি নিয়ে জাপানের কিয়োটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাইমেট রিসার্চ ইনস্টিটিউটে একটি পরীক্ষা চালান।

সংখ্যা মনে রাখার ক্ষেত্রে শিম্পাঞ্জির ক্ষমতা অসাধারণ; Source: livescience.com

সেই গবেষণায় ছিল আয়ুমু নামের বারো বছরের এক শিম্পাঞ্জি শিশু। এই শিম্পাঞ্জিটি এক থেকে উনিশ পর্যন্ত গুনতে এবং বুঝতে পারে। কিন্তু অন্য শিম্পাঞ্জিরা পারে এক থেকে নয় পর্যন্ত অংক গুনতে। একদিন পরীক্ষার জন্য কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে বসিয়ে দেওয়া হলো সকলকে। তারপর কম্পিউটার স্ক্রিনে ফুটে উঠলো কতগুলো এলোমেলো সংখ্যা। এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের ব্যবধানে অদৃশ্য হয়ে গেলো সংখ্যাগুলো। তৎক্ষণাৎ ঐ শিম্পাঞ্জিরা ঠিক যেখানে যে সংখ্যা ছিল, নির্ভুলভাবে সেগুলো নির্দেশ করে দিল।

কম্পিউটার স্ক্রিনে ফুটে ওঠা সংখ্যা দেখে চিনতে পারে শিম্পাঞ্জি; Source: cbsnews.com

গবেষকদের মতে, হাতেগোনা অল্প কিছু মানুষের এমন ফটোগ্রাফিক মেমোরি থাকে, তবে তা একেবারেই ব্যতিক্রম। কিয়োটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী টেটসুরো মাতসুজাওয়ার গবেষণামতে, পাঁচ বছর বয়সী শিপাঞ্জির স্মরণশক্তি মানুষের চেয়েও উন্নত।

এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লিসা পারের গবেষণায় এক অদ্ভুত তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। শিম্পাঞ্জিরা ছবি দেখেই নিজের পরিবারের এবং অন্য পরিচিতদের চিনে নিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, কোন বাচ্চাটি কোন পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, সেটাও সুন্দরমতো শনাক্ত করে দিতে পারে তারা অদ্ভুত ক্ষমতাবলে।

বুদ্ধিমান ও চিন্তাশীল প্রাণী হিসেবে অনন্য অক্টোপাস

অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে অক্টোপাসের মস্তিষ্কের আয়তন সবচেয়ে বেশি। কেবলমাত্র আয়তনের দিক থেকেই নয়, বুদ্ধির দিক থেকেও অক্টোপাস কম নয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বন্দী অবস্থায় অক্টোপাস তার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করা মানুষদের খুব ভালোমতো চিনে রাখতে পারে। এছাড়া অক্টোপাসরা ভালমতো শিখে নেয়, কীভাবে ছিপি আঁটা বোতল খুলতে হয়।

অক্টোপাসের বুদ্ধি অবাক করার মতো; Source: wikimedia commons

অক্টোপাসের দেহে কয়েকশো চোষক নল রয়েছে। প্রত্যেকটির নিজস্ব স্নায়ুকেন্দ্র রয়েছে, যাতে আছে কয়েক হাজার নিউরন। এই ‘মিনি’ ব্রেনগুলো পরস্পরের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলে, যার ফলে অনেকটা জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এক স্নায়ুতন্ত্র তৈরি হয়ে যায়। অক্টোপাসের একটি বাহু কাটা পড়লে, ঐ বাহুটি নিজে নিজেই হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে খাবার সংগ্রহ করতে পারে।

আত্মরক্ষার জন্য অক্টোপাসেরা নিজেদের গায়ের রং পাল্টে ফেলে বিষধর সামুদ্রিক সাপের মতো হাবভাব করে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, অক্টোপাসের মস্তিষ্ক রং পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নেয় না, নেয় তার চামড়া। অক্টোপাস হলো আটটি ‘চিন্তাশীল’ ক্ষমতাসম্পন্ন বাহু সম্বলিত প্রাণী, যার রয়েছে ‘দৃষ্টিশক্তি’সম্পন্ন চামড়া।

ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ এশিয়ান প্লটনিক হাতি

গবেষক জোশ তার এক গবেষণায় দেখতে পান, হাতিদের বুদ্ধিমত্তা ডলফিন ও শিম্পাঞ্জিদের তুলনায় কোনো অংশেই কম নয়। উত্তর থাইল্যান্ডের ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল এশিয়ান এলিফ্যান্ট ফাউন্ডেশন’ এ থাকা ‘ফু কি’ নামের এক এশিয়ান হাতির ওপর নানা পরীক্ষা চালান গবেষক জোশ।

এশিয়ান প্লটনিক হাতি; Source: YouTube

রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো হাতিটি এবং তার মাহুতকে জোশ তার প্লটনিক সায়েন্স প্রোগ্রামের অধীনে নিয়ে আসেন। মাহুতের সহায়তায় হাতির বুদ্ধিবৃত্তি পরীক্ষার জন্য ফু কির ওপর গবেষক জোশ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। তাতে তিনি দেখতে পান যে, হাতিটি তার নিজস্ব এক সত্ত্বা নিয়ে থাকতে পছন্দ করে। হাতিদের দলের প্রতিটি সদস্যই পরস্পরের সাথে ভালোবাসা ও সখ্যতার বন্ধনে আবদ্ধ থাকে সবসময়।

