ছোটবেলায় সন্ধ্যা নামলেই বন্ধুরা মিলে জোনাকির পেছনে দৌড়াতাম। হাতের মুঠোয় নিয়ে আবার উড়িয়ে দিতাম। উল্টেপাল্টে দেখতাম, কীভাবে একটি পোকার পেট থেকে আলো বের হয়। জোনাকি নিয়ে এমন কত স্মৃতিই হয়তো জমা আছে আমাদের স্মৃতিপটে। এখন আর জোনাকির পেছনে দৌড়ানো হয় না। হাতে নিয়ে দেখা হয় না। হয়তো বড় হয়েছি বলে।
কিন্তু এখনকার ছোট ছেলেমেয়েরা কি জোনাকির পেছনে দৌড়ায়? হাতে নিয়ে আবার উড়িয়ে দেয়? এই প্রশ্নটা অত জরুরি না হলেও ‘আগের মতো আর জোনাকির দেখা পাওয়া যায় না কেন?’- এটি একটি জরুরি প্রশ্ন।
সত্যিই, আগের মতো আর জোনাকির দেখা মেলে না। শৈশবের সেই সন্ধ্যে যেন আর নামে না। আলোর মশাল জ্বেলে জোনাকিরা আর আসে না। ক্রমেই যেন নিভে যাচ্ছে জোনাকির আলো। কী এমন হলো, যে জোনাকির সংখ্যা হঠাৎ এত কমে যাচ্ছে? এ প্রশ্নেরই উত্তর জানার চেষ্টা থাকবে এ লেখায়।
জোনাকি নিয়ে মজার কিছু তথ্য
জোনাকিরা আসলে একধরনের পোকা। পৃথিবীতে প্রায় দু’হাজার প্রজাতির জোনাকি রয়েছে। তবে সব প্রজাতির জোনাকির আলো নেই। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, শুধু প্রাপ্তবয়স্ক জোনাকিরাই আলো উৎপন্ন করে না, জোনাকির লার্ভা, এমনকি এর ডিম থেকেও আলো উৎপন্ন হয়।
জোনাকির আলো পৃথিবীর সবচেয়ে কার্যকর আলো। অন্যভাবে বলতে গেলে, বিশুদ্ধ আলো। কারণ এ আলোর পুরোটাই আলোকশক্তি। এখানে আলো ছাড়া অন্য কোনো শক্তি নেই। একটি ইনক্যানডেসেন্ট বাল্বে আলো জ্বললে তাতে মাত্র ১০ শতাংশ থাকে আলোক শক্তি। অন্যদিকে ফ্লুরোসেন্ট বাল্বের আলোতে ৯০ শতাংশই থাকে আলোকশক্তি, বাকি ১০ শতাংশ হয় তাপ শক্তি। কিন্তু জোনাকির আলোর পুরোটাই আলোক শক্তি। এজন্য বিজ্ঞানীরা জোনাকির আলোকে কোল্ড লাইট বা শীতল আলো বলে অভিহিত করেন।
জোনাকিরা মাংসাশী বা কীটভোজী প্রাণী। জোনাকির লার্ভা সাধারণত ছোট শামুক বা ক্রিমি খেয়ে থাকে। তবে কিছু প্রজাতির জোনাকি অন্য জোনাকিদেরও খেয়ে থাকে। বিশেষ করে কিছু স্ত্রী জোনাকি পুরুষ জোনাকিদের খেয়ে ফেলে- এমন প্রমাণ রয়েছে।
প্রাপ্তবয়স্ক জোনাকি শুধুমাত্র প্রজনন এবং ডিম দেওয়ার জন্য বেঁচে থাকে। তাই প্রাপ্তবয়স্কদের খাওয়ার দরকার পড়ে না। লার্ভা সাধারণত এক থেকে দুই বছর বেঁচে থাকতে পারে।
জোনাকিরা প্রজনন করার জন্য দেহ থেকে আলো নির্গত করে। এ আলো দিয়ে তারা মূলত সঙ্গীকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। কিছু কিছু প্রজাতির মধ্যে এমনটিও দেখা যায় যে, কেবল পুরুষ জোনাকি অথবা কেবল স্ত্রী জোনাকি প্রজননের জন্য আলোর সংকেত দেখাতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষ-স্ত্রী উভয়ই আলো নির্গত করতে পারে। পুরুষ জোনাকিরা আলো জ্বেলে ঘুরে বেড়ায় আর স্ত্রী জোনাকিরা গাছ, গুল্ম কিংবা ঘাসে পুরুষ জোনাকির অপেক্ষা করে। কোনো পুরুষ জোনাকি কাছে এলেই স্ত্রী জোনাকি নিজের আলো দেখিয়ে তাকে প্রজননের সংকেত পাঠায়। তবে শুধু প্রজননের জন্যই নয়, যোগাযোগ এবং শিকারীকে সতর্ক করতেও তারা এ আলো ব্যবহার করে।
আক্রমণের শিকার হলে জোনাকিরা তাদের দেহ থেকে ‘রিফ্লেক্স ব্লিডিং’ নামক একধরনের রক্ত নিঃসরণ করে, যা তেতো এবং বিষাক্ত হয়ে থাকে। এজন্য শিকারি প্রাণী বা পোকা তাদের খাদ্যতালিকায় জোনাকিদের রাখে না। তবে বাদুড়ের খাদ্যতালিকায় রয়েছে জোনাকি পোকার নাম।
কেন হারিয়ে যাচ্ছে জোনাকিরা?
জোনাকি এক আকর্ষণীয় পোকা যা আমাদের রাতকে আলোকিত করে তোলে আর পরিবেশকেও করে তোলে সুন্দর ও রহস্যময়। অদ্ভুত এক ভালোলাগার অনুভূতি নিয়ে আসে জোনাকি। শৈশবের কত রঙিন রাতের স্মৃতি জুড়ে লেখা আছে জোনাকির নাম।
অথচ তাদের বিচরণ আর চোখে পড়ে না আগের মতো। দিন দিন জোনাকিদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। গবেষকরা জোনাকিদের সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করছেন এবং বেশ কিছু কারণ খুঁজেও পেয়েছেন। সর্বশেষ ২০২০ সালে সারা লুইসের নেতৃত্বে একটি দল জোনাকিদের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ নিয়ে গবেষণা করে। তাতে উঠে এসেছে বাসস্থান হারানো, আলো দূষণ ও কীটনাশকের ব্যবহারসহ বেশ কিছু কারণ।
বাসস্থান হারাচ্ছে জোনাকিরা
জোনাকিদের বেশিরভাগ প্রজাতিই পুকুর বা জলাধারের পাশে পচা কাঠ এবং বনাঞ্চলে লার্ভা হিসেবে বেড়ে ওঠে। তাদের যেখানে জন্ম হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা সেখানেই অবস্থান করে। কিছু প্রজাতির জোনাকি জলের ধারে থাকতেই বেশি ভালোবাসে। আবার কিছু প্রজাতিকে দেখা যায় শুকনো অঞ্চলে। তবে বেশিরভাগেরই দেখা মেলে মাঠ, বন এবং জলাভূমিতে। বসবাসের জন্য উষ্ণ, আর্দ্র এবং জলজ পরিবেশ, যেমন- পুকুর, নদী কিংবা জলধারা জোনাকিদের পছন্দের জায়গা।
তবে সমস্যা হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের জোয়ারে তাদের বাসস্থান আজ হুমকির মুখে। খোলা মাঠ কিংবা বনাঞ্চল সব উধাও হয়ে যাচ্ছে। জলাভূমিগুলোও দখল হয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন ভবন উঠছে। জলে ভাসছে আধুনিক নৌকো, জাহাজ। এতসব উন্নয়নের ঝলকে জোনাকিদের বসবাসের জন্য যে পরিবেশ এবং অন্ধকার লাগে, সেটি আর পাচ্ছে না তারা। তাদের আবাসস্থল যতই উন্নয়নের ফাঁদে আটকা পড়ে যাচ্ছে, তাদের সংখ্যাও ততই কমে যাচ্ছে।
টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক সারা লুইস বলেন, পৃথিবীতে এখন অনেক প্রাণীই তাদের বাসস্থান হারিয়ে বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। তেমনটি ঘটছে জোনাকিদের সাথেও। জোনাকিদের জীবনচক্র সম্পন্ন করার জন্য বিশেষ কিছু পরিবেশগত অবস্থার প্রয়োজন। এসব অবস্থা যখন জোনাকিরা হারিয়ে ফেলে, তখন পরবর্তী প্রজন্মে তাদের সংখ্যা কমতে থাকে। মালয়েশিয়ায় এক প্রজাতির জোনাকি (Pteroptyx tener) রয়েছে, যারা ব্যতিক্রমী আলো প্রদর্শন করতে পারে। এই জোনাকিদের বসবাস ও প্রজননের জন্য ম্যানগ্রোভ বন দরকার। কিন্তু, মালয়েশিয়াতে ম্যানগ্রোভের জায়গায় পামওয়েল গাছ এবং কৃষি খামারের ব্যাপক বিস্তার ঘটায় এ প্রজাতির প্রজননে সমস্যা হচ্ছে। ধীরে ধীরে তাদের সংখ্যাও কমে আসছে।
থাইল্যান্ডের ম্যানগ্রোভ বনের নদীর তীর ঘেঁষে যে জোনাকিরা বসবাস করে, তাদের সংখ্যাও দিন দিন কমে আসছে। ইঞ্জিনচালিত নৌকার সৃষ্ট ঢেউয়ে এসব নদীর পার ক্ষয় হচ্ছে, ধ্বংস হচ্ছে জোনাকিদের আবাসস্থল। তাছাড়া এসব নৌকায় ব্যবহৃত বাতির কারণেও জোনাকিদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যাহত হচ্ছে।
আলো দূষণ
বিজ্ঞানীদের মতে, জোনাকিদের সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে রাতের বেলায় অত্যধিক কৃত্রিম আলো বা আলো দূষণ। সারা লুইস ও তার দলের গবেষণায় বলা হয়েছে, পৃথিবীর মোট স্থলভাগের ২৩ শতাংশেরও বেশি রাতের বেলায় কৃত্রিম আলোয় আলোকিত হয়। আর এ কৃত্রিম আলো জোনাকিদের বংশ বিস্তারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