হাতিরা একতাবদ্ধ হয়ে থাকতে পছন্দ করে; Source: independent.co.uk

গবেষণায় দেখা গেছে, ডলফিন এবং শিম্পাঞ্জির মতোই আয়নাতে নিজেদের প্রতিবিম্ব দেখে চিনে নিতে পারে হাতিরাও। তিনি একবার ফু কি নামের হাতির কপালে ক্রসচিহ্ন এঁকে দিয়ে হাতিটিকে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন বিশাল বড় এক আয়নার সামনে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হাতিটি ঘুরে ফিরে ভালোভাবে নিজেকে দেখতে থাকলো। তখনও বোঝা গেলো না যে হাতিটি আসলে কী দেখতে চাইছিল। পরক্ষণেই বোঝা গেলো হাতিটি আসলে তার কপালের ক্রসচিহ্ন দেখেই অস্থির হয়ে এমনটা করছে। সঙ্গে সঙ্গে হাতি তার শুঁড় দিয়ে ঘষে ঘষে ঐ চিহ্নটুকু তুলে ফেলার চেষ্টা করছে।

জানার ব্যাপারে সবাইকে টেক্কা দেয় জার্মান কুকুর রিকো

জার্মানির লিপগিজের ‘ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইভল্যুশনারি অ্যানথ্রোপলজি’র বিশেষজ্ঞরা রিকোকে নিয়ে এক গবেষণা চালিয়েছেন। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে রিকো কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। এই কুকুরটি ২০০টি খেলনার নাম দেখেই বলে দিতে পারতো।

জার্মান কুকুর রিকো; Source: jaydensrowena.blogspot.com

গবেষণায় এটাও উঠে এসেছে যে, একটি বাচ্চা ছেলে যত দ্রুত পড়া বা নতুন শব্দ আয়ত্ব করে, রিকো ঠিক সেভাবেই অনেক জিনিসের নাম খুব দ্রুত শিখে নেয় এবং বিস্ময়করভাবে তা মনে রাখতে পারে। তার এই বিস্ময়কর ক্ষমতা জানার পর ২০০১ সালে জার্মানিতে এক গেম শো তে তাকে আনা হয়েছিল এবং সত্যিই তার অসাধারণ ক্ষমতা সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল।

মেট্রো: ছবি আঁকার মধ্য দিয়ে বাঁচার স্বপ্ন বোনে যে ঘোড়া

পেনসিলভ্যানিয়ার একসময়ের রেসের ঘোড়া হিসেবে বেশ সুনাম ছিল মেট্রো নামের ঘোড়াটির। আট রেসে জেতার রেকর্ড ছিল তার। তাই রেসের মাঠে তার কদরও ছিল অন্য সব ঘোড়ার চেয়ে আলাদা। রেস জিতে ৩ লক্ষ ডলারের পুরস্কারমূল্যও এসেছিল তার ঝুলিতে৷ কিন্তু হঠাৎই শারীরিক অসুস্থতার কারণে রেসের মাঠ থেকে ছিটকে পড়ে সে। ঠাঁই হয় এক চিত্রশিল্পীর আস্তাবলে৷ কিন্তু ধীরে ধীরে মেট্রোর আয়ুও কমে আসছিল। এরকম নির্বাসিত মৃত্যু মানতে পারেননি আস্তাবলের মালিক। সেই চিত্রশিল্পীর হাত ধরেই মেট্রোর ক্যানভাসে আঁকিবুকি শুরু।

ছবি আঁকতে আঁকতে বাঁচার স্বপ্ন বোনে মেট্রো; Source: ABC News

তারপর ক্যানভাসে শুরু হয় তার নিয়মিত এঁকে চলা। একদিন মেট্রোর চিত্রকর মালিক মেট্রোর ছবিগুলো পাঠিয়ে দেন স্থানীয় গ্যালারিতে। আর আশ্চর্যের বিষয় হলো তার সেই রং-বেরংয়ের আঁকিবুকিই বিকোচ্ছে ভালো দামে। ক্যানভাসের তুলিতে ছবি এঁকেই যেন মেট্রো বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পেলো।

মেট্রোর আঁকা ছবি; Source: paintedbymetro.wordpress.com

আধুনিক চিকিৎসার বদৌলতে মেট্রো ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকলো। এখন চিত্রকর রন ক্রাজেওয়াস্কির পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে মেট্রো তার আনন্দময় সময় কাটাচ্ছে।

মানিয়ে চলার অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন ডলফিন

মানুষের মতো ডলফিনরা অত্যন্ত সামাজিক এবং যেকোনো জায়গায় যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে- একথা বলেছেন কগনিটিভ সাইকোলজিস্ট লুইস হারম্যান। শিম্পাঞ্জি বা গরিলার মতোই বুদ্ধি-বিবেচনায় ডলফিনরা মানুষের বেশ কাছাকাছি। তারা বেশ সংবেদনশীল প্রকৃতির।

সংবেদনশীল প্রাণী ডলফিন; Source: pbs.org

মানুষের কথাবার্তা এরা ভালো বুঝতে পারে এবং হুবহু নকল করে অনুসরণে ওস্তাদ। আমেরিকার এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সায়েন্টিস্ট লোরি মারিনোর মতে, শূন্য সংখ্যাটি সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা আছে ডলফিনদের। এছাড়া এরা আয়নাতে নিজেদের ভালোভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম। নিজেদের অস্তিত্ব সম্পর্কেও এরা খুবই সচেতন।

ফিচার ইমেজ – sheknows.com

Related Articles