গবেষণাটির সহযোগী অ্যাভালন ওয়েনস বলেন, জোনাকিরা তাদের দেহের অভ্যন্তরে বায়োলুমিনেসেন্স নামক একধরনের রাসায়নিক পদার্থের বিক্রিয়ার মাধ্যমে আলো তৈরি করে। এ আলো দিয়েই তারা সঙ্গীকে প্রজননে আকর্ষণ করে। কৃত্রিম আলোর কারণে এ প্রক্রিয়া বিঘ্ন ঘটছে।
পুরুষ এবং স্ত্রী, উভয় প্রকার জোনাকিই যোগাযোগের জন্য তাদের দেহের আলো ব্যবহার করে। তারা আসলে আলোর মাধ্যমেই পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে, কথা বলে। যৌন সঙ্গমে আকৃষ্ট করা, নিজের বাসস্থান রক্ষা করা এবং শত্রুকে সতর্ক করতেও তারা এই আলো ব্যবহার করে। কিন্তু আমরা এত বেশি কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করছি যে জোনাকিরা অন্ধকার খুঁজে পাচ্ছে না। মানুষের ব্যবহৃত অত্যধিক আলোর কারণে জোনাকিদের আলোর প্যাটার্নে সমস্যা তৈরি হয়। ঘরবাড়ি, গাড়ি, দোকনপাট এবং রাস্তার আলোর কারণে জোনাকিরা তাদের সঙ্গীদের প্রজনন সংকেত পাঠাতে পারে না। ফলে, পরবর্তী প্রজন্মে জোনাকিদের সংখ্যা কমতে থাকে।
একটা সময় খোলা মাঠ এবং বনে জোনাকিরা আলোর বাইরে থাকতে পারলেও এখন আর সে সুযোগ নেই। এসব জায়গাতেও আলো ঢুকে পড়েছে। উন্নয়নের আলো গ্রাস করেছে এসব জায়গা। দিনে দিনে জোনাকিদের বাসস্থানগুলোতে আলোর পরিমাণ বাড়ছে। জোনাকিদের সংখ্যাও কমে আসছে।
কীটনাশকে প্রাণ যাচ্ছে জোনাকির
আধুনিকতার ছোঁয়ায় নানা দূষণ আর কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়াও জোনাকিদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব দূষণে যেমন জোনাকিরা মরে যাচ্ছে, তেমনি মরে যাচ্ছে জোনাকিদের খাবারও। সবমিলিয়ে গোটা বিষয়টাই যেন জোনাকিদের অস্তিত্বের বিপক্ষে চলে যাচ্ছে।
কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীটনাশক জোনাকিদের লার্ভা যে মাটি আর জলজ পরিবেশে বেড়ে ওঠে, তাতে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।জোনাকির লার্ভা থেকে পূর্ণ জোনাকি সৃষ্টি হতে বেশ কয়েকমাস সময় লাগে। এ সময়টাতে অতিরিক্ত কীটনাশক জোনাকির লার্ভা ধ্বংস করতে পারে।
কোরিয়ায় এ বিষয়ে একটি গবেষণা করা হয়েছিল। সেখানে জোনাকিদের ওপর ১০ ধরনের কীটনাশকের প্রভাব কেমন, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। এতে দেখা যায়, কিছু কীটনাশকের প্রভাব এতটাই বেশি যে সেগুলোর কারণে লার্ভা থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক জোনাকিদের মৃত্যুহার ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত হতে পারে। এছাড়া ডিম দেওয়ার সক্ষমতা শূন্য থেকে ৩৩ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। এছাড়া মশা নিধনের জন্য স্প্রে করা হয়, সেটিও জোনাকিদের জন্য ক্ষতিকর।
সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেইভ গোলসন বলেন, অবশ্যই আলো দূষণ জোনাকিদের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে, তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না যে কীটনাশকের ব্যবহার জোনাকিদের সংখ্যা হ্রাসে বড় ভূমিকা রাখছে।
জোনাকি ট্যুরিজম
জোনাকিদের সংখ্যা কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে জোনাকিদের আলোর খেলা দেখার জন্য তাদের আবাসস্থলে ট্যুরের আয়োজন করা। জাপান, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়াতে জোনাকি দর্শনের জন্য ট্যুরের ব্যবস্থা রয়েছে।
দর্শনার্থীরা এসব ট্যুরে জোনাকপূর্ণ এলাকাতে যান এবং আলোর প্রদর্শনী উপভোগ করেন। এ ধরনের ট্যুর এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই জনপ্রিয় হচ্ছে। এসব ট্যুরে বছরে প্রায় দু’লাখ দর্শনার্থী আসেন জোনাকি দেখতে। এ কারণেও জোনাকিদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
গত কয়েক বছরের গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব জায়গায় এ ধরনের ট্যুর আয়োজন করা হয়েছে, সেসব জায়গায় জোনাকির সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। অথচ একটা সময় সেখানে প্রচুর জোনাকি ছিলে বলেই এসব ট্যুরের আয়োজন করা হতো।
ব্যবসায়িক কাজে জোনাকি সংগ্রহ
ব্যবসায়িক কাজে বেশ কিছু কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান প্রকৃতি থেকে জোনাকি সংগ্রহ করে থাকে। এ কারণেও কিছু কিছু দেশে জোনাকির সংখ্যা কমে আসছে।
১৯৬০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকার সিগমা কেমিক্যাল কোম্পানি জোনাকি থেকে লুসিফেরেস এবং লুসিফেরিন (যা থেকে আলো উৎপন্ন হয়) সংগ্রহের জন্য তিন মিলিয়নেরও বেশি জোনাকি সংগ্রহ করেছে। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চীনে কয়েক মিলিয়ন জোনাকি সংগ্রহ ও বিক্রি করা হয়েছে শুধুমাত্র থিম পার্ক এক্সিবিশন এবং রোমান্টিক গিফট তৈরির কাজে। যদিও আন্দোলনের মুখে চীনে এখন ব্যবসায়িক কাজে জোনাকি সংগ্রহ বেশ কমে এসেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন
জলবায়ু পরিবর্তন এখন বৈশ্বিক সমস্যা। এর প্রভাব পড়ছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই। জোনাকিদের জন্যও জলবায়ু পরিবর্তন অভিশাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের বেঁচে থাকার জন্য আর্দ্র পরিবেশ দরকার। কিন্তু খরার কারণে সে পরিবেশ আর বজায় থাকছে না। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, বরফাচ্ছন্ন এলাকার পরিবেশ পরিবর্তন হচ্ছে। এর বাইরে ঝড়, বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা তো রয়েছেই। এসব পরিবর্তন জোনাকিদের বাসস্থান, জৈবিক এবং যৌন জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। ফলে জোনাকিরা পড়ে যাচ্ছে হুমকির মুখে।
আমাদের করণীয় কী?
জোনাকিদের বাঁচিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই জোনাকিদের বাসস্থান বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাদের বাসস্থান যেন ধ্বংস না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে জোনাকিদের বসবাস বা সংরক্ষণের জন্য আলাদা জোন তৈরির কথা ভাবতে হবে।
জোনাকিরা অন্ধকারে থাকতে ভালোবাসে। আলোর কারণে তাদের প্রজনন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এজন্য অপ্রয়োজনে সব জায়গা আলোকিত করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে সন্ধ্যার দিকে বাড়ির বাইরের বাতি বন্ধ রাখতে হবে।
কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে। বিশেষ করে যেসব কীটনাশক জোনাকিদের সরাসারি মৃত্যুর জন্য দায়ী, সেসব কীটনাশক নিষিদ্ধ করতে হবে। জৈব সার ব্যবহারের দিকে বেশি জোর দিতে হবে।
জোনাকির আলো দর্শনের জন্য যেসব ট্যুরের আয়োজন করা হয়, সেসব ট্যুরের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এসব ট্যুর যেনে জোনাকিদের জন্য অভিশাপ না হয়ে দাঁড়ায়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